শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার মেহদী মাসুদের স্বদেশের প্রত্যাবর্তনে ভারতীয় বাধা সম্পর্কে পররাষ্ট্র দফতরের একটি প্রেস রিলিজ | ওয়াশিংটনস্থ পাক দূতাবাসের দলিলপত্র | ৪ জুন, ১৯৭১ |
প্রেস রিলিজ
জুন ৪, ১৯৭১
পাকিস্তানের সরকার এই নজিরবিহীন ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে নিয়েছে
কলকাতার পাকিস্তান ডেপুটি হাই কমিশনের পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের ভারতে তাঁদের ইচ্ছার বিরদ্ধে আটকে রাখা এবং পাকিস্তান এ ফিরে না যেতে দেবার নজিরবিহীন ঘটনাটি পাকিস্তান সরকার গুরুত্বের সাথে নিয়েছিল।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভারতের সরকার এখন পর্যন্ত পাকিস্থানের ডেপুটি হাই কমিশানার, মেহেদি মাসুদ এবং কলকাতায় কর্মরত পূর্ব পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো বৈঠক এর ব্যবস্থা করেনি, যেটা করার কথা ছিল। তিনি আরো বলেন “এটা পরিষ্কার যে ভারতের সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এই দীর্ঘসূত্রিতার কৌশল প্রয়োগ করছে।”
নীচে মে এর ২৭ তারিখে ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত পররাষ্ট্র অফিসের মুখপাত্রের বক্তব্য উদ্বৃত করা হলো।
কলকাতাস্থ পাকিস্থানী দূতাবাসের ডেপু্টি হাই কমিশনার জনাব মেহেদী মাসুদকে কলকাতায় পূর্ব পাকিস্থানের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করার জন্য কোন সুবিধা দেয়া হয়নি এবং পাকিস্থানে তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে নিজেদের ইচ্ছের কথা ব্যক্ত করেছে। তবে এই ব্যাপারে ভারত সরকার যে নিশ্চয়তা দিয়েছিলো, তা পূরণ হয়নি।
কলকাতাতে যখন পূর্ব পাকিস্থানের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক হবে, তখন পাকিস্থান ভারতকে অনুরোধ করেছে, সেখানে যেন সুইশ সরকারের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকে, যে বৈঠকটা হবার ব্যাপারে ভারত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করছিলো। কিন্তু তখন পযন্তও পাকিস্থানের সেই অনুরোধের ব্যাপারে কোন সাড়া দেয়নি এই কারনেই পাকিস্থানের সেই খায়েশ পূরণটা অনিশ্চিত হয়ে পড়লো, সেই সাথে তাদের পাকিস্তানে প্রত্যাবাসানও দেরী হয়ে গেলো।
এটা প্রতীয়মান যে ভারতের সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে দীর্ঘসূত্রিতার পন্থা অবলম্বন করছে। যদি ভারত রিপোর্ট করে যে আমাদের কলকাতা মিশনের পূর্ব পাকিস্থানি সদস্যদের অবস্থান পরিবর্তনের ব্যপারটা সঠিক, তাহলে এই অফিসার দের জনাব মাসুদের সাথে আলাদা করে দেখা করার ক্ষেত্রে এবং পাকিস্তানে ফেরত যাবার ব্যাপারে তাঁদের অসম্মতির কথা জানাতেও আর কোনো বাধা থাকবে না।
যদিও তা আর হয়ে ওঠেনি। ভারতের সরকার চাইছে অজুহাত দেখিয়ে তার অঙ্গীকার এড়াতে এই বলে যে, এটা ভারতের জন্য আফসোসের কারন যে তারা পূর্ব পাকিস্তানের অফিসার দের কে কোনো ভাবে রাজি করাতে পারছে না পাকিস্থানের ডেপুটি হাই কমিশনারের সাথে দ্রুত দেখা করাতে। এই ব্যখ্যা টা পাকিস্তানের কাছে গ্রহণ যোগ্য ছিল না। যদি ভারতের দাবি অনুযায়ী এই অফিসার রা রাজাকার হয়ে থাকে, তাহলে তাঁদের আর কোনো ধরনের কূটনৈতিক সুবিধা পাওয়ার কথা না এবং ভারতের ভূখন্ডে থাকাটাও তাঁদের জন্য অবৈধ হয়ে যাবে।
অধিকন্তু এটা ভারতের সরকারের দায়িত্ব ও হবে যে পাকিস্তান স্বীকৃত এই প্রতিনিধিদের অনুমতি দেওয়া যে তাঁদের উপর আনা দল বদলের অভিযোগটা সঠিক কিনা সেটাও নিরূপণ করতে দেয়া। অবশেষে পাকিস্তানী সরকার বাধ্য হল এই উপসংহারে আসতে যে কলকাতা মিশনের পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভারতে আটকে রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র যে জনাব মেহেদী মাসুদ কে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল দেখা করার ক্ষেত্রে তা নয়, বরং মিশনের পূর্ব পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের কেও অনুমতি দেয়া হচ্ছিল না তাঁদের পূর্ব পাকিস্তানী সহকর্মীদের সাথে কোনো রকম যোগাযোগ করতে যাদের বাসার উপর কড়া নজর রাখা হয়েছে।
ভারতের কর্তৃপক্ষের পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের আটকে রাখা এবং তাঁদের পাকিস্তানে ফিরে যাবার অনুমতি না দেবার এই নজীরবিহীন ঘটনাটি পাকিস্তানী সরকার যথেষ্ট গুরুত্বের সাথেই দেখছে। কলকাতা মিশনের পূর্ব পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের পরিবার, পাকিস্তানী সরকারের সাথে যোগাযোগও করেছে এ ব্যাপারে, এই কর্মকর্তাদের বর্তমান অবস্থা এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের খবর জানতে। পাকিস্তানী সরকার এ ব্যাপারে কোনো সন্তোষজনক তথ্য দিতে পারেনি এই কর্মকর্তাদের উদ্বিগ্ন পরিবারগুলোকে, কারণ কলকাতায় অবস্থিত পূর্ব পাকিস্থানী অফিসারদের সাথে কোনো রকম যোগাযোগ করাই সম্ভব হচ্ছিল না।
এটা খুবই হতাশাব্যাঞ্জক যে, ভারত সরকার এইসব কর্মকর্তাদের কলকাতা ও ঢাকা থেকে সরে যাওয়াকে স্রেফ মানব সংকটের দৃষ্টিতে দেখতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো, যেটা পারস্পরিকতা এবং আন্তজার্তিক রেওয়াজ অনুসারে মিমাংসা হওয়া উচিত ছিলো।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এই ইস্যুটাকে যথাযথভাবে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কাজে লাগানোর ব্যাপারে খুবই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনে হলো, এতটাই যে তারা ঢাকা ও কলকাতায় দুই দেশের কর্মকর্তাদের ভোগ করা অপ্রতুলতা আর অনিশ্চয়তার ব্যাপারে অভিন্ন ছিলো। সাধারনত এটা আশা করা হয়েছিলো যে, ঢাকাস্থ ভারতীয় কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেবার কাজটি তরান্বিত করতে ভারতীয় সরকার কলকাতায় অবস্থানরত পাকি ডেপুটি হাই কমিশনার ও তার অধস্তনদের দ্রুতই অঙ্গীকারকৃত সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে।
ভালভাবে পুরস্কৃত করা এটা প্রমান করে যে, ঢাকা ও কলকাতার কর্মকর্তাদের পারস্পারিক সরিয়ে নেবার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ভারত সরকারের যে দায় ছিলো, সেটার ব্যাপারে তারা যথেষ্ঠ আন্তরিক ছিলো না। এই বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়া যায় এইভাবে যে, যখন চূড়ান্ত প্রত্যাবাসনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া সম্পন্ন হলো, ভারত বারবার তাদের অবস্থান বদলাচ্ছিলো ঢাকা থেকে তাদের কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেবার ধরনের ব্যাপারে। ভারত তাদের কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেবার প্রক্রিয়া শুরু করলো নেপালি একটা ফ্লাইটে করে কাজটি করার প্রস্তাব দানের মাধ্যমে।
পরবর্তীতে, তারা পরামর্শ দিলেন যে, সরিয়ে নেবার প্রক্রিয়াটি রাশিয়ান বিমান দ্বারা বিঘ্নিত হতে পারে। তখন তারা আবারো তাদের অবস্থান বদলালো। এবং প্রস্তাব করলো যে, ভারতের কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেবার ব্যাপারে একটি ইরানিয়ান বিমান ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রত্যাবাসন জন্য ব্যবস্থা অবশেষে সম্পন্ন হয় যখন কর্মীদের ঢাকায় দৃঢ় উদ্যোগ দেখা দেয়। ভারতের পরিকল্পনা টা আসলে কি সেটা ঠিক স্পষ্ট নয়। ভারতের করা তিনটি ধারাবাহিক প্রস্তাব দ্রুততার সাথে মেনে নেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানী সরকার ভারতকে জানায় যে, যত তাড়াতাড়ি ভারত এবং ঢাকা থেকে স্থনান্তরকামী কর্মকর্তাদের তালিকা পাকা করা হবে, তত তাড়াতাড়ি তাঁদের জন্যে উপযুক্ত ব্যাবস্থা নেয়া হবে। যদিও ভারতীয় সরকার তখন পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার কে জানায়নি যে তারা জনাব মেহেদী মাসুদের সাথে কলকাতা অবস্থিত পূর্ব পাকিস্থানী কর্মকর্তাদের একটা বৈঠকের ব্যবস্থা করবে যাতে তারা তাঁদের নিজ নিজ ইচ্ছা স্বাধীন ভাবে জনাব মাসুদের কাছে জানাতে পারে।
—————————————