বঙ্গবন্ধুর জাপান সফর
১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে জাপান সরকারের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক উপদেষ্টা তােফায়েল আহমেদ, বঙ্গবন্ধুর ছােট কন্যা শেখ রেহানা এবং ছােট পুত্র শেখ রাসেল প্রমুখ। গার্ড অফ অনার এবং লালগালিচা বিছিয়ে এক অভাবনীয় সংবর্ধনা প্রদান করা হয় টোকিওতে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বঙ্গবন্ধুর এই সরকারি সফরের সময় তিনি ও তার সফরসঙ্গীগণ টোকিও এবং কিওতাে সফর করেন। জাপানের আবালবৃদ্ধবনিতা তাদের। ব্যস্ততার মধ্যেও রাস্তার দু’ পাশে দাঁড়িয়ে একপলক দেখার জন্য ভিড় করেছিল। হাত নেড়ে অভিবাদন জানিয়েছিল।
২৩ অক্টোবর, সন্ধ্যায় টোকিওতে বঙ্গবন্ধুর সম্মানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী কাকুই তানাকা ও তার স্ত্রী প্রদত্ত ব্যানকুয়েট ভাষণে বঙ্গবন্ধু দুই দেশের সম্পর্কের পটভূমি তুলে ধরেন। সেই সংবর্ধনা সভায় তৎকালীন জাতীয়তাবাদী নেতা প্রধানমন্ত্রী কাকুয়েই তানাকা তার উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেছিলেন যে রবীন্দ্রনাথ ও তেনশিন ওকাকুরার বন্ধুত্বের মাধ্যমেই জাপানি-বাঙালির বন্ধুত্বের সূচনা হয়েছিল। সুতরাং বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই বিরল জাপানি-বাঙালি মৈত্রীর ধারাবাহিক সম্পর্কের উত্তরসূরি।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শীর্ষ পর্যায়ের প্রথম সফরের সময় বাংলাদেশ-জাপান। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে যে সুযােগ সৃষ্টি হয়, হায়াকাওয়া ছিলেন তার অন্যতম রূপকার। বঙ্গবন্ধুই এশিয়ার জাপান ও বাংলাদেশ এই দুই দেশের মধ্যে মৈত্রী প্রতিষ্ঠার প্রথম রূপকার। বাংলাদেশ থেকে জাপানে বঙ্গবন্ধুর শীর্ষ সফরের সময় জাপান-বাংলাদেশ আর্থিক সহযােগিতার দিগন্ত উন্মােচিত হয়। যমুনা সার কারখানা, কর্ণফুলী সার কারখানা, যমুনা সেতুসহ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্প জাপানি অর্থায়নে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গৃহীত হয়।
১৫৯
জাপান সফরের সময় শেখ মুজিবুর রহমান স্বভাবগতভাবেই ইচ্ছা প্রকাশ করে কয়েকবার বলেন, তিনি জাপানের মডেলে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবেন। তাকে স্বাগত জানিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মি. তানাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে মন্তব্য করেন, তিনি যেন আমাদের হিরােভুমি ইতাে (হিরােভুমি ইতাে জাপানের গৌরবােজ্জ্বল মেইজি যুগের প্রধান জাতীয় নেতা ছিলেন)। এ পরিপ্রেক্ষিতে জাপান চ্যাম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মি. শিগেও নাগানাে তৎক্ষণাৎ বলেন, না, তিনি বরং একাধারে হিরােভুমি ইতাে এবং তাকামােরি সাইগাে (তাকামমারি সাইগাে ছিলেন মেইজি জাপানের আরেক অবিসংবাদিত স্থপতি)। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান আজকের পৃথিবীর প্রধান তিনজন রাজনৈতিক নেতার একজন। বঙ্গবন্ধুর এই রাষ্ট্রীয় সফরের মাধ্যমে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রগাঢ় ভালােবাসা ও বন্ধনের সূত্রপাত হয়।
Reference: জাপনিদের চোখে বাঙালি বীর – ড. নূরুন নবী