রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনা ও ১১ মার্চ ১৯৪৮
কিছু ভিন্নমত সত্ত্বেও মােটামুটিভাবে এটি স্বীকৃত যে, খ্রিস্টিয় ১০ম থেকে ১২শাে শতকের মধ্যে ভারতবর্ষের প্রধান ভাষাগুলির উদ্ভব। ভাষা সৃষ্টি হলেও প্রথমেই বর্ণমালা সৃষ্টি হয়নি। তবে সে সময়ে ভারতের হিন্দু-আর্যভাষা (ইন্দোএরিয়ান) প্রাচীন ও মধ্যস্তর অতিক্রম করে মােটামুটি আধুনিক স্তরে এসে পৌঁছায়।
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু বাংলাকে ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লড়াই দীর্ঘদিনের। এই লড়াইয়ে রাজন্যবর্গ, কবি, লেখক, শিক্ষিতশ্রেণি বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলা ভাষা বিকাশ এবং প্রচলনে আলাউদ্দিন হােসেন শাহ্-এর। বঙ্গদেশে আগমন এবং সিংহাসন দখলের বিবরণী প্রকাশিত হয়। সেনাপতি সৈয়দ হােসেন আলাউদ্দিন হােসেন শাহ্’ নাম ধারণ করে হিজরি ৮৯৯ এবং খ্রিস্টাব্দ ১৪৩৯ সালে গৌড়ের সিংহাসনে আরােহণ করেন। তাঁর ২৬ বছরের শাসনামলে রাজ আনুকূল্য পেয়ে বাংলা ভাষার শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। এ সময় বাংলা ভাষায় বহু গ্রন্থ প্রণীত হয়। সে সময়ে ফতেয়াবাদ মুলুকের জমিদার ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী অর্জুন। ফতেয়াবাদ মুল্লকের অন্তর্গত ফুল্লশ্রী গ্রামের বিজয়গুপ্ত মনসামঙ্গল রচনা করেছিলেন। সুলতান হােসেন শাহ্-এর সেনাপতি পরাগল খার নির্দেশে কবীন্দ্র পরমেশ্বর মহাভারতের আদিপর্ব হইতে স্ত্রীপর্ব পর্যন্ত বাংলা ভাষা অনুবাদ করেন। এ সময় মালাধর বসু ভগবতের দশম ও একাদশ স্কন্ধ বাংলায় অনুবাদ শুরু করেছিলেন। আলাউদ্দিন হােসেন শাহ্-এর পরবর্তী তাঁর বংশের অন্যান্য সুলতানরাও বাংলা ভাষার বিশেষ পৃষ্ঠপােষকতা প্রদান করতে শুরু করে। পরবর্তীকালে আরাকান রাজসভার আনুকূল্য পেয়ে বাংলা ভাষার বেশ কয়েকজন বিখ্যাত কবি তাদের কাব্যগুণে ভাষার বিকাশ ও বিস্তৃতিতে যেমনিভাবে অবদান রেখেছেন-একইভাবে বাঙালি মুসলমান সমাজেও নাড়া দিয়েছিলেন। ভিনদেশী ভাষায় বলতে-লিখতে এবং কাজ-কর্ম চালাতে অভ্যস্ত। শিক্ষিত মুসলমান শ্রেণি কিছুটা হলেও মাতৃভাষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে।
Reference – কালের ধ্বনি – গোলাম কুদ্দুস