পূর্ব পাকিস্তান ব্যবস্থাপক সভায় আতাউর রহমান খানের বাংলায় কার্যবিবরণী বাজেট বক্তৃতা
১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬
EAST PAKISTAN ASSEMBLY PROCEEDINGS OFFICIAL REPORT OF THE THIRD SESSION, 1956 Volumne XV, No. 1. 17″September, 1956 BUDGET ESTIMATES, 1956-57 MR. ATAUR RAHMAN KHAN:
আমি ১৯৬৫ সালের ১লা অক্টোবর হইতে ১৯৫৭ সালের ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের বাজেটের আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ পেশ করিতেছি পরিষদের সদস্যগণ অবগত আছেন যে গণপরিষদ গত মার্চ মাসে একটি আইন পাস করিয়া চলতি আর্থিক বৎসরের এপ্রিল ও মে মাসের ব্যয় বরাদ্দ মঞ্জুর করিবার জন্য গভর্ণরকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করেন। তদানুসারে গভর্ণর এপ্রিল ও মে মাসের বরাদ্দকৃত ব্যয় মঞ্জুর করিয়াছেন। গত ২৬শে মে তারিখে শাসনতন্ত্রের ১৯৩ ধারা মোতাবেক প্রেসিডেন্ট একটি ঘোষণা প্রচার করেন। উক্ত ঘোষণা অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক আইন সভার ক্ষমতাবলী পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত হয়। কিন্তু তখন জাতীয় পরিষদের কার্য বন্ধ থাকার দরুন প্রেসিডেন্ট শাসনতন্ত্রের ১৯৩ ধারার (৩) উপ-ধারার (গ) দফায় এবং ২৩০ ধারার (১) উপ-ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১৯৫৬ সালের ১ লা জুন হইতে ৩১ শে আগষ্ট পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের রাজস্ব হইতে ব্যয় মঞ্জুর করেন। অনুরূপভাবে ৩১শে আগষ্ট তারিখেও প্রেসিডেন্ট পূর্ব পাকিস্তানের রাজস্ব হইতে ১লা সেপ্টেম্বর হইতে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য আবশ্যকীয় ব্যয় মঞ্জুর করিয়াছেন। এইসব কারণ আমি এখন চলতি আর্থিক বৎসরের অবশিষ্ট ছয় মাসের আয়-ব্যয়ের হিসাবই পেশ করিতেছি মাত্র। এই সঙ্গে আমি সভার সদস্যদের অবগতির জন্য গভর্ণর এবং প্রেসিডেন্ট কর্তৃক মঞ্জুরীকৃত টাকার হিসাব-নিকাশ পাশাপাশি দেখাইয়াছি এবং মঞ্জুরীকৃত টাকা সমেত সারা বৎসরের মোট ব্যয়ের হিসাবও প্রদর্শন করিয়াছি। আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকার সবেমাত্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হইয়াছেন। বিগত সাধারণ নির্বাচনে জনসাধারণকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি মাফিক এই সরকার ২১ দফা কর্মসূচী কার্যকরী করিতে আপ্রাণ চেষ্টা করিবেন। বিগত কয়েক বৎসরে দেশের সমস্যার সমাধান তো হয়ই নাই বরং নতুন নতুন সমস্যা বৃদ্ধি পাইয়াছে। প্রদেশের জনগণ তাই আজ অন্তহীন। সমস্যার সম্মুখীন; আমাদের সরকার এইসব সমস্যা সমাধানে বর্তমান তৎপর রহিয়াছে। প্রকৃত সমাধান যদিও সময়সাপেক্ষ তবুও আশা করা যায় যে সত্বরই দেশের বর্তমান সমস্যাগুলির যথেষ্ট উন্নতি সাধন সম্ভবপর হইবে। নূতন মন্ত্ৰীসভাকে কার্যভার গ্রহণ করিয়া পক্ষকালের মধ্যেই বাজেট পেশ করিতে হইতেছে। এই স্বল্পকালের ভেতর কোন বিশিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট পেশ করা সম্ভব নয়। আগামী জানুয়ার মাসে যখন বর্তমান বৎসরের সংশোধিত বাজেট ও ১৯৫৭-৫৮ সনের জন্য নূতন বাজেট পেশ করা হইবে, তখন মন্ত্ৰীসভা দলীয় কর্মসূচী অনুযায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন করিয়া বাজেটের বিভিন্ন খাতে বরাদের জন্য পরিষদের সম্মুখীন হইবে।
জনকল্যাণই এই সরকারের একমাত্র লক্ষ। এই উদ্দেশ্য সফল করিবার জন্য মন্ত্রীসভা পাঁচসালা পরিকল্পনা যথেষ্ট পরিমাণ অর্থের ব্যবস্থা করিতে চেষ্টা করিবেন। সদস্যগণ অবহিত আছেন যে, পাঁচসালা পরিকল্পনার খসড়া কেন্দ্রয়ী সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হইয়াছে। ইহা স্বীকার করিতেই হইবে যে, এই প্রদেশের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ খুবই অল্প। এই প্রদেশ অতীতে ভয়ানক রকমে অবহেলিত হইয়াছে। পাকিস্তানের লোকসংখার শতকরা ৫.৬ ভাগ এই প্রদেশে বাস করে। তাঁহাদের দারিদ্র প্রবাদ বাক্যে পরিনত হইয়াছে। তথাপি পাঁচশালা পরিকল্পনায় পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যার প্রতি আদৌ দৃষ্টিপাত করা হয় নাই। আমরা বর্তমান কেন্দ্রীয় পরিবর্তন সাধন করিতে চেষ্টা করিব। বরাদ বর্তমান বাজেটে নিমণরূপ বরাদ্দ ধার্য করা হইয়াছেঃ বাজেট ১৯৫৬-৫৭ আয় গতবৎসরের উদ্ধৃত্ত রাজস্ব ৩২,৬৫ ঋণ খাত হইতে প্রাপ্তি ব্যয় ১৯৫৬ সালের | ১৯৫৬ সালের জুন | ১৯৫৬ সালের ১লা | সমগ্র বৎসর এপ্রিল হইতে মে | হইতে সেপ্টেম্বর অক্টোবর হইতে ১s. পর্যন্ত গভর্ণর | পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট | ১৯৫৭ সালের ৩১ কর্তৃক অনুমোদিত | কর্তৃক অনুমোদিত | মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব খাতে ব্যয় 8,৬৬ ৯,৩০ মূলধন খাতে ব্যয় ৬,৩৩ ১২,৩৭ ঋণ খাতে ব্যয় ৬৩.৭৬ উদ্ধৃত্ত ১৯৫৫-৫৬ সালের শেষ হিসাবে পূর্ব পাকিস্তানের একাউন্টেন্ট-জেনারেলের নিকট হইতে এখনও পাওয়া যায় নাই। ঐ বৎসরের প্রাথমিক হিসাবে দেখা যাযে, ১৯৫৫-৫৬ সালের রাজস্ব খাতে আদায় হয় মোট ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। এই সকল সংখ্যার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে; কারণ দেখা যায় প্রারম্ভিক হিসাবে কোন কোন কেন্দ্রীয় ট্যাক্সর প্রাদেশিক সরকারের হিস্যা ও কেন্দ্রীয় সরকারের কতিপয় মঞ্জুরীকৃত সাহায্যে সম্পূর্ণভাবে ধরা হয় নাই। গত বৎসরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ২৫ কোটি টাকার উপরে দাঁড়াইবে বলিয়া মনে হয়। ১৯৫৫-৫৬ সালে পূর্ব সালের তুলনায় এই বৎসরে আয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ ভূমি রাজস্ব। উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৫০-৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তান জমিদারী দখল ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয় এবং ইহাতে প্রদেশের সমস্ত খাজনা আদায়কারী স্বত্ব দখলের বিধান করা হয়। গত ছয় বৎসরে এই আইন পুরোপুরিভাবে কার্যকরী করা হয় নাই। বর্তমান আর্থিক সারের সমস্ত খাজনা আদায়কার স্বত্ব দখলের কর্মসূচী সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইয়াছে। এই কার্যসূচিতে দখলকৃত জমিদারী হইতে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাইবে বলিয়া আশা করা যায়। পাট রফতানী শুন্ধের হিস্যা বাবদ ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বৃদ্ধির আশা করা যাইতে পারে এবং বিক্রয় করের হিস্যা বাবদ আরও ৩৫ লক্ষ টাকা বৃদ্ধি পাইবে বলিয়া ধরা যাইতে পারে। জমিদারী দখল করার দরুন “স্ট্যাম্প” খাতে ৪০ লক্ষ টাকা এবং কৃষি “আয়-কর” বাববদ ৫০ লক্ষ টাকা ঘাটতি হইবে। ব্যায়ের খাতে যদিও আইন পরিষদকে ১৯৫৬ সালের ১লা অক্টোবর হইতে ১৯৫৭ সালের ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত ৬ মাসের হিসাব বিবেচনা করিতে হইবে, তথাপি তুলনা করিয়া দেখার সুবিধার্থে গোটা বৎসরের হিসাবই আলোচনা করা হইতেছে। মার্চের প্রাথমিক হিসাবে ১৯৫৫-৫৬ সালের রাজস্ব ব্যয় ২৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, তদস্থলে ১৯৫৬-৫৭ সালের বাজেট বাবাদ ৩২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন খাতে প্রধান প্রধান বিষয়ে হিসাবের বিসত্ত্বত বিবরণ পরে দেওয়া হইবে। যে সকল উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য রাজস্ব খাত হইতে ব্যয় করা হয়। উহাদের জন্য ২ কোটি টাকা বেশী বরাদ্দ করা হইয়াছে। সিভিল ওয়ার্কসে ৯৭ লক্ষ টাকা বাড়িয়াছে। বস্ততঃ প্রায় সমস্ত জাতীয় উন্নয়নমূলক কাজেই বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হইয়াছে। রাজস্ব খাতে মোট ২৫ লক্ষ টাকা ঘাটতি দাঁড়াইবে। জনকল্যাণমূলক কার্যের চাহিদা মিটাইতে আরও অধিক অর্থের প্রয়োজন। কিভাবে রাজস্ব খাতে আয় বৃদ্ধি করা যায়, মন্ত্ৰীসভা সেই বিষয়ে বিবেচনা করিতেছেন। আবশ্যক হইলে নতুন করা ধার্য করিয়া জাতীয় গঠনমূলক কার্যের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হইবে। এই সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় বিল পরিষদের আগামী অধিবেশনে পেশ করা হইবে। গত বৎসরের মূলধন খাতে খরচ হইয়াছিল ২ কোটি ৭ লক্ষ টাকা, অথচ এই বৎসর আমরা ঐ খাতে বরাদ্দ কারিয়াছি ২১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। গঙ্গা-কপোতাক্ষ পরিকল্পনা, কর্ণফুলী পরিকল্পনা, বৈদ্যুতিক পরিকল্পনা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা ইত্যাদি দেশের ভবিষ্যত উন্নয়নমূলক পরিকল্পনাগুলি বাবদ ব্যয় মূলধন খাত হইতে বরাদ্দ করা হইয়া থাকে। এখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, গত কয়েক বৎসরের মূলধন খাতে গড়পড়তা ব্যয় ছিল বার্ষিক ৫ কোটি টাকার মত। ১৯৫৬-৫৭ সারের বাজেটে ২১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা বরাদ করা হইয়াছে। বিশেষ বিশেষ উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা কাজ তুরান্বিত করিয়া সাধারণ লোকের জীবনযাত্রার মান দ্রুত উন্নয়ন করাই সরকারের লক্ষ্য এবং এই উদ্দেশ্যেই বেশীর ভাগ ব্যয় বরাদ্দ করা হইয়াছে। সরকারের গৃহীত ঋণ রাষ্ট্রীয় প্রভিডেন্ট ফান্ড, বিভিন্ন প্রকারের ডিপোজিট ও এ্যাডভান্স, যথা-সিভিল, রেভিনিউ এবং ক্রিমিনাল কোর্ট ডিপোজিট, ডিপোজিট অব লোকাল বডিজ ইত্যাদি ঋণ খাতে হিসাব দেখানো হয়। চলতি বৎসরের বাজেটের কতিপয় গুরুত্বপুর্ণ বিষয় নিমেণ বর্ণনা করা হইতেছেঃ ভূমি রাজস্ব ভূমি রাজস্ব খাতে ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হইয়াছে। বাজেটের বৈশিষ্ট্য এই যে, প্রদেশের সমস্ত খাজনা আদাযকারী স্বত্ব দখলের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। ১৯৫০ সালের পূর্ব পাকিস্তান জমিদারী দখল ও প্রজাস্বত্ব আইনের সরাসরি দখলের বিধান অনুযায়ী সরকার প্রদেশের মোট ৫০,০০০ টাকা ও তদূর্ধ্বের বার্ষিক আয়বিশিষ্ট বড় বড় জমিদারগুলি দখল করার পর এমন অবস্থায় আসিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন যে, অতঃপর সরাসরিভাবে দখল করা আর সম্ভবপর হয় নাই। সুতরাং, অবশিষ্ট সমস্ত রাজস্বভোগীদের স্বত্ব বর্তমান বৎসরে দখল করার সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করিয়াছেন। বন চলতি আর্থিক বৎসরে এই প্রদেশের রক্ষণ ও বন সম্পদের উন্নতির জন্য ৪৯ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হইয়াছে। কাঠ ও অন্যান্য বনজন্দ্রব্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং বর্তমান ষ্টক সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির জন্য বন বিভাগ কর্তৃক বহুবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হইয়াছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন হইতে কাঠ সংগ্রহ পরিকল্পনার জন্য ২১ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ করা হইয়াছে। পূর্ব পাকিস্তান বেসরকারী বন আইন মোতাবেক সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনীত বেসরকারী বনসমূহ বেসরকারী বন সংরক্ষণ পরিকল্পনা মতে পরিচালিত হইতেছে। এই উদ্দেশ্যে ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বনসমূহের সংস্কার পরিকল্পনাও কার্যকরী করা হইতেছে এবং এই উদ্দেশ্যে ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। সেচ সেচ কার্যের জন্য ৮ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। সেচ পরিকল্পনাগুলির মধ্যে কর্ণফুলী পরিকল্পনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উহার জন্য বাজেটের ৪ কোটি বরাদ্দ করা হইয়াছে। এই পরিকল্পনার কাজ সমেত্মাষজনকভাবে অগ্রসর হইতেছে। আশা করা যায় যে, ১৯৫৬ সালের মাঝামাঝি ভাগে এই পরিকল্পনার কাজ সম্পন্ন হইবে। গঙ্গা-কপোতাক্ষ পরিকল্পনা আকেরটি গুরুত্বপূর্ণ সেচ পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে আনুমানিক ১ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা খরচ হইবে। ইহার জন্য ক্যাম্প, অফিস গৃহ, রাস্তাঘাট ইত্যাদি নির্মাণ এবং আবশ্যকীয় সামগ্রী সংগ্রহের প্রাথমিক কাজ প্রায় সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে। প্রধান এবং শাখা খাল খননের কাজ অগ্রসর হইতেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন গৃহের ভিত্তি স্থাপনের কাজও আরম্ভ করা হইয়াছে। এই পরিকল্পনার জন্য বাজেটে ৭০ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের কাজ অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা জেলায় বাকী অংশের সেচ ও জল নিষ্কাশন পরিকল্পনা তৈয়ারীর উদ্দেশে জাতিসংঘ প্রেরিত একজন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে গঙ্গা-কপোতাক্ষ পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত সমগ্র অঞ্চল জরীপ করা হইতেছে। বর্তমান বৎসরের বাজেটে উহার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হইয়াছে। তিস্তা বাঁধ পরিকল্পনা আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ পরিকল্পনা। উহার জন্য আনুমানিক ৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ হইবে। বাজেটে উহার জন্য ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। আশু ফল লাভের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ইঞ্জিনিয়ারিং কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী একটি উপ-পরিকল্পনা (তিস্তা পরিকল্পনা প্রথম পর্যায়ে) তৈরী করা হইয়াছে। এই উপ-পরিকল্পনায় আনুমানিক ১৬ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা খরচ হইবে। উহার কাজ ইতিমধ্যেই আরম্ভ করা হইয়াছে। এই উপ-পরিকল্পনাটির জন্য বাজেটে ১১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। এতদ্ব্যতীত অধিক খাদ্যশষ্য উৎপাদনের জন্য অনেকগুলি জলনিষ্কাশন পরিকল্পনা কার্যকরী করা হইতেছে। প্রায় ৫ লক্ষ একর জমি উন্নয়ন ও বার্ষিক ৮০ লক্ষ মণ অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদনই এই পরিকল্পনাগুলির মূল লক্ষ্য। উহাদের জন্য বাজেট ৩৪ লক্ষ টাকা ধরা হইয়াছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রদেশের বন্যা সম্যার প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ জরীপে কার্যের কর্মসূচী প্রণয়ন, তথ্যাদি সংগ্রহ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা প্রস্তুত কার্যের জন্য পূর্ব পাকিস্তান সরকার বন্যা কমিশন গঠন করিয়াছেন। একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানও গঠন করা হইয়াছে। জরীপ ও তদন্ত কার্য পরিচালনার জন্য বন্যা কমিশনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধামেত্মর পরিপ্রেক্ষিতে দশটি স্বল্পমেয়াদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রস্তুত করিয়া বন্যা কমিশনের নিকট পেশ করা হয়। অতঃপর উহা পূর্ব পাকিস্তান সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ ও মঞ্জুরীর জন্য পাকিস্তান সরকারের নিকট দাখিল করা হয়। পাকিস্তান সরকার পরীক্ষামূলকভাবে পরিকল্পনাগুলির মধ্যে দুইটি, যথা (১) জরীপ ও তদন্ত এবং (২) রংপুর জিলার কালাপনী বাঁধ সম্প্রসারণ কার্যের আশু ব্যয় নির্বাহের জন্য ৪ লক্ষ টাকা দিতে সম্মত হইয়াছেন। উভয় কার্যই আরম্ভ করা হইয়াছে। কালাপনী বাঁধ নির্মাণের কাজ বেশ অগ্রসর হইতেছে। এই বাঁধ নির্মিত হইলে যমুনা নদীর বন্যার ব্যাপক ধ্বংলীলা হইতে প্রায় ৫২ বর্গমাইল পরিমিত শস্য উৎপাদনকারী এলাকা রক্ষা পাইবে। পাকিস্তান সরকার এ যাবত অন্যান্য আরও বন্যা নিরোধ পরিকল্পনা অনুমোদন করিয়াছেন। এবং বর্তমান আর্থিক বৎসরের জন্য ১ কোটি ১০ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দ করিয়াছেন। এইসব পরিকল্পনার মধ্যে ৭টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা ও ১২টি সেচ ও জল নিষ্কাশন পরিকল্পনা রহিয়াছে। বর্ষা শেষে এইসব পরিকল্পনার কাজে হাত দেওয়া হইবে। জল নিষ্কাশনের সুবিধার্থে সরকার খাল সংস্কার করিবার জন্য বহুসংখ্যক পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়াছেন। এইসব পরিকল্পনা বন্যার তীব্রতা হাসে সাহায্য করিবে। শিক্ষা শিক্ষার খাতে ৪ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা বরাদ করা হইয়াছে। সাধারণ প্রয়োজনে এবং উন্নয়ন পরিকল্পনারদির জন্য বর্ধিত হারে অর্থ বরাদ করা হইয়াছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনের উদ্দেশে বাংলা একাডেমী স্থাপিত হইয়াছে। আশা করা যায় যে, এই একাডেমী কালক্রমে শুধুমাত্র অন্যান্য ভাষায় লিখিত দর্শন, কারিগরী বিজ্ঞান ও সাহিত্য বিষয়ক গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশ কেন্দ্ররূপেই গড়িয়া উঠিবে না, বরং ইহা বাংলা ভাষার অভিজ্ঞ পন্ডিত ও শিক্ষার্থীগণের একটি গবেষণা ও আলোচনার কেন্দ্ররূপ পরিপূর্ণতা লাভ করিবে। ঢাকা কলেজ ধানমন্ডাই এলাকায় নতুন গৃহ স্থানান্তরিত হইয়াছে। এই কলেজের ছাত্রাবাসের নির্মাণ কার্যও শুরু করা হইয়াছে। হইয়াছে। ইডেন গার্লস কলেজ ও হোষ্টেলের জন্যও নতুন গৃহ নিৰ্মাণ করা হইবে। এই জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। দেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য যাহাতে দেশের বালকগণ নিজেদেরকে গড়িয়া তুলিতে পারে, তজ্জন্য সরকার চট্টগ্রামে একটি ক্যাডেট কলেজ স্থানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এই পরিকল্পনা কার্যকরী করিতে যে ব্যয় হইবে উহার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বহন করিতে সম্মত হইয়াছেন। প্রাদেশিকসরকার জমি প্রদান ও এককালীন খরচের অংশ বহন করা ছাড়াও এই পরিকল্পনা বাবদ বার্ষিক পুনঃপৌনিকভাবে যে ৭ লক্ষ টাকা ব্যয়িত হইবে উহা বহনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব বহন করিবেন। কারিগরী শিক্ষা খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন এবং এই উদ্দেশ্যে বাজেট প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হইয়াছে। সরকার বর্তমান বৎসরের জন্য গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি ও সাহায্য বাবদ ৯ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা বরাদ্দ করিয়াছেন। এই সম্বন্ধে ইহাও উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, গত বৎসর সরকার এই বাবদ মোট ৬ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা ধার্য করিয়াছিলেন। প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি দাবী বহুকাল হইতে চলিযা আসিতেছে। আমরা উক্ত উদ্দেশ্যে এই বাজেটে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করিয়াছি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনুন্নত শ্রেণীর মধ্যে শিক্ষার প্রসার যাহাতে তুরান্বিত হয়, সেই জন্য সরকার খুব উদ্বিগ্ন। তদুদ্দেশ্যে ৪ লক্ষ টাকার স্বাভাবিক বরাদ্দ ছাড়াও বাজেটে আরো অতিরিক্ত ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। অনুরূপভাবে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য স্বাভাবিকভাবে বরাদ্দকৃত ১০,০০০ টাকা ছাড়াও আরো অতিরিক্ত ৩,০০০ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য এই খাতে ৩ কোটি ২১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। প্রধান প্রধান পরিকল্পনার জন্য বর্ধিত হারে অর্থ বরাদ্দ করা হইয়াছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের জন্য বহনযোগ্য নূতন এক্সরে যন্ত্র এবং ষ্টেরিলাইজার ক্রয় বাবদে অর্থ বরাদ্দ করা হইয়াছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ক্লাশ খোলার জন্য ব্যবস্থা হইয়াছে। ঐ কলেজের গৃহনির্মাণ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হইয়াছে। সরকারী হাসপাতালসমূহে ঔষধপত্র ও অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামাদি ক্রয়ের জন্য অধিক অর্থ বরাদ্দ করা হইয়াছে। সরকার প্রদেশের মেডিক্যাল স্কুলগুলিকে কলেজে উন্নীত করিবার দাবী সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত আছেন। কাজেই আর্থিক বৎসরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি মেডিক্যাল কলেজ খোলার মত প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করিয়াছেন। ১৯৪৯-৫০ সালে বিসি,জি, টিকা প্রদান কর্মসূচী গৃহীত হয়। এবং ক্রমাগত বাধিত হারে ইহার কাজ অগ্রসর হইতেছে। চলতি সনের বাজেটে এই জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ করা হইয়াছে। বিস্তৃত স্থান জুড়িয়া মশক নিবারণী ও ম্যালেরিয়া নিরোধ অভিযান চালান হইতেছে এবং বন্যাপীড়িত এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইতেছে। গৃহীত ক্রমসম্প্রসারণ কর্মসূচী অনুয়ায়ী ১৯৫৬-৫৭ সালের জন্য ৫০ লক্ষ লোককে ম্যালেরিয়া রোগমুক্ত করিবার প্রস্তাব করা হইয়াছে। সুতরাং এই বাজেটে বর্ধিত হারে অর্থ মঞ্জুর করা হইয়াছে। শহর এলাকায় ম্যালেরিয়া নিরোধ ব্যবস্থার জন্য পূর্বাপেক্ষা অধিক অর্থ মঞ্জুর করা হইয়াছে। এ পর্যন্ত আংশিকভাবে চারিটি জেলায় স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্বন্ধীয় ব্যবস্থ্যাবলী প্রাদেশিক সরকার স্বহসেতু গ্রহণ করিয়াছেন এবং তাহা পুনর্গঠন করিয়াছেন। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান ও তৎসংক্রান্ত বিভিন্ন পদে চাকুরীর বাবদ প্রতি বৎসর ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। আরো কতকগুলি ডিসপেন্সারী প্রাদেশিক সরকারের অধীনে আনার জন্য ১৯৫৬-৫৭ সালের বাজেটে অধিকতর অর্থ বরাদ্দ করা হইয়াছে। ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে ইনপ্রভমেন্ট ট্রাষ্ট স্থাপন করিবার জন্য ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। ইহার জন্য বহু পূর্বেই প্রয়োজনীয় আইন পাশ করা হইয়াছে। কষি কৃষিখাতে ২ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। কৃষি স্কুল ও কৃষি কলেজের জন্ন স্বাভাবিক ব্যবস্থা বাদে কৃষি শিক্ষার উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। অধিকতর ব্যাপকভাবে কৃষি গবেষণা চালাইবার জন্য বর্তমান বৎসরের বাজেটে বর্ধিত হারে অর্থ মঞ্জুর করা হইয়াছে। অধিক খাদ্য ফলাও আন্দোলনের জন্য বর্ধিত বরাদ এই বাজেটের আর একটি বৈশিষ্ট্য। মৎস্য এই খাতে বাজেটে ৬ লক্ষ ১৯ হাজার টাকার ব্যবস্থা করা হইয়াছে।
পূর্ব পাকিস্তানীদের অধিকাংশ প্রোটিনজাত খাদ্য মাছেই পাওয়া যায় এবং প্রদেশের মৎস্য সম্পদকে প্রকৃত সোনার খনি’ আখ্যা দেওয়া হয়। কিন্তু এই সম্পদকে এ পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে ব্যবহার করা হয় নাই। ১৯৫০ সালের পূর্ব পাকিস্তান মৎস্য পালন ও সংরক্ষণ আইন এ পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে চালু করা হয় নাই। বর্তমান প্রাদেশিক সরকারের নীতি হইতেছে এই আইনের বিধানসমূহকে কার্যকরী করা এবং মৎস্য, ডিম্বও পোনা মাছ ধ্বংস বন্ধ করা। সেই মতে মৎস্য ডিরেক্টরেটকে (১) বৈজ্ঞানিক উপায়ে মৎস্য চাষ দ্বারা দেশের মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করার জন্য ও (২) মাছের পরিত্যক্ত অংশ এবং নষ্ট মাছের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার পদ্ধতি নিরুপণের জন্ম ১৯৫৬-৫৭ সালের বাজেটে অধিক পরিমাণ টাকা বরাদ করা হইয়াছে। সিভিল ওয়ার্কস রাস্তাঘাট এবং সরকারী ইমারত প্রভৃতি নির্মাণ বাবদ ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হইয়াছে। এই খাতে পূর্বে গড়পড়তা বাৎসরিক ব্যায়ের অঙ্ক ছিল ৪ কোটি টাকা। বর্তমান আর্থিক বৎসরে এই খাতে আমরা ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা ব্যয় করিতে মনস্থ করিয়াছি। বাজেটে বহুসংখ্যক জাতীয় গঠনমূলক পরিকল্পনাকে কার্যকরী করিবার ব্যবস্থা করা হইয়াছে। এই সমস্ত পরিকল্পনা দেশকে দ্রুত উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে সাহায্য করিবে। খাদ্য বর্তমান বৎসরের আনুমানিক খাদ্য ঘাটতি ৭ লক্ষ টন। বর্তমান বাজেটে এই ৭ লক্ষ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করার ব্যবস্থা ইতিপূর্বেই করা হইয়াছে। সরকার নিমেণাক্ত স্থানসমূহ হইতে খাদ্রশস্য পাইবার আশ্বাস পাইয়াছেনঃ পশ্চিম পাকিস্তান + a + = ৯৪,৩৭৫ ব্ৰহ্মদেশ + a + a 8, لاب) o যুক্তরাষ্ট (আমেরিকা) — — ৪.১৪,৭১৩ ‘ජෑINA — — వ(tం:ఫి সিংহল + a * a У „oоo জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জরুরী শিশু — — ৩,২২৩ তহবিল সোভিয়েট রাশিয়া — — 8ο,οοο চীন — — 9o,ooo মোট- ৬,৯৯,৭৮০ ইহার প্রায় অর্ধেক পরিমাণ খাদ্যশস্য ইতিপুর্বেই আসিয়া পৌঁছিয়াছে। বাদবাকী খাদ্যশস্য হয় আসিবার পথে, না হয় উক্ত দেশগুলিতে জাহাজে বোঝাই হইতেছে। এতদুপরি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা সাহেব গত ৭ই সেপ্টেম্বর তারিখে আরও ১ লক্ষ টন খাদ্য আমদানী করিবার আদেশ দিয়াছেন। উক্ত দেশ হইতে খাদ্যশস্য জাহাজে আনয়ন করার বিশেষ অসুবিধা বিধায় আমরা অন্যান্য দেশ হইতেও খাদ্যশস্য অতি সত্বর আনাইবার ব্যবস্থা করিতেছি। যখন সমস্ত আমদানীকৃত খাদ্যশস্য আসিয়া পৌঁছিবে তখন খাদ্যাবস্থা শুধু স্বাভাবিকই হইবে না বরং সঞ্চয়ের জন্য যতেষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য হাতে রহিয়া যাইবে বলিয়া আশা করা যায় পল্লী উন্নয়ন কার্যসূচী এতদুদ্দেশ্যে বাজেটে ৯২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। পল্লী উন্নয়ন কার্যসূচী ১৯৫৫-৫৬ সালে বিশেষ কার্যকরী করা হয় এবং বর্তমানে উহা সমেত্মাষজনকভাবে অগ্রসর হইতেছে। তেজগাঁও, দৌলতপুর ও গাইবান্ধার অবস্থিত পল্লী উন্নয়ন শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষাপ্রাপ্ত তিনদল কর্মী তেজগাঁও, দৌলতপুর, ফুলতলা ও গাইবান্ধা থানাসমূহে তিনটি বিভিন্ন স্থানে উন্নয়ন কার্যে নিযুক্ত আছেন। তাহারা সমেত্মাষজনকভাবে কার্য করিতেছেন। যে দুই দল ট্রেনিংপ্রাপ্ত কর্মী এই বৎসর পাশ করিয়াছেন, তাঁহাদিগকে নূতন উন্নয়ন এলাকায় নিযুক্ত করা হইয়াছে। ১৫ জন মহিলার একটি দলও তেজগাঁও প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাপ্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তাঁহাদিগকে বর্তমানে তিনটি উন্নয়ন এলাকায় নিযুক্ত করা হইয়াছে। যাহাতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বর্তমানের ব্যবস্থা মাফিক ৬০-এর পরিবর্তে ১২০ জন কর্মীকে শিক্ষা দিতে পারে: সেই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানসমূহের ট্রেনিং ব্যবস্থার সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত করা হইয়াছে। আলোচ্য বৎসরে আরও দুইটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন কথাও চিন্তা করা হইতেছে। উহার উদ্দেশ্য অল্প সময়ের মধ্যে অধিকসংখ্যক কর্মী তৈয়ার করাযাহাতে যত শীঘ্র সম্ভব সমগ্র প্রদেশে উন্নয়ন কার্য ত্বরান্বিত করা যায়। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কর্মচারীদের ভিতরে পল্লীমুখী মনোভাব সৃষ্টির জন্য এবং যে সমস্ত কর্মচারী সরাসরি পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী অনুযায়ী নিযুক্ত হইয়াছেন, তাহদের নূতনভাবে শিক্ষা দিবার নিমিত্ত একটি “একাডেমী” প্রতিষ্ঠার কথাও চিন্তা করা হইতেছে। এই প্রসঙ্গে প্রস্তাব করা হইয়াছে যে সিভিল সার্ভিস কর্মচারীদিগকে এই “একাডেমীতে’ কিছুকাল শিক্ষালাভ করিতে হইবে যাহাতে তাঁহারা এই প্রদেশে অধিকতর দায়িত্বপূর্ণ চাকুরী গ্রহণ করিবার আগে এই কর্মসূচী সম্পর্কে একটি মোটামুটি ধারণা লাভ করিতে পারেন। আশা করা যায়, এই পরিকল্পনার সাহায্যে একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের কার্য তুরান্বিত হইবে। উপসংহারে সকলের সহযোগিতা কামনা করিয়া আমি বলিতে চাই প্রদেশের শাসন কর্তৃত্ব সবেমাত্র আমাদের হাতে আসিয়াছে। সৌভাগ্যের বিষয় কেন্দ্রেও আমাদের সুযোগ্য নেতা জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী এক কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠন করিতে সমর্থ হইয়াছেন। বন্যা ও খাদ্য সমস্যায় বিপন্ন দেশবাসীর খেদমত পূর্ণভাবে করা প্রকৃতই সুকঠোর কর্তব্য। আশা করি, পরিষদের মাননীয় সদস্যবর্গ ও দেশবাসীর সহযোগিতায় এই কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করিয়া আমরা ক্রমে ক্রমে দেশকে প্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে আগাইয়া লইয়া যাইতে সক্ষম হইব। পাকিস্তান জিন্দাবাদ সভাপতি মহোদয়, পৃথক বা স্বতন্ত্র নির্বাচনের দাবী এখানে কোন নূতন কথা নয় এবং আমার প্রস্তাবও নূতন কথা নয়। আপনি এক সময় বুঝাতে চেষ্টা করেছেন যে, স্বতন্ত্র নির্বাচনের দাবী নূতন কথা এবং স্বাভাবিক বস্ত্ত বিপরীত-আমি এ কথার দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ করি। আল্লাহর সার্ববৌমত্বের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক নির্বাচনের দাবিতে পাকিস্তানের জন্ম সম্ভবত ও সার্থক হয়েছিল। পাকিস্তানের স্বতন্ত্র নির্বাচনের দাবী ধর্মভিত্তিক এবং আদর্শভিত্তিক। যে আদর্শ রূপায়ণের জন্য পাকিস্তান এই পৃথিবীতে জন্মলাভ করেছিল সে আদর্শ হচ্ছে একটি স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদের আদর্শ। পৃথিবীর অপরাপর ইসলাম বিরোধী যা কিছু শক্তি বা আদর্শ আছে তার প্রতিকূলে একথা বলা চলে যে মুসলমানদের স্বতন্ত্র জাতীয়বোধ একটি নূতন কথা নয়। এটি কোরান শরীফের শাশ্বত বাণী-হাদিস এর ব্যাখ্যা পূর্ণতা লাভ করেছে। সমস্ত জগতের উপর এক আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে যে মতবাদ তার উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি। যদি এই পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি অস্বীকার করা হয় তাহলে পাকিস্তানের দাবীকে নস্যাৎ করে দেয়া হবে। “ইসলামী প্রজাতন্ত্র” বিশিষ্ট মতবাদের রূপায়ণকে কেন্দ্র করে সম্ভব হয়েছে। ভৌগলিক মতবাদ বা বস্তান্ত্রিক মতবাদ থেকে ইসলামী জাতীয়তাবাদ সম্পূর্ণ পৃথক। Secular Stateসর্বক্ষেত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করা হয় না। পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রের মুখেবন্ধে প্রথমেই সমস্ত জগতের উপর এক আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করা হয়েছে। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে যে জাতীয়তাবাদ তারই উপর ভিত্তি করে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচিত হয়েছে। যদি পৃথক নির্বাচন প্রথা অস্বীকার করা হয় আজ তাহলে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে জেহাদ ঘোষণা করা হবে এবং তার ফলে পাকিস্তানের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। এবং কাশ্মীর, জুনাগড় ইত্যাদির দাবি প্রত্যাহার করতে হবে।
নির্বাচন ইস্যু
(২৯ শে সেপ্টেম্বর)
স্পিকার: সুধীবৃন্দ, আমরা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার চৌকাঠে এসে পৌছেঁছি, সেটা হল নির্বাচন ইস্যু । পাকিস্তানের লাখ লাখ মানুষের ভাগ্য এই বিষরটির উপর নির্ভর করছে। এই বিষরটির পক্ষে বিপক্ষে বেশি বিক্ষোভ হচ্ছে না বিপক্ষে সেটা মূল বিষয় নয়। আমরা, আইনপ্রণেতারা, দেশের প্রকৃত প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের স্বাধীনতার চর্চা করে, অবাধে এবং সচেতনতার সাথে বিবেকের প্রতিক্রিয়ায় ভোট দেওয়া দেয়া উচিত, স্লোগান ও বিক্ষোভ এর মাধ্যমে না। আমাদেরকে ঠাণ্ডা মাথায়, শান্তভাবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সভার কার্যধারা পরিচালনা করা উচিত। এখন প্রথমে, নিজাম-ই-ইসলাম পার্টির জনাব খুরশীদ উদ্দিন আহমেদ পৃথক নির্বাচনের উপর তার বিশ্লেষণ তুলে ধরবেন।
( ১ লা অক্টোবর )
জনাব খুরশীদ উদ্দিন আহমেদঃ স্যার, আমি পূর্ব পাকিস্তান বিধানসভাকে জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদে পৃথক নির্বাচন এর প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের বিনীত অনুরোধ করছি এই পাকিস্তানের জন্ম এই স্বাতন্ত্ৰবোধ থেকে হয়েছিল সেটা প্রমাণ করবার জন্য বেশী দূরে যেতে হয় না। কোরান থেকে দু’একটি কথা উদ্ধৃত করে আমার কথা যে অন্যায়ও কৌতুহলপ্রসূত নয় সেটা প্রমাণ করব। কোরান বলেছে যে সমস্ত মানবজাতি এক মন্ডলীর অন্তর্ভুক্ত। বিশ্ব মানব একই মানবতার শৃংখলে আবদ্ধ। এই ভিত্তিকে-এই আদর্শকে যদি আংশিকভাবে বা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করি তাহলে মানব জাতির বিভেদ সৃষ্টি করা হবে। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কেহ সম্পূর্ণ স্বীকার করে নিয়েছে- কেত সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে আবার কেহবা ২/৪/৭ আনা স্বীকৃতি দিয়েছে। এই প্রকার স্বতন্ত্ৰবোধ বৈষম্যের দরুন পৃথিবীতে জাতিভেদের সৃষ্টি হয়েছে। এই জাতিভেদের বিরুদ্ধে যাঁরা সংগ্রাম করেছেন তাঁরা যুগে যুগে অবতার বা মহাপুরুষ বলে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ইসলাম ধর্ম প্রচারের পূর্বে পৃথিবীর মানুষ বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত হয়েছিল এবং জাতিভেদ দূর করাই ছিল ইসলামের প্রচেষ্টা। ইসলাম প্রচার করল যে মানবজাতি এক। কিন্তু অস্বাভাবিক ভৌগলিক জাতীয়তাবোধ পৃথিবীর *Too fog o China for chinese, India for Indians and Russia for Russians, 4 of প্রমাণিত হতে চলেছে যে নিরাপত্তা কাউন্সিল মানব জাতির সার্বভৌমত্বের যোগসূত্র খুঁজে পায় নাই। মানবতার ধর্মভিত্তিক আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও সকল মর্যাদাকে যদি স্বীকার করি তাহলে মানব জাতির এই অধিকার লাভ সম্ভব হবে। কোরানের এই আদর্শের বাস্তব রূপায়ণের জন্যও সে আদর্শকে পরিপূর্ণ করা জন্য পাকিস্তানের স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে। জনাব স্পীকার সাহেব, পাকিস্তানের দাবী ছিল দ্বিজাতি ভিত্তির উপর। এই দ্বিজাতিবাদ ভিত্তি করে দুটো আদর্শের সংগ্রামের উপর পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে অর্থাৎ বিশ্ব মানব সভায় পাকিস্তান বা আমাদের স্বাতন্ত্র্যবোধের দাবী স্বীকৃত হয়েছে। তার ফলে পাকিস্তান জন্মলাভ করেছে। তখন ভারত বিভাগকে মাতা বিভাগ করবার সমপর্যায় মত বলা হয়েছিল। যারা পাকিস্তানের বিরোধীবাদী ছিল তাদের সঙ্গে সক্রিয় agreement, সমঝোতা করে পাকিস্তানের সৃষ্টি হল। তারা পাকিস্তানের আদর্শকে স্বীকার করে নিয়েছিল। আজকে যদি এই স্বাতন্ত্র্যবাদকে অস্বীকার করা যায় তাহলে বলতে হবে যে পাকিস্তান দাবীর মূলে ধোঁকাবাজী ছিল। একথা কোন মানুষ বলতে পারে না যে কায়েদে আযম আমাদের ধোকা দিয়েছেন। সুতরাং আজকে যুক্ত নির্বাচনের পক্ষে যে সমস্ত যুক্তি দেখান হয় তা আচল (Noise) .. আজ দ্বিজাতির ভিত্তি যদি অস্বীকার করা হয় তাহলে বুঝতে হবে যে পারিপার্শ্বিক রাজনৈতিক body-র চাপে পড়ে সে আদর্শকে মুসলমান জাতি বিসর্জন দিতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিনা সে আদর্শবাদ কি কারণে জলাঞ্জলী দিতে হবে। এই স্বাতন্ত্র্যবোধই হচ্ছে মুসলমানদের জাতীয়তাবাদের উৎস। আমাদের কোরান ও সুন্নাহ তাই বলে। সেটাকে যদি অস্বীকার করা হয় তাহলে বুঝতে হবে আর একটি কোরান ও হাদিস পাওয়া গিয়াছে এবং মুসলমানদের বিশ্বমানব পরিকল্পনা আদর্শকে পরিত্যাগ করতে হবে। বলাবাহুল্য আমাদের কোরান ও হাদিস এই ভৌগলিক জাতীয়তাবাদ কখনো সমর্থন করে না। আমি আপনার মাধ্যমে বন্দুদের এই রকম নবকল্পিত ভৌগোলিক, সীমাবদ্ধ জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে জনাব ইকবাল মরহুম যা লিখেছেন wife of of 3 off of Bogos of:- If Turky is left to seek forces of energy in the cretion of new loyal, such a patriotism and nationalism nourishes the strongest force against that culture. তুরস্ক, মিসর ও ইরানের আধুনিক মুসলমানদের দেশ কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদ নূতন জীবন শক্তির কল্পনায় লিপ্ত হয়েছে। এই দেশ কেন্দ্রীক জাতীয়তাবাদ সভ্যতার প্রকৃষ্ট প্রতিবন্ধকরূপ বলে আখ্যায়িত হয়েছে। জনাব স্পীকার সাহেব, জাতীয়তাবাদের নামে যা বলা হয় সেটি অযৌক্তিক বলে জগতের মনীষীগণ একবাক্যে বলেছেন। জনাব ইকবাল মরহুম মুসলমানদের জাতীয়তাবাদের এক নূতন সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। মার্কস বলেছেন, এটা unreasonable, তার মানে কৃষ্টি ও কালচারের বিরুদ্ধে মানব সভ্যতায় এটা একটি অপশক্তি ও অপকৌশল। এই অপকৌশল বর্তমান পৃথিবীকে দুটি যুযুৎসু শিবিরে পরিণত করেছে। একটি হচ্ছে রাশিয়ার communism বা সমাজতন্ত্রবাদ আর একটা হচ্ছে ধনতন্ত্রবাদ বা সাম্রাজ্যবাদ। এই দুটি মতবাদে সংঘর্ষ হচ্ছে। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ যত সংগ্রামই করুন না কেন এ লড়াই পৃথিবীকে শান্তিতে থাকতে দিবে না। এই সংগ্রামের শেষ করতে হলে দ্বিতীয় পন্থা হচ্ছে মানব জাতির সীমার উর্ধ্বে উঠে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ আসবে সেটি। তাহলে দু’টি মতবাদের সামঞ্জস্য হতে পারে। জগতের শান্তির পথ প্রশস্ত হতে পারে। পৃথিবী শান্তির দিকে অগ্রসর হবে। পৃথিবীর শান্তি আমাদের শান্তি যোগাবে। আমরা আমাদের শাসনতন্ত্রের Preamble-এ বলেছি যে পৃথিবীতে যাতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় তার চেষ্টা আমরা করব। আমাদের শাসনতন্ত্রের এই কথা যদি আমরা বিশ্বাস করি ও মেনে চলি তাহলে বিশ্বমানবের শান্তির জন্য স্বতন্ত্র নির্বাচনের দাবীর দরকার আছে। আর একটা কথা অনেকে বলে থাকেন যে, STNT.M: Local Board, District Board, Municipality প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের এবং National Assembly-র স্পীকার নির্বাচনে আংশিকভাবে Joint Electorate প্রথা আংশিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। এর 2follow of osso SR Co., Head of the state Koo Titular figure head on English king *Co constitutionalt figure head, of: săCŞă şFssi sã Gül sióB #ss to Municipality, Local Board.-এর নির্বাচন আদর্শের সংগ্রাম নয়। সেখানে হচ্ছে আইন সভার সিদ্ধান্তের-Distic Board, Union Board-Lical Self Govt. Act GT f(TI STE SET F”IFIEf একটা রাস্তা হিন্দু করল কি মুসলমান করল, একটা জলাশয় হিন্দু করল না খৃষ্টান করল এতে কিছু আসে যায় না। সুতরাং সেখানে স্বতন্ত্র বা যুক্ত নির্বাচনের প্রশ্ন আসে না। কিন্তু আইন সভার নির্বাচন একটা স্বতন্ত্র বিভিন্ন গোষ্টি, বিভিন্ন পরিবারের লোক দ্বারা এই আইনসভা গঠিত হয়। আমি বলেছিলাম যে আমাদের বর্তমান সরকারকে আসি সেই সমস্ত নির্দেশের পথে আকৃষ্ট করতে চাই। সরকার গঠনের মধ্যে তিনটি বিভাগ থাকে- একটা হচ্ছে সর্বোচ্চ পরিষদ, যাকে আমরা বলি বিধান পরিষদ। সেটা হল Legislative Body, সেখানে আইন প্রণয়ন করা হয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে আইনের বিধান ঠিকমত প্রতিপালন করবার জন্য Executive Body বা শাসন কর্তৃপক্ষ। তৃতীয়টি হচ্ছে এই আইনের বিধান যারা লঙ্ঘন করে তাদের যথাযোগ্য ন্যায়ের তুলাদন্ডের বিচার করে শাস্তি বিধান করে তা হচ্ছে Judiciary. আমরা আজ এই আইন সভায় যে সমস্ত লোক এসেছি তারা বিভিন্ন কৃষ্টি, বিভিন্ন সমাজ, বিভিন্ন আদর্শের প্রতীকরূপেই এখানে মেম্বার হয়ে এসেছি। আমাদের নিজেদের constituency অনুযায়ী আমাদের শিক্ষা, সাংস্কৃতি, তাহজীব, তমুদ্দুন বিভিন্ন, একথা স্বীকৃত সত্য। এই বৈষম্য থাকার কারণ হল আমাদের নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে নিজের নিজের কথা বলবার জন্য আজ প্রতিনিধি হিসেবে এই আইন সভায় এসেছি। পৃথকভাবে নির্বাচন হওয়া একান্ত দরকার কারণ, কোন খৃষ্টান কোন মুসলমানের তাহজীব, তমুদ্দুন, প্রকাশ করতে পারে না, কোন হিন্দু জাতির মঙ্গলের রূপায়ণ মুসলমান প্রতিনিধিরা করতে পারে না। সুতরাং এক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষা, কৃষ্টি, সাংস্কৃতিক, ভাষা এবং নানা দিক দিয়েই বৈষম্যের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিভিন্ন সমাজ হতে আগত মেম্বাররা সকলেই যে স্বতন্ত্র সত্তার অধিকারী এ কথা স্বীকৃত সত্য। সুতরাং বিভিন্ন জাতীয় সত্তা কথার জন্য আইন পরিষদের নির্বাচন যুক্ত না হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনের মাধ্যমে হওয়াই বিধেয়। স্পীকার মহোদয়, একটা কথা শুনতে পাই যে আমাদের কায়েদে আযম যুক্ত নির্বাচনের সমর্থক ছিলেন। এটা জাজুল্যমান মিথ্যা এবং স্বদেশ বিরোধী কথা। কায়েদে আযমের সমস্ত জীবনের দৃষ্টান্ত থেকেই এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। ১৯২৮ সাল পর্যন্ত তিনি কংগ্রেসে ছিলেন। তখন তিনি দুইটি জাতিকে একত্রিত করতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কংগ্রেসের খামখেয়ালির জন্য তিনি পাকিস্তানের দাবী উত্থাপন করেছিলেন। এই দাবী স্বীকৃত হবার পর আমার নূতনভাবে একথা উঠা নিতান্তই অসঙ্গত। আমি এই প্রসঙ্গে কায়েদে আযমের শেষ বাণীর প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তিনি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের National Parliament- এর বক্তৃতায় যে কথা বলেছিলেন সেকথাবিজয়ী মুসলমানদের নিকট তার একটা শাশ্বত বাণী এবং বিজিত অমুসলমানদের প্রতি পরাজয়ের গ্লানি ভুলে যাওয়ার একটা মস্তবড় আশ্বাসের বাণী। এই বাণীর আমরা তুলনা করতে পারি। আমাদের রাসুলুল্লাহ বলেছিলেন, তাঁর বিজয়ের দিনে, “হে আমার বিজয়ী বন্ধুগণ! তোমরা যে জাতিই হওনা কেন, মনে রেখ, আজ প্রতিশোধ নেওয়ার দিন নয়; আজ শুধু প্রেম বিতরণ করা এবং দোষ ভুলে যাওয়ার দিন৷” সুতরাং সেই যে কায়েদে আযমের বাণী সেটি অমুসলমানদের নিকট তৃপ্তি এবং আশ্বাসের বাণী এবং মুসলমানদের নিকট গৌরবের বাণী। তোমরা হিন্দু মুসলমান একসাথে বসবাস কর। আমি এরূপ কল্পনা করতে পারি না যে এর অর্থ হতে পারে যে দিলেই সকলে স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে তাঁর সমগ্র জীবন প্রমাণ দিচ্ছে যে তিনি পাকিস্তানের যুক্ত নির্বাচনের বিরুদ্ধে এবং স্বতন্ত্র নির্বাচনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। একথা সর্ববাদী সত্য। সভাপতি মহোদয়, গণতন্ত্র সম্বন্ধে একটা কথা বলা হয় যে, স্বতন্ত্র নির্বাচন কায়েম হলে গণতন্ত্র ব্যাহত হবে। এ কথা মোটেই সত্য নয় …. স্পীকার মহোদয়, আমি উপসংহারে বলতে চাই, যদি স্বতন্ত্র নির্বাচনের দাবী পরিত্যাক্ত হয় তাহলে সর্বপ্রথম কতা হচ্ছে, মুসলমানদের সনাতন, শাশ্বত মানবতার যে আদর্শ আছে সে আদর্শ হল আল্লাহর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি, তা ব্যাহত হবে। পাকিস্তানের মুসলমানদের দ্বারা স্বতন্ত্র নির্বাচন পরিত্যক্ত হলে পূর্বোক্ত আদর্শকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দেয়া হবে। যদি এই স্বতন্ত্র নির্বাচনের দাবী পরিত্যাগ করা হয় তাহলে পাকিস্তানের সমাধি আজ নাহোক কাল রচিত হবে। যে বিশাল সংস্কৃতি এবং মানসিকতার বলে এই নূতন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল, মুসলমান জনগণ আজ সে আদর্শ বিস্মৃত হতে চলেছে। সেই বিস্মৃত আদর্শকে পুনরায় বিশ্বে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আজ বিশ্বের সমস্ত মুসলিম দেশে নব জাগরণের তুর্যনিনাদে মহাজাগরণের বাণী উঠেছে, আত্মাহুতির দাবী এসেছে। আজ পাকিস্তানে সে আদর্শের পরিপন্থী পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সেই পরিবেশ নষ্ট করে দিতে হবে। পাকিস্তানে আমরা একজাত হয়ে যদি পাকিস্তানের থিওরী ভুলে যাই তাহলে কলকাতা আর সীমামেত্মর কোন ব্যবধান থাকবে না। অনাগত ভবিষ্যতে হিন্দু মুসলমানের ভোটে এবং মুসলমান হিন্দুর ভোটে নির্বাচিত হবেন কিন্তু তারা প্রকৃত প্রতিনিধি হতে পারবেন না। যদি পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থায় নির্বাচন হয় তাহলে তারা সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন। যদি হিন্দু মুসলমানকে এবং মুসলমান হিন্দুকে ভোট দেয় সেটা অত্যন্ত অন্যায় এবং মারাত্মক হবে। তার ফল সব দিক দিয়েই খারাপ হবে। আরও একটা কথা হচ্ছে যে পাকিস্তান যে বিশ্বমানবের মংগল এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করছে, সেই সার্বভৌম মানবতার অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে।
জনাব আবুল বাশার মোহাম্মদ সুলতানুল আলম চৌধুরী: জনাব স্পিকার , স্যার, নির্বাচন এর প্রশ্নে এখানে যে আলোচনা এবং বিতর্ক হচ্ছে , আমি মনে করি, এটি সবচেয়ে বিশেষভাবে লক্ষণীয় এবং গুরুতর বিষয় , যা সভার গত নয় বছরের গৌরবমণ্ডিত অস্তিত্বের সামনে উত্থাপিত হয়েছে। আমি এটাকে সবচেয়ে বিশেষভাবে লক্ষণীয় এবং গুরুতর বিষয়, বলছি, কারণ, আমার কাছে, এটা কোন নিখাদ এবং সাধারণ একটি রাজনৈতিক প্রশ্ন নয় ,যা প্রায়ই যুগ্ম নির্বাচন এর উদাহরণ দ্বারা ব্যাখ্যা ও বিবৃত করা হয়, কিন্তু এর সঙ্গে ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রশ্নেরও আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে এবং যা সবকিছু ছাড়িয়ে রাষ্ট্রেরই সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রশ্নও এটি । মূল প্রসঙ্গের বিশ্লেষণ এ প্রবেশ করার আগে, স্যার, আমি মনে করি , আমাকে অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে পৃথক নির্বাচন এর সূচনা ও ইতিহাস এর সংক্ষিপ্ত বিবরন দেয়া উচিত হবে।
১৯০৬ সালে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর সাথে আগা খানের নেতৃত্বে নবাব মোহসিনুল মুলক, নবাব ভিকারুল মুলক, স্যার সৈয়দ আলী ইমাম, হাকিম আজমল খান, জনাব বিচারপতি শাহী দীন সহ অনান্যদের নিয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে এবং অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের অধিকার দাবি করে এবং সবাই একমত পোষণ করা হয় যে মিন্টো-মর্লি সংস্কার এ মুসলমানদের রাজনৈতিক পশ্চাৎপদতা দৃশ্যমান ছিল।
১৯১৫ থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যবর্তী সময়কালকে ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক চেতনার ভোর বলা যেতে পারে, যে সময়ে ভারতীয় স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন গতি লাভ করে, হিন্দু ও মুসলমান একই প্ল্যাটফর্মে এসে দাড়ায়, এতটাই যে, লক্ষ্ণৌ অনুষ্ঠিত একটি যৌথ অধিবেশনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও নিখিল ভারত মুসলিম লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে স্বায়ত্তশাসন এর দাবি করে এবং হিন্দু-মুসলিম নেতারা একটি চুক্তি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন যা হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ইতিহাসে লক্ষ্ণৌ চুক্তি নামে পরিচিত, যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে মটাংগু- চেমসফোর্ড সংস্কার এবং ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে গঠিত হয় । এমনকি যে ঐতিহাসিক লক্ষ্ণৌ চুক্তির মধ্যে পৃথক নির্বাচন এর নীতি স্বীকৃত এবং গৃহীত হয়। আবার ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সংসদ এর জয়েন্ট সিলেক্ট কমিটির রিপোর্টেও পৃথক নির্বাচন এর প্রস্তাব করা হয় এবং যা পরে ভারত শাসন আইন ১৯৩৫ এ অন্তর্ভুক্ত হয়। এই আইনের অধীনে ১৯৩৭ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মুসলমানরা বৃহৎ সংখ্যায় আইনসভায় নির্বাচিত হয়েছিল; ফলে সারাদেশে মুসলমানদেরকে উজ্জীবিত ও রাজনৈতিক কার্যকলাপ এ সচেতন সেইসাথে প্রত্যাশা ও কার্যকলাপকে উদ্দীপ্ত করে তুলল। এই নির্বাচনে ভবিষ্যতে পাকিস্তান আন্দোলনের বীজ অদৃশ্যভাবে বপন ছিল যা এগারো বছর পরে সোনালী ফল দিতে পেরেছিল।
তারপর আবার, স্যার, ১৯৪৬ সালে এসে যে নির্বাচন হয় সেটাও ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে বর্ণিত পৃথক নির্বাচনের নীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে উপ-মহাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে তাদের দুটি স্বতন্ত্র বিষয় ছিল। জাতীয় কংগ্রেসের সাথে মুসলিমদের একটি আণুবীক্ষণিক সংখ্যালঘু অংশ একতাবদ্ধ জাতীয়তাবাদের নীতির উপর একটি অবিভক্ত ভারত কে সমর্থন করল এবং সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ পাকিস্তান বা ভারত বিভক্ত নীতিকে সমর্থন করল যা দ্বিজাতি তত্ত্ব নামে পরিচিত। অমুসলিমরা কংগ্রেস বা ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তাবাদ কে ও মুসলিমরা সার্বজনীনভাবে মুসলিম লীগ বা দ্বিজাতি তত্ত্বের জন্য ভোট দিয়েছে।
তারপর ক্যাবিনেট মিশন দুটি অত্যন্ত পরস্পরবিরোধী এবং উগ্র রাজনৈতিক মতাদর্শের দাবির মধ্যে একটি আপোস খুঁজে বের করতে ভারত সফর করে, তারা যে পরিকল্পনা প্রস্তাব করে, যদিও মুসলিম লীগে তা গ্রহণ করে কিন্তু গ্রুপিং প্রশ্নে কংগ্রেস দ্বারা আপোসবিমুখভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল এবং এর ফলে ভারতকে মাউন্টব্যাটেন এর পরিকল্পনা অনুয়ায়ী বিভক্ত করা হয়েছিল এবং ভারতীয় উপ-মহাদেশের কোটি মুসলমানের আশা ও আকাঙ্খার প্রতীক হিসেবে পাকিস্তান এর অভ্যুদয় ঘটে। সুতরাং, স্যার, পাকিস্তান হলো দ্বিজাতি তত্ত্বের জন্ম দেয়া একটি সত্ত্বা ।
দ্বিজাতি তত্ত্ব মানে কী? আমি ব্যাখ্যা করার জন্য স্বয়ং জাতির জনকের বলা কথা ব্যবহার করছি,
” আমরা যুক্তি দ্বারা সমর্থন করি, যে কোনো প্রকার ব্যাখ্যা ও রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দ্বারা মুসলমান ও হিন্দু দুটি প্রধান জাতি। আমরা এক কোটি জনগোষ্ঠীর একটি দেশ এবং আর সবচেয়ে বড় যেটা, আমরা আমাদের নিজের স্বাতন্ত্র্যসূচক সংস্কৃতি ও সভ্যতার একটি দেশ, ভাষা ও সাহিত্য, শিল্প ও স্থাপত্য, নাম ও নামকরণের, মূল্যবোধের জ্ঞান এবং মাত্রাবোধের। আইনগতনীতি ও নীতি সম্বন্ধীয় নিয়ম, রীতিনীতি ও ক্যালেন্ডার, ইতিহাস এবং ঐতিহ্য, দক্ষতা এবং লক্ষ্যের। সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমাদের সবার জীবন এবং জীবনের প্রতি আমাদের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যসূচক দৃষ্টিভঙ্গী আছে। আন্তর্জাতিক আইনের সব অনুশাসন অনুসারে আমরা একটি দেশ।”
জনাব স্পিকার: স্যার, ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদে, দ্বিজাতি তত্ত্ব কায়েদ-ই-আজম এর উদ্ভাবিত বা নবপ্রবর্তিত কোন একটা ধারণা নয়, এই ধারণার মূল ভিত্তি পবিত্র কুরআন, আল্লাহর কিতাব।
উদাহরণ হিসেবে, তাহলে, আমি পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতের ইংরেজি অনুবাদ পেশ করছি।
‘হে বিশ্বাসীগণ, নিজেদের ব্যাপারে তোমরা নিজ জাতি ছাড়া অন্য জাতিকে অবহিত করিও না, তাহারা তোমাদিগকে ধ্বংস করিবার জন্য কোন উপায় ব্যবহারেই বিরত থাকিবে না। কীসে তোমাদিগের কষ্ট, তোমাদিগের প্রতি তাহাদের ঘৃণা তাহাদের মুখ দ্বারাই প্রকাশ পাইয়াছে, আর তাহাদের হৃদয় যাহা লুকাইয়া রাখে তাহা আরো বিপদজনক; আমি তোমাদিগকে দেখাইয়াছি নিশানা যদি তোমরা বোঝ।‘
কুরআনে আরো অনেক আয়াত আছে যা অনুমোদন ও সমর্থন করে দ্বি-জাতি তত্ত্বকে যার উপরেই দণ্ডায়মান পাকিস্তান নামক মহান সৌধের মজবুত কাঠামো।
এখন আমি মন্তব্য প্রকাশ করতে চাই যে, ভিন্ন নির্বাচকমণ্ডলী হচ্ছে দ্বি-জাতি তত্ত্বের জীবন্ত প্রতীক এবং আমাদের রাজনৈতিক দর্শনের মূলকথা ও মজ্জা। কায়েদ-ই-আজমের মন্তব্য বিষয়টিকে আরও পরিষ্কার করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা (হিন্দু ও মুসলিম জাতি) সবকিছুতেই আলাদা। আমরা আলাদা আমাদের ধর্মে, সভ্যতায়, সংস্কৃতিতে, ভাষায়, স্থাপত্যে, সংগীতে, আইনবিজ্ঞান এবং আইনে, খাদ্যে আর ভাষায়, আমাদের পোশাকে- সব ক্ষেত্রে। শুধু ব্যালট বাক্সে আমরা একত্র হতে পারি না।‘
এই বিষয়গুলোর আলোকে, আমি বলি একত্রিত নির্বাচকমন্ডলী মেনে নেওয়া পাকিস্তান ঠিক যা সমর্থন করে দাঁড়িয়ে আছে তাকেই পরাজিত করে, আমাদের রাজনৈতিক বৃদ্ধির বিবর্তনের ইতিহাসকে উপেক্ষা করে, এবং সব জাতির মাঝে আমাদের জন্য সম্মানের একটি স্থান রক্ষা করার জন্য আমাদের পূর্বপূরুষরা যে সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন তা ভুলে যেয়ে ইসলামের চিরচারিত মূলনীতিগুলো লঙ্ঘন করারই তুল্য।
রাজস্ব-বিভাগের বেঞ্চে আমাদের যে বন্ধুরা আছেন তারা প্রায়ই আমাদের রাজি করানোর প্রচেষ্টা নিয়েছেন যে, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ (সেকুলারিজম) আর জাতীয়তাবাদ এখন সময়ের দাবি এবং একটি রাষ্ট্রকে প্রগতিশীল হতে চাইলে এবং সময়ের গতিশীল শক্তিগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এ দুটি তত্ত্ব অবলম্বন করতে হবে রাজনৈতিক জীবনের ‘Summum Bonum’ বা উচ্চতম শ্রেষ্ঠত্বের জন্য। চলুন, জনাব স্পীকার, মহোদয়, আমরা এই প্রস্তাবটি পরীক্ষা করে দেখি, সেকুলারিজম অথবা অসাম্প্রদায়িক শাসনতন্ত্র (লেইসিজম) এমন রাষ্ট্রের পথপ্রদর্শক মূলনীতি হতে পারে যার জন্মের আগে কোনো পূর্বনির্ধারিত অথবা পূর্বপরিকল্পিত অনুক্রম অথবা শাসনপ্রণালী ছিল না। কিন্তু পাকিস্তানের ব্যপারটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। পাকিস্তানের নীতি এবং শাসনপ্রণালী আগেই নির্ধারণ করা হয়েছিল। কায়েদ-ই-আজম ঘোষণা করেছিলেনঃ
‘আমাদের ভিত্তিপ্রস্তর এবং নোঙর হল ইসলাম।‘ তিনি আরও বলেছিলেন- ‘পাকিস্তান মানে শুধু স্বাধীনতাই নয় মুসলিম মতবাদও, যাকে সংরক্ষণ করতে হবে, যেটা আমাদের কাছে এসেছে একটি মূল্যবান উপহারস্বরূপ এবং যা আমরা আশা করি অন্যেরাও আমাদের সাথে ভাগাভাগি করবে।‘
এ কথাগুলো একটি জাতির কাছে পৌঁছে দ্রুত আবেগের প্রবণতা সৃষ্টি করেছিল, একটি মহান বিপ্লবের জন্ম দিয়েছিল, ক্যামোরিন অন্তরীপ থেকে হিমালয় পর্যন্ত মুসলমানদের সংহত করেছিল এবং তড়িতাহত করেছিল তাদের নায়কোচিত ত্যাগ ও কার্যের প্রতি। যদি সেকুলারিজম হত মূল ভাব, তাহলে পাকিস্তান নামের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র খোদাই করবার প্রয়োজন হত না, অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশই যথেষ্ট চওড়া ও খোলামেলা ছিল এই ভাবের উৎপাদন ও বাস্তবায়নের জন্য।
কাজেই এই যে সেকুলার জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র এবং সংযুক্ত নির্বাচকমণ্ডলীর কথা বলা হচ্ছে, এটি হবে পাকিস্তানের জন্মের আগে ও পরে ভারতের মুসলিমদের ওপর ওপর অকহতব্য দুঃখকষ্ট ও অবর্ণনীয় স্নেহ ভুলে যেয়ে আমাদের পাকিস্তানের মহান নায়ক ও স্থপতিদের স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে ছুঁড়ে ফেলার তুল্য এবং, আসলে, এটি হবে পাকিস্তানের ওপর নিন্দাজ্ঞাপনকারী ভোটের সমতুল্য।
Pakistan, forgetting the untold miseries and in describable affections which befalls the muslims of India just before and after the birth of Pakistan and, in fact, it will be equivalent to passing a vote of censure on Pakistan herself MR. SHEIKH MUJIBUR RAHMAN: opinion পাঠায় যে আমরা যুক্ত নির্বাচন চাই, না পৃথক নির্বাচন চাই- যিনি পৃথক নির্বাচনের পথে resoultion move করছেন তাঁর বক্তৃতা শুনেছি। তাঁর points শুনেছি। জনাব সুলতানুন আলমের বক্তৃতাও শুনেছি। কিছুদিন কি পৃথক নির্বাচন হবে। Constitution এ এই provision আছে যে সকল প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন প্রথা স্থির করে জাতীয় পরিষদের নিকট জানাবে। মিঃ স্পীকার, স্যার, অনেক আলোচনা আপনি শুনছেন, ইসলামী principle-এর কথা শুনেছেন। পাকিস্তান কেন চেয়েছিলাম? আমার একটি কথা মনে পড়ে; পাকিস্তান হওয়ার পূর্বে যারা এক জাতিত্বে বিশ্বাস করতঃ পাকিস্তান হওয়ার পর তারা দুই জাতিত্বে বিশ্বাস করছে। মিঃ স্পীকার, স্যার ইসলাম বিশ্বাস করে বিশ্বভ্রাতৃত্বে। আজকে একদল লোক খোদাকে ছোট করতে চায়। একমাত্র মুসলমানের আল্লাহ? দুনিয়ার মানুষের আল্লাহ নয়? এ সম্বন্ধে আলোচনা করতে চাই না। এইটুকু আলোচনা করতে চাই, যিনি দুনিয়ার মানুষের আল্লাহ, তিনি সমস্ত মানুষকে এক চক্ষে দেখেন। দুই জাতি, থিওরীর কথা বলতে বলতে কেউ বলেছেন পাকিস্তানে দুই জাতি আছে। জাতি হিসাবে যদি ধরা হয় তাহলে আমরা পাকিস্তানে ৫/৬/৭ জাতি আছি। তপশীলভুক্ত এক জাতি আছে। ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান যে হয়েছে সে সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করতে চাই। আজকে আমাদের এই পরিষদ থেকে opinion দিব যে এই প্রদেশ যুক্ত নির্বাচন চায়, কি পৃথক নির্বাচন চায়। জাতীয় পরিষদে যখন শাসনতন্ত্র প্রণয়ন হয় তখন সভাপতিত্ব করেছেন মিঃ গিবন। তিনি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ বিশ্বাস করেন না। তিনি আমাদের ইসলামী শাসনতন্ত্র পাশ করে দিয়েছেন। জাতীয় পরিষদের ৮০ জন সদস্যের মধ্যে ১২ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য ইসলামী শাসনতন্ত্রের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সেখানে হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ, একসঙ্গে ভোট দিয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র পাশ করেছে। এটা জায়েজ কিনা? মিঃ স্পীকার, স্যার, আমরা ধর্মের নামে যুগে যুগে exploit করেছি। এ সম্বন্ধে আলোচনা করতে চাই না। আমি practical দিক দিয়ে আলোচনা করতে চাই। যুক্ত নির্বাচন জায়েজ, কি না জায়েজ তা প্রমাণ করবার মত মৌলানা ওদিকে আছেন। তাঁরা বলেছেন যে, মুসলমানেরা একটা পৃথক জাতি এবং পৃথক নির্বাচন ছাড়া ইসলাম থাকতে পারে না, ইসলাম বাঁচতে পারে না। ইসলামের নীতি উপেক্ষা করলে ইসলামের মূলে কুঠারাঘাত করা হবে। আমরা সারা দুনিয়ার ৫০ কোটি মুসলমান বাস করি। পূর্ব পাকিস্তানে সাড়ে চার কোটি লোক বাস করে। ইন্দোনেশীয়ার ৭ কোটি মুসলমান বাস করে; সেখানে হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ আছে, সেখানে যুক্ত নির্বাচন। ইজিপ্টে মুসলমান ও খৃষ্টান আছে, সেখানে যুক্ত নির্বাচন টাকীতে প্রেসিডেন্ট মুসলমান, সেখানে যুক্ত নির্বাচন। ভারতে তিন কোটি মুসলমান হিন্দুদের সঙ্গে ভোট দেয়, সেখানে যুক্ত নির্বাচন। রাশিয়ার মুসলমানরা যুক্ত নির্বাচনে ভোট দেয়। দুনিয়ার সমস্ত জায়গায় মানুষ যুক্ত নির্বাচনে ভোট দেয়। আমরা যুক্ত নির্বাচনে ভোট দিলে কাফের হয়ে যাব? যখন জনাব সুলতানুল আলম চৌধুরী বক্তৃতা করছিলেন তখন আমরা চুপ করে ছিলাম। আমি এখন যুক্ত নির্বাচনের পক্ষে বলছি। আশা করি opposition আমার কথা শুনলেন। পৃথক নির্বাচন প্রস্তাব যদি পাশ হয়ে যায় আমরা দুনিয়ার সামনে হীন প্রতিপন্ন হয়ে যাব। এক বন্ধু বলেছেন, যখন আমরা ভারতে দশ কোটি মুসলামান ছিলাম তখন দুই জাতির ভিত্তিতে পাকিস্তান পেয়েছিলাম। ভাল কথা, যখন দেশ ভাগ হয়ে গেল তখন দশ কোটি মুসলমানের মধ্যে চার কোটি মুসলমানকে হিন্দুস্তানে ফেলে আসা হলো। যারা এক জাতিতে বিশ্বাস করেন তারা কেমন করে চার কোটি মুসরমানকে হিন্দুস্তানে পেলে আসলেন? তাঁরা বে-ঈমানী করে চার কোটি মুসলমানকে হন্দুস্ত নে ফেলে এসেছেন। দুই জাতির ভিত্তিতে পাকিস্তান এসেছে, তা নয়। এর পিছনে আর একটি জিনিষ ছিল। সেটা হচ্ছে ভারতীয় মুসলমানের আর্থিক দুরবস্থা। এই আর্থিক দুরবস্থা হতে মুক্তি লাভের সংগ্রামের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় আন্দোলন এসে পড়ে। চার কোটি মুসলমান ভারতে যুক্ত নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। আমরা এক জাতি দাবী করতে পারি, পৃথক নির্বাচন দাবী করতে পারি যদি চার কোটি মুসলমানকে এখানে আনতে পারি। পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রে যুক্ত নির্বাচন আছে, তারা তা মুসলমান বলে গর্ব অনুভব করে, তারা non-muslim হয়ে যায়নি। ইসলামের নামে জনসাধারণকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। এবং দুনিয়ার বহু মুসলমান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে qxz third grade, fourth grade GîÍÑŒ ofğoRo (OEIZEI আজ দুনিয়ার প্রত্যেক ইসলামী রাষ্ট্র 3rd grade, 4th grade রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। টাকী, ইজিপ্ট, সিরিয়া, ইরান, লেবানন, ইন্দোনেশিয়া- সব ইসলামী রাষ্ট্রে যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রচলিত। সে সমস্ত দেশের মুসলমানদের কথা চিন্তু করুন। পাকিস্তানে কথায় কথায় ইসলামের দেহাই দেওয়া হয়ে থাকে, কিন্তু মানুষের দুঃখের সীমা নাই। মানুষ খেতে পায় না, পরতে পায় না, গৃহহারা সর্বহারাথ-মিথ্যা bribery বেদম চলছে। ইসলাম তা নয়। প্রকৃত ইসলাম হ’ল যেখানে জুলুম থাকবে না, ঘুষ থাকবে না, দুনীতি থাকবে না, মানুষে মানুষে ঔষধ পাবে। আমার নাম মুজিবর রহমান- আমাকে কাজে দেখাতে হবে যে আমি মুসলমান এবং ইসলাম আমার ধম। আজকে এই হাউসে ৭২ জন minority সদস্য আছে। স্যার, আমি জানতে চাই যে, যদি যুক্ত নির্বাচন প্রথা গ্রহণ করা না হয় তাহলে কি পাকিস্তানে একটি Assembly-তে চলবে? পাঁচটা Assembly করতে হবে। হিন্দু-মুসলমান এক সঙ্গে ভোট দিলে যদি un-Islamic হয় তাহলে এই Assembly-CŞ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান এক সঙ্গে ভোট দেয় কেমন করে? স্যার আমরা হিন্দু-মুসলমান এক সঙ্গে ভোট দিয়ে আপনাকে এই হাউসের স্পীকার করেছি, হিন্দু-মুসলমান এক সঙ্গে ভোট দিয়ে Islamic Republic of Pakistan of:আজ পর্যন্ত যত আইন পাশ করেছি সবই হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে ভোট দিয়ে করেছি- আমি জানতে চাই, এই সমস্তই কি ইসলাম বিরোধী হয়েছে? আমার দেশের লোক অশিক্ষিত হতে পারে কিন্তু মুখ নয়। বুঝেই জনসাধারণ আজ যুক্ত নির্বাচনের পথে সমর্থন জানাচ্ছে। আমি বলতে চাই, স্যার এই হাউসে আমরা বসে আছিআমরা আইন পাশ করছি- আমরা debate করছি- হিন্দু-মুসলমান ভোট দিচ্ছি- খৃষ্টান ভোট দিচ্ছে-বৌদ্ধ ভোট দিচ্ছে- একত্রে আইন পাশ করছি। আমি আপনার মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করতে চাচ্ছি যে এই যে আইন সকল সম্প্রদায়ের লোক একসঙ্গে ভোট দিয়ে পাশ করলাম এটা কি Islamic আইন বল, না un-Islamic আইন হল? এই আইন সভায় যদি হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে বসে, একত্রে ভোট দিয়ে আইন পাশ করতে পারি, জনসাধারণ কেন একসঙ্গে ভোট দিতে পারবে না- জনসাধারণ কোন অপরাধে তা করতে পারবে না? স্যার, আর একটা প্রশ্ন করতে চাই- যারা যুক্ত নির্বাচনের বিরুদ্ধে জেহাদ শুরু করেছেন, তাদের কাছে একটা প্রশ্ন করতে চাই- বিশেষ করে মুসলিম লীগ বন্ধুদের কাছে জানতে চাই যে, এই যে National Assembly-র নির্বাচন হল- পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হুকুম দিলেন নির্বাচন যুক্তভাবে হবে। পূর্ব বাংলার ৪০ জন হিন্দুমুসলমান মেম্বার আমরা যুক্তভাবে নির্বাচিত হয়েছি। সেটা কি জায়েজ, না না-জায়েজ কাজ হয়েছে? তখন যদি মৌলানা আতাহার আলী সাহেব ঘোষণা করতেন যে এটা ইসলাম, কোরান এবং হাদীসের বিরোধী কাজ- এতে আমি শরীক হব না। তাহলে বুঝতাম যে তাঁরা সত্যিকারের আদর্শ নিয়ে সংগ্রাম করছেন। আজকে মৌলানা আতাহার আলী ফরিদ আহম্মদ সাহেব সেই National Assembly-র মেম্বার। স্যারআমার দ্বিতীয় পয়েন্ট হচ্ছে যে পৃথক নির্বাচন সমর্থকদের হিন্দু-মুসলমান একসাথে ভোট দিতে আপত্তি আছে, কিন্তু একসঙ্গে দশ কোটি মুসলমানের মধ্যে চার কোটি মুসলমানকে হিন্দুস্তানে ফেলে আসা হলো। যারা এক জাতিতে বিশ্বাস করেন তারা কেমন করে চার কোটি মুসরমানকে হিন্দুস্তানে পেলে আসলেন? তাঁরা বে-ঈমানী করে চার কোটি মুসলমানকে হন্দুস্ত নে ফেলে এসেছেন। দুই জাতির ভিত্তিতে পাকিস্তান এসেছে, তা নয়। এর পিছনে আর একটি জিনিষ ছিল। সেটা হচ্ছে ভারতীয় মুসলমানের আর্থিক দুরবস্থা। এই আর্থিক দুরবস্থা হতে মুক্তি লাভের সংগ্রামের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় আন্দোলন এসে পড়ে। চার কোটি মুসলমান ভারতে যুক্ত নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। আমরা এক জাতি দাবী করতে পারি, পৃথক নির্বাচন দাবী করতে পারি যদি চার কোটি মুসলমানকে এখানে আনতে পারি। পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রে যুক্ত নির্বাচন আছে, তারা তা মুসলমান বলে গর্ব অনুভব করে, তারা non-muslim হয়ে যায়নি। ইসলামের নামে জনসাধারণকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। এবং দুনিয়ার বহু মুসলমান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে qxz third grade, fourth grade GîÍÑŒ ofğoRo (OEIZEI আজ দুনিয়ার প্রত্যেক ইসলামী রাষ্ট্র 3rd grade, 4th grade রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। টাকী, ইজিপ্ট, সিরিয়া, ইরান, লেবানন, ইন্দোনেশিয়া- সব ইসলামী রাষ্ট্রে যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রচলিত। সে সমস্ত দেশের মুসলমানদের কথা চিন্তু করুন। পাকিস্তানে কথায় কথায় ইসলামের দেহাই দেওয়া হয়ে থাকে, কিন্তু মানুষের দুঃখের সীমা নাই। মানুষ খেতে পায় না, পরতে পায় না, গৃহহারা সর্বহারাথ-মিথ্যা bribery বেদম চলছে। ইসলাম তা নয়। প্রকৃত ইসলাম হ’ল যেখানে জুলুম থাকবে না, ঘুষ থাকবে না, দুনীতি থাকবে না, মানুষে মানুষে ঔষধ পাবে। আমার নাম মুজিবর রহমান- আমাকে কাজে দেখাতে হবে যে আমি মুসলমান এবং ইসলাম আমার ধম। আজকে এই হাউসে ৭২ জন minority সদস্য আছে। স্যার, আমি জানতে চাই যে, যদি যুক্ত নির্বাচন প্রথা গ্রহণ করা না হয় তাহলে কি পাকিস্তানে একটি Assembly-তে চলবে? পাঁচটা Assembly করতে হবে। হিন্দু-মুসলমান এক সঙ্গে ভোট দিলে যদি un-Islamic হয় তাহলে এই Assembly-CŞ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান এক সঙ্গে ভোট দেয় কেমন করে? স্যার আমরা হিন্দু-মুসলমান এক সঙ্গে ভোট দিয়ে আপনাকে এই হাউসের স্পীকার করেছি, হিন্দু-মুসলমান এক সঙ্গে ভোট দিয়ে Islamic Republic of Pakistan of:আজ পর্যন্ত যত আইন পাশ করেছি সবই হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে ভোট দিয়ে করেছি- আমি জানতে চাই, এই সমস্তই কি ইসলাম বিরোধী হয়েছে? আমার দেশের লোক অশিক্ষিত হতে পারে কিন্তু মুখ নয়। বুঝেই জনসাধারণ আজ যুক্ত নির্বাচনের পথে সমর্থন জানাচ্ছে। আমি বলতে চাই, স্যার এই হাউসে আমরা বসে আছিআমরা আইন পাশ করছি- আমরা debate করছি- হিন্দু-মুসলমান ভোট দিচ্ছি- খৃষ্টান ভোট দিচ্ছে-বৌদ্ধ ভোট দিচ্ছে- একত্রে আইন পাশ করছি। আমি আপনার মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করতে চাচ্ছি যে এই যে আইন সকল সম্প্রদায়ের লোক একসঙ্গে ভোট দিয়ে পাশ করলাম এটা কি Islamic আইন বল, না un-Islamic আইন হল? এই আইন সভায় যদি হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে বসে, একত্রে ভোট দিয়ে আইন পাশ করতে পারি, জনসাধারণ কেন একসঙ্গে ভোট দিতে পারবে না- জনসাধারণ কোন অপরাধে তা করতে পারবে না? স্যার, আর একটা প্রশ্ন করতে চাই- যারা যুক্ত নির্বাচনের বিরুদ্ধে জেহাদ শুরু করেছেন, তাদের কাছে একটা প্রশ্ন করতে চাই- বিশেষ করে মুসলিম লীগ বন্ধুদের কাছে জানতে চাই যে, এই যে National Assembly-র নির্বাচন হল- পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হুকুম দিলেন নির্বাচন যুক্তভাবে হবে। পূর্ব বাংলার ৪০ জন হিন্দুমুসলমান মেম্বার আমরা যুক্তভাবে নির্বাচিত হয়েছি। সেটা কি জায়েজ, না না-জায়েজ কাজ হয়েছে? তখন যদি মৌলানা আতাহার আলী সাহেব ঘোষণা করতেন যে এটা ইসলাম, কোরান এবং হাদীসের বিরোধী কাজ- এতে আমি শরীক হব না। তাহলে বুঝতাম যে তাঁরা সত্যিকারের আদর্শ নিয়ে সংগ্রাম করছেন। আজকে মৌলানা আতাহার আলী ফরিদ আহম্মদ সাহেব সেই National Assembly-র মেম্বার। স্যারআমার দ্বিতীয় পয়েন্ট হচ্ছে যে পৃথক নির্বাচন সমর্থকদের হিন্দু-মুসলমান একসাথে ভোট দিতে আপত্তি আছে, কিন্তু একসঙ্গে পাকিস্তানের খাতিরে, পাকিস্তানের ইনসাফের খাতিরে, পাকিস্তান রাষ্ট্রের খাতিরে আমি আমার বন্ধুদের অনুরোধ করব তাঁরা যেন এই Separate Electorate- 43 &R&R withdraw on হিন্দুরা যদি যুক্ত নির্বাচন চায় তাহলে মুসলমানদের আপত্তি থাকার কি আছে? আজ একজন লোক যদি তার অঞ্চলের গরীবের জন্য খাবার বণ্টন করে, মিথ্যা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে সে হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, আর খুষ্টানই হোক, সে মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারবে। জনসাধারণ তাঁকেই ভোট দেবে। সেইজন্য আমি বলছি যে আজ যখন minority যুক্ত নির্বাচন চায়, তখন মুসলমান জনসাধারণের আপত্তি থাকার কোন কারণ নাই। আজ মুসলমানরা যদি জনসংখ্যার শতকরা ৯০ জন হয়েও বলে যে আমাদের safe guard-এর জন্য Spearate Electorate হওয়া উচিত তাহলে দুনিয়ায় আর মুখ দেখানো যাবে না। ভারতে আমরা ৪০ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র ১০ কোটি মুসলমান ছিলাম। সেখানে আমরা minority ছিলাম সেইজন্য আমরা Spearate Electorate চেয়েছিলাম। আজ যদি আমরা শতকরা ৯০ জন হয়ে হিন্দুদের হাত থেকে বাঁচার জন্য Spearate Electorate চাই তাহলে লজ্জায় আর মুখ দেখানো যাবে না। আজ হিন্দুরা Spearate Electorate. STET SITTI safe guard-47 3IET, ETTA sifEER XII· ET EFI Spearate Electorate 5ΓΣ •II*, majority £T ET চাইতে পারি না। যদি চাই তাহরে দুনিয়ায় হেয় প্রতিপন্ন হয়ে যাব। আমি চাই পাকিস্তান একটি জাতি হিসাবে গড়ে উঠবে, পাকিস্তানে, পাঁচটি জাতি হবে না। যদি পাকিস্তানে পাঁচটি জাতি হয় তাহলে পাঁচটি Assembly House করতে হবে, পাঁচটি Speaker করতে হবে এবং ভোটাভুটি করে হিন্দুরা হিন্দু আইন, মুসলমানরা মুসলমান আইন, খৃষ্টানরা খৃষ্টান আইন আর বৌদ্ধরা বৌদ্ধ আইন করবে। Sir, আমরা বক্তৃতা শেষ হয়ে গেছে। আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই যে আমরা মানুষ এবং আমরা জানি যে ইসলাম একথা বরাবর বলে গেছে এবং কোরান মজিদের ভিতরও আছে যে do good to the people অর্থাৎ মানুষের মঙ্গল কর। মানুষের মঙ্গল করতে হলে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ থাকতে পারে না। তাই আমি বলি, দেশের জন্য, পাকিস্তানের জন্য, যে পাকিস্তানকে আপনারা ভালবাসেন, আমরা ভালবাসি, পাকিস্তানে দুই জাতির কথা বলে, তাই আজ Spearate Electorate 5RII আমি বলতে চাই যে, যুক্ত নির্বাচন দেশ, জাতি এবং পাকিস্তানের মঙ্গল করবে। কাজেই আপনারা
…
জনাব এ কে এম ফজলুল কাদের চৌধুরীঃ জনাব স্পীকার, মহোদয়, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যপারটিতে যাতে পাকিস্তানের প্রত্যেকেই সংশ্লিষ্ট। এই শতাব্দীর প্রথম দশক থেকে নির্বাচকমন্ডলীর যে ইতিহাস রয়েছে তা এখানে পুনরাবৃত্তি করা নিষ্প্রয়োজন।
এখন, এই দাবির পটভূমি কী? ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ লাহোরে পাকিস্তানের দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করেছিল যেহেতু মুসলিমরা একটি আলাদা জাতি। কায়েদ-ই-আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যিনি এই সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেছিলেন তিনি তার প্রেসিডেন্সিয়াল বক্তব্যে বলেছিলেন যে ভারতের মুসলমানেরা একটি আলাদা জাতি। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চ থেকেও ঘোষণা করেছিলেন যে মুসলিমরা আলাদা জাতি। ১৯৪৬ এর নির্বাচনে জানতে চাওয়া হয়েছিল নির্দিষ্ট ও পরিষ্কার সমস্যা সম্পর্কে- পাকিস্তান হোক বা না হোক- মুসলিম লীগ মুসলিম ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে কি না অথবা কংগ্রেস সম্পূর্ণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে কি না এবং রায় ছিল যে মুসলিম লীগ মুসলিম ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে এবং রায় ছিল পাকিস্তান-মুসলিম স্বদেশ গড়ে তোলার সপক্ষে।
কংগ্রেস অখণ্ড ভারত চেয়েছিল। জনাব, যদি যুগ্ম নির্বাচকমণ্ডলী থাকতো তবে ১৯৪৬ এর নির্বাচনে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়ই সংসদে ফিরে আসত এবং কোন পাকিস্তানের স্বপ্ন হয়তো আর দেখা হতো না। স্যার, এটা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের প্রদেশে অনুষ্ঠিত গণভোটেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে অধিকাংশ মুসলিমই পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়েছে। যদি যুগ্ম নির্বাচকমন্ডলী থাকতো তাহলে এখানে আমাদের মত অনেকেই এখানে সংসদে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে পারতো না এবং এখানে কোন পাকিস্তানই তৈরি হতো না। তাই, স্যার, আলাদা নির্বাচকমণ্ডলী পাকিস্তানের জন্মদাত্রী।
এখন, স্যার, আমি নিজেও পাকিস্তানের পক্ষে। সমগ্র আন্দোলনটার নেতৃত্বে ছিলেন কায়েদে আজম। তিনি এসেছিলেন এই দেশটাকে নেতৃত্ব দিতে। ১৯৪৮ সালের মার্চে তার মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন পাকিস্তান মুসলমান জাতির স্মারক এবং এটা এমনই থাকবে। জনাব, বিতর্ক চলছে যে কায়েদে আজম বলেছিলেন, মুসলমানেরা মুসলিম থাকবে না, হিন্দুরা হিন্দু থাকবে না। জ্বি জনাব, এটা সত্যি। এখন পর্যন্ত যদি অধিকার এবং সুবিধা বিবেচনায় আনি তবে পাকিস্তানের সকল নাগরিক হিন্দু আর মুসলমান উভয়ই আইনের কাছে সমান। তারা সমান সুরক্ষা লাভ করবে। এটা সঠিক কিন্তু এটা যুগ্ম নির্বাচকমন্ডলীর ব্যাপারটায় কোন প্রভাব ফেলে না।
স্যার, আমার বিজ্ঞ বন্ধু, জনাব মুজিবুর রহমান অন্যান্য মুসলিম দেশের সাথে তুলনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তাঁর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমার মন্তব্য হল, পাকিস্তান সৃষ্টির পটভূমি পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য। তাই, আপনি অন্য কোন দেশের সাথে পাকিস্তানের তুলন আকরতে পারেন না। অন্য কোন দেশ এমন ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে উঠে নি। তাই, তুলনার কোন প্রশ্নই এখানে উঠে না, স্যার। মিশরে ৯৫ শতাংশ মানুষ মুসলিম। ইরাকের জনসংখ্যা ৫০ লাখ যার ৯৮ শতাংশই মুসলিম। জনাব মুজিবুর রহমান যেমনটা বলেছেন, লেবাননে সংখ্যাটি ৩৫ লাখ, আসলে তা নয়। এটা আসলে ১৩ লাখ এবং তার ৭ লাখ হল মুসলিম। পাকিস্তানের পটভূমির মতো না হওয়াতে নির্বাচকমন্ডলী নিয়ে প্রশ্ন সেসব দেশে কোন সমস্যাই না। লেবাননে অনেক কিছুই সংরক্ষিত আছে। সিরিয়াতে তারা বিভিন্ন জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জনগণকে বিভক্ত করেছে। আমাদের ব্যাপারটা ওদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের ভারতের মতো কোন প্রতিবেশী দেশ নেই। ইন্দোনেশিয়ার কথাই ধরা যাক। তাদের কি ভারতের মত কোন প্রতিবেশী রাষ্ট্র আছে? ইন্দোনেশিয়া কি ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে? ইন্দোনেশিয়া কি এমন কোন দেশ থেকে জন্ম নিয়েছে যেখানে সকলে মিলে চেঁচিয়ে অখণ্ড ভারত তৈরি করে? না, না, স্যার, এমন তুলনা কোনভাবেই হয় না।
এখন, স্যার, আসুন দেখি যুগ্ম নির্বাচকমণ্ডলী তাদের ক্ষেত্রে কেমন ফলাফল নিয়ে আসে। আপনি ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সংবিধানে নির্বাচকমণ্ডলীর ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। ‘সংখ্যালঘু’ শব্দটা পৃথিবীর কোন দেশের এমনকি ভারতের সংবিধানেও নেই। সেখানে লেখা আছে ‘পশ্চাদপর জনগণ’। পাকিস্তানের সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ধরে নেয়া হয়েছে এই উপমহাদেশে দুইটি জাতি (বিরোধিতার আওয়াজ, বিরোধী দলের অসংকোচ প্রস্তাব)। প্রস্তাবনা অনুযায়ী সংখ্যালঘু এবং পশ্চাদ-পর জনগণকে আর বঞ্চিত জাতিদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। ‘সংখ্যালঘু’ শব্দটা দুইটি জাতির অস্তিত্বের পূর্বনিশ্চয়তা দেয়। মুসলিম ভারত পাকিস্তান চেয়েছিল আর হিন্দু ভারত চেয়েছিল অখণ্ড ভারত। হিন্দু ভারত থেকে অর্থ বিভাগে অনেক মানুষ রয়েছেন এমনকি আজ পর্যন্তও। (বিরোধী দলের ধ্বনিঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ)। স্যার, তারা বলেছিল, ‘না, ভারত মাতাকে দ্বিখণ্ড করা যাবে না। এ অসম্ভব।’ কংগ্রেস কেন যুগ্ম নির্বাচক মণ্ডলী চেয়েছিল সেটা বলি? স্যার, দ্বি জাতি তত্ত্ব থেকে পাকিস্তানের উৎপত্তি এবং কংগ্রেস এই দ্বি জাতি তত্ত্বকে ধংস করতে চায়। যাতে করে ভারত আর পাকিস্তান এক হয়ে যায়। স্যার, এই সংসদের একজন দায়িত্ববান মুসলিম সদস্য বলেছিলেন,
পূর্ব বাংলা একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র এবং পশ্চিম পাকিস্তান একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র, তারা সম্পূর্ণ দুটি আলাদা রাষ্ট্র। মহামান্য, যদি এটা এমনি হয়, তবে আমরা কেন পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে আছি, পশ্চিম বাংলার সাথে যাই।(সরকারী পক্ষ থেকে বাধা) মহামান্য, আমি তাদেরকে বাধা দেইনি, তবে তারা কেন আমাকে বাধা দেবে?
মহামান্য, এর ফলাফল নিয়ে কুমিল্লা নিবাসী আমারই এক মুসলিম সহকর্মী বলেছিলেন যে, যদি তুমি আলাদা নির্বাচন সূচনা কর, হিন্দুরা এতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং তারা কিছুই করতে পারবে না। আমি আমার ঐ বন্ধুদেরকে মনে করিয়ে দিতে পারি যে আমাদের কংগ্রেসের বন্ধুরা অন্ততপক্ষে নিজেদের বিলুপ্তির জন্য ভোট দেওয়ার মত অত বোকা না। তারা শুধুমাত্র তাদের ভবিষ্যতের জন্য তাদের বর্তমানকে বলি দিচ্ছে। (প্রতিপক্ষ হতে হ্যাঁ হ্যাঁ রব উঠল)। আমি আমার একজন অমুসলিম বন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলাম, যিনি কিনা প্রতিপক্ষ দলের একজন প্রতিনিধি, যে তারা কেন যুক্ত নির্বাচনের জন্য ভোট দিচ্ছে। সে বলেছে যে এটি তার পুত্রের জন্য বিনিয়োগ (অট্টহাসি উঠল)।
মহামান্য, এটা বলা হয়ে থাকে যে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিরাই সংসদের ভারসাম্য রাখে। এই অনুপাত ৩০৯ জনের মধ্যে ৭২ জন। বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা কত? ৪ কোটি ২২ লাখ। অমুসলিম জনসংখ্যা কত? ১ কোটি। তাদের বর্তমান অবস্থার তুলনায় তাদের প্রতিনিধির অনুপাত বেশী। তারা এম. এল. এ. হতে চায়না, তারা চায় তাদের স্বার্থ হাঁসিল হোক এবং তারা অভিজ্ঞতার দ্বারা এটা বুঝতে পেরেছে যে হিন্দুদের নয় মুসলিমদের দ্বারাই তাদের পূর্ণ স্বার্থ হাঁসিল হবে।
মাননীয় স্পীকারঃ থামুন থামুন, এটা সংসদে প্রতিপক্ষ দলের ভোটের উপর প্রভাব ফেলবে।
জনাব এ কে এম ফজলুল কাদের চৌধুরীঃ মহামান্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, সৌদি আরব এবং মিশর এই দেশগুলো নিয়ে গঠিত অটোমান সাম্রাজ্য যেটি একসময় মুসলিম জাতির দৃঢ় ভিত্তি ছিল সেটি আজ ক্ষমতার লোলুপ দৃষ্টির অভিসন্ধির ফলে ভেঙ্গে গেছে এবং খন্ড খন্ড হয়ে গেছে। এখন সিরিয়া আবার মিসরের সাথে পুনরায় যোগদান করতে চাচ্ছে। মহামান্য, পাকিস্তান হচ্ছে ইসলামিক আদর্শের পরীক্ষা- বলতে গেলে ইতিহাসের একমাত্র পরীক্ষা এবং আলাদা নির্বাচনী এলাকাই এই পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির মূল ভিত্তি। যদি এই ভিত্তি ভেঙ্গে যায় তবে পাকিস্তান ও ভেঙ্গে যাবে। মহামান্য, গোল টেবিল বৈঠকের সেই বিশাল বিতর্ক এবং দিল্লী ও সিমলার সেই বিশাল বিতর্কের পর এখন ১৯৫৬ সালে আবার যুক্ত অথবা আলাদা নির্বাচন প্রশ্নে পাকিস্তানে আবার সেই বিতর্ক শুরু হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ মুসলিম একটি আলাদা জাতি নাকি নয়। দুর্ভাগ্যবশত আমরা আজ সেই অবস্থানেই আছি।
স্পীকারঃ আলাদা নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে বলুন।
জনাব এ কে এম ফজলুল কাদের চৌধুরীঃ মহামান্য, ঠিক আছে, সংখ্যালঘুদের কোন গৌন উদ্দেশ্য নেই। ব্রাহ্মণ গোত্রের সাথে বিবাহিত হিন্দু গোত্র দ্বারা তাদেরকে রাজনৈতিক জীবন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং তাদেরকে কে নিয়ন্ত্রন করবে? যুক্ত নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঙ্খালঘুদের কোন প্রতিনিধি থাকবে না। তারা শুধুমাত্র উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হবে।
আপনি বলছেন যে মুসলিম এবং অমুসলিমরা হচ্ছে এক জাতি। এইক্ষেত্রে আপনি কিভাবে কাশ্মীর প্রশ্নের নিরাপত্তা পরিষদে যাবেন ? আপনি কিভাবে কাশ্মীরকে দাবী করবেন? মহামান্য, আজকের পত্রিকায় আপনি পাকিস্তান সরকারের কাশ্মীর বিষয়ক উপদেষ্টা বিচারপতি দীন মোহাম্মদের বিবৃতি দেখেছেন। তিনি বলেছেন কাশ্মীরে মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং আচরন, ধর্ম ও সংস্কৃতিতে তারা এক জাতি এবং পাকিস্তানের সাথে যুক্ত। তাদেরকে স্বাধীনতা ও দিতে হবে।আপনি যদি দ্বিজাতি তত্ব চালুর কথা বলে থাকেন, তবে কি যুক্তিতে আপনি নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসমূহকে মোকাবেলা করবেন।
জনাব, এটা সমর্থন করা হয়ে থাকে যে যৌথ নির্বাচকমণ্ডলী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বয়ে আনবে। কিন্তু ভারতের যৌথ নির্বাচকমণ্ডলী এবং ধর্মনিরপেক্ষতার দিকে লক্ষ্য করুন। সেখানে প্রায় প্রতিদিনই দাঙ্গা হচ্ছে এবং মুসলিমদের নির্যাতন ও হত্যা করা হচ্ছে। সুতরাং , জনাব, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আনার পরিবর্তে এটা সাম্প্রদায়িক উন্মত্ততা সৃষ্টি করবে এবং সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে এই দেশ অশান্তি এবং সাম্প্রদায়িকতার আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে।
এ কথাটিও বিতর্কিত যে, সৎ এবং দক্ষ মানুষেরা যৌথ নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। জনাব, ডঃ আম্বেদকর, ভারতীয় সংবিধানের লেখক, তিনি নিজেই নির্বাচিত হতে পারেন নি কারন তিনি একটি অস্পৃশ্য সম্প্রদায় থেকে এসেছিলেন। তিনি পরাজিত হয়েছিলেন এবং সংসদে তার কোন আসন ছিল না। যাই হোক, জনাব, যারা যৌথ নির্বাচকমণ্ডলী সমর্থন করছেন তাদের জানা উচিত যে যৌথ নির্বাচকমণ্ডলী পাকিস্তানের গঠনের মূল ভিত্তিকেই ধ্বন্স করে ফেলবে। পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী কারো ক্ষতি করবে না। জনাব, এই দেশ ধর্ম ভিত্তিক এবং এই দেশ অবশ্যই সেই আদর্শ পালন করবে যার জন্য পাকিস্তান রাষ্ট্র মুসলিমদের মাতৃভূমি হয়েছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্র মন্ত্রি বানানোর জন্য সৃষ্টি হয়নি। এটা ইসলামের আদর্শ পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি হয়েছিল। বিশ্বে এটাই মুসলিমদের পা রাখার সর্বশেষ রাষ্ট্র। বিশ্বে পাকিস্তানি একমাত্র রাষ্ট্র যাকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র বলা হয়। যদি আমার বন্ধুরা আমাদের আদর্শের সাথে রাজনৈতিক সুবিধার বিনিময় করতে চান আর তাও কেবল ক্ষমতা দখলের জন্যে, তাহলে পাকিস্থানের প্রতি তাদের বিশ্বস্ততা প্রশ্নের মুখে পরবে যেটা পাকিস্থানের জন্য কোন কাজে আসবে না। তাদের নাম ইতিহাসের অতলে চলে যাবে যারা সাময়িক সাফল্যের জন্যে পাকিস্তানের এই আদর্শের খন্ডন করতে চায়।
জনাব, পাকিস্থানের দুইটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হল পুর্ব পাকিস্থান এবং পশ্চিম পাকিস্থান । তারা একে অপরের সাথে মুসলিম জাতীয়তার ভিত্তিতে জড়িয়ে আছে। যদি আপনার এমন অনুভূতি হয় যে বাঙালিরা একটা জাতি এবং আপনার যদি যৌথ নির্বাচকমণ্ডলী থাকে, তাহলে পুর্ব বাংলা পাকিস্থান থেকে আলাদা হয়ে যাবে। কোন সাধারন চেতনা বা আদর্শের অনুপস্থিতিতে সেখানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অনুভুতি বেড়ে উঠবে যেটা পুর্ব বাংলাকে বরং পশ্চিমবঙ্গের সাথে জুড়ে নিতে চাইবে। জনাব, আমি প্রমান করে দিতে পারব যে যৌথ নির্বাচকমণ্ডলী যৌথ বাংলার সৃষ্টি করবে অর্থাৎ, পুর্ব পাকিস্থান পশ্চিমবঙ্গের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে।
জনাব বসন্তকুমার দাসঃ মাননীয় স্পীকার, বিতর্ক শুরু হবার পর যতদূর গড়িয়েছে তাতে করে আমি এই সংসদের বেশি সময় নিব না। অনেক বিষয় যা আমি বলতে চাইছিলাম তা ইতিমধ্যে বলা হয়েছে যৌথ নির্বাচকমণ্ডলীর সমর্থনে এবং ঐ নীতির বিরুদ্ধে। আমি আগ্রহের এবং মনোযোগের সাথে বক্তব্যগুলো শুনছিলাম যেগুলো যৌথ নির্বাচকমণ্ডলীর সমর্থনে বলা হয়েছে এবং তাদের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে এবং আমি সত্যিই সদস্যদের অভিনন্দন জানাই যারা এ বিষয়ে তাদের চমৎকার বক্তব্য রেখেছেন। যারা প্রস্তাবের পক্ষে বলেছেন তারা তাদের প্রবল উদ্দীপনা দেখিয়েছেন এবং এর পিছনে তাদের যে মনোবৃত্তি কাজ করেছে তাও এই সংসদের সামনে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু জনাব আমি দুঃখিত যে, এই সকল উদ্যম এবং অনুভূতি তাদের সত্যিকারের সমস্যাকে ভুলিয়ে দিয়েছে। তারপরেও আমি আমার মতামত এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে দিচ্ছি এবং আমি আপনার মাধমে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আবেদন জানাচ্ছি। জনাব, দৃষ্টিকোনগুলো যাচাইয়ের জন্যে জন্য আমি সেগুলো যুক্তির স্পষ্ট আলোতে দেখতে বলবো যেকোন অনুভূতি ও সংস্কারের বাইরে থেকে। এই সংসদের সামনে প্রশ্ন এটাই যে, জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের জন্য পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী থাকা উচিত কি না। আমি এখন সংসদকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে এই প্রশ্ন আমাদের সামনে এসেছে সংবিধান পুনর্গঠনের পরে ।
এই প্রস্তাবনার পক্ষে যতো বক্তব্য দেয়া হয়েছে তা থেকে দেশবিভাগের পুর্বেই ভারতে কিভাবে যৌথ নির্বাচন বনাম আলাদা নির্বাচন প্রশ্নের পটভূমি তৈরি হয়েছিল তা সুস্পষ্ট। এছাড়াও মুসলিমদের জন্য পাকিস্তান কেন দরকার এবং পাকিস্তান কেন সৃষ্টি হয়েছিল তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তারা দিয়েছেন। মহামান্য, কিন্তু সংবিধান গঠিত ও গৃহীত হওয়ার পর, এবং বিশেষত আমার সংখ্যাগুরু বন্ধুদের মাধ্যমে ইসলামিক সংবিধান হিসেবে আমি স্বীকার করতে পারি যে, ঐ সকল বক্তৃতায় যা বলা হয়েছে তা অপ্রাসঙ্গিক এবং প্রাসঙ্গিক হতে পারত যদি এই সংবিধান পাকিস্তানের ইসলামিক সংবিধান হিসেবে গঠিত হত। এইসকল এখন চাহিদার পুনরাবৃত্তি যেটা এখন সংবিধানে বদ্ধমুল হয়ে গেছে। সুতরাং আমি তাদের নিকট সংবিধানের বিভিন্ন ধারাগুলো পরীক্ষা করার আবেদন করব এবং তাদেরকে মূল্যায়ন করে আলাদা নির্বাচন প্রশ্নকে চলমান বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আলাদা নির্বাচন ব্যবস্থা কি চলতে পারে এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনের জন্য গৃহীত হতে পারে কিনা। মহামান্য, এই বিষয়কে গতিশীল করতে সিদ্ধান্ত নিতে আজ সকালে আপনি ঠিকই বলেছেন যে “যুক্ত নির্বাচন একটি সাধারন বিষয় এবং আলাদা নির্বাচন একটি ব্যতিক্রম”। (জনাব ফরিদ উদ্দিনঃ না মহামান্য, আপনি এমন বলেননি)। হ্যাঁ মহামান্য, আপনি এমন বলেছিলেন এবং এটা এমন কারন সংবিধানে দ্বিজাতি তত্ত্ব নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে এবং সেটি হয়েছে ইসলামী সংবিধানে কার্যকর করার জন্য, সেখানে যা দাবী করা হয়েছিল এবং যা করার দরকার ছিল তা হল সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের সদস্যদের তাদের জীবনধারা কুরান ও সুন্নাহ ভিত্তিক পরিচালনা করতে দেয়া যা সংবিধানে শক্ত ভিত্তি পেয়েছে এবং এটিকে একটা গনতান্ত্রিক সংবিধানে রুপ দেওয়াটাই আসল বিষয়। এখন সংবিধানের ধারাগুলো কি কি? সংবিধানে ইসলামিক ধারাগুলো যুক্ত করা হয়েছে এবং এর ফলে পাকিস্তানের মুসলিমরা এটিকে একটি ইসলামী সংবিধান হিসেবেই দাবী করতে পারে। আইনসভার মূলনীতির ধারায় আপনি দেখতে পাবেন যে, মুসলমানের কুরান ও সুন্নাহ ভিত্তিক রাষ্ট্র সকল ব্যবস্থা গ্রহন করবে, আর সেই স্বার্থে রাষ্ট্র মুসলমানদের সাহায্য করবে। তাহল কুরান ও সুন্নাহর ধারাগুলো আইনে পরিনত হবে সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু ধারা আছে, ১৯৭ ও ১৯৮ ধারা অনুসারে একটি কমিশন গঠন করতে হবে, সংবিধান কার্যকরের এক বছরের মাঝে রাষ্ট্রপতি দ্বারা কুরান ও সুন্নাহর ধারাগুলো পরিক্ষীত হবে এবং রাষ্ট্রপতির প্রতিবেদন অনুসারে কুরান ও সুন্নাহর কোন ধারাগুলো বলবৎযোগ্য ও কোনগুলো আইনে পরিনত হওয়ার যোগ্য। জাতীয় সংসদে যখন এই আইনগুলো উপস্থাপিত হবে তখন জাতীয় সংসদে মুসলিম অমুসলিম সদস্যদেরকে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে অমুসলিম সদস্যদেরকে আলাদা রেখে দ্বিজাতি তত্ত্ব যুক্তিসঙ্গত হতে পারে। আর সংবিধানের ধারার মাধ্যমে এই সংবিধানের অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। মহামান্য, এখানে আমি যে ধারাগুলো দ্বারা সংবিধানে যুক্ততা প্রতিষ্ঠিত হবে সেগুলো পেশ করছি। তারপর অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে আমরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে আলাদা হিসেবে নিতে পারি। উভয়পক্ষের প্রাদেশিক ও জাতীয় আইনসভার সদস্যদের নিয়ে গঠিত ইলেকটোরাল কলেজের দ্বারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। তখন তারা একসাথে ভোট দেবে এবং একজনকে রাষ্ট্রপতির জন্য নির্বাচন করবে। আর এখানেও দ্বিজাতি তত্ত্বের ধারনা বাস্তবায়িত হয়নি। এছাড়া এমন একটি ধারাও ছিল যে কেবল মাত্র কোন মুসলমানই রাষ্ট্রপতি হতে পারবে। এটা অন্য বিষয়। যদি সময়ের অনুমতি থাকে তবে আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত বলব।
আর সংবিধানের অন্যান্য ধারার উদ্দেশ্য হল প্রাদেশিক ও জাতীয় সংসদের সদস্যদেরকে এরুপ সিদ্ধান্ত গ্রহনে সক্ষম করা যেগুলোর লক্ষ্য হবে সম্পদের বৈষম্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসমতা যেগুলো জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ করে সেগুলোকে দূর করে একটি কল্যাণমূলক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
ঐ বিধিগুলো পাস করার সময় মুসলিম এবং অমুসলিম সদস্যরা অংশ নিয়েছিলেন। এইভাবে সেখানে সমান-সমান নাগরিকের মতো সদস্যদের কর্মকান্ডের ভেতরে সম্মীলন ছিল। তারপর জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদ গুলোতে সংবিধান চালনায় আইন প্রণয়নের জন্য সকল সদস্য একসাথে কাজ কাজ করবে এবং মুসলিম নাকি অমুসলিম এমন প্রশ্ন কখনোই উঠবে না। স্যার, এই হচ্ছে অবস্থান যে, ভোটাধিকারের ক্ষেত্রেও সম্মীলন যেমনঃ সমতা থাকবে, যা পাকিস্তানের সকল নাগরিককর্তৃক চর্চিত হতে হবে। এখন স্যার এই নির্বাচনী এলাকা সংক্রান্ত সমস্যাটা কি? এই সমস্যাটা আসলে ভোটাধিকার এবং এটি কিভাবে প্রয়োগ হবে তার সাথে যুক্ত। এখানে ভোটাধিকার বলতে আমরা নাগরিকের জাতীয় বা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচনের অধিকারের কথা বলছি। এখানে নির্বাচনী এলাকা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কি আমাদের দ্বিজাতিতত্ত্বের সূচনা করতে হবে? আমার এক বন্ধু এই প্রস্তাবের সমর্থনে বলেন যে সংবিধানে সংখ্যালঘুর কথা উল্লেখ করা আছে যেটি কোন সংবিধানে নেই এবং এটি দুই জাতিকে নির্দেশ করে। আমি মনে করি তা ভুল। স্যার, সংবিধানে আছে যে সকল সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু সমান এবং তাদের অধিকার হবে সমান। তাই সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু একই সমতলে রাখা হয়েছে। তাদের সমান অধিকার আছে। কিভাবে আপনি এই অধিকার কমিয়ে দিতে পারেন? তাদের মুসলিম-অমুসলিম সকল নাগরিকদের ভোট দেবার অধিকার আছে। গণতান্ত্রিক দেশে এটা একটা মৌলিক অধিকার এবং জাতিসংঘ এটাকে মানবাধিকার গুলোর একটি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এখন আমার এক বন্ধু আমার মনে হয় জনাব সিনহা জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত মানবাধিকার গুলো উল্লেখ করেন। পাকিস্তান নিজেও জাতিসংঘের সদস্য। এই ঘোষণা লিপিবদ্ধ হয় ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বরে এবং কায়েদ-ই-আযম ১৯৪৭ সালের ১১ই আগস্ট গণপরিষদের উদ্বোধনের দিন গণপরিষদে এই ঘোষণা দেন। পাকিস্তান তৈরির সাথে সাথে পাকিস্তান U.N.O এর সদস্যপদ লাভ করে এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধি সেখানে পাঠানো হয়। তারা সেখানে গিয়েছিল পাকিস্তানী জাতির সদস্য হিসেবে। আপনি যদি এই ঘোষণার প্রস্তাবনাগুলো পড়েন এবং এই ঘোষণা প্রচারের সময় প্রকাশিত উদ্দেশ্যগুলো পড়ে দেখেন, আপনি বুঝতে পারবেন এই ঘোষণা প্রস্তুতির পেছনের অপরিহার্যতা এবং এই ঘোষণাজারির সময় সর্বসম্মতি ছিল। যতদূর এই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, পাকিস্তানী প্রতিনিধি জোর করে চাপিয়ে দেয়নি যে পাকিস্তান আলাদা সমতলে আছেন। এটাও চাপিয়ে দেওয়া হয়নি যে এই দেশে দুই জাতি বাস করে এবং গণতান্ত্রিক দেশে ভোটাধিকার সংক্রান্ত ২১ নম্বর ঘোষণা প্রয়োগ সম্ভব নাও হতে পারে।
এখন, আমার বন্ধু জনাব সিনহা ঐ ঘোষণার কিছু অংশ পড়ে দেখেছেন। আমার এই ঘোষণাটা পুরোপুরি পড়া উচিত এবং এটা আপনাকে এই ঘোষণা কি সেটা সম্পর্কে ধারণা দিতে পাবে। ২১ ধারায় বলা আছে, “প্রত্যেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইচ্ছামত নেতা বাছাই করে সরকারের অংশ হিসেবে থাকার সমান অধিকার আছে।” দেশের সরকারী চাকুরীতে সবার সমান অধিকার আছে। মানুষের ইচ্ছাই হবে সরকারের কর্তৃত্বের মূলভিত্তি। এই ইচ্ছা নির্দিষ্ট সময় পরপর সুষ্ঠু নির্বাচনে সার্বজনীন এবং সমান-সমান ভোটাধিকারের সুযোগ দ্বারা প্রকাশিত হবে এবং গোপন ব্যলটে বা এর সমতূল মুক্ত ভোটিং প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে।
এখন স্যার, আমি “সার্বজনীন” এবং “সমান-সমান” শব্দদুটির দিকে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। এই শব্দদুটি আসলে কি সূচিত করে? বিশ্বজনীন মানে অপ্রাপ্তবয়স্কবাদে সকল মানুষ।
“সর্বজনীন” মানে হচ্ছে, সকল জনগনের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরন। অবশ্যই গৌণ জনগনদের বাদ দিয়ে, আর সেটা সঙ্গত কারণে। এ প্রসঙ্গ আসবে তখনি, যখন সকল প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য ভোট দিতে পারবেন এবং সকলে সমান ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবেন। সমান বলতে মূলত কী বুঝানো হচ্ছে? এটা সমান হবে পরিমানে ও গুরুত্বে। অন্যথায়, সমযোগ্যতা আসলে কোনভাবেই সমযোগ্যতা হবে না। এখন যদি একটি এলাকার নির্বাচকমন্ডলী নির্বাচনের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত নেয়, প্রত্যেক নাগরিক তাঁর যথাসম্ভব চেষ্টাটুকু করবে ভালো একজনকে বেছে নিতে এবং সে যদি চায় এমন একজনকেও বেছে নিতে পারেন যে কিনা তাঁর সমবিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়, সে এই অধিকারও রাখেন। কিভাবে আপনি এই অধিকারের সীমা নিয়ন্ত্রণ করবেন? যদি আপনি সেটা করেন, তাহলে মূলত আপনি ধ্বংস করবেন সে এলাকার নাগরিকদের সামষ্টিকতা, যার মধ্যে থেকে তাদের প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার কথা ছিলো। হিন্দুরা নির্বাচিত করবে হিন্দুদেরকে নির্দিষ্ট এলাকা বিশেষে এবং সে এলাকার মুসলমানরা মুসলমান প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে যার ফলেসেখানে বিভাজন তৈরি হবে আর সাম্য বিনষ্ট হবে যা(সাম্য) কিনা এই ঘোষণার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য। এটা তাঁর মৌলিক অধিকারকে প্রভাবিত করবে। একটা ছোট ঘটনার উদাহরনের মাধ্যমে নেয়া যাক। আপনি কি আইন প্রণয়ন করবেন; যখন একজন মুসলমান পরিবারের কোনো সদস্য অসুস্হ হন, তিনি কি কেবল একজন মুসলমান ডাক্তারকেই তাঁর সেবার জন্য ডাকতে পারবেন? তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সময়, তাঁর উচিত ভালো ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা, যিনি জাতীয় অথবা প্রাদেশিক প্রতিনিধি সভায় প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। তিনি যে কাউকে বেছে নিতে পারেন সে এলাকা হতে যাকে তিনি নির্বাচিত করবেন। তাঁরও আছে সমান অধিকার, এবং এই সমঅধিকার কোনভাবেই সঙ্কুচিত করা যাবে না। আলাদা নির্বাচকমন্ডলী তাহলে কী? এর মানে হচ্ছে, হিন্দুরা জাতীয় এবং প্রাদেশিক সভার জন্য হিন্দু সদস্য নির্বাচন করবেন এবং মুসলমানরা নির্বাচন করবেন মুসলমান সদস্য। এটা জাতিসংঘের ঘোষণায় যা বলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে যাবে এবং এটা সে ঘোষণার লঙ্ঘন স্বরূপ। এই ঘোষণায় যা বলা হয়েছে, তা নাগরিকদের স্বাভাবিক অধিকার যা তারা চর্চা করতে পারবেন। এখন, সংবিধান এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্র বিবেচনায় রাখলে এই প্রস্তাবনা প্রকৃতই অপ্রাসঙ্গিক কারণ তা সংবিধান এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের বিরুদ্ধে যায়। উভয়ের সংযোগ এখানেই এবং একজন নাগরিক তার অধিকার চর্চার সুযোগ পাবেন, হোক মুসলমান অথবা একজন হিন্দু। এই হলো অবস্হা। এই প্রস্তাবনা আমাদের কাছে আগে এসেছে সংবিধানের মাধ্যমে জারী হওয়া ১৪৫ নম্বর অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুসারে। আমি এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রদান করছি যে কীভাবে এটি আসলো। আমি সংবিধান-সভার একজন সদস্য ছিলাম এবং আমরা অমুসলিম সদস্যরা তীব্র লড়াই করেছি যাতে করে নির্বাচকমন্ডলী নিয়ে এই প্রশ্ন অবিলম্বে সংবিধান সভায় উঠে আসে।। যুক্তফ্রন্ট থেকে আমার বন্ধুবর্গ যারা আমাদের সমর্থন দিতে চেয়েছিলেন, শেষতক আর সমর্থন দেননি। যদিও তারা সমর্থন দেবার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন এবং আমাদের চাহিদা ছিল যৌথ নির্বাচকমন্ডলী এবং অস্পৃশ্য গোষ্ঠী সহ অনগ্রসর অন্যান্য শ্রেণির মানুষের জন্য সংরক্ষিত আসন। কিন্তু তারা আমাদের সাথে একমত হতে পারেন নি। ফলে, এই ব্যাপারটি স্থগিত হয়ে যায়। আমার সম্মানিত বন্ধু জনাব আবু হোসাইন সরকার এবং হাশিমউদ্দিন আমাকে এখানে টেলিফোন করেছিলেন। আমার সম্মানিত বন্ধু মিষ্টার দত্ত, এখন স্বাস্হ্য এবং চিকিৎসা মন্ত্রী, তিনিও তাদের সাথে তখন ঢাকায় ছিলেন, যখন আমাকে ফোন দেয়া হয়। তারা সবাই বলেছিলেন, ” ভালো হয় যদি যদি সংবিধান সভাতে বিষয়টার সুরাহা না হয়।। এটাকে প্রাদেশিক সভাতে নিয়ে আসেন এবং আমরা আপনাদের যৌথ নির্বাচকমন্ডলীর ব্যবস্থা করে দেবো ” শুধু তাই নয়, মিষ্টার শরকতের পাশাপাশি, আমার সম্মানিত বন্ধু আশরাফুদ্দিন চৌধুরী এবং আব্দুস সালাম খান করাচি গিয়েছিলেন আমাকে অনুরোধ করতে, আমি যেন প্রস্তাবনাটি মেনে নেই। কিন্তু আমরা আজ কী দেখতে পাচ্ছি? আমি তখন তাদের বলেছিলাম আমি সমস্যাটি বুঝতে পারছি, যদি আমরা এই অবস্হায় প্রাদেশিক সভায় এই ব্যাপারটি উপস্হাপন করি তাহলে দেশে সাম্প্রদায়িক বিপর্যয় দেখা দিয়ে বিক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে, এবং সাম্প্রদায়িক ঘৃণা এবং উন্মত্ততা প্রজ্বলিত হবে, এবং এটাই ঠিক আজ ঘটছে সমগ্র ঢাকা জুড়ে। শুধু তাই নয়, আমরা এরকম ঘটছে সেই তথ্য পাচ্ছি জেলা শহর গুলো থেকেও।
আপনি হয়তো বলতে পারেন যৌথ নির্বাচকমন্ডলী স্বাভাবিক এবং আমরা বলি কেন এর ব্যতিক্রম হওয়া উচিত; মূলত এর ব্যতিক্রমশীলতা গ্রহণের মাধ্যমে। আমার বন্ধু জনাব মুজিবুর রহমান সঠিক ভাবেই বলেছেন, সবখানেই এরকম যৌথতা রয়েছে। সে খুব স্পষ্টভাবে এবং চিত্তাকর্ষকতার সাথে দেখিয়েছেন যে, সবখানে এমনকি দশম সংসদেও যৌথ পদ্ধতি বিদ্যমান, যদি এই গতিতে গ্রহণ হতে থাকে তবে সেটা পক্ষপাতপূর্ণ হবে। এখন, জনাব, দুই জাতি তত্ত্ব বলতে কী বুঝানো হচ্ছে? যখন কুয়াইদ-ঈ-আজম তাঁর স্মরণীয় বিবৃতির মাধ্যমে সমগ্র অবস্হাটাকে বাস্তবসম্মত প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে তুলে ধরেছিলেন। তিনি বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। দুই জাতি তত্ত্ব প্রস্তাব করা হয়েছিল ইন্দো-পাকিস্তান মহাদেশকে বিভক্ত করার জন্য যেন পাকিস্তানকে পাওয়া যায়, যার জন্য তিনি অক্লান্তভাবে লড়াই করে গেছেন। কিন্তু কোন পাকিস্তানের জন্য তিনি লড়াই করেছিলেন? তিনি সেই পাকিস্তানের জন্য লড়াই করেছিলেন, যার জনগোষ্ঠী হবে কেবলমাত্র মুসলিম। সেখানে কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থাকবে না এবং সেটাই ছিল মূল পরিকল্পনা। অতএব, সে পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে যৌক্তিক চাহিদা রয়েছে জনগোষ্ঠীকে বিনিময় করার। তখন, স্বাধীনতার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল আগষ্ট, ১৯৪৮, কিন্তু ভারতবর্ষে লর্ড মাউন্টবেটেনের ভাইসরয় হিসেবে আবির্ভাবের পর, সেই তারিখকে রদবদল করা হয় এবং আমাদের স্বাধীনতা দিবস হয়ে যায় ১৪ই আগষ্ট, ১৯৪৭, এবং পাকিস্তান তৈরির মাধ্যমে জনগোষ্ঠী বিনিময় পরিত্যক্ত হয়। পাকিস্তান এবং ভারত নিয়ে এই প্রশ্ন সুরাহা করা হয় এবং এটি এমনভাবে সুরাহা করা হয়; যেখানে পাকিস্তানে কেবল মুসলমানরাই থাকেন না, সেখানে আরো থাকেন হিন্দু, খ্রিষ্টান, জৈন, বৌদ্ধ সহ আরো অনেক অনগ্রসর শ্রেণি। এই হলো পাকিস্তান যেটা তৈরি হয়েছিল। কুয়াইদ-ঈ-আজম সেটা চিন্তা করেছেন এবং তাঁর সর্বপ্রথম উদ্বোধনী সমাবেশে তিনি বলেন, “সবমিলিয়ে আমরা পাকিস্তানকে পেয়েছি। আমরা চেয়েছিলাম সংখ্যালঘুদের এড়িয়ে যেতে কিন্তু সেখানে সংখ্যালঘুরা রয়েছেন। আমরা এখন বুঝতে পারছি যে, যা ভেবে দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো তা আর প্রযজ্য নয়। অতএব, মিথ্যা উৎসাহে জনগণ অতীত ভুলে যাবে এবং ঝগড়া মিটিয়ে ফেলবে। “রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংযোগে ধর্মীয় কান্নাকাটি বাড়াবেন না।” তিনি আরো বিশেষ দিক উল্লেখ করে বলেন যে, ইংল্যান্ডে এখন কোনো প্রেসবিটারিয়ান বা ক্যাথলিক যাজকমন্ডলী পরিচালিত প্রশাসন নেই, যদিও তারা তাদের ধর্মীয় অবস্হানের জন্য লড়াই করেছিলেন। তারা সবাই এখন ব্রিটিশ নাগরিক। একইভাবে তিনি জনগনকে বলেছেন অতীত ভুলে যেতে এবং মনে রাখতে তারা সবাই এক জাতি এবং তিনি অতি গুরুত্বের সাথে বলেছেন, একদিন এমন সময় আসবে যখন সেখানে কোনো হিন্দু এবং মুসলিম থাকবে না; অর্থাৎ সেখানে একটি জাতি গঠিত হবে সব ধর্মীয় গোষ্ঠী মিলে। এখন, জনাব, কুয়াইদ-ঈ-আজমের এই উদ্বোধনী বিবৃতি যাচাই-বাছাই হয়েছিল বিশিষ্ট বিচারকমন্ডলী দ্বারা, এর সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে পাঞ্জাব গোলযোগের এবং এদের মধ্যে একজন বিচারক ছিলেন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, জনাব বিচারপতি মুনীর। তারা বলেন, “যদি আমরা কুয়াইদ-ঈ-আজমের আসল বাচন উপলব্ধি করি তাঁর উদ্বোধনী বিবৃতিটিতে; তাহলে আমরা নির্ধারন করতে পারি যে, এর মানে হচ্ছে এর মাধ্যমে তিনি জোর করে চাপিয়ে দিয়ে তৈরি করতে চাচ্ছিলেন এক জাতি বিশিষ্ট পাকিস্তান।” তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন, বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর সকল জনগন একত্রিত হবেন একটি জাতি হিসেবে; যাদের একটি রাজনৈতিক জীবন থাকবে এবং সেটা স্হাপন করবে দেশের কল্যান, যা কিনা ব্যাহত হবে যদি ধর্মীয় পার্থক্যগুলো সক্রিয় হয় রাজনৈতিক অধিকার বিবেচনার্থে। একটি জাতি সম্পাদিত হয় বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর একে অপরের সাথে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে, একে অপরের সাথে কাজ করে যাওয়া জনগনের উন্নতিবিধানের জন্য এবং পাকিস্তানের শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সুখের জন্য, যে কারণে দেশটি সঠিক ভদ্র অবস্হানে পৌঁছাবে জাতি হিসেবে, তিনি সেদিকেই জোর দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এখন কী নিরূপন করছি? সেই বক্তৃতাটিকে এখন বিকৃত এবং ভুল ব্যখ্যা দেয়া হচ্ছে তাঁর পূর্ববর্তী বিবৃতির মাধ্যমে যেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, অমুসলিম এবং মুসলিম দ্বারা দুই জাতি গঠন করার কথা বলে। দুই জাতির জাতীয়তার পার্থক্য নির্ধারনে নির্ণায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হবে আলাদা আলাদা পোশাক, খাদ্য, আচরন এবং ভাষা। কিন্তু তিনি কখনো বলেননি যে, এই পার্থক্যগুলো তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিনত করবে। তাঁর ধারণা ছিল যে, ধর্মীয় বিশ্বাসগুলোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব হতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের দূরে থাকা উচিত হবে।
এবং যদি তিনি দুটি জাতির কথা বলে থাকেন তবে তিনি অবশ্যই জোর দিয়েছেন মুসলিমদের একটি জাতি হয়ে থাকায়,তাদের জীবন কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা নির্দেশিত এবং তাদের স্বতন্ত্র আচরণ, ভাষা ও অন্যান্য প্রথা বজায় রাখার মাধ্যমে। তাদের কুরআন অনুসরণ করতে দাও,তাদের সুন্নাহ অনুসরণ করতে দাও সঠিকভাবে। অন্যান্য সম্প্রদায়ের কেউ তাদের ঠেকাতে আসবে না এবং কোনদিক থেকে কোন বাঁধাও আসবে না। হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মানুসারীদের তাদের নিজ নিজ ধর্ম সঠিকভাবে পালন করতে দেয়া হোক,যাতে তারা তাদের জীবন স্বীয় ধর্মীয় নীতিমালা অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারে। অতএব, স্যার,পাকিস্তানীদের রাজনৈতিক জীবন যতদূর সম্পর্কিত,আমি যা দেখালাম তাতে প্রকটিত যে দ্বিজাতিতত্ত্ব বিলুপ্ত। এখনো সেটির পেছনে লেগে থাকা আমাদের একটি অর্থহীন অবস্থান এ ফেলবে।আমরা জাতিসংঘে দুটি জাতি নই।আমরা সেখানে একক পাকিস্তানি জাতী। কমনওয়েলথভুক্ত সদস্যরাষ্ট্র হিসেবেও আমরা একটি জাতি। কিন্ত ইলেক্টোরেট এর প্রশ্নে আমাদের দুটি জাতি হয়ে থাকতে হবে এবং যৌথ ইলেক্টোরেট সম্ভবপর নয়। এর ফলাফল কী হবে? এর অর্থ সংবিধান কার্যকর করতে আমরা একটি জাতি,এমনকি সকল ইসলামিক বিধান পালনেও আমরা একটি জাতি, বহির্বিশ্বের কাছে আমরা একটিই জাতি কিন্ত অন্ত্যে আমাদের দুটি জাতি হয়ে যেতে হয় বিশ্বাস এর ভিন্নতায় যেগুলো ভিন্ন দলের আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার! এটি এমন অবস্থান,যা বহির্বিশ্বে আমাদের সম্মান আক্রান্ত করার পাশাপাশি স্বদেশ এ আমাদের জীবন এ অশুভ ফলাফল বয়ে আনবে। অমুসলিমদের চিরস্থায়ী সংখ্যালঘু এবং অপ্রধান রাজনৈতিক স্বত্বা হিসেবে প্রকাশ করে এটি ধর্মীয় ভেদাভেদ এমন জোরানো করবে,যা পাকিস্তান এর পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। জনগণ কে জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একত্রে কাজ করতে হবে পাকিস্তান এর উন্নতির স্বার্থে।কিন্ত স্যার,ভিন্ন ইলেক্টোরাল এর মত এমন অংশ বিভক্তি এটিকে মর্মান্তিক ভাবে ব্যাহত করবে। এখন,স্যার,আমার বন্ধুদের অনেকেই এমন অনেক কিছু বলেছেন যা দ্বারা তারা বিভিন্ন উদ্দেশ্য আরোপ করেছেন।অবশ্যই স্যার,আমিও বেশ ভালভাবেই তাদেরকে তাদেরই উপায়ে প্রতিউত্তর করতে পারি।কিন্ত আমি বলছি যে আমি তা করব না।স্যার,আমি নিবেদন করছি যে,উদ্দেশ্য আরোপ,তর্কবিতর্কের দুর্বলতম অংশ।আমি উন্নততর কারণ দ্বারা প্রতিঘাত করতে সক্ষম। কিন্ত আমি তা করব না।তবে আমি একটি ব্যাপার নিবেদন করতে চাচ্ছি যা ভিন্ন ইলেক্টোরেট এর সূত্রধার।এখন,স্যার,একজন মৌলানা আছেন,অর্থাৎ মৌলানা মওদুদী যিনি পূর্ব পাকিস্তান ভ্রমণ করেছেন এবং ভিন্ন ইলেক্টোরেট এর জন্য প্রচারণা করেছেন।তিনি বলেছিলেন যে,যৌথ ইলেক্টোরেট গৃহীত হলে পাকিস্তান ধ্বংস হয়ে যাবে।তিনি বই লিখেছেন যেখানে তিনি উদ্ভট অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।তিনি বলেছেন যে,পাকিস্তান এ অমুসলিম দের দায়িত্বশীল পদ অধিকৃত করবার কোন অধিকার নেই এবং নারীদের ও এসকল পদ অধিকৃত করার অধিকার নেই।যদি নারীদের আইনপ্রণেতা হিসেবে নির্বাচিত হবার অধিকার দেয়া হয় তবে তাদের জন্য একটি ভিন্ন আইনসভা থাকতে হবে যেখানে তারা তাদেরকে আক্রান্ত করে এমন সব বিষয়ে আলোচনা করবেন।তারা হয়ত অন্যসব বিষয়েও আলোচনা করবেন এবং নিজেদের সিদ্ধান্ত পুরুষদের আইনসভায় জমা দিবেন।ভিন্ন আরেকটি অনুচ্ছেদ এ তিনি এও বলেছেন যে,সংখ্যালঘু দের জন্য আলাদা ইলেক্টোরেটই একমাত্র জিনিস,যা তাদের কে কোন দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত হতে বাধা দিবে এবং ফলস্বরূপ এই অধিকার পাওয়ার জন্য ধীরে ধীরে তারা ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করবে।এ হল সেই বই এর বক্তব্য।আমার কোন বন্ধু সেটি দেখতে চাইলে,দেখাতে পারি।অতএব, আপনি যদি উদ্দেশ্য আরোপ করেন তবে আমি বলতে পারি যে,আপনি মাওলানা মওদুদীর ন্যায় একই উদ্দেশ্যে ভিন্ন ইলেক্টোরেট এর দাবি জানাচ্ছেন। বলা হচ্ছে,যদি যৌথ ইলেক্টোরেট দেয়া হয়,
পাকিস্তান ধ্বংস হয়ে যাবে। এটার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই, এটা কেবলই তাদের সুখকল্পনা মাত্র। স্যার, এ বিষয়টা নিয়ে আমাদেরকে অনেক কুকথা বলা হয়েছে। কংগ্রেসের লোকেরা এটা নিয়ে এত চিৎকার-চেঁচামেচি করেছে যে, এর অন্তসারশূন্যতা প্রমাণে আর কিছু লাগে না। মহোদয়, আপনাকে আমার এ কথা বলতেই হবে, আমরা এটাই বিশ্বাস করি, পাকিস্তান মুসলমানদের দাবির প্রেক্ষিতেই সৃষ্টি হয়েছে। আর ভারতীয় কংগ্রেস সব সময় সমগ্র ভারতীয়দের একটি একক জাতি হিসেবে দেখতে চায় এবং ঐক্যের জন্য এটা প্রয়োজনীয় এমনটাই দাবি করে। কংগ্রেসের লোকেরা দেশবিভাগের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদেরকে নতি স্বীকার করতে হয় এবং তারা পাকিস্তানের অভ্যুদয়কে মানতে বাধ্য হয়। যদি কংগ্রেস একমত না হত তা হলে পাকিস্তানের জন্ম হত না। তারা একমত হয়েছে আর সেজন্যই পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে (‘না, না। আমরা লড়াই করে পাকিস্তান কায়েম করেছি।’ ধ্বনিতে চিৎকার)। হ্যাঁ, আমরা লড়াই করেই পাকিস্তান এনেছি। এটা অস্বীকার করা যাবে না। সুতরাং, আমরা যারা পাকিস্তানে রয়ে গেছি তারা মনে করি যে, পাকিস্তানকে জাতিপূঞ্জের মধ্যে তার যথাযোগ্য মর্যাদার স্থানে নিয়ে যাওয়াটা আমাদের নৈতিক কর্তব্য। মহোদয়, আমি আমার হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে মনে করি যে পাকিস্তানের অভ্যুদয় ছিল নায্য। যখন আমি আমার চারিপাশে তাকাই, তখন দেখি যে, প্রশাসন মূলত মুসলমানে পরিপূর্ণ এবং তাদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে। আমার প্রত্যয় হচ্ছে, আমার মুসলমান ভায়েরা তাদের নিজেদেরকে খুঁজে পেয়েছে। যখন আমি দেখি অনেক অনেক তরুণকে, তাদের কাজেকর্মে ভীষণ উদ্দীপনা, চোখেমুখে সেই দীপ্তি পরিস্ফূট হচ্ছে। এমনকি তাদের অনেকে উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্রবাসেও যাচ্ছে। আমি অনুভব করি যে পাকিস্তানের অভ্যুদয় ছিল নায্য। পাকিস্তান রাষ্ট্রটির ব্যবস্থাপনা সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে না কি এখানে অব্যবস্থাপনা রয়েছে, না কি ব্যবস্থাপনায় অবহেলার ছাপ রয়েছে, সেটা ভিন্ন বিষয়। আসল কথা হল, পাকিস্তান এখন একটি অস্তিত্ব এবং এটি টিকে থাকবে। এ বিষয় নিয়ে কেউই দ্বিমত করতে পারবে না। এমনটা বলা হয়েছে যে, যারা সংযুক্ত নির্বাচনী ব্যবস্থা চায় তারা পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম বাংলার সাথে একত্রিত করতে চায়। আমি আপনাকে বলছি, মহোদয়, এটা সম্পূর্ণই কল্পনা এবং গালগল্প। যেমনটা তারা শতমুখে বলে বেড়াচ্ছে, পশ্চিম বাংলা এবং পাকিস্তানের পূর্ব বাংলার মধ্যে সেই ধরণের কোনো ইউনিয়ন গঠিত হতে পারে না।
এখন, মহোদয়, গণপরিষদের বৈঠকে এমন একটি বিতর্কে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার জনাব মোহাম্মদ আলী যখন এই ধরণের আশংকার কথা বলছিলেন, আমার বন্ধু জনাব ভূপেন্দ্র দত্ত জনাব মোহাম্মদ আলীকে বললেন, “আপনি আপনার বড় ভাইয়ের (জনাব নেহেরু) কাছে যান আর সোনার থালিতে করে তাকে পাকিস্তান উপহার দিয়ে আসেন, দেখেন তিনি কী করেন।” এই হল প্রকৃত অবস্থা। পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম বাংলার সংযুক্তির একটি অভিসন্ধি আছে, এই কথা বলার একটাই অর্থ, মানুষকে ভুল বোঝানো। আমি দৃঢ়তার সাথে বলি, এটা শুধুই একটা কল্পনা।
এখন মহোদয়, ঐতিহাসিক ঘটনার বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমি কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরব, যার উদ্ধৃতি আমি পূর্বে দিয়েছি। এমনটা বলা হয়ে থাকে যে, কায়েদ-এ-আযম বরাবরই পাকিস্তানের জন্য পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী চেয়ে এসেছেন। এটা সঠিক নয়। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় আইনসভার সদস্য হিসেবে কায়েদ-এ-আযমের সান্নিধ্যে আসার। ১৯২৮ সালের কংগ্রেস সেশনে ভারতীয় স্বাধীকার সংক্রান্ত ‘নেহেরু রিপোর্ট’ নিয়ে যে কনভেনশনটি অনুষ্ঠিত হয় সেটিতে আলোচনার সময় তিনি বার্তাবাহককে যে কথা বলেছিলেন সেটি থেকে আমি তার মনোভাব জানতে পারি। কিছু কিছু বক্তৃতায় তিনি পরিস্কারভাবে বলেছিলেন যে, “পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থার সাথে আমার কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই।” সেটা ছিল ১৯২৭ সালে। চার বছর পর, ১৯৩১ সালের ৮ আগস্ট, যখন তার বহুল আলোচিত ১৪ দফা প্রণয়ন হয়ে গেছে, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য সাংবিধানিক সুপারিশগুলি তৈরি হচ্ছে, তিনি এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত উত্তর প্রদেশ সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, “এখন আমাদের সামনে যে বিষয়টি এসেছে, তা হল, পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থা না সংযুক্ত ব্যবস্থা। আমি বিশ্বাস করি যে, যদি পাঞ্জাব এবং বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মত এমনটা চায়, তা হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত নির্বাচনী ব্যবস্থার মধ্যে সমাধানকেই সমর্থন করব।” তিনি আরও বলেছিলেন, “আমার অবস্থান হল, পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার সেই ভ্রান্তিকর সমাধানকেও আমি সমর্থন করব এই প্রত্যাশায় যে, যখন আমাদের নিজেদের সংবিধান হবে, যখন হিন্দু ও মুসলমান নাগরিক সত্যিকার মুক্তি লাভ করবে, তাদের মধ্যেকার পরস্পর সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং ভীতি থেকে মুক্ত হবে, তারা সেই সময়ের চাহিদাকে ধারণ করতে সক্ষম হবে। আর সম্ভবত, আমরা এখন যা ভাবছি, তার অনেক আগেই পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটবে।” এখন মহোদয়, পাকিস্তানে, পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থার অধীন হিন্দু এবং মুসলমানের মধ্যেকার সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং ভীতি মোটেই দূর হবে না বরং তা অন্তহীনভাবে প্রবাহিত হতে থাকবে।
নির্বাচকমন্ডলী আশা এবং বিশ্বাস করেন যে যখন আমাদের সংবিধান আছে, এবং হিন্দু মুসলমান উভয়ই অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং ভয় হতে পরিত্রান চায় এবং যখন তারা তাদের স্বাধীনতা পাবেন তারা ঐ উপলক্ষে সম্ভবত নির্বাচকমণ্ডলী পৃথককরণের দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে পারেন যা আমরা সকলেই চিন্তা করেছি। “এখন, জনাব, পাকিস্তানে মুসলমান এবং হিন্দুদের মধ্যকার অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং ভয় যাবার নয়, বরং তা আলাদা নির্বাচকমণ্ডলী প্রতিশ্তহার মাধ্যমে চিরস্থায়ী হয়ে যাবে।
এখন জনাব, এই হল পরিস্থিতি। এখানে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় হলেন মুসলমান। তারা আলাদা নির্বাচকমণ্ডলী চাচ্ছেন। এখন এই পরিস্থিতি কেউ বুঝতে চাইছেন না। এই হল আমার উপস্থাপন এবং আমি আইন সভার কাছে আবেদন করছি, এই ব্যাপারে যেন নিরাবেগ ভাব দেখান হোক এবং ধিরস্থির ভাবে বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যে আলাদা নির্বাচকমণ্ডলী আমাদের আকাঙ্খিত কিনা।
জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ: জনাব স্পিকার, জনাব
রাজনীতিতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হইয়াছে। এই জটিল ও বিতর্কমূলক বিসয়টাকে যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণঃ রাজকঃনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ বলিয়া মনে করিতে হইবে তারা গোড়াতেই বলিয়া রাখা দরকার যুক্ত নির্বাচন অথবা পৃথক নির্বাচন এই প্রশ্নটি কতিপয় বুদ্ধজীবীর মস্তিষ্কপ্রসূত এককদিনের একটি ঘটনা নহে, অথবা উহাকে খেয়ালীর খেয়াল বলিয়াও আখ্যা দেওয়া চলে না পাকিস্তান লাভের পর পাকিস্তানে:বিশেষ করিয়া পূর্বকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তানে জনগণের মুক্তি সাধনার যে কঠোর সংগ্রাম চলিয়া আসিতেছেল, সেই কঠোর সংগ্রামের স্বাভাবক নিয়মেও প্রয়োজনের তাগিদে এই বিতর্ক বীজ জন্ম দিয়াছে । পাকিস্থানঃলাভের সাথে সাথে নির্বচন পদ্ধতির প্রসঙ্গটি কাহাকেও তত ভাবাইয়া তুলিতে পারে নাই । তাহার কারণ ছিকল এই যে; পাকিস্তানে অগণতান্ত্রিক রাজনীতির বিজয় পতাকা মুসলিম লীগ বহুদিন পর্যন্ত নির্বিঘ্নে উড়াইতে পারিয়াছিল । কিন্তু দীর্ঘ নয় বচরে পাকিস্তানের জনঘণ হতাশা, দু:খ লাঞ্ছনা ও অত্যাচারের ভিতর দিয়া অনেক শিখিয়াছে। জনগণের চিন্তাধারার আমূল পরিবর্তন সাধিত হইয়াছে। জনগণ গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করিতেও শিখিয়াছে। জনগণের চিন্তার এই বিকাশ প্রতিফলিত হইয়াচে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে, ইতিমধ্যে পাকিস্থানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওামী লীগ তাহার দ্বার জাতি ধর্ম বির্বিশেষে সকলের জন্য উন্মুক্ত করিয়াছে অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান Repubican party, আজাদ পাকিস্থান পার্টি, গণতন্ত্রীদলের জন্ম হইয়াছে। এইঃঅসাম্প্রদায়িক কারণের ধারা কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধতা থাকে নাই ছাত্র ও যুব পতিষ্ঠানের মধ্যেও দেখা দিয়াছে। যবলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রীসংসদ অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়িয়া উঠিয়াছে। অন্যতম বৃহত্তম ছাত্র প্রতিষ্ঠান ছাত্রলীগকেও অসাম্প্রদায়িক করা হইয়াছে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্থান এই উভয় অঞ্চলের পার্লামেন্টারী রাজনীতিতে অম্প্রদায়িক গুরুত্ব লাভ করিয়াছে। পূর্ব পাকিস্থানের সরকার বিরোধী দলসমূহের কোয়ালিককশন গঠনে যুক্ত নির্বাচন গ্রগণ্য হইয়া দাড়াইয়াছে। পাকিস্থানের জাতীয় পতাকা নির্বাচনের সময় পতাকার চার অংশের এক অংশ সাদা রং এ রঞ্জিত করিয়া শাসকবর্গ এই সাম্প্রদায়িককতার সমাধান চাহিয়াছিলেন । সুতরাং যুক্ত নির্বচন প্রশ্নটি নিছক একটি পরিষদ ভবনের বিতকের্কর পরিণতি বলিলে ভুল হইবে। পাকিস্থনের জনগণেওঁক্যের সূচনা এই যুক্ত নির্বাচন। এই দীর্ঘ নয় বৎসরের সংগ্রামের অভিজ্ঞতলদ্ধ জনগণের যাত্রাপথে ইহা একটি শুব ইঙ্গিত। পাকিস্থানের ভবিষ্যৎ সমাজ জীবনের ইহা এক নব অধ্যায়। পৃথক নির্বাচন যে সমস্ত দল সমর্থন করিয়াছে, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ; জামাতে ইসলাম, জামায়তে ইসলাম প্রভৃতি দল তাহদের অন্যতম। ইহা ছাড়াও কতিপয় গ্রুপ ও ব্যক্তি পৃথক নির্বাচনের প্রতি সমর্থন জানাইয়াছেন। অসংখ্য পুস্তিকা ও যুক্তির জাল দ্বারা পৃথক ৰ্বিাচনের সমর্থনে জনমত সৃষ্টি করিবার চেষ্টা করিতেছেন। পৃথক নির্বাচনের সমর্থকদের প্রধান যুক্তি এই যে, পাকিস্তান লাভের পিছনে যে দুই জাতিতত্তব ছিল, পৃথক নির্বচন মনিয়া না লইলে, এই জাততত্ত্ব ধ্বংস হইয়া পাকিস্থান লাভের মূল উদ্দেশ্যের ভিত্তির উপর আঘাত হানিবে। অর্থাৎ পাকিস্থানের হিন্দু ও মুসলমান, এদের পাকিস্থানের দুইটি জাতি হিসেবে বিভক্ত করিয়া
না রাখিলে পাকিস্তানের অস্তিত্ব বজায় থাকিবে না। “পাকিস্তান লাভের জন্য তাহা হইল আমাদের সংগ্রাম করা বৃথা হইয়াছে। হিন্দু-মুসলমান যদি এক জাত হিসাবে পরিগণিত হয়, তাহা হইল অদূর ভবিষ্যতে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান এক হইয়া যাইবে” ইত্যাদি। এইখানেই তাহারা ক্ষান্ত হন নাই, ইতিমধ্যে তাহারা ইহাও বুঝিতে পারিয়াছেন যে, “যুক্ত নির্বাচনের সমর্থকরা বাহিরে স্বার্থেই রাষ্ট্রের এই শত্রতা করিতেছে- ইসলামকে বিপন্ন করিতেছে”। ইহাই পৃথক নির্বাচনের সমর্থকদের সবচয়ে “মূল্যবান” বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। ইহা ছাড়া অন্যান্য যে, যুক্তি তাহারা দিয়া থাকেন সেগুলো হইতেছে “মুসলমানরা বোকা; সুতরাং হিন্দুরা সংখ্যায় অল্প হইলেও যেহেতু তাহারা বুদ্ধিমান, সেহেতু মুসলমানদের নির্বাচনে জয়লাভ করার কোনই আশা নাই। মুসলমানদের উপর ইসলামের রক্ষকদের কি অপূর্ব শ্রদ্ধা! পৃথক নির্বাচনের সমর্থকগণ তাদের দাবীর সমর্থনে যে সমস্ত যে যুক্তি দিয়া থাকেন, তাহ মোটামুটিরভাবে এরূপ। এখন আমাদের বিচার করিয়া দেখিতে হইবে যে তাহদের দাবীগুলো পূরণ করা হইলে পাকিস্তানের মঙ্গল হইবে কিনা। যুক্ত নির্বাচনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোপ ও সন্দেহ সৃষ্টি করার আয়োজন চলিতেছে, তাহা নিছক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার প্রয়াস ইহা নিঃসন্দেহে বলা যায়। একথা সত্য যে পাকিস্তান লাভের পিছনে কায়েদে আযম জিন্নাহর দুই জাতিতত্ত্ব কাজ করিয়াছে। কিন্তু পাকিস্তান লাভের পিছনে উহাই সব নহে। পাসিতান লাভের পর কায়েদে আযম জিন্নাহও দৃঢ়তার সহিত ঘোষণা করিয়াছেন যে, “আজ আর হিন্দু , হিন্দু নহে; মুসলমান; পারিয়াছিলেন যে, সাম্প্রদায়িকতার অবসান না হইলে পাকিস্তানের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হইয়া যাইবে। দীর্ঘ দুই শত বৎসরের সাম্রাজ্যবাদী শোষণে জনগণের জীবনে যে চরম সংকটের সৃষ্টি হইয়াছিল, জনগণ সেই সংকট হইতেই মুক্তি চাহিয়াছিল। এবং জনগণের এই মুক্তির আকাঙ্খাই জনগণকে পাকিস্তান লাভের প্রেরণা যোগাইয়াছে। ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগও খাদ্য সমস্যা, জমিদার প্রথা, ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রভৃতি জনসমস্যার মূল দাবীগুলিকে উত্থাপন করিতে হইয়াছিল। জনগণ ইহাই বিশ্বাস করিয়াছিল মুসলিম লীগ আজ পর্যন্ত দুই জাতিতত্ত্বকে প্রচার করিয়া আসিতেছে। কিন্তু জনগণ মুসলিম লীগকে তবুও নির্মুল করিয়াছে। ইহার একমাত্র কারণ এই যে, মুসলিম লীগ জনগণের মূল সমস্যার কোনই সমাধান করে নাই। ইহা আজ নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, জনগণের সমস্যার সমাধান হইবে পাকিস্তান লাভের পিছনে জনগণের এই বিশ্বাস কাজ করিয়াছে। এই বিশ্বাসর তাৎপর্য লীগ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করিয়াছিলেন, তাই জনগণের মুক্তি এই তীব্র আকাঙক্ষা অদূর ভবিষৎতে শোষক নেতৃত্বের শোষণ যন্ত্রকে নির্মুল করিবার পথে পরিচালিত হইতে পারে সেই আশংকা “মুসলিম স্বার্থকে বজায় রাখার প্রয়াস পাইয়াছে। পাকিস্তান লাভের পরে দুই জাতিতত্ত্ব দ্বারা পাকিস্তানের জনগণকে দুইটি ভিন্ন জাতিতে পরিণত করা এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থায় উহাকে রূপদান করার প্রয়াস পাকিস্তানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করিবে। দুই জাতিতত্ত্ব পাকিস্তান নতুবা হিন্দু ও মুসলমানকে যদি পাকিস্তানের ভিতর দুইটি স্বতন্ত্র জাতি হিসাবে পরিগণিত করা হয় তাহা হইলে দুই জাতিতত্ত্বের পন্ডিতবর্গের সামনে মাত্র একটি পথই খোলা থাকিবে। সেইটি হইতেছে , এই “হিন্দু জাতির” জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তানে একটি অংশকে ছাড়িয়া দেওয়া, হিন্দুরা এই “ইসলামের রক্ষকদের নিকট ন্যায়তঃ ও যুক্তসঙ্গতভাবে দুই জাতিতত্ত্বে ভিত্তিতে তাহদের আবাসভহমি দাবী করিতে পারে। এর পরিণতি, পাকিস্তান খন্ড-বিখন্ড হওয়া ও পাকিস্তারে বিলুপ্তি। যুক্তি নির্বাচনে সমর্থনকারীদের যাহারা পাকিস্তানের শক্রত্যাখ্যা দিয়া নিজেদের দুই জাতিতত্ত্বকে পেশ করিবার ভূমিকা সৃষ্টি করিতেছে, তাহদের দাবী পূরণ করিতে হইলে পাকিস্তানের অস্তিতুকে বিপন্ন না করিয়া উপায় নাই।
এইসব পন্ডিতদের বিজ্ঞোচিত তত্ত্বের এই ভয়াবহ পরিণতি ও যুক্তি অসারতা আজ জনসাধারণের নিকট ধরা পরিয়াছে। সুতরাং জাতি বাদ দিয়া হিন্দুদিগকে সংখ্যালঘু প্রভৃতি আখ্যা দিয়া নিজেদের মুখ বাঁচাইবার চেষ্টা করিতেছেন এবং এই সকল সংখ্যালঘুকে রক্ষাকবচ দেওয়ার নামে পৃথক নির্বাচনের ওকালতি করিতেছেন। সংখ্যালঘুদের অবশ্যই রক্ষাকবচ দিতে হইবে, ইহা পৃথিবীর সর্বত্রই স্বীকৃত হইয়াছে। একটি রাষ্ট্রে এমন কয়েকটি গোষ্ঠী থাকিতে পারে, যাহারা বিভিন্ন কারণে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিকাশের সুযোগ হইতে বঞ্চিত হইয়া রাষ্ট্রের উন্নত নাগরিক হিসাবে নিজেদের গড়িয়া তোলার সুযোগ পায় নাই। এই ক্ষেত্রে তাহদের ঐ সমস্ত সুযোগদানের জন্য রাষ্ট্রীয় গঠনতন্ত্রে তদুপযোগী বিধান সন্নিবেশিত করিয়া মনগড়া বিকাশের ব্যবস্থা করিতে হইবে। এই রক্ষাকবচদিতে হইবে, ইহা যেমন হাস্যোদীপক, তেমনি কৌতুকপূর্ণ। অন্যদিকে রক্ষাকবচ অর্থ পৃথক নির্বাচনে, এই উদ্ভট যক্তি তাহারা কোথায় খুঁজিয়া পাইয়াছেন, তাহা তাহারাই বলিতে পারেন। যাহাদিগকে একবার “জাতি” বলা হইতেছে, মুখের এক কথায় আবার তাহাদিগকে “ সংখ্যালঘু” বানান হইতেছে। ইহার কারণ “জাতি” “সংখ্যালঘু” রক্ষাকবচ” ও “পৃথক নির্বাচন” প্রভৃতি সামঞ্জস্যহীন যুক্তির অবতারণা করিয়া নিজেদের মুখ বাচাঁনোর ছাড়াতাদের আর গত্যন্তর নাই। সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপত্তা রক্ষাকবচ ব্যবস্থাকে সংখ্যালঘুদের মতামত নিয়াই কায়েক করা উটিত এবং কি ধরনের রক্ষাকবচদরকার, তাহাও তাদের মতামতের উপর নির্ভর করিতে হইতে। সংখ্যালঘুদের রক্ষাকবচ তাদের মতের বিরুদ্ধে চাপাইয়া দেওয়া যুক্তিসঙ্গত নহে। পাকিস্তানে এই “ সংখ্যালঘুরা” তাদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের মারফতে যুক্ত নির্বাচনে স্বপক্ষে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করিয়াছেন। তবুও তাহাদিকে পৃথক নির্বাচনের রক্ষাকবচ নিতেই হইবে।” এই মনোভাব পরিহার করা উচিত। কায়েমী স্বার্থের সাম্প্রদায়িতকা বিদ্বেষকে কেবলমাত্র হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয় নাই, ইহার বিষক্রিয়াকে সমাজ জীবনের রন্ধে রন্ধে চালানো হইয়াছে। এই সেইদিনও পাঞ্জাবের কাদিয়ানী-আহরার পৈশাচিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হইয়াছে। পাঞ্জাবী-বাঙ্গালী বিদ্বেষ আদমজী পাটকলের দাঙ্গায় নিরীহ শ্রমিকদের রক্ত বহিয়াছে। শিয়াদের ইমামতিতে সুন্নীরা নামাজ পড়িতে রাজী নহে। খোঁজ রক্ষাকবচের” ব্যবস্থা কোথায় গিয়া শেষ হইবে তাহা চিন্তা করিয়া দেখা দরকার। এই পৃথক নির্বাচনের রক্ষাকবচ পরিণামের এমন অবস্থার সৃষ্টি করিবে যে অদূরভবিষৎতে নিজের দেওয়া ছাড়া অন্যকে ভোট দেওয়ার আর উপায় থাকিবে না। সাম্প্রদায়িকতার সীমা নাই। এই বিদ্বেষ বর্তমান সমাজব্যবস্থারই একটি অভিশাপ, সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে তাগিদে এই সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি হয় নাই। ইহা কতিপয় মানুষের স্বার্থের জন্য সৃষ্টি করা হইয়াছে। তাই পৃথক নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের প্রয়োজনে না লাগিলেও তাহদের রক্ষাকবচের নামে তাহদের উপর চাপাইয়া দেওয়ার এত আড়ম্বর । এই রক্ষাকবচ দেওয়ার কথা তুলিয়া সংখ্যালঘ দের রক্ষাকবচের নামে পৃথক নির্বাচনের দাবীকে খর্ব করার চেষ্টা করা হইয়াছে বলিলে ভুল করা হইবে। অতীতে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভিতর দিয়া হিন্দু করাইয়াছেন, তাহদের মনে রাখা উচিত যে, মুসলমানে মুসলমানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তাহদের চাইতেও মর্মান্তিক রক্ত ক্ষয় হইয়াছে সাম্প্রদায়িকতা মানুষের ভিতরে একটি বিদ্বেষভাব ছাড়া আর কিছুই নহে। ইহার অবসান, এই সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দিয়া হইতে পারে না। ইহার অবসান হইতে পারে মানুষের মহা মিলনের পথে।
ইহা সত্য যে, সাম্প্রদায়িকততা পাকিস্থানের গণজীবনে একটি সমস্যা হইয়াই রহিয়াছে। উহার অবসানের সর্বরকমের আয়োজন করিতে হইবে । কিন্তু পৃথক নির্বাচন দ্বারা এই সমস্যাকে কিছুতেই দূর করা সম্ভব নহে। উহা দ্বারা এই সাম্প্রদয়িকতাকে উস্কানিই দেওয়া হইবে। সাম্প্রদায়িকতার বিষ বপনে অতী উৎসাহী প্রচারকের এই পৃথক নির্বাচনের অভিযানে যাঁহাদিগকে বিভ্রান্তির ফাঁদে ফেলিতে সক্ষম হইয়াছেন, তাঁহাদের এই অসীম সর্বনাশা পরিণতি সম্বন্ধে ভাবিয়া উহার অবসান করা যায় না। রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিক্ষেত্রে কি সামাজিক, কি অর্থনৈতিক, কি রাজনৈতিক, সকল সম্প্রদায়ের সকল সম্প্রদায়ের সকল ধর্মের সকলের অবাধ অধিকার এই পৃথকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পরে পরিষদের সদস্যরা যে কোন আইন পাশ করাইতে যুক্তভাবেই ভোট দিতে পারেন। অন্যদিকে সুপারীর ট্যাক্য হ্রাস, পাটের মূল্য বৃদ্ধি, রেশন ব্যবস্থা, খাজনা হ্রাস, সার্টিফিকেট প্রথা বাতিল প্রভৃতি জনহিতকর আইনগুলি গৃহীত হইলে কেবলমাত্র একটি সম্প্রদায়েরই উপকার হয় না, প্রত্যেকটি পাকিস্তানী উহার দ্বারা উপকৃত হয় । ধর্ম ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে কোন সদস্যই যে কোন আইনের স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে ইচ্ছামত নিজ ভোট দিতে পারেন। ধর্মীয় কূটতর্কের মীমাংসার জন্য রক্ষাকবচ নামে পৃথক নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা নাই, অথবা মন্ত্রী হওয়ার বেলায় এই সংখ্যালঘু সদস্যদের ভোটকে বর্জন করা হয় না। অথচ জনগণ সম্মিলিত ও যুক্তভাবে ভোট দিয়া নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করিতে পরিবেন না, এই যুক্তি সম্পূর্ণ অচল । পাকিস্তানের রাষ্ট্ৰীয় ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য গুলি যন্ত্র রহিয়াছে: তাহার কোথাও পৃথক নির্বাচন নাই। রহিয়াছে। নেজামে ইসলামের সভাপতি ও পৃথক নির্বচনের অন্যতম নেতা মাওলানা আতাহার আলী এই যুক্ত নির্বাচনেই জাতীয় পষিদের সদস্য নির্বাচিত হইয়াছেন। মিঃ গিবনের সভাপতিত্বে তাহারা ইসলামী শাসনতন্ত্র পাশ মন্ত্রী চিলেন, সেইখানে তিনজন হিন্দু মন্ত্রী মন্ত্রীদের সমান অধিকার লইয়া বিরাজ করিয়াছেন, মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্তে এই হিন্দু মন্ত্রীদিগকে ভোট দিতে দেওয়া হয় নাই , এইরুপ খবর আজ পর্যন্ত আমরা পাই নাই। শাসক শ্রেণী ভালোভাবেই জানেন যে; রাষ্ট্ৰীয় ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য মিলিত হইয়া কাজ করা ছাড়া অন্য কোন পথ নাই। তাই মুখে বিভেদের বাণী যতই প্রচার করুক না কেন, উহা কেবল জনসাধারণের বেলায়। সুযোগ হইতে বঞ্চিত করা নিশ্চয়ই তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তান লাভের সাথে সাথে জনগণকে তখনকার শাসকগোষ্ঠী শিক্ষা দিয়াছেন যে, এদেশের জনগণ দুই জাতি-হিন্দু আর মুসলিম। একটি অত্যাচারী আর একটি অত্যাচারিত, এরা কোনদিনই এক হইতে পারে না। এই প্রচার জনগনের মনে সামকিয় বিভ্রান্তির সৃষ্টি করিয়া থাকিলেও তাহাদের শোষকদের চিনাইয়াছে। ট্যাক্রের জ্বালায় আর অনাহারে যাহারা মরিতেছে গুলী, জেলখানা যাহাঁদের ব্যথা, দুঃখ আর সংগ্রাম সাধারণ মানুষের মধ্যে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে লৌহদৃড় ঐক্য গড়িয়া তুলিয়া এই ঐক্য পাকিস্তানি যাহারা সর্বনাশ করিয়াছে সাধারণ মানুষের ঐক্য ধ্বংস করিয়া মানসে পৃথক নির্বাচনের নামে একটি অবাস্তব কল্পিত সমসর দিকে ধাবিত করার জন্যই শাসক শ্রেণীর এত উদ্যোগ আর আয়োজন। মাত্র নয় বৎসরের নূত জাতির পক্ষে এতবড় সাম্প্রদায়িক কলুষতার বিরুদ্ধে এত অল্প সময়ের মধ্যে রুখিয়া দাঁড়ানো অসাধারণ মনে হইলেও পাকিস্থানের জনগণ আজ সাফল্যের সহিত সেই অসাধারণ কাজ করিতে পারিয়াছে । জনগণের এই বিরাট ঐক্যকে শোষক শ্রেণী ও তাহদের তাঁবেদারেরা ভীতির চক্ষে দেখিতেছে।পৃথক নির্বাচনের সমর্থনকারীদের যুক্তির অসারতা ও অসামজ্ঞস্যতা সত্বেও কেন তাহারা তাহাদের দাবীর সমর্থনে অজস্র অর্থ ও জনবল ব্যয় করিতেছে তাহা আজ ভাবিবার সময় আসিয়াছে। শোষকযন্ত্রকে নিরস্কুশভাবে পরিচালিত করার উপযোগী ক্ষেএ সৃষ্টি করিতে সর্বপ্রথম দরকার মেহনতী জনতার ভিতরে ঐক্যকে নষ্ট করিয়া দেওয়া এই ঐক্যকে ধবংস করিতে হইলে প্রয়োজন মেহনতী জনতার ভিতরে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা এবং সেই বিভ্রান্তি র ফাটল পথে অত্যাচারীর আসন কে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা এই বিভ্রান্তি ও বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য শোষক গোষ্ঠীর হাতে যতগুলি অস্ত্র রহিয়াছে সাম্প্রদায়িকতা তাহদের মধ্যে অন্যতম কিন্তু গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক কারখানা মজুর পাকিস্থানের অসংখ্য অত্যাচারিত নরনারী যদি এই মৃণ্য সাম্প্রদায়িকত কে দূর করিতে সক্ষম হয়, তাহা হইলে মেহনতী জনতার বিরাট ঐক্য শোষক শ্রেণীর সকল শোষণ যন্ত্রকে নিমূল করিয়া দিবে।ইতিহাসের নির্ধারিত গতিকে কেহই রোধ করিতে পারে নাই।জনতা তাহার নির্ধারিতঐক্যের পথকে বাছিয়া নিয়াছে।জনগণ গতিপথের প্রতিটি বাধা তাহারা অতিক্রম করিবেই। সর্বশেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিব।যুক্ত নির্বাচনের সমর্থনের মধ্যেও সাম্প্রদায়িকতার কিছু কিছু জের রহিয়া গিয়াছে, তাহা দূর করিবার চেষ্টা করা দরকার কেহ কেহ যুক্তি দিয়া থাকেন যে,যদি যুক্ত নির্বাচন হয়,তবে হিন্দুদের বর্তমানে বিশেষ সুবিধাজনক ভূমিকা থাকিবে না এমনকি সব কয়টি আসনই মুসলিম নির্বাচন প্রার্থীগণ দখল করিতে পারিবে,এই ধরনের যুক্তি দিতে যাওয়া ভুল এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে ক্ষতিকর।একই ভুল হইতেছে সংরক্ষিত আসনসহ যুক্ত নির্বাচন দাবী।গণতান্ত্রিক জনতা এবং তাহদের প্রতিনিধিদের উপরই ভার দেওয়াউচিত,যাহাতে সকল স্তর হইতে জনতার নিজস্ব লোক পরিষদে প্রেরিত হইতে পারে।
(বিরোধীদলের বিরামহীন টেবিল চাপড়ানোর কারনে কোন কিছুই শোনা যায়নি)
জনাব শেখ মুজিবুর রহমান: জনাব, একটি প্রশ্ন উপস্থাপন করার প্রার্থনা করছি।
প্রশ্ন যা এখন প্রশ্ন হিসেবে উপস্থপিত এবং অনুমদিত।
প্রশ্ন যে পূর্ব পাকিস্তান সংসদের মতে জাতীয় সংসদ এবং শর্তাধীন সংসদ আলাদা নির্বাচকমণ্ডলী নীতিতে নির্ধারিত হবে তা অস্বীকার করা এবং উপস্থাপিত করা।
জনাব আতাউর রহমান খান: জনাব, প্রার্থনা করছি যে পূর্ব পাকিস্তান শর্তাধীন সংসদ মনে করছে যে জাতীয় সংসদ এবং প্রাদেশিক সংসদ নির্বাচন যৌথ নির্বাচকমন্ডলী নীতিতে করা হোক। এখন প্রশ্ন যে; পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সংসদ মনে করছে যে জাতীয় সংসদ এবং প্রাদেশিক সংসদ নির্বাচন যৌথ নির্বাচকমণ্ডলী নীতিতে হয়ে উপস্থাপিত হয় এবং একটি বিভাজন সম্পন্ন হয়।
আহমেদ, আব্দুল মন্সুর বিশ্বাস Kshitish চন্দ্র
আহমেদ, আফতাব উদ্দীন চক্রবর্তি Trailokya নাথ
আহমেদ,দাবিনিদ্দিন চ্যাটার্জি বিজয় ভুষাণ
আহমেদ, জসিম উদ্দীন চৌধুরী আব্দুল হাকিম
আহমেদ, খাওজা চৌধুরী আব্দুল ওয়াজেদ
আহমেদ, মফিজ উদ্দীন চৌধুরী আকবর আলী খান
আহমেদ,মাইজুদ্দিন চৌধুরী আমিনুল হক
আহমেদ, মোঃ.মুযাফার চৌধুরী হাবিবুর রাহমান
আহমেদ, মোঃ আসাবুদ্দিন চৌধুরী খোদা বক্স
আহমেদ, মহিউদ্দিন চৌধুরী মোহাম্মদ হারুন অর রসিদ
আহমেদ, মমতাজ ( আলিয়াস খুশু মিয়াঁ )
“আহমেদ, রাহিমুদ্দিন চৌধুরী ডঃ নুরুজ্জামান
/আহমেদ, হাজি রাহিমুদ্দিন চৌধুরী প্রাফুল্লাহ
আহাম্মেদ, জামিরুদ্দিন চৌধুরী সাখাওয়াতুল আম্বিয়া
আলী আবু মোঃ ইউনূস চৌধুরী তহুর আহমেদ
আলী দেওয়ান মাহবুব চৌধুরী জহুর আহমেদ
আলী জি এম অকালাই চৌধুরী জহুর আহমেদ
আলী মাহমুদ দানিস হাজি মোহাম্মাদ
আলী মোহাম্মাদ মুনসর দাস বসন্ত কুমার
আলী এম কোরবান দাস ব্রাজা মাধব
আলী সৈয়দ আকবর দাস দেবেন্দ্র নাথ
আওয়াল আব্দুল দাস গৌড় কিশোর
বালা, গৌড় চন্দ্র দাস রাধা মাধব
বানু, সেলিনা দাস সঞ্জীবন চন্দ্র
বার্মান অভয় চন্দ্র দাস চৌধুরী কালী প্রাসাণ্য
বার্মান canteswar দাস গোপ্তা সুরেশ চন্দ্রা
বেগম আমিনা দস্তিদার পূর্ণেন্দু
বেগম বদ্রুন্নেসা দত্ত ভুপেন্দ্র কুমার
বেগম তফতুন্নেসা দত্ত ধীরেন্দ্র নাথ
ভট্টাচার্য মুনিন্দ্র নাথ দত্ত রামেশ চন্দ্র
ভুইয়া আফতাবউদ্দিন দত্ত সুধান্সু বিমাল
দে পিলিন বিহারী
দেব রয় জগন্দ্রা চন্দ্রা
ধার মনরঞ্জন
ঘোষ দেবেন্দ্র নাথ
গোমেজ, Peter Paul খোদা বক্স
হাফেজ, মির্জা গোলাম খন্দকার, আবুল Quasem
হুসাইন,আবুল খাইর রফিকুল লাকিতুল্লাহ, এস ডাব্লিউ
হুসাইন, আলতাফ মজুমদার, মোহাম্মাদ আব্দুল হামিদ
হুসাইন, খাইরাত মজুমদার, Phani
হুসাইন,মকবুল মজুমদার,শরত চন্দ্রা
হুসাইন,মোঃ মোয়াজ্জেম মিয়াঁ, আব্দুল Avval
হুসাইন,সৈয়দ আলতাফ মিয়াঁ, আব্দুল হাকিম
হুসাইন,সৈয়দ শারফ উদ্দিন মিয়াঁ, আব্দুল হাকিম
হক , ফারমুযুল মিয়াঁ, আজিজুল হক
হক, ফজলে মিয়াঁ, মোহাম্মাদ Toaha
হক, সিরাজুল মিত্রা, ক্ষেত্র নাথ
হক, শামসুল(Dacca) মহিউদ্দিন দেওয়ান
হক, ডঃ জিকরুল মোল্লা, আবুল কালাম আজাদ
ইসলাম , আজহারুত মোল্লা, মোসলেম আলী
ইসলাম, ইকবাল আনসারুল মণ্ডল, Rasaraj
Jaladas, Satish Chandra মণ্ডল সুরাল আলী
Jaiil, এ. এফ. এম আব্দুল মল্লিক হায়দার আলী
Joardar, অহিদ হোসাইন Quamaruzzaman
কাঞ্চু উদ্দিন Quazi, কফিলউদ্দিন আহমেদ
করিম, আব্দুল (Patuakliali) রহমান, আতাউর
কাজী, রোকন উদ্দিন আহমেদ রহমান আজিজুর
খোদ্দার, আব্দুল জোব্বার রহমান মজিবর ( রাজশাহী )
খালেক, মোঃ আব্দুল রহমান মাশিহুর
খান, আব্দুল গনি রহমান, মোহাম্মাদ আব্দুর
খান, আব্দুর রহমান রহমান, হাফেজ মোহাম্মাদ হাবিবুর
খান, Achmat আলী রহিম, জিল্লুর
খান, আহমেদ আলী রসিদ মোঃ আব্দুর
খান, আক্তারুজ্জামান রায়, অমরেন্দ্র নাথ
খান, আতাউর রহমান রায়, বিজয় চন্দ্রা
খান, ফাইযুর রহমান রায়, বিভূতি ভুসান
খান, Haiem আলী খান রায়, ধনঞ্জয়
খান Yar মোহাম্মদ রায়, দুর্গা মহন
খন্দকার, এ. হামিদ রায়, প্রসূন কান্তি
খন্দকার, আজিজুর রহমান রায়, চন্দ্র
খাতুন, মেহেরুন্নেসা রায়, চৌধুরী Gazendra Nath
সাহা, ধীরেন্দ্রনাথ
সাহা, সুধান্সু সেকলিয়ার সিরাজুদ্দিন
সামাদ, আব্দুস শেখ আব্দুল আজিজ
সামাদ, Mahibus শেখ,মুজিবর রহমান
Santal, জীবন সিংহা ভাবেস চন্দ্র
সরকার, আব্দুল রসিদ Sutar, চিত্রা রঞ্জন
সরকার নিল কামাল তালুকদার, মোঃ ইসমাইল
সরকার, রাজেন্দ্র নাথ তালুকদার, নাজেন্দ্র নাথ
সেন প্রান কুমার Tarkabagish, Moulana Abdur Rashid
সেন গুপ্তা, Purnen কিশোর ওয়ালিউল্লাহ, এম
সেন গুপ্তা Nellie
NOES—I
ভুঁইয়া ইসলাম
The Ayes being 159, and Noes 1, the question was agreed to.
(The Opposition Party Members did not participate in the voting.)
নিখিল পাকিস্তান গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলন কমিটি পুস্তিকা ২৫-২৬ জুলাই, ১৯৫৭ সম্মেলন মওলানা ভাসানীর বক্তৃতা পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান হইতে আগত ভ্রাতা ও ভগ্নীগণ! আপনারা অনেক কষ্ট স্বীকার করিয়া নিখিল পাকিস্তান গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনে সমবেত হইয়াছেন। সম্মেলনকে সফল করিয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে আপনারা সকল প্রকার অসুবিধা অবনত মস্তকে গ্রহণ করিয়াছেন। আপনাদের সকলের প্রতি তাই আমার গভীর শ্রদ্ধা ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানই বন্ধুগণ! দশ বছর পূর্বে আমরা পাকিস্তান অর্জন করিয়াছি। সংগ্রামের দিনগুলি ছিল আমাদের স্বপ্নে ও কল্পনায় ভরপুর। আমরা পাকিস্তানে এক সোনার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করিতে চাহিয়াছিলাম। আমরা কল্পনা করিয়াছিলাম সুখী সমৃদ্ধ একটি দেশ। আমরা স্বপ্ন দেখিয়ছিলাম ত্যাগ ও সাধনার ঐশ্বৰ্য্যে মহিমাম্বিত একটি জাগ্রত জাতি। সে জাতি বিশ্বে অধিকার করিবে এই গৌরবময় আসন। কিন্তু দশ বছরের স্বপ্ন আমাদের ভাঙ্গিয়া চুরমার হইয়া গিয়াছে। দেশবাসীর কল্পনার সৌধ আজ বিধ্বস্ত। অমানিশার অন্ধকারে নিমজ্জিত ও দিকভ্রান্ত জাতি আজ পথের সন্ধান চায়, সন্ধান চায় মুক্তির। সে পথ নির্দেশের পবিত্র দায়িত্ব আজ আপনাদের সকলের উপর। সুদূর উত্তর পশ্চিম সীমান্ত হইতে শুরু করিয়া চট্টগ্রামের কক্সবজার পর্যন্ত আমাদের দেশের সকল মানুষ আপনাদের উপর সে মহান দায়িত্ব অর্পণ করিয়াছে। দেশের আহবানে আপনারা সাড়া দিয়াছেন। পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক জীবনধারাকে অক্ষুন্ন রাখিবার জন্য আপনারা যে দৃঢ় সংকল্পের পরিচয় দিয়াছেন সেজন্য আবার আপনাদের সকলকে জানাই আমার আন্তরিক ধ্যনবাদ। বন্ধুগণ! স্বাধীনতার মর্মকথা সকল দেশে ও সকল কালে প্রায় এক। সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণের অবসান, আর্থিক দুৰ্গতির নিরসন এবং মানুষের সংস্কৃতি ও মননশীলতার উন্নতি ও ব্যাপ্তিই স্বাধীনতার প্রাণকথা। মানুষের জীবন হইতে এই বস্ত্ত দুইটিকে বাদ দিলে মানুষে-পশুতে ব্যবধান তাকে না। তাই মানুষ তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রেরণায় যুগে যুগে আত্মহুতি দিয়াছে: নিজের জানমাল কোরবানী করিয়াছে। এমন একটি গুণে গুণাম্বিত বলিয়াই বিশ্ব স্রষ্টা পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা মানুষকে বলিয়াছেন- আশরাফুল মখলুকাত। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ সকল যুগেই নিজদের ভোগলালসা চরিতার্থ করার জন্য মানুষকে গোলাম বানাইয়া স্রষ্টার আশরাফা’কে ‘আতরাফে পরিণত করিবার ষড়যন্ত্র করিয়াছে, কিন্তু এই অস্বাভাবিক বিভেদ মানুষ কোন কালেও মানিয়া লয় নাই। এ জন্যই যুগে যুগে মানুষ করিয়াছে বিদ্রোহ দেশে দেশে স্বাধীনতা আন্দোল ও গণঅভু্যত্থান সেই বিদ্রোহেরই অপর নাম। আজীবন সংগ্রাম করিয়া গিয়াছেন তাঁহার সংগ্রাম ছিল জালেম কোরেশদের বিরুদ্ধে। আরবের মানুষকে কৃতদাসে পরিণত করিয়া কোরেশরা জাজিরাতুল আরবে নির্যাতন-নিপীড়ন ও দুনীতির এক বিভীষিকা কায়েম করে।
রাসুলুল্লাহ আবির্ভাব না ঘটিলে সেখানকার ইতিহাস হয়তো মানব ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায় হইয়া থাকিত। আরবের নিপীড়িত মানুষের আত্মপ্রতিষ্ঠা আজও সম্ভবপর হয় নাই, সত্য কথা, কিন্তু রসুলুল্লাহ প্রদর্শিত মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামও তাদের থামে নাই। দেশী ও বিদেশী জালেমদের সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে জাজিরাতুল আরবের মজলুম জনসাধারণ সংগ্রাম করিতেছে। তাদের পশ্চাতে আছে সারা পৃথিবীর মজলুম জনসাধারণের শুভেচ্ছা ও নৈতিক সমর্থন। বন্ধুগণ। পাক-ভারতের আজাদীর সংগ্রামের ইতিহাস অন্য দেশের সংগ্রামের ইতিহাস হইতে ভিন্ন নয়। যেদিন হইতে দিল ভারতের মুসলমান। প্রাণ দিল ভারতের হিন্দু, বৌদ্ধ সকলে সমানভাবে। সিপাহী বিদ্রোহ স্বাধীনতাকামী জনসাধারনের এক ঐতিহাসিক জাগৃতি, এক গৌরবোজ্জ্বল স্বাক্ষর। দিল্লীর শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ বাৰ্ম্মায় নির্বাসিত হইলেন। আর তাঁর সঙ্গে প্রাণ দিলেন ঝান্সির রানী, অযোধ্যার বেগম, তাঁতিয়াটোপী, নানা সাহেব, মাওলানা আহমদুল্লাহ এবং আরও লক্ষ লক্ষ নাম না জানা মুসলমান ও হিন্দু। পলাশীর প্রান্তরে সিরাজদ্দৌলার সঙ্গে জীবন দান করেন মীর মদন, মোহন লাল। সেদিন বাংলার স্বাধীনতাকামীদের প্রথম এবং মহান পরীক্ষা। কিন্তু কতিপয় দেশদ্রোহীর চক্রান্তে আমাদের স্বাধীনতার রবি অস্তমিত হইল। যাহারা বিশ্বাসঘাতক, যাহারা দেশদ্রোহী তাহদের কোন ধর্মীয় পরিচয় নাই। তাই অতীতের সেই স্বাধীনতা-সংগ্রামের বিরুদ্ধে বিদেশী শক্তির চক্রান্তে যোগ দেয় মুসলমান মীর জাফর, আগাইয়া আসে হিন্দু উমি চাঁদ, রাজবল্লভ। স্বাধীনতা রক্ষার শপথ নিয়া একদিকে অগ্রসর হইলেন সিরাজ, মোহন লাল ও মীর মদন। অপরদিকে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থের জন্য দেশের স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইলেন বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর, উমিচাঁদ, রাজবল্লভ। বিশ্বাসঘাতকরাই সেদিন জয়লাভ করিল। বিদেশী শক্তির সাহায্যে দেশদ্রোহীরাই প্রমাণিত হইল অধিকতর শক্তিশালী। সে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আমাদের দেশে আবারও কি ঘটিবে? বন্ধুগণ পলাশী যুদ্ধের পর হইতে বৃটিশ সরকার একটি নতুন দেশীয় শোষক শ্রেণী সৃষ্টি করিতে লাগিলেন। এই শোষকের দলে মুসলমান ছিল নগণ্য; কারণ মেকিয়াভেলির নীতি অনুসারে ইংরাজ পরাজিত মুসলমান সমাজের শিক্ষিত ও সমৃদ্ধিশালী লোকদিগকে পাইকারীভাবে হত্যা করিয়াছিল। মোট কথা ইংরেজ নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য চিরাচরিত পথ অবলম্বন করিল। কিন্তু বিরোধের মধ্যেও ঐক্যের সুর ছিল। সে ঐক্য ধ্বনি শুনাইয়া দিয়া গিয়াছে ওহাবী আন্দোলন, সিপাহী বিদ্রোহ। সে ঐক্যের পতাকা উর্ধে তুলিয়া ধরিয়াছে খেলাফত আন্দোলন। বিদেশী শক্তির সঙ্গে সঙ্গে মীর জাফর, উমিচাঁদের ন্যায় ভারতের গণদুশমন প্রতিক্রিয়াশীল চক্রও জনসাধারণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে আতংকিত হইয়া উঠে। কিন্তু তাহাতে আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলন থামিয়া যায় নাই। স্বাধীনতার প্রেরণা ও আদর্শ নিয়াই আমরা আমাদের স্বাধীন আভাসভূমি পাকিস্তান অর্জনের সংগ্রামে ঝাঁপাইয়া পড়ি। ভারতের কংগ্রেস নেতৃত্ব মজলুম মুসলমানদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের স্বীকৃতি দিতে রাজী হয় নাই। তাই আমরা কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিয়াছি। কিন্তু আমাদের সে সংগ্রামের মূল কথা ছিল সর্বপ্রকার অত্যাচারের অবসন ঘটাইয়া বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন ও সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্রের পত্তন করা। স্বাধীন ও সার্বভৌম পাকিস্তান
বন্ধুগণ! স্বাধীনতা আমরা পাইয়াছি। আমাদের স্বাধীন বাসভূমি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। দুনিয়ার কাছে সে স্বাধীনতার স্বীকৃতিও পাওয়া গিয়াছে। কিন্তু গত দশ বৎসরেও দেশবাসীর জীবনে কি সে স্বাধীনতার স্বীকৃতি লাভ ঘটিয়াছে? আপনারা শুনিয়া লজ্জিত হইবেন যে আজ পর্যন্ত গ্রামে এমন কথাও শোনা যায় যে দেশের অবস্থা পল্লী পরিভ্রমণে সে সত্য নির্মমভাবে চোখের সম্মুখে পরিস্ফুট হইয়া উঠে। পাকিস্তান একটি কৃষিপ্রধান দেশ। তার অর্থনীতির মূল ভিত্তি নিহিত কৃষকের জীবন আর কৃষকের জমিতে। বর্তমানে পৃথিবীর কৃষিপ্রধান কোন দেশের অগ্রগতিই সম্ভবপর নয়, যদি না দেশের কৃষি ব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। আমাদের কৃষি ব্যবস্থা অতিশয় পশ্চাৎপদ। সেই মান্ধাতা আমলের ভাঙ্গা লাঙ্গল আর আধমরা গুরু আজিও পাকিস্তানের কৃষকের একমাত্র পুঁজি অনাহারে, অর্ধহারে,সে আজ জীবন্মত সরকারি হিসাব মতেই পূর্বপাকিস্তানের কৃষকের ভিতর শতকরা ৩৬ জন হইল ভূমিহীন এবং শতকরা ৪০ জন হইল গরীব কৃষক। এই হিসাব ১৯৪৮ সনের হিসাব। তারপর গত ৯ বৎসর উপর্যুপরি সংকটে আরো কত কৃষক যে জমিহারা হইয়াছে তাহার কোন হিসাব নাই। আমাদের এই প্রদেশের চাষীগণ দুনিয়ার সেরা পাট পয়দা করে; কিন্তু গত দশ বৎসরের ভিতর তাহার ন্যায্য মূল্য তাহারা পায় নাই। উত্তরবঙ্গের পটল, তামাক, দক্ষিণবঙ্গের মাদুর, পূর্ববঙ্গের বেত ও চাটাই শিল্প আজ মরোনোন্মুখ। ইহা ছাড়া, কৃষকের ট্যাক্স ও খাজনার বোঝা বাড়িয়াছে। অনাহার ও দুস্থতাই হইয়াছে আমাদের কৃষকদের নিত্যসঙ্গী এবং কৃষকের দুস্থতার ফলে কৃষি উৎপাদন দিন দিন কমিয়া চলিয়াছে। কৃষির উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার ফলেই ঘুরিয়া ঘুরিয়া তীব্র খাদ্য সংকট আমাদের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইতেছে। সুজলা সুফলা পূর্ব পাকিস্তান এবং শস্যভান্ডার বলিয়া বিখ্যাত, পশ্চিম পাকিস্তান আজ বিদেশী খাদ্য সাহায্যের উপর নির্ভরশীল হইয়া পড়িয়াছে। বিদেশ হইতে খাদ্য আমদানীতে আজ আমাদের বৈদেশিক তহবিলের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হইয়া যাইতেছে, দেশের শিল্পোন্নয়নে বিরাট অন্তরায় সৃষ্টি হইতেছে এবং ভিক্ষার ঝুলি হস্তে আমরা বিদেশের সাহায্য ভিক্ষা করিতেছি। মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম প্রভৃতি সরকার কৃষকদের এই দুরবস্থার প্রতিকার করে নাই। আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকার প্রতিষ্ঠার পর কৃষকদের মনে নূতন আশার সঞ্চার হইয়াছিল। এই সরকার প্রথম দিকে কয়েকটি প্ৰসংশনীয় কাজ- যথা, গত তীব্র খাদ্য সংকটের সময় লঙ্গরখানা খোলা, সমস্ত রাজবন্দীর মুক্তি, নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং যুক্ত নির্বাচন প্রথা কায়েম করেন। সম্প্রতি এই সরকার সার্টিফিকেট প্রথা রদ করিবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়ছেন। নিয়োগ সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতা দেখাইয়াছেন। সময় মত বিদেশ ও দেশের অভ্যন্তর হইতে খাদ্য সংগ্রহ, প্রতিটি মিউনিসিপ্যাল এলাকায় পূর্ণ রেশনিং, গ্রাম্য ঘাটতি এলাকায় সংশোধিত রেশনিং, মওজুত উদ্ধার প্রভৃতি ব্যবস্থাগুলি সময় মত অবলম্বন করেন নাই। ফলে প্রদেশে এখনও তীব্র খাদ্য সংকট বিরাট করিতেছে এবং গরীব কৃষক জনসাধারণের ঘরে অর্ধাহার ও অনাহার চলিতেছে। মুসলিম লীগ সরকার কর্তৃক রচিত ভূমিদখল ও প্রজাস্বত্ব আইনের যতাবিহিত সংস্কার না করিয়া এই সরকার ঐ আইন চালু করিতেছেন। ইহার ফলে গ্রামে গ্রামে সৃষ্টি হইয়াছে দুনীতিপরায়ণ আমলঅ আমিনদের অকথ্য জুলুম ও দুনীতির রাজত্ব। বিনা খেসারতে জমিদারী উচ্ছেদের সার্বজনীন দাবী সত্ত্বেও এই সরকার কৃষকদের ঘাড় ভাঙ্গিয়া জমিদারগণকে খেসারত দানের ব্যবস্থাই বহাল রাখিয়াছেন। এছাড়া ২১-দফা মোতাবেক খাজনা হ্রাস প্রাপ্ত হয় নাই, বরং বহুক্ষেত্রে খাজনা বৃদ্ধি হইতেছে।
বরঞ্চ বহু ক্ষেত্রে তাহদের দুরবস্থা আরো বেশী। সেখানে মুসলিম লীগ ও রিপাবলিকান সরকার কৃষকদের প্রতি চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে। তাই প্রাক্তন সিন্ধুর বিশ লক্ষ হার (ভূমিহীন কৃষক) আজও জায়গীরদার জমিদারদের অধীনে গোলামের জীবন যাপন করিতেছে। এবং প্রাক্তন পাঞ্জাবের লাখ লাখ মজলুম কৃষক বর্বর বাটাই ও বেগারী প্রথার চাপে নিষ্পেষিত হইতেছে। পক্ষান্তরে মুষ্টিমেয় তিওয়ানা, মালিক, খিজির, মিয়া, নুন প্রভৃতি জমিদার জায়গীরদার পরিবার পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকাংশ জমি দখল করিয়া ভোগবিলাস করিতেছে। মোট কথা, ইহা অবিসম্বাদিত সত্য যে আজ হইতে দশ বৎসর পূর্বে স্বাধীন পাকিস্তান কায়েম হইলেও, পাকিস্তানের জনসাধারণের যারা শতকরা ৮৫ জন সেই কৃষক সমাজ স্বাধীনতার কোন আস্বাদন পায় নাই। তাহারা আজও ভূখা অনাহারে কৃষকদের পেট আর পিঠ আজ এক হইয়া গিয়াছে। বন্ধুগণ! পাকিস্তান মধ্যবিত্তের অবস্থা কৃষকের চেয়ে বেশী ভাল নয়। খাদ্য মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি অগ্নিমূল্য এবং দেশের এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি আজ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবন দুর্বিষহ করিয়া তুলিয়াচে। সরকারই এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করিয়াছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হইতে তাহারা এমন একটি অর্থনীতি অনুসরণ করিলেন যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি না হইয়া এক অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিল। অবস্থা আজ আয়ত্তের বাহিরে বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। ফলে দেশের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবিত্ত সমাজের আর্থিক মেরুদন্ডও ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে। এরূপ পরিস্থিতি ঠেকাইবার কোন পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের নেই। ফলে দেশের মধ্যবিত্ত সমাজের জীবনে আজ বিরাটকায় প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেখা দিয়াছে। শিক্ষা সংকটঃ পাকিস্তানের বিশেষ করিয়া পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা জীবনে মুসলিম লীগ সরকার এক ধ্বংসাত্মক নীতি অনুসরণ করিয়া চলেন। তাদের শাসনকালে সাত বছরে পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্যায়তনগুলি হ্রাস পাইয়া অর্ধেক দাঁড়ায়। প্রাইমারী ও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে মুসলিম লীগ সরকারের শিক্ষা-নীতি আতঙ্কের সৃষ্টি করে। ফলে অনেক শিক্ষক শিক্ষকতা পরিত্যাগ করিয়া অন্য পেশা গ্রহণে বাধ্য হইয়াছেন। গ্রামে বহু স্কুল পাঠশালা গরুর খোয়াড় ও ঘোড়ার আস্তাবলে পরিণত হয়। মাসের পর মাস শিক্ষকদের বেতন বকেয়ার খাতায় পড়িয়া থাকে। এইরূপ কয়েক হাজার শিক্ষকের প্রায় এগারো মাসের বেতন বকেয়া রাখিয়া তদানীন্তন অর্থ সচিব জনাব গোলাম মোহাম্মদ দেশবাসীর সামনে পেশ করেন এক তথাকথিত উদ্ধৃত্ত বাজেট আশ্চর্যের বিষয়, দেশবাসী আন্দোলন এবং প্রতিবাদ সত্ত্বেও মুসলিম লীগ সরকার শিক্ষা জীবনে তাদের ধ্বংসাত্মক নীতি চালাইয়া গেলেন। লীগ-যুক্তফ্রন্ট সরকার সে নীতির কোন পরিবর্তন করেন নাই এবং বর্তমান আওয়ামী কোয়ালিশন সরকারও সেই নীতিই অনুসরণ করিতেছেন। সোহরাওয়াদী সরকার পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষয়িষ্ণু শিক্ষা ব্যবস্থা উপর চরম আঘাত হানিলেন ৭৭৭১টি প্রাইমারী স্কুল বন্ধ করিবার পরিকল্পনা করিয়া। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খান ও শেখ মুজিবুর রহমান প্ল্যানিং কমিশনের সভ্য হিসাবে তাহাতে সম্মতি দিয়াছেন। স্বাধীনতা লাভের পরও দেশবাসীকে শিক্ষার আলোক হইতে বঞ্চিত করিয়া রাখিবার পরিকল্পনাকে ধ্বংসাত্মক কাৰ্য্য ছাড়া আর কি বলা যায়? শিল্পোন্নয়ন : বন্ধুগণ! সদ্য আজাদীপ্রাপ্ত একটি দেশের বিশেষ করিয়া পাকিস্তানের মত একটি অনুন্নত দেশে অর্থনীতির উন্নয়ন নির্ভর করে শিল্প প্রতিষ্ঠায়। খোদাতায়ালা আমাদিগকে প্রচুর সম্পদ দিয়াছেন। কাজেই সরকার পক্ষের যদি যথাযোগ্য প্রচেষ্টা থাকিত তাহা হইলে গত দশ বৎসরে আমাদের এই দেশ বিশেষ অগ্রগতি লাভ করিতে পারিত। স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের দেশে পূর্বাপেক্ষা শিল্পোন্নতি হইয়াছে সত্য। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ইহা যথেষ্ট নহে সুতিবস্ত্র, সিমেন্ট, পাট, কাগজ, চিনি প্রভৃতি ক্ষেত্রে শিল্পের যে অগ্রগতি হইয়াছে তাহতে এখনও দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটানো সম্ভবপর হইতেছে না-বিদেশে রফতানি তো দূরের কথা। অবশ্য আমাদের শিল্পজাত কিছু কিছু মাল বিদেশে রফতানি হয়। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আমাদের দেশ শিল্পে প্রভূত অগ্রসর হইয়াছে। লক্ষ লক্ষ লোক আমাদের দেশে বস্ত্র পায় না। অথচ সামান্য কিছু কাপড় বিদেশে পাঠাইয়া সরকার প্রমাণ করিতে চাহিতেছেন যে আমাদের দেশের শিল্পোন্নয়ন হইয়া গিয়াছে। দেশে শিল্পের উন্নতির বিরাট সম্ভাবনা সত্ত্বেও আমাদের দেশের শিল্পের এই অবস্থার জন্য দায়ী সরকার। আমাদের পাট, তুলা প্রভৃতির বিনিময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হইতে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানীর যে সুবিধা ছিল মুসলিম লীগ সরকার বা লীগ-যুক্তফ্রন্ট সরকার সে সুযোগ কাজে লাগান নাই। আওয়ামী কোয়ালিশন সরকারও এখন পর্যন্ত এক্ষেত্রে নূতন কিছু করেন নাই। শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল প্রভৃতির জন্য সরকার নির্ভর করিতেছেন যাহাদের উপর তাহদের নিকট হইতে সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যায় নাই। অথচ পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করিতেও সরকার নারাজ। ফলে আমাদের দেশের শিল্পোন্নতির পথে আজ নানাবিধ বাধা বিঘ্ন উপস্থিত হইতেছে। এবং যাহারা শিল্প গড়িতে চান তাহারা পরিপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা পাইতেছেন না। তাই স্বাধীনতা লাভের দশ বৎসর কাটিয়া গেলেও আমাদের দেশের পশ্চাৎপদতা কাটে নাই। ও যুক্তফ্রন্ট লীগ সরকার পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায্য দাবী বিবেচনা করা তো দূরের কথা ইহাকে প্রাদেশিকতা বলিয়া করিয়াছে। আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকার গঠিত হওয়ার পরেও দেশকে শিল্পায়িত করার প্রশ্নে পূর্বকার নীতি অনুসৃত হইতেছে। এই সরকার ২১ দফা ওয়াদা অনুসারে দেশকে শিল্পায়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়াছিল। কিন্তু সে ওয়াদা তাঁহারা পালন করেন নাই। তাঁহারা দেশকে শিল্পায়িত করার জন্য কোনরূপ সুষ্ঠু নীতি এখন পর্যন্ত প্রণয়ন করেন নাই। শ্রমিক সমস্যাঃ বন্ধুগণ, মাত্র যে কয়েকটি শিল্প-কারখানা এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, সরকারী অব্যবস্থার দরুন তাদের কয়েকটি বছরের অনেক সময় কাঁচামালের অভাবে অসুবিধা ভোগ করে। বিশেষ করিয়া কাপড়ের কলগুলির কথা বলিতেছি। শ্রমিক শোষন ধনতান্ত্রিক দেশসমূহের কতটা নীতিগত ব্যাপার। কাজেই শ্রমিক-মালিক তিক্ততা সেসব দেশের নিত্যনৈমিত্তিক কথা। কিন্তু আমাদের দেশের মত একটি অনগ্রসর দেশে যাহাতে শ্রমিক মালিকের তিক্ততা বৃদ্ধি না পায় দেশকে শিল্পায়িত করার শর্ত হিসাবে সরকারের সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন সরকারই শ্রমিকদের জীবনধারণের উপযোগী মজুরী, তাহদের উপযুক্ত বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রভৃতি কোন বিষয়েই কিছু করেন নাই। ন্যায্য দাবীর জন্য শ্রমিক বৈধ আন্দোলন করিলে সরকার শ্রমিকদের উপর শুধুমাত্র দমন নীতি চালাইয়া গিয়াছেন। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের শ্রমিকগণ বর্তমানে যে মজুরী পাইয়া থাকেন তদ্বারা তাহাদের স্ত্রী-পুত্র নিয়া জীবনধারণ করাই কঠিন। বহু ক্ষেত্রে শ্রমিকরা এমন সব বস্তিতে বাস করিতে বাধ্য হয় যাহা মানুষের বাসোপযোগী নয়। বহু ক্ষেত্রেই শ্রমিক আইন ভঙ্গ করিয়া শ্রমিকদিগকে অতিরিক্ত খাটাইয়া লওয়া হয়। পাকিস্তানের শ্রমিকদের অবস্থা সত্যই অবর্ণনীয়। বর্তমানে নিত্যব্যবহার্য প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাইয়াছে। এই অবস্থায় ২১ দফা ওয়াদা মোতাবেক শ্রমিকদের বেতন ও মাগগী ভাতা বৃদ্ধি করা আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকারের উচিত ছিল। কিন্তু তাহ করা হয় নাই। বরং বর্তমান পূর্ব পাকিস্তান সরকার শিল্পে শান্তি রক্ষার নামে এক চুক্তি সম্পাদন করিয়া শ্রমিকগণের বৈধ ধর্মঘটের অধিকার হরণ করিয়াছেন। কৃষকদের অবস্থা বর্ণনার সময় আমি বলিয়াছি এবং শ্রমিকদের ব্যাপারে পুনর্বার আমি সেই কথাই বলিতে চাই যে, আমাদের আযাদী লাভের দশ বৎসর অতীত হইয়া গেলেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের শ্রমিকদের জীবনে স্বাধীনতার ছোঁয়া লাগে নাই। কঠোর পরিশ্রম, মালিকদের জুলুম ও স্ত্রীপুত্রসহ কায়ক্লেশে জীবনধারণ ইহাই পাকিস্তানী শ্রমিকদের নসিব। দুনীতি দমনে ব্যর্থতাঃ এরপর আসে দুনীতির কথা। স্বাধীনতা লাভের পূর্বেও দেশে দুনীতি ছিল। কিন্তু উহা অস্বাভাবিক ছিল না, কারণ বৈদেশিক সরকার বহু প্রকারের দুনীতির প্রশ্রয় দিয়া থাকে। তাহদের শাসন কায়েম রাখার জন্য চাই দুনীতির আশ্রয় গ্রহণ। তাদের শোষণ কায়েম রাখিতে হইলেও প্রয়োজন দুনীতির কাজেই শাসন ক্ষমতা হাতে রাখার এক বিরাট হাতিয়ার তাদের দুনীতি। উদাহরণস্বরূপ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের কথা বলা যাইতে পারে। এই ‘মহান ব্যক্তিরা যে দেশেই গিয়াছেন সেখানেই দুনীতি বাসা বাঁধিয়াছে। তাদের আগমনও দুনীতিমূলক এবং তাদের অবস্থানও দুনীতিমূলক। আমেরিকার প্রিয় পাত্র চিয়াং কাইশেকের দেশ চীন একদা দুনীতিবাজদের আখড় হইয়া দাঁড়ায়। বৃটিশের অধীনে থাকাকালে ভারতেও দুনীতি প্রশ্রয় পায়। আজ বৃটিশ, আমেরিকা ও ফরাসীর যুক্ত অভিযানে গোটা মধ্যপ্রাচ্য দুনীতির আখড়ায় পরিণত হইয়াছে। যুদ্ধোত্তর জাপান ও তুরস্কও আমেরিকার কল্যাণে দুনীতিবাজির আখড়ায় পরিণত হইয়াছে। উত্তরাধিকার সূত্রে পাকিস্তানের শাসকগণও বৃটিশের নিকট হইতে দুনীতির পদ্ধতি আয়ও করেন। মুসলিম আরো প্রসারলাভ করে। আওয়ামী-কোয়ালিশন সরকার বহু ঢাকঢোল পিটাইয়া প্রচার করিয়াছিলেন তাঁহারা দুনীতির মূল্যোৎপাটন করিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু অবস্থা বর্তমানে এমন এক স্তরে আসিয়াছে যে, দুনীতি আজ প্রায় সমগ্র সমাজ-জীবনকে দুনীতি দমন করা যায় না আমি একথা বিশ্বাস করিতে প্রস্তুত নই। সমাজ জীবন হইতে দুনীতি দূর করিতে না পারিলে পাকিস্তানের কোন উন্নতি হইতে পারে না। তাই সমাজ জীবন হইতে দুনীতি উৎখাত করিবার জন্য আমি সমস্ত পাকিস্তানবাসীর নিকট আকুল আবেদন জানাইতেছি। আমি বিশ্বাস করি যে, সরকার যদি উদ্যোগী হইতেন এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করিতেন তাহা হইলে এদেশের সমাজ জীবন ও শাসনযন্ত্রকে তাঁহারা দুনীতিমুক্ত করিতে পারিতেন। কিন্তু সরকারী প্রচেষ্টারই অভাব রহিয়া গিয়াছে। তাই দুনীতিরোধ সম্পর্কিত সরকারের কথাবার্তা আজ অন্তসারশূন্য প্রমাণিত হইয়া গিয়াছে।
ব্যক্তি-স্বাধীনতা : মুসলিম লীগ সরকার, কৃষক-শ্রমিক পার্টি ও নেজামে ইসলাম আমাদের দেশের ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে বিপর্যন্ত করিয়া গিয়াছিল। আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকার প্রথম দিকে রাজবন্দীদের মুক্তি এবং নিরাপত্তা আইন বাতিল করিয়া দিয়া হৃত ব্যক্তিস্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করিতে সচেষ্ট হন। তজ্জন্য দেশবাসী তাঁহাদিগকে অসংখ্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। কিন্তু সোহরাওয়াদী সরকার অডিন্যান্স দ্বারা কেন্দ্রীয় কালাকানুন পুনরায় প্রয়োগ করিয়াছেন। পাকিস্তানের নাগরিকদের পাসপোর্ট ইত্যাদি কাড়িয়া লইয়া এবং ব্যক্তিগত চিঠিপত্র আটক করিয়া মৌলিক নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করিতেছেন। এ কারণে গণতন্ত্রকামীদের দায়িত্ব শত গুণে বৃদ্ধি পাইয়াছে। ব্যক্তিস্বাধীনতা আজ তাঁদের কায়েম রাখিতেই হইবে। এজন্য যে কোন মূল্য দিতে হইলেও তাকে করিতে হইবে। স্বায়ত্তশাসনঃ এবার আমি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নটি জনসাধারণের সামনে তুলিয়া ধরিতে চাই। পাকিস্তানের যে বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানহেতু আমরা ২১-দফা কর্মসূচীতে এই প্রদেশের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দাবী করিয়াছিলাম এই দাবী পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত শ্রেণীর জনসাধারণের অকুণ্ঠ দাবী। আমাদের এই দাবী আজও পূরণ হয় নাই। আজও শিল্প, বাণিজ্য আবগারী প্রভৃতি বহুবিধ বিষয়ের পূর্ণ দায়িত্ব প্রদেশের নিকট দেওয়া হয় নাই। অথচ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী বলিতেছেন যে পূর্ব পাকিস্তানকে না-কি শতকরা ৯৮ ভোগ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হইয়াছে। ১৯৫৫ সনে শাসনতান্ত্রিক কনভেনশন নিয়া দেশে বিতর্কের সময়ে জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী নিজে হাতে লিখিয়া দিয়াছিলেন যে, মন্ত্রিত্বে থাকাকালে তিনি ২১-দফা মোতাবেক পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য প্রচেষ্টা করিবেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর আসনে এই প্রসঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ কাউন্সিলের ১৯৫৫ সনের অক্টোবর মাসের অধিবেশনে এক প্রস্তাবে পশ্চিম পাকিস্তানে জবরদস্তিমূলকভাবে এক ইউনিট গঠনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান হয় এবং ঘোষণা করা হয়। “যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যায় এবং যখনই যাইবে তখনই ইহা সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তানের জনমত সংগ্রহ করিয়া এবং জনসাধারণে মতামতের পূর্ণ স্বীকৃতি দিয়া এক ইউনিট পুনর্বিচেনা করিবেন।” এই প্রস্তাব এখানো বলবৎ আছে এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসিয়াছে আজ দশ মাস। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে জনমত সংগ্রহের কোন প্রচেষ্টা করা হয় নাই। হওয়ার কোন লক্ষণও নাই। আমাদের স্বায়ত্তশাসনের দাবীর প্রতি মুসলিম লীগ, কৃষক-শ্রমিক পার্টি ও নেজামে ইসলাম চূড়ান্ত উপেক্ষ প্রদর্শন করিয়াছে। সেজন্য দেশবাসী তাহাদিগকে ক্ষমা করে নাই। আমাদের সেই স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকারও আজ উপেক্ষা প্রদর্শন করিতেছে। দেশবাসী উহা বরদাশত করবেন কি? প্রসঙ্গত উল্লেখ করিতে চাই যে, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বায়ত্তশাসন দাবীর অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানের জন্যও সরকার শক্তিশালী হউক।
বৈদেশিক নীতি : বন্ধুগণ! গভীর উদ্বেগের সহিত আমি লক্ষ্য করিতেছি যে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকার মুসলিম লীগ সরকার মুসলিম লীগ সরকার কর্তৃক অনুসৃত সামরিক চুক্তিগুলিকে সমর্থন করিয়া আমাদের পাকিস্তানের আজাদী ও সার্বভৌমত্বের সামনে এক বিপন উপস্থিত করিয়াছে। চুক্তি যে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে হানিকর, শুধু অনুমানের উপর নির্ভর করিয়া আমি সে কথা বলিতেছি না। আমরা আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা হইতে দেখিয়াছি যে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা সব সময় মুসলমানদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে। ১৯শ শতাব্দীর শেষ ভাগ হইতে আজ পর্যন্ত আরব জাহানে বৃটিশ শাসকবর্গের কার্যকলাপ হইল একমাত্র প্রতিশ্রুতি ভংগ ও বিশ্বাসঘাতকতার কার্যকলাপ পলাশীর যুদ্ধের সময় হইতে শুরু করিয়া সাম্প্রতিককালে পর্যন্ত আমাদের প্রতি বৃটিশ শাসকবর্গ যে ব্যবহার করিয়াছে তাহা হইল শুধু বঞ্চনা, শোষণ ও অত্যাচারের কাহিনী। পাকিস্তান কায়েম হওয়ার সময়েও কি বৃটিশ শাসকবর্গের ছলচাতুরীর জন্যই পাকিস্তান “বিকলাঙ্গ ও কীটদষ্ট” রাষ্ট্র হিসাবে জন্মগ্রহণ করে নাই? আর জাহানের বক্ষে ছুরিকাঘাত করিয়া বৃটিশ ও আমেরিকার শাসকবৰ্গই কি ইসরাইল রাষ্ট্রের পত্তন করেন নাই? বলা হইয়া থাকে যে আমাদের দেশের আর্থিক উন্নয়নের জন্য আমেরিকার ডলার সাহায্য প্রয়োজন। শর্তহীন বৈদেশিক আর্থিক সাহায্য গ্রহণে আমাদের কোন আপত্তি নাই। বরং সেরূপ সাহায্য আমরা চাই। শর্তহীন সাহায্যই বন্ধুত্বকে গাঢ় করিতে পারে। কিন্তু আমেরিকার শর্তাধীন ডলার সাহায্যে কোন দেশ উন্নতি করিয়াছে, এরূপ কোন দৃষ্টান্ত কেহ দেখাইতে পারেন কি? পক্ষান্তরে, আমরা দেখিয়াছি যে, শত শত কোটি ডলার সাহায্য সত্ত্বেও চিয়াং শাসিত চীনের আর্থিক অবস্থা অবনতির চূড়ান্ত সীমায় পৌছিয়ছিল। তুরস্ক, ইরাক প্রভৃতি দেশ বহুদিন হইতে ডলার সাহায্য পাইতেছে। অথচ আমেরিকার শাসকবর্গের মুখ হইতেই শোনা যায় যে, ঐ সব দেশের আর্থিক সংকট বাড়িতেছে বৈ কমিতেছে না। আমরাও ডলার সাহায্য পাইতেছি ১৯৫৪ সন হইতে। কিন্তু তবুও আমাদের দেশের আর্থিক সংকট দিন দিন গভীর হইতেছে এবং কোটি কোটি সাধারণ মানুষ আজও অনাহারে ও অর্ধহারে থাকিতে বাধ্য হইতেছে। ডলার সাহায্য দ্বারা কোন দেশের আর্থিক উন্নতি না হওয়ার প্রধান কারণ হইল যে, যেসব চুক্তি মারফত আমেরিকা ঐ সব সাহায্য দান করে সেসব চুক্তিতে এমন সব শর্ত জুড়িয়া দেওয়া হয় যাহাতে সাহায্যপ্রাপ্ত দেশের রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বাধীনতা বিনষ্ট হয়। এর প্রমাণস্বরূপ আমি পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তির শর্তাবলীর কিছু উপস্থিত করিতেছি। ১৯৫৪ সনের প্রথম ভাগে ঐ সামরিক সাহায্য চুক্তি অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়ে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার মোহাম্মদ আলী আমার তারবার্তার জওয়াবে ঐ চুক্তির কতকগুলি শর্ত জানাইয়াছিলেন। সেগুলি তখন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। সে শর্তাবলীর দুই একটি উদ্ধৃত করিতেছি। ঐ চুক্তির শর্তাবলীর চতুর্থ পরিচ্ছেদের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হইয়াছে, থাকিয়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দায়িত্ব পালন করিবেন এবং চুক্তি অনুযায়ী প্রদত্ত সাহায্য কিভাবে ব্যবহৃত হইতেছে তাহা পর্যবেক্ষণ করার কর্তৃত্ব ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পাইবেন। এই চুক্তি অনুযায়ী কর্মচারীরূপে পাকিস্তানে আগত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকগণ পাকিস্তান সরকারের সহিত সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসেরই অংশ বলিয়া গরিগণিত হইবে এবং কূটনৈতিক মিশনের ডিরেক্টরের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকিবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের নির্দেশে পাকিস্তান সরকার উচ্চপদস্থ মার্কিনী, বিমান ও স্থল বাহিনীর অফিসারদিগকে কূটনৈতিক মর্যাদা দান করিবেন।” এই শর্ত অনুযায়ী পাকিস্তানে আগত আমেরিকার অফিসারগণ আমেরিকা হইতে প্রাপ্ত দ্রব্যাদির ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করায় যে “কর্তৃত্ব ও সবাধ সুযোগ” লাভ করিলেন, উহার ফলে স্বাভাবতই আমাদের সেনাবাহিনীর উপর তাহদের প্রভাব বিস্তার হইতেছে। আমাদের দেশে ঐ বিদেশী অফিসাররা হইলেন, ‘স্বাধীন। কারণ তাহারা আমাদের দেশে থাকিয়া “যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দায়িত্ব পালন করিবেন”; “কূটনৈতিক মর্যাদা” ভোগ করবেন এবং তাহাদের উপর আমাদের দেশের সরকারের কোন এক্তিয়ার থাকিবে না। এমনকি তাহারা সাধারণ অপরাধ করিলেও আমাদের কোর্ট তাহাদের বিচার করিতে পারিবে না। জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আমি জিজ্ঞাসা করিতে চাই যে পাক- মার্কিন সামরিক সাহায্য চুক্তির ঐ শর্তের ফলে যে প্রভাব বিস্তার হইতেছে তাহাতে কি আমাদের সেনাবাহিনীর স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হইতেছে না? ইহাই কি আমাদের দেশরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার নমুনা? আর আমাদের সেনাবাহিনীর সার্বভৌমত্বই যদি ক্ষুণ্ণ হয়; তাহা হইলে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব থাকিবে কি? কিছুদিন পূর্বে কেন্দ্রীয় সরকার আমেরিকার ডলার সাহায্য ও অন্যান্য বৈদেশিক আর্থিক সাহায্য সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করিয়াছেন, তাহাতে দেখা যায় যে, আমেরিকার সহিত আর্থিক সাহায্যের যতগুলি চুক্তি আমাদের সরকার অনুষ্ঠান করিয়াছেন তাহারা প্রত্যেকটিতেই শর্ত আছে যে, ঐ ডলার সাহায্যের ব্যবহার তদারক কর্মচারী” বলিয়া গণ হইবেন এবং কূটনৈতিক মর্যাদা ও সুবিধা ভোগ করিবেন তাহদের উপর আমাদের সরকারের এক্তিয়ার খাটিবে না। অর্থাৎ আমেরিকার ডলার সাহায্যের সাথে সাথে আমাদের দেশে যে শত শত আমেরিকান অফিসার আসিতেছেন, তাহদের সমবায়ে প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে একটি স্বাধীন সংগঠন গড়িয়া উঠিতেছে, যে সংগঠন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিকট দায়ী। ইহার দ্বারা আমাদের রাষ্ট্রের মধ্যে অন্য একটি রাষ্ট্রের কি সৃষ্টি হইতেছে না? ইহার পরিণাম দেশবাসীই বিচার করবেন। পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তির আরও একটি শর্তে পঞ্চম পরিচ্ছেদের ২(ক) অনুচ্ছেদে বলা হইয়াছে; “পারস্পরিক সাহায্যের নীতি অনুসারে পাকিস্তান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজনে এমন সব কাঁচা মাল বা আংশিকভাবে নির্মিত দ্রব্যাদির উৎপাদন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি বা যুক্তরাষ্ট্রের নিকট হস্তান্তর করিবেন যাহা পাকিস্তানে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করা সম্ভব।” জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী ও কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট আমি আবার জিজ্ঞাসা করিতেছি যে, চুক্তির ঐ শর্ত দ্বারা কি আমাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিনষ্ট হইতেছে না এবং আমাদের অর্থনীতির উপর আমেরিকার আধিপত্য বিস্তার হইতেছে না? কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মুখে আমি কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব জনাব আমজাদ আলীকে সাক্ষ্য হিসেবেও উপস্থিত করিতেছি। কিছুদিন পূর্বে (গত মে মাসের শেষ ভাগে) পেশোয়ারে ও করাচীতে দুইটি বক্তৃতায় জনাব আজমাদ আলী বলিয়াছেন যে, আমাদের অর্থনীতি দ্রুত আমেরিকার উপর নির্ভরশীল হইয়া পড়িতেছে এবং তজ্জন্য ভাংগিয়া পড়িতেছে। অর্থ সচিবের এই মন্তব্য সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য কি? ১৯৫৪ সনের প্রথমভাগে পাক-মার্কিন সামরিক সাহায্যচুক্তি অনুষ্ঠানের সময়ে পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নব নির্বাচিত ১৬৭ জন সদস্য এক প্রকাশ্য বিবৃতিতে ঐ চুক্তি সম্পর্কে বলিয়াছিলেন, “আমরা মনে করি যে, এই চুক্তির ফলে আমাদের দেশও বিশ্বযুদ্ধ চক্রান্তে জড়াইয়া পড়িবে, আমাদের দেশের ধনসম্পদ ও জনবল আমেরিকার যুদ্ধ ষড়যন্ত্রে ব্যবহৃত হইবে এবং আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হইবে।
এই বিবৃতিতে বহু আওয়ামী লীগ নেতা যথা পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খান, পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান শিল্প ও শ্রমমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রের বর্তমান শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব আবুল মনসুর আহম্মদ প্রমুখ নিজ হাতে স্বাক্ষর দিয়াছিলেন।
যাহা হোক, আমি ইহাই বলিতেছি যে, বৃটেন ও আমেরিকার শাসকবর্গের নীতি ও কার্যকলাপ, বিভিন্ন দেশে আমেরিকার ডলার সাহায্যের ফলাফল এবং সামরিক চুক্তিগুলির শর্তাবলী বিচার বিবেচনা করিয়াই আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে দ্বিধাহীনভাবে ঘোষণা করিয়াছিল যে, ঐ চুক্তিগুলো “দেশের রাজনৈতিক ও স্বাধীনতার পরিপন্থী’ এবং আওয়ামী লীগ “সকল প্রকার সামরিক চুক্তির বিরোধিতা করে”।
কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী সমস্ত জানিয়া শুনিয়াও, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কিছুকাল পর হইতে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের সহিত মুসলিম লীগ সরকার কর্তৃক অনুষ্ঠিত সামরিক চুক্তিগুলিকে প্রকাশ্যে সমর্থন করিতে থাকেন। এই কাজ দ্বারা তিনি যেমন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠানের নীতি ও আদর্শগত শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিয়াছেন, তেমনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নকে ভুলিয়া গিয়াছেন।
আমি এবং আওয়ামী লীগের বহু কৰ্মী প্রথম হইতে জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী ঐ কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানাইয়াছি। আমরা আশা করিয়াছিলাম, জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী নিজের ভুল বুঝিতে পারবেন। সেজন্য তাঁহাকে আমরা সময়ও দিয়াছিলাম। কিন্তু, কিছুতেই কোন ফল হয় নাই। তিনি নিজ ইচ্ছা অনুসারে সাম্রাজ্যবাদীদের সহিত সহযোগিতা করিয়া চলিয়াছেন।
কাশ্মীর ও খালের পানি :
মুসলিম লীগ সরকার কর্তৃক অনুষ্ঠিত সামরিক চুক্তিগুলি সমর্থনে জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী একটি প্রধান যুক্তি প্রদর্শন করিতেছেন যে, ইহাতে আমাদের কাশ্মীর লাভ করার পক্ষে সহায়তা হইতেছে। কাশ্মীরে অবোধ গণভোট অনুষ্ঠিত হউক এবং কাশীর পাকিস্তানে আসুক ইহা আমাদের সকলের অকুণ্ঠ দাবী। ভারত সরকারের বাধা এবং একগুয়েমিপূর্ণ নীতি সত্ত্বেও কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান ও আমাদের ঐ দাবী হাসিল করার জন্য যথাযোগ্য পথও আমাদের গ্রহণ করিতে হইবে।
বাস্তবে দেখা যাইতেছে যে; মুসলিম লীগ সরকার প্রথমবধি বৃটেন আমেরিকার উপর নির্ভর করিয়া ও পরে সামরিক চুক্তিগুলিতে যোগ দিয়া কাশীরকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করার যে প্রচেষ্টা সুদীর্ঘকাল যাবৎ চালাইয়া আসিয়াছিলেন, তাহা ব্যর্থ হইয়াছে। জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী আরও দক্ষতার সহিত গত দশ মাস যাবৎ সেই নীতি ও সেই প্রচেষ্টা চালাইয়া আসিতেছেন। কিন্তু, পর্বত মুষিক প্রসব করিয়াছে। কাশ্মীর যে স্থানে ছিল, সেই স্থানেই আছে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গত ১লা জুন করাচীতে এসোসিয়েটেড প্রেস অব আমেরিকার বিশেষ সংবাদদাতার সহিত এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী বলিয়াছেন, “খালের পানি বিরোধ ও কাশ্মীর সমস্যা আমাদের উপর সাঁড়াশি অভিযানের দুইটি দিক।”… কিন্তু, “আমরা কিছুই করিতে পারি না। ভারত এতই শক্তিশালী যে, আমেরিকাসহ প্রত্যেকেই তাহারা বন্ধুত্ব কামনা করে।”
এই খেদোক্তির ভিতর দিয়া জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী নিজ নীতির ব্যর্থতা নিজে স্বীকার করিয়াছেন। কিন্তু তবুও কিসের মোহে জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী এই বন্ধ্যা নীতি অাঁকড়াইয়া রহিয়াছেন, তাহা তিনিই জানেন।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফর করিতেছেন। সেখানে গিয়া তিনি প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং মার্কিন সিনেটে বক্তৃতা করেন এবং প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ারের সংগে একটি যুক্ত ঘোষণা প্রকাশ করিয়াছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়া জনাব সোহরাওয়াদী যেসব উক্ত করিয়াছেন এবং যে যুক্ত ঘোষণা প্রচার করিয়াছেন তাহার প্রত্যেকটিতে তিনি আমেরিকা বৈদেশিক নীতির প্রতি সমর্থন জানাইয়াছেন। কিন্তু প্রতিদানে পাকিস্তান কি পাইয়াছে? পাক-মার্কিন যুক্ত ঘোষণার দেখা যায় যে, কাশীর ও খালের পানি বিরোধের মত পাকিস্তানের জীবনমরণ সমস্যাকে প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ার আঞ্চলিক সমস্যা’ বলিয়া আখ্যায়িত করিয়া শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করিয়াছেন মাত্র কিন্তু এসব সমস্যায় পাকিস্তানের সমর্থনে তিনি কোন স্পষ্টোক্তি করেন নাই। অথচ জাতিসংঘ নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ দ্বারা কাশীর সমস্যা সমর্থনের কথা বলিয়াছে।
জনাব সোহরাওয়াদী মার্কিন কংগ্রেসে যে বক্তৃতা করেন তাহাতে তিনি কাশ্মীর ও খালের পানি বিরোধ সম্পর্কে উল্লেখ করিতে চাহিয়াছিলেন। কিন্তু আমেরিকার শাসকবর্গের “অনুরোধে’ আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনাব সোহরাওয়াদী নাকি তাহার বক্তৃতা হইতে কাশ্মীর ও খালের পানি বিষয়ক, কতিপয় বিষয় শেষ পর্যন্ত বাদ দিয়া দেন। লক্ষ্য করিবার বিষয় যে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের বক্তৃতায় জনাব সোহরাওয়াদী কাশ্মীর ও খালের পানি সম্পর্কে কোন কথা বলেন নাই।
বন্ধুগণ!
আমাদের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে সফরে গিয়া যদি নিজের কথা অবাধে বলিতে না পারেন, সেখানে যদি তাঁর ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করা হয়, তাহা হইলে কি ইহাই প্রমাণিত হয় না যে যুক্তরাষ্ট্রের সহিত “বন্ধুত্বের” বিনিময়ে আমরা আমাদের সর্বপ্রকারের স্বাধীনতা বিসর্জন দিতেছি?
কাশীর পাওয়ার জন্য সম্রাজ্যবাদীদের উপর নির্ভর করার যে নীতি মুসলিম লীগ সরকার অনুসরণ করিয়া গিয়াছেন এবং যে নীতি বর্তমানে জনাব শহীদ সোহরাওয়াদী অনুসরণ করিতেছেন; সেই নীতি আজ বাস্তবে বন্ধ্যা ও দেউলিয়া বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে।
ঐ বন্ধ্যা ও দেউলিয়া নীতিতে যে সুদীর্ঘ সময় নষ্ট করা হইয়াছে তাহার সুযোগে ভারত সরকার কাশ্মীরে তাহার অবস্থানকে সুদৃঢ় করিয়া ফেলিতেছে। আমাদের সরকার কাশ্মীরকে ভারতের হাতে তুলিয়া দেওয়ার জন্য শর্তগুলির ফলে পাকিস্তানের আজাদী ও সার্বভৌমত্ব বিপদগ্রস্ত হইয়া পড়িয়াছে। আমরা কাশীরও পাইলাম না এবং আমাদের আজাদী ও সার্বভৌমত্বও বিনষ্ট হইতেছে। ইহাই মুসলিম লীগ সরকার ও জনাব শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পররাষ্ট্র নীতির ফল।
আমাদের চলার পথ
বন্ধুগণ!
পরিশেষে আমি ইহাই বলিতে চাই যে যুগ যুগ ধরিয়া আমাদের পূর্বপুরুষগণ মুক্তি ও গণতন্ত্রের যে আদর্শ নিয়া সংগ্রাম করিয়া গিয়াছেন, যে আদর্শ ও প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হইয়া আমরা পাকিস্তান সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করিয়াছিলাম সেই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আদর্শ আজও বাস্তবে রূপায়িত হয় নাই। আমাদের স্বাধীন পাকিস্তান অর্জনের পর দশ বৎসর অতিক্রান্ত হইলেও মজলুম জনসাধারণের জীবনে স্বাধীনতার ছোঁয়াচ লাগে নাই। পাকিস্তানের কোটি কোটি মজলুম নরনারী আজও নিষ্পেষিত, অত্যাচারিত ও শোষিত।
স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনসাধারণের আর্থিক দুৰ্গতি নিরসনের সওয়াল নিয়াই একদা আওয়ামী লীগ গড়িয়া উঠিয়ছিল। সেই আওয়ামী লীগের নেতারাও আজ ক্ষমতায় যাওয়ার পর তাঁহাদের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি খেলাফ করিতেছেন। এবং আওয়ামী লীগ সংগঠনকে উহার নীতি ও আদর্শ হইতে বিচ্যুত করিয়াছে।
বার বার প্রতারিত হইয়া দেশের জনসাধারণের মনে সন্দেহ জাগিতেছে এবং তাহারা নিরাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হইতেছেন।
উপসংহারে আমি বলিতে চাই যে সত্য ও মিথ্যার লড়াই, শোষক ও শোষিতের লড়াই, জমিদার ও প্রজার, সুদখোর মহাজন ও খাতকের লড়াই, সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্যবাদের লড়াই, ধর্ম-অধর্মের লড়াই, বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যখন যেখানেই হইয়াছে তাহতে যে সমস্ত নেতা ও কর্মী অংশগ্রহণ করিত তাহদের ত্যাগ, কোরবানী, নির্যাতন ভোগের মাপকাঠিতে সেই সংগ্রাম বা লড়াই ততটা সাফল্য লাভ করিতে সক্ষম হইয়াছে। উহার নজীর বিশ্বনবী ও তাঁহার ছাহাবদের জীবনের ও বর্তমান নবীন চীনের মুক্তি উন্নতির ইতিহাস আমাদের সম্মুখে মওজুত।
পাক-ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্দু-মুসলমান বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী বহু লোকের বহু ত্যাগ ও কোরবানীর ইতিহাসও আমাদের সম্মুখে মওজুত আছে। কিন্তু ঐ সমস্ত ত্যাগী দেশ প্রেমিকদের মধ্যে অনেকেই স্বাধীনতার পূর্বে অথবা কিছুদিন পরেই আমাদিগকে চিরদিনের জন্য তাহদের সাধনা ও আদর্শ হইতে বঞ্চিত করিয়া আল্লাহর ইচ্ছায় পরলোক গমন করিয়াছেন। আজ যাহারা পাকিস্তানের কর্ণধার ইহাদের মধ্যে যখনই যে দল ক্ষমতা দখল করিয়াছে তাহাদের মধ্যে খুব কম লোকই আছেন যাহারা স্বাধীনতা সংগ্রামে কোন প্রকারের কোরবানী বা নির্যাতন ভোগ করিয়াছেন। নির্যাতিত নেতা যেরূপভাবে দেশের নির্যাতিত জনসাধারণের প্রতি দরদ রাখে যাহারা জীবনে কখনো জালেমের জুলুমে পতিত হন নাই তাহদের পক্ষে দেশের লোকের প্রতি সেরূপ দরদ রাখা সম্ভবপর নহে।
তাই আজ আমার মনে হয় যদি মরহুম কায়েদে আজম, মরহুম মওলানা মোহাম্মদ আলী, হেকিম আজমল খাঁ, মওলানা শওকত আলী, মওলানা আজাদ সোবহানী, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস প্রভৃতি ত্যাগী মহাপুরুষগণ জীবিত থাকিয়া পাকিস্তানের উভয় অংশের কর্ণধাররূপে শাসন পরিচালনা করিতেন তাহা হইলে আজ দশ বৎসরে আল্লাহর মর্জি পাকিস্তানের আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ধর্মীয় ও নৈতিক উন্নতি বহুলাংশে বৃদ্ধি পাইত। বিশেষ করিয়া প্রায় দুইশত বৎসরকাল বিদেশী ইংরেজের শাসন ও শোষণের তিক্ত অভিজ্ঞতা স্মরণ করিলে পাকিস্তানের বর্তমান কর্ণধারগণ যেভাবে পুনরায় বিদেশী সাম্রাজ H শোষকদের নিকট সার্বভৌমত্ব ক্ষুঃ করিবার জন্য সামরিক চুক্তি করিয়া পুনরায় দেশবাসীকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে রাজনীতি করিতেন দেশ ও জাতিকে দেশী-বিদেশী সকল শ্রেণীর শোষকদের কবল হইতে মুক্ত করিয়া দেশ ও জাতিকে সুখী ও সমৃদ্ধিশালী করিবার জন্য। বর্তমানে যাহারা রাজনীতি করেন তাহদের মধ্যে অধিকসংখ্যক লোকই ক্ষমতা লাভ ও নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য। তাই দেখা যায় ক্ষমতা লাভের পূর্বে যাহাদের বিশেষ কিছু সহায়-সম্পত্তি ছিল না, তাহারাও যখন ক্ষমতায় যান তখন কিছুকালের মধ্যেই নিজের জন্য ২৩ মনজেলা বাড়ী গাড়ী, আত্মীয় স্বজনের চাকুরী, পারমটি, লাইসেন্স ইত্যাদির সাহায্যে নিজ নিজ দলীয় মোসাহেব ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের অবস্থা আমূল পরিবর্তন করিয়া ফেলে। ইহা লক্ষ্য করিয়া পর পর বিভিন্ন দল গদী দখল করিবার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করিতে থাকে। দেশ জাতি ধ্বংস হইল কিনা তাহা লক্ষ্য করিবার দৃষ্টিভঙ্গি এখন পর্যন্ত যত দলের লোক ক্ষমতা দখল করিয়াছে তাহাদের মধ্যে সমষ্টিগতভাবে কোন দলের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয় নাই। প্রত্যেক দলের নেতারাই প্রতিযোগিতামূলকভাবে ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থ হাসেল করিতে আপ্রাণ চেষ্টা করিয়াছে ও করিতেছে। ইহার প্রতিকার না হওয়ার একমাত্র কারণ পাকিস্তানের মেরুদন্ড পল্লীবাসীদের ভিতর সত্যিকার কর্মসূচী লইয়া আমরা সংগঠন স্থাপন করিতে পারি নাই। বর্তমানে যে কোন রাজনৈতিক দলই হউক না কেন তাহাদের শাখা, সমিতি, সামান্য যাহা কিছু কায়েম হইয়াছে তাহাতে গ্রাম্য প্রতিনিধি নাই বলিলেই চলে। অধিকাংশই শহরের উকিল, মোক্তার, ব্যবসায়ী ইত্যাদি শ্রেণীর লোক। গ্রামে বাস করে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৫ জন লোক, কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলেই তাহদের সংখ্যানুপাত প্রতিনিধি নাই।
তাই আমার মনে হয় যে, পাকিস্তানের উভয় অংশে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক কৃষক সমিতি অধিক পরিমাণে কায়েম করা প্রয়োজন।
পূর্ব পাকিস্তানের ৬০ হাজার গ্রামের ৪ কোটি কৃষক, ভূমিহীন, মজুর, বিড়ি শ্রমিক, অন্যান্য ছোট ছোট কারখানার শ্রমিক, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পের মালিক, ব্যবসায়ী, প্রাইমারী, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেসরকারী কলেজ প্রভৃতির শিক্ষক, মৎসজীবী প্রভৃতির হাড়-ভাংগা পরিশ্রমের ফলেই আজও পাকিস্তান টিকিয়া আছে। তাহাদিগকে স্বাস্থ্য ইত্যাদি গঠনমূলক কাজে উন্নতি লাভ করা সম্ভবপর। উভয় পাকিস্তানের পল্লীতে ভ্রমণ করিলে দেখা যায় একশত টাকার নোট তো দূরের কথা, দশ টাকার একখানা নোট ভাংগাইতে পাচশ ত্রিশ বাড়ী ঘুরিয়াও খুচরা টাকা পাওয়া যায় না। ইহার দ্বারাই পরিস্কারভাবে বুঝা যায় দেশের সম্পদ ও অর্থ ক্রমেই বিদেশী শোষক ও দেশীয় চোরাকারবার, বড় বড় অফিসার, মন্ত্রী, মেম্বার প্রভৃতি কতিপয় অতি অল্প সংখ্যক লোকের নিকট জমা হইতেছে। জীবনে যাহাঁদের চট্টগ্রাম, লাহোর, ঢাকা, করাচী প্রভৃতি শহর ও বন্দরে ছোট-খাটো বাড়ীও ছিল না তাহাদের মধ্যে অনেকেই আজ ১০/১৫টা বাড়ী উঠাইয়া উচ্চ হারে ভাড়া আদায় করিয়া হাজার হাজার টাকা আয় করিতেছে। ইহাতেও পল্লীবাসীর লোক হিংসার কারণ হইতো না যদি তাহাদের নিকট যে অর্থ আছে সেই অর্থ দ্বারা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়িয়া দেশের লক্ষ লক্ষ ভূমিহীন মজুর ও বেকার যুবকদের কাজের সংস্থান করিয়া দিয়া মোটা ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা করিয়া দিতেন।
আমার আন্তরিক বিশ্বাস, আজ সমস্ত পাকিস্তানের চোরাকারবারী ও পারমিট শিকারীদের হাতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা আছে। এই টাকার কোন হিসাব-নিকাশ সরকারকে দিতে হয় না। ইনকাম ট্যাক্সের ঝামেলা নাই, ঢাকা হইতে করাচী বা করাচী হইতে ঢাকা আনা-নেওয়া করিতে কোন ব্যাংকের ড্রাফট গ্রহণ করিতে হয় না, সুটকেস ভরিয়া প্লেনে বা গাড়ী, ষ্টীমারে চড়িয়া পারাপার করা যায়। ইহার ফলে আমাদের মতো অনুন্নত দেশের পক্ষে শিল্প প্রতিষ্ঠান কায়েম করার অপিরহার্য্য কর্তব্যটি ক্রমেই পিছাইয়া পড়িতেছে। বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীরা কোটি টাকা মুনাফা লইয়া যাইতেছে। ইহার ফলে দেশ ও জাতির আর্থিক দুরবস্থা ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতেছে। বিদেশী মুদ্রা একমাত্র কৃষকদের হাড়ভাঙ্গ পরিশ্রমে উৎপাদিত কাঁচামাল দ্বারাই সংগৃহিত হইতেছে, শিল্পজাত দ্রব্য বিদেশে পৌঁছিয়া ভিন্ন দেশের স্বর্ণ পাকিস্তানের আনার ব্যবস্থা খুবকমই হইতেছে। ইহার জন্য শুধু দুঃখ প্রকাশ করিয়া বসিয়া খাকিলে হইবে না। এই অবস্থার পরিবর্তন করিতে এবং যখন যে দল জনসাধারণের ভোটে প্রতিনিধি হইয়া গদী দখল করিবে তাহারা যাতে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও চোরাকারবারী পারমিট শিকারীদিগকে প্রশ্রয় দিতে না পারে এবং দেশের জনগণের ইচ্ছা ও প্রয়োজনানুযায়ী সুষ্ঠু কর্মসূচী গ্রহণ করিয়া দেশের গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করিতে বাধ্য হয় তজ্জন্য সারা দেশময় গণ-আন্দোলন জোরদার করিতে হইবে। এবং দেশের প্রকৃত দেশদরদী ও চরিত্রবান লোকের যাহাতে জনসাধারণের প্রতিনিধি হইতে পারেন তাহার দায়িতু জনসাধারণকে গ্রহণ করিতে হইবে। আমাদের দেশে মোটেই ভাল যোগ্য লোক নাই ইহা বলিলে সত্যের অপলাপ হইবে। ভাল লোক যাহারা আছেন তাহারা নির্বাচন ও প্রতিদ্বন্দিতায় মোটেই অগ্রসর হইতে চান না। ইহার প্রধান কারণ এ দেশের প্রত্যেকটি নির্বাচনে টাকা খরচের যে ছড়াছড়ি দেখা যায় তাহতে একমাত্র চোরাকারবার ঘুষখোরেরাই এরূপ টাকা খরচ করিতে পারে। আদর্শবাদী ও সৎ লোক যাহারা আছে তাহদের পক্ষে বর্তমানে ছেলেমেয়সহ জীবনযাত্রা নির্বাহ করাই কঠিন। তদুপরি নির্বাচনের জন্য ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ করা শুধু অসম্ভবই নয় আকাশ কুসুম। তাই চোরাকারবারী ও ঘুষখোর প্রভৃতি শ্রেণীর লোক ২০ হাজার হইতে ৬০ হাজার টাকা খরচ করিয়া যদি জয়লাভ করিতে পারে তাহা হইলে অল্পদিনের মধ্যেই তাহার খরচের টাকা মুনাফাসহ উশুল করিতে এবং ভবিষ্যতে আর একবার নির্বাচনে প্রার্থী হইলে সে টাকাও অর্জন করিতে সক্ষম হয়। ইহার প্রতিকার করিতে না পারিলে দেশের সৎ ও আদর্শবাদী লোককে আইন সভায় পাঠান কিছুতেই সম্ভব হইবে না।
বন্ধুগণ!
তাই আজ পাকিস্তানের জনসাধারণের মনে নূতন আশা ফুটাইয়া তুলিবার জন্য এবং আমাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আদর্শকে রূপায়িত করার জন্য আমি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমস্ত গণতন্ত্রকামী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হইতে আবেদন জানাইতেছি। আমি আবেদন জানাইতেছি যে, কৃষক, মধ্যবিত্ত, শ্রমিক ও অন্যান্য মজলুম জনসাধারণের আর্থিক উন্নতি, সমাজ সংস্কার ও কৃষকের হাতে জমি খাদ্য সংকটের সমাধান শিল্পোন্নয়ন ও শ্রমিকের উপযুক্ত মজুরী দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা, যুক্ত নির্বাচন প্রথাকে সুদৃঢ় করা, স্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সমস্ত প্রকার সামরিক জোট হইতে আমাদের দেশকে মুক্ত করিয়া পাকিস্তানকে একটি পূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম ও জনকল্যাণমূলক ফেডারেল রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা প্রভৃতির আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়া পাকিস্তানের উভয় অংশের গণতন্ত্রকামীগণ একটি মঞ্চে মিলিত হউন। আমি বিশ্বাস করি যে, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেশ ও জনসাধারণের প্রতি যত বিশ্বাসঘাতকতাই করিয়া থাকুক না কেন পাকিস্তানের উভয় অংশের গণতন্ত্রকামীগণ যদি আজ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আদর্শে ঐক্যবদ্ধ হন, তাহা হইলেই পাকিস্তানের মজলুম জনসাধারণের মুক্তি আসিবে এবং আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের আদর্শ বাস্তবে রূপায়িত হইবে এবং আমাদের পাকিস্তান সেদিন দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র বলিয়া পরিগণিত হইবে।
সেই মহান দিনের প্রতীক্ষায় আমি রহিলাম। নাছরুম মেনাল্লাহে ওয়া ফাতহুন কারব।
পাকিস্তান জিন্দাবাদ
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ
১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ হতে ২০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত
(ইপি বলতে ইস্ট পাকিস্তানের মন্ত্রী বুঝানো হচ্ছে)
(১)জনাব লিয়াকত আলী খান
প্রধানমন্ত্রী
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. জনাব লিয়াকত আলী খান | ১৫-০৮-১৯৪৭ থেকে ১৬-১০-১৯৫১
|
প্রতিরক্ষা (১৫-০৮-১৯৪৭ থেকে ১৬-১০-১৯৫১)
বৈদেশিক নীতি এবং রাষ্ট্রমন্ডল সম্পর্কীয় (১৫-০৮-১৯৪৭ থেকে ২৭-১২-১৯৪৭) কাশ্মীর বিষয়ক (৩১-১০-১৯৪৯ থেকে ১৩-০৪-১৯৫০) রাষ্ট্র এবং সীমান্ত অঞ্চল (১২-০৯-১৯৪৮ থেকে ১৬-১০-১৯৫১)
|
মন্ত্রীগণ
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. ইব্রাহীম ইসমাইল চুন্দ্রিগার
|
১৫-০৮-১৯৪৭ থেকে ০৭-০৫-১৯৪৮ | বাণিজ্য, শিল্প এবং কর্ম (১৫-০৮-১৯৪৭ থেকে ০৭-০৫-১৯৪৮) |
২. জনাব গোলাম মোহাম্মদ
|
১৫-০৮-১৯৪৭ থেকে ১৯-১০-১৯৫১ | অর্থ (১৫-০৮-১৯৪৭ থেকে ১৯-১০-১৯৫১)
অর্থনৈতিক বিষয়ক (১২-০৩-১৯৪৮ থেকে ১৯-১০-১৯৫১) বাণিজ্য এবং কর্ম (১৮-০৫-১৯৪৮ থেকে ২৯-০৫-১৯৪৮)
|
৩. সর্দার আব্দুর রব নিস্তার
|
১৫-০৮-১৯৪৭ থেকে ০২-০৮-১৯৪৯ | যোগাযোগ
|
৪. রাজা ঘাযান্তার আলী
|
১৫-০৮-১৯৪৭ থেকে ৩০-০৭-১৯৪৮ | খাদ্য এবং কৃষি, স্বাস্থ, উদ্বাস্তু এবং পুনর্বাসন
|
৫. জনাব যোগীন্দ্র নাথ মণ্ডল (H. P.)
|
১৫-০৮-১৯৪৭ থেকে ১৬-০৯-১৯৫০ | আইন, শ্রম এবং কর্ম
|
৬. ফজলুর রহমান (পূর্ব পাকিস্তান )
|
১৫-০৮-১৯৪৭ থেকে ২৪-১০-১৯৫১ | আভ্যন্তরীণ, তথ্য এবং সম্প্রচার, শিক্ষা
|
৭. স্যার মোহাম্মদ জাফরউল্লাহ খান
|
২৭-১২-১৯৪৭ থেকে ২৪-১০-১৯৫১ | বৈদেশিক নীতি এবং রাষ্ট্রমন্ডল সম্পর্কীয়
|
৮. জনাব আব্দুস সাত্তার
|
৩০-১২-১৯৪৭ থেকে ২৪-১০-১৯৫১ | খাদ্য, কৃষি, স্বাস্থ্য, আইন এবং শ্রম
|
৯. খাজা সাহাবুদ্দিন (পূর্ব পাকিস্তান)
|
০৮-০৫-১৯৪৮ থেকে ২৪-১০-১৯৫১ | আভ্যন্তরীণ, তথ্য এবং সম্প্রচার, উদ্বাস্ত এবং পুনর্বাসন
|
১০.জনাব মুস্তাক আহামেদ গুরমানী
|
(১) ০৩-০১-১৯৪৯ থেকে ৩০-১০-১৯৪৯
(২) ১৩-০৪-১৯৫০ থেকে ২৪-১০-১৯৫১ |
(১) দপ্তরবিহীন মন্ত্রী
(২) কাশ্মীর বিষয়ক
|
১১. সর্দার বাহাদুর খান
|
১০-০৯-১৯৪৯ থেকে ২৪-১০-১৯৫১ | যোগাযোগ, স্বাস্থ্য এবং কর্ম
|
১২. চৌধুরী আহামাদ নাজির খান
|
১০-০৯-১৯৪৯ থেকে ২৪-১০-১৯৫১ | শিল্প
|
১৩. ড: আব্দুল মালিক (পূর্ব পাকিস্তান)
|
২০-০৯-১৯৪৯ থেকে ২৪-১০-১৯৫১ | স্বাস্থ্য, কর্ম এবং সংখ্যালঘূ বিষয়ক
|
প্রাদেশিক মন্ত্রী
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. ড: মাহমুদ হুসাইন | ২৪-১০-১৯৫০ থেকে ২৪-১০-১৯৫১
|
প্রদেশ এবং সীমান্ত এলাকা
|
২. ড: ইশতিয়াক হুসাইন কোরেশি | ২৪-১০-১৯৫০ থেকে ২৪-১০-১৯৫১
|
উদ্বাস্তু এবং পুনর্বাসন
|
৩. আজিজুদ্দিন আহমেদ
|
২৩-০৪-১৯৫১ থেকে ২৪-১০-১৯৫১ | সংখ্যালঘু বিষয়ক
|
উপমন্ত্রী
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. ড: মাহমুদ হুসাইন
|
০৩-০২-১৯৪৯ থেকে ২৪-১০-১৯৫০ | প্রতিরক্ষা এবং প্রদেশ এবং সিমান্ত অঞ্চল |
২. সর্দার বাহাদুর খান | ১৭-০২-১৯৪৯ থেকে ১০-০৯-১৯৪৯
|
বৈদেশিক নীতি এবং রাষ্ট্রমণ্ডল সম্পর্কীয় এবং যোগাযোগ |
৩. ড: ইশতিয়াক হুসাইন কোরেশী
|
১৭-০২-১৯৪৯ থেকে ২৪-১০-১৯৫০ | আভ্যন্তরীণ, তথ্য এবং সম্প্রচার, উদ্বাস্তু এবং পুনর্বাসন
|
৪. সর্দার মোহাম্মদ নাওয়াজ খান
|
১০-০৯-১৯৪৯ থেকে ৩০-০৬-১৯৫০ | প্রতিরক্ষা এবং প্রাদেশিক এবং সীমান্ত অঞ্চল
|
৫. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন পাঠান (পূর্ব পাকিস্তান)
|
২৩-০৪-১৯৫১ থেকে ২৪-১০-১৯৫১ | অর্থ
|
(২) আলহাজ্ব খাজা নাযিমুদ্দিন
প্রধান মন্ত্রী
নাম | সময়কাল | দফতর |
আলহাজ্ব খাজা নাজিমুদ্দিন (পূর্ব পাকিস্তান) | ১৯-১০-১৯৫১ থেকে ১৭-০৪-১৯৫৩
|
প্রতিরক্ষা
|
মন্ত্রীপরিষদ
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. স্যার জাফরুল্লাহ খান
|
২৪-১০-১৯৫১ থেকে ১৭-০৪-১৯৫৩ | পররাষ্ট্র এবং বাণিজ্য সম্পর্কীয়
|
২. জনাব ফযলুর রহমান
|
১৪-১০-১৯৫১ থেকে ১৭-০৪-১৯৫৩ | বাণিজ্য, শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক
|
৩. জনাব মোহাম্মদ আলী | ২৪-১০-১৯৫১ থেকে ১৭-০৪-১৯৫৩
|
বাণিজ্য
|
৪. জনাব আব্দুস সাত্তার পীরজাদা | ২৪-১০-১৯৫১ থেকে ১৭-০৪-১৯৫৩
|
খাদ্য, কৃষি এবং আইন
|
৫. খাজা সাহাবুদ্দিন (পূর্ব পাকিস্তান) | ২৪-১০-১৯৫১ থেকে ২৬-১১-১৯৫১ | আভ্যন্তরীণ, তথ্য এবং সম্প্রচার |
৬. জনাব মুস্তাক আহমেদ গুরমানি | ২৪-১০-১৯৫১ থেকে ১৭-০৪-১৯৫৩ | কাশ্মীর বিষয়ক, আভ্যন্তরীণ রাজ্য এবং সীমান্ত, যোগাযোগ |
৭. সর্দার বাহাদুর খান | ২৪-১০-১৯৫১ থেকে ১৭-০৪-১৯৫৩
|
যোগাযোগ
|
৮. ড: আব্দুল মোতালেব মালিক (পুর্ব পাকিস্তান) | ২৪-১০-১৯৫১ থেকে ১৭-০৪-১৯৫৩
|
শ্রম, স্বাস্থ্য এবং কর্ম
|
৯. সর্দার আব্দুর রব নাসতার
|
২৬-১১-১৯৫১ থেকে ১৭-০৪-১৯৫৩ | শিল্প
|
১০. ড: মাহমুদ হুসাইন
|
২৬-১১-১৯৫১ থেকে ১৭-০৪-১৯৫৩ | কাশ্মীর বিষয়ক
|
১১. ড: ইশতিয়াক হুসাইন কোরেসী | ২৬-১১-১৯৫১ থেকে ২৬-১১-১৯৫৩
|
উদ্বাস্তু এবং পুনর্বাসন, তথ্য এবং সম্প্রচার
|
প্রাদেশিক মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. ড: মাহমুদ হুসাইন | ২৪-১০-১৯৫১ থেকে ২৬-১১-১৯৫১ | প্রতিরক্ষা, প্রদেশ এবং সীমান্ত এলাকা |
২. ড: ইশতিয়াক হুসাইন কোরেশী | ২৪-১০-১৯৫১ থেকে ২৬-১১-১৯৫১ | উদ্বাস্তু এবং পুনর্বাসন |
৩. জনাব আজিজুদ্দিন আহমেদ | ২৪-১০-১৯৫১ থেকে ১৭-০৪-১৯৫৩ | সংখ্যালঘু বিষয়ক |
৪. জনাব গিয়াসউদ্দিন পাঠান | ১৯-০৮-১৯৫২ থেকে ১৭-০৪-১৯৫৩ | অর্থ এবং সংসদ বিষয়ক |
৫. সৈয়দ খলিলুর রহমান
|
১৯-০৮-১৯৫২ থেকে ১৭-০৪-১৯৫৩ | প্রতিরক্ষা |
উপমন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. জনাব গিয়াসউদ্দিন পাঠান (পুর্ব পাকিস্তান) | ২৪-১০-১৯৫১ থেকে ১৯-০৮-১৯৫২
|
অর্থ
|
(৩) মোহাম্মদ আলী বোগরা
প্রধান মন্ত্রী
নাম | সময়কাল | দফতর |
জনাব মোহাম্মাদ আলী বোগরা | ১৭-০৪-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | বাণিজ্য, সামরিক, তথ্য এবং সম্প্রচার |
মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. স্যার মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান | ১৭-০৪-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | বৈদেশিক নীতি এবং রাষ্ট্রমন্ডল সম্পর্ক |
২. জনাব মোহাম্মদ আলী | ১৭-০৪-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | অর্থ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক |
৩. মুসতাক আহামেদ গুরমানি | ১৭-০৪-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | আভ্যন্তরীণ, রাজ্য এবং সীমান্ত অঞ্চল |
৪. সর্দার বাহাদুর খান | ১৭-০৪-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | যোগাযোগ |
৫. ড: আব্দুল মোতালেব মালিক | ১৭-০৪-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | শ্রম, স্বাস্থ্য এবং কর্ম |
৬. ড: ইশতিয়াক হুসাইন কোরেশী | ১৭-০৪-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | শিক্ষা |
৭. জনাব আল্লাহবক্স করিমবক্স ব্রোহী | ১৭-০৪-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | আইন, সংসদীয় বিষয়ক, সংখ্যালঘু বিষয়ক, তথ্য এবং সম্প্রচার |
৮. খান আবদুল কাদের খান | ১৮-০৪-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | খাদ্য, কৃষি, শিল্প এবং বাণিজ্য |
৯. জনাব শোয়েব কোরেশী | ১৮-০৪-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | তথ্য এবং সম্প্রচার, উদ্বাস্তু এবং পুনর্বাসন এবং কাশ্মীর বিষয়ক |
১০. জনাব তফাজ্জল আলী | ০৭-১২-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | অর্থ |
প্রাদেশিক মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. জনাব গিয়াসউদ্দিন পাঠান | ০৭-১২-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | কৃষি, সংখ্যালঘু বিষয়ক এবং সংসদীয় বিষয়ক |
২. সর্দার আমির আজম খান
|
০৭-১২-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | সামরিক
|
৩. জনাব মুর্তাজা রেজা চৌধুরী | ০৭-১২-১৯৫৩ থেকে ২৪-১০-১৯৫৪ | অর্থ |
(৪) মোহাম্মদ আলী বোগরা (পুনর্গঠিত মন্ত্রীমন্ডল)
প্রধানমন্রী
নাম | সময়কাল | দফতর |
মোহাম্মদ আলী বোগরা | ২৪-১০-১৯৫৪ থেকে ১১-০৮-১৯৫৫ | পররাষ্ট্র বিষয়ক, যোগাযোগ এবং স্বাস্থ্য |
মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. জনাব মোহাম্মদ আলী | ২৪-১০-১৯৫৪ থেকে ১১-০৮-১৯৫৫ | অর্থ, অর্থনীতি বিষয়ক, উদ্বাস্তু এবং পুনর্বাসন এবং কাশ্মীর বিষয়ক |
২. ড: আব্দুল মোতালেব মালিক | ২৪-১০-১৯৫৪ থেকে ১১-০৮-১৯৫৫ | শ্রম, স্বাস্থ্য এবং বাণিজ্য |
৩. জনাব মির্জা আবুল হাসান ইস্পাহানী | ২৪-১০-১৯৫৪ থেকে ১১-০৮-১৯৫৫ | শিল্প এবং বাণিজ্য |
৪. মেজর জেনারেল ইস্কান্দর মির্জা | ২৪-১০-১৯৫৪ থেকে ০৭-০৮-১৯৫৫ | সরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়, রাজ্য ও সীমান্ত এলাকা এবং কাশ্মীর বিষয়ক |
৫. জেনারাল মুহাম্মদ আইয়ুব খান | ২৪-১০-১৯৫৪ থেকে ১১-০৮-১৯৫৫ | সামরিক |
৬. জনাব গিয়াসউদ্দিন পাঠান | ২৪-১০-১৯৫৪ থেকে ১১-০৮-১৯৫৫ | খাদ্য এবং কৃষি বিষয়ক এবং আইন |
৭. মীর গোলাম আলী তালপুর | ২৪-১০-১৯৫৪ থেকে ১৮-০৩-১৯৫৫ | তথ্য এবং সম্প্রচার এবং শিক্ষা |
৮. ড: খান সাহিব | ২৪-১০-১৯৫৪ থেকে ১১-০৮-১৯৫৫ | যোগাযোগ |
৯. জনাব হাবিব ইব্রাহীম রাহিমটূলা | ২০-১১-১৯৫৪ থেকে ১১-০৮-১৯৫৫ | |
১০. জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি | ২০-১২-১৯৫৪ থেকে ১১-০৮-১৯৫৫ | আইন |
১১. সৈয়দ আবিদ হুসাইন | ১৮-১২-১৯৫৪ থেকে ১১-০৮-১৯৫৫ | খাদ্য এবং শিক্ষা |
১২. সর্দার মমতাজ আলী | ২২-১২-১৯৫৪ থেকে ১১-০৮-১৯৫৫ | তথ্য এবং সম্প্রচার এবং কাশ্মীর বিষয়ক |
১৩. জনাব আবু হুসাইন সরকার | ০৪-১১-১৯৫৫ থেকে ০৫-০৫-১৯৫৫ | স্বাস্থ্য |
প্রাদেশিক মন্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. সর্দার আমীর আজম
|
২৪-১০-১৯৫৪ থেকে ১১-০৮-১৯৫৫ | উদ্বাস্তু এবং পুনর্বাসন এবং সামরিক
|
২. মুরতাজা রেজা
|
২৪-১০-১৯৫৪ থেকে ১১-০৮-১৯৫৫ | অর্থ
|
(৫) জনাব (চৌধুরী) মোহাম্মদ আলী
প্রধান মন্ত্রী
নাম | সময়কাল | দফতর |
জনাব চৌধুরী মোহাম্মদ আলী | ১১-০৮-১৯৫৫ থেকে ১২-০৯-১৯৫৬ | সামরিক, পররাষ্ট্র বিষয়ক এবং রাষ্ট্রমন্ডল সম্পর্কীয়, অর্থ, বাণিজ্য, অর্থনীতি বিষয়ক, কাশ্মীর বিষয়ক এবং রাজ্য এবং সীমান্ত অঞ্চল |
মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. ড: খান সাহিব
|
১১-০৮-১৯৫৫ থেকে ১৪-১০-১৯৫৫ | যোগাযোগ এবং রাজ্য সীমান্ত অঞ্চল
|
২. জনাব আবুল কাসেম ফজলুল হক্ব
|
১২-০৮-১৯৫৫ থেকে ০৯-০৩-১৯৫৬ | স্বরাষ্ট্র এবং শিক্ষা
|
৩. জনাব হাবিব ইব্রাহিম রাহীমটূলা
|
১১-০৮-১৯৫৫ থেকে ১২-০৯-১৯৫৬ | বাণিজ্য এবং শিল্প
|
৪. ড: আবিদ হুসাইন
|
১১-০৮-১৯৫৫ থেকে ১৪-১০-১৯৫৫ | কাশ্মীর বিষয়ক এবং শিক্ষা
|
৫. জনাব কামিনি কুমার দত্ত
|
১১-০৮-১৯৫৫ থেকে ১২-০৯-১৯৫৬ | আইন এবং স্বাস্থ্য
|
৬. পীর আলী মোহাম্মদ রাশীদি
|
১১-০৮-১৯৫৫ থেকে ২৭-০৮-১৯৫৬ | তথ্য এবং সম্প্রচার
|
৭. জনাব মোহাম্মদ নুরুল হক্ব চৌধুরী
|
১১-০৮-১৯৫৫ থেকে ১২-০৯-১৯৫৬ | শ্রম, কর্ম এবং সংখ্যালঘু সংক্রান্ত
|
৮. ম.আ.ল. বিশ্বাস
|
১১-০৮-১৯৫৬ থেকে ২৭-০৮-১৯৫৬ | খাদ্য এবং কৃষি
|
৯. জনাব ইব্রাহীম ইসমাইল চন্দ্রিগার
|
৩১-০৮-১৯৫৫ থেকে ১২-০৯-১৯৫৬ | আইন
|
১০. জনাব হামিদুল হক্ব চৌধুরী
|
২৬-০৯-১৯৫৫ থেকে ১২-০৯-১৯৫৬ | পররাষ্ট্র বিষয়ক এবং রাস্ট্রমন্ডল সম্পর্কীয়
|
১১. সৈয়দ আমজাদ আলী
|
১৭-১০-১৯৫৫ থেকে ১২-০৯-১৯৫৬ | অর্থ এবং অর্থনৈতিক বিষয়ক |
১২. জনাব মোহাম্মদ রুস্তম কায়ানী | ১৭-১০-১৯৫৫ থেকে ১২-০৯-১৯৫৬ | যোগাযোগ |
১৩. জনাব আব্দুস সাত্তার | ১৭-০৩-১৯৫৬ থেকে ১২-০৯-১৯৫৬ | স্বরাষ্ট্র এবং শিক্ষা |
প্রাদেশিক মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. সর্দার আমীর আজম
|
১৮-০৮-১৯৫৫ থেকে ১২-০৯-১৯৫৬ | উদ্বাস্তু এবং পুনর্বাসন এবং সংসদীয় বিষয়ক
|
২. জনাব লুতফুর রহমান খান (পূর্ব পাকিস্তান)
|
১১-০৮-১৯৫৫ থেকে ১২-০৯-১৯৫৬ | অর্থ
|
৩. জনাব অক্ষয় কুমার দাস (পূর্ব পাকিস্তান)
|
২৬-০৯-১৯৫৫ থেকে ১২-০৯-১৯৫৬ | অর্থনৈতিক বিষয়ক
|
(৬) জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী
প্রধান মন্ত্রী
নাম | সময়কাল | দফতর |
জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী
|
১২-০৯-১৯৫৬ থেকে ১৮-১০-১৯৫৭ | সামরিক, কাশ্মীর বিষয়ক, রাজ্য এবং সীমান্ত এলাকা, আর্থনৈতিক বিষয়ক, আইন, উদ্বাস্তু এবং পুনর্বাসন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য |
মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. মালিক ফিরোজ খান নূন | ১২-০৯-১৯৫৬ থেকে ১৮-১০-১৯৫৭ | পররাষ্ট্র বিষয়ক, রাষ্ট্রমন্ডল বিষয়ক |
২. জনাব আবুল মনসুর আহামেদ | ১২-০৯-১৯৫৬ থেকে ১৮-১০-১৯৫৭ | বাণিজ্য এবং শিল্প |
৩. সৈয়দ আমজাদ আলী | ১২-০৯-১৯৫৬ থেকে ১৮-১০-১৯৫৭ | অর্থ |
৪. জনাব মোহাম্মদ আব্দুল খালেক | ১২-০৯-১৯৫৬ থেকে ১৮-১০-১৯৫৭ | শ্রম এবং কর্ম |
৫. মীর গোলাম আলী তালপূর | ১২-০৯-১৯৫৬ থেকে ১৮-১০-১৯৫৭ | স্বরাষ্ট্র |
৬. জনাব আ.হ.দিলদার আহমেদ | ১২-০৯-১৯৫৬ থেকে ১৮-১০-১৯৫৭ | খাদ্য এবং কৃষি |
৭. সর্দার আমীর আজম খান | ১২-০৯-১৯৫৬ থেকে ০৫-০৯-১৯৫৭ | তথ্য এবং সম্প্রচার, সংসদীয় বিষয়ক এবং আইন |
৮. মিঞা জাফর শাহ | ১২-০৯-১৯৫৬ থেকে ১৮-১০-১৯৫৭ | যোগাযোগ |
৯. জনাব জহিরুদ্দিন (পূর্ব পাকিস্তান) | ১২-০৯-১৯৫৬ থেকে ১৮-১০-১৯৫৭ | শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য |
প্রাদেশিক মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. জনাব রসা রসা রাজ মন্ডল
|
২৬-০৯-১৯৫৬ থেকে ১৮-১০-১৯৫৭ | আর্থনৈতিক বিষয়ক
|
২. হাজী মাওলা বক্স সূম্র
|
০৯-০৩-১৯৫৭ থেকে ১৮-১০-১৯৫৭ | পুনর্বাসন
|
৩. জনাব আব্দুল আলীম (পূর্ব পাকিস্তান)
|
০৯-০৩-১৯৫৭ থেকে ১৮-১০-১৯৫৬ | অর্থ
|
৪. জনাব নুরুর রহমান
|
১৩-০৩–১৯৫৭ থেকে ১৮-১০-১৯৫৭ | বাণিজ্য
|
(৭) জনাব ইবরাহীম ইসমাইল চুন্দ্রিগার
প্রধানমন্ত্রী
নাম | সময়কাল | দফতর |
জনাব ইব্রাহীম ইইসমাইল চুন্দ্রিগার
|
১৮-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | বাণিজ্য বিষয়ক, শ্রম, কর্ম এবং পুনর্বাসন
|
মন্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. মালিক ফিরোজ খান
|
১৯-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | পররাষ্ট্র বিষয়ক এবং রাষ্ট্রমন্ডল সম্পর্কিত |
২. জনাব ফযলুর রহমান | ১৯-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | বাণিজ্য এবং আইন |
৩. সৈয়দ আমজাদ আলী | ১৯-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | অর্থ |
৪. মিঞা মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলাতানা | ১৯-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | সামরিক |
৫. জনাব মুযাফফর আলী খান কিযিলবাস | ১৯-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | শিল্প
|
৬. জনাব আ. ল. বিশ্বাস (পূর্ব পাকিস্তান) | ১৯-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | খাদ্য এবং কষি |
৭. জনাব গোলাম আলী তালপুর | ১৯-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | স্বরাষ্ট্র |
৮. সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন হুসাইন ( পূর্ব পাকিস্তান) | ১৯-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | যোগাযোগ |
৯. মিঞা জাফর শাহ | ১৯-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | রাজ্য এনবগ সীমান্ত অঞ্চল , তথ্য এবং সম্প্রচার |
১০. জনাব আব্দুল আলিম (পূর্ব পাকিস্তান) | ১৯-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | পুনর্বাসন এবং কর্ম |
১১. জনাব মোহাম্মদ ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারূন | ১৯-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | কাশ্মীর বিষয়ক এবং সংসদীয় বিষয়ক |
১২. জনাব লুতফুর রহমান খান (পূর্ব পাকিস্তান) | ১৯-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | স্বাস্থ্য, শিক্ষা |
১৩. জনাব ফরিদ আহামেদ (পূর্ব পাকিস্তান) | ২৩-১০-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | শ্রম |
প্রাদেশিক মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. হাজী মাওলা বক্স সূমরো
|
২৪-১০-১৯৫৬ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | পুনর্বাসন
|
২. জনাব অক্ষয় কুমার দাস ( পূর্ব পাকিস্তান)
|
০৫-১১-১৯৫৭ থেকে ১৬-১২-১৯৫৭ | বাণিজ্য
|
প্রধানমন্ত্রী
নাম | সময়কাল | দফতর |
মালিক ফিরোজ খান নুন
|
১৬-১২-১৯৫৭ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | পররাষ্ট্র বিষয়ক এবং রাষ্ট্রমন্ডল সম্পর্কিত, সামরিক, অর্থনৈতিক বিষয়ক, পুনর্বাসন, তথ্য এবং সম্প্রচার, কাশ্মীর বিষয়ক, আইন এবং সাংসদীয় বিষয়ক |
মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. সৈয়দ আমজাদ আলী | ১৬-১২-১৯৫৭ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | অর্থ |
২. জনাব মুজাফফর আলী কিজিলবাস | ১৬-১২-১৯৫৭ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | শিল্প, বাণিজ্য এবং সাংসদীয় বিষয়ক |
৩. মীর গোলাম আলী তালপুর
|
১৬-১২-১৯৫৭ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮
০৮-০৪-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ |
স্বরাষ্ট্র এবং যোগান |
৪. মিঞা জাফর শাহ | ১৬-১২-১৯৫৭ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | খাদ্য এবং কৃষি
|
৫. জনাব আব্দুল আলীম (পুর্ব পাকিস্তান) | ১৬-১২-১৯৫৭ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | কর্ম এবং শ্রম, সংখ্যালঘু বিষয়ক এবং তথ্য এবং সম্প্রচার |
৬. জনাব রমিযুদ্দিন আহমেদ (পুর্ব পাকিস্তান) | ১৬-১২-১৯৫৭ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | যোগাযোগ |
৭. জনাব কামীনি কুমার দত্ত | ১৬-১২-১৯৫৭ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং আইন |
৮. হাজী মাওলা বক্স সূমরো | ২২-০১-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | পুনর্বাসন |
৯. জনাব মাহফুযুল হক্ব | ২২-০১-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | স্বাস্থ্য, সামাজিক কল্যাণ এবং সম্প্রদায় উন্নয়ন বিভাগ |
১০. জনাব বসন্ত কুমার দাস | ০৭-০২-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | শ্রম এবং শিক্ষা |
১১. সর্দার আব্দুর রশীদ খান | ২৯-০৩-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | বাণিজ্য এবং শিল্প |
১২. সর্দার আমীর আজম খান | ২৯-০৩-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | অর্থনৈতিক বিষয়ক এবং শিল্প |
১৩. জনাব মোহাম্মদ আইয়ুব খুরো | ০৮-০৪-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | সামরিক |
১৪. জানব হামিদুল হক চৌধুরী (পুর্ব পাকিস্তান) | ১৬-০৯-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | অর্থ |
১৫. জনাব জহিরউদ্দিন (পুর্ব পাকিস্তান) | ০২-১০-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | |
১৬. জনাব আ.হ.দিলদার আহামেদ | ০২-১০-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | |
১৭. জনাব নুরুর রহমান | ০২-১০-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ |
প্রাদেশিক মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. হাজী মাওলা বক্স সূমরো | ১৬-১২-১৯৫৭ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | সামরিক, আর্থনৈতিক বিষয়ক, পুনর্বাসন, তথ্য এবং সম্প্রচার , কাশ্মীর বিষয়ক , আইন এবং সাংবিধানিক বিষয়ক |
২. জনাব অক্ষয় কুমার দাস (পূর্ব পাকিস্তান) | ১৬-১২-১৯৫৭ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | অর্থ |
৩. খান মোহাম্মদ জালালউদ্দিন খান | ০৫-০৪-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | স্বরাষ্ট্র এবং অর্থ |
৪. সৈয়দ আহমদ নাওয়াজ শাহ গারদেজী | ০৫-০৪-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | খাদ্য এবং অর্থ |
৫. সর্দার মোহাম্মদ আকবর খান বুগতি | ২০-০৯-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | স্বরাষ্ট্র |
৬. মিঞা আব্দুস সালাম | ২০-০৯-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | তথ্য এবং সম্প্রচার |
৭. আব্দুর রহমান খান | ০২-১০-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | |
৮. জনাব পিটার পল গোমেজ (পূর্ব পাকিস্তান) | ০২-১০-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | |
৯. জনাব আদিলউদ্দিন আহমদ | ০২-১০-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ | |
১০. সৈয়দ আলমদার হোসেন শাহ গিলানী | ০২-১০-১৯৫৮ থেকে ০৭-১০-১৯৫৮ |
|
জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খান – সামরিক আইন প্রধান
(০৮–১০–১৯৫৮ থেকে ২৬–১০–১৯৫৮)
রাষ্ট্রপতি
ইস্কান্দর মির্জা এবং কেন্দ্রীয় সচিব সমৃদ্ব উপদেষ্টা পরিষদ
প্রধানমন্ত্রী
নাম | সময়কাল | দফতর |
জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খান | ২৭-১০-১৯৫৮ | সামরিক এবং কাশ্মীর বিষয়ক |
মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আজম খান | ২৭-১০-১৯৫৮ | পুনর্বাসন |
২. লেফটেনান্ট জেনারেল ওয়াজীদ আলী খান বূর্কী | ২৭-১০-১৯৫৮ | স্বাস্থ্য এবং সমাজ কল্যাণ |
৩. জনাব মোহাম্মদ ইবরাহিম (পূর্ব পাকিস্তান) | ২৭-১০-১৯৫৮ | আইন |
৪. লেফটেন্যান্ট জেনারেল খ. ম. শেখ | ২৭-১০-১৯৫৮ | স্বরাষ্ট্র |
৫. জনাব আবুল কাসেম খান (পূর্ব পাকিস্তান) | ২৭-১০-১৯৫৮ | শিল্প এবং কর্ম, সেঁচ এবং জ্বালানী |
৬. খান ফ. ম. খান | ২৭-১০-১৯৫৮ | যোগাযোগ |
৭. জনাব জুলফিকার আলী ভূট্টো | ২৭-১০-১৯৫৮ | বাণিজ্য |
৮. জনাব মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান (পূর্ব পাকিস্তান) | ২৭-১০-১৯৫৮ | খাদ্য এবং কষি |
জেনারেল মোহাম্মদ আয়ুব খান – রাষ্ট্রপতি
১ম মন্ত্রীসভা
রাষ্ট্রপতি
নাম | সময়কাল | দফতর |
জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খান
|
২৮-১০-১৯৫৮ থেকে ১৭-০২-১৯৬০ | মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, সামরিক, কাশ্মীর বিষয়ক, সংস্থাপন বিভাগ |
মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আজম খান | ২৭-১০-১৯৫৮ থেকে ১৭-০২-১৯৬০ | পুনর্বাসন, খাদ্য, কৃষি, কর্ম, সেঁচ এবং জ্বালানী |
২. লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াজিদ আলী বূর্কী
|
২৭-১০-১৯৫৮ থেকে ১৭-০২-১৯৬০ | স্বাস্থ্য এবং সমাজ কল্যাণ
|
৩. জনাব মঞ্জুর কাদের | ২৭-১০-১৯৫৮ থেকে ১৭-০২-১৯৬০ | পররাষ্ট্র বিষয়ক, রাষ্ট্রমন্ডল সম্পর্কিত, আইন |
৪. জনাব মোহাম্মদ ইবরাহিম (পূর্ব পাকিস্তান) | ২৭-১০-১৯৫৮ থেকে ১৭-০২-১৯৬০ | আইন |
৫. লেফটেন্যান্ট জেনারেল ক. ম. শেখ | ২৭-১০-১৯৫৮ থেকে ১৭-০২-১৯৬০ | স্বরাষ্ট্র, রাজ্য এবং সীমান্ত বিভাগ, সংস্থাপন বিভাগ |
৬. জনাব মোহাম্মদ শোয়েব | ২৭-১০-১৯৫৮ থেকে ১৭-০২-১৯৬০ | অর্থ |
৭. জনাব আবুল কাসেম খান (পূর্ব পাকিস্তান) | ২৭-১০-১৯৫৮ থেকে ১৭-০২-১৯৬০ | শিল্প এবং কর্ম, সেচ এবং জ্বালানী |
৮. খান ফ. ম. খান | ২৭-১০-১৯৫৮ থেকে ১৭-০২-১৯৬০ | রেল এবং যোগাযোগ |
৯. জনাব হাবিবুর রহমান | ২৭-২০-১৯৫৮ থেকে ১৭-০২-১৯৬০ | শিক্ষা, তথ্য এবং সম্প্রচার, সংখ্যালঘু বিষয়ক |
১০. জনাব জুলফিকার আলী ভূট্টো | ২৭-১০-১৯৫৮ থেকে ১৭-০২-১৯৬০ | বাণিজ্য |
১১. জনাব মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান (পূর্ব পাকিস্তান) | ২৭-১০-১৯৫৮ থেকে ১৭-০২-১৯৬০ | খাদ্য এবং কৃষি এবং বাণিজ্য |
২য় মন্ত্রীসভা
রাষ্ট্রপতি
নাম | সময়কাল | দফতর |
ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান
|
১৭-১২-১৯৬০ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | কাশ্মীর বিষয়ক, সামরিক, রাষ্ট্রপতি সচিবালয় (মন্ত্রীপরিষদ এবং সংস্থাপন বিভাগ),
রাজ্য এবং সীমান্ত এলাকা, অর্থনৈতিক সম্পর্কিত বিভাগ, রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠন এবং তথ্য পরিকল্পনা |
মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আজম খান | ১৭-১২-১৯৬০ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | পুনর্বাসন, খাদ্য, কৃষি, কর্ম, পানি সম্পদ |
২. জনাব মঞ্জুর কাদের | ২৭-১০-১৯৫৮ থেকে ১৭-০২-১৯৬০ | পররাষ্ট্র বিষয়ক, রাষ্ট্রমন্ডল সম্পর্কিত, আইন এবং সাংসদীয় বিষয়ক |
৩. লেফটেন্যান্ট জেনেরাল ওয়াজিদ আলী বুর্কী
|
১৭-০২-১৯৬০ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | স্বাস্থ্য এবং সামাজিক কল্যাণ, শিক্ষা, বিজ্ঞান গবেষণা, কাশ্মীর বিষয়ক এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক
|
৪. জনাব মোহাম্মদ ইবরাহিম (পূর্ব পাকিস্তান) | ১৭-০২-১৯৬০ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | আইন |
৫. লেফটেন্যান্ট জেনেরাল ক. ম. শেখ | ১৭-০২-১৯৬০ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | স্বরাষ্ট্র বিষয়ক, পুনর্বাসন, খাদ্য, কৃষি, কর্ম, গৃহ এবং পানি সম্পদ, রাজ্য এবং সীমান্ত এলাকা, এবং সংস্থাপন বিভাগ |
৬. জনাব মোহাম্মদ শোয়েব | ১৭-০২-১৯৬০ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | অর্থ এবং অর্থনৈতিক সমন্বয় |
৭. জনাব আবুল কাসিম খান
|
১৭-০২-১৯৬০ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | শিল্প
|
৮. খান ফ. ম. খান | ১৭-০২-১৯৬০ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | রেল এবং যোগাযোগ |
৯. জনাব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ( পূর্ব পাকিস্তান) | ১৭-০২-১৯৬০ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | শিক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সংখ্যালঘু বিষয়ক, জাতীয় পুনর্নির্মাণ এবং তথ্য |
১০. জনাব হাফিজুর রহমান ( পুর্ব পাকিস্তান)
|
১৭-০২-১৯৬০ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | জাতীয় পুনর্নির্মাণ এবং তথ্য, সংখ্যালঘু বিষয়ক, জ্বালানী, বিদ্যৎ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, কাশ্মীর বিষয়ক এবং কর্ম |
১১. জনাব হাফিজুর রহমান ( পূর্ব পাকিস্তান) | ১৭-০২-১৯৬০ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | বাণিজ্য |
১২. জনাব আখতার হোসেন | ০১-০৬-১৯৬০ থেকে ০১-০৩-১৯৬২ | জাতীয় পুনর্নির্মাণ এবং তথ্য, কাশ্মীর বিষয়ক, সংখ্যালঘু বিষয়ক, শিক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা |
১৩. জনাব জাকির হোসেন (পূর্ব পাকিস্তান) | ১৪-০৬-১৯৬০ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | স্বরাষ্ট্র ( স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়) |
১৪. জনাব আব্দুর কাদির | ৩০-০১-১৯৬২ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | অর্থ ও বাণিজ্য |
১৫. জনাব মোহাম্মদ মুনির | ২২-০৫-১৯৬২ থেকে ০৮-০৬-১৯৬২ | আইন এবং সাংসদীয় বিষয়ক |
৩য় মন্ত্রীসভা
রাষ্ট্রপতি
নাম | সময়কাল | দফতর |
ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান | ০৮-০৬-১৯৬২ থেকে ২৩-০৩-১৯৬৫ | রাষ্ট্রপতির সচিবালয়, মন্ত্রীসভা বিভাগ, রাজ্য এবং সীমান্ত অনঞ্চল বিভাগ, আর্থনৈতিক বিষয়ক বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, সামরিক, তথ্য এবং সম্প্রচার |
মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. জনাব মোহাম্মদ মুনির | ০৮-০৬-১৯৬২ থেকে ১৭-১২-১৯৬২ | আইন এবং সংসদীয় বিষয়ক |
২. জনাব মোহাম্মদ আলী (পূর্ব পাকিস্তান) | ১৩-০৬-১৯৬২ থেকে ২৩-০১-১৯৬৩ | পররাষ্ট্র বিষয়ক |
৩.জনাব আব্দুল কাদির | ০৮-০৬-১৯৬২ থেকে ১৫-১২-১৯৬২ | অর্থ |
৪. জনাব আব্দুল মোনেম খান (পূর্ব পাকিস্তান) | ১৩-০৬-১৯৬২ থেকে ০৭-১১-১৯৬২ | স্বাস্থ্য, শ্রম এবং সামাজ কল্যাণ |
৫. জনাব হাবিবুল্লাহ খান | ১৩-০৬-১৯৬২ থেকে ২৩-০৩-১৯৬৫ | স্বরাষ্ট্র বিষয়ক, কাশ্মীর বিষয়ক |
৬. জনাব ওয়াহিদুজ্জামান (পূর্ব পাকিস্তান)
|
১৩-০৬-১৯৬২ থেকে ২০-০৩-১৯৬৫ | বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শ্রম এবং সমাজ কল্যাণ
|
৭. জনাব জুলফিকার আলী ভূট্টো
|
১৩-০৬-১৯৬২ থেকে ২৩-০৩-১৯৬৫ | শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ, পুনর্বাসন, কর্ম, পররাষ্ট্র বিষয়ক
|
৮. জনাব আব্দুস সবুর খান
|
১৩-০৬-১৯৬২ থেকে ২৩-০৩-১৯৬৫ | যোগাযোগ
|
৯. জনাব আ. ক. ম. ফজলুল কাদের চৌধুরী (পূর্ব পাকিস্তান) | ১৩-০৬-১৯৬২ থেকে ২৮-১০-১৯৬৩ | খাদ্য এবং কৃষি, পুনর্বাসন, তথ্য এবং সম্প্রচার, শ্রম, সমাজ কল্যাণ, স্বাস্থ্য |
১০. শেখ খুরসীদ আহামেদ | ১৭-১২-১৯৬২ থেকে ২৩-০৩-১৯৬৫ | আইন এবং সংসদ বিষয়ক |
১১. রানা আব্দুল হামিদ
|
১৭-১২-১৯৬২ থেকে ২৩-০৩-১৯৬৫ | স্বাস্থ্য, শ্রম এবং সমাজ কল্যাণ, পুনর্বাসন এবং কর্ম, খাদ্য এবং কৃষি |
১২. জনাব মোহাম্মদ শোয়েব
|
১৫-১২-১৯৬২ থেকে ২২-০৩-১৯৬৫ | অর্থ
|
১৩. জনাব আ. ত. ম. মোস্তফা( পূর্ব পাকিস্তান) | ০৪-০৯-১৯৬৩ থেকে ২৩-০৩-১৯৬৫ | শিক্ষা, তথ্য এবং সম্প্রচার |
১৪. জনাব আব্দুল্লাহ-আল-মাহমুদ (পূর্ব পাকিস্তান) | ০৪-০৯-১৯৬৩ থেকে ২৩-০৩-১৯৬৫ | শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ |
১৫. আব্দুল ওয়াহিদ খান | ০৯-০১-১৯৬৩ থেকে ২৩-০৩-১৯৬৫ | তথ্য এবং সম্প্রচার |
১৬. আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ জহিরউদ্দিন লাল মিঞা (পূর্ব পাকিস্তান) | ২০-০১-১৯৬৪ থেকে ২২-০৩-১৯৬৫ | স্বাস্থ্য, শ্রম এবং সমাজ কল্যাণ |
৪র্থ মন্ত্রীসভা (নির্বাচনের পর)
রাষ্ট্রপতি
নাম | সময়কাল | দফতর |
ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান | ২৩-০৩-১৯৬৫ থেকে ২৫-০৩-১৯৬৯
|
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, সংস্থাপন বিভাগ, রাজ্য এবং সীমান্ত অঞ্চল বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, সামরিক বিভাগ, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত গবেষণা, স্বরাষ্ট্র এবং কাশ্মীর বিষয়ক |
মন্ত্রীমন্ডল
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. খাজা সাহাবুদ্দিন (পূর্ব পাকিস্তান) | ২৪-০৩-১৯৬৫ থেকে ২৫-০৩-১৯৬৯ | তথ্য এবং সম্প্রচার |
২. জনাব মোহাম্মদ শোয়েব | ২৪-০৩-১৯৬৫ থেকে ২৫-০৮-১৯৬৬ | অর্থ |
৩. জনাব আব্দুস সবুর খান (পূর্ব পাকিস্তান) | ২৪-০৩-১৯৬৫ থেকে ২৫-০৮-১৯৬৯ | যোগাযোগ |
৪. জনাব জুলফিকার আলী ভূট্টো | ২৪-০৩-১৯৬৫ থেকে ৩১-০৮-১৯৬৬ | পররাষ্ট্র বিষয়ক
|
৫. জনাব গোলাম ফারূখ | ২৯-০৩-১৯৬৫ থেকে ১৫-০৭-১৯৬৭ | বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত গবেষণা, বাণিজ্য |
৬. জনাব আলতাফ হোসেন (পুর্ব পাকিস্তান) | ২৯-০৩-১৯৬৫ থেকে ১৫-০৫-১৯৬৮ | শিল্প এবং প্রাকৃতিক সম্পদ |
৭. জনাব সৈয়দ মোহাম্মদ জাফর | ২৯-০৩-১৯৬৫ থেকে ২৫-০৩-১৯৬৯ | আইন এবং সংসদ বিষয়ক |
৮. কাজী আনোয়ারুল হক্ব (পূর্ব পাকিস্তান) | ২৯-০৩-১৯৬৫ থেকে ২৫-০৩-১৯৬৯ | শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শ্রম এবং সমাগ কল্যাণ |
৯. চৌধুরী আলী আকবর খান
|
১৭-০৮-১৯৬৫ থেকে ৩০-১১-১৯৬৬ | স্বরাষ্ট্র এবং কাশ্মীর বিষয়ক
|
১০. আ. হ. ম. স. দোহা (পূর্ব পাকিস্তান) | ১৭-০৮-১৯৬৫ থেকে ২৫-০৩-১৯৬৯ | খাদ্য এবং কৃষি, পুনর্বাসন এবং কর্ম |
১১. সৈয়দ শরীফউদ্দিন পীরজাদা | ২০-০৭-১৯৬৬ থেকে ০১-০৫-১৯৬৮ | পররাষ্ট্র |
১২. জনাব ন. ম. ঊকাইলী | ২৫-০৭-১৯৬৮ থেকে ২৫-০৩-১৯৬২ | অর্থ |
১৩. ভাইস এডমিরাল আফজাল রহমান খান | ২১-১০-১৯৬৬ থেকে ২৫-০৩-১৯৬৯ | সামরিক, স্বরাষ্ট্র এবং কাশ্মীর বিষয়ক |
১৪. নওয়াবজাদা আব্দুল গফুর খান হোটি | ০৫-০৭-১৯৬৮ থেকে ২৫-০৩-১৯৬৯ | বাণিজ্য |
১৫. জনাব ম. আরসাদ হুসেইন | ০৭-০৫-১৯৬৮ থেকে ২৫-০৩-১৯৬৯ | পররাষ্ট্র বিষয়ক |
১৬. জনাব আজমল আলী চৌধুরী (পূর্ব পাকিস্তান)
|
০৬-০৭-১৯৬৮ থেকে ২৫-০৩-১৯৬৯ |
জেনারেল আঘা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান-রাষ্ট্রপতি
প্রশাসনিক পরিষদ
রাষ্ট্রপতি
নাম | সময়কাল | দফতর |
জেনারেল আঘা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান | ন ২৬-০৩-১৯৬৯ থেকে ০৩-০৮-১৯৬৯ |
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. ভাইস-এডমিরাল আফজাল রহমান খান
|
২৬-০৩-১৯৬৯ থেকে ০৩-০৮-১৯৬৯ | |
২. মিঞা আরশাদ হুসাইন
|
২৬-০৩-১৯৬৯ থেকে ০৪-০৪-১৯৬৯ | পররাষ্ট্র বিষয়ক
|
৩. সৈয়দ ফিদা হাসান
|
২৬-০৩-১৯৬৯ থেকে ৩১-০৩-১৯৬৯ | সাধারণ প্রশাসন এবং সমন্বয়
|
রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক
নাম | সময়কাল | দফতর |
জেনারেল আঘা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান | ০৫-০৪-১৯৬৯ থেকে ০৩-০৮-১৯৬৯ | মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, সংস্থাপন বিভাগ, তথ্য এবং সম্প্রচার, সংসদ বিষয়ক, সামরিক, পররাষ্ট্র বিষয়ক |
সহকারী প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং উপদেষ্টা (২য় সামরিক আইন)
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হামিদ খান | ০৫-০৪-১৯৬৯ থেকে ০৩-০৮-১৯৬৯ | স্বরাষ্ট্র এবং কাশ্মীর বিষয়ক, রাজ্য এবং সীমান্ত অঞ্চল |
২. ভাইস এডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ আহসান
|
০৫-০৪-১৯৬৯ থেকে ০৩-০৮-১৯৬৯ | পরিকল্পনা এবং অর্থনৈতিক বিভাগ সহ পরিকল্পনা কমিশন, অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ, খাদ্য এবং কৃষি, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি গবেষণা বিভাগ |
৩. এয়ার মার্শাল নূর খান
|
০৫-০৪-১৯৬৯ থেকে ০৩-০৮-১৯৬৯ | যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শ্রম এবং সমাজ কল্যাণ, শিক্ষা, পুনর্বাসন এবং কর্ম, পরিবার পরিকল্পনা, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি গবেষণা বিভাগ |
রাষ্ট্রপতির মন্ত্রীসভা
রাষ্ট্রপতি
নাম | সময়কাল | দফতর |
জেনারেল আঘা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান | ০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ২০-১২-১৯৭১
|
কৃষি, কর্ম, যোগাযোগ (০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ১৪-০৮-১৯৬৯)
মন্ত্রীসভা বিভাগ (০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ২০-১২-১৯৭১) সামরিক (০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ১৪-০৮-১৯৬৯) অর্থনীতি বিষয়ক (০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ১৪-০৮-১৯৬৯) সংস্থাপন বিভাগ (০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ১৪-০৮-১৯৬৯) পররাষ্ট্র বিষয়ক (০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ১৪-০৮-১৯৬৯) আইন (০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ১৪-০৮-১৯৬৯) সংসদীয় বিষয়ক (০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ১৪-০৮-১৯৬৯) তথ্য এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (১৫-১২-১৯৭০ থেকে ২০-১২-১৯৭১) |
মন্ত্রীপরিষদ
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. ড: আব্দুল মোতালেব মালিক (পূর্ব পাকিস্তান)
|
০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ২২-০২-১৯৭১ | স্বাস্থ্য, শ্রম, পরিবার পরিকল্পনা, যোগাযোগ (১৫-০৮-১৯৬৯ থেকে ০৭-১০-১৯৬৯) |
২. সর্দার আব্দুর রশীদ
|
০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ২২-০২-১৯৭১ | স্বরাষ্ট্র এবং কাশ্মীর বিষয়ক, রাজ্য এবং সীমান্ত অঞ্চল
|
৩. জনাব আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুদ্দিন (পূর্ব পাকিস্তান)
|
০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ২২-০২-১৯৭১ | শিল্প এবং প্রাকৃতিক সম্পদ
|
৪. নওয়াব মুজাফফর আলী কিযবিলাস
|
০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ২২-০২-১৯৭১ | অর্থ
|
৫. জনাব মোহাম্মদ সামসুল হক্ব (পূর্ব পাকিস্তান)
|
০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ২২-০২-১৯৭১ | শিক্ষা এবং বিজ্ঞান গবেষণা
|
৬. নওয়াবজাদা মোহাম্মদ শের আলী খান | ০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ২২-০২-১৯৭১ | তথ্য এবং জাতীয় বিষয়ক |
৭. জনাব ইহসানুল হক্ব (পুর্ব পাকিস্তান) | ০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ২২-০২-১৯৭১ | বাণিজ্য |
৮. জনাব মাহমুদ আব্দুল্লাহ হারূন | ০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ২২-০২-১৯৭১ | কৃষি এবং কর্ম |
৯. জনাব এলভিন রবার্ট কর্ণেলিয়াস | ১৭-০৯-১৯৬৯ থেকে ২২-০২-১৯৭১ | আইন |
১০. ড: গোলাম ওয়াহিদ চৌধুরী (পূর্ব পাকিস্তান) | ০৪-০৮-১৯৬৯ থেকে ২২-০২-১৯৭১ | যোগাযোগ |
রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টাগণ
নাম | সময়কাল | দফতর |
১. মির্জা মুজাফফর আহমাদ
|
০৮-০৯-১৯৭০ থেকে ২০-১২-১৯৭১ | অর্থনৈতিক সমন্বয় এবং বহিরাগত সহায়তা বিভাগ, অর্থ বিভাগ |
২. জনাব এলভিন রবার্ট কর্ণেলিয়াস
|
২২-০২-১৯৭১ থেকে ২০-১২-১৯৭১ | আইন এবং সাংসদীয় বিষয়ক |
৩. জনাব ম. র. সূফি
|
১৩-০৩-১৯৭১ থেকে ২৯-১২-১৯৭১ | কৃষি এবং কর্ম, কাশ্মীর বিষয়ক বিভাগ |
৪. জনাব স. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ | ০২-০৯-১৯৭১ থেকে ২৮-১২-১৯৭১ | সামরিক |