শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থন ও সহযোগিতার আহবান জানিয়ে ব্রিটেনের লিবারেল পার্টির ১৯৭১ সালের কনফারেন্সে আগত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে প্রচারিত আবেদন | এ্যাকশন কমিটির দলিল | ১৯৭১ |
১৯৭১ সালে স্কারবোরহে অনুষ্ঠিত লিবারেল পার্টির সম্মেলনে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আবেদন
জনাব,
মানবিক ট্র্যাজেডি যা পশ্চিম পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট সামরিক জান্তা বাংলাদেশের জনগণের উপর যে নির্যাতন চালিয়েছে সে বিষয়ে আপনি অবশ্যই অবগত আছেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫শে মার্চ বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে তাদের সন্ত্রাসের বিশাল এবং নির্মম অভিযান শুরু করে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, ধর্ষন, লুণ্ঠন,অগ্নিসংযোগ দ্বারা এবং বাঙ্গালিদের অপরাধ ছিল গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে একটি দলকে নির্বাচিত করা, এছাড়া আর কিছু না। কিন্তু ডিসেম্বরে আমাদের মানুষ প্রথমবারের অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তাদের গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের ফল অস্বীকার করার অন্য কোন কারণে 1970 যে পদ্ধতিতে সেনাবাহিনী এই নৃশংস ও নিষ্ঠুর কাজগুলো সংঘটিত করেছে তা অনেক প্রত্যক্ষদর্শী এবং সাংবাদিক গণহত্যা হিসাবে নিশ্চিত করেছেন। সংবাদপত্রের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী পাক-সেনাবাহিনী আমাদের বেসামরিক জনগণের উপরে গণহত্যা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মাটিতে এই বিদেশী সেনা উপস্থিতির কারণে স্বাভাবিক জীবন, প্রশাসনিক, শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সব দিক বিঘ্নিত হচ্ছে। খুব শীঘ্রই যদি না আক্রমণ সেনা প্রত্যাহার করা হয় তবে অভূতপূর্ব মাত্রার তীব্র দুর্ভিক্ষ আঘাত হানবে যা অন্তত ২৫ মিলিয়ন মানুষকে নিশ্চিতভাবে সরাসরি আক্রান্ত করবে। তাছাড়া, এ পর্যন্ত পাকবাহিনীর ভয়ে দেশ ছেড়ে যাওয়া বা সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসের কারণে দেশ থেকে বিতাড়িত ৮ মিলিয়ন মানুষ কখনোই দেশে ফিরে আসবে না যদি না পাকসেনাবাহিনী বাংলাদেশের ছেড়ে যায়।
নিজেদের বিনাশ এবং বাংলাদেশের চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে বাংলার জনগণ নিজেদের, তাদের ভুমি, তাদের সম্মান তাদের মর্যাদাএবং তাদের সহজাত ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার্থেই নিজেদের হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। যদিও আমরা আমাদের জনগণের দুর্দশার কারণে কষ্ট পাচ্ছি,তবুও আমরা গর্বিত কারণ আমাদের বীর যোদ্ধারা তাদের বীরোচিত ও সাহসী মুকাবিলার দ্বারা আমাদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করছে।
আমরা জানি লিবারেল পার্টি একটি সাহসী ও দুরদর্শী রাজনৈতিক দল যারা ন্যায়ের সঙ্গে হাত মিলাতে কখনও পিছপা হবে না। আমরা আরও জানি, যখন পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কঠোরভাবে আমাদের জনগণের উপর দমননীতি চালিয়েছিল, আপনারাই ছিলেন প্রথম দল যারা বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া এই সেনা অভিযানের নিন্দা করেছিলেন। একজন আলোকিত মনের মানুষ হিসেবে আপনাকে কৃতজ্ঞচিত্তে জানাতে চাই, আমরা পুরোপুরি স্বাধীন হবার আগ পর্যন্ত ইয়াহয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম থামবে না।