শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পাকিস্তানের কড়া প্রতিবাদ জ্ঞাপনঃ ভারতীয় বিমান আক্রমন | দৈনিক পাকিস্তান | ৪ জুলাই, ১৯৭১ |
পাকিস্তানের কড়া প্রতিবাদ জ্ঞাপনঃ ভারতীয় বিমান আক্রমণ
ইসলামাবাদ, ৩রা জুলাই (এপিপি)।- ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমান আজ পূর্ব পাকিস্তানের দিনাজপুর জেলার অমরখানায় হামলা চালায়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর দ্রুততার সঙ্গে ভারত সরকারের নিকট এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ভারতের অস্থায়ী হাই কমিশনারকে আজ সন্ধ্যায় এখানে ডেকে পাঠানো হয় এবং তাকে জানানো হয় যে, পাকিস্তান এটাকে অত্যন্ত মারাত্মক ঘটনা বলে মনে করে এবং কোনরুপ উস্কানী ছাড়া পাকিস্তানী এলাকায় এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা না হলে তা উপমহাদেশের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে।
তাঁকে আরো জানানো হয় যে, আজ দুপুর সাড়ে বারটায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর চারটি জঙ্গী বিমান ও একটি অস্ত্র সজ্জিত হেলিকপ্টার পাকিস্তানের আকাশসীমার ৬ মাইল ভেতরে অনুপ্রবেশ করে এবং দিনাজপুর জেলার অমরখানায় বিমান থেকে মেশিনগানের গুলীবর্ষণ করে।
এছাড়া আজ বিকেলে ভারতের দিক থেকে ১২০ মিলিমিটার মর্টারের সাহায্য আমরখানায় প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করা হয়।
কোনরুপ উস্কানী ছাড়াই পাকিস্তান এলাকায় ভারতীয় বিমানের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এবং এই ঘটনায় পাকিস্তানের বিশেষ উদ্বেগের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল ভারতীয় দূতকে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করার উদ্দেশ্যে প্রোয়জনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাতে বলেন।
সীমান্ত লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
ইসলামাবাদ, ৩রা জুলাই (এপিপি)।- ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক বার বার সীমান্ত লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং দুঃখ প্রকাশ করেছে যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলীবর্ষণ ও পাকিস্তানী এলাকায় অনধিকার প্রবেশের প্রাত্যহিক ঘটনাসমূহ বন্ধ করার জন্য ভারত সরকার এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থাই গ্রহন করেনি। ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে জানমালের যে ক্ষতি হচ্ছে পাকিস্তান সরকারের তার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবী করার অধিকার রয়েছে।
গত ১লা জুলাই বৃহস্পতিবার এখানে ভারতীয় হাই কমিশনে প্রদত্ত এক প্রতিবাদ লিপিতে গত ২১শে জুন থেকে ২৫শে জুনের মধ্যে পাকিস্তানে ভারতের সশস্ত্র হস্তক্ষেপের ১৮টি ঘটনা উল্লেখ করা হয়ঃ
১। ১৯৭১ সালের ২১শে জুন ভারতীয় সেনাবাহিনী রাত সোয়া আটটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত সিলেট জেলার তেলিয়া পাড়া এলাকায় (আর এম ৫৪৭৩) সীমান্তের ওপার থেকে ভারী মর্টারের সাহায্যে গোলাবর্ষণ করে।
২। ১৯৭১ সালের ২২শে জুন কোনরুপ উস্কানী ছাড়াই ভারতীয় সৈন্যরা কুষ্টিয়া জেলার মহেশখণ্ড (কিউ ও ৬২৬৫) সীমান্ত ফাঁড়ির উপর ভারী মর্টার থেকে গোলাবর্ষণ করে।
৩। ১৯৭১ সালের ২২শে জুন নোয়াখালী জেলার ফেনী এলাকায় (আর আর ৭৭৩৮) কোনরুপ উস্কানি ছাড়াই পাকিস্তানী সৈন্যদের উপর গুলীবর্ষণ করা হয়। ফলে তিন জন আহত হয়।
৪। ১৯৭১ সালের ২২শে জুন সকাল আটটায় ভারতীয় সৈন্যরা যশোর জেলার বেনাপোল এলাকায় (কিউ টি ৭৪৪১) একটি অবস্থানের উপর মেশিনগানের গুলীবর্ষণ করে এবং ভারী মর্টারের সাহায্যে ৩০ রাউণ্ড গোলা নিক্ষেপ করে। ভারতীয় ফিল্ড কামান থেকে পাকিস্তানী এলাকার অনেক ভেতরে ৩০০ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে। এই যথেচ্ছ কার্যকলাপের ফলে উক্ত এলাকায় চারজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও তিনটি বাড়ী বিধ্বস্ত হয়।
৫। ১৯৭১ সালের ২২শে জুন সকাল পাঁচটার সময় প্রায় ৫০০ ভারতীয় সৈন্য বেসামরিক পোশাকে স্বয়ংক্রিয় ও ছোট অস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানী এলাকায় অনুপ্রবেশ করে এবং কুমিল্লা জেলার রাজপুরে (ও আর এম ২৮০৭) সীমান্ত ফাঁড়ির উপর হামলা চালায়। ভারতীয় ফিল্ড কামানের গোলাবর্ষণ করে এই হামলায় সহায়তা করা হয় হয়। কোনরুপ উস্কানী ছাড়াই এরুপ তৎপরতা চালানোর ফলে চার ব্যক্তি নিহত হয়।
৬। ১৯৭১ সালের ২৩শে জুন কোনরুপ উস্কানী ছাড়াই ভারতীয় সৈন্যরা যশোর জেলার বেনাপোল এলাকায় (পি কিউ টি ৭৬৪৪) মেশিনগান ও ভারী মর্টারের সাহায্যে দু’বার গোলাবর্ষণ করে। এই এলাকায় প্রায় প্রত্যহই ভারতীয় গোলাগুলি বর্ষিত হয়।
(অসমাপ্ত).