You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.28 | নয়াদিল্লীতে আয়োজিত বাংলাদেশে সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আবেদন আর আবেদন নয়, এবার সক্রিয় সাহায্য দিতে হবে | জয় বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনাম

সংবাদপত্র তারিখ
আর আবেদন নয়, এবার সক্রিয় সাহায্য দিতে হবে জয় বাংলা

১ম বর্ষঃ ২০শ সংখ্যা

২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

নয়াদিল্লীতে আয়োজিত বাংলাদেশে সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আবেদন আর আবেদন নয়
এবার সক্রিয় সাহায্য দিতে হবে

(বিশেষ প্রতিনিধি প্রেরিত)
নয়াদিল্লীঃ- পৃথিবীর ছয়টি মহাদেশের ২৫টি রাষ্ট্রের ৬৫ জন প্রতিনিধি নয়াদিল্লীতে আয়োজিত বাংলাদেশ সম্পর্কিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে (১৮-২০শে সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে শতাব্দীর নিষ্ঠুরতম ও মর্মন্তদ গণহত্যার বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার ও ঘৃণা প্রকাশ করেন। সম্মেলনে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জল্লাদ ইয়াহিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে একটি আন্তর্জাতিক ব্রিগেড গঠনের আহবান জানান হয়।

সম্মেলনে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন প্রকাশ করে বলা হয় যে, সমসাময়িক মানব ইতিহাসে এর চেয়ে জঘন্যতম হত্যাকান্ড আর সংঘটিত হয়নি।

সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এক প্রস্তাবে বাংলাদেশের গণজাগৃতির উদ্যোক্তা ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিলম্বে বিনা শর্তে মুক্তি দাবী করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানকারী বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিশিষ্ট প্রতিনিধিরা বলেন যে, বর্তমানে বাংলাদেশ প্রশ্নে সরাসরি সাহায্য দান করতে হবে-শুধুমাত্র সুন্দর প্রস্তাব গ্রহণের মধ্যে সম্মেলনের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখা উচিত হবেনা।

নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিঃ বি, পি, কৈরালা, সিংহলের স্যার গুনাওয়ারধানা এবং ফ্রান্সের মিঃ ডানিয়েল মায়ার উল্লেখিত অভিমত প্রকাশ করেন।

নয়াদিল্লীতে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্ধোধন করেন সবর্বাদয় নেতা শ্রী জয়প্রকাশ নারায়ন। সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ লাখো লাখো নারী, পুরুষ ও শিশুর প্রতি সংগ্রামী অভিনন্দন জানিয়ে তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য দু’মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

জনৈক মার্কিন প্রতিনিধিসহ সম্মেলনে যোগদানকারী বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি বাংলাদেশে মানবিক মূল্যবোধ অক্ষুন্ন রাখার ব্যাপারে ইয়াহিয়ার সরকারের ওপর বিশ্ব চাপ সৃষ্টি এবং সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান যাতে অস্ত্র সাহায্য না পায় তার নিশ্চয়তা বিধানের দাবী জানান।

ইন্দোনেশিয়ার জনৈক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঃ মোহাম্মদ রোয়েম আন্তর্জাতিক আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সমস্যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হতে পারেনা। এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার অধিকার জাতিসংঘের রয়েছে।
সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ব নন্দিত ব্যক্তিত্ব ইহুদি মেনুহিন, মিঃ আঁদ্রে মালরো, সিনেটর কেনেডি, ফুলব্রাইট, কানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লেষ্টার পিয়ারসন বাণী পাঠিয়েছেন।

ভারতের প্রেসিডেন্ট গিরি এক বাণীতে সম্মেলন বাংলাদেশ প্রশ্নে আন্তর্জাতিক বিবেক জাগ্রত করতে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
শ্রী নারায়ণ সম্মেলনে বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন যে, বিশ্ব আজ অবহিত যে, লাখো শহীদের লাশের নিচে পাকিস্তান আজ চাপা পড়ে গেছে।
তিনি বলেন একমাত্র মুক্তিবাহিনীর সফলতার ওপরই বাংলাদেশের জনগণের নিকট গ্রহনযোগ্য রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব। অন্য দিকে মুক্তিবাহিনীর সফলতা বিশ্বের সকল দেশের জনগণ ও সরকারের সার্বিক সহায়তা অ সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।

সম্মেলনে বেসরকারীভাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ এ, আর মল্লিক।

তুমূল করতালির মধ্যে কায়রোর ‘আল-আহরাম’ পত্রিকার সম্পাদক ডঃ মকসুদ বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানী সমরিক জান্তার নজিরবিহীন নিষ্ঠুর কার্যক্রমে বিশ্ববিবেক স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে।

বৃটিশ এম, পি, এবং ওয়েলসে সর্বদলীয় বাংলাদেশ কমিটির চেয়ারম্যান মিঃ ফ্রেড ইভান্স বলেন যে, বাংলাদেশে গণহত্যা বিনা বাধায় চালিয়ে যেতে দেয়া হলে আমরা অচিরেই উপলব্ধি করতে পারবো যে আমাদের নিজেদের স্বাধীনতাও বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

সিংহলে বাংলাদেশ মানবিক অধিকার কমিটির চেয়ারম্যান স্যার সেনারেট গুনাওয়ার্ধন বলেন যে, বাংলাদেশের গণহত্যার ব্যাপারটি জাতিসংঘে যথার্থভাবে আলোচিত হোয়ার যোগ্যতা রাখে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিঃ স্টেনলি প্লাষ্ট্রিক বলেন, বাংলাদেশে গনহত্যা এবং অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতার নিন্দা জ্ঞাপন নিক্সন সরকারের কাছ থেকে আশা করা ভূল হবে।

তিনি বলেন, তবে আশার কথা হচ্ছে আমেরিকার যুব সমাজ, ছাত্র সমাজ, বুদ্ধিজীবী সমাজ বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে রয়েছেন। ফ্রান্সের মিঃ ডানিয়েল মেয়র বলেন, বাংলাদেশে সমস্যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ব্যাপার নয়। বাংলাদেশ সমস্যা হচ্ছে পাকিস্তানের সাথে বিশ্ববিবেকের। বাংলাদেশে গনহত্যার জন্য দায়ী জল্লাদ ইয়াহিয়া জান্তাকে সকল প্রকার সামরিক সাহায্য প্রদান বন্ধের দাবী জানান।

যুগোশ্লাভ শান্তি লীগের মিঃ জোভরেমেভিক বলেন সমসাময়িক ইতিহাসে বাংলাদেশ ট্রাজেডির কোন নজির নেই।

বৃটেনের বিশ্ব কলা ও বিজ্ঞান একাডেমির ডিরেক্টর স্যার বলেন, বাংলাদেশে মানবিক মূল্যবোধ এবং গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার যাতে সমাধি না ঘটে তা দেখার দায়িত্ব বিশ্বের প্রতিটি মানুষের।

‘আফগান-মিল্লাত’ – এর সম্পাদক জনাব কিউ, হাদাদ, আফ্রো-এশীয় সংহতি কাউন্সিলের নাইজেরীয় শাখার সদস্য মিঃ গনি ফাওয়াহিনমি, টোকিওর অধ্যাপক নারা, সালভাদর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফাদার ইসমাইল কুলেইম, অটোয়ার বিশ্ব কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মিঃ নিয়েলমল, অসলোর মিসেস মিগরিড এবং বিশ্ব ধর্মীয় শান্তি সম্মেলনের সেক্রেটারীর জেনারেল ডঃ হোমার জগক সম্মেলনে বক্তৃতা প্রসঙ্গে পাকিস্তানী জল্লাদ বাহিনির নাদিরশাহী বর্বতার নিন্দা করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন।

অন্যান্যদের মধ্যে ভারতের বিশিষ্ট জননেতা মেসার্স সাদিক আলী, আচার্য্য কৃপালনী, সুচেতা কৃপালনী, বিজয় লক্ষী পন্ডিত, অধ্যাপক রাঙ্গা এবং শায় নওয়াজ সম্মেলনে যোগদান করেন।