You dont have javascript enabled! Please enable it! সম্পর্কের কালপঞ্জীতে জাপান (১৯৭১-১৯৭৫) | ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম - সংগ্রামের নোটবুক

সম্পর্কের কালপঞ্জীতে জাপান

(১৯৭১-১৯৭৫)

# মেইনিচি ডেইলি নিউজ পত্রিকায় ২৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখের সংখ্যায় নিউজ শিরোনাম করছিল : Civil War Erupts in E. Pakistan As Army Takes Over : Bengali troops Side with Rahman. 

# ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ তারিখের জাপানের বিখ্যাত Daily Yomiuri পত্রিকার প্রধান শিরােনাম ছিল, Mujibur’s Liberation Army Has Upper Hand in Civil War. 

# ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ তারিখের জাপানের বিখ্যাত Mainchi Daily News পত্রিকার প্রধান শিরােনাম ছিল,“Bangla Desh Radio Claims Massacre By Gov’t Forces – Rebels Take 3 Cities, Recaptue Radio Dacca”. 

# ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ তারিখের জাপানের বিখ্যাত Mainchi Daily News পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে একটি ছবি ছাপা হয়। ছবির নিচে ক্যাপসনে লিখা হয়: Indian supporters of East Pakistan rebel leader Sheikh Mujibur Rahman demonstrate outside the Pakistan Embassy here March 27. The demonostration was led by Congress members of Parliament protesting the alleged “massacre” of thousands in East Pakistan. 

# ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল তারিখের জাপানের বিখ্যাত Daily Yomiuri 1995 Mujibur’s Forces Control Jessore. ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল তারিখের জাপানের বিখ্যাত Mainchi Daily News পত্রিকার শিরোনাম ‘Free Bengal Does Exit Group of Foreign Newsmen Visits Jessore. 

# ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল তারিখের জাপানের বিখ্যাত Japan Times পত্রিকার West Pakistani Troops Isolated in Big Cities; Rebel Strength Surges, Dacca, Chittagong Outskirts Reported Bengali Controlled.

১২৯

# ১৯৭১ সালের ২২ আগস্ট তারিখের সংখ্যায় মেইনিচি ডেইলি নিউজ পত্রিকায় নিউজ শিরােনাম করেছিল : Independent E. Bengal Within Year Predicted. 

# ১৯৭১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তারিখের সংখ্যায় মেইনিচি ডেইলি নিউজ পত্রিকায় নিউজ শিরােনাম করেছিল : World Governments Asked to Recognize Bangla Desh. 

# ১৯৭১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখের Japan Times পত্রিকায় জাপানি প্রতিনিধিদলের রিফিউজি ক্যাম্প পরিদর্শনের নিউজ ছবিসহ প্রকাশ করেছিল। এতে বলা হয় : A four member parliamentary delegation of the liberal democratic party led by Yoshio Sakurauchi is currently India at the invitation of the Indian Government for a better understanding of the situation resulting out of the East Pakistan problem.” Sakurauchi and his colleagues Masahisa Aoki visited the Salt Lake evacuces camps and talked with the local officials connected with relief measures. 

# ১৯৭১ সালের ৩ নভেম্বর তারিখের মেইনিচি ডেইলি নিউজ পত্রিকায় নিউজ শিরােনাম করেছিল : 2 Diplomats Defect to Bangla Desh. 

# ১৯৭১ সালের ৩ নভেম্বর তারিখের সংখ্যায় ডেইলি ইয়েমুরি পত্রিকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর লন্ডন সফরের ওপর গুরুত্ব দিয়ে নিউজ শিরােনাম করেছিল : Must Free Mujib Gandhi, British Leaders Agree. ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর তারিখের সংখ্যায় ডেইলি ইয়েমুরি পত্রিকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে শিরােনাম প্রকাশ করে। শিরােনামে বলা হয় : Gandhi Rejects Nixon’s Proposal. ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছবির ক্যাপশনের নিচে লেখা হয় : Indian Prime Minister Indira Gandhi sits in at a cabinet meeting at the white house in Washington D.C. President Nixon is at her side. 

# ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর তারিখের সংখ্যায় মেইনিচি ডেইলি নিউজ পত্রিকায় শিরােনাম করেছিল : Free Mujib, Mrs. Gandhi Tells Yahya.

# ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আত্মসমপর্ণের মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। বাংলাদেশের বিজয় অর্জনে জাপানিপত্র-পত্রিকায় শিরােনাম করল ‘Pakistanis Ink Surrender Papers’.

১৩০

# ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জাপান এয়ার লাইন্সের একটি বিরাট বিমান নানা সাহায্য সামগ্রী নিয়ে ঢাকা পৌছায়। সাহায্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল ১০ টন দুধ, ৫,০৪০টি কম্বল, ২০০০টি ট্রানজিস্টর এবং টিনজাত খাদ্য। জাপানের জনগণ ও স্কুলের ছেলেমেয়েরা জাপান রেডক্রসের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য এই সাহায্য দান করেন। জাপানি স্কুল শিশুরা তাদের টিফিনের অর্থ বাঁচিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। 

# ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে প্রথমদিকে স্বীকৃতিদানকারী দেশগুলাের অন্যতম জাপান। জাপানের এই স্বীকৃতি প্রদান উপলক্ষে জাপানের সংবাদপত্রে লেখা হয়েছিল : Japan Thursday morning officially recognized the government of People’s Republic of Bangladesh and immediately informed Dacca of its decision, the foreign ministry announced. “Japan was the 31% country to recognize the Bangladesh Government. India, the Soviet Union, Australia and Britain have already done so.” 

# ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশকে জাপানের স্বীকৃতি দান। স্বীকৃতি দান প্রসঙ্গে হায়াকাওয়া বলেন, জাপান স্বাধীন বাংলাদেশকে দ্রুত স্বীকৃতি দিয়েছিল। সিদ্ধান্তটি ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর জাপান কূটনীতির ক্ষেত্রে এই প্রথম স্বতস্ফূর্তভাবে একটা উদ্যোগ নিল। 

# ১৯৭২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি: জাপান বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। জাপান বাংলাদেশে দূতাবাসের কার্যক্রম চালু করে। তাকাশি ওয়ামাদা বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রথম জাপানি রাষ্টদূত। 

# জাপানের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর। 

# জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রম চালু। 

# বাংলাদেশ জাপান এসােসিয়েশন প্রতিষ্ঠা 

#জাপানি সাহায্য সহযােগিতা কার্যক্রম শুরু। 

# ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ : তাকাশি হায়াকাওয়ার বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশে হানেদা বিমানবন্দর থেকে রওয়ানা দেন। সফরসঙ্গী হিসেবে সাথে এসেছিলেন তারাে সুগা ও তাকাশি কাসাওকা।

# ১৯৭২ সালের ১৪ মার্চ : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সফররত জাপানি প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হয়। জাপানি প্রতিনিধিদলের নেতা তাকাশি হায়াকাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাপানি প্রধানমন্ত্রী এইসাকু সাতাের চিঠি হস্তান্তর করেন।

১৩১

# ১৯৭২ সালের ১৪ মার্চ : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে জাপানি প্রতিনিধিদলের বৈঠক। এতে জাপানি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন তাকাশি হায়াকাওয়া। প্রথম বৈঠকটি সফলতার সাথে সমাপ্ত করে হায়াকাওয়া লিখলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠকে প্রথমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলােচনা হলাে। তিনি তাঁর গৃহীত জোটনিরপেক্ষ ও স্বতন্ত্র নীতির ওপর জোর দেন এবং সেটি টিকিয়ে রাখার জন্য একই এশিয়ার মিত্র দেশ হিসেবে জাপানের সহযােগিতা কামনা করেন।… এই বৈঠকে আমি তাঁকে জাপান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে জাপানি প্রধানমন্ত্রী এইসাকু সাতাের চিঠি হস্তান্তর করি। শেখ মুজিবুর রহমান সেই আমন্ত্রণের জন্য, সেই সঙ্গে জাপান থেকে ১০ লাখ ডলারের সমপরিমাণের সার সরবরাহ এবং ঘােড়াশাল সার কারখানায় পুনরায় কারিগরি সাহায্য প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের কঠিন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ফেরি জাহাজ, কোস্টার, ছােট আকারের পরিবহন জাহাজ, ট্রাক, মাছ ধরার জাহাজ এবং টেলিযােগাযােগের সরঞ্জামসহ জরুরি সাহায্য প্রদানের জন্য জোর আবেদন জানিয়েছিলেন। 

# ১৯৭২ সালের ২৮ মার্চ : জাপান বাংলাদেশে প্রথম অর্থনৈতিক সার্ভে মিশন পাঠায়। মিশনের অন্যতম একটি কর্মসূচি ছিল যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সম্ভাবনা সমীক্ষা প্রণয়ন করা। 

# জাপানের বৌদ্ধ প্রতিনিধিদলের রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে সাক্ষাত। 

# ১৯৭২ সালের ২৪ নভেম্বর : যমুনা নদীতে সেতু নির্মাণে জাপানের সাহায্য। প্রদানের প্রস্তাব। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ভলান্টিয়ার্স পাঠানাের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর। 

# জাপান ওভারসিস কো-অপারেশন ভলান্টিয়ার্স প্রােগ্রাম শুরু। প্রথম ব্যাচে। তিনজন ভলান্টিয়ার্স বাংলাদেশে আসেন। 

# ১৯৭৩ সালের ২৭ জানুয়ারি জাপান বাংলাদেশকে খাদ্য সাহায্য কর্মসূচির আওতায় ১২৫০০ টন চাল সরবরাহের জন্য দুই দেশের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন খাদ্যমন্ত্রী ফণীভূষণ মজুমদার। 

# ১৯৭৩ সালের ২৪ মার্চ বাংলাদেশে কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত। দৈনিক বাংলায় এক খবরে বলা হয় বাংলাদেশের জাপানি রাষ্ট্রদূত মি: তাকাশি ওয়ােমাদা ও বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সচিব এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। 

# ১৯৭৩ সালের ১৩ এপ্রিল তারিখে জাপান বাংলাদেশকে ২২০টি বাস ও ১৫০টি ট্রাক প্রদান করে। ঢাকা ক্লাবে আয়ােজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে

১৩২

জাপানি রাষ্ট্রদূত মি. ওয়ােমাদা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় যােগাযােগমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর হাতে গাড়ির চাবিগুলাে তুলে দেন। অনুষ্ঠানে জাপানের ট্রাক ও বাস নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মিৎসুবিশি মােটরস কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মি. মিয়াবারা যােগাযােগমন্ত্রী। ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলীকে বাসের একটি প্রতিকৃতি উপহার দেন। 

# ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য জাপান সরকার ১ কোটি ৬০ লাখ গজ কাপড় দান করেন। 

# ১৯৭৩ সালের ৩০ এপ্রিল তারিখে ঢাকায় জাপানের মহামান্য সম্রাট হিরােহিতাের ৭২তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়। এশিয়া বুংকা কায়কান দেশকাই’ নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এই অনুষ্ঠানের আয়ােজন করে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের তথ্য ও বেতার মন্ত্রী শেখ আবদুল আজিজ অনুষ্ঠানে বলেন বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে মৈত্রী-সম্পর্ক ও সমঝােতা আরাে বৃদ্ধি। এবং বিশেষ করে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরাে জোরদার হবে বলে উল্লেখ করে বলেন যে, মুক্তিসংগ্রামে বিজয়ী বাংলাদেশের মানুষের জন্যে জাপান সরকার ও জনসাধারণের গভীর সহানুভূতি রয়েছে। 

# ১৯৭৩ সালের ১১ জুন তারিখে জাতিসংঘ ত্রাণ-কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশকে জাপানের দেওয়া ২২০টি বাসের মধ্যে ১১০টি চট্টগ্রাম এসে পৌঁছায়। 

# ১৯৭৩ সালের ২৯ জুন তারিখে জাপানের রাজধানী টোকিওতে উভয় দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী জাপান বাংলাদেশে ৯০ হাজার টন চাল রফতানি করবে বলে জানা যায়। 

# ১৯৭৩ সালের ১৭- ২৩ অক্টোবর তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সফর করেন। 

# ১৯৭৩ সালের ১৭ অক্টোবর তারিখে সপ্তাহব্যাপী জাপান সফরে টোকিওয়ের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকা ত্যাগ। বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, তাঁর এই সফরের ফলে জাপান বাংলাদেশের মৈত্রী আরাে দৃঢ়তর হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গীদের তালিকায় শেখ রেহানা, শেখ রাসেল ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন, মিসেস হােসেন, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. নূরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব জনাব তােফায়েল আহমেদ, প্রধান সচিব জনাব রুহুল কুদুস প্রমুখ ছিলেন। 

# ১৯৭৩ সালের ১৮ অক্টোবর তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাতদিনের সফরে টোকিও বিমানবন্দরে এসে ভােরে পৌঁছেন। বিমানবন্দরে তাঁকে

১৩৩

প্রাণঢালা সংবর্ধনা দেয়া হয়। বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু তার সম্মানে প্রদত্ত গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেন। এসময় একুশবার (২১) তােপধ্বনি করা হয় এবং দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানাে হয়। দৈনিক ইত্তেফাকের শিরােনাম, ‘টোকিও বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুর বিপুল সম্বর্ধনা। ক্ষুধা দারিদ্র্য ও ব্যাধির বিরুদ্ধে সমম্বিত প্রচেষ্টাই স্থায়ী শান্তির কাঠামাে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টোকিও বিমানবন্দরে সংবর্ধনা সভায় বলেন, ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং ব্যাধির বিরুদ্ধে জয়ী হইতে হইলে বিশ্বের ধনী-দরিদ্র সকল রাষ্ট্রের সমম্বিত প্রচেষ্টা চালাইতে হইবে এবং একমাত্র এই পন্থায়ই একটা সুসামঞ্জস্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং শান্তির স্থায়ী কাঠামাে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হইবে। 

: বাংলাদেশ জাপান সমিতি কর্তৃক রাত্রিকালীন ভােজসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যােগদান। বঙ্গবন্ধুর সম্মানে প্রদত্ত ভােজসভায় তিনি বলেন, ‘জাপান এবং বাংলাদেশ উভয়ই এশীয় দেশ হিসেবে এশিয়ায় শান্তি, প্রগতি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে একই মনােভাব পােষণ করে।… বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে জাপান তার অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রভূত উপকার করবে বলে বাংলাদেশ আশা করে।

# ১৯৭৩ সালের ১৮ অক্টোবর তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টোকিও যাওয়ার পথে গতরাতে মালয়েশিয়ায় যাত্রাবিরতি করেন। যাত্রাবিরতিকালে বঙ্গবন্ধুকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান মালয়েশিয়ার মৎস্য ও কৃষিমন্ত্রী গাজালী জাবীর এসময় কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত এবং সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির সাথে বন্ধুত্ব করিতে এবং উহাদের সহিত নিবিড় সম্পর্ক গড়িয়া তুলিতে ইচ্ছুক। 

# বিমানবন্দরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দক্ষিণ পূর্ব এশীয় জাতি সমিতিতে ( এশিয়ান) বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তার কোন পরিকল্পনা আছে কি না প্রশ্ন করা হলে বঙ্গবন্ধু বলেন, বিশেষ অবস্থা ও পরিবেশের উপর ইহা নির্ভরশীল। সকল আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বা বিশ্বসংস্থায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সমর্থন জ্ঞাপনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মালয়েশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। 

# ১৯৭৩ সালের ১৯ অক্টোবর তারিখে জাপানের প্রধানমন্ত্রী কাকুই তানাকার সরকারী বাসভবনে (Located at 2-3-1_Nagata-cho, Chiyoda-ku, Tokyo 100-8968, it is diagonally adjacent to the National Diet Building. It is commonly referred to as Sõri Daijin Kantei, Shusho Kantei, or simply Kantei 

১৩৪

দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে এক ঘণ্টাব্যাপী আলােচনা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠকে আন্তর্জাতিক বিষয় এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের বিষয়ে জাপানি সাহায্য সহযােগিতার ব্যাপারে আলাপ আলােচনা প্রাধান্য লাভ করে। আন্তর্জাতিক বিষয়ের মধ্যে ছিল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়নে জাপানি সহযােগিতা বৃদ্ধি করার জন্য জাপান সরকারকে আহ্বান জানান। বাংলাদেশকে প্রদত্ত জাপানি সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। যমুনা নদীর ওপর প্রস্তাবিত সেতু নির্মাণের বিষয়েও আলােচিত হয়। দৈনিক ইত্তেফাকের শিরােনাম ছিল : বঙ্গবন্ধু-তানাকা আলােচনায় পূর্ণ সমঝােতা; সহজ শর্তে বাংলাদেশের ২৪ কোটি টাকার ঋণ লাভ। পত্রিকার বিস্তারিত সংবাদে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রায় ২৪ কোটি টাকার (৯০০ কোটি ইয়েন) সহজতম জাপানি পণ্য ঋণ লাভ করিবে। প্রধানমন্ত্রী কাকুই তানাকা আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এই ঋণ দানের প্রতিশ্রুতি দেন।… এই ঋণের জন্য বার্ষিক মাত্র ১ দশমিক ৮৭৫ হারে সুদ দিতে হইবে এবং ১০ বৎসরের রেয়াতী মেয়াদসহ ৩০ বৎসরের মধ্যে এই ঋণ পরিশােধযােগ্য। 

# বঙ্গবন্ধু জাপানের রাজপ্রাসাদে (The Tokyo Imperial Palace, literally ‘Imperial Residence’) is the primary residence of the Emperor of Japan) ভ্রাট হিরােহিতাে এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। সম্রাটের সাথে সাক্ষাৎকারের সময় বঙ্গবন্ধুর সাথে তার সফরসঙ্গীরাও উপস্থিত ছিলেন। 

# বঙ্গবন্ধু জাপানের বৃহত্তম বিদ্যুৎ সরঞ্জাম শিল্প পরিদর্শন করেন এবং জাপানের শিল্প উন্নয়নে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী সময় ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্যুৎ সরঞ্জাম শিল্পের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন। আজ রাতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সৌজন্যে আয়ােজিত জাপানের বাণিজ্য সংস্থাসমূহের ফেডারেশন, জাপানের বৈদেশিক বাণিজ্য কাউন্সিল এবং জাপান শিল্প ও বণিক সমিতির প্রদত্ত এক ভােজসভায় তিনি অংশগ্রহণ করেন। এই ভােজসভাতেই তিনি এক চমৎকার বক্তৃতা দেন। যেখানে তিনি ক্ষুধা, দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা, রােগ, অশিক্ষা ও বেকারত্বেও বিরুদ্ধে সংগ্রামরত উন্নয়নগামী দেশ সমূহের সাথে অর্থনৈতিক সহযােগিতা সম্প্রসারণ করার জন্য জাপানের প্রতি আহ্বান জানান। 

# ১৯৭৩ সালের ২০ অক্টোবর তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যমুনা নদীর ওপর প্রস্তাবিত সেতু নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির একটি গবেষণা

১৩৫

ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের সাথে আলাপ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ জাপানি বিশেষজ্ঞদের মূল্যবান অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে আগ্রহী। 

# বঙ্গবন্ধু সিবা শিল্প কমপ্লেক্স এলাকায় সােমিটোমাে কেমিক্যাল কোম্পানির একটি পেট্রোকেমিক্যাল কারখানা পরিদর্শন করেন। 

# আজ সন্ধ্যায় জাপানের দুইটি শিল্প শহর কিয়াটো ও ওসাকা পরিদর্শনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুই দিনের জন্য টোকিও ত্যাগ করেন। 

# ১৯৭৩ সালের ২১ অক্টোবর তারিখে টোকিওর প্রভাবশালী দৈনিক শিমবুনসহ আরাে তিনটি পত্রিকার প্রতিনিধির সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। অত্যন্ত মনােরম এবং দ্রুতগামী ফেরিবােট সানফ্লাওয়ার যােগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সফরসঙ্গীরা নাচিকাতসুরায় পৌছেন। হাজার হাজার উদ্বেলিত জনতা ‘জয় বাংলা’ ‘জাপান বাংলাদেশ মৈত্রী দীর্ঘস্থায়ী হউক’ শীর্ষ ধ্বনির মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতির পিতাকে বরণ করেন। 

#  সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কাতসুরার গভর্নর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মানপত্র প্রদান করেন। 

# ১৯৭৩ সালের ২২ অক্টোবর তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়াকায়ামা প্রদেশ, ওসাকা ও কিয়াটোতাে দুই দিনের ঝটিকা সফরশেষে টোকিওতে প্রত্যাবর্তন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশান্ত মহাসাগর দিয়ে ওয়াকায়ামা যান এবং তীর্থভূমি নাচি পর্বতের ধর্মীয় স্থানগুলি পরিদর্শন করেন। ওসাকার শিল্পনগরীর অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে জাপানের প্রাচীন শহর কিয়ােটোতে রাত যাপন করেন। ২২ অক্টোবর পুনরায় টোকিওতে প্রত্যাবর্তন করেন। 

# অপরাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব আবদুল মােত্তাকিম চৌধুরী কর্তৃক টোকিওতে প্রদত্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও ভােজসভায় যােগদান করেন। 

# ১৯৭৩ সালের ২২ অক্টোবর তারিখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টোকিওতে টিভি সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনে জাপানের নিকট হতে অর্থনৈতিক সহযােগিতা আশা করেন।

১৩৬

# ১৯৭৩ সালের ২২ অক্টোবর তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাসায়ােশি ওহিরার সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। তারা জাপানের প্রধানমন্ত্রী কাকুই তানাকার সাথে আলােচনার সূত্র ধরে কথাবার্তা বলেন। আন্তর্জাতিক বিষয় ছাড়াও তারা মূলত বাংলাদেশ-জাপান দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযােগিতা সম্পর্কে আলােচনা করেন। 

# ১৯৭৩ সালের ২৩ অক্টোবর তারিখে জাপানে সফররত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী তানাকার নৈশভােজ অনুষ্ঠান। নৈশভােজে দেয়া বক্তব্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী কাকুই তানাকা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সাহায্য দানের আশ্বাস দেন। তিনি আরাে দৃঢ় অভিমত প্রকাশ করে বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যােগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাবে। জাপান কীভাবে অতীতে মানবিক সাহায্যের আকারে বাংলাদেশের খাদ্য ও বস্ত্রের অভাব পূরণে এগিয়ে এসেছিল জাপানি প্রধানমন্ত্রী সে কথা স্মরণ করেন। গত বৎসর ফেব্রুয়ারী মাসে বাংলাদেশের সাথে জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথা স্মরণ করে মি. তানাকা ভােজ সভায় আরাে বলেন জাপানের জনগণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। 

# ১৯৭৩ সালের ২৩ অক্টোবর তারিখ সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে জাপান বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি এক অনুষ্ঠানের আয়ােজন করে। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. নুরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তােফায়েল আহমদ, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ রাসেল এবং আরাে অতিথিবর্গ। 

# ১৯৭৩ সালের ১৮ অক্টোবর তারিখে বঙ্গবন্ধু টোকিও বিমানবন্দরে পৌঁছেন। বিমানবন্দরে উষ্ণ সংবর্ধনা দেয়া হয়। জাপান সফরের সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে জাপানের পরম বন্ধু হিসেবে অভিহিত করা হয়। 

# যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন জাপানের প্রধানমন্ত্রী কোকেই তানাকা বাংলাদেশের জন্য জাপানি মুদ্রায় ৯ হাজার মিলিয়ন ইয়েন বরাদ্দ দেন। 

# ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের সময় যমুনা সেতু নির্মাণের চুক্তি হয়েছিল। শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল বঙ্গবন্ধুর সাথে এই সফরে উপস্থিত ছিলেন।

১৩৭

# বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সিংহ হৃদয়ের পরিচয় পেয়েছিল জাপানিরা। জাপানি লেখক অধ্যাপক ও দেশটির রেডক্রসের সাবেক পরিচালক ফুকিউরা তাদামাসার স্মৃতিতে এখনাে চির অমলিন বঙ্গবন্ধু। তাঁর চোখে বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন সিংহ পুরুষ’। 

# বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাপানি লেখক ফুকিউরা তাদামাসা বই লিখেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জাপান রেডক্রসের প্রধান হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের নারকীয়তা তুলে ধরেছেন তাঁর বইতে। বইটির নাম ‘চিতাে দোরাে তাে বানগুরাদেশু দোকুরিসু নাে হিগেকি (রক্ত, কাদা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ট্রাজেডি)। 

# ফুকিউরা তাদামাসা শ্রমমন্ত্রী তাকাশি হায়াকাওয়ার সহযােগী হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে জাপান সফরের আমন্ত্রণ জানাতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। 

# তাঁদের সাথে আরাে ছিলেন জাপানের বিখ্যাত সাংবাদিক শিক্ষক ও রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার তানাকা মাসাকি ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সহযােদ্ধা রাজকীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফুজিওয়ারা ইওয়াইচি। 

# ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর তারিখে তিন সদস্য বিশিষ্ট জাপানি পার্লামেন্টারি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে ৬ দিনব্যাপী সফরের উদ্দেশ্যে ঢাকা আসেন। প্রতিনিধিদলের নেতা ও জাপানের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান মি. ফুজিই বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের নিকট বলেন যে, উক্ত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন। অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাপানি সহযােগিতার সম্ভাবনা সম্পর্কে জরিপ করবেন।

# ১৯৭৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর : প্রধানমনন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের বর্ষপূর্তি উৎসবে যােগ দিতে হায়াকাওয়ার বাংলাদেশ অভিমুখে যাত্রা। সফরসঙ্গী তাঁর স্ত্রী কিয়ােশি মােরি এবং মি. তেতসুরাে উদা।

# ১৯৭৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর : হায়াকাওয়াকে বিমানবন্দওে অভ্যর্থনা। উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তােফায়েল আহমেদ, চিফ হুইপ শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন, ঢাকায় জাপানি রাষ্ট্রদূত তাকাশি ওইয়ামাদা প্রমুখ। 

# ১৯৭৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর : প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অপ্রত্যাশিতভাবে পদ্মা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আগমন। হায়াকাওয়ার সাথে সাক্ষাৎ। মধ্যাহ্নভােজে অংশগ্রহণ।

১৩৮

# ১৯৭৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় হায়াকাওয়ার সাথে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযােগিতা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হােসেনের সাথে বৈঠক। 

# ১৯৭৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর : রাত সাড়ে আটটা থেকে যােগাযােগমন্ত্রীর উদ্যোগে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হােটেলে হায়াকাওয়ার সম্মানে এক নৈশ ভােজসভা। উপস্থিত ছিলেন : কৃষিমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হােসেন, বিচারমন্ত্রী ও জাপানে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত মনােরঞ্জন ধর। হায়াকাওয়া বাংলাদেশ পুনর্গঠনে এক বক্তৃতা করেন। 

# ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর : হায়াকাওয়ার সিরাজগঞ্জে গমন। হায়াকাওয়ার তত্ত্বাবধানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবদুর রউফ এমপি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স-এর ডিজি শামসুল আলমকে নিযুক্ত করেছিলেন। সকাল ৮টায় আবদুর রউফ এমপি এবং শামসুল আলমের সাথে রাশিয়ান হেলিকপ্টার যােগে সিরাজগঞ্জে যাত্রা করেন। সিরাজগঞ্জে গিয়ে যখন পৌছেন দেখেন দশ হাজার লােক জড়াে হয়েছে। সিরাজগঞ্জ কলেজ ক্যাম্পাসে একটি গাছ রােপণ করেন। এ ছাড়াও জুট মিল পরিদর্শন করেন। এ ছাড়াও তিনি ভােলা এবং কাপ্তাই ভ্রমণ করেন। 

# সন্ধ্যা ৬-০০ মি. বাংলাদেশ-জাপান সমিতির উদ্যোগে আয়ােজিত অভ্যর্থনায় | যােগদান করেন। 

# সন্ধ্যা ৭:৩০ মি. হতে প্রেসিডেন্ট আবু সাঈদ চৌধুরীর আয়ােজিত নৈশভােজ সভা। এতে অর্থ, পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীরা সস্ত্রীক উপস্থিত হলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হােসেন ভাষণ দেন। হায়াকাওয়া অতীত স্মৃতিচারনা করে বক্তব্য দেন। 

# ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর : সকাল আটটায় বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে গমন। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও নানাবিধ অনুষ্ঠানে যােগদান করেন। 

# রাত ৮:০০ মি. সােহরাওয়ার্দী উদ্যান ( রেসকোর্স ময়দান) বিজয় দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। 

# ১৯৭৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর: সকাল ৮:০০ মি. জাতীয় পরিকল্পনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মি. নূরুল ইসলামের সাথে বৈঠক। এরপর স্পিকার মােহাম্মদউল্লাহের সাথে এবং সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন। 

# ১৯৭৪ সালের ২৪ জানুয়ারি জাপানি প্রতিনিধি মি. মিচিতা সাকাতা বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব কামরুজ্জামানের সাথে তার বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন।

১৩৯

# ১৯৭৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সহযােগিতার ক্ষেত্র অনুসন্ধান করার জন্য ৪১ সদস্য বিশিষ্ট একটি জাপানি প্রতিনিধিদল ঢাকা আগমন করেন। নেতৃত্ব দেন জাপানের শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মি. এস. নাগানাে। 

# ১৯৭৪ সালের ২৭ জানুয়ারি সফররত জাপানি প্রতিনিধিদল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধিদলের নেতা মি. এস. নাগানাে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে জাপানি প্রধানমন্ত্রী মি. কাকুই তানাকার একটি বাণী হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রতিনিধিদল আধ ঘণ্টার বৈঠকে উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংক্রান্ত বিষয়ক আলােচনা করেন। 

# ১৯৭৪ সালের ৩১ জানুয়ারি জাপান বাংলাদেশ যৌথ অর্থনৈতিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব। বাংলাদেশ সফর শেষে জাপানি প্রতিনিধিদলের নেতা মি. এম. নাগানাে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করেন। 

# ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি: ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা জাহাজ বাংলাদেশ পৌঁছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফরের সময় জাপান-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি এই জাহাজ উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। 

# ১৯৭৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাপানের প্রিন্স আকিহিতাে ও প্রিন্সেস মিচিকো দুই দিনের শুভেচ্ছা সফরে ঢাকায় আগমন করেন। 

# ১৯৭৫ সালের ২৬ আগস্ট তারিখে তাকাশি হায়াকাওয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষোভ প্রকাশ করে জাপানের সংসদে বলেন, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর। রহমান ( বাঙালিরা যাকে বঙ্গবন্ধু নামে সম্বােধন করে) তিনি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ও আমার প্রিয় বন্ধু, যার জন্য আমি সব সময় আন্তরিক শ্রদ্ধা পােষণ করি।’ 

# বঙ্গবন্ধুর হত্যাকে জাপানের জন্য চরম আঘাত ও অবর্ণনীয় শােকের ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেন তাকাশি হায়াকাওয়া। 

# তাকাশি হায়াকাওয়া তার বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতির হত্যাকাণ্ডকে সেনাবাহিনীর হাতে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইনুকার নিহত হওয়ার তুলনা করেন। 

#তাকাশি হায়াকাওয়া বঙ্গবন্ধুকে তিনি জাপানের মেইজি যুগের অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক হিরােফুমি আইতাের সাথে তুলনা করেন। 

# মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুর ভূমিকায় থাকা তাকাশি হায়াকাওয়াকে বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালের ২৭ মার্চ সম্মাননা (মরনােত্তর) দেয়।

১৪০

Source: বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ জাপান সম্পর্ক – ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম