জীবনচিত্র নামঃ ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী
Dr. Md. Fazle Rabbee
ডাকনামঃ ঠান্টু
পিতার নামঃ আফসার উদ্দিন আহমেদ
পিতার পেশাঃ সরকারি চাকরি
মাতার নামঃ সুফিয়া খাতুন
ভাইবোনের সংখ্যাঃ চার ভাই ও চার বোন; নিজক্ৰম-প্রথম
ধর্মঃ ইসলাম
স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম-ছাতিয়ানি, উপজেলা-হেমায়েতপুর
জেলা-পাবনা
শহীদ ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী
নিহত/নিখোঁজ হওয়ার সময় ঠিকানাঃ জলপাইগুড়ি হাউজ, বাড়ি নং-৭৫, সড়ক-সিদ্ধেশ্বরী রোড, থানা-রমনা, জেলা-ঢাকা
জন্মঃ ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২। পাবনা
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
ম্যাট্রিকঃ মেধা তালিকায় স্থান, ১৯৪৮, পাবনা জিলা স্কুল
আইএসসিঃ মেধা তালিকায় স্থান, ১৯৫০, ঢাকা কলেজ
এমবিবিএসঃ ১৯৫৫, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, অ্যানাটমি ও ফার্মাকোলজিতে অনার্স মার্কস; চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম স্থান
এম আর সি পি (কার্ডিওলজি) ১৯৬০, রয়েল কলেজ অব ফিজিসিয়ানস, লন্ডন, ইউ কে
এম আর সি পি (ইন্টারনাল মেডিসিন) ১৯৬২, রয়েল কলেজ অব ফিজিসিয়ানস, লন্ডন, ইউ কে
শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কারঃ এমবিবিএস চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বর্ণপদক লাভ
শখঃ সঙ্গীত চর্চা, আলোকচিত্র গ্রহণ, বইপড়া ইত্যাদি
চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক রচনাঃ ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ও ল্যান্সেটে তার রচিত অনেক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত
হত্যাকারীর পরিচয়ঃ বহুল আলোচিত কাদা মাখা মাইক্রোবাসে আগত বাহিনী
নিহত/নিখৌঁজ হওয়ার তারিখঃ ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ বিকেল ৪টায় নিখোঁজ, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে নিহত
মরদেহঃ
প্রাপ্তি স্থানঃ রায়ের বাজার বধ্যভূমি, ঢাকা
সন্ধানদানকারীর পরিচয়ঃ জনৈক সাংবাদিক
কবরস্থানঃ আজিমপুর নতুন কবরস্থান
স্মৃতিফলক/স্মৃতিসৌধঃ আলাদাভাবে নেই। বিএমএ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ চিকিৎসক স্মৃতিফলকে নামাঙ্কিত আছে
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরস্কারঃ ঢাকা ডেন্টাল কলেজ পদক। ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি ছাত্রাবাসের নামকরন
স্ত্রীর নামঃ ডা. জাহান আরা রাব্বী(মরহুমা)
বিয়েঃ ৮ জানুয়ারি ১৯৫৭
সন্তান-সন্ততিঃ এক পুত্র ও দুই কন্যা
নাসরিন সুলতানাঃ এমএ (ইতিহাস)
ওমর রাব্বীঃ বিএ, ব্যবসায়ী
ড. নূসরাত রাব্বীঃ পিএইচডি, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। সায়েন্টিস্ট, Genertech, CA, USA.
তথ্য প্রদানকারী
ড. নুসরাত রাব্বী
শহীদ চিকিৎসকের কন্যা
গ্রাম-ছাতিয়ানি, উপজেলা-হেমায়েতপুর
জেলা-পাবনা
২৩০ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
আমার স্বামী
শহীদ ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী
ডা. জাহানারা রাব্বী
ডাক্তার মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী, প্রফেসর অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড কারডিওলজিস্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ-এই তাঁর পরিচয়। তার চেয়েও বড় এবং সত্য পরিচয় হলো তিনি একজন মানুষ ছিলেন। সত্যিকারের মানুষ যেমন সচরাচর চোখে পড়ে না।
আমি তাঁর স্ত্রী, তাঁরই সন্তানদের জননী। আমি নিজেকে ধন্য মনে করি এমন একজন মানুষের জীবন সঙ্গিনী ছিলাম বলে। পৃথিবীর সুখী মহিলাদের মধ্যে আমি ছিলাম অন্যতমা।
আমার কথা হলো, আজ আমাকে কিছু বলতে হবে। তিনি আমার স্বামী। এও সত্যি তিনি এ দেশে সব স্তরের মানুষের মধ্যে বহুল পরিচিত ছিলেন। বহুলোকই তাঁকে ঠিক আপনজন বলেই জানতো। এই আপন করে নেয়ার আর সহজভাবে গিয়ে পাশে দাঁড়াবার একটা সহজাত ক্ষমতা তাঁর ছিল, যা মনে হতো কেবল তাঁকেই মানাতো।
বছর ঘুরে এলো। অনেকের মুখে অনেক কথা শুনি। ভাবি, ১৩, ১৪ ১৫—কোনো সঠিক তারিখ সাধারণ লোক জানে না। আমার দায়িত্ব ঠিক খবরটি দেশবাসীকে পৌছে দেয়ার। ১৫ ডিসেম্বর। বিকেল ৪টা। আর একটু পেছন থেকে বলছি।
১১ ডিসেম্বর। আমি অফিসে গিয়ে দেখি দুই-তিনজন ছাড়া কেউ নেই। সারা অফিস খালি। আমি হাসপাতালে তাঁর কাছে গেলাম। আরও কয়েকজন প্রফেসর বসেছিলেন। ইতস্তত করে কথাটা বললাম, ‘দেখুন সবাই বলছে তাড়াতাড়ি শহর ছেড়ে চলে যেতে। আর বোধহয় থাকা ঠিক হবে না।’ বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতে আমি আবার তাঁকে বললাম, ‘দেখো গো, কোথাও যেতে হয়।’ তিনি বললেন, ‘আচ্ছা দেখি কারো সঙ্গে আলাপ করে। আজ বিকেলে কিছু ঠিক করা যাবে।’ হাসপাতাল থেকে প্রায় রোগীরা বিদায় নিচ্ছে তখন।
আপনারা যারা ঢাকায় ছিলেন নিশ্চয়ই জানেন, ঢাকায় তখন কী ভয়াবহ পরিস্থিতি। সেদিনই হঠাৎ বেলা ৩টার সময় কারফিউ জারি হলো। আমি চমকে
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ২৩১
শহীদ ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী
উঠলাম। ‘টিঙ্কুর আব্বা, ওরা কি জানে আমরা পালাবো আজ?’ আমি প্রশ্ন করলাম। ডা. রাব্বী বিমূঢ় হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। ‘যুদ্ধের সময় পৃথিবীর কোথাও কোনো কারফিউ দেয়ার রীতি নেই। এবার হয়তো ওরা আমাদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে মারবে’, স্বামী বললেন। ১২ তারিখ কারফিউ উঠলো না। ১৩ তারিখ দুই ঘণ্টার জন্য উঠলো। ১৪ তারিখ উঠলো না। ১৫ তারিখ অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর। আমার মনে আছে-ছবির মতো সবই ভাসছে অহরহ প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি কথাই ভাসে। তাও আমি চলি, চলছি—বেঁচে থাকা পর্যন্ত চলতে হবে। আমি মিসেস রাব্বী। ডাক্তার রাব্বীর স্ত্রী। তাঁর ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে হবে।
১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর রাতে এক স্বপ্ন দেখলাম। একটা সাদা সুতির চাদর গায়ে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি জেয়ারত করছি একটা জায়গায়—সেখানে চারটা কালো থামের মাঝখানে সাদা চাদরে ঘেরা কী যেন আছে। ১৫ ডিসেম্বর সকালে আমি আমার স্বামীকে স্বপ্নটা বললাম, তিনি চুপ করে শুনলেন। আমি প্রশ্ন করলাম, ‘এটা কী দেখলাম গো? মক্কা শরীফ না মদিনা শরীফ?’ একটা কালো ছায়া নেমে এলো তাঁর মুখে। আমি যেন এখনও স্পষ্ট দেখতে পাই। বললেন-‘তুমি বোধহয় আমার কবর দেখেছো টিঙ্কুর আম্ম।’ আমি যেন তড়িতাহত হয়ে টেলিফোনটা টেনে তার সামনে এনে বললাম—‘ফোন কর কে কোথায় আছেন।’ কয়েকজন প্রফেসরের বাড়িতে তিনি ফোন করলেন-বেশিরভাগ লোকই তিনি বাড়িতে পেলেন না। ঢাকার প্রায় টেলিফোন তখন অকেজো। অসম্ভব ভয় লাগছিল আমার। ভয়ে সিঁটিয়ে আসছি তখন। ঝাঁকে ঝাঁকে ঝলকে ঝলকে আকাশে প্লেন আসছে। রকেট ফেলছে, শেল পড়ছে। হঠাৎ বেলা ১০টার দিকে শোনা গেল কারফিউ উঠেছে।
২৩২ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
শহীদ ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী
দুই ঘণ্টার জন্য। তিনি গাড়ি নিজে বের করে পুরান ঢাকায় যাবেন এক অবাঙালি রোগী দেখতে। আমি পেছনে পেছনে নেমে এলাম একতলায়, বললাম-‘যেয়ো না তুমি, ও তো অবাঙালি।’ তিনি হাসলেন। হাসি ছাড়া তিনি কথা বলতেন না। ‘ভুলে যেয়ো না সে মানুষ।’ আমি আবার বললাম, ‘তুমি যে বলো আজই ওরা আত্মসমর্পণ করবে। তো মিরপুর, মোহাম্মদপুরের লোকদের আমরা ক্ষমা করতে পারবো?’ গাড়ি থেকে মুখ বাড়িয়ে তিনি বললেন, ‘আহা ওরাও তো মানুষ। তাছাড়া ওদের দেশ নেই’। আমি বললাম, ‘কিন্তু এতো সবের পর ওদেরকে ক্ষমা আমরা কেমন করে করবো?’ ‘হ্যাঁ, ক্ষমাও করবে এবং আমাদের স্বাধীন দেশে থাকতেও দেবে।’
স্বাধীন বাংলার এতো স্বপ্ন দেখতেন ডা. রাব্বী। দেশকে এতো ভালোবাসতেন। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এতো সাহায্য করেছিলেন আমার স্বামী। কিন্তু স্বাধীনতা তিনি দেখে যেতে পারেননি, পারেননি দেখে যেতে স্বাধীনভাবে গর্বিত সে রক্তচিহ্নিত পতাকা। তাঁকে দেখতে দেয়া হয়নি। মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য। আমাদের একমাত্র ছেলে টিঙ্কু, বয়স তখন ১৩ বছর। সে-ও চলে গিয়েছিল মুক্তিসংগ্রামে যোগ দিতে। দু’মাস পরে তার বাবা গিয়ে তাকে সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে আনে।
সাড়ে এগারোটায় তিনি বাড়ি এলেন-অনেক মাছ, গোশত-সবজি নিয়ে। হেসে বললেন, ‘দেখো কতো কী এনেছি। সারেন্ডারের সময় এখন, খুব গোলমাল হবে। কোনো জিনিস পাওয়া যাবে না। একি, তুমি এতো ভয় পাচ্ছে কেন? তোমার এতো সাহস, এতো বুদ্ধি। চালো মুর্শেদ ভাইয়ের বা মইনুল ইসলাম সাহেবের বাসা থেকে ঘুরে আসি, আমি স্তব্ধ হয়ে শোবার ঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। ছেলেকে নিয়ে তিনি চলে গেলেন। আমি একটা সুটকেস গুছিয়ে তৈরি হয়েই ছিলাম। আমি যাবোই। যেতেই হবে আমাদের। দুপুর ১২টায় কারফিউ। তিনি এলেন। খেলাম আমরা। খাবার টেবিলে বললেন, ‘আজকের দিনে এত ভালো থাবার খেলাম। খুব ভালো খাওয়ালে তো তুমি।’ আমি চুপ করে ছিলাম। কেননা রান্না আমাদের সেদিন হয়নি নতুন করে-আগের দিনের তরকারি। বোমা পড়ছে, যুদ্ধ চলছে। রেডিওতে বিভিন্ন ভাষায় ইন্ডিয়ান আর্মি স্টাফ জেনারেল মানেকশর আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাচ্ছেন, এক অজানা সর্বনাশা ভয়ে আমি কুঁকড়ে আসছি। দুপুরে আমি তাঁকে অনুরোধ করলাম, ‘চলো এখন যাই। একটা অ্যাম্বুলেন্স ডাকো’: একটা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য তিনি ফোনও করেছিলেন। পরে বললেন, ‘আচ্ছা দুপুরটা একটু গড়িয়ে নিই।’ আমার মুখে কোনো কথাই জোগালো না। আমি আস্তে আস্তে কেমন যেন নির্জীবী হয়ে আসছিলাম। বিকেল চারটা। আমাকে একটা লিব্রিয়াম খাওয়ালেন। হেসে ছেলেমেয়েদের ডেকে বললেন, ‘দেখো তোমার আম্মা কেমন ভয়ে নীল হয়ে যাচ্ছে।’ বারান্দায় দাঁড়িয়ে তিনি প্লেন থেকে রকেট পড়া দেখছিলেন। আমি ডাকলাম, ঘরে আসে’। ‘স্পিটার ছুটে এসে লাগতে পারে।’ আমি খাটে শুয়ে। তিনি মাথার কাছে দাঁড়িয়ে ডান হাত আমার বাঁ গালে রাখলেন। হেসে বললেন, ‘মনি ভয় পেয়ো না। এই তো স্বাধীন হয়ে গেল।’ আমি তাকিয়ে ছিলাম তাঁর চেহারার দিকে। বিরাট চেহারা। হাসিতে উজ্জ্বল চোখ-মুখ লাল হয়ে উঠেছে। ‘কথা বলছে না যে? চা খাবে?’ জিগ্যেস করলেন তিনি। বিমূঢ় আমি তাকিয়েই আছি। কলিং বেল টিপলেন। বাবুর্চি এলো, ফিসফিস করে বললো, ‘সাহেব বাড়ি ঘিরে ফেলেছে ওরা-গাড়ি।’ তিনি সোজা সামনের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন। আমিও গিয়ে দাঁড়ালাম। হ্যাঁ—বহু রাজাকার, আলবদর, আর্মি। একটা সাদা কাদা মাখানো মাইক্রোবাস, একটি জিপ। তিনি নিচু গলায় পেছনে না ফিরেই বললে, ‘টিঙ্কুর আম্মা, আমাকে নিতে এসেছে।’ আমি মুহুর্তে দৌড়ে গিয়ে তিন ছেলেমেয়েকে ওদের শোবার ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করলাম। কাছের এক বাড়ির ভদ্রলোক বারান্দায় ছিলেন, তাকে চিৎকার করে ডাকলাম। তারপর দেখলাম আশপাশের সব দরজা-জানালা বন্ধ হয়ে গেল। আমি দৌড়ে সামনের বারান্দায় এলাম। ইতোমধ্যে ডা. রাব্বী দারোয়ান ইদ্রিসকে ডেকে তালা বন্ধ করে সদর দরজা ও সিঁড়ির দরজা খুলে দিতে বলেছিলেন। এসে দেখলাম তিনি ওদের সঙ্গে হাঁটতে শুরু করেছেন। চারদিক থেকে পাঁচ-সাতজন সশস্ত্র সৈন্য তাঁকে ঘিরে আছে। তিনি নামতে শুরু করলেন সিঁড়ির দরজা পেরিয়ে। আমি দৌড়ে গিয়ে বাধা দিতে চেষ্টা করলাম। ‘হল্ট’ বলে দু’জন এগিয়ে এসে আমার বুকে বন্দুকের নল চেপে ধরলে, আমি স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি দেখলাম পেছনে থেকে তিনি মাথা উঁচু করে হেঁটে গিয়ে গাড়িতে উঠলেন। গাড়িটা আস্তে অন্তে চলতে শুরু করলো। ওরা আমার বুক থেকে বন্দুক নামালো। তখন বেলা চারটা-১৫ ডিসেম্বর কয়েক মিনিটের জন্য জ্ঞান হারিয়েছিলাম। তারপর টেলিফোন করতে লাগলাম চারদিকে পাগলের
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ২৩৩
শহীদ ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী
মতো। অবশেষে কর্নেল হেজাজী স্বীকার করলেন, ‘ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী ও ইউনিভার্সিটি থেকে বিশজন প্রফেসরকে নিয়েছি। রাজনৈতিক অপরাধবশত। ‘কাল দেখা যাবে।’ কাল সকাল আর তাঁদের জীবনে আসেনি। ১৬ ডিসেম্বরের সূর্যলাল আকাশ তাঁদের জন্য ছিল না। ১৫ ডিসেম্বর দিনগত রাত তিনটায় লালমাটিয়া ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে ট্রাকে তুলে এঁদেরকে রায়ের বাজারের ইটখোলায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে সে সময়ে খুন করা হয়। আমি শুনতে পেয়েছিলাম তাঁর মরনাহত সে আর্তনাদ, কেমন করে তা আজও জানি না। আমি বসে ছিলাম ঘরে, তখনও কারফিউ চলছে, ব্ল্যাকআউট, ‘টিঙ্কুর আম্মা’ তীব্র আর্ত একটা চিৎকার। আমি অন্ধকারের মধ্যেই শোবার ঘরের দরজা খুলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে ছুটে গেলাম- সিঁড়ির দরজা বন্ধ। বাবুর্চি, দারোয়ানরা আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে শোবার ঘরে রাখলো। একটা ছেলে যে বেঁচে আসতে পেরেছিল সে-ই পরে এসে একথা আমাকে বলে গিয়েছিল-গুলি করার সঙ্গে সঙ্গেই ‘টিঙ্কুর আম্মা’ বলেই তিনি পড়ে গিয়েছিলেন।
আর সে রাত দশটায় ডা. রাব্বীকে প্রশ্ন করেছে। পাক আর্মি, ‘তুমি ডা. রাব্বী?’
‘হ্যাঁ।’
‘কত টাকা দিয়েছিলে মুক্তিযোদ্ধাদের?’
আমি সরকারি চাকুরে, তাদের আমি কোনো আর্থিক সাহায্য করিনি।’ ধীর শান্ত উত্তর। অনেকে কেঁদেছে বন্দিদের মধ্যে, প্রাণভিক্ষা চেয়েছে। তিনি অবিচলভাবে মৃত্যুর প্রতীক্ষা করেছেন। মাথা নোয়াননি।
‘আমাদের যখন মেরেই ফেলবে তো ওদের সঙ্গে কথা বলা বৃথা।’ তিনি বলেছিলেন শান্তস্বরে। এই আমার স্বামী।
১৬ ডিসেম্বর সকাল। আমার স্বামী সম্বন্ধে ফোনে খোঁজ করাতে কর্নেল হেজাজী বললেন, ‘তাদের কী হয়েছে আমি জানি না।’ ওদের এ ধরনের কথার অর্থ তখন আমরা ধরতে শিখেছি। মেরে ফেলার পরই ওরা ব্যক্তিদের সম্পর্কে কিছু জানে না। আমি একটা অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আমার স্বামীর দেহ খুঁজে বের করার জন্য ইউনাইটেড নেশন্সের চেয়ারম্যান জন কেলির কাছে গিয়েছিলাম। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তখন সারেন্ডারের টার্মস সম্পর্কে মিটিং চলছে। পাকিস্তান ও ইন্ডিয়ান আর্মিদের ছোটখাটো একটা খণ্ডযুদ্ধের সামনে পড়লাম।
১৮ ডিসেম্বর। অবশেষে তাঁর মৃতদেহ খুঁজে বাড়ি আনলো আমার এক আত্মীয়। হ্যাঁ, তিনি ঘুমিয়ে আছেন শান্তিতে। মুখটা ডানদিকে একটু হেলানো। বাঁ দিকের গালের হাড়ে ও কপালের বাঁ পাশে বুলেটের ছিদ্র। সারাটা বুকে বহু বুলেটের চিহ্ন-কত আমি গুনিনি। তবে একথা মিথ্যে যে তাঁর বুক কেটে ফেলা হয়েছিল। আমি সে বুক দু’হাতে ধরে দেখেছি।
তারপর দীর্ঘ দু’মাস। আবছা মনে পড়ে— মাঝে মধ্যে। কত লোক বহু ভিড়। আমি কোনো লোক চিনতে পারতাম না, কিছু ভালো মনে করতে পারতাম না। আমি কাঁদতে পারিনি তাঁকে দেখে। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। আজও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। ভুল হয়—তিনি আছেন। হ্যাঁ, আমার জন্য তিনি আছেন—আছেন আমার দৃষ্টিতে, অনুভুতিতে, চেতনায়, আমাকে ঘিরেই তিনি আছেন, আছেন আমাদের ছেলেমেয়েদের ঘিরে। আমি একা নাই। তিনি আছেন আমার মাঝেই।
আমাদের পৃথিবীতে যখন জন্ম একদিন তখন মৃত্যুও একদিন হবে। আমার স্বামীর সঙ্গে আমার কথাই ছিল তিনি আগে যাবেন। প্রশ্ন আমার একটাই, ‘কিন্তু এভাবে কেন?’
(লেখিকা ২৫ মে ২০০০ পরলোকগমন করেন)
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ২৩৪
আমার বাবার হত্যার বিচার হলো না
শহীদ ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী
ড. নূসরাত রাব্বী
মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আট বছর। মুক্তিযুদ্ধে আমার আব্বা-আম্মা দু’জনই সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। আমার আব্বার বন্ধুরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলেন সারা দেশে। তাদের সঙ্গে বৈঠক হতো। ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান এভাবে মানুষদের আলাদা করেন না, আমার আব্বা ছিলেন তাঁদেরই একজন। ১৯৭০ সালে তিনি পিজি হাসপাতালে একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেই বক্তৃতায় তিনি তুলেছিলেন পুরো পাকিস্তানে বিনা পয়সায় স্বাস্থ্যসুবিধা দেয়ার প্রস্তাব। গণমুখী চিকিৎসার এই প্রস্তাব। গণমুখী চিকিৎসার এই প্রস্তাব পছন্দ হয়নি শাসকদের। সে সময় তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে আব্বাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ছিল একটি অদ্ভুত চার্জ। বলা হলো, তিনি অতিরিক্ত জনপ্রিয়। আম্মা অনেক চেষ্টা-তদবির করে আব্বাকে ছাড়িয়ে আনতে পেরেছিলেন। সেই ১৯৭০ সালেই পাকিস্তানের সেরা অধ্যাপক হিসেবেও ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ততদিনে ওরা বাঙালিদের খোলাখুলি হুমকি দেয়া শুরু করেছিল। ১৯৭১ সালে আব্বা ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলজি ও ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের জয়েন্ট হেড অব ডিপার্টমেন্ট। আব্বা কিন্তু সেখান থেকেই সোনার মেডেল পেয়েছিলেন। আম্মার সঙ্গেও ছাত্রাবস্থায় তাঁর পরিচয় হয়েছিল এখানেই।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্বা-আম্মা দু’জনই মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষার্থী কিংবা নির্যাতনের শিকার নারীদের চিকিৎসা দিতেন আব্বা। যাঁদের প্রতি পাকিস্তানি বাহিনীর চোখ ছিল, যুদ্ধের সময় আব্বা-আম্মা তাঁদের মেডিকেল কেয়ারে নিয়ে সীমান্ত পার করে দিতেন।
যা-ই হোক, সে সময় আমার ভাইও বাড়ি থেকে চলে যায়। তাকে ফেরত আনা হয় এবং সেসময় ও খুব ছোট ছিল। তখন মুক্তিযুদ্ধের সময়ই আব্বা চিকিৎসাশাস্ত্ৰে বড় এক ফেলোশিপ পেলেন। নাসিল্ড ফেলোশিপ। সুইজারল্যান্ডে। কিন্তু আমাদের যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলো না।
একটি সম্মেলনে অংশ নিতে আম্মা গেলেন সুইজারল্যান্ডে। নভেম্বরে ফিরে
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ২৩৫
শহীদ ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী
এলেন। আব্বার কিন্তু যাওয়া হলো না। মাঝে মধ্যে আব্বাকে দেশ থেকে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। তিনি কোনোভাবেই দেশ ছাড়তে চাননি। তিনি বলতেন, আমি দেশ ছাড়ব কেন? আমার তো কোনো শত্রু নেই।
১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। তখন কারফিউ। আব্বার শেষ রোগী ছিলেন একজন উর্দুভাষী। আম্মা বললেন, তুমি এ মুহুর্তে একজন উর্দুভাষী রোগী দেখতে যাচ্ছ? আব্বা বললেন, আমার চোখে সবাই সমান। আব্বা ফিরে আসার পর আমাদের পুরো বাড়ি ঘেরাও করে ফেলল পাকিস্তানি আর্মি ও আলবদরেরা। পাকিস্তানি সেনাদের পরনে ছিল কালো শার্ট ও খয়েরি প্যান্ট। সঙ্গে বাঙালি ছিল। ১০০ জনের ওপরে ছিল তারা। পুরো কম্পাউন্ড ঘিরে ফেলল তারা। ওদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনোভাবেই সরে যাওয়ার উপায় ছিল না। ওরা ভেতরে ঢোকার সময় আম্মা ওদের বাঁধা দেন। বলেন ‘ওনাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাও?’
‘রোগী দেখতে ক্যান্টনমেন্ট।’ আমরা বুঝতে পারছিলাম, রোগী দেখার জন্য আব্বাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। আম্মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ওরা। আম্মা পড়ে যান। সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন।
আব্বা পরিষ্কার বাংলায় বললেন, আমার গায়ে হাত দেবে না। চলো।
তিনি বেরিয়ে গেলেন। ১৫ ডিসেম্বর, বিকেল চারটা। এ সময়টি আমাদের জীবনে স্থির হয়ে রইল। তখন আমাদের বাড়ি ছিল সিদ্ধেশ্বরীতে, ভিকারুননিসা স্কুলের কাছে। ৭৫ জলপাইগুড়ি লেন। এখন সেই বাড়িটি আর নেই। আম্মার যখন জ্ঞান ফিরে এলো, তখন তিনি পরিচিত সবার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। কেউ একজন জানাল, আব্বার নামে অভিযোগ আছে।
সেইদিন রাত তিনটার সময় ওরা আবার আসে। এবার হয়তো আম্মাকে নিতে এসেছিলো। আম্মা দরজা খুলতে চেয়েছিলেন। আমরা তাতে বাধা দিই। বলি, ‘তুমি বের হয়ে না। ওদের আসতে দাও।’ আধা ঘণ্টা ছিল ওরা, এরপর চলে গেল। ১৬ ডিসেম্বর সকালে ওঠে আম্মার প্রথম কথা, এটা তো স্বাধীনতার সূর্য। ও এই সূর্য দেখতে পেল না।
১৮ ডিসেম্বর একজন সাংবাদিক ফোন করেছিলেন। সেদিন বাড়িতে শত শত লোক। বলা হলো, আব্বাকে পাওয়া গেছে। আব্বা তখন শুধুই লাশ। আমার আম্মা স্বাধীনতার পর খুঁটির মতো আমাদের আগলে রেখেছেন।
আমাদের মতো অনেক পরিবার কিন্তু হারিয়ে গেছে। আম্মা না থাকলে আমরা আজ কোথায় হারিয়ে যেতাম, তা ভাবতেও পারি না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের যুদ্ধাপরাধী সঙ্গীদের বিচার কিন্তু এখনো হচ্ছে। অথচ আব্বাসহ যাঁদের হত্যা করেছিল যুদ্ধাপরাধীরা, তাদের বিচার এখনো হলো না। আমি ওদের বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চাই।
অনুলিখনঃ জাহীদ রেজা নূর
২৩৬ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
শহীদ ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী
প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্রঃ
ক. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা; তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; প্রকাশকালঃ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২।
খ. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক তালিকা; বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যালয় বিএমএ ভবনে(তোপখানা রোড, ঢাকা) শোভিত স্মৃতিফলকে উৎকীর্ণ। (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)
গ. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে, দলিলপত্র; সম্পাদনাঃ হাসান হাফিজুর রহমান; প্রকাশনাঃ তথ্য মন্ত্রণালয়, গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; প্রকাশকালঃ আষাঢ় ১৩৯১; জুন ১৯৮৪; ৮ম খণ্ড; পৃ. ৭০৭ ।
ঘ. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট; প্রকাশনাঃ বাংলাদেশ ডাক বিভাগ; ১ম পর্যায়; ১৯৯১ । (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)
ঙ. স্মৃতি ১৯৭১; সম্পাদনাঃ রশীদ হায়দার; প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী; ২য় খণ্ড, ২য় পুনর্মুদ্রণ, প্রকাশকালঃ শ্রাবণ ১৪০৯, আগস্ট ২০০২; পৃ. ২১ ।
চ. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক স্মৃতিকথা; সম্পাদনাঃ প্রকৌশলী ইফতিখার কাজল; প্রকাশনাঃ রক্তঋণ; প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২; পৃ. ৮ ।
ছ. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সেগুনবাগিচা, ঢাকায় সংরক্ষিত শহীদ চিকিৎসকের স্মারক সামগ্ৰী।
জ. চারিতাভিধান; সম্পাদনাঃ সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম; প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী; ২য় সংস্করণ; প্রকাশকালঃ মাঘ ১৪০৩, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭; পৃ. ৩২২।
ঝ. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারকগ্রন্থ; প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী; ১ম পুনর্মুদ্রণ, প্রকাশকালঃ পৌষ ১৪০০, জানুয়ারী ১৯৯৪; পৃ. ১৭।
ঞ. শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ; সম্পাদনাঃ রশীদ হায়দার, প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী, প্রকাশকালঃ অগ্রহায়ণ ১৩৯২, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৮৫; পৃ. ৭৭ ।
ট. দৈনিক সংবাদ বিশেষ সংগ্রাহক সংখ্যা-৩, যেসব হত্যার বিচার হয়নি; পরিকল্পনায়ঃ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। প্রকাশকালঃ সোমবার ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৮; পৃ. ৪, ৯, ১৭, ২৬, ৩৫, ৪৩।
ঠ. মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস; সম্পাদনাঃ আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন; প্রকাশনাঃ সাহিত্য প্রকাশ; প্রথম খন্ড।
ড. সেই রাজাকার; প্রকাশনাঃ মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ, জনকণ্ঠ প্রকাশনী; প্রকাশকালঃ ৪ জুলাই ২০০১; পৃ. ২৪৪।
ঢ. একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়; সম্পাদনাঃ ড. আহমদ শরীফ, কাজী নূর-উজ্জামান এবং শাহরিয়ার কবির; প্রকাশনাঃ মুক্তিযুদ্ধ, চেতনা বিকাশ কেন্দ্র; ৪র্থ সংস্করণ প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৩৯৫, ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯; পৃ. ৭৮।
ণ. সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ‘হানাদার বাহিনীর সহযোগী আলবদরদের হত্যার শিকার কয়েকজন’, জাতীয় দিবস সংখ্যা-১৯৭৩।
ট. বীরের এ রক্তস্রোত মাতার এ অশ্রুধারা; লেখকঃ রফিকুল ইসলামঃ প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী; প্রকাশকাল; ২৮ অগ্রহায়ণ, ১৩৮০, ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭৩; পৃ. ১৭২।
ঠ. দু’শো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা; লেখকঃ মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ নুরুল কাদির; প্রকাশনাঃ মুক্ত প্রকাশনী, ঢাকাঃ ৯ম সংস্করণ, প্রকাশকালঃ ১৩ মে ২০০২; পৃ. ৩৫৭।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ২৩৭
Reference: মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ