You dont have javascript enabled! Please enable it!

সামরিক শাসন : বৈধকরণ প্রক্রিয়া

ফাইনার বলেন, “যে-সব সরকার বলপূর্বক ক্ষমতায় আসে তাদের একের পর এক চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়তে হয়। অতএব এ ধরনের সরকার পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়, অথবা নিজেদের দ্রুত রূপান্তরিত করে। অর্থাৎ তারা নিজেদের শাসন বৈধকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।১

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতা দখলকারী সামরিক সরকারের প্রধান ছিলেন খন্দকার মােস্তাক আহমদ। তিনি সামরিক ও রাজনৈতিক এলিটদের নিকট থেকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন এবং ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মােশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন। খালেদ মােশাররফ কর্তৃক সরকারের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণের মাত্র চার দিন পর, অর্থাৎ ৭ নভেম্বর এক পাল্টা অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন, এবং ঘটনাক্রমে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান (জিয়া) “শক্ত মানব” হিসাবে আবির্ভূত হন। জিয়া সফলতার সঙ্গে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মােকাবেলা করেন এবং তাঁর সরকারের বৈধতা অর্জনের জন্য এক পর্যায়ক্রমিক ‘বেসামরিকীকরণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন। অবশেষে ১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হয়।

এই পর্যায়ে খন্দকার মােস্তাকের পতন এবং জিয়ার উত্থান ও তাঁর “বেসামরিকীকরণ” প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করা হবে।

১. ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থান ও মােশতাক পতন 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক ঘােষণার মাধ্যমে মােশতাক আহমদ রাষ্ট্রপতি হিসাবে “সরকারের সকল ও পূর্ণ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। বাকশাল ভেঙে দেয়া হয় এবং সকল প্রকার রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়নি। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত সামরিক আদেশ-নির্দেশ সাপেক্ষে সংবিধানও বলবৎ রাখা হয়।২

রাষ্ট্রপতি মােশতাক ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকে একটি ঐতিহাসিক অনিবার্যতা” বলে বর্ণনা করেন এবং তিনি মুজিব সরকারের অপশাসন ও স্বৈরাচার”-কে এজন্য দায়ী করেন। তিনি ১৯৭২ সালের “গণতান্ত্রিক ও সর্বজন প্রশংসিত” সংবিধানকে পরিবর্তন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের ওপর দোষারােপ করেন এবং সংসদীয় গণতন্ত্র 

১৭০

পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি ঘােষণা করেন যে, ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট হতে রাজনৈতিক কার্যকলাপের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে এবং একটি সার্বভৌম সংসদ প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।৩

মােশতাক তাঁর সরকারের জন্য নতুন কোনাে সমর্থন ভিত্তি তৈরি না করে আওয়ামী লীগের ওপর তার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার কৌশল অবলম্বন করেন।৪

কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগারদের নিকট থেকে উল্লেখযােগ্য সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হন। আওয়ামী লীগ দল এবং সংসদ-সদস্যদের এক বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মােশতাক ও তাঁর অনুচরদের হত্যাকারী হিসেবে নিন্দা ও প্রত্যাখ্যান করে এবং “নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কারামুক্তি দাবি করে।৫

পূর্ব-বাংলার সাম্যবাদী দল (এম এল), জাসদ, ইউ, পি, পূর্ব বাংলার কম্যুনিস্ট পার্টি, (এম-এল), জাগমুই, প্রভৃতি বামপন্থী দল বাংলাদেশের ওপর কথিত “রুশভারত আধিপত্য” অবসানের পদক্ষেপ হিসাবে মুজিব সরকারের উৎখাতকে স্বাগত জানায়। কিন্তু তারা মােশতাক সরকারের প্রতি সক্রিয় সমর্থন দেয়নি। কারণ, এই সরকার ছিল পূর্বতন মুজিব সরকারেরই এক নতুন সংস্করণ। বামপন্থী দলগুলাের অনেককে আটক রাখার কারণেও তারা মােশতাক সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল।৬

মােশতাক সরকার সশস্ত্র বাহিনীসমূহেরও ব্যাপক সমর্থন পায়নি। উর্ধ্বতন সামরিক অফিসারদের অনেকেই (যারা ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না) বিক্ষুব্ধ ছিলেন এই কারণে যে, এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী অধস্তন অফিসারগণ সামরিক শৃংখলা ভঙ্গ করে তাদের ট্যাংক ও লােকজনসহ বঙ্গভবনে (রাষ্ট্রপতি ভবন) অবস্থান এবং কার্যত সরকার পরিচালনা করছিলেন।৭

তাছাড়া অভ্যুত্থানের নেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত ও আদর্শগত দ্বন্দ্বের কারণে মােশতাক সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে।৮

তৎকালীন সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান বিগ্রেডিয়ার খালেদ মােশাররফ সামরিক অফিসারদের একাংশের অসন্তোষ ও সরকারের দুর্বল রাজনৈতিক ভিত্তির সুযােগে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর তারিখে এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মােশতাক সরকারকে সরিয়ে নিজে ক্ষমতা গ্রহণ করেন।৯

আগস্ট অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত ১৫ জন সামরিক অফিসারকে নিরাপদে দেশের বাইরে চলে যেতে দেয়া হয়। খন্দকার মােশতাককে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মােহাম্মদ সায়েমের নিকট রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হয়। জেনারেল জিয়াকেও সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং তাঁকে গৃহবন্দি রাখা হয় । খালেদ মােশাররফ ব্রিগেডিয়ার থেকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন এবং সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মন্ত্রিসভা ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। তবে সংবিধানের আনুষ্ঠানিক অস্তিত্ব বজায় থাকে ।

১৭১

২. ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান ও জিয়ার উত্থান 

৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থান ছিল স্বল্পস্থায়ী। চীন-সমর্থক বামপন্থী দলসমূহ এবং সামরিক বাহিনীর একাংশ এই অভ্যুত্থানকে রুশ-ভারত সমর্থিত অভিযান বলে মনে করে। জাসদ ও সাম্যবাদী দল সেনানিবাসসমূহে বিলিকৃত অসংখ্য প্রচারপত্রে খালেদ মােশাররফকে ভারতের চর বলে আখ্যায়িত করে এবং ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানকে বাংলাদেশ “রুশ-ভারত চক্রের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা বলে অভিযােগ করে। তারা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের খালেদ মােশাররফের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার আহ্বান জানায়। ৩ নভেম্বরের পরিবর্তনের সমর্থনে ৪ নভেম্বর তারিখে খালেদ মােশাররফের মা ও ভাই (যিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় একজন প্রাক্তন সংসদসদস্য)-এর নেতৃত্বে পরিচিত মস্কোপন্থী ও মুজিব সমর্থকদের মিছিল ও ভারতীয় সংবাদপত্রের উল্লাস উপযুক্ত অভিযােগকে জোরদার করে।” 

তাছাড়া, সাধারণ সৈনিকদের মধ্যে জিয়া অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন এবং খালেদ মােশাররফ সৈনিকদের নিকট তার অভ্যুত্থানের যথার্থতা ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হন।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর প্রত্যুষে ঢাকায় সৈন্যরা খালেদ মােশাররফের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তারা জিয়াকে বন্দিশালা থেকে মুক্ত করে সেনাবাহিনীর স্টাফ-প্রধান পদে পুনঃঅধিষ্ঠিত করে। জিয়া নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে ঘােষণা এবং তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু সামরিক বাহিনীর মধ্যে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজমান মতভেদের কারণে জিয়া আপতত নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেন এবং সরকারের আইনগত ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চান। সুতরাং ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় জিয়া প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং একজন ‘নির্দলীয় অরাজনৈতিক” ব্যক্তি হিসাবে বিচারপতি সায়েমকে রাষ্ট্রপতিরূপে মেনে নেন। তবে সেনাবাহিনীর স্টাফ-প্রধান হিসাবে তাঁর হাতেই প্রকৃত ক্ষমতা থেকে যায়।

১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বর এক সামরিক ঘােষণার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি সায়েম নিজে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রধানত্রয়কে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা আগের মতােই বাতিল থেকে যায় এবং সামরিক আইন আদেশ সাপেক্ষে সংবিধান বহাল থাকে। তিনি একদলীয় ব্যবস্থা সম্পর্কিত সাংবিধানিক ধারা রহিত করেন এবং ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।১১

অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ৭ নভেম্বরের সিপাহী অভ্যুত্থানকে স্বাগত জানায় এবং নতুন সরকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। তবে চীনপন্থী বাম দলগুলােই সবচেয়ে সােচ্চার ছিল। ন্যাপ নেতা মাওলানা ভাসানী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সরকারকে সমর্থনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।১২ পূর্ব-বাংলার সর্বহারা পার্টি, পূর্ব বাংলার সাম্যবাদী দল, পূর্ব-বাংলার ক্যুনিস্ট পার্টি, পূর্ব-বাংলার গণবিপ্লবী পার্টি প্রভৃতি আত্মগােপনকারী বামপন্থী দলগুলাে ৭ নভেম্বরের পরিবর্তনের জন্য 

১৭২

“দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি অভিনন্দন জানায়। কিন্তু তারা সরকারের নিকট দাবি করে যে, বর্তমান সংবিধানকে বাতিল করে জাতীয় সংবিধান, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত প্রশ্নাবলি সীমাংসার জন্য সকল “দেশপ্রেমিক শক্তির” (আওয়ামী লীগ ও মস্কোপন্থী ছাড়া) সমবায়ে একটি “জাতীয় কনভেনশন” আহ্বান করা হােক। তারা “ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ” ও “রুশ সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ”-এর বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি “জাতীয় সরকার” অথবা “জাতীয় প্রতিরােধ কমিটি” গঠনেরও দাবি জানায়।১৩

চরমপন্থী বাম দলগুলাে যখন এভাবে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করে, তখন জাসদ এই অভ্যুত্থানকে সামাজিক বিপ্লবে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।১৪

পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জাসদ ১৯৭৪ সালে বিপ্লবী গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা নামে দুটি সশস্ত্র শাখা প্রতিষ্ঠা করে মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবের প্রস্তুতি নেয়। এই বাহিনীদ্বয় ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান সংগঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ঐদিন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা বিপ্লবের রূপরেখা সম্বলিত এক ১২-দফা দাবিনামা প্রচার করে। সেখানে বলা হয় যে, আমাদের বিপ্লব শুধু নেতৃত্বের পরিবর্তনের জন্য নয়। এই বিপ্লবের একটিই উদ্দেশ্য-নিপীড়িত শ্রেণিসমূহের স্বার্থ। সেই উদ্দেশ্য সামরিক বাহিনীর সমগ্র কাঠামাের পরিবর্তন করতে হবে। ১২-দফা দাবির মধ্যে ছিল : অবিলম্বে সকল রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি, সামরিক বাহিনীর অফিসার ও সাধারণ সৈনিকদের মধ্যেকার পার্থক্য দূরীকরণ, শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ হিসেবে শ্রেণিহীন সামরিক বহিনী গড়ে তোেলা, সাধারণ সৈনিকদের মধ্য থেকে অফিসার নির্বাচন, ব্যাটম্যান’ প্রথা (সাধারণ সৈনিকদের দ্বারা অফিসারদের ব্যক্তিগত ভৃত্যের কাজ করানাে) বাতিল, সৈনিকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি এবং বাড়ি ভাড়া মওকুফ, ইত্যাদি। এতে আরাে দাবি করা হয় যে, প্রত্যেক সামরিক ইউনিটে একটি করে সেনা সংস্থা গঠন করতে হবে এবং ঢাকায় একটি কেন্দ্রীয় বিপ্লবী সেনা সংগঠন থাকবে, যা দেশের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে।১৫

জেনারেল জিয়া কারারুদ্ধ জাসদ নেতাদের মুক্তি দেন এবং সৈনিকদের বেশির ভাগ অর্থনৈতিক দাবি মেনে নেন। কিন্তু তিনি বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার রাজনৈতিক লাইন গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। ফলে জাসদ জিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযােগ আনে এবং তাঁর সরকারকে উৎখাতের জন্য তৎপরতা শুরু করে। ১৯৭৫ সালের ৮ ও ৯ নভেম্বর বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা বিভিন্ন সেনানিবাসে বিদ্রোহ করে এবং শ্রেণি সংগ্রামের অংশ হিসাবে অনেক অফিসারকে হত্যা করে। জাসদ নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার ও নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান। একই সঙ্গে তাঁরা সৈনিক, শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী গােষ্ঠীসমূহের মধ্যে বিপ্লবী কমিটি গঠন করে “জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান জানান।১৬

১৭৩

জেনারেল জিয়া প্রায় দু’সপ্তাহের মধ্যে জাসদ-সমর্থিত বিপ্লবীদের দমন করে সেনাবাহিনীর মধ্যে শৃংখলার আবরণ ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হন। ১৯৭৫ সালের ২৩ ও ২৪ নভেম্বর জাসদ ও তার অঙ্গ-সংগঠনসমূহের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করা হয় এবং তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ও সামরিক বহিনীর মধ্যে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অভিযােগ সামরিক ট্রাইব্যুনালে গােপন বিচার অনুষ্ঠিত হয়। গণবাহিনীর প্রধান কর্নেল (অব) আবু তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড এবং মেজর (অব) জলিল ও আব্দুর রবসহ ১৬ জন জাসদ নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। 

জাসদ ছাড়া অন্যান্য যে-সব দল জিয়ার শাসনকে মেনে নিতে পারেনি তারা। হলাে আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ মােজাফফর)। আওয়ামী লীগ মুজিবের হত্যাকারীদের শাস্তি ও নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি অব্যাহত রাখে। যদিও আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিল, মুজিব ভক্তদের একাংশ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রখ্যাত গেরিলা নেতা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ভারতে প্রস্থান করে এবং সেখান থেকে সশস্ত্র আক্রমণের মাধ্যমে ক্ষমতা “জবরদখলকারীদের উৎখাতের প্রচেষ্টা চালায়।

জেনারেল জিয়া ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী মুজিব সমর্থকদের ব্যাপারে নমনীয় নীতি গ্রহণ করেন। ভারতের দেশাই সরকারের সাথে এক সমঝােতার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার দেশে ফিরে আসতে আগ্রহী মুজিব সমর্থকদের ফিরিয়ে নেয় এবং যারা ফিরে আসতে আগ্রহী নন তাদেরকে ভারত সরকার রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়, কিন্তু তাঁদের বিদ্রোহী কার্যকলাপের ওপর বাধানিষেধ আরােপ করেনি।১৭

জিয়া তার ক্ষমতা সুসংহত করার লক্ষ্যে আরও কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতিরক্ষা খাতে ১৯৭৫-৭৬ সালের মূল বাজেট বরাদ্দ ৭৫ কোটি টাকা থেকে সংশােধিত বাজেটে ১৪৫ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করেন।১৮

বাংলাদেশ লাইফেলস (বি ডি আর) ও পুলিশের শক্তি উল্লেখযােগ্য পরিমাণে। বৃদ্ধি করা হয়। ১২,৫০০ লােকের একটি বিশেষ যােদ্ধা পুলিশ ব্যাটেলিয়ন এবং সেনাবাহিনীর একটি নতুন ডিভিশন গঠন করা হয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধবাদীদের দুর্বল করার লক্ষ্যে জিয়া বিভিন্ন ধরনের পুনর্বিন্যাস ও সৈন্য স্থানান্তরের নীতি গ্রহণ করেন। আগস্ট অভ্যুত্থানের নেতাদের দেশে ফিরে এসে ক্ষমতা পুনর্দখলের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হয় এবং তাদের সমর্থক বিমান বাহিনী-প্রধান এয়ার ভাইস-মার্শাল এম জি তাওয়াবকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।১৯

এই ভাবে জিয়া ১৯৭৬ সালের শেষ নাগাদ তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের অপসারণ করতে সমর্থ হন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালের ৩০ নভেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেন। 

১৭৪

৩. বৈধকরণ প্রক্রিয়া 

রাষ্ট্রপতি সায়েম নিজেকে “অরাজনৈতিক, নির্দলীয় অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান বলে ঘােষণা করেন এবং ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন।২০

জেনারেল জিয়াও বার বার বলেন যে, “আমাদের সরকার সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং “আমাদের সশস্ত্রবাহিনী” সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা”।২১

কিন্তু সামরিক বাহিনীর মধ্যে নিজের ক্ষমতা সুসংহত করার পর তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে মনস্থ করেন এবং তাঁর শাসন বৈধকরণের লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমিক “বেসরকারিকীকরণের নীতি অনুসরণ করেন।

১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি “রাজনৈতিক দল বিধি” নামে এক আদেশ জারি করেন। এর দ্বারা কতিপয় বাধানিষেধ সাপেক্ষে রাজনৈতিক দল গঠন ও পরিচালনার অধিকার দেয়া হয়। এতে বলা হয় যে, সকল রাজনৈতিক দল তার গঠনতন্ত্র, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি অনুমােদনের জন্য সরকারের নিকট পেশ করবে। সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনাে রাজনৈতিক দল কাজ করতে পারবে না এবং সরকার যে-কোনাে সময় যে-কোনাে দলের কার্যকলাপ বন্ধ করতে পারবে।২২

১৯৭৬ সালের নভেম্বর নাগাদ প্রায় ৬০টি গােষ্ঠী রাজনৈতিক দল হিসাবে। কাজ করার অনুমতি চেয়ে সরকারের নিকট আবেদন করে এবং তাদের মধ্যে ২১টি দল হিসেবে সরকারের অনুমতি লাভ করে। শুরুতে রাজনৈতিক দলগুলােকে জনসভা অথবা মিছিল করার অনুমতি দেয়া হয়নি। তাদেরকে “ঘরােয়া রাজনীতির মধ্যে আবদ্ধ রাখা হয়।

একই সময়ে সরকার ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। কিন্তু রাজনৈতিক দলসমূহ নির্বাচনের প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। ন্যাপ (ভাসানী), ইউ পি পি জাগমুই ও সাম্যবাদী দলসহ চীনপন্থী বাম দলগুলাে (যারা নির্বাচনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিল না) নির্বাচনের যথার্থতা চ্যালেঞ্জ করে বিবৃতি প্রদান করতে থাকে। তারা জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ভারতীয় হুমকি প্রতিরােধের প্রতি বিশেষ জোর দিয়ে দাবি করে যে, নির্বাচনের আগে দেশের মৌল অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা সমূহের সমাধান করতে হবে।২৩ 

কয়েকটি ছােট ডানপন্থী রাজনৈতিক দল (বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় দল, কনভেনশন মুসলিম লীগ), যাদের নির্বাচনে জয়লাভের তেমন কোনাে আশা ছিল না তারাও নির্বাচন স্থগিতের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করে।

অপরপক্ষে, প্রধান ডানপন্থী দলসমূহ (সবুর খানের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ, মােশতাক আহমদের নেতৃত্বধীন ডেমােক্রেটিক লীগ, আতাউর রহমান খানের জাতীয় লীগ, জেনারেল ওসমানীর জাতীয় জনতা পার্টি এবং পূর্বতন জামায়াত-ইইসলামী, নেজাম-ই-ইসলাম ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত ইসলামিক ডেমােক্রেটিক

১৭৫

লীগ নির্বাচনে স্থগিতের দাবিকে অগণতান্ত্রিক ও সংবিধান-বিরােধী বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানায়। আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ক্যুনিস্ট পার্টি, ন্যাপ (মােজাফফর) ও জাসদের শীর্ষ স্থানীয় অনেক নেতা তখন কারারুদ্ধ থাকার ফলে এই দলগুলাে সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল; সুতরাং তারা নির্বাচনের প্রশ্নে প্রায় নীরব থাকে।

যাহােক, সরকার নিজের স্বার্থে নির্বাচন-বিরােধীদের যুক্তিকে গ্রহণযােগ্য বলে মনে করে এবং ২১ নভেম্বর তারিখে ঘােষণা দেয় যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। তবে, ভবিষ্যতে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি হিসেবে সরকার স্থানীয় পরিষদসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সাধারণ নির্বাচন স্থগিতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনাে মহল থেকে তেমন জোরালাে প্রতিবাদ আসেনি। কতিপয় রাজনৈতিক নেতাকে আটক করেই সরকার নির্বাচন-পন্থীদের স্তব্ধ করতে সমর্থ হয়। রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে মতপার্থক্য ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং তাদের দুর্বলতা জেনারেল জিয়াকে সরকারের আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে। কিন্তু তার সরকারের স্থায়ীত্বের জন্য গণবৈধতার প্রয়ােজন ছিল, এবং পর্যায়ক্রমে গণভােট ও জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি বৈধতা অর্জনের চেষ্টা করেন।

ক. গণভােট, ১৯৭৭ 

সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি সায়েম ও সামরিক এলিটদের মধ্যে বিরােধ দেখা দেয়। রাষ্ট্রপতি পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুসারে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষপাতী ছিলেন। সম্ভবত সেই কারণে ১৯৭৭ সালের ৩০ নভেম্বর বিচারপতি। সায়েমকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে জেনারেল জিয়া নিজেই উক্ত পদ গ্রহণ করেন এবং ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি পদেও আসীন হন।

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের অব্যবহিত পরেই, জেনারেল জিয়া ঘােষণা করেন। যে, ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে তার আগে ১৯৭৭ সালের ৩০ মে গণভােট গ্রহণ করা হবে। গণভােটের উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে জেনারেল জিয়ার ব্যক্তিগত বৈধতা প্রতিষ্ঠা করা। গণভােটে ব্যাপক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে জিয়া দু’টি উল্লেখযােগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন : এক, সাংবিধানিক পরিবর্তন ও দুই, আর্থ-সামাজিক কর্মসূচি ঘােষণা।

সাংবিধানিক পরিবর্তন : চতুর্থ সংশােধনীর দ্বারা প্রবর্তিত একদলীয় ব্যবস্থা সাধারণভাবে গ্রহণযােগ্য ছিল না, এবং ৮ নভেম্বর সামরিক ঘােষণার মাধ্যমে একদলীয় ব্যবস্থা সংক্রান্ত সাংবিধানিক ধারা রহিত করে বহুদলীয় ব্যবস্থার পথ উন্মুক্ত করা হয়। এর পরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক গােষ্ঠীর মধ্যে সংবিধান সম্পর্কে গুরুতর অসন্তোষ থেকে যায়। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, চীনপন্থী বাম গােষ্ঠীসমূহ বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে একটা নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি

১৭৬

জানিয়ে আসছিল। অন্যদিকে ডানপন্থী ইসলামী গােষ্ঠীগুলাে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র—এই সব মূল নীতির ঘাের বিরােধী ছিল। তাছাড়া, সংবিধানের কতিপয় ধারা (অনুচ্ছেদ ৩৮, ৬৬ ও ১২২), যেগুলাে রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করে সেগুলাে তারা মেনে নিতে পারেনি। সামরিক বাহিনীর রক্ষণশীল অংশ ইসলামী গােষ্ঠীগুলােকে সমর্থন করে। বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস-মার্শাল তাওয়াব প্রকাশ্যে ধর্মনিরপেক্ষতাকে “ধর্মহীনতা” বলে নিন্দা করেন এবং ইসলামী জীবন পদ্ধতি ও দর্শন-ভিত্তিক সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোরালাে যুক্তি প্রদর্শন করেন।২৪ মাওলানা ভাসানীও “মুজিব সংবিধান”-এর পরিবর্তে একটা “খাটি ইসলামী সংবিধান প্রণয়নের দাবি উত্থাপন করেন।২৫

এই সব অভ্যন্তরীণ শক্তিসমূহ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলাে থেকেও বাংলাদেশের সংবিধানকে ইসলামীকরণের যথেষ্ট চাপ ছিল এবং সরকার এই দাতা দেশগুলােকে সন্তুষ্ট করার প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করে। ২৬

জাতীয়করণকৃত শিল্পসমূহের প্রাক্তন মালিক এবং নব্য ধনিক শ্রেণী বিনা ক্ষতিপূরণে জাতীয়করণের বিরােধী ছিল এবং তারা অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা সম্প্রসারণের জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। তাদের এই দাবি বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জাতীয় লীগ, ভাসানী ন্যাপ ও সাম্যবাদী দলসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সমর্থন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দাতা দেশও বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণ চাচ্ছিল। 

এই সব দেশি-বিদেশি অতৃপ্ত শক্তিকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে সামরিক সরকার কয়েকটি সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সংবিধানের ৬৬ ও ১২২ অনুচ্ছেদের ২(ঘ) ধারা বাতিল করে পাকিস্তানিদের সঙ্গে যােগসাজশের দায়ে দোষী ব্যক্তিদের (যাদের অধিকাংশই ইসলামী দলগুলাের সদস্য ছিলেন) সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতা ও ভােটদানের অধিকার প্রদান করা হয়।২৭

সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের যে শর্তের দ্বারা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনা নিষিদ্ধ ছিল তা বিলােপ করে ইসলামী দলসমূহের পুনরুজ্জীবনের অনুমতি দেয়া হয়।২৮

তাছাড়া, সরকার জাতীয়করণকৃত সম্পত্তির জন্য ক্ষতিপূরণ দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে; বেসরকারি খাতে বিনিয়ােগের সর্বোচ্চ সীমা ৩ কোটি টাকা থেকে ১০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করে এবং সরকারি শিল্প কারখানা থেকে ক্রমান্বয়ে পুঁজি প্রত্যাহারের নীতি গ্রহণ করে। এই সব ব্যবস্থার জন্য সাংবিধানিক অনুমােদনের প্রয়ােজন ছিল। জেনারেল জিয়া তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তি সুসংহত করার জন্য আওয়ামী লীগের বিপরীতে নতুন কিছু মতাদর্শ সৃষ্টির প্রয়ােজনীয়তাও অনুভব করেন। এইসব উদ্দেশে তিনি গণভােটের প্রাক্কালে সামরিক আদেশ বলে আরাে কিছু সাংবিধানিক পরিবর্তন আনয়ন করেন। 

প্রথমত জিয়া “বাঙালি জাতীয়তার স্থলে “বাংলাদেশী জাতীয়তা প্রবর্তন করেন। মূল সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে বিধান ছিল যে, বাংলাদেশের নাগরিকগণ 

১৭৭

“বাঙালি” বলে পরিচিত হবেন এবং ৯ অনুচ্ছেদে বলা হয় যে, বাংলাভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রাম হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। জিয়া ৬ অনুচ্ছেদকে পরিবর্তন করে বিধান করেন যে, বাংলাদেশের নাগরিকগণ। “বাংলাদেশী” নামে পরিচিত হবেন কিন্তু সংবিধানে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা বা ভিত্তি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। পরিবর্তিত ৯ অনুচ্ছেদে অন্য বিষয়ের অবতারণা করে বলা হয় যে, সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে কৃষক, শ্রমিক ও মহিলাদের বিশেষ প্রতিনিধিত্ব দেয়া হবে। সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখিত “জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রাম” শব্দগুচ্ছের পরিবর্তে “জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধ” শব্দগুলাে প্রতিস্থাপিত হয়। এর দ্বারা সামরিক সরকার রাজনীতিকদের দ্বারা পরিচালিত দীর্ঘদিনের বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে খাটো করে ১৯৭১ সালের ৯ মাস ব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে চান, কারণ সে যুদ্ধে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের উল্লেখযােগ্য অবদান ছিল। 

দ্বিতীয়ত মূল সংবিধানের প্রস্তাবনায় এবং ৮ অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে “সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” শব্দগুলাে প্রতিস্থাপিত হয়। ৮ অনুচ্ছেদে একটি নতুন ধারা সংযােজন করে বলা হয় যে, “সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস হবে যাবতীয় কাজের ভিত্তি। অনুচ্ছেদ ১২, যার দ্বারা সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল তা বিলােপ করা হয়, এবং সংবিধানের প্রারম্ভে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” শব্দগুলাে সংযােজন করে একে ইসলামী রং দেয়া হয়। ২৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে একটি নতুন ধারা যােগ করে বলা হয় যে, রাষ্ট্র মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। সংহত ও জোরদার করতে সচেষ্ট হবে। এভাবে জিয়া ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনসাধারণের সমর্থন আদায় করতে চেয়েছিলেন। 

তৃতীয়ত রাষ্ট্রের অন্যতম মৌল আদর্শ সমাজতন্ত্র”-কে জিয়া অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার” বলে আখ্যায়িত করেন। ১০ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত “সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিধান বিলােপ করা হয়। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের পক্ষে বিশেষ রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করা হয়। ৪২ অনুচ্ছেদ সংশােধন করে ব্যক্তিগত সম্পত্তি জাতীয়করণ বা অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণ দানের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। ৪৭ অনুচ্ছেদ সংশােধনের মাধ্যমে বিধান করা হয় যে, সংসদ সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভােটো গৃহীত আইনের দ্বারা কোনাে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির স্বত্ব পরিত্যাগ কিংবা রাষ্ট্র কর্তৃক দেয় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যাবে। মূল সংবিধান অনুসারে অনুরূপ আইন পাসের জন্য সংসদের মােট সদস্যসংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভােটের প্রয়ােজন হতাে। এভাবে জিয়া সরকার ডানপন্থীদের সন্তুষ্ট করার জন্য ধনবাদী পথ বেছে নেয়। কিন্তু বামপন্থীদের আশ্বস্ত করার জন্য সংবিধানে “সমাজতন্ত্র” শব্দটি অলংকার হিসাবে তিনি রেখে দেন।

চতুর্থত সুপ্রিম কোর্টের মৌলিক অধিকার বলবঙ্করণের ক্ষমতা (যা ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশােধনীর দ্বারা বিলােপ করা হয়) পুনর্বহাল করা হয়, এবং একটি 

১৭৮

“সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের চাকরির নিরাপত্তা বিধান করা হয়। ৯৬ অনুচ্ছেদের সংশােধন করে বলা হয় যে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও দু’জন সর্বাপেক্ষা সিনিয়ার বিচারপতি সমবায়ে একটি সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠিত হবে এবং কেবল এই কাউন্সিলের রিপাের্টের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি কোনাে বিচারপতিকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করতে পারবেন। উল্লেখ্য যে, চতুর্থ সংশােধনীর অধীনে রাষ্ট্রপ্রতি তাঁর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে যে কোনাে বিচারপতিকে অপসারণ করতে পারতেন। যদিও সামরিক আইনের অধীনে মৌলিক অধিকারসমূহ স্থগিত রাখা হয়, উপযুক্ত পরিবর্তন শাসন বিভাগের বিপরীতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বৃদ্ধি করে।

সুতরাং জিয়া কর্তৃক প্রবর্তিত সাংবিধানিক সংশােধনীসমূহ বহুলাংশে প্রতীকধর্মী ছিল। চতুর্থ সংশােধনীর দ্বারা প্রবর্তিত একদলীয় ব্যবস্থার অবসান ঘটলেও রাষ্ট্রপতির একাধিপত্য বহাল থাকে। জেনারেল জিয়া জাতীয় পরিচিতি পরিবর্তন করেন, সমাজতন্ত্রের নতুন ব্যাখ্যা দেন, ধর্মনিরপেক্ষতা বিলােপ করেন এবং সংবিধানকে ইসলামী রং দিয়ে তাঁর সরকারের বৈধতার জন্য একটি নতুন আদর্শগত ভিত্তি রচনার প্রয়াস পান।

১৯ দফা কর্মসূচি : ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল জিয়া এক ১০-দফা কর্মসূচি ঘােষণা করেন। এই কর্মসূচির মধ্যে ছিল: জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ, সকল পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, গ্রামীণ অর্থনীতিকে সুদৃঢ়করণ ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সকল নাগরিকের জন্য বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা, বেসরকারি খাতকে উৎসাহ প্রদান, শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি বিধান, অশিক্ষা দূরীকরণ, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ রােধ, মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্ব জোরদার করা, ন্যায়ভিত্তিক দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং বর্ণ, ধর্ম মত নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণ।২৯

এভাবে ১৯ দফা কর্মসূচিতে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় কিন্তু এগুলাে বাস্তবায়নের জন্য কোনাে সুনির্দিষ্ট নীতি বা কর্মপন্থার উল্লেখ ছিল না। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল ভিন্নমুখী মত ও স্বার্থের একত্রীকরণের মাধ্যমে সরকারের সমর্থন ভিত্তি সম্প্রসারণ করা।

প্রধান ইস্যুসমূহ : গণভােটে দুটি প্রশ্ন প্রাধান্য লাভ করে : এক, এই গণভােট অনুষ্ঠানের যথার্থতা ও দুই, জিয়া কর্তৃক আনীত সাংবিধানিক সংশােধনীসমূহের বৈধতা। আওয়ামী লীগ, জাসদ, ন্যাপ (ভাসানী), ইউ.পি.পি. জাতীয় জনতা পার্টি, প্রভৃতি মধ্য বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ দলসমূহ গণভােট অনুষ্ঠানের বিরােধিতা করে। তারা গণভােটকে অপ্রয়ােজনীয় এবং একটা “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক ধাপ্পা বলে বর্ণনা করে। তারা বলে যে, এটা সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্বে প্রতিশ্রুতির প্রত্যক্ষ বরখেলাপ। তারা জেনারেল জিয়া কর্তৃক রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণকে অবৈধ বলে মনে

১৭৯

করে, কারণ জিয়া তখনাে সামরিক বাহিনীতে চাকরিরত ছিলেন। তারা জিয়ার সংবিধান সংশােধনের ক্ষমতাকেও চ্যালেঞ্জ করে। তাদের অনেকেই জাতীয় পরিচয়ের পরিবর্তন, ধর্মনিরপেক্ষতার বিলােপ এবং সমাজতন্ত্রের নতুন ব্যাখ্যাদানকে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের অন্তর্নিহিত ধারণা ও মূল্যবােধের পরিপন্থী বলে নিন্দা করে।”৩০ 

বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ (মােজাফর) যদিও “স্থিতিশীলতার খাতিরে” গণভােটে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়, তারা জিয়ার সংবিধানকে সংশাধনীসমূহ মেনে নেয়নি।৩১

কিন্তু ইসলামী গােষ্ঠীগুলাে জিয়ার সাংবিধানিক সংশােধনীসমূহকে স্বাগত জানায় এবং গণভােট জিয়াকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে। ইসলামিক ডেমােক্রেটিক লীগের মতে, গণভােট কেবল জিয়ার ক্ষমতায় থাকা বা না থাকার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ ছিল না এটা ছিল শ্বাসত (ইসলামী) জাতীয় আদর্শ ও জাতীয় পরিচয় সংক্রান্ত মৌলিক প্রশ্নে সিদ্ধান্ত প্রদানের সুযােগ।৩২

মুসলিম লীগের উপদলসমূহও “ইসলামী সংশাধনীর জন্য জিয়াকে সমর্থন করে।৩৩

চীনপন্থী বামদের একাংশ এবং কয়েকটি ছােট ডানপন্থী দল প্রধানত আওয়ামী লীগ-বিরােধিতা তথা ভারত-বিরােধী মনােভাব থেকে জিয়ার প্রতি সমর্থন জানায়। 

উল্লেখ্য, জেনারেল জিয়া রাষ্ট্ৰীয় খরচে অসংখ্য জনসভা ও পােস্টারের মাধ্যমে তাঁর মতামত প্রচার করতে থাকেন, কিন্তু রাজনৈতিক দলসমূহকে ঘরােয়া রাজনীতির মধ্যে আবদ্ধ রাখা হয় এবং তাদের জন্য গণভোেট-বিরােধী প্রচারণার সুযােগ ছিল খুবই সীমিত।

ফল : গণভােটে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় “রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বি.ইউ, এবং তাঁর নীতি ও কর্মসূচির প্রতি আপনার আস্থা আছে কি?” সরকারি হিসাব মতে তালিকাভুক্ত ভােটারদের ৮৮.০৫% ভােট প্রদান করে এবং তার মধ্যে ৯৮.৮৮% ছিল হ্যা সূচক ভােট।৩৪

বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনসমূহে যেখানে ভােটারদের উপস্থিতির হার ছিল ৫৫.০৯% (১৯৭০) ও ৫৫.৬২% (১৯৭৩), সেখানে ১৯৭৭ সালের গণভােটে ৮৮.০৫% উপস্থিতি মােটেই বিশ্বাসযােগ্য ছিল না। শাসকবর্গ এই গণভােটের মাধ্যমে দেখাতে চান যে, তাঁরা সমগ্র নির্বাচকমণ্ডলীর সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন ভােগ করেন, কেবল উপস্থিত ভােটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠের নয়; এবং অতি উৎসাহী আমলারা সরকারকে খুশি করার জন্য বানােয়াট ফল প্রণয়ন করেন। জিয়ার জনসভাসমূহে ব্যাপক জনসমাগমের প্রেক্ষিতে তাঁর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু ভােট জালিয়াতি ও ভােট প্রদানের অতিরঞ্জিত হিসাব, জনসমর্থন সংগ্রহে আমলাদের ব্যাপক ব্যবহার, সরকারের পক্ষে একতরফা প্রচার এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অবর্তমানের কারণে এই গণভােট জিয়ার বৈধতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সামান্যই অবদান রাখতে সমর্থ হয়। 

১৮০

খ. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ১৯৭৮ 

গণভােট অনুষ্ঠানের কয়েকমাসের মধ্যে সামরিক বাহিনীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ দেখা দেয়। ১৯৭৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ও ২ অক্টোবর যথাক্রমে বগুড়া ও ঢাকা সেনানিবাসে পর পর দুটি বিদ্রোহ ঘটে। বিদ্রোহীদের ক্ষিপ্রতার সঙ্গে দমন ও কঠোর শাস্তিবিধান করা হয়। কিন্তু সামরিক এলিটদের মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকে। যেখানে রাষ্ট্রপতি জিয়া উপযুক্ত ঘটনাবলীর মধ্যে আওয়ামী লীগের “দুষ্কৃতকারীদের” জড়াতে চান, সেখানে জেনারেল স্টাফ-প্রধান মেজর জেনারেল আবুল মুণ্ডুর স্বাধীনতা বিরােধী শক্তিসমূহকে “আমাদের ঐক্য ও সংহতি বিনষ্টের জন্য দোষারােপ করেন।৩৫

তবে পরিশেষে সম্ভবত উক্ত বিদ্রোহের দায়ে বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি, জাসদ ও ডেমােক্রেটিক লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়।

নিজ সমর্থন ভিত্তিতে গুরুতর ফাটলের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি জিয়া রাজনৈতিক দলসমূহের সহযােগিতা কামনা করেন। তিনি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলােচনা করেন এবং এক “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিরাজমান “রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের সিদ্ধান্ত ঘােষণা করেন।৩৬

জেনারেল জিয়া শক্তিশালী নির্বাহীর বিধান সম্বলিত শাসনব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষপাতী ছিলেন, এবং প্রতিশ্রুত সাধারণ নির্বাচনের পরিবর্তে প্রথমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কারণ, তখনাে তিনি সংসদীয় নির্বাচন মােকাবেলা করার মতাে শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলতে পারেননি। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস উপ-রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে এটি রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। তবে জিয়া তাঁর দল নিরপেক্ষ ভাবমূর্তির জন্য উক্ত দলে যােগদান করেননি। কিন্তু জাগদল তেমন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয় এবং সম্ভবত তাঁর রাজনৈতিক বাহন হিসেবে এই দলের কার্যকারিতা সম্পর্কে জিয়া নিশ্চিত হতে পারেননি। সুতরাং তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে একটি ব্যাপক ভিত্তিক রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৭৮ সালের ২১ এপ্রিল জিয়া ঘােষণা করেন যে, ৩ জুন তারিখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মে মাসের প্রথম দিকে, ছ’টি ডান ও বাম রাজনৈতিক দল, যথা জাগদল, ন্যাপ (ভাসানী), বাংলাদেশে মুসলিম লীগ, ইউ পি পি বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও তফশীল জাতি ফেডারেশন (নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের একটি ছােট সংগঠন) একত্রিত হয়ে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট নামে একটি জোট গঠন করে। জেনারেল জিয়া ছিলেন এই জোটের নেতা এবং এর প্রার্থী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের কর্মসূচির মধ্যে ছিল : জাতীয় স্বাধীনতা সংরক্ষণ, গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং সামাজিক অগ্রগতি অর্জন। ফ্রন্ট এমন এক সরকার ব্যবস্থার কথা বলে, যেখানে রাষ্ট্রপতি হবেন “প্রধান নির্বাহী” এবং আইন সভা হবে, “সার্বভৌম”। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট আরাে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, চতুর্থ সংশােধনী বাতিল করে রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার ক্ষমতার মধ্যে প্রয়ােজনীয় সমন্বয় সাধন করা হবে।৩৭

১৮১

অন্য ছ’টি মধ্য বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল, যথা : আওয়ামী লীগ, জাতীয় জনতা পার্টি, ন্যাপ (মােজাফফর), বাংলাদেশের ক্যুনিস্ট পার্টি, গণ-আজাদী লীগ (মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বাধীন), ও পিপলস লীগ (ড. আলীম আল-রাজীর নেতৃত্বাধীন) “গণতান্ত্রিক ঐক্য জোট” নামে অপর একটি জোট গঠন করে। এই জোটের পক্ষ থেকে জাতীয় জনতা পার্টির নেতা জেনারেল ওসমানী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গণতান্ত্রিক ঐক্য জোট ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী সংসদীয় গণতন্ত্র ও শােষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়।৩৮

আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে ছ’টি ডানপন্থী ছােট দল নিয়ে জাতীয় যুক্ত ফ্রন্ট” নামে অপর একটি তৃতীয় জোট গঠিত হয়। এই জোটের অন্তর্ভূক্ত দলগুলাে ছিল : জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ জাতীয় দল, কৃষক শ্রমিক পার্টি, ডেমােক্রেটিক লীগ, ইসলামিক ডেমােক্রেটিক লীগ ও মুসলিম লীগের দু’টি উপদল। জাতীয় যুক্তফ্রন্ট রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে একটা প্রতারণা বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং দেশে খাটি সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনের ডাক দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ফ্রন্ট আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান রােধ কল্পে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার নামে জেনারেল জিয়াকেই সমর্থন দেয়।৩৯

যে-সব দল এই তিন জোটের বাইরে থেকে যায় তাদের মধ্যে বামপন্থী জাগমুই এবং দুটি ডানপন্থী ছােট উপদল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী দেয়, এবং অবশিষ্ট দলগুলাে জিয়াকেই প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে সমর্থন দেয়।

নির্বাচনী ইস্যু : পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মােট ১০ জন প্রার্থী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু কার্যত জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের জেনারেল জিয়া এবং গণ ঐক্য জোটের জেনারেল ওসমানীর মধ্যে মূল লড়াই হয়। গণঐক্য জোট সংবিধানকে প্রধান নির্বাচনী প্রশ্ন হিসাবে দাঁড় করাতে চায় এবং জেনারেল ওসমানী ১৯৭২ সালের সংবিধানের ভিত্তিতে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট সাংবিধানিক প্রশ্ন এড়িয়ে জাতীয় স্বাধীনতার প্রশ্ন ও আওয়ামী লীগের “অপশাসন” সামনে নিয়ে আসে। উল্লেখ্য যে, গণ ঐক্য জোটের মধ্যে আওয়ামী লীগই ছিল প্রধান দল। রাষ্ট্রপতি জিয়ার মূল বক্তব্য ছিল, প্রাক্তন আওয়ামী লীগ সরকার বিদেশি শক্তির (ভারত) নিকট দেশের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেয়, একদলীয় শাসন প্রবর্তন করে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে ও নিজ স্বার্থে দেশের। সম্পদ লুট করে, ফলে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার লােক মৃত্যু বরণ করে; তারা ক্ষমতায় আসলে অনুরূপ কাজই করবে।৪০

ফল : পূর্ব ঘােষণা অনুসারে ১৯৭৮ সালের ৩ জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি হিসাব অনুসারে তালিকাভুক্ত ভােটারদের ৫৩.৩৪% ভােট দান করে, এবং জেনারেল জিয়া ও জেনারেল ওসমানী প্রদত্ত ভােটের যথাক্রমে ৭৬.৬৩% ও ২১.৭০% ভােট পান।৪১

রাষ্ট্রপতি জিয়া এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বলে দাবি করেন। কিন্তু অন্যান্য প্রার্থী নির্বাচনে গুরুতর অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে বলে অভিযােগ করেন।৪২

এই সব অনিয়ম বা কারচুপির অভিযােগ (যেমন জাল ভােট প্রদান ও ভীতি প্রদর্শন) ভিত্তিহীন ছিল না।৪৩

১৮২

বিরােধী দলগুলাের নির্বাচনের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন তােলার আরাে অনেক যুক্তিসংগত কারণ ছিল। প্রথমত জিয়া কার্যত ১৯৭৭ সালের শুরু থেকেই নিজের পক্ষে প্রচারণা করতে থাকেন, সেখানে বিরােধী পক্ষকে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য মাত্র ৩২ দিন সময় দেয়া হয়। দ্বিতীয়ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সামরিক আইনের কড়াকড়ির মধ্যে যা বিরােধী প্রার্থীদের স্বাধীনতা ও সুবিধাদি ক্ষুন্ন করে। প্রায় তিন বছর যাবৎ বিরােধী রাজনৈতিক দলগুলােকে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে দেয়া হয়নি এবং বিরােধী নেতাদের অনেকেই কারারুদ্ধ ছিলেন। নির্বাচনের মাত্র এক মাস পূর্বে বিরােধীদের জনসভা করার অনুমতি দেয়া হয়, কিন্তু মিছিল বা বিক্ষোভ প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। তৃতীয়ত জিয়া তখনাে সামরিক বাহিনীতে চাকরিরত ছিলেন বিধায় রাষ্ট্রপতির মতাে রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। চতুর্থত জিয়া তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায়, রাষ্ট্রযন্ত্র, সরকারি তহবিল ও প্রচার মাধ্যমসমূহ যথেচ্ছ ব্যবহার করেন। অপরপক্ষে, অর্থাভাবে বিরােধী প্রার্থীরা। ভােটার তালিকা সংগ্রহ করতেও পারেনি। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রেও বিরােধীদের বক্তব্য প্রকাশের সুযােগ ছিল খুবই সীমিত।৪৪

বিরােধী দলগুলােকে আরাে বেশি সময় বা সুবিধা দেয়া হলে ভােটের ব্যবধান হয়তাে কমতাে। কিন্তু জেনারেল জিয়াই নির্বাচিত হতেন বলে সাধারণের ধারণা। কারণ, জেনারেল ওসমানী মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসাবে যথেষ্ট জনপ্রিয় হলেও তার কোনাে শক্ত রাজনৈতিক ভিত্তি ছিল না। তাঁকে মূলত আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভর করতে হয়েছিল। আওয়ামী লীগ তার সুপরিচিত নেতাদের অবর্তমানে জেনারেল ওসমানীকে প্রার্থী হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু নির্বাচনে জয়লাভের চেয়ে আওয়ামী লীগ তার নড়বড়ে সংগঠনকে মজবুত করার দিকেই অধিক মনোেযােগী ছিল। তাছাড়া স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে একদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের কারণে ভােটারগণ বিকল্প হিসাবে জিয়া সরকারকে গ্রহণ করে।

সুতরাং, সাধারণ জনসমর্থনের দৃষ্টিকোন থেকে এটা বলা যায় যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়া তাঁর ব্যক্তিগত বৈধতা অর্জন করেন। কিন্তু সংবিধান তথা সরকার পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশ্ন থেকেই যায়। জেনারেল ওসমানী স্বীকার করেন নি যে, জনগণ রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির পক্ষে রায় দিয়েছে। তিনি বলেন, জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমবায়ে গঠিত একটি সংসদই কেবল দেশের ভবিষ্যত সরকার পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।৪৫

জাতীয় যুক্তফ্রন্টসহ অন্যান্য রাজনৈতিক গােষ্ঠী যারা জিয়াকে সমর্থন করে তারাও রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার মেনে নেয়নি। যদিও জাগদল রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির প্রতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করে, জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের অন্যান্য অঙ্গ দল (ন্যাপ-ভাসানী, মুসলিম লীগ, ইউ.পি.) সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে ছিল। তারা চতুর্থ সংশােধনী বাতিল করে একটি সার্বভৌম” সংসদ প্রতিষ্ঠার দাবি করে।৪৬ ক্ষমতার বখরা এবং আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান রােধের অভিন্ন ইচ্ছা থেকে এইসব দল এক ধরনের মিশ্র সরকার পদ্ধতি সাময়িকভাবে গ্রহণ করে, যেখানে জিয়া প্রধান নির্বাহী হিসাবে কার্যকর ক্ষমতা ভােগ করবেন। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে

১৮৩

পারস্পরিক সম্পর্ক কিরূপ হবে সে ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের মধ্যে মতভেদ ছিল। সে কারণে নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহূর্তে (৩১ মে, ১৯৭৮) প্রকাশিত ফ্রন্টের ইশতেহারে জিয়ার পূর্ব-প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভা ও সংসদের মধ্যে ভবিষ্যত সম্পর্কের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।৪৭

ফ্রন্টের নেতৃবর্গও তাদের নির্বাচনী বক্তৃতায় সরকার পদ্ধতির প্রশ্নটি সামনে আনেননি।

গ. সংসদ নির্বাচন, ১৯৭৯ 

ইতঃপূর্বে বলা হয়েছে যে, ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জেনারেল জিয়া উপরাষ্ট্রপতি সাত্তারের নেতৃত্বে জাগদল গঠন করেন। তারপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে জাগদল সহ ছ’টি দল মিলে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর জিয়া তাঁর অরাজনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের স্থলে একটি মন্ত্রীপরিষদ গঠন করেন। এই মন্ত্রীপরিষদে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের অঙ্গদলসমূহের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।৪৮

কিন্তু বিভিন্ন মতাবলম্বী দল বা ব্যক্তিদের নিয়ে সুষ্ঠুভাবে সরকার পরিচালনা করা একটা কঠিন ব্যাপার। তাছাড়া, সংসদ নির্বাচনে ৩০০ জন প্রার্থী মনােনয়ন ও তাদের পক্ষে প্রচারণা চালানাের জন্য একটি সুসংহত মঞ্চের প্রয়ােজন ছিল। সুতরাং জিয়া জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ভেঙে দিয়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর নিজের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নামে এটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের অঙ্গ দলসমূহকে এই নতুন দলে যােগ দিতে নতুবা সরকার থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। জাগদল ও ন্যাপ (ভাসানী) পুরােটাই বিএনপিতে যােগ দেয়। বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ইউ পি পি বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও তফসিল জাতি ফেডারেশন-এর অংশ বিশেষ নতুন দলে যােগদান করে। 

এভাবে জিয়া যখন তাঁর সাংগঠনিক ভিত্তি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত তখন বিরােধী দলমূহ সামরিক আইন প্রত্যাহার, চতুর্থ সংশােধনী ও রাজনৈতিক দলবিধি বাতিল, “সার্বভৌম সংসদ নির্বাচনের ঘােষণা, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং জেনারেল জিয়ার সামরিক বাহিনী থেকে পদত্যাগের দাবি জানাতে থাকে।

বিরােধী দলগুলাের দাবি অনুসারে ১৯৭৮ সালের ১৭ নভেম্বর রাজনৈতিক দলবিধি বাতিল করা হয়। ৩০ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি ঘােষণা করেন যে, ১৯৭৯ সালের ২৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচনের পর সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হবে। তিনি আরাে ঘােষণা করেন যে, সংসদ হবে সার্বভৌম। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীপরিষদের বিপরীতে সংসদের ক্ষমতা সম্পর্কে কোনাে ব্যাখ্যা দেননি। ১ ডিসেম্বর জিয়া সেনাবাহিনীর স্টাফ-প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দেন, কিন্তু নবসৃষ্ট “সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক” পদ গ্রহণ করেন। তার এসব পদক্ষেপ বিরােধী দলসমূহকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

প্রধান বিরােধী দলগুলাে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হিসাবে অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার, সংসদীয় গণতন্ত্র পুনর্বহাল, রাজনৈতিক 

১৮৪

বন্দীদের মুক্তিদান ও মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি অব্যাহত রাখে।। কয়েকটি ছােট বাম (সাম্যবাদীদল ও পূর্ববাংলার ক্যুনিস্ট পার্টি) ও ডানপন্থী দল বিনা শর্তে নির্বাচনে অংশগ্রহণে প্রস্তুত থাকলেও সরকারের বৈধতা জোরদার করার জন্য জিয়া প্রধান রাজনৈতিক দলগুলাের অংশ গ্রহণের প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করেন। সেই লক্ষ্যে তিনি কতিপয় আপসমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই সব পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম ছিল সাংবিধানিক পরিবর্তন। 

সংবিধানিক পরিবর্তনসমূহ : ১৯৭৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর এক সামরিক ঘােষণা দ্বারা জিয়া সংবিধানের চতুর্থ সংশােধনীর কতিপয় ধারা সংশােধন করেন। সংশােধনীয়গুলাে নিম্নরূপ : 

১. সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন সংসদ সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী নিয়ােগ করা হবে। 

২. সংসদের বাইরে থেকে অন্যান্য মন্ত্রী নিয়ােগ করা যেতে পারে, কিন্তু বহিরাগত মন্ত্রীদের সংখ্যা মােট মন্ত্রীসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের বেশি হবে না। 

৩. প্রধান মন্ত্রীসহ সকল মন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সন্তোষ অনুযায়ী পদে বহাল থাকবেন। 

৪. রাষ্ট্রপতি সংসদ কর্তৃক গৃহীত কোনাে বিল নাকচ করতে পারবেন না, তবে পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরৎ পাঠাতে পারবেন। 

৫. বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত সকল চুক্তি সংসদে পেশ করতে হবে, তবে রাষ্ট্রপতি মনে করলে জাতীয় স্বার্থে কোনাে চুক্তি সংসদে পেশ নাও করতে পারেন। 

৬. যদি সংসদ কোনাে অর্থ বছরের জন্য অর্থ মঞ্জুর করতে ব্যর্থ হয় অথবা কোনাে বিশেষ মঞ্জুরী দাবি প্রত্যাখ্যান বা হ্রাস করে, তবে রাষ্ট্রপতি ঐ। বছরের অনধিক ১২০ দিন মেয়াদ পর্যন্ত ব্যয় নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে অর্থ উঠানাের জন্য ক্ষমতা প্রদান করতে পারবেন।

৭. সংবিধানের প্রস্তাবনা, অনুচ্ছেদ ৮ (মূলনীতিসমূহ), অনুচ্ছেদ ৪৮ (রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতা), অনুচ্ছেদ ৮০ (রাষ্ট্রপতির আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা,) অনুচ্ছেদ ৯২ (ক) রাষ্ট্রপতির অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা) ও অনুচ্ছেদ ১৪২ (সংবধািন সংশােধনের পদ্ধতি) সম্পর্কে কোনাে সংশােধনী বিল সংসদ কর্তৃক গৃহীত হলে তা গণভােটে পেশ করতে হবে এবং প্রদত্ত ভােটের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অনুমােদিত হলে আইন পরিণত হয়। 

স্পষ্টত এই সাংবিধানিক পরিবর্তন বিরােধী দলসমূহের সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি পূরণে ব্যর্থ হয়। এই সংশােধনীতে এটুকু নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীপরিষদের অনুন চার-পঞ্চমাংশ সদস্য অবশ্যই সংসদ সদস্যদের মধ্যে থেকে নেয়া হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি কিংবা তার মন্ত্রীপরিষদকে সংসদের নিকট দায়ী করা হয়নি। এই সংশােধনীর দ্বারা সাধারণ আইন প্রসঙ্গে

১৮৫

রাষ্ট্রপতির ‘ভেটো ক্ষমতা বিলােপ করা হয়, কিন্তু সংসদের আর্থিক ও সাংবিধানিক আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা খর্ব করা হয়। উল্লেখ্য যে, পূর্বে সংসদের বিনা অনুমােদনে কোনাে অর্থ ব্যয় করা যেত না এবং সংসদ এককভাবে দুই-তৃতীয়াংশ ভােটে সংবিধানে যে-কোনাে ধারা সংশােধন করতে পারত। সুতরাং বিরােধী দলগুলাের অনেকেই এই সংশােধনীকে রাষ্ট্রপতির স্বৈরশাসন স্থায়ী করার লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক ধাপ্পা’ বলে সমালােচনা করে।৪৯

যাহােক, সরকার বিরােধীদলীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলােচনা করে এবং আরাে কতিপয় সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। এগুলাের মধ্যে ছিল রাজনৈতিক কার্যকলাপের ওপর থেকে সামরিক আইনের বাধানিষেধ স্থগিতকরণ, কিছু রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি ও সংবাদপত্রের ওপর বাধনিষেধ প্রত্যাহার। তাছাড়া ছিল নির্বাচনি প্রচারণার কিছু সুযােগ সুবিধা। যথা, যে সব দল নির্বাচনে অন্তত ৩০ জন প্রার্থী দেবে সে সব দলের কিছু সংখ্যক নেতার বিনা ভাড়ায় জল-স্থল-বিমান পথে ভ্রমণ ও সরকারি রেস্ট হাউসে থাকার ব্যবস্থা এবং বিনা খরচে টেলিফোন ও সরকারি গাড়ি ব্যবহার।৫০

সরকার আরাে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে, নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনের সময় সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হবে এবং ভবিষ্যতে মন্ত্রিরা সংসদের নিকট দায়ী থাকবেন। তাছাড়া, সরকার কয়েকটি দলের সঙ্গে গােপন সমঝােতা করে বলেও অনুমান করা হয়। ফ্রান্ডার মতে, সরকার মুসলিম লীগ ও ইসলামিক ডেমােক্রিটিক লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে রাজি করার জন্য আওয়ামী লীগ আমলে বাজেয়াপ্তকৃত তাদের দলীয় তহবিল ফেরৎ দেয়।৫১

সরকারের এই সব কলাকৌশল সফল হয়। শেষ পর্যন্ত সকল প্রধান দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। অবশ্য তাদের মধ্যে অনেকেই ঘােষণা করে যে, তাদের অপূরিত দাবিসমূহ আদায়ের লক্ষ্যে সংসদের ভিতরে ও বাইরে বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।

বিরােধীদলসমূহের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে দু’বার নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা হয়, এবং ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভােট গ্রহণ করা হয়। 

নির্বাচনী ইস্যু : রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ন্যায় সংসদ নির্বাচনে বিরােধী দলসমূহ সাংবিধানিক প্রশ্নকেই প্রাধান্য দিতে চায়। প্রধান দলগুলাের অধিকাংশই সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষপাতী ছিল এবং তারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ও প্রচারণায় এই সরকার পদ্ধতিকে তুল ধরে। মুসলিম লীগ ও এই ইসলামিক ডেমােক্রেটিক লীগ রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির বিরােধী ছিল, কিন্তু তারা এই নির্বাচনে সরকার পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করেনি। ইসলামিক ডেমােক্রেটিক লীগ ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতি জোর দেয়, এবং মুসলিম লীগ একটা স্থিতিশীল ও দায়িত্বশীল সরকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও সংসদীয় পদ্ধতির সংমিশ্রণ’ সাধনের কথা বলে।৫২

অপরদিকে, বিএনপি তার নির্বাচনী ইশতেহারে একটি সার্বভৌম সংসদসহ রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির পক্ষে সমর্থন জ্ঞাপন করে কিছুটা অস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করে এবং দাবি করে যে, গত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জনগণ অনুরূপ রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির পক্ষে রায় প্রদান করেছে।৫৩ 

১৮৬

কিন্তু রাষ্ট্রপতি জিয়া ও অন্যান্য বিএনপি নেতা তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় সাংবিধানিক প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। জিয়া সম্ভবত সজাগ ছিলেন যে, জনসাধারণ সংবিধানের মতাে জটিল বিষয় বুঝতে অক্ষম। তাই তিনি ভােটারদের সামনে একটি সহজ প্রশ্ন তুলে ধরেন তারা কি অতীতে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরে যেতে চায়, তার কথায় যা ছিল অস্ত্র, লুট, হত্যা ধ্বংস ও জাতীয় দাসত্বের রাজনীতি, না বর্তমান বিএনপি-এর রাজনীতি সমুন্নত রাখতে চায়, যাকে তিনি শান্তি, স্থিতিশীলতা, উৎপাদন ও জাতীয় স্বাধীনতার রাজনীতি বলে দাবি করেন।৫৪

ফলা : এই নির্বাচন জনগণের মধ্যে তেমন উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারেনি। তালিকাভুক্ত প্রায় তিন কোটি ৩৯ লক্ষ ভােটারের মধ্যে সরকারি হিসাব অনুসারে ১,৯৬,৮০,৮০৫ জন ভােটার ভােট দান করে, যা ছিল সমগ্র নির্বাচকমণ্ডলীর ৫০.৯৪%।৫৫ 

সে তুলনায় ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে ভােট পড়েছিল অনেক বেশি, অর্থাৎ ৫৫.৬২%। শাসক দল বিএনপি এই নির্বাচনে ৩০০টি সাধারণ আসনের মধ্যে ২০৭টি এবং প্রদত্ত ভােটের ৪১.১৬% পায়। আওয়ামী লীগ সর্ববৃহৎ বিরােধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই দল প্রদত্ত ভােটের ২৪.৫৫% লাভ করে, তবে আসন। পায় ৩৯টি। মুসলিম লীগ ও ইসলামিক ডেমােক্রেটিক লীগ নির্বাচনী জোট গঠন। করে যৌথভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এই জোট প্রদত্ত ভােটের ১০.০৮% লাভ করে ২০টি আসনে জয়ী হয়। জাসদ ৪.৮৪% ভােট ও আটটি আসন লাভ করে। অন্য যে সব দল এই নির্বাচনে আসন লাভে সমর্থ হয় তারা হলাে আওয়ামী লীগ (মিজান,) জাতীয় লীগ, সাম্যবাদী দল (এম. এল), ন্যাপ (মােজাফ্ফর), জাতীয় একতা পার্টি, বাংলাদেশ গণআন্দোলন ও বাংলাদেশ গণফ্রন্ট৫৬ তাছাড়া নির্দলীয় প্রার্থীরা ১৬টি আসন লাভ করেন। (সারণি ৭.১ দেখুন)।

সকল বিরােধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অভূতপূর্ব কারচুপির অভিযােগ করে। তাদের মধ্যে অনেকে মনে করে যে, সরকার কোন দলকে ক’টা আসন দেবে তার একটা নীল নক্সা আগেই তৈরি করে এবং তারা সেই নীল নক্সার শিকার হয়েছে। তারা যুক্তিসঙ্গত প্রমাণসহ বেশ কিছু ঘটনা তুলে ধরে বলে যে, বিএনপি প্রার্থীগণ ও সরকারি কর্মকর্তারা এই নির্বাচনে দুর্নীতি, অনিয়ম ও বল প্রয়ােগের আশ্রয় নেন।৫৭

নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকগণ মনে করেন যে, এই সব অভিযােগের মধ্যে সত্যতা ছিল। সে সত্ত্বেও বিএনপির বিজয়কে অস্বীকার করা যায় না। বিএনপি প্রার্থীরা বিপুল ভােটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। মাত্র ১০টি আসনে বিএনপি প্রার্থী ১০০০ ভােটের কম ব্যবধানে জয়লাভ করেন (একটি এলাকায় ব্যবধান ছিল মাত্র তিন)। অন্য ৪০টি নির্বাচনী এলাকায় এই ব্যবধান ছিল ১০০০ থেকে ৫০০০-এর মধ্যে।৫৮

বি এন পির পক্ষে অসদুপায় অবলম্বনের কারণে এই ৫০টির জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আসনকে হিসাবের বাইরে রাখলেও সংসদে বিএনপির নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকত। বিরােধী দলসমূহ সম্ভবত এই সব বিষয়ে সচেতন ছিল এবং তারা বিএনপি তথা জিয়ার শাসন করার অধিকার মেনে নেয় তারা।

১৮৭

নির্বাচনের পূর্বে হুমকি দেয় যে, নির্বাচনের কারচুপি হলে গণআন্দোলন শুরু করবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা করেনি।

তবে তার অর্থ এই নয় যে, বিরােধী দলসমসূহ বিদ্যমান সংবিধানকে মেনে নেয়। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রধান বিরােধী দলসমূহ কতগুলাে পূর্বশর্ত আরােপ করে, এবং এই শর্তগুলাের অন্যতম ছিল চতুর্থ সংশােধনী বাতিল করে সংসদীয়

সারণি ৭.১ 

১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচন ফল: দলীয় অবস্থান

দলের নাম প্রাপ্ত সংখ্যা প্রাপ্ত আসন সংখ্যা প্রাপ্ত ভােট (শতাংশ)
বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২৯৮ ২০৭ ৪১.১৬
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৯৫ ৩৯ ২৪.৫৫
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও ইসলামিক ডেমােক্রেটিক লীগ ২৬৬ ২০ ১০.০৮
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ ২৪০ ৪.৮৪
আওয়ামী লীগ (মিজান) ১৮৪ ২.৭৮
বাংলাদেশ গণফ্রন্ট ৪৬ ০.৬০
জাতীয় লীগ ১৩ ০.৩৬
ন্যাপ (মােজাফফর) ৮৯ ২.২৫
বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এম, এল ২০ ০.৩৯
জাতীয় একতা পার্টি ০.২৩
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ১৮ ০.১৭
ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউ পি পি) ৭০ ০.৮৯
ন্যাপ (নূর-জাহিদ) ৩৭ ০.৪৬
বাংলাদেশ কম্যুনিস্ট পার্টি ১১ ০.৩৯
অন্যান্য দল ১১১ ০.৭৫
নির্দলীয় প্রার্থী ৪২২ ১৬ ১০.১০
মােট ২১২৫ ৩০০ ১০০.১০

উৎস : বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, Report on Parliamentary Election, 1979, (ঢাকা, ১৯৮২) পৃষ্ঠা ৪৩।

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। জিয়া চতুর্থ সংশােধনীর কতিপয় ধারার সংশােধন করেন, কিন্তু সে সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতির আধিপত্য অটুট থাকে। সুতরাং বিরােধী দলসমূহ নির্বাচনী প্রচারণায় সাংবিধানিক প্রশ্নকেই প্রাধান্য দেয়। কিন্তু শাসক দল এই প্রশ্নকে এড়িয়ে সরকারের অনুসৃত নীতি ও কার্যকলাপকে সামনে নিয়ে আসে। তারা পূর্বতন আওয়ামী লীগ শাসনামলের খারাপ দিকগুলাের ওপর জোর দেয়। ফলে বিরােধী দলগুলাে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে 

১৮৮

আক্রমণাত্মক অবস্থান গ্রহণ করে। তারা জিয়া সরকারের বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতি, মুদ্রাস্ফীতি জনিত অর্থনৈতিক অবস্থার ক্রমাবনতি এবং বিদেশি সাহায্যের ওপর অতিনির্ভরতার কঠোর সমালােচনা করে।৫৯

সুতরাং ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে সাংবিধানিক ব্যবস্থা নয়, বরং সরকারের নীতি ও কর্মকাণ্ডই প্রাধান্য লাভ করে। জিয়া নিজেই বলেন, এবারের প্রধান নির্বাচনী ইস্যু হচ্ছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, শান্তি ও উৎপাদন।৬০ এবং জনগণ জিয়াকে ভােট দেয়, কারণ তিনি আওয়ামী লীগ শাসনামলের তুলনায় শান্তি পূর্ণ ও স্থিতিশীল সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা রক্ষা করতে সমর্থ হন।

এমনকি নির্বাচনী ফলাফলের পরিসংখ্যানও প্রমাণ করে না যে, জনগণ বিদ্যমান শাসন ব্যবস্থা মেনে নেয়। যদিও বিএনপি বিরাট সংখ্যক সংসদীয় আসন দখল করে, এই দল মাত্র ৪১% ভােট পায়। সে তুলনায় বিরােধী দলসমূহ প্রদত্ত ভােটের ৪৯% লাভ করে এবং অবশিষ্ট ১০% লাভ করেন নির্দলীয় প্রার্থীরা। সুতরাং নির্বাচনে বিএনপির বিজয় বিদ্যমান সাংবিধানিক ব্যবস্থার বৈধতার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয় এবং প্রধান বিরােধী দলসমূহ সংসদীয় পদ্ধতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি অব্যাহত রাখে। তাছাড়া মধ্য, বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলাে রাষ্ট্রীয় মূলনীতিসমূহের পরিবর্তন মেনে নেয়নি।

সূত্র ও টীকা 

১. এস ই ফাইনার, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৮। 

২. সামরিক ঘােষণার পূর্ণ বিবরণ দেখুন, The Bangladesh Gazette Extraordinary, ২০ আগস্ট, ১৯৭৫। 

৩. দেখুন, জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি মােশতাকের ভাষণ, ইত্তেফাক, ৪ অক্টোবর, ১৯৭৫। 

৪. পূর্বতন মুজিব মন্ত্রিসভার ২৭জন মন্ত্রির মধ্যে ১৮ জনকেই মােশতাক তার মন্ত্রিসভায় গ্রহণ করেন। অপরদিকে, কতিপয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা (সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহম্মদ, মনসুর আলি, কামরুজ্জামান), যারা তাঁর সঙ্গে সহযােগিতা করেননি তাদেরকে কারারুদ্ধ করা হয়। 

৫. তালুকদার মনিরুজ্জামান, “Bangladesh in 1975” প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১২৪; জিল্লুর আর খান, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৫০। 

৬. বামপন্থী দলগুলাের মনােভাবের জন্য দেখুন, পূর্ব বাংলার সাম্যবাদী দল, “বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্ব-বাংলা সাম্যবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত বিবৃতি,” ১৯ আগস্ট, ১৯৭৫; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ইউ পি পি এবং জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন (জাগমুই), যৌথ বিবৃতি, ২০ আগস্ট, ১৯৭৫; পূর্ববাংলার কম্যুনিস্ট পার্টি (এম এল), পূর্ববাংলার সাম্যবাদী দল (এম এল) এবং কম্যুনিস্ট কর্মী সংঘ, “রুশ-ভারত শাসক চক্রের হস্তক্ষেপ ও সম্ভাব্য আক্রমণের বিরুদ্ধে সকল দেশপ্রেমিক শক্তিবর্গ ঐক্যবদ্ধ হউন” ২৬শে আগস্ট, ১৯৭৫। 

৭. দেখুন লরেন্স লিফশুজ, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৬। 

৮. জিল্লুর আর খান, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৪২। 

৯. খালেদ মােশাররফ তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জিয়াউর রহমানকে বঙ্গভবনে অবস্থানকারী সামরিক অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দেন, কিন্তু জেনারেল জিয়া তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সম্মত ছিলেন না। 

১০. দেখুন, লরেন্স লিফশুজ, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৭-৮।

১৮৯

১১. ৮ নভেম্বরের সামরিক ঘােষণার পূর্ণ বিবরণ দেখুন, The Bangladesh Gazette Extraordinary, ৮ নভেম্বর, ১৯৭৫। 

১২. দেখুন, Holdiay, ১৬ নভেম্বর ও ২১ ডিসেম্বর, ১৯৭৫। 

১৩. দেখুন পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি, “বীর সেনাবাহিনীর উদ্দেশে অভিনন্দন বাণী” ৭ নভেম্বর, ১৯৭৫; “The Memorandum of Toaha and Dastider” Holiday, ২১ ডিসেম্বর, ১৯৭৫; পূর্ববাংলার সাম্যবাদী দল ও পূর্ব পাকিস্তানের কম্যুনিস্ট পার্টি (এম এল), “দেশব্যাপী দুর্জয় প্রতিরােধ আন্দোলন গড়ে তুলুন” ২০শে ডিসেম্বর, ১৯৭৫; পূর্ববাংলার সাম্যবাদী দল, পূর্ববাংলার গণবিপ্লবী পার্টি, ক্যুনিস্ট কর্মী সংঘ ও পূর্ববাংলার ক্যুনিস্ট পার্টি (এম এল), “সংযুক্ত বিপ্লবী সংগ্রাম কমিটির ঘােষণা” ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৭৫। 

১৪. দেখুন, লড়াই (জাসদের একটি গােপন মুখপত্র), ১ম বর্ষ, সংখ্যা ৬; Holiday, ১৬ নভেম্বর, ১৯৭৫। 

১৫. লরেন্স লিফশুজ, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৮-১০। 

১৬. দেশবাসীর প্রতি মেজর জলিল ও আ স ম আব্দুর রবের আহ্বান, ১৫ নভেম্বর, ১৯৭৫; লড়াই ১ম, বর্ষ, সংখ্যা ৭। 

১৭. দেখুন এম রশিদুজ্জামান, Bangladesh in 1977 …Asian Survey, খণ্ড ১৮, সংখ্যা ২, ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮, পৃষ্ঠা ১৩০। 

১৮. বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন, Economic Review, ১৯৭৫-৭৬, পৃষ্ঠা, ১৯৭। 

১৯. তালুকদার মনিরুজ্জামান, Group Interests…প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৮৯। 

২০. দৈনিক বাংলা, ৮ নভেম্বর, ১৯৭৫। 

২১. ইত্তেফাক, ১২ ও ১৪ নভেম্বর, ১৯৭৫। 

২২. রাজনৈতিক দল বিধির পূর্ণ বিবরণের জন্য দেখুন, ১৯৭৬ সালের ২২ নভেম্বর সামরিক আইন বিধি, The Bangladesh Gazette Extraordinary, ২৮ জুলাই, ১৯৭৬। 

২৩. দেখুন ইত্তেফাক, ১৩ ও ২১ সেপ্টেম্বর এবং ৯ নভেম্বর, ১৯৭৬; সংবাদ, ২১ নভেম্বর, ১৯৭৬। 

২৪. ইত্তেফাক, ৮ মার্চ ১৯৭৬। 

২৫. হক কথা (ভাসানী সমর্থিত সাপ্তাহিক), ১৪ মার্চ ১৯৭৬। 

২৬. দেখুন সংসদে স্বতন্ত্র সদস্য আহমেদুল কবিরের বক্তৃতা, সংবাদ, ২৬ জুন, ১৯৭৯। 

২৭. ১৯৭৫ সালের দ্বিতীয় ঘােষণা নম্বর ৩, The Bangladesh Gazette Extraordinary, ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৭৫। 

২৮. ১৯৭৬ সালের দ্বিতীয় ঘােষণা নম্বর ৩, ঐ ৪ মে, ১৯৭৬। 

২৯. The Bangladesh Obsever, মে, ১৯৭৭। 

৩০. দেখুন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিগত কাউন্সিল অধিবেশন, সাংগঠনিক কমিটির সভা ও বর্ধিত সভায় গৃহীত প্রস্তাবাবলি, মে ১৯৭৭; ন্যাপ (ভাসানী) সভাপতি মশিউর রহমানের সাংবাদিক সম্মেলনের কার্যবিবরণী (সাইক্লোস্টাইলকৃত), ২৫ এপ্রিল, ১৯৭৭; ইউ পি পি এর প্রস্তাবাবলি, নয়াযুগ, ৮ মে ১৯৭৭; জাসদের কার্যকরী সভাপতি সুলতান রাজা ও কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ স্বাক্ষরিত প্রচারপত্র, ১২ মে, ১৯৭৭। 

৩১. দেখুন, বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টির প্রস্তাবাবলি, সংবাদ বুলেটিন, ১৮ মে, ১৯৭৭; সংবাদ, ২৩ ও ২৯ মে, ১৯৭৭। 

৩২. জাহান-ই-নও, ২২ মে, ১৯৭৭। 

৩৩. কনভেনশন মুসলিম লীগের আব্দুল মতিন ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সবুর খানের বিবৃতি দেখুন, সংবাদ, ২৫ এপ্রিল ও ১৬ মে, ১৯৭৭। 

৩৪. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, রিপাের্ট, গণভােট, ৩০ মে, ১৯৭৭, পৃষ্ঠা ১২। 

৩৫. দেখুন, রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতি জিয়ার ভাষণ, সংবাদ, ১২ অক্টোবর, ১৯৭৭; চট্টগ্রাম সেনানিবাসে জেনারেল মঞ্জুরের ভাষণ, সংবাদ, ১৬ অক্টোবর, ১৯৭৭।

১৯০

৩৬. The Bangladesh Times, ৩ অক্টোবর ও ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭৭। 

৩৭. রাষ্ট্রপতি জিয়ার সাংবাদিক সম্মেলন, দেখুন The Bangladesh Observer ও সংবাদ, ৮ মে ১৯৭৮। 

৩৮. গণতান্ত্রিক ঐক্য জোটের নির্বাচনী ইশতেহার দেখুন, সংবাদ, ১৫ই মে, ১৯৭৮। 

৩৯. জাতীয় যুক্তফ্রন্ট নেতাদের বিবৃতি দেখুন, সংবাদ, ৭ ও ৮ই মে, ১৯৭৮; The Bangladesh Observer, ২৮ মে, ১৯৭৮। 

৪০. গণ-ঐক্য জোট ও জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট নেতাদের বক্তৃতা দেখুন, The Bangladesh | Observer, ১২, ১৩, ১৪,১৯ ও ৩১ মে এবং ১ জুন, ১৯৭৮। 

৪১. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন Return of Election, ঢাকা, ১০ জুন ১৯৭৮। 

৪২. দেখুন সংবাদ, ৭ জুন, ১৯৭৮। 

৪৩. দেখুন The New Nation, ৫ জুন, ১৯৭৮; ফ্রান্ডা, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ২২৭। 

৪৪. দেখুন ফ্রান্ডা, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ২২৫-২২৬। 

৪৫. সংবাদ, ৭ জুন, ১৯৭৮। 

৪৬. দেখুন সংবাদ, ২৯ জানুয়ারি এবং ১, ২ ও ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮। 

৪৭. দেখুন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে জিয়ার বক্তৃতা, সংবাদ, ৮ মে, ১৯৭৮ এবং জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার, সংবাদ, ১ জুন, ১৯৭৮। 

৪৮. ২৮ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রীপরিষদে ১৩জন মন্ত্রী ছিলেন জাগদল থেকে, তিনজন ছিলেন ন্যাপ (ভাসানী) থেকে, দু’জন ছিলেন মুসলিম লীগ থেকে, দু’জন ছিলেন ইউ পি পি থেকে, সাত জন ছিলেন বিশেষজ্ঞ অথবা আমলা ব্যক্তি। এই মন্ত্রী পরিষদের ছ’জন সদস্য ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার। 

৪৯, আব্দুল মালেক উকিল (আওয়ামী লীগ), জেনারেল ওসমানী, আলিম-আল-রাজী এবং মওলানা তর্কবাগিস-এর বিবৃতি দেখুন, সংবাদ ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৭৮। 

৫০. দেখুন সংবাদ, ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৭৮। 

৫১. দেখুন মার্কাস ফ্রান্ডা, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ২৩২। 

৫২. দেখুন ইসলামিক ডেমােক্রেটিক লীগ, মেনিফেস্টো; মুসলিম লীগ নেতা আব্দুল সবুর খান ও ইসলামিক ডেমােক্রেটিক লীগ নেতা মওলানা আব্দুল সােবাহান-এর রেডিও-টেলিভিশন বক্তৃতা, The Bangladesh Times, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯। 

৫৩. বিএনপি-এর নির্বাচনী ইশতেহার দেখুন, The Bangladesh Observer, ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯। 

৫৪. রাষ্ট্রপতি জিয়ার নির্বাচনী বক্তৃতা দেখুন, সংবাদ ২২, ২৭ ও ৩১ জানুয়ারি এবং ১২ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯; The Bangladesh Observer, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯। 

৫৫. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, Report on Parliamentary Election, 1979, (ঢাকা, ১৯৮২), পৃষ্ঠা ৮। 

৫৬, ১৯৭৮ সালে মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি ছােট অংশ আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে একই নামে ভিন্ন দল গঠন করে। নেতার নাম অনুসারে এই দল আওয়ামী লীগ (মিজান) নামে পরিচিত হয়। মূল দলটি তখন আওয়ামী লীগ (মালেক) নামে পরিচিত ছিল। জাতীয় একতা পার্টি ছিল ন্যাপ (মােজাফফর) থেকে বেরিয়ে আসা একটি উপদল এবং বাংলাদেশ গণআন্দোলন ছিল ইউ পি পি থেকে বেরিয়ে আসা একটি উপদল। বাংলাদেশ গণফ্রন্ট ছিল পাঁচটি ছােট ডানপন্থী দলের একটি জোট। 

৫৭. বিভিন্ন দলের নির্বাচনােত্তর সাংবাদিক সম্মেলন দেখুন, ইত্তেফাক ও সংবাদ, ২১, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯; বিচিত্রা, ২ মার্চ ১৯৭৯। 

৫৮. এই সংখ্যাগুলাে নির্বাচন কমিশনের রিপাের্ট থেকে নেয়া হয়েছে। 

৫৯. বিরােধী দলীয় নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা দেখন, সংবাদ ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি এবং ২ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯; The Bangladesh Times, ৩ ও ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯। 

৬০. The Bangladesh Observer, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯।

১৯১

Reference – বাংলাদেশের রাজনীতি সংঘাত ও পরিবর্তন – আবুল ফজল হক

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!