শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বৃহৎ শক্তির কাছে নতি স্বীকার করব নাঃ ইয়াহিয়া | দৈনিক পাকিস্তান | ৩ আগস্ট, ১৯৭১ |
বৃহৎ শক্তির কাছে নতি স্বীকার করব নাঃ ইয়াহিয়া
শর্তযুক্ত সাহায্য প্রত্যাখ্যান করব
রাওয়ালপিন্ডি, ২রা আগষ্ট (এপিপি)।- প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেছেন, কোন দেশ সাহায্যের সঙ্গে শর্ত জুরে দিলে তিনি ঐ সাহায্য সাহায্যদাতার মুখের উপর ছুড়ে ফেলবেন।
কায়হান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি আমীর তাহেরীর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সাহায্য সমস্যা সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট উক্ত স্পষ্ট উক্তি করেন। জনাব আমীর তাহেরী কিছুদিন আগে পাকিস্তান সফর করেন।
পাকিস্তান সফর সম্পর্কে জনাব আমীর তাহেরী তাঁর পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে লিখছেন। প্রথম লেখাটি গত ২৭শে জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের ‘চাপ’ সম্পর্কে প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি সৈনিক। কোন চাপের কাছে তিনি নতি স্বীকার করবেন না। কোন না কোন বৃহৎ শক্তি আমাকে চাপ দিচ্ছে, এটা অসঙ্গতঃ। যারা এসব কথা বলে তারা আমাকে চিনতে পারেনি। যার গদির প্রতি লোভ আছে সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে পারে। গদির লোভ আমার নেই।
প্রেসিডেন্ট বলেন, সোভিয়েট ও মার্কিন সরকার গোড়া থেকেই পাকিস্তানের ব্যাপারে সঠিক নীতি অনুসরণ করছে। কিন্তু বৃটেনের ক্ষেত্রে এ কথা বলা চলে না। বৃটিশ সরকার প্রকাশ্যে আমাদের ব্যাপারে বৈরী ভূমিকা অনুসরণ করছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তারা নাক গলানোর চেষ্টা করছে। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় এই মনোভাব প্রকাশ করেছেন। কমনওয়েলথ সদস্য হিসেবে আমরা আশা করছিলাম, তারা অন্ততঃ পক্ষে নিরপেক্ষ থাকবে এবং এতটা খোলাখুলিভাবে ভারতকে সমর্থন করবে না।
ভারতের সমালোচনা করে প্রেসিডেন্ট বলেন, উদ্বাস্তু সমস্যার মত মানবিক সমস্যাকে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে।
ভারত উদ্বাস্তুদের পাকিস্তান প্রত্যাবর্তনে বাধা দিচ্ছে। তারা খোলাখুলি বলছে, উদ্বাস্তুদের তারা ‘ইয়াহিয়ার পাকিস্তানে’ যেতে দেবেন না, যেতে দেবেন ‘মুজিবের বাংলাদেশে’।
তিনি বলেন, ভারত তার ভূখণ্ডে ট্রেনিং শিবির খুলেছে। সেখানে ৩৫ হাজার বিদ্রোহীকে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে এবং উদ্বাস্তুদের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চাপ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভারত-পাকিস্তানের বৈঠকের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে প্রেসিডেন্ট বলেন, ভারতীয় নেতাদের সংগে যে কোন স্থানে যে কোন সময় আলোচনা করতে আমি প্রস্তুত। তবে উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনের প্রশ্নে আমরা আলোচনা করব এবং তা মানবিক প্রশ্ন হিসাবে নয়, রাজনৈতিক প্রশ্ন হিসাবে।
কিন্তু আলাপ-আলোচনার জন্য আমাদের সকল প্রস্তাব তারা নাকচ করেছে এবং এ ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘ প্রচেষ্টাকে তারা নস্যাৎ করে দিয়েছে। তারা পাকিস্তানকে খণ্ড-বিখণ্ড করতে চায়। তারা মনে করেছে আমাদের সাথে আলোচনা করার কোন প্রয়োজন নেই।
ক্ষমতা হস্তান্তর
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ৭৫ মিনিট ব্যাপী সাক্ষাৎকারে ক্ষমতা হস্তান্তর, আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে উপনির্বাচন এবং পাকিস্তানে বেসামরিক সরকার গঠনের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়।
প্রেসিডেন্ট বলেন, বেসামরিক সরকার গঠনের সিদ্ধান্তে তিনি অটল রয়েছেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্র প্রধান থাকার কোন ইচ্ছাই আমার নেই। তিনি সেনাবাহিনীতে ফিরে যেতে আগ্রহী। সমগ্র দেশের প্রতিনিধিত্বকারী পূর্ণরুপে জাতীয় পরিষদ অনুরোধ করলেই শুধুমাত্র তিনি প্রেসিডেন্টের কার্যভার চালিয়ে যাবেন।
আমার ম্যাণ্ডেট স্পষ্ট। তা হচ্ছে দেশকে একত্রিত রাখা আর বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা।তাঁবেদার বেসামরিক সরকার গঠনের জন্য তাঁকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে যে, গুজব ছড়িয়েছে তার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি ভুল। সৈনিক হিসাবে তিনি গুজবকে অপরাধ মনে করেন। আমি এইরুপ কৌশল অবলম্বন করি না।
পিপলস পার্টিকে নিয়ে সরকার গঠনের সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জনাব ভুট্টোর দেশের এক অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। কিন্তু দেশের উভয় অঞ্চলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বেসামরিক সরকার গঠন হওয়া উচিত। যাই হোক, কয়েক মাসের মধ্যেই বেসামরিক সরকার যখন গঠিত হচ্ছে, তখন রাজনৈতিক দলগুলো আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারে। আমি সমগ্র জাতির প্রতিনিধিত্বকারী পূর্ণাঙ্গ জাতীয় পরিষদ চাই। এইরুপ একটি পরিষদ গঠিত বেসামরিক সরকার গ্রহণ করতে আমি প্রস্তুত আছি। কিন্তু তার পূর্বে কোন ব্যক্তি বা দলের কাছে আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করব না।
উপনির্বাচন
আওয়ামী লীগের বিজয় এবং নতুন পরিস্থিতিতে উপনির্বাচন সম্পর্কে প্রেসিডেন্টকে কতিপয় প্রশ্ন করা হয়। প্রেসিডেন্ট আওয়ামী লীগের বিজয়কে ভীতি প্রদর্শন, ত্রাস সৃষ্টি ও দুর্নীতির ফল বলে আখ্যায়িত করেন। প্রেসিডেন্ট বলেন, সেই সময় তিনি আওয়ামী লীগের তৎপরতা সম্পর্কে সঠিক খবর পাননি। এখন আমরা বুঝতে পারছি প্রত্যেক আসনে জয়ের জন্য মুজিব কি করেছিল। তার অধিকাংশ লোক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে কারণ আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করতে জনগণ ভীত ছিল।
———-