১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচন : বৈধকরণ প্রক্রিয়া
বিরােধী দলসমূহের তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ও তার প্রণীত সংবিধানের বৈধতা প্রমাণের প্রয়ােজন ছিল। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে এই বৈধতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়। এই নির্বাচনে প্রধান ইস্যুগুলাে কী ছিল? নির্বাচনী ইস্যু হিসাবে সংবিধান কতটুকু প্রাধান্য পায়? নির্বাচনের ফল কী ছিল এবং বৈধকরণের হাতিয়ারূপে এই নির্বাচন কতটুকু সফল। হয়েছিল? এসব প্রশ্ন বিশদভাবে আলােচনার প্রয়ােজন।
১. নির্বাচনী ইস্যু
শাসকদল আওয়ামী লীগ ১৯৭৩ সালের নির্বাচনকে “মুজিববাদ” তথা রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির ওপর গণভােট বলে ঘােষণা করে।১ প্রধানমন্ত্রী মুজিব ১২ই ফেব্রুয়ারি থেকে ৩রা মার্চ এই সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৯ টি বড় বড় নির্বাচনী সভায় বক্তৃতা করেন। তিনি প্রত্যেকটি সমাবেশে সংবিধানের বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং তার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ জনগণের নিকট ব্যাখ্যা করেন। তাঁর বক্তব্যের মূল সুর ছিল নিম্নরূপ :
আওয়ামী লীগ (১৯৭০ সালে) পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়। পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত ক্ষমতা আঁকড়ে না থেকে এই দল মাত্র ১০ মাস সময়ের মধ্যে দেশকে সংবিধান উপহার দেয় এবং সেই সংবিধানের অধীনে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। কারণ, আওয়ামী লীগ দেশে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সংবিধানটি প্রণয়ন করে; এই সংবিধান একটি পবিত্র দলিল। সংবিধানে পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়; জনগণই দেশের সকল সম্পদের মালিক। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ধর্মহীনতা নয়, তবে ধর্মের নামে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে চায় এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই যে, জনগণ আমার পেছনে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে, তারা সংবিধানে সন্নিবেশিত মূলনীতিসমূহের প্রতি অনুগত এবং একটি শােষণহীন। সমাজ নির্মাণে প্রস্তুত।২
৯৫
মােট ১৩টি বিরােধী দল ও সংগঠন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। আদর্শ ও রণকৌশলের দিক দিয়ে এই দলগুলাের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য ছিল। তাদের আদর্শগত অবস্থান, নির্বাচনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং নির্বাচনী কার্যক্রম সম্পর্কে পৃথকভাবে আলােচনা করা হলাে।
বাংলাদেশের ক্যুনিস্ট পার্টি : বাংলাদেশের ক্যুনিস্ট পার্টি “অধনবাদী পথে উন্নয়ন এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। এই দল অভিমত পােষণ করে যে, দেশে বিরাজমান পশ্চাৎপদ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে রাতারাতি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় পর্যায়ক্রমে সমাজতন্ত্র বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এর প্রথম ধাপ হবে “জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব” সুসম্পন্ন করা। পার্টি বিশ্বাস করে যে, এই পর্যায়ে মধ্যস্তরের জনগণের একটা বিপ্লবী ভূমিকা থাকে। পার্টির মতাে আওয়ামী লীগ মধ্যস্তরের জনগণের একটি দল। পার্টি মনে করেন যে, অর্থনীতির প্রধান খাতসমূহের জাতীয়করণ, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি, সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা—আওয়ামী লীগ কর্তৃক গৃহীত এই সব “প্রগতিশীল” পদক্ষেপের ফলে সমাজে একটি বিপ্লবী প্রক্রিয়া শুরু হয়। অতএব, সমাজতন্ত্রে উত্তরণের জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কম্যুনিস্ট পার্টি এভাবে শ্রেণি সংগ্রামের পরিবর্তে শ্রেণি সহযােগিতার ওপর জোর দেয় এবং শাসকদলের সঙ্গে ঐক্য করে তাকে বাম পথে টেনে আনার কৌশল গ্রহণ করে।৩
কম্যুনিস্ট পার্টি সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ সন্নিবেশিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে এবং প্রতিশ্রুতি দেয় যে, সমাজতন্ত্র বাস্তবায়ন ও সংসদীয় গণতন্ত্র সংরক্ষণের জন্য সকল প্রচেষ্টা করা হবে। পার্টি অভিযােগ করে যে, আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় আদর্শসমূহ বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক কর্মসূচি, প্রশাসনিক অদক্ষতা ও দুর্নীতির সমালােচনার সাথে সাথে কম্যুনিস্ট পার্টি বলে যে, কোনাে একটি দলের পক্ষে এককভাবে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহ সাফল্যের সঙ্গে মােকাবেলা করা সম্ভব নয়। সুতরাং পার্টি নিজে সরকারের সঙ্গে পূর্ণ সহযােগিতার আশ্বাস প্রদান করে। ক্যুনিস্ট পার্টি নির্বাচনের মাত্র চারটি আসনে প্রার্থী মনােনীত করে এবং অন্যান্য আসনে তার সমর্থকবর্গকে ন্যাপ (মােজাফফর) অথবা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পক্ষে ভােটদানের পরামর্শ দেয়।৪
ন্যাপ (মােজাফফর) : কম্যুনিস্ট পার্টির ন্যায় ন্যাপ (মােজাফফর) শান্তিপূর্ণ পথে পর্যায়ক্রমে সমাজতন্ত্রে উত্তরণে বিশ্বাসী ছিল।
যদিও ন্যাপ-দলীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাংবিধানিক দলিলে স্বাক্ষরদানে বিরত থাকেন, এই দল তার নির্বাচনী ইশতেহারে সংবিধান পরিবর্তনের কোনাে প্রস্তাব করেনি; কেবল অঙ্গীকার করে যে, তারা সংসদীয় গণতন্ত্র সংরক্ষণ করবে
৯৬
এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসার সাংবিধানিক অধিকার সুনিশ্চিত করবে।৬
ন্যাপ নেতৃবৃন্দ দুর্নীতি ও অক্ষমতার জন্য আওয়ামী লীগের তীব্র সমালােচনা করে বলেন যে, তার দ্বারা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তারা আরাে অভিযােগ করেন যে, আওয়ামী লীগ বিরােধী দলসমূহকে ভীতি প্রদর্শন ও দমনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র কায়েম করতে চায়। ন্যাপ গণতন্ত্র রক্ষা, দুর্নীতি দূর এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন।৭
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) : জাসদ নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতাে না। এই দল শ্রেণি সংগ্রাম ও সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে “বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জাসদের মতে সমাজতন্ত্র গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত এবং বিরাজমান গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তা অর্জন করা সম্ভব নয়। জাসদ ঘােষণা করে যে, বৈজ্ঞানিকতা ও বিপ্লব ছাড়া আইনের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে কোনাে চেষ্টা রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ কিংবা ফ্যাসিবাদের পথ প্রশস্ত করবে।৮
জাসদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়, নির্বাচন সাধারণ মানুষকে ঠকানাের ফন্দি ছাড়া আর কিছু নয়। মানুষের বিক্ষুব্ধ মনকে দমিয়ে দেয়ার একটা কৌশলমাত্র। এই দল সংবিধানকে একটি আজব কেতাব রূপে আখ্যায়িত কবে বলে যে, এটা ছিল শাসক গােষ্ঠীর ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করার এক হাতিয়ার।৯
নিজস্ব সাংবিধানিক পরিকল্পনা সম্পর্কে জাসদ তার নির্বাচনী ইশতেহারে বলে :
রাষ্ট্র জনগণের প্রতিষ্ঠান। উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে থেকে গড়ে ওঠা সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্বের ওপর অর্পণ করতে হবে। শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ পৃথক থাকবে। সমাজতান্ত্রিক নীতিবিরােধী সকল প্রকার আইন বাতিল হয়ে যাবে। ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয় বলে বিবেচিত হবে। জনগণের জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান এবং শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা রাষ্ট্র করবে।”১০
জাসদ নেতৃবৃন্দ মার্চের নির্বাচনকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম ধাপ বলে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন যে, জাসদ আসন্ন সামাজিক বিপ্লবের প্রস্তুতির কৌশল হিসেবেই এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে। তাঁরা আওয়ামী লীগ সরকারকে ধনিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী ফ্যাসীবাদী, অত্যাচারী, দুর্নীতিবাজ, অপদার্থ ও গণবিরােধী সরকার বলে তীব্র ভাষায় সমালােচনা করেন এবং গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে উৎখাত করার আহ্বান জানান। তারা আরাে অভিযােগ করেন যে, আওয়ামী লীগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিকট দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে।
৯৭
শ্রমিক-কৃষক সমাজবাদী দল : শ্রমিক-কৃষক সমাজবাদী দল নিজেকে মার্কসবাদী লেলিনবাদী বলে দাবি করে এবং বলে যে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত দাবি আদায় করা যায় না, সেগুলাে কেবল সংগ্রামের মাধ্যমেই অর্জন করা যায়। জাসদের মতােই, এই দল কৌশল হিসাবে নির্বাচনের অংশগ্রহণ করে এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বার্থে সংসদকে ব্যবহার করতে চায়। সমাজবাদী। দল আওয়ামী লীগকে উঠতি পুঁজিপতি ও ভূস্বামী শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী পাতি বুর্জোয়া দল হিসাবে চিহ্নিত করে বলে যে, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে আওয়ামী সরকাকে উৎখাত করে কৃষক-শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে হবে। এই দল তার নির্বাচনী ইশতেহারে নতুন সংবিধানকে সমাজতন্ত্র বিরােধী বলে সমালােচনা করে, কিন্তু কোনাে বিকল্প সাংবিধানিক পরিকল্পনা পেশ করেনি।১২
ন্যাপ (ভাসানী) : ন্যাপ (ভাসানী) তার নির্বাচনী ইশতেহারে অভিযােগ করে যে, ভারতীয় কায়দায় নতুন সংবিধানটি প্রণীত হয়েছে এবং পুনরুক্তি করে যে, সংবিধানে জনগণের মৌলিক অধিকারের কোনাে নিশ্চয়তা নেই। ন্যাপ “বর্তমান একনায়কতান্ত্রিক সংবিধানের পরিবর্তে কৃষক-শ্রমিক মধ্যবিত্ত শ্রেণির মেহনতি মানুষের আশা-আকাক্ষা অনুসারে দেশকে একটি নতুন সংবিধান উপহার দেয়ার অঙ্গীকার করে;১৩ কিন্তু তার সাংবিধানিক পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেনি। এই দল সংবিধানকে একটি প্রধান নির্বাচনী ইস্যুরূপে তুলে ধরতেও ব্যর্থ হয়।
ন্যাপ (ভাসানী) বাংলাদেশে একটি “সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেয়। কিন্তু বলে যে, বর্তমানে রাষ্ট্রকাঠামাের অধীনে তা সম্ভব নয়। দলের ঘােষণাপত্রে বলা হয়, ন্যাপ শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা দখল করে দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, কিন্তু এটা ঐতিহাসিক সত্য যে বিপ্লব ছাড়া সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। কারণ, শাসকবৃন্দ স্বেচ্ছায় শান্তিপূর্ণভাবে কখনাে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় না। সুতরাং ন্যাপ (ভাসানী) তার লক্ষ্য। অর্জনে নিয়মতান্ত্রিক এবং অনিয়মতান্ত্রিক উভয় প্রকার পদ্ধতি অনুসরণের কৌশল গ্রহণ করে।১৪
আসলে ঐ সময়ে ভাসানী ন্যাপের মধ্যে উগ্র বামপন্থীদের প্রাধান্য ছিল, যারা নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন না। দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল বিপ্লব প্রচার করা, জয়লাভ করা নয়। দলনেতা মাওলানা ভাসানী জোর দিয়ে বলেন, কেবল নির্বাচনের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র বা শােষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। নির্বাচন হচ্ছে দীর্ঘ প্রতিক্ষীত ও বহু বিলম্বিত বিপ্লবের জন্য চূড়ান্ত সংগ্রামের একটি অংশ মাত্র।১৫
অন্যান্য বিরােধী দলের মতাে ভাসানী ন্যাপও দেশে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অসুদপায় রােধে অক্ষমতার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের তীব্র সমালােচনা করে। কিন্তু এই দল বৈদেশিক নীতির প্রশ্নটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে। “সাতটি গােপন চুক্তি”
৯৮
শীর্ষক একটি প্রচার পুস্তিকায় ন্যাপ অভিযােগ করে যে, আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাক্ষরিত সাতটি গােপন চুক্তির মাধ্যমে “সম্প্রসারণবাদী” ভারতের শাসকচক্রের নিকট বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বন্ধক রেখেছে। “সােনার বাংলা মহাশশ্মান কেন?” শীর্ষক আর একটি প্রচারপত্রে ন্যাপ (ভাসানী) আওয়ামী লীগকে ভারত, সােভিয়েত রাশিয়া ও আমেরিকাসহ অন্যান্য বিদেশি শক্তির ক্রীড়নক আখ্যায়িত করে বলে যে, দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক রাজনৈতিক দুরবস্থার জন্য সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতিই দায়ী। মাওলানা ভাসানীর বিরাট প্রতিকৃতি সম্বলিত এক দেয়াল পত্রে বলা হয় “ভারতের শাসকগােষ্ঠীর গােলামী থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আমার মনােনীত প্রার্থীকে ভােট দিন”।
বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি (লেলিনবাদী) : লেলিনবাদী কম্যুনিস্ট পার্টি নিজেকে মার্কসবাদী-লেলিনবাদী বলে দাবি করে। এই দল নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাজতন্ত্র উত্তরণের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিল না। পার্টি শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে “জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।১৬
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে পার্টি মাত্র দুটি আসনে প্রার্থী মনােনীত করে এবং ঘােষণা করে যে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ও সংবিধানকে মেনে নেয়া এক কথা নয়। এই অংশগ্রহণ ছিল নির্বাচন ও সংবিধানকে সাংগঠনিক প্রস্তুতি ও আদর্শগত প্রচারণার স্বার্থে ব্যবহার করা কৌশলের একটি অংশ মাত্র।১৭
বাংলার ক্যুনিস্ট পার্টি : বাংলার কম্যুনিস্ট পার্টি তার নির্বাচনী ইশতেহারে একটি ১১-দফা কর্মসূচি ঘােষণা করে। তাতে জনগণের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, কিন্তু বলা হয় যে, নির্বাচনের মাধ্যমে এই কর্মসূচির বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এই দলের মতে, বিপ্লব ছাড়া মেহনতি জনগণের স্বার্থ আদায় করা যায় না। ভাসানী ন্যাপের মতােই, এই দল আওয়ামী লীগ সরকারের তীব্র সমালােচনা করে বলে যে, বাংলাদেশকে “ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ ও রুশ সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের” শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত করা হয়েছে এবং জনগণকে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে সামিল হবার আহ্বান জানায়। বাংলার ক্যুনিস্ট পার্টি নতুন সংবিধানকে বাতিলের দাবি জানায় এবং সংবিধান সম্পর্কে তার নিজস্ব কিছু প্রস্তাব উত্থাপন করে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে ছিল জনগণ কর্তৃক প্রশাসকদের নির্বাচন ও প্রত্যাহারের অধিকার, জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত বিচারকবৃন্দ সমন্বয়ে গঠিত আদালত এবং সংসদে পেশাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা।১৮
জাতীয় লীগ ও বাংলা জাতীয় লীগ : জাতীয় লীগ ও বাংলা জাতীয় লীগ এককালীন আওয়ামী লীগ নেতা ও পূর্ব-বাংলার মুখ্য মন্ত্রী আতাউর রহমান খান কর্তৃক ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান ন্যাশনাল লীগের দুটি উপদল। তৎকালীন বাংলাদেশে বিরােধী দলসমূহের মধ্যে কেবল এই দল দুটিই সংসদীয় গণতন্ত্র
৯৯
এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু দল দুটি ছিল কার্যত জনসমর্থনহীন নেতাভিত্তিক ক্ষুদ্র সংগঠন। আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় লীগ শাসক দলের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরােধের ডাক দেয়। এবং নেতার ব্যক্তিগত পরিচিতিকেই পুঁজি করে অগ্রসর হয়। অপরদিকে, অলি আহাদের নেতৃত্বাধীন বাংলা জাতীয় লীগ বৈদেশিক সম্পর্ককে প্রধান ইস্যু রূপে হাজির করে। ভাসানী ন্যাপের মতাে বাংলা জাতীয় লীগ অভিযােগ করে যে, আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে আটটি গােপন চুক্তি করে এবং “সম্প্রসারণবাদী” ভারতের লেজুড়বৃত্তির কারণেই বাংলাদেশ একটা শ্মশানে পরিণত হয়। এই দলের প্রধান শ্লোগান ছিল ভারতের বিরুদ্ধে “আজাদ বাংলার সংগ্রামকে জোরদার করুন”।১৯
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য চারটি সংগঠনের মধ্যে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন ছিল বাংলার ক্যুনিস্ট পার্টির যথাক্রমে শ্রমিক ও ছাত্র ফ্রন্ট এবং তারা মূল দলের সঙ্গে অভিন্ন মত পােষণ করত। অন্য দুটি দল বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেস ও জাতীয় গণতন্ত্রী দল ছিল কাগুজে সংগঠন।
সুস্পষ্টতই, আওয়ামী লীগ ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংবিধানকে প্রধান ইস্যু করতে চেয়েছিল। কিন্তু বিরােধী দলসমূহ সাংবিধানিক প্রশ্নটি এড়িয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র নীতিকে সামনে নিয়ে আসে। বিরােধী দলগুলাের নির্বাচনী প্রচারণায় দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ইত্যাদি প্রশ্ন সর্বাধিক গুরুত্ব লাভ করে। আত্মরক্ষা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন যে, দীর্ঘদিনের পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শােষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় অর্থনৈতিক অবকাঠামাে ও যােগাযােগ ব্যবস্থা ধ্বংসই হচ্ছে দেশে বিরাজমান দুর্দশার মূল কারণ। তারা দাবি করেন, অনাহারে দেশে একটি লােকও মারা যায়নি এটাই যথেষ্ট। প্রধানমন্ত্রী মুজিব স্বীকার করেন যে, তার আশে পাশে দুর্নীতিবাজ রয়েছে। কিন্তু তিনি জনগণকে আশ্বাস দেন যে, তাদের সহযােগিতা পেলে তাঁর সরকার দুর্নীতি ও জনগণের দুর্দশার কারণসমূহ অচিরে দূর করতে সমর্থ হবে।”২০
আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কোনাে বিদেশি শক্তির লেজুড়বৃত্তির অভিযােগ অস্বীকার করেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্য ও সমর্থনের কারণে ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযােগিতার নীতির পক্ষে দৃঢ় মত ব্যক্ত করেন।২১
প্রতি আক্রমণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ন্যাপ (ভাসানী), জাসদ, প্রভৃতি বিরােধী দলকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী এবং চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চর বলে আখ্যায়িত করেন।
২. নির্বাচনের ফল :
সকল স্বীকৃত বিরােধী দল ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তবে কেবল আওয়ামী লীগই সংসদে ৩০০ টি আসনের সবকটিতে প্রার্থী মনােনীত
১০০
করে। প্রধামন্ত্রী, তাঁর রাজনৈতিক সচিব এবং তিনজন মন্ত্রীসহ ১০ জন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী দুটি আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন, সেহেতু ৭ মার্চ তারিখে ভােট গ্রহণের আগেই আওয়ামী লীগ ১১ টি আসন লাভ করে। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে একটি আসনে ভােট গ্রহণ স্থগিত হয় এবং তা ৪ এপ্রিল তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে প্রদত্ত বৈধ ভােটের সংখ্যা ছিল ১,৮৮,৫১,৮০৮ যা তালিকাভুক্ত ভােটার সংখ্যার ৫৫.৬২% ছিল। ১২০ জন নির্দলীয় প্রার্থীসহ মােট ১,০৭৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ভােটের ৭৩.২০% পেয়ে ২৮৯ টি আসনের মধ্যে ২৮২টি লাভ করে। অবশিষ্ট সাতটি আসনের মধ্যে একটি পায় জাসদ, একটি জাতীয় লীগ এবং পাঁচটি নির্দলীয় প্রার্থীগণ (সারণি ৪.১ দেখুন)।
কিন্তু বিরােধীদলগুলাের অধিকাংশই অভিযােগ করে যে, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়নি এবং তাতে জনগণের প্রকৃত রায়ের প্রতিফলন ঘটেনি। বিরােধী দলগুলাের প্রধান যুক্তি ছিল আওয়ামী লীগ ভীতি প্রদর্শন, বল প্রয়ােগ, জাল ভােট প্রদান, গণনার কারচুপি ইত্যাদি অসৎ উপায়ে জয়লাভ করে। ন্যাপ (ভাসানী) নেতৃবৃন্দ নির্বাচনকে একটা বিরাট তামাসা বলে আখ্যায়িত করেন এবং এই নির্বাচন বাতিল করার জন্য গণআন্দোলনের আহ্বান জানান। জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান (যিনি তাঁর দলের একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী ছিলেন) তাঁর নির্বাচনী অভিজ্ঞতাকে দুঃস্বপ্ন বলে বর্ণনা করে বলেন যে, এটা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা অসৎ নির্বাচন। কিন্তু তিনি নির্বাচন বাতিল করার জন্য গণআন্দোলনের সম্ভাব্যতা বাতিল করে দেন। জাসদ নেতৃবৃন্দও সাধারণ নির্বাচনকে একটি প্রতারণা বলে আখ্যায়িত করেন এবং সতর্ক করে দেন যে, নির্বাচনের ফল মেহনতি জনগণের বিপ্লবী অগ্রযাত্রাকে রােধ করতে পারবে না।২২
এমন কি বাংলাদেশের ক্যুনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ (মুজাফফর) (যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সহযােগিতার নীতি অনুসরণ করেছিল) কিছু আসনে অগণতান্ত্রিক ও অসৎ উপায় অবলম্বনের জন্য আওয়ামী লীগের ওপর দোষারােপ করে। তবে তারা নির্বাচনের ফলকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সুস্পষ্ট রায় বলে মেনে নেয়।২৩
বিরােধী দলসমূহ কর্তৃক উত্থাপিত অভিযােগুলাের ভিতর কিছু সত্যতা ছিল। আওয়ামী লীগ অস্বীকার করলেও এটা অনেকে বিশ্বাস করে যে, কোনাে কোনাে প্রার্থীকে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের রিপাের্টে বলা হয় যে, কিছু সংখ্যক ভােটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীগণ বল প্রয়ােগ ও ভােট জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে।২৪
ভােট গণনা ও ফল ঘােষণার কার্যক্রমও এই ধারণার সৃষ্টি করে যে, কয়েকজন বিরােধী দলীয় প্রার্থীকে অসদুপায়ে পরাজিত ঘােষণা করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল এই অসদুপায় নির্বাচনী ফলকে কী পরিমাণে প্রভাবিত করে?
১০১
সারণী ৪.১
১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফল দল
দল | মনােনীত প্রার্থী সংখ্যা | প্রাপ্ত আসন সংখ্যা | প্রাপ্ত ভােটের শতকরা হার |
আওয়ামী লীগ | ২৮৯ | ২৮২ | ৭৩.২০ |
ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ পার্টি (মােজাফফ) | ২২৪ | – | ৮.৩৩
৮১.৭৮ |
বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি | ৪ | – | ০.২৫ |
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল | ২৩৭ | ১ | ৬.৫২ |
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) | ১৬৯ | – | ৫.৩২ |
শ্রমিক-কৃষক সমাজবাদী দল | ৩ | – | ০.২০ |
বাংলাদেশের কম্যুনিস্ট পার্টি (লেলিনবাদী) | ২ | – | ০.১০
১২.৩৩ |
বাংলার কম্যুনিস্ট পার্টি | ৩ | – | ০.০৬ |
বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন | ৩ | – | ০.০৯ |
বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন | ১ | – | ০.০৪ |
জাতীয় লীগ | ৮ | ১ | ০.৩৩ |
বাংলা জাতীয় লীগ | ১১ | – | ০.২৮ |
জাতীয় গণতন্ত্রী দল | ১ | – | ০.০১ |
জাতীয় কংগ্রেস | ৩ | – | ০.০২ |
নির্দলীয় প্রার্থী | ১২০ | ৫ | ৫.২৫ |
মােট | ১০৭৮ | ২৮৯ | ১০০ |
উৎস : বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, Report on the First General Election to Parliament in Bangladesh, 1973 (ঢাকা, ১৯৭৩) সারণি ৮, পৃষ্ঠা ৫৩।
গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিনিধি ওয়াল্টার শশার্জের মতে, জাতিসংঘের পরিচালনায় এবং রেডক্রসের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও শেখ মুজিবুর রহমান (এর দল) অনায়াসে জয়লাভ করতেন।২৫
অনুরূপভাবে টাইমস পত্রিকা মন্তব্য করে, “বাংলাদেশের নির্বাচনে শেখ মুজিবের বিজয় কোনাে বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল না। তবে পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে।২৬
এনায়েতুল্লাহ খান (যিনি নির্দলীয় প্রার্থী হিসাবে ঢাকার একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচনে পরাজিত হন এবং বিরােধী বামপন্থীদের প্রতি যার
১০২
সহানুভূতি সর্বজনবিদিত ছিল) বলেন, একটা সৎ নির্বাচন হলেও ফলাফলের গুরুত্বপূর্ণ হেরফের হতাে না, বিরােধী পক্ষ খুব জোর আর দশটি আসনে জয়লাভ করতাে।২৭
নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকগণ সম্ভবত এনায়েতুল্লাহ খানের সঙ্গে একমত হবেন। এমন কি, বিরােধী দলসমূহ দশ জনের বেশি প্রার্থীর নাম করতে পারেনি যাদেরকে জোরপূর্বক পরাজিত করা হয়েছিল বলে তারা দাবি করে।
নির্বাচনী রিটার্ন থেকে দেখা যায় যে, অধিকাংশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী তাদের প্রতিপক্ষকে বিরাট ভােটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। পরাজিতদের মধ্যে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাসদের প্রার্থী মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) এম, এ, জলিল, যিনি ১,০৫২ ভােটের ব্যবধানে পরাজিত হন। নিকটতম বিরােধী দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের পক্ষে ১০,০০০ পর্যন্ত ভােট যােগ দিলে আরাে ২১ জন বিরােধী প্রার্থী (৫ জন নির্দলীয় প্রার্থীসহ) জয়লাভ করতেন। কিন্তু তার দ্বারা বিভিন্ন দল কর্তৃক প্রাপ্ত ভােটে শতকরা হার খুব বেশি হেরফের হতাে না। একজন প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কর্তৃক ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে দুটি নির্বাচনী এলাকায় পরিচালিত জরিপে দেখা যায় যে, ভােটারগণ কর্তৃক প্রদত্ত প্রাক নির্বাচন পছন্দ (Choice) এবং প্রকৃত ফলাফলের মধ্যে উল্লেখযােগ্য অসামঞ্জস্য নেই।২৮
নির্বাচনী প্রচারণার সুযােগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, আওয়ামী লীগ একটা বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। শাসকদল হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার-নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমে এবং যানবাহনাদি তার নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যবহার করে। কিন্তু সেটাই বােধ করি আওয়ামী লীগের বিজয়ের পিছনে প্রধান কারণ ছিল না। বেশির ভাগ বিরােধী দল সাংগঠনিকভাবে প্রাথমিক স্ত রে ছিল এবং আওয়ামী লীগের তুলনায় অনেক দুর্বল ছিল। জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মােহনী ব্যক্তিত্বও আওয়ামী লীগের জন্য বিরাট সম্পদ। কিন্তু বিরােধী দলসমূহের শােচনীয় পরাজয়ের জন্য তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও কম দায়ী ছিল না।
বিরােধী দলগুলাে কোনাে ইতিবাচক কর্মসূচি কিংবা সুস্পষ্ট রাজনীতির নির্দেশ দিতে ব্যর্থ হয়। মূলত তারা ক্ষমতাসীন দলের ব্যর্থতার ওপর ভর করে অগ্রসর হয়। দেশে খাদ্য, বস্ত্র ও অন্যান্য নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যের অভাব ছিল এবং দ্রব্যমূল্য দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছিল।২৯
প্রশাসনিক, অদক্ষতা ও দুর্নীতি দৈনন্দিন আলােচনার বিষয়ে পরিণত হয়। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। বিরােধী দলসমূহ বিরাজমান সামাজিক ও। রাজনৈতিক দুর্দশার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করে। কিন্তু তারা জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে কোনাে বিকল্প কর্মসূচি হাজির করতে ব্যর্থ হয়। কেবল সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ এবং খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থানের মামুলি প্রতিশ্রুতি জনগণকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী মুজিব পাকিস্তানি কারাগার
১০৩
থেকে ফিরে আসার পর থেকেই জনগণকে বলে আসছিলেন যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য সময়ের প্রয়ােজন এবং তিনি পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে তাদের অবস্থার কোনাে উন্নতি করতে পারবেন না। ভােটারগণ মুজিবের এই যুক্তি সম্ভবত গ্রহণ করে এবং তারা তাঁর সরকারকে আরও কিছু সময় দিতে প্রস্তুত ছিল।
তাছাড়া বিরােধী দলগুলাের একাংশ দেশে ধুমায়মান ভারত-বিরােধী মনােভাবের ওপর অধিকমাত্রায় নির্ভর করে। তারা যুক্তি দেখায় যে, দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য ভারতীয় শােষণই প্রধানত দায়ী এবং দেশের স্বাধীনতা রুশ-ভারত অক্ষশক্তির নিকট বেচে দেয়া হয়েছে। এটা সত্য যে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষে ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশ থেকে সামরিক সরঞ্জাম ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ভারতে স্থানান্তর, ভারতের সঙ্গে অবাধ সীমান্ত বাণিজ্য, সীমান্তের ওপারে ব্যাপক চোরাচালান, ভারতের সঙ্গে গােপন। চুক্তির রটনা জনগণের মধ্যে অসন্তোষ ও বিরূপ মনােভাব সৃষ্টি করে। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধে রুশ-ভারতের সহযােগী ভূমিকা, স্বাধীনতার মাত্র তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার এবং স্বাধীনতা পরবর্তী দুর্যোগময় দিনগুলােতে ভারত কর্তৃক ব্যাপক খাদ্য ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান সম্ভবত তখনাে জনমনে জাগরুক ছিল।৩০
সুতরাং ভারত ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণের কৌশল সেরূপ ফলদায়ক হয়নি। তাছাড়া উগ্র বামপন্থী দলসমূহ কর্তৃক নির্বাচনী রাজনীতির প্রকাশ্য নিন্দা সাধারণ ভােটারদের নিকট বােধগম্য বা গ্রহণযােগ্য ছিল না। সনাতনী রাজনীতিতে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষ কেন ঐসব দলকে ভােট দেবে যারা বারংবার বলছে, জয়লাভের জন্য নয় বরং বিপ্লবের পথ প্রশস্ত করার জন্যই তারা নির্বাচন করছে? বামপন্থীদের মধ্যে বাংলাদেশের ক্যুনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ (মােজাফফর) নির্বাচনী রাজনীতিতে তাদের আস্থা ব্যক্ত করে; কিন্তু তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে অবাধ সহযােগিতার নীতি অনুসরণ করার কারণে বিকল্প শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হতে ব্যর্থ হয়।
নির্বাচনের ফল সম্পর্কে প্রায় সবারই ধারণা ছিল যে, আওয়ামী লীগ স্বচ্ছন্দে জয়লাভ করবে। সে সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ কেন কারচুপি ও বলপ্রয়ােগের আশ্রয় নিল? এটা সম্ভবত নেতৃবর্গের ব্যক্তিগত অহংকারবােধ এবং গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি পূর্ণ অঙ্গীকারের অভাবে ঘটেছিল। মনে হয়, আওয়ামী লীগের নেতারা এই নির্বাচনকে একটা সম্মানের লড়াই হিসেবে গ্রহণ করে। গােটা জাতি যে আগের মতােই তাদের পেছনে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে তা বিশ্বকে দেখাবার জন্য তারা প্রত্যেকটা আসনে জয়লাভের চেষ্টা করেন এবং যে-সব বিরােধী নেতা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেন তাঁদের কয়েকজনকে পরিকল্পিতভাবে পরাজিত করা হয় বলে অনেকের ধারণা।
১০৪
৩. নির্বাচনী ম্যান্ডেট
একটি বিরােধী ইংরেজি সাপ্তাহিকী মন্তব্য করে যে, “নির্বাচনে কারচুপির অভিযােগ সত্ত্বেও এটা সত্য যে, তাতে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে সুস্পষ্ট রায় দেয়া হয়, অবশ্য মুজিববাদের পক্ষে নয়।”৩১” অর্থাৎ এটা ছিল মুজিবের ব্যক্তিগত বিজয়, একে মুজিবের আদর্শ বা সংবিধানের পক্ষে রায় বলা যায় না।
অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতােই বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে ব্যক্তিবাদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আওয়ামী লীগ যে এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু মুজিবের ‘ক্যারিজমা’ বা ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল ছিল তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। এই দল শেখ সাহেবের ফটোযুক্ত একাধিক নির্বাচনী পােস্টার প্রকাশ করে। একটি পােস্টারে বলা হয়, “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ সােনার বাংলা গড়ে তােলা আপনার দায়িত্ব। মুজিববাদের ভিত্তিতে দেশ গড়ার সংগ্রামে আওয়ামী লীগ আপনার সমর্থন কামনা করে।” আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও নেতারা বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ না করে কোনাে সময় তাদের নির্বাচনী বক্তৃতা সমাপ্ত করেননি এবং প্রত্যেকই বঙ্গবন্ধুর হাত শক্তিশালী করার জন্য তাদেরকে ভােট দানের আবেদন জানান।৩২
প্রধান বিরােধী দলগুলােও তাদের নিজ নিজ নেতার ভাবমূর্তি ব্যবহার করার চেষ্টা করে। ন্যাপ (ভাসানী), ন্যাপ (মােজাফফর) ও জাসদের নির্বাচনী পােস্টারে। যথাক্রমে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, প্রফেসর মােজাফফর আহমদ এবং এম এ জলিল ও আব্দুর রবের ফটো সন্নিবেশিত করা হয়। মাওলানা ভাসানীর ছবি সম্বলিত একটি পােস্টারে বলা হয়, “আমার মনােনীত প্রার্থী” কে ভােট দিন।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু” এবং “জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্বের আবেদন অন্যান্য নেতার তুলনায় অনেক বেশি ছিল। বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে শেখ মুজিবের সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা ও আত্মত্যাগের কথা তখনাে সাধারণ মানুষের স্মৃতিতে অম্লান ছিল এবং জনগণের এক বড় অংশ মনে করতাে যে, তাদের দুর্দশার জন্য নেতা মুজিব দায়ী নন।৩৩
সুতরাং তারা “শেখ মুজিবের নৌকায়” (নৌকা ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক) ভােট প্রদান করে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধুই ছিলেন তাঁর দলের বিজয়ের প্রধান উৎস।৩৪
শেখ মুজিবর নিজেও আভাস দেন যে, আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে, কারণ “আমি জনগণকে ভালােবাসি এবং জনগণ আমাকে ভালােবাসে”।৩৫
তবে এটা মনে রাখা দরকার যে আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনকে সংবিধানের ওপর একটা গণভােট বলে ঘােষণা করে। প্রধামন্ত্রী মুজিব তার নির্বাচনী বক্তৃতায় জনগণকে কেবল তাঁর প্রতিই নয় সংবিধানের প্রতিও তাদের সমর্থন জ্ঞাপনের জন্য বার বার আহ্বান জানান। বরং বিরােধী দলসমূহ সংবিধানের প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে সরকারের কার্যক্রমকে সামনে আনার চেষ্টা করে। তাদের মধ্যে অনেকেই
১০৫
নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতাে না। তারা নতুন সংবিধানটি বাতিলের আবেদন জানায়, কিন্তু কোনাে সুস্পষ্ট বিকল্প সাংবিধানিক পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারেনি। এই সংবিধান-বিরােধী দলসমূহ সমষ্টিগতভাবে মাত্র ১২.৩৩% ভােট লাভ করে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ পায় ৭৩.২০% ভােট। এর সঙ্গে ন্যাপ (মােজাফফর) এবং বাংলাদশের কম্যুনিস্ট পার্টি (যারা নীতিগতভাবে সংবিধান। মেনে নেয়) কর্তৃক প্রাপ্ত ভােট যােগ দিলে সংবিধানের পক্ষে ভােটের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮১.৭৮%।
উপসংহারে এটা বলা যায় যে, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে শাসকবর্গ এবং তাঁদের রচিত সংবিধানের বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ কর্তৃক কিছু অসদুপায় অবলম্বনের ফলে ঐ নির্বাচনের পবিত্রতা অনেকটা ক্ষুন্ন হয়। নির্বাচনী কার্যক্রম এবং ফল বিরােধী দলসমূহের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করে এবং প্রতিযােগিতামূলক গণতন্ত্রের প্রতি শাসনকারী এলিটদের অঙ্গীকার সম্পর্কে তাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়।
সূত্র ও টীকা
১. আওয়ামী লীগ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানের এই চার মূলনীতিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামানুসারে মুজিববাদ বলে আখ্যায়িত করে। মুজিববাদের মূল কথা ছিল গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্রে উত্তরণ।
২. প্রধানমন্ত্রী মুজিবের বক্তৃতা থেকে সংকলিত। দেখুন দৈনিক বাংলা, পূর্বদেশ ও The Bangladesh Observer, ১৩-২৭ ফেব্রুয়ারি, ১-৪ মার্চ ১৯৭৩।
৩. দেখুন Second Congress of the Communist Party of Bangladesh, ঢাকা, ১৯৭৪।
৪. বাংলাদেশ কম্যুনিস্ট পার্টির ঘােষণা, ১৯৭৩; মণি সিং এর বক্তৃতা, সংবাদ, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩।
৫. বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি, ১৯৭২।
৬. নির্বাচনী ইশতেহার, ১৯৭৩।
৭. সংবাদ, ১৭, ১৯ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি এবং ৩ ও ৬ মার্চ, ১৯৭৩।
৮. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ঘােষণাপত্র, ১৯৭৩ পৃষ্ঠা ১৫-১৬।
৯. নির্বাচনী ইশতেহার, ১৯৭৩, পৃষ্ঠা৩-৪।
১০. ঐ, পৃষ্ঠা ২৪।
১১. গণকণ্ঠ, ৫, ১১, ১৩, ১৪, ১৯, ২৩, ও ২৪ ফেব্রুয়ারি এবং ১, ২, ৪, ৫ মার্চ, ১৯৭৩।
১২. নির্বাচনী ঘােষণাপত্র, ১৯৭৩; সমাজবাদী (দলীয় বুলেটিন), মে ১৯৭৩।
১৩. নির্বাচনী ইশতেহার, ১৯৭৩।
১৪. ঘােষণাপত্র ও কর্মসূচি, ১৯৭২।
১৫. The Bangladesh Observer, ১ মার্চ ১৯৭৩, পূর্বদেশ, ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩।
১৬. ঘােষণা, ১৯৭৩।
১৭. কমরেড, সংখ্যা ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩।
১৮. বাংলার কমুননিস্ট পার্টির নির্বাচনী ঘােষণা, ১৯৭৩।
১৯. বাংলা জাতীয় লীগের নির্বাচনী ইশতেহার, ১৯৭৩।
১০৬
২০. প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা দেখন, পাদটীকা ২।
২১. ভারতের সঙ্গে কোনাে গােপন চুক্তি সম্পর্কে এ পর্যন্ত কোনাে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জিয়া সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক সামসুল হক সংসদে সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, কোনাে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনাে গােপন চুক্তি নেই। দ্রষ্টব্য : বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ, বিতর্ক, খণ্ড ৩, সংখ্যা ১২ (২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৮০), পৃষ্ঠা ৯৫৫।
২২. বিরােধী দলসমূহের অভিযােগের জন্য দেখুন, The Bangladesh Observer, ১০ মার্চ, ১৯৭৩, নয়াযুগ, ১৬ মার্চ, ১৯৭৩; গণকণ্ঠ, ১০ ও ১১ মার্চ, ১৯৭৩।
২৩. পূর্বদেশ, ১১ মার্চ ১৯৭৩; The Bangladesh Observer, ১০ই মার্চ, ১৯৭৩।
২৪. The Wave ৩১ মার্চ, ১৯৭৩।
২৫. ঐ।
২৬. The Bangladesh Observer, ১০ মার্চ, ১৯৭৩।
২৭. Holiday, ১১ মার্চ, ১৯৭৩।
২৮. রওনক জাহান Bangladesh Politics, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ১৮৩-৮৫।
২৯. ১৯৬৯-৭০ অর্থবছর = ১০০ কে ভিত্তি ধরে ১৯৭৩ সালের জুন মাসে কৃষিজাত ও শিল্পজাত দ্রব্যাদির মূল্য সূচক যথাক্রমে ২০১ ও ২২০ – এ দাঁড়ায়। দ্রষ্টব্য : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়, Bangladesh Economic Survey, ১৯৭১-৭৩, পৃষ্ঠা ii.
৩০. ১৯৭৩ সালের মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ কর্তৃক বিদেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের নিকট থেকে প্রাপ্ত মােট খাদ্য সাহায্যের পরিমাণ ছিল ২৪.৬ লক্ষ টন। তার মধ্যে ভারত একাই দেয় আট লক্ষ টন। একই সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত মােট ৩৩.১৭ কোটি টাকার নগর সাহায্যের মধ্যে ভারতের অবদান ছিল ১৮.৫৮ কোটি টাকা। দ্রষ্টব্য : জাতীয় সংসদ, বিতর্ক, খণ্ড, ২, সংখ্যা ১৩, (১৯ জুন, ১৯৭৩) পৃষ্ঠা- ৪০০-৪০১।
৩১. The Wave, ১০ মার্চ, ১৯৭৩।
৩২. উদাহরণের জন্য দেখুন, The Bangladesh Observer, ৫ মার্চ ১৯৭৩।
৩৩, পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় ১১ বছর কারাজীবন যাপন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাকে পাকিস্তানি কারাগারে আটক রাখা হয়। মত্যর মুখােমুখি হয়েও তিনি স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি এই কথাগুলাে বার বার স্মরণ করিয়ে দেন।
৩৪. The Bangladesh Observer, ১০ মার্চ, ১৯৭৩।
৩৫. পূর্বদেশ, ৯ মার্চ, ১৯৭৩।
১০৭
Source:
বাংলাদেশের রাজনীতি সংঘাত ও পরিবর্তন – আবুল ফজল হক