শিরোনামঃ সম্পাদকীয়
সংবাদপত্রঃ জয়বাংলা (৭ম সংখ্যা)
তারিখঃ ৫ এপ্রিল, ১৯৭১
ইনশাআল্লাহ জয় আমাদের হইবেই। উহাতে কোনই সন্দেহ নাই।
মুক্তিযোদ্ধাদের সহিত সর্বপ্রকার সহযোগিতা করিবেন। তাহাদিগকে আশার বাণী শুনাইবেন, সাহস দিবেন। মনে রাখিবেন তাহারাও মানুষ। আপনাদের আশার বাণী তাহাদের মনে নব-বলের সঞ্চার করিবে।নব উদ্যমে তাহারা শত্রুর উপর ঝাঁপাইয়া পড়িবে এবং কামিয়াব হইবে।
রাজশাহী বহুসংখ্যক শত্রুকে ধ্বংস করার সময় আমাদের কয়েকজন সৈনিক জখম হইয়াছেন। তাহারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রহিয়াছেন। “জয় বাংলা”র পক্ষ হইতে তাহাদের জন্য ৬টি গ্লুকোজ ও এক ডজন বিস্কুট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হইয়াছে।
মুক্ত এলাকার আভ্যন্তরীণ শান্তি রক্ষার দায়িত্ব আঞ্চলিক সংগ্রাম পরিষদ, আনসার, মুজাহিদ ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর উপরে।তাহারা নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ পালন করিবেন। কেহ কোন অপকর্মকে প্রশ্রয় দিবেনই না বরং কঠোর হস্তে দমন করিবেন। মনে রাখিবেন, যে যাহা করিবেন তাহার ফল পাইবেন। অন্যায় অত্যাচার চোখের সামনে ও জানামতে সংঘটিত হইতে দেখিয়াও যদি কেহ উহাকে কঠোর হস্তে দমন না করেন তবে তাহাদিগকে আল্লাহ যথোপযুক্ত শাস্তি দিবেন। অন্যায় অন্যায়ই। আল্লাহ্র বিচার এতো সূক্ষ্ম, কেহই তাঁহার বিচারের আওতার বাহিরে নহে। দুই একদিন আগে পরে প্রতিটি অত্যাচারীকেই কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করিতে হইবে। কবিগুরু বলিয়াছেন : “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে” – অর্থাৎ অন্যায় করাও পাপ, অন্যায় চোখের সামনে সংঘটিত হইতে দেখিয়া বাধা না দেওয়াও পাপ। কেহ কোন প্রকার পাপ কর্ম নিজেরাও করিবেন না বা অন্যকেও করিতে দিবেন না।
‘ক’ আপনার ভাইকে মারিয়াছে- উহার প্রতিশোধ নিবার জন্য আপনি নিরস্ত্র নিরপরাধ ‘খ’ কে মারিবেন- তাহা হইতে পারে না। ‘ক’ অত্যাচারী, উহাকে সমুচিত শাস্তি দিতেই হবে। যদি আপনি ‘ক’ এর নাগাল না পাইয়া নিরপরাধ ‘খ’ কে মারেন তবে আপনিও ‘ক’ এর সমান অত্যাচারী হইলেন। ‘খ’ এর উপরে আপনার সন্দেহ থাকে অথবা উহার পক্ষ হইতে বিপদের আশঙ্কা থাকে তবে ‘খ’-কে নিরস্ত্র করিয়া বন্দি করিতে পারেন-কিন্তু কোন অবস্থাতেই হত্যা করিতে পারিবেন না।
“জয় বাংলা”র কণ্ঠ স্তব্ধ না হওয়া পর্যন্ত সত্য কথাই বলিবে।”জয় বাংলা” বিশ্বাস করে “সত্যম শিবম সুন্দরম” অর্থাৎ যাহা সত্য তাহাই মঙ্গলময় এবং সুন্দর। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা “জয় বাংলা”র কণ্ঠকে স্থব্ধ হইতে দিবেন না। আপনাদের সকলের দোয়া চাই।
কোথায় কি চক্রান্ত হইতেছে না হইতেছে, কে কোথায় কি দুষ্কর্ম করার চেষ্টা চালাইতেছে আল্লাহ্র মেহেরবানীতে “জয় বাংলা”র কানে তাহা যথাসময়ে পৌঁছে। শয়তানদিগকে সাবধান করিয়া দেওয়া হইল। “জয় বাংলা”কে কেহ দুর্বল মনে করিবেন না।
আল্লাহ্র মেহেরবানীতে ত আছেই তদুপরি সংশ্লিষ্ট সকল মহলেরই সমর্থন এবং সহযোগিতা “জয় বাংলা” পাইতেছে।কাজেই হুঁশিয়ার। জানা গিয়াছে সান্তাহারে বেশ কিছুসংখ্যক নিরস্ত্র নিরপরাধ নারী, শিশু এবং পুরুষ কতিপয় হিংস্র দানব এবং লুটেরাদের ভয়ে সর্বক্ষণ আল্লাহ্কে ডাকিতেছে এবং সকলের সাহায্য ভিক্ষা করিতেছে। সংশ্লিষ্ট সকল মহলের প্রতি আবেদন অবিলম্বে তাহাদের সকলের নিরাপত্তার উপযুক্ত ব্যবস্থা করিবেন। প্রয়োজনবোধে তাহাদিগকে অতিসত্বর নিরাপদ জায়গায় অপসারণ করুন। বঙ্গবন্ধু একাধিকবার বলিয়াছেন “বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসকারী প্রতিটি নাগরিকই বাঙালী- সে যে ভাষায়ই কথা বলুক না কেন-।” বঙ্গবন্ধুকে যদি আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করেন এবং তাহার নির্দেশ মানেন তবে আর কাল বিলম্ব না করিয়া উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
দেশে এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান বলিয়া জনস্বার্থের খাতিরে “জয় বাংলা” সব-আরোপিত সেন্সর নীতি ( self censorship ) অবলম্বন করিয়াছে। কেহ ইহাকে অন্য অর্থে নিবেন না। “জয় বাংলা” প্রথমত :আল্লাহ্ এবং দ্বিতীয়ত জনস্বার্থ ও দেশের মঙ্গল ছাড়া আর কিছুরই তোয়াক্কা করে না।
“জয় বাংলা” পশ্চিমা বর্বরদের বিরুদ্ধে আরও ব্যাপকভাবে বিশ্বজনমত গড়িয়া তুলবার কথা চিন্তা করিতেছে।…
………………………………..