শিরোনামঃ তোমরা তোমরা আমরা আমরা
সংবাদপত্রঃ জয় বাংলা; ১ম বর্ষঃ ৮ম সংখ্যা
তারিখঃ ২ জুলাই, ১৯৭১
সম্পাদকীয়
তোমরা তোমরা আমরা আমরা
আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা মন্ত্রে দীক্ষিত তার অসংখ্যা কর্মী ও সদস্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে তথাকথিত পাকিস্তান সরকারের প্রচার যন্ত্রগুলো কতকগুলো বিশেষ বিশেষণ ব্যবহার করে থাকে। সরাসরি প্রকৃত নাম উচ্চারণ করার বাঁধা কোথায় আমরা তা বুঝি না। বিশেষঙুলো হলো- দুষ্কৃতিকারী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, দেশদ্রোহী, ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী ইত্যাদি।
এই বিশেষঙুলোর ব্যবহার পাকিস্তান সরকারের পক্ষে যদি নেহাৎ লজ্জাজনিত হয়ে থাকে আমাদের কিছু বলার নেই। কারণ বৃদ্ধা স্ত্রীলোকটিকে যখন স্বামীর নাম জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তখন লজ্জাবনতভাবে সে বলেছিলো-
“বিশেষণে সবিশেষ কহিবার পারি
জান হে স্বামীর নাম নাহি ধরে নারী”।
সরাসরিভাবে স্বামীর নাম উচ্চারণ করতে ইয়াহিয়া সরকারের যদি বাঁধে তা হলে আমাদের বলার কিইবা থাকতে পারে। এটা হলো তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এই বিশেষণগুলোর ব্যবহার যদি ঘৃণাজনিত হয় অথবা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা এবনবগ অগুনতি স্বাধীনতাকামী মানুষের নাম বিস্মৃতির অন্তরালে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের অবশ্যই কিছু বলার আছে।
ইয়াহিয়া খানের জানা দরকার শেখ মুজিবর শুধু মুক্তি-পাগল সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর অবিসংবাদিত রাজনৈতিক নেতাই নয়, শেখ মুজিব কৃষক শ্রমিক ছাত্র জনতা ও আবাল বৃদ্ধা বনিতার ‘মুজিব ভাই’। শেখ মুজিব একটি নাম-একটি ইতিহাস এ নামের প্রভাবে একদিকে যেমন সাম্রাজ্যবাদী, সামন্তবাদী আমলাতন্ত্র সামরিক জান্তা ও যাবতীয় কায়েমী স্বার্থবাদীদের প্রাসাদ চক্র খান খান হয়ে ধুলায় লুন্ঠিত হতে চলেছে অন্যদিকে তেমনি বঞ্চিত, লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত ও অগ্নিপরীক্ষায় পরীক্ষিত। তার রাজৈনিতক প্রজ্ঞা বহু চড়াই-উতরাই পার হয়ে গিয়ে আজ বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত। তার অলৌকিক জনপ্রিয়তা আজ কঠিন বাস্তব। তার অপরিসীম সংগঠনী ক্ষমতা আজ সকল সন্দেহের উর্ধ্বে। মুজিবের আরেক নাম সংগ্রাম। আর এই সংগ্রামের জন্ম হয়েছে মানবাধিকার আদায়ের সংগ্রাম ও দুঃস্থ মানবতার সেবায় নিয়োজিত দেশের সর্ববৃহত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের অঙ্গনে। যে প্রতিষ্ঠানের জন্ম, পরিস্ফুটন পরিব্যাপ্তি এবং অসাধারণ বিস্তৃতি ঘটেছে নিরলস নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম ও সাধনা মধ্য দিয়ে। নির্বাচনের শতকরা সাড়ে আটানব্বই আসন ও শতকরা ৮১ জনের সমর্থন লাভ করা একমাত্র ত্যাগ তিতিক্ষা ও নিষ্কলুষ সংগ্রামের বিনিময়ে অর্জিত জনপ্রিয়তার মাধ্যমেই সম্ভব। অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন সশস্ত্র বিপ্লবে রূপান্তরিত হয়ে সুদীর্ঘ ৪৩ বছর লেগেছিল ভারতের স্বাধীনতা লাভ করতে আর ২৫শে মার্চ পর্যন্ত অহিংস অসহযোগ আন্দোলন করে সশস্ত্র সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়ে মাত্র তিন মাস মুক্তিফোজের সাথে অসম যুদ্ধের পর আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত ইয়াহিয়া বাহিনীর নাভিশ্বাস উঠেছে। এটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ প্রতিষথানের সংগঠনী শক্তিমত্তা ও দলীয় ঐক্য সংহতি শৃংখলা এবং নেতৃত্বের প্রতি অটুট আস্থার পরিপ্রেক্ষিতে।
আর মুক্তিফৌজ ও আওয়ামীলীগ এরা এঁকে অপরের পরিপূরক। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত। হানাদার বাহিনীর হাত থেকে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করার কঠিন শপথে তারা আবদ্ধ।