You dont have javascript enabled! Please enable it! 1949.03.07 | গণপরিষদের ৫ম অধিবেশনের উপর সরকারী প্রতিবেদনের উদ্ধৃতাংশ | পাকিস্তান গনপরিষদ –এর কার্যবিবরনী - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনাম

সূত্র তারিখ
অবজেকটিভ রেজলিউশন সংক্রান্ত বিতর্ক! পাকিস্তান গনপরিষদ –এর কার্যবিবরনী ৭-১২ মার্চ ১৯৪৯

 

[গণপরিষদের ৫ম অধিবেশনের উপর সরকারী প্রতিবেদনের উদ্ধৃতাংশ]
সোমবার, ৭ মার্চ ১৯৪৯
জনাব প্রেম হারি বর্মা (পূর্ববঙ্গ জেনারেল): মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আমি উত্থাপন করতে চাইছি

৩০ এপ্রিল ১৯৪৯ তারিখে জনগনের মতামত প্রকাশের জন্য প্রচারিতব্য সেই প্রস্তাব
মাননীয় বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষন যা আমাদেরকে এগিয়ে নিতে হবে, যা হবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংবিধানের বুনিয়াদ। এই সম্মানিত পরিষদ দ্বারাই সংবিধানের কাঠামো তৈরি হবে যা পাকিস্তানের জনগনকে পরিচালিত করবে, যা অনাগত শতাব্দীর জন্যই প্রযোজ্য হবে, কারন একটি রাষ্ট্রের সংবিধান কাঠামোগত হয়ে গেলে তাতে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হওয়াটা বিরল। সংবিধানের ভিত্তিটা হতে হবে শক্তিশালী, যুক্তিসঙ্গত, এবং সর্বজন সম্মত যাতে করে এই ভিত্তির উপরে দাঁড়ানো কাঠামো অনেক দিন টিকে থাকতে পারে, এবং যা কিছু সময় পার হবার পরে তা আবার বাতিল করতে না হয়। এই কারনেই এই মহৎ কাজের সাথে যুক্ত গনপরিষদের সদস্যরাই শুধুমাত্র সতর্কতার সাথে প্রস্তাবিত ধারা-উপ ধারা গুলো নিরীক্ষা করবেন না, সেই সাথে যাদেরকে আমরা প্রতিনিধিত্ব করছি সেই সব সাধারন মানুষদের ও মতামত দেবার সুযোগ থাকতে হবে। আমরা যদি জনসাধারনের অভিমত গুলো পাই এবং সেই মতগুলো যদি সহায়ক হয়, তাহলে আমাদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করাটা সহজ হয়ে যাবে।

আমি মনে করি না যে দ্রুততম সময়ে এটা পাশ করানোটা সঠিক হবে, জনগনকে তাদের মতামত দেয়ার সুযোগ না দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো তৈরি করতে দশ বছর সময় লেগেছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সাত/আট সপ্তাহের বেশি সময় নেয়া সমীচিন।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, প্রকাশ্যে পালন করা বিভিন্ন ধর্মের মানুষ নিয়েই আমাদের পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং যেখানে আছে ভিন্ন ভিন্ন সামজিক আচার-সংস্কৃতি। সংবিধানের কাঠামোতে তৈরিতে আমাদের এমনভাবে অগ্রসর হওয়া যাবে না যাতে করে কোন ধরনের আশংকা, অবিশ্বাস বা অন্য কোন কিছুর কারন হয় যে কোন সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য। গনপরিষদের সদস্যদের, তাদের প্রতিনিধিত্ব করা নির্দিষ্ট গোষ্ঠির বাইরেও অন্যান্যদেরকেও তাদের অধিকার-স্বার্থের প্রতি সমান ভাবে মনোযোগ দেয়াটা ও পবিত্র দায়িত্ব, যা রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় সব ধরনের মানুষের জন্যই সমভাবে বিচার্য। পাকিস্তানের সকল অংশের নাগরিকদের পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দিতে হবে প্রস্তাবনা তাদের গ্রহনযোগ্য কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার। যদি আমরা দেখি সাধারন জনগনের কোন একটি গোষ্ঠীর কাছে অগ্রহনযোগ্য তবে আমাদেরকে সেই নির্দিষ্ট ধারাট সংশোধন বা পরিবর্ধনের জন্য চেষ্টা করতে হবে যাতে করে উক্ত প্রস্তাবনাটি সবার কাছে গ্রহনীয় হয়।
এখানে কোন সন্দেহ নাই যে, গনপরিষদের যথাযথ অধিকার এবং কর্তৃত্ব রয়েছে সংবিধান বা সংবিধান সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত অনুমোদন করার, তারপরেও আমি মনে করি গনপরিষদের এটা ন্যায্য আচরন হবে না খুব দ্রুত অত্যাবশ্যকীয় কোন চরিত্র সম্বলিত কোন প্রস্তাবনা পাশ করানো, যার উপরে পাকিস্তানের জনগনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে সামনের আগত সময়ের জন্য।

মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ১৯৪৯
প্রস্তাব প্রসংগঃ লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য – চলমান

জনাব ভুপেন্দ্র কুমার দত্ত (পূর্ব বঙ্গ; জেনারেল); মাননীয়, আমি বিনয়ের সাথে উল্লেখ করতে চাই, সেই অনুচ্ছেদটি যা শুরু হয়েছেপুরো বিশ্বমন্ডলের সার্বভৌমত্ব এবং শেষ হয়েছে পবিত্র বিশ্বাস শব্দ দিয়ে, সেটি বাদ দিতে হবে।
মাননীয়, গোঢ়াতেই আমি পরিষ্কার করে নিতে চাই, আমি বিরোধী দলে আছি বলেই এই সংশোধন উত্থাপন করছি না। আমি বিরোধীতার প্রয়োজনেই বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন বলেই, এই পদক্ষেপ নিতে বলছি না। সংখ্যালঘুরা সাংবিধানিক আওতায় কি পাবে, তা স্বতন্ত্র ধারার মাধ্যমে নির্দেশিত আছে। মাননীয়, আমি বিশ্বাস করি, যদি আমি সংখ্যাগরিষ্ঠদের অংশেও থাকতাম, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক উভয় ভাবেই, আমি এই সংশোধন প্রস্তাব এই একই সময়ে উপস্থাপন করতাম।
মহাত্নন, সদ্য সৃষ্টি হওয়া স্বাধীন রাষ্ট্র পাকিস্তানের জনগনের কল্যানের জন্য একটি সংবিধান প্রনয়নের জন্য আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি যা ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থার জন্য সহায়ক হবে। যদিও জনগনের সার্বভৌম ক্ষমতা থেকেই একটি স্বাধীন দেশের সকল ক্ষমতা উদ্ভূত হয়, তথাপি সুনির্দিষ্ট কিছু আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি থাকতে হয় জনগন ও রাষ্ট্রের সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রন ও সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে। উক্ত ধরনের আইন, নিয়ম-কানুন আধুনিক বিশ্বে বিদ্যমান যা রাজনৈতিক এখতিয়ার ভুক্ত থেকেই আবির্ভুত হয়। রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যকার সম্পর্ক সম্ভবত অনাদিকাল থেকেই, নানান রুপে কিন্তু ধরন যাই হোক না কেন এটা সুষ্ঠু রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। অন্যদিকে, মানুষ এবং সৃষ্টিকর্তার মাঝের সম্পর্ক তৈরি হয় ধর্মীয় আওতাধীন। সব যুগেই পুরুষ এবং নারী বিশ্বাস করেছে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ছাড়া ঘাস জন্মায় না, একটি পাতাও ঝরে পড়ে না, একটি তারাও নিজেকে জলজল করে না। তেমনিভাবে মানুষের যে কোন ব্যাপারই নির্দেশিত হয়, নিয়ন্ত্রিত হয় সৃষ্টিকর্তার দ্বারাই। এই সংসদের অনেকেই আছেন, আমি নিসন্দেহে বলতে পারি, বিশ্বাস করে যে আমরা এখানে একত্রিত হতে পারতাম না স্রষ্টার অনুগ্রহ ছাড়া। কিন্তু তার যদি সেটা বিশ্বাসও করে, তারা তাদের কাজ ঠিকই করে, এই সভার কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও, সেই কৌশল নিয়ে, যদিও সেটাকে বিকশিত না করেই, গভীর বিশ্বাসে, মনের সেই অবিকশিত প্রেক্ষাপট নিয়ে তারা সকল সাধুতা, সকল মানবতা দেখায়।

স্রষ্টা সর্বত্র বিরাজমান এবং সর্বশক্তিমান, এই বিশ্বাসকে ধারন করেই বিশাল এক জনগোষ্ঠী এভাবেই যদিওবা জীবন যাপন করছে, তারা এটাকে আরো সুবিধাজনক আরো উপযুক্ত আরো নিয়মনিষ্ঠ ভাবে স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক স্থাপনে এবং ক্ষমতাসীনদের শাসনব্যবস্থার সাথে সম্পর্ক তৈরিতেও কাজে লাগাচ্ছে।
মাননীয়, অধিকন্তু আমি বলতে চাই রাজনীতি এবং ধর্ম মনের দুই স্থানের অন্তর্গত, এমনকি এই দুই স্থান স্রষ্টা উপস্থিতির দ্বারা একে অন্যের সাথে সম্পর্কিত, অথবা এমনকি, যদি ধরে নেই মানব মন বা মানুষের ব্যক্তিত্বের একতা, সম্পূর্নতা বা সাতন্ত্র দ্বারা।
প্রত্যেকটা অঞ্চলের ক্রমবিকাশ, কাজের ধরনের উপর আমরা আরো সহজেই আলাদা করতে পারি। এভাবে আলাদা করে-মানব ব্যাক্তিত্ব বা স্রষ্টা যে কারো একাত্ব বন্ধনকে অস্বীকার না করেও রাজনীতি ক্ষমতার সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান, যেখানে ধর্ম শুধু বিশ্বাসে আবদ্ধ।
দুটো কারন এবং বিশ্বাস পুরোপুরি একীভূত হতে পারে। কিন্তু আমরা দুটোকেই আলদা আলাদা ভাবে কাজ করতে দেই, যাতে দুটোই পুর্ণবিকশিত হতে পারে যার ফলে এই দুটোর একটি উচ্চতর সংশ্লেষন পাওয়া যেতে পারে-একটি ভাল মিশ্রন এমনকি সেই চুড়ান্ত সমাপ্তির দিকে বিবর্তনের পরও, এই দুটি হাতে হাত রেখে কিন্তু বিচক্ষনভাবে কাজ করতে পারে।

আমরা জানি, ব্যক্তির মধ্যে বা কোন গোষ্ঠীর মধ্যে যখন কোন একটা বেপরোয়া হয়ে যায় তখন অন্যটার বিনিময়ে হলেও অস্থিরতার উদ্ভব হয়, সমষ্টিগত হলে তা অবর্ননীয় মানব দুর্দশার কারন হয়, যা দেশটাকেও রসাতলে নিতে পারে যেখানে মানুষ গুলো হীন চরিত্রের হয়। আমাদের তাকানোর দরকার নাই মধ্যযুগের ইউরোপের দিকে বা ফ্রান্সের বিপ্লবের সময়কার উপাসনার রকমগুলোর অন্যপাশের দিকে। এই উপমহাদেশেরই ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ের দিকে আমরা তাকিয়ে দেখতে পারি। আমার সময়কাল উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। এমনকি আমরা দুই বছর আগেও সুবিবেচক মানুষের মত ব্যবহার করতে পারিনি। আমরা কোন পক্ষে থেকেছি, বিশ্বাস প্রাধান্য পেয়েছে নির্দিষ্ট কারনের উপরে, যেটা সাধারন ভাবে নমনীয় থাকার কথা সেখানে আমরা নিয়েছি কট্টরপন্থা।

আমি বুঝতে পারি, আমি অতীব সূক্ষ্ণ বিষয়ের উপরে উপস্থাপন করে যাচ্ছি। কিন্তু আপনার কাছে পেশ করতে দিন, মাননীয় সকল অবমানিত অবস্থায়, আমাদের এবং আমাদের স্রষ্টার মধ্যকার বা মহান রাষ্ট্র ও এর জনগনের এবং শক্তিমান সৃষ্টিকর্তার মধ্যকার যে সম্পর্কই আমরা বেশিরভাগ চিন্তা বা অনুভব করি না কেন, আমাদের সবাইকে এর প্রতি অনমনীয় হওয়া প্রয়োজন, আমরা যখন রাজনৈতিক কারনে একটি রাষ্ট্রের সংবিধানকে কাঠামোগত করতে একত্রিত হয়েছি সেখানে আমরা এই ব্যাপারটাকে অনেক বড় করে ফেলেছি।

রাজনীতি, আগে যেমন বলেছি, সুনির্দিষ্ট কারনের আওতাধীন। কিন্তু এটাকে ধর্মের সাথে গুলিয়ে ফেলে, যা পবিত্র এই প্রস্তাবনার প্রারম্ভিকতায় ইতিমিধ্যেই করা হয়েছে, যার দ্বারা বিশ্বাসের আরেকটি ধরনকে তুলে আনা হয়েছে। একই বিষয় সন্নিবেশিত আছে “সার্বভৌমত্ব” সম্পর্কীয় অনুচ্ছেদে যা বিশ্বের নির্বাচিত সংবিধানের প্রথম খণ্ডের ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায়, যা গণপরিষদের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। যার ফলে একদিকে আপনি ধর্মকে সমালোচনা করার ঝুকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন, যা ক্ষুব্ধ করবে পবিত্র ব্যাপারকে অসম্মান করার কারনে; অপর দিকে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রনীতি যেখানে সম্পৃক্ত, আপনি যুক্তি কে দুর্বল করছেন, সমালোচনাকে বাধাগ্রস্ত করছেন, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সমূহ- বিশেষ করে আধুনিক গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমূহ – আমরা যেমন জানি, মাননীয় সমালোচনার দ্বারা উৎপাদন ও অগ্রসরতা কে বৃহৎ পরিসর থেকে আরো বড় আঙ্গিকে নিয়ে যায়। যতক্ষন পর্যন্ত আপনি পরিপূর্ন ভাবে রাজনীতির আওতায় থাকবেন, তখন উদারতার সাথে মুক্তভাবেই সমালোচনা হবে, এমনকি গভীরতা এবং তিক্ততার সাথে।

কিন্তু যখনি আপনি ধর্মকে নিয়ে আসবেন, বিশ্বাসের প্রতীক হিসাবে বস্তুগত ব্যাপার, অসঙ্গতভাবে সমালোচনার প্রতি অসন্তোষের দরজা খুলে দিবেন। যা স্বৈরতন্ত্রকে বড় পরিসরে জেকে বসার দিকে ধাবিত করলেন। মহাশয়, আমি মনে করি- আমার এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারন আছে যে, পাকিস্তানের স্থপতি কায়েদ-ই-আজম জীবদ্দশায় এই প্রস্তাবনা বর্তমান অবস্থায় সংসদে উত্থাপিত হত না। এমনকি আপনার সামনে, এই প্রস্তাবনার সম্মানিত প্রস্তাবক রাষ্ট্র পরিচালনায় হাল ধরার মুহুর্তে, আমি নির্ভয়ে বলতে পারি সমালোচনার কন্ঠরোধ করা হবে অথবা স্বৈরতন্ত্র চেপে বসার সুযোগ খুজবে।
কিন্তু মহাশয়, আমরা একটি সংবিধান প্রস্তুত করছি যা আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে, সম্ভবত এমনকি আমাদের অনাগত পরবর্তী প্রজন্মকেও। তাই কোন মানবসৃষ্ট কারন যাতে বেঁচে থাকাকে বাধাগ্রস্ত না করে, আমরা এমন কিছু না করি ,যা আমাদের আগামী প্রজন্মকে কোন অতীত নিয়তির প্রচন্ড প্রোকপে সোপর্দ করে।
তাই চলুন মানষিক বিচার ক্ষমতা দিয়ে এটাকে যতটুকু সুরক্ষিত করা সম্ভব তা কাজে লাগিয়ে আমরা এমন কিছু না করে বসি ,যা আমাদের আগামী প্রজন্মকে কোন অতীত নিয়তির প্রচন্ড প্রোকপে সোপর্দ করে ।।
হয়ত খোদা এটা ক্ষমা করবেন, কিন্তু একদিন হয়ত আমাদের জীবদ্দশায় একটা মারাত্মক সমস্যা নেমে আসবে, দুঃসহ রাজনৈতিক বিপর্যয় ,এই দেশে হয়ত একজন ইয়াঙ্কসিকাই অথবা বাচ্ছা ই সাকাও সুযোগ পেয়ে যাবে তার ক্ষমতা এবং শাসন কায়েমের ।হতে পারে এই পটভুমির কারনে সে তার কাজের যথার্থতা খুঁজে পাবে। আমাদের দেশের জনগনের প্রতি এই সূত্র ধরে সে হয়ত তার দাবী প্রতিষ্ঠার চেস্টা করবে যে , এ দেশের জনগনই তাকে আল্লাহর প্রতিনিধ নির্ধারন করেছে।তাকে শুধুমাত্র একটি দল গঠন করতে হবে ও রাষ্ট্রের মাধ্যমে এটা পেতে হবে, এবং এটা ঘোষণা করতে হবে যে, তার সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে সেই পাকিস্থানের শাষক।
এর বিপরিতে স্যার আমরা কি দূরদর্শীতা দিয়ে দেশে কাওকে অলৌকিক স্থান করে দেওয়ার সম্ভাবনা এড়াতে পারিনা? বর্তমান ইতিহাসে হিটলার এই কাজটি করেছে কিন্তু আমি নিশ্চিত স্যার সিদ্ধান্ত গ্রহঙ্কারীগন এতে হিটলারের কোন কৃতিত্ব দেখেন না ,না বিশ্ব এটা খুব সমর্থন করেছে। এবং এখন আমরা যখন বাকি বিশ্বের খুব কাছাকাছি,এই সভায় আমরা বিষয়টা উপেক্ষা করে খুব বিচক্ষনতার পরিচয় দিব না।
প্রফেসর রাজ কুমার চক্রবর্তিঃ স্যার অনুমতি প্রার্থনা করছি –
“‘সাংবিধানিক সংসদ’ লেখা দিয়ে শুরু অনুচ্ছেদটিতে ‘গনতান্ত্রীক’ শব্দটি ‘স্বাধীন’এর পর সংযোজিত করার জন্য। ’
সুতরাং এই সংশোধন দ্বারা অনুচ্ছদটি নিম্নোক্ত ভাবে পরা হবেঃ-
‘পাকিস্তানের জনগনের প্রতিনিধিত্বকারী এই সাংবিধানিক আইনসভার উদ্দেশ্য স্বাধীন, সার্বভৌম গনতান্ত্রিক পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান প্রনয়ন করা।’ স্যার আমি ধরেই নিচ্ছি যে এই অনুচ্ছেদটি আমাদের সংবিধানের ধরন –প্রকৃতি বিবৃত করে । প্রস্তাবনার প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, তাঁর প্রদত্ত পরিসীমার ভেতরেই প্রয়োগ করার জন্য যে কর্তৃত্ব খোদা পাকিস্থান রাষ্ট্রের ওপর অর্পণ করেছেন তা এক পবিত্র আস্থা পূর্ণ দায়িত্ব, এবং এই অনুচ্ছেদে আমদের সংবিধানের ধরন প্রকৃতি স্পষ্ট করার বিষয়ও উত্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে এটি একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন সংবিধান হবে, কিন্তু এখানে গণতান্ত্রিক বলে কোন শব্দ নেই। এই অনুসঙ্গে আমি “গণতান্ত্রিক ” শব্দটি ঠিক স্বাধীন শব্দটির পরেই যোগ করতে চাই। এর পক্ষে আমি খুবই সংক্ষিপ্ত যুক্তি দিব। অনুচ্ছেদে দেওয়া সংবিধানের বিবরণটিকে আমি যথাযথ বলে বিবেচনা করতে পারছিনা। এটা পুরনাঙ্গ বিবরণ নয় । গণতান্ত্রিক শব্দটি ওখানে থাকা উচিৎ ছিল। সংবিধান সম্পর্কে বলার সময় আমাদের জনতা এবং বিশ্বকে জানানো দরকার যে আমরা এই ধরনের বা ঐ ধরনের সংবিধান বা সরকার ব্যবস্থা গঠন করতে যাচ্ছি। আমাদের এটা স্পষ্ট ভাবে জানানো উচিৎ যে সরকার একজন ব্যক্তির দ্বারা নাকি কয়েক জন ব্যক্তির দ্বারা নাকি অনেক কজন মানুষ দ্বারা পরিচালিত হবে। সেটি হতে পারে রাজতন্ত্র, হতে পারে স্বৈরতন্ত্র, হতে পারে রাজ্যশাসন ব্যবস্থা আবার হতে পারে গণতন্ত্র। আমার বিশ্বাস্ আমাদের সরকার হবে গণতান্ত্রিক, কিন্তু এখানে কোথাও তার উল্লেখ নেই। এই আমার অভিযোগ আর তাই আমি সংশোধনের বিষয় উত্থাপন করেছি।স্যার বিশ্ব জুড়ে আজ অস্থিরতা বিরাজ করছে, আর এর কারন আপনি জানেন। এর একটি কারন হল সাধারণ মানুষের সরকারের প্রশাসনে কথা বলার স্থান নেই। আমাদের জীবিকার জন্য যেগুলো প্রয়োজন সেসব এরাই উৎপন্ন/তৈরি করে। মাঠে, কলকারখানায় এরা শ্রমিক, রাষ্ট্রের বিষয়ে এদের কথাবলার বা মতামত প্রদানের সুযোগ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী এই অস্থিরতা প্রশমিত হবেনা। আজ পর্যন্ত যতো ধরনের সরকার ব্যবস্থা বিকাশ লাভ করেছে তার ভেতর গণতন্ত্র তার সকল অপূর্ণতা এবং ত্রুটি নিয়েও সর্বসেরা / সর্বোত্তম
সুতরাং স্যার আমরা গনতন্ত্র শব্দটি প্রতিস্থাপন করে বিশ্বের অস্থিশীলঅবস্থা এবং আমাদের প্রশাসনিক অগ্রহনযোগ্য বিষয়াদি দূর করতে সক্ষম হব ।গণতন্ত্র শব্দটি এখানে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে গৃহিত সিদ্ধান্ত বিশ্বের সামনে একটি আশার বার্তা, একটি আনন্দের বার্তা, যে আমরা জনগনের দ্বারা,জনগনের জন্য ,জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করছি ।স্যার কোন সন্দেহ নেই চতুর্থ প্যারা যেখানে গণতন্ত্র, স্বাধীন্‌, সমানাধীকার, সহনশীলতা, সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতিপুর্নভাবে ইসলাম সমর্থন করে । ‘গনতন্র’ শব্দটি ঘটমান কিন্তু আমি বলেছি ওই অনুচ্ছেদে ‘গনতন্ত্র’ শব্দটি খুব হাল্কা ,গুরুত্বহীনভাবে ব্যবহৃত এবং সেভাবেই আমাদের সকল প্রতিষ্ঠান এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, সুতরাং এই অনুচ্ছেদ যেখানে আমরা রাষ্ট্রের সংবিধানকে বিশেষায়িত করতে আমি এই উপসংহারে যাচ্ছি এবং নির্দিষ্ট ভাবে বলছি আমরা একমাত্র গনতান্ত্রিক সরকারই প্রতিষ্ঠা করবো অন্য কোন সরকার না।

——

প্রস্তাব প্রসংগঃ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য- চলমান
৯ মার্চ, ১৯৪৯

রাষ্ট্রপ্রধানঃ রেজ্যুলুশন ও সংশোধনী নিয়ে এখন আলোচনা করা হবে।
ডঃ ইশতিয়াক হুসাইন কোরেশীঃ (পূর্ব বাংলাঃ মুসলিম)ঃ মাননীয় রাষ্ট্রপতি, জনাব, তাদের দারুন বক্তব্যের জন্য বিভিন্ন সংশোধনীর উত্থাপনকারীদের আমি প্রশংসা করছি । এই বক্তব্যগুলির বেশিরভাগই খুব উদ্দীপক এবং আমি নিশ্চিত, সংশোধনী উত্থাপনকারীদের প্রকাশিত দেশপ্রেমের এই আবেগ খুবই সমাদৃত হয়েছে । সভার এই অংশে শুধু আমাদের কাছেই নয়, আমি মনে করি সমগ্র জাতির কাছেই। জনাব, বক্তব্যগুলো এবং সেখানের যে বিতর্কগুলো বিভিন্ন সংশোধনীর সমর্থনে বলা হয়েছে, সেগুলোর উপর সংশোধনী উত্থাপনকারীদের দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত হয়ে আমি কিছু মন্তব্য করতে চাই। জনাব, আমি এই বক্তব্যগুলো দুই ধরনে ভাগ করতে চাই । একপক্ষে রেজ্যুলুশন সমর্থক ও উত্থাপনকারী এবং অন্যপক্ষে সংশোধনী উত্থাপনকারীদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গীর মৌলিক পার্থক্য প্রথম ধরনের বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে। অন্য বক্তব্যগুলোতে, যেগুলো আমার কাছে দ্বিতীয় ধরনের বক্তব্য বলে মনে হয়েছে, তার ভিত্তি হচ্ছে আশঙ্কা, রেজ্যুলুশনের লেখাগুলো এবং এর ভেতরের নীতিগুলো নিয়ে গভীর পর্যালোচনা করলে এমন আশঙ্কার যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। জনাব, আপনার অনুমতি নিয়ে আমি প্রথমেই বলতে চাই মতামতের মৌলিক পার্থক্য নিয়ে যা কিছু নির্দিষ্ট সংশোধনী-উত্থাপনকারী এবং আমাদেরক কয়েকজনের মাঝে বিদ্যমান ।

জনাব, এটা বলা হয় যে রাজনীতি এবং ধর্ম পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা থাকা উচিত, কেননা রাজনীতি ও ধর্ম মানুষের ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতের কাজকর্মের অন্তর্গত। এবং সত্যি বলতেএটাও বলা হয় যে একটি যুক্তিতর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং অন্যটি বিশ্বাস এর উপর, এগুলো মানুষের মনের ভিন্ন ভিন্ন অংশের সাথে সম্পর্কিত। আমি বিনয়ের সাথে বলতে চাই এটা অসম্ভব। এগুলো পরস্পরের থেকে আলাদা নয় একটি সহজ কারনে যে, আমাদের যুক্তি গড়ে ওঠে আমাদের বিশ্বাসের উপরে এবং আমাদের বিশ্বাস গড়ে ওঠে আমাদের যুক্তির এর উপরে। আমরা যদি জোড়ালোভাবে চিন্তা করতে না পারি , আমরা হয়ত কোনো আদর্শের উপরেই বিশ্বাস রাখতে পারবো না, এবং আমরাদের যদি কিছু বিশ্বাস না থাকে, কোন পথে আমাদের চিন্তাধারা চালিত হওয়া উচিত তা নির্ণয় করা আমাদের জন্য নিতান্তই অসাধ্য। অতএব, আমি বলতে চাই যে বিভক্ত ব্যক্তিত্বের এই তত্ত্ব গ্রহন করা পুরোপুরি অসম্ভব। এটা মেনে নেওয়া অসম্ভব যে আমাদের বিশ্বাসকে আমাদের রাজনৈতিক আচার থেকে আলাদা রাখা উচিত এবং আমাদের কিছু নির্দিষ্ট আচার গড়ে ওঠা উচিত শুধুমাত্র যুক্তির উপর এবং আর অন্যান্য কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্র গড়ে ওঠা উচিত শুধুমাত্র বিশ্বাসের উপর। এই দূর্বোধ্য সমস্যা নিয়ে বাকি আলোচনা আমি মনোবিদদের হাতে ছেড়ে দেবো যারা এটা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। আমি বলতে চাই যে, যেকোনো ভাবেই, এই যুক্তি ও বিশ্বাসের বিভক্তির দৃষ্টিভঙ্গি আমরা গ্রহন করতে পারি না। ধর্মটা আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিক পোশাক নয় যে সেটা আমরা উপাসনালয়ে ঢোকার সময় গায়ে চড়িয়ে নেবো আবার আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন করার সময় খুলে রাখবো । এই তত্ত্ব আমাদের কাছে বৈদেশিক। এটা নিয়ে আরেকটু নিরীক্ষণ করা যাক । রেজ্যুলুশন কি বলছে ? রেজ্যুলুশন বলছে যে আমাদের নীতি গড়ে উঠবে সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাসের উপর। এটা বলা হয় যে, ঈশ্বর হয়ত আছেন কিন্তু তাকে তোমার জীবনে নিয়ে এসো না। আমার একটা গান মনে পড়ছে যেটা রোমান সাম্রাজ্যের শেষের দিকে ইউরোপিয়ান দার্শনিকদের মাঝে খুব জনপ্রিয় ছিলো, যেখানে বলা হয়ঃ ‘দেবতা বলে কিছু নেই, কিন্তু যদি থেকেও থাকে, মানুষের বিষয়-আশয় নিয়ে, তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই’। এই দেবতত্ত্ব রোমানদের চিন্তাধারার সংক্ষিপ্তসার প্রকাশ করে যা তাদের অযাচিত ধ্বংস ডেকে আনে। আজ কি আমরা একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছি ? আমরা কি আসলেই নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক আদর্শ থেকে রাজনীতি কে সম্পূর্ণ ছিন্ন করতে যাচ্ছি ?
বলা হয় যে যদি আমরা ধর্ম কে রাজনীতির গন্ডিতে প্রবেশ করতে দেই, তবে সেখানে সংঘর্ষ হতে পারে, বিপ্লব এবং যুদ্ধ হতে পারে। এটা সত্য যে, কখনো কখনো মনুষ্যত্ব ভুল করেছে এবং ধর্মের উপর ভিত্তি করে যুদ্ধরত হয়েছে। তবে এটিও কী সত্য নয় যে আমরা আমাদের সকলের জীবদ্দশায় যত যুদ্ধে লড়াই করেছি সব গুলো ধর্মের জন্য ছিলোনা? আমি সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি আমাকে ভুল প্রমাণ করতে যে, বিশ্বের ইতিহাসে ধর্মের জন্য এমন কোনো যুদ্ধ হয়েছে যেটি এই যুদ্ধ গুলোর মত সর্বনাশা ছিল। এই সমাধানের বিবেচনায় আমরা বিভ্রান্তিমূলক চিন্তাভাবনা আনা থেকে বিরত থাকি।বিশাল সংঘর্ষ কখনো বিশ্বাসের কারণে বাধে না বরং বিশ্বাসের কমতির কারণে হয়। যখন আমরা নৈতিকতার, ধর্মের, আধ্যাত্মিক সত্যের সীমার মধ্যে না থেকে অতি ক্ষুদ্র মানসিকতায় ডুবে, অন্যের ধারণ করা ভালো জিনিসের প্রতি হিংসা করে, যুদ্ধের জগতে প্রবেশ করি। আমি আরো বলব যে যখনই রাজনীতি নৈতিকার মৌলিক বিষয় থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, সম্মতি যেটি আমাদের বিশ্বাস বাদে আর কিছুতেই নেই, মনুষ্যত্ব বিপর্যয়ের কাছে হার মেনেছে।আমি কিছু অধ্যায় আর লাইন উদ্ধৃতি করতে অতি ইচ্ছুক যা নানান সাংঘার্ষিকতায় বিশ্বাসের অভাবের কারণে মনুষ্যত্বকে গ্রাস করেছে।এটি কী যুক্তির দেবী ছিল না যিনি প্যারিসের মন্দিরে ছিলেন?এটা কী সত্য নয় যে তার রাজ্যঅভিষেক রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে এসেছিল? মানবতা ঐ দিনের কথা কী ভুলে গিয়েছে যেদিন সাদা আতংক লাল আতংককে অনুসরণ করেছে? এই কারণে ঈশ্বরের দোহাই, বিষয়গুলোকে আর বিভ্রান্ত করবে না। যখনই মানুষের আবেগ গভীরভাবে কাজ করে এবং যখনই এই আবেগ নৈতিকতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত না হয়, যা দিয়ে মানবতার জীবনকে পরিচালনা করা উচিত, তখন সেখানে বিপর্যয় ঘটেছে। অতএব স্যার, আমি দুঃখিত, এটি অন্তত আমার জন্যে সম্ভব না ধর্ম আর রাজনীতিকে পুরোপরি বিচ্ছিন্ন রাখার চিন্তাভাবনা ব্যাখ্যা করা। যদি কারো বলার থাকে যে ধর্মীয় কুসংস্কারকে মনুষ্যত্বের সাথে আমাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে দেওয়া উচিত হবে না তবে আমি অবশ্যই বলব “হ্যা”
________________________________________
বেশ কিছু অন্যান্য বিতর্কও সামনে এসেছে। এটি বলা হয়েছে যে যতক্ষণ পর্যন্ত ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলি সম্পর্কিত তা মাননীয় সমাধানের প্রস্তাবক ব্যখ্যা করেছেন, কিন্তু তারপরও এটি জিজ্ঞেস করা যে “আপনি কিভাবে নিশ্চিত হতে পারেন যে আগামীকাল এ ধরণের কোনো ব্যাখ্যাতা আসবেন না যিনি এই শর্ত গুলো ভিন্ন ভাবে ব্যখ্যা করবেন?” অতএব স্যার, কে এটির নিশ্চয়তা দিবে? পৃথিবীর কোনো সংবিধান কী এ ধরনের নিশ্চয়তা দিতে পারবে? যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আইনের আশ্রয়ে থাকবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সেখানে ব্যাখ্যার সু্যোগ থাকে। বাস্তবিক ভাবে বলছি কে প্রতিজ্ঞা করে বলবে যে আজকের নির্ধারতি কোনো সীমা কিংবা কোনো গৃহিত সংবিধান আগামীকাল অন্যভাবে ব্যাখ্যা করা হবেনা? কিন্তু আমরা অন্তত একটি সীমা নির্ধারণ করছি যেটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় প্রদান করা সম্ভব না এবং তাহল এই। এই সংবিধান হয়ত পরিবর্তন করা হবে, যেটি অবশ্যই হবে, আমাদের পরবর্তীতে যারা আসবে তাদের দ্বারা। আমরা আমাদের উত্তরাধিকারীদের আটকাতে পারিনা, তবে এই পরিবর্তন গুলো অবশ্যই অন্তত মৌলিক বিষয়বলিকে অনুসরণ করতে হবে যে গুলো কেউ আমাদের শাস্ত্রে জ্ঞান আরোহণে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।পাশাপাশি, এটিও বলা যায় যে, শুধুমাত্র ধর্মকে এনে এবং ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়বলি স্বীকৃতি দানের মাধ্যমে আমরা পরম কর্তৃত্বের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করছি। শুধু তাই নয়, আমরা রাষ্ট্রের উপর দেবত্ব আরোপের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছি। আমি নিশ্চিত যে কোনো কিছুই ভূমিকার এই শব্দগুলোর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। এই ভূমিকা শুরুতেই ঘোষণা দেয় যে সকল কর্তৃত্ব রাষ্ট্রের মানুষের কাছে অর্পিত এবং কর্তৃত্ব আসলেই ঈশ্বরের কাছে এবং আর কারো কাছে নেই। যদি তাই হয় তবে কিভাবে একজন মানুষ ঈশ্বরের অস্ত্বিত্বে বিশ্বাস করে যুগপৎভাবে রাষ্ট্রের দেবত্ব আরোপকে বিশ্বাস করতে পারে?…………।
এটি বলা হয় যে ধর্মনিরপেক্ষ সংসদীয় সরকার একমাত্র গণতন্ত্রের মাধ্যমে গঠন হয়। “ধর্মনিপেক্ষ” বলতে কী বুঝায়? আমি আমার বন্ধুদের বলব অভিধানের পরামর্শ নিতে। অভিধানে বর্ণিত আছে ধর্মনিরপেক্ষ মানে, যা কিছু ধর্মযাজকের মধুর ইচ্ছার বিরুদ্বে নির্ভর করে তাতে নিভৃতবাসী থাকা। যখন আমরা বলি যে ইসলামে ধর্মযাজকের কোনো স্বীকৃতি নেই, আমার জানা নেই তখন কেন আমাদের বারবার এটি বলা হয় যে আমাদের গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষ নয়। এটি কী কোনো ধর্মযাজক দ্বারা পরিচালিত? এখানে বেশ ভালো রকমের বিভ্রান্তি রয়েছে “ধর্মনিরপেক্ষ” শব্দটির ব্যবহারে যে যেন কেউ এর উপর বিরক্ত। অবশ্যই যদি ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি মানে, ইসলামের আদর্শ, ধর্মের মৌলিক বিষয়দি, নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যে গুলো আমাদের মানুষ নিজেদের মধ্যে ধারণ করে সেগুলো পর্যবেক্ষিত হবে তবে আমি শঙ্কিত যে, স্যার এই ধরণের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র পাকিস্তানে আমাদের মধ্যে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।
(শুনো ,শুনো)……………………

১০ই মার্চ, ১৯৪৯

মাননীয় সরদার আব্দুর রব খান নিশতার (পশ্চিম পাঞ্জাবঃ মুসলিম)ঃস্যার, সমাধানের ব্যাপারে বিরোধী দলের সদস্য এবং আমার বন্ধুরা যারা এইমাত্র কথা বলল তাদের দ্বারা যে সমালোচনা আরোপিত হয়েছে, দেখা যাচ্ছে যে, তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, তা সব কিছু ভুল বুঝোবুঝির উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। আমি আসলে সংশোধনীর ব্যাপারে বলব যেটা সম্মানীত সদস্য কর্তৃক প্রস্তাব করা হয়েছে এবং সমাধানের কিছু নির্দিষ্ট অধ্যায়ের আলোকে সেগুলো আসলেই প্রয়োজন কিনা দেখানোর প্রচেষ্টা করব যেখানে একই চিন্তাভাবনা ভিন্ন ভাষায় বর্ণিত হয়েছে অথবা নেয়া পরামর্শ যেগুলো এই সভা কর্তৃক গৃহীত হওয়া উচিত।
প্রথম এবং প্রধান বিরোধিতার আওয়াজ উঠেছে সমাধানের প্রস্তাবনা এর বিরুদ্বে এবং এই প্রতিকূল সমোলোচনার এর সমর্থনে মূল ভাবনা যেটি সামনে আসে তা হল রাজনীতি ধর্ম হতে আলাদা, রাজনীতিকে ধর্ম হতে আলাদা রাখা উচিত এবং ধর্মের সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। উভয়ের জগত ভিন্ন এবং এই কারণে রাষ্ট্রের ব্যাপারে তাদের এক করা উচিত হবে না। আচ্ছা, স্যার যতক্ষণ পর্যন্ত এই যুক্তি খাটে, সারা বিশ্ব জানে এবং নির্দিষ্ট করে যারা ইন্দো-পাক মহাদেশে আছে তারা আরো ভালো জানে যে, এই যুক্তিতে মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। আমি খুব ভালোভাবে এই পার্থক্যের কারণ জানি। হয়ত অমুসলিমরা যারা ধর্ম এবং রাজনীতিকে বিচ্ছিন্ন রাখার সমর্থনে তারা হয়ত তাদের নিজেদের ধর্মের দৃষ্টি কোণ থেকে ব্যাপারটি দেখছে। হয়ত তাদের ধর্ম বলে যে ধর্ম শুধুমাত্র তার সৃষ্টিকর্তার সাথে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে এবং আর কিছুনা। কিন্তু আমরা, মুসলিমরা এবং আমাদের নেতা, মুসলিমদের প্রধান নেতা কায়েদ –ই-আজম হাজারো আলোচনা থেকে ঘোষণা দিয়ে আসছে যে আমাদের জীবনের ভিতরে এবং বাইরে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমার বন্ধুদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেশ ভিন্ন। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের ধর্ম শুধুমাত্র আমাদের সাথে ঈশ্বরের সম্পর্কে নিয়ন্ত্রণ করেনা, সাথে আমাদের জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা সবসময় এটিকে বর্ণনা করে এসছি এবং সঠিক ভাবে করে এসেছি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে। অতএব, এটি জানা স্বত্তেও এবং কয়েক বছর ধরে ইন্দো-পাক মহাদেশে চলমান বিতর্ক স্বত্তেও, এটা আজ আশা করা যায় যে এই মতবাদ যেটি আমাদের বন্ধুদের সামনে এসছে যারা প্রস্তাবনার বিরোধিতা করেছে, আমি বলি যে এটি অতিরিক্ত। এটি আমাদের বিশ্বাস নয়। এই ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। অতএব এই ব্যপারে কোনো ভুল বুঝোবুঝি হতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু তা কোনো ভাবেই তাদের প্রভাবিত করেনা। এই মতবাদ অথবা জীবনের দৃষ্টিভঙ্গিকে তাদের এই দৃষ্টিকোণ থেকে এমন ভাবে বিশ্লেষণ করা উচিত যেন তা খারাপ ভাবে তাদের আইনসঙ্গত অধিকারকে প্রভাবিত না করে। তাদের এটা এভাবে দেখা উচিত যে, জীবনের এই দর্শন বা এই দৃষ্টিভঙ্গি তাদের বৈধ স্বার্থে বিরূপ প্রভাব না ফেলে।
যদি এই কারণে সংখ্যালঘুদের বৈধ স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তাদের অবস্থান বুঝতে পারা যাবে।কিন্তু এটা স্বীকার করতে হবে যে তাদের অভিযোগ করার কোন ভিত্তি নেই।আসলে বিষয়টা হচ্ছে যখন আমরা বলি যে আমাদের জীবন বিধান হচ্ছে ইসলাম এবং আমরা চাই যে আমাদের মুসলিম হিসেবে জীবন ধারণ করা উচিত এবং আমাদের সংবিধানকে ইসলামিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত তখন এটা সংখ্যালঘুদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিশ্চয়তা দেয় যে নিশ্চয়তা অন্য কোন সংবিধান তাদের দিতে পারতো না।এটা তাদের সংখ্যাগুরুদের স্বেচ্ছাচার থেকে রক্ষা করেছে।তারা জানে সংবিধানে, যা গণতান্ত্রিক সংবিধান নামে পরিচিত তাতে সংখ্যাগুরুদের স্বেচ্ছাচারিতার মানে কি আছে। যখন আমরা বলি যে এই দেশে যে কর্তৃত্ব প্রয়োগ করা হবে তা সর্বশক্তিমান কর্তৃক প্রদত্ত যিনি এই বিশ্বের সার্বভৌম শাসক এবং এটা তাঁর থেকে আসা একটা পবিত্র বিশ্বাস যা পাকিস্তানের জনগণের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হবে, তখন তাদের এই ঘোষণার তাৎপর্য বোঝার চেষ্টা করা উচিত।এই ঘোষণা সংখ্যাগুরুদের উপর বিশাল দায়িত্ব অর্পণ করেছে।সংখ্যাগুরুদের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে এটা সংখ্যালঘুদের জন্য এটা অনেক বড় একটা নিশ্চয়তা, অনেক শক্তিশালী একটা সুরক্ষা প্রদান করে কারণ সংখ্যাগুরু যারা ক্ষমতায় থাকবেন তাদের এই ক্ষমতা সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুদের সার্বভৌমের নিকট থেকে আসা পবিত্র বিশ্বাস হিসেবেই প্রয়োগ করতে হবে।সুতরাং যখন আমরা বলছি যে সংবিধানটি ইসলামিক নীতির উপর ভিত্তি করে হবে এবং রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব সর্বশক্তিমানের কাছ থেকে পাওয়া যিনি শুধুমাত্র পাকিস্তানের নন বরং গোটা বিশ্বের সার্বভৌম শাসক, তখন সংখ্যালঘুদের সেটাকে স্বাগতম জানানো উচিত।আমার মনে হয় কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্য তারা এর বিরোধিতা করছেন।যখন আমরা বলি যে সর্বশক্তিমান শুধুমাত্র পাকিস্তানের নন বরং গোটা বিশ্বের সার্বভৌম শাসক তখন এটা একটা সত্যি কথা এবং আমরা মানি বা না মানি এটা সত্য।এই ঘোষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নীতির আভাস দেয় এবং সেটা হচ্ছে সারা বিশ্বের মানুষের ভেতর ভ্রাতৃত্বের নীতি।সুতরাং,আমি বলব যে এটা এমন একটা নীতি এবং ঘোষণা যেটাকে সকলের স্বাগতম জানানো উচিত।এটা কি বলা হয়েছে যে কেন কর্তৃত্ব এর জনগণের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কাছে অর্পণ করা হয়েছে? এটা বলা হয়েছে যে এটা সম্ভব যে এটাকে কেউ কেউ ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন।আমি বলব যে কোন ব্যক্তি যিনি সঠিক ভাবে পড়েছেন তিনি এটাকে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করবেন নাঃ কেবলমাত্র যিনি এটা পড়েছেন কিন্তু বুঝেন নাই তিনিই এর ভুল ব্যাখ্যা করবেন।এই বাক্যের পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি রয়েছে।আমার বন্ধু জনাব চক্রবর্তী এবং আমার অন্য বন্ধু জনাব কামিনী কুমার দত্ত নিজেরাই “ রাষ্ট্র ” কে জনগণের সংগঠিত ইচ্ছা বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন।যেটা সঠিক।আমরা বলি যে জনগণের মাধ্যমেই ক্ষমতা জনগণের সংগঠিত ইচ্ছার উপর অর্পিত হয়।কোথায় আপত্তিটা রয়েছেঃ আমি আমার বন্ধুদের বলতে চাই এর মানে কি এবং আমি আশা করি যে তারা এর প্রকৃত মানে জানার পরে তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করবেন।এর মানে হচ্ছে পাকিস্তান নৈরাজ্য সমর্থন করে না।এর মানে হচ্ছে পাকিস্তান বিশৃঙ্খল এলাকায় বিশ্বাস করে না, যেখানে কোন সরকার নেই, যেখানে রয়েছে শুধুমাত্র নৈরাজ্য-ইসলাম সংগঠিত অস্তিত্বে বিশ্বাসী এবং সেই জন্যে যখন এই প্রস্তাবে আমরা বলছি যে পাকিস্তানের জনগণের মাধ্যমে কর্তৃত্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রের উপর অর্পণ করা হয়েছে তখন এর মানে হচ্ছে কর্তৃত্ব জনগণের উপর দেয়া হয়েছে কিন্তু সেই ক্ষমতা জনগণ কর্তৃক তাদের সংগঠিত ইচ্ছা এবং সংগঠিত ভাবে ব্যবহৃত হতে হবে।এটা এরকম নয় যে জংগলের আইনের অধীনে কেবল জংগলের মানুষের মতই থাকতে হবে।এই বিশেষ বাক্যাংশ দিয়ে এটাই বোঝানো হয়েছে।এটা কোন ভাবেই জনগণের ক্ষমতাকে খর্ব করছে না।প্রস্তাবে এই অবস্থান বারবার ব্যাখ্যা করা হয়েছে।বেশ কিছু সংশোধনী আমার সম্মানিত বন্ধু-গন কর্তৃক সামনে আনা হয়েছে যার প্রতিটি একটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করে কারণ তাদের মনে কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে যে সম্ভবত পাকিস্তান রাষ্ট্র-পাকিস্তানের সংবিধান- গণতান্ত্রিক নীতির উপরে ভিত্তি করে হবে না।
তারা প্রস্তাব দিয়েছেন যে শব্দটি হওয়া উচিত “ জনগণের উপর অর্পিত”। আরেকজন ভদ্রলোক বলেছেন গণতান্ত্রিক শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আরেকজন ভদ্রলোক বলেছেন যে জনগণের, জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা গঠিত সরকারের নীতি সম্বলিত বাক্যাংশ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সব সংশোধনী শুধুমাত্র একটি বিষয়ের জন্যেই: সেটা হচ্ছে পাকিস্তানের সংবিধান একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সংবিধান হবে, এমন একটি সংবিধান হবে যেখানে জনগণের ইচ্ছাই চূড়ান্ত হবে এবং আমার এক বন্ধুর বক্তব্য অনুযায়ী কোণ বিশেষ ব্যক্তি ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারবে না। আমি বলবো স্যার যে যদি কোন ব্যক্তি এই প্রস্তাবে চোখ বুলায় তাহলে তার মনে কোন সন্দেহ থাকবে না যে এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়েছে, শুধু নিশ্চিত নয় কার্যকর ভাবে সুরক্ষিত করা হয়েছে। প্রস্তাবটিতে এই বিশেষ বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত কমপক্ষে পাঁচটি অংশ রয়েছে এবং আমি আমার সম্মানিত বন্ধুদের মনোযোগ এই পাঁচটি অংশের দিকে আকর্ষণ করছি এবং তাদের অনূর্ধ্ব করবো প্রস্তাবটির সামগ্রিক চিত্র বিবেচনা করতে এবং তারপর তারা নিজেরাই বিবেচনা করবেন যে আসলেই এই বিশেষ নীতি সুরক্ষিত করা হয়েছে বা হয় নাই।
স্যার, প্রথম অনুচ্ছেদে প্রস্তাবনায় পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে যে ক্ষমতা “ জনগণের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের নিকট অর্পিত হয়েছে”।এর ঠিক পরের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে:
“ পাকিস্তানের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী এই শাসনতন্ত্র পরিষদ একটি সংবিধান গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে”।
পুনরায় জনগণের প্রতিনিধিত্বের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এখন তৃতীয় অনুচ্ছেদে এটা খুব পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে যে-
“জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্র এর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রয়োগ করবে”।
এরপর চতুর্থ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে-
“ইসলাম ধর্মে যেভাবে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সমতা, সহনশীলতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতি স্পষ্ট ভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে সেভাবে সেগুলো সম্পূর্ণ ভাবে অনুসরণ করা হবে”।
এবং সব শেষে এই সব পদক্ষেপের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হচ্ছে-
“যাতে করে পাকিস্তানের জনগণ উন্নতি করতে পারে এবং বিশ্বের জাতিসমূহের মাঝে তাদের যথাযথ এবং সম্মানিত অবস্থান অর্জন করতে পারে…………”
জনগণের উপরে, জনগণের অধিকারের উপরে, জনগণের প্রতিনিধিত্বের উপরে, জনগণের উন্নতির উপরে এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রয়োগের উপর গুরুত্বের আলোকে আমি মনে করি না যে কোন মানুষের মনে এই প্রস্তাব আনয়নকারী যে সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের জন্য প্রস্তাব করেছেন সে ব্যাপারে সত্যি কোন সন্দেহের উদ্ভব হবে। এখন বলা হতে পারে যেঃ কেন আপনি “গণতান্ত্রিক” শব্দটি কেন গ্রহণ করছেন না? আমি আমার বন্ধুদের বলতে চাই যে আমি মনে করি এই প্রস্তাবের প্রস্তাব-দাতা শব্দটি এড়িয়ে গিয়ে সঠিক কাজ করেছেন। যখন আমি প্রস্তাবটি দেখছি স্যার, তখন এর পিছনে দুইটি কারণ রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। প্রথমত পাকিস্তান রাষ্ট্রকে বর্ণনা করার সময় এই রাষ্ট্রের প্রকৃতি কোন নির্দিষ্ট শব্দ দ্বারা বর্ণনা করা হয় নাই। এই রাষ্ট্রের মর্যাদা “সার্বভৌম স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অবশ্যই “ পাকিস্তান” শব্দটি ব্যবহার করা প্রয়োজনীয় ছিল, রাষ্ট্রের নাম এখানে আছে এবং এছাড়াও রাষ্ট্রের মর্যাদা এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে একে “ স্বাধীন ও সার্বভৌম” হতে হবে এবং এটা আশা করি “জাতীয় সার্বভৌমত্ব” বিষয়ে জনাব কামিনী কুমার দত্তের উত্থাপিত আপত্তি কে মিটিয়ে দেবে কারণ তিনি এই বিষয়ে সংশোধনী প্রস্তাব করেছেন।
“পাকিস্থান” শব্দটি ব্যাবহার করা জরুরী ছিল, নিশ্চিত ভাবেই রাষ্ট্রটির নাম এর মধ্যে আছে এবং তারপর রাষ্ট্রের ধরন ব্যখ্যা করা হয়েছে যে, এটি হবে “স্বাধীন এবং সার্বভৌম” এবং আমি আশা করি তা জনাব কামিনী কুমার দত্তের “জাতীয় সার্বভৌমত্ব” বিষয়বস্তুটি কে সমর্থন করে কেননা তিনি সে বিষয়ে একটি সংশোধনী প্রস্তাব করেছিলেন। অনুবন্ধে কেবলমাত্র স্রষ্টার সার্বভৌমত্বই উল্লেখিত হয়নি বরং নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে তার নির্দেশনা মোতাবেক পাকিস্থান রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বও নির্দেশিত হয়েছে। সুতরাং, ইতিমধ্যেই “জাতীয় সার্বভৌমত্ব” বিষয়টি সেখানের নিশ্চিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রের ধরন ঘোষণা দেয়া হয়েছে কিন্তু ধরনটির বর্ণনা দেয়া হয়নি, যা যথাযথই হয়েছে। আজকের বিশ্বে “গণতান্ত্রিক” শব্দটি সম্পূর্ণরূপে এর অর্থবহতা হারিয়েছে যেমনটা আমার একজন বন্ধু মাত্রই বললেন। ইংল্যান্ড রাষ্ট্রটি যার একজন রাজা আছেন, “স্রষ্টার মহানুভবতায়” একটি “গণতান্ত্রিক” রাষ্ট্র। আমেরিকার জনগণের একজন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী রাষ্ট্রপতি সমেত একটি “গণতান্ত্রিক” রাষ্ট্র আছে। ফ্রান্স, যার একটি অদ্ভুত সরকার ব্যাবস্থা আছে; আমাদেরর সকলের কাছে একটি “গণতান্ত্রিক” রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। হল্যান্ড এর ও একই ব্যাপার। রাশিয়াও নিজেদের “গণতান্ত্রিক” রাষ্ট্র হিসেবে দাবী করে, যদিও তা একজন সম্যানিত সদস্য কর্তৃক উল্লেখিত হয় নি, সম্ভবত তিনি “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র” বলতে রাশিয়ান গণতন্ত্র কে বুঝিয়েছেন। এখন বর্তমান বিশ্বে এই “গণতান্ত্রিক” শব্দটি কিভাবে ব্যাখা করা হবে? যখন রাজা বা রাজাবিহীন; রাষ্ট্রপতি বা রাষ্ট্রপতিবিহীন; সংসদীয় সরকার বা সংসদবিহীন সরকার ব্যাবস্থা এমনকি রাশিয়ার মত দেশ যা অন্য সকল তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কর্তৃক একনায়কত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত, এরা সকলেই যখন নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দাবী করে তখন তা কিভাবে ব্যাখা করা হবে? আমি মনে করি, রাষ্ট্রের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য উপস্থাপনের জন্য “গণতান্ত্রিক” শব্দটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত এবং এই সংবিধান কি উত্তম সংবিধান নাকি অধম সংবিধান তা জনগণের হাতে তাদের নিজস্ব বিবেচনার জন্য ছেড়ে দেয়া উচিত। আর সর্বপরি, নামে কি আসে যায়। গোলাপ কে যে নামেই ডাকা হোক তা সুঘ্রাণ ছড়াবেই। রাষ্ট্রের ধরন বর্ণনা করা হয়নি কিন্তু রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। যদি “গণতান্ত্রিক” শব্দ টি ব্যাবহার করা হত তবে তা ব্যখ্যা করা হত বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভাবে বিদ্যমান গণতন্ত্র শব্দটির বহুমাত্রিক ব্যাখা দিয়ে।

জনাব, প্রস্তাবক রাষ্ট্রের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য গুলো দিয়েছেন এবং বৈশিষ্ট্য গুলো স্পষ্টভাবে প্রথম দৃষ্টিতেই প্রমাণ, প্রদর্শন এবং উন্মোচন করে যে, যে রাষ্ট্রটি আমরা পাব, যে সংবিধানটি প্রনয়ণের প্রয়াস নেয়া হয়েছে তা হবে এমন এক সংবিধান যা আমাদের এমন এক সরকার দেবে যা হবে জনগণের দ্বারা জনগণের সরকার। শেষ দফাটিতে বলা আছে যে, এই সংবিধানীর উদ্দেশ্য হল পাকিস্থানের জনগণের উন্নয়ন। এখানে এটাই প্রদর্শিত হয় যে, এটা হবে জনগণের জন্যেও। সুতরাং, আব্রাহাম লিঙ্কনের একটি বাক্য ধার করে আমাদের উদ্দেশ্য বিবরণীতে সংযোজন করা আমাদের জন্য অপ্রয়োজনীয়। একটি শব্দ যা এর অর্থ সম্পূর্ণরূপে হারিয়েছে তা ধার করে এনে এই বিবিরনীতে যোগ করা আমাদের জন্য নিষ্প্রয়োজন, এখানে শদ বলতে আমি বুঝাচ্ছি “গণতান্ত্রিক” শব্দটি। অনুবন্ধের বিধানসমুহের দিকে লক্ষ করুন, অনুবন্ধে দেয়া মুল বৈশিষ্ট্য গুলো দেখেন এবং জোর দেন জনগণের উপর, জনগণের অধিকারের উপর, জনগণের প্রতিনিধিদের উপর এবং জনগণের কর্তৃপক্ষের উপর। এরপর আমি এই সন্দেহের কোন যৌক্তিকতা দেখি না যে, যে অনুবন্ধটি আমরা পেয়েছি তাতে জনগণের চাহিদা সর্বাগ্রে থাকবে না। আমি যা বুঝি জনাব, তা হল এই সংবিধান হবে সেই অর্থে সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক যা মুসলিমরা জানে। এর অর্থ হল, সবচেয়ে অধস্তনরাও শীর্ষস্থানীয়দের সমালোচনা করতে পারবে।

১২ মার্চ, ১৯৪৯
জনাব শ্রীশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (পূর্ব বাংলাঃ সাধারণ): মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আমি ভেবেছিলাম আমার সহকর্মী জনাব ভুপেন্দ্র কুমার দত্ত কংগ্রেস পার্টির পক্ষ থেকে সংশোধনী দুটির বক্তব্য রাখার পর এই বিষয়ে আমি আর এই আলোচনায় অংসগ্রহন করব না। তিনি আবেদন করেছেন, যুক্তি প্রদর্শন করেছেন এবং কংগ্রেস পার্টির অবস্থান সম্পূর্ণ ভাবে স্পষ্ট করেছেন, কিন্তু এরপর আমি কিছু প্রধান দল যেমন মুসলিম লীগের কিছু বক্তার কাছ থেকে অনুবন্ধের যে ধরনের ব্যাখা শুনলাম তাতে এই আলোচনায় অংশ গ্রহণ আমার জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি ডঃ মালিকের বক্তব্য শুনেছি এবং তার অবস্থান কে মূল্যায়ন করি। তিনি বললেন যে, “আমারা পাকিস্থান কে পেয়েছি একটি মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য, এবং এরজন্য মুসলিমেরা সংগ্রাম করেছে সুতরাং এটা কাম্য নয় যে এর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলবে।”। আমি তার সাথে অনেকটাই একমত। তিনি বলেছেন, “ আমরা যদি একটা মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করি এবং এমনকি আমরা যদি প্রতিক্রিয়াশীলও হই, তাহলে এর বিরুদ্ধে কথা বলার আপনারা কারা? এই অবস্থান আমি বুঝতে পারি কিন্তু এখানে কিছু সমস্যা আছে। আমরাও এই দিকে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছি। আমরা সমগ্র দেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছি।। যখন আমাদের পূর্বতন প্রভু ব্রিটিশরা কার্যত চলে যাবার মেজাজ ছিল, তখন দেশ বিভক্ত হয়, এর এক অংশ পাকিস্তান হয় এবং অন্য অংশ ভারত রয়ে যায়। পাকিস্তান রাষ্ট্র শুধু মুসলমানদের হলে ব্যাপারটি ভিন্ন হতো। কিন্তু পাকিস্তানে কিছু অমুসলিমদ রয়েছে। যখন তারা একটি বিভাজন চেয়েছিলেন, সেখানে জনসংখ্যা বিনিমযয়ের ব্যাপারে কোন কথা হয়নি। যদি সেখানে জনসংখ্যা বিনিময় হত, তাহলে বিষয়টি শেষ হয়ে যেত, এবং ডঃ মালিক তার পাকিস্তান তার মত করে প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন এবং সে অনুযায়ী সংবিধান প্রণয়ন করতে পারতেন। এটাও সত্য যে, পাকিস্থানের যে অংশে ডঃ মালিক বাস করেন তা মুসলিম মুক্ত। এটা স্পষ্ট।
ডাঃ ওমর হায়াত মালিক: আপত্তি তুলে, জনাব, আমি কখনই তা বলিনি। তিনি আমাকে বেশ ভুল বুঝেছন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি: যদি চান তাহলে আপনি ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা হিসাবে কিছু বলতে পারেন।
ডাঃ ওমর হায়াত মালিক: আমি কখনোই বলিনি যে পাকিস্তান অমুসলিম অবমুক্ত। বিপরীতক্রমে আমার বন্ধু আমাকে ভুল বুঝেছেন.।
জনাব শ্রীশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : আমি বলেছি, পাকিস্থানের যে অংশে ডঃ মালিক বাস করেন তা অমুসলিম মুক্ত। আমি ডঃ মালিক যা বলেছেন যে, পাকিস্থান অমুসলিম অবমুক্ত, তা বলিনি। এটা স্পষ্ট। কিন্তু আমরা পূর্ববঙ্গের অন্তর্গত। জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ এখনো অমুসলিম। অতএব, কি সংবিধান প্রণয়ন করা হবে, তার প্রতি নজর দেয়া আমাদের স্বার্থে আমাদের কর্তব্য। আমরা পূর্ব বাংলার ছেড়ে যাব না. এটা আমাদের স্বদেশ। এটা আমাদের গ্রহণ করা কোন দেশ নয়। আমার বাপ-দাদা, আমার পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা, পূর্ববঙ্গে হাজার বছর আগে বাংলার রাজা আমন্ত্রণে এসেছিলেন। আমি তার ২৭ তম প্রজন্ম। অতএব, পূর্ববাংলা আমার দেশ। আমি দাবী করে যে পূর্ববঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তান কোনো মুসলমান এর মত আমারও এবং আমার দায়িত্ব হবে পাকিস্থানকে একটি মহান, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করা যেন এটা জাতিসমূহের মধ্যে সৌজন্যপূর্ণ অবস্থান পায়, কেননা আমি নিজেকে একজন পাকিস্থানি বলে দাবী করি। আমি আশা করি পাকিস্থান অবশ্যই একটি মহান জাতি হবে। যা হবে মুসলিম এবং পূর্ব বাংলায় বসবাসরত অমুসলিম, উভয়ের জন্য কাঙ্ক্ষিত।
পূর্ব বাংলা ছেড়ে কিছু সংখ্যক মানুষ চলে গেছে-সংখ্যাটি পাঁচ শতাংশের মত, আমার গণনা হলো এতটাও নয়। অবশ্যই এখানে আরও অন্যান্য গণনাও রয়েছে- কেউ কেউ বলে সংখ্যাটি দশ লাখ। পূর্ব বাংলায় আমরা আমাদের মুসলিম প্রতিবেশীদের সাথে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের সাথে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছি, যেমনটি আমরা প্রজন্ম হতে প্রজন্ম বাস করে আসছি। তাই আমি এটা দেখার জন্য উদ্বিগ্ন যে, এর সংবিধান এমনভাবে গঠন করা হয়েছে যা মুসলিম এবং একই সাথে অমুসলিমদের জন্য মানানসই। আমি সতর্কতার সাথে এই প্রস্তাবটি পড়েছি এবং আমি সতর্কতার সাথে আমার সম্মানিত বন্ধু জনাব লিয়াকত আলী খানের সুন্দরভাবে উপস্থাপিত, ফরমাশি বিবৃতি পড়েছি। কিন্তু প্রস্তাবটি ও বিবৃতিটি সতর্কতার সাথে পড়ার পর, এমনকি আমার বন্ধুগণ, ডাক্তারদ্বয় ও অন্যান্যদের বক্তৃতা শোনার পরও, আমি আমার মতামত পরিবর্তন করতে পারছি না। এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করার জন্য আমি নিজেকে প্রভাবিত করতে পারছি না এবং এই প্রস্তাবটির বিরোধিতা করার জন্য আমার দলের প্রতি আমার নির্দেশ থাকবে।
এখন, প্রথম অণুচ্ছেদের ক্ষেত্রেঃ
“যেখানে সমগ্র বিশ্বের উপর প্রভুত্ব একমাত্র সৃষ্টিকর্তার এবং যেই কর্তৃত্ব তিনি পাকিস্তান নামক প্রদেশের উপর অর্পণ করেছেন এর জনগণকে তাঁর প্রদত্ত সীমার মাঝে অনুশীলনের জন্য তা অবশ্যই একটি পবিত্র বিশ্বাস”।
প্রস্তাবের এই অংশ, আমার মনে হয়, বাদ দেয়া উচিত। আমার মতে, সকল ক্ষমতা জনগণের হাতে এবং তারা প্রদেশের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতার চর্চা করছে। প্রদেশ তাদের মুখপাত্র মাত্র। প্রস্তাবটি রাষ্ট্রকে করেছে সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার একমাত্র ক্ষমতাভুক্ত যেখানে জনগণ নিমিত্তমাত্র, “প্রদেশের নিছক যন্ত্রাবলী”। জনগণের কোন ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব নেই; এই প্রস্তাব মতে তারা কেবলমাত্র ডাক বাক্স। সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত সীমার মধ্যে প্রদেশ ক্ষমতার অনুশীলন করবে। সীমাগুলো কি কি, তার বর্ণনা কে করবে? ডক্টর কুরেশি নাকি আমার সম্মানিত মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওসমানী? প্রভেদের ক্ষেত্রে কার বর্ণনা গৃহীত হবে? অবশ্যই তারা জনগণ নয়। একদিন একজন চতুর্দশ লুইস হয়ত আসবে এবং বলবে “আমিই সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক উপলিত প্রদেশ” এবং তাই পথে প্রস্তর বসাচ্ছি অভ্যাগম রাজাদের স্বর্গীয় অধিকারবলে। প্রদেশকে জনগণের ভাষা করার পরিবর্তে একে ধর্মের অধনস্ত হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। আমার কাছে জনগণের কণ্ঠই সৃষ্টিকর্তার কণ্ঠ “যত্র জীব, তত্র শিব”। জনগণ সৃষ্টিকর্তারই অভিব্যক্তি।
আমার ধারণা অনুযায়ী, প্রদেশ হলো যেখানে বিভিন্ন ধর্মমতের মানুষ বসবাস করে, প্রদেশে ধর্মের কোন স্থান নেই। এর অবস্থান অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবেঃ কোন ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব থাকবে না। প্রয়োজনবোধে প্রদেশের সকল ধর্মকে সমানভাবে সাহায্য করা উচিত। কোন ধর্মের প্রতি দান বা সহনশীলতার কোন প্রশ্ন নয়। ইহা হীনমন্যতার আভাস দেয়। প্রদেশের সকল ধর্মের প্রতি সম্মান থাকতে হবে, এক ধর্মের প্রতি হাস্যোজ্জ্বল মুখ এবং আরেকটির প্রতি তির্যক দৃষ্টি নয়। রাষ্ট্রধর্ম একটি বিপজ্জনক নীতি। পূর্ববর্তী উদাহরণসমূহ আমাদের এই সাঙ্ঘাতিক ভুল পুনরায় না করতে সতর্ক করায় যথেষ্ট। আমরা জানি ধর্মের নামে মানুষকে জীবিত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। এজন্য আমার মতে সার্বভৌমত্ব অবশ্যই জনগণের উপর ন্যস্ত থাকা উচিত, অন্য কারো উপর নয়।

অতঃপর পাকিস্তানের জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করা গণপরিষদ সম্পর্কে, এই গণপরিষদটি সৃষ্টি হয়েছিল একটি মূর্তি ‘ভারতীয় স্বাধীনতা আইন’ দ্বারা যেখানে দশ লক্ষ মানুষের জন্য প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা একজন সদস্য নির্বাচিত করবেন। সদস্যরা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়নি। তারা সংবিধান গঠনের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত। তাদের সেই আইনত অধিকার রয়েছে, কিন্তু তারা বলতে পারে না যে তারা জনগণের প্রতিনিধি। তারা প্রতিমূর্তি মাত্র।

এখন আমি চতুর্থ অধ্যায়ে আসি ঃ
“সেগুলো পর্যবেক্ষিত করতে হবে, যাহাতে গণতন্ত্র ,স্বাধীনতা ,সমতা, ধৈর্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচার এর মৌলিক বিষয়সমূহ ইসলামের দ্বারা বিবৃত করা হয়”।
অবশ্যই এগুলো সুন্দর শব্দ্ঃ গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সমতা, সবকিছু। এখন এই অংশের বিষয়ে পাঞ্জাবের কিছু মাউলানার আমার সাথে আলোচনা হয়েছে।তারা আমাকে যা বলেছে তা অবশ্যই তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে বলেছে।আমি আবারো বলছি। যদি আমি কোনো সাঙ্গাতিক ভুল করে থাকি ,তবে আমাকে শুধরে দেওয়া হোক।
এই সূত্রে ,তুমি বল “সম অধিকার”,কিন্তু একই সময়ে ইসলাম কর্তৃক বিবৃত সীমাবদ্বতার সাথে। একটি ইসলামিক দেশে কী কোন সম অধিকার আছে? সেখানে কি কোন ……… মাননীয় সদস্য ছিলঃ “সেখানে ইসলামিক দেশগুলো ছিল” এটি মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে ছিল না।আমরা এখানে কংগ্রেস পার্টি এবং মুসলিম লীগ পার্টিতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছি সংবিধান গঠনে এবং ধরা যাক এই সংবিধান গঠনের পর আমরা নির্বাচন সম্মুখীন হব এবং পার্টিগুলো ভিন্ন আঙ্গিকে গঠিত হবে, তারা হয়ত কংগ্রেস হবে না, হয়ত সেখানে মুসলিম লীগও থাকবে না, কারণ কংগ্রেস তাদের স্বাধীনতা অর্জনের মিশন সম্পন্ন করেছে এবং মুসলিম লীগও পাকিস্তান পেয়ে গেছে।সেখানে পার্টি থাকবে যাদের হয়ত থাকবে অথবা থাকবে না এবং তারা বাধ্য এবং অমুসলিম কেউ হয়ত পার্টি লীডার হয়ে আসবে না।তাকে কী একটা মুসলিম রাষ্ট্রের প্রশাসনের হেড হতে দেওয়া হবে? এটি কী কোন বিষয় না যে ,একটি মুসলিম রাষ্ট্রে একজন অমুসলিম একটি প্রশাসনের হেড হতে পারবে না? আমি এই প্রশ্নটি আলোচনা করেছি এবং আমাকে বলা হয়েছে যে তাকে একটি মুসলিম রাষ্ট্রের একটি প্রশাসনের হেড হতে দেওয়া যাবে না।অতএব এতকিছুর কারণ কী? প্রশ্ন হল সেই দেশে কী জুমাহ নামাজ হতে পারে ,যেখানে একজন অমুলিম প্রধান থাকে।আমাকে বলা হয়েছে একটি দেশ যেখানে একজন অমুসলিম প্রশাসনের প্রধান থাকে ,ভারতে যেভাবে মুসলিম শাসনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ব্রিটিশরা প্রশাসনের প্রধান ছিল এবং আমি তাদের সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না যে ,মুসলিমরা জুমার নামাজ আদায় করতে পারবে না।নিদর্শনস্বরূপ আমি একটা ঘটনা উল্লেখ করতে চাই এবং আমি মনে করি মাননীয় রাষ্ট্রপতিও এটি সম্পর্কে জানে ,ফরিদপুর জেলার ,দুদু মিয়ার পার্টি।তারা জুমার নামাজ আদায় করে না।তার নাতি ,পীর বাদশা মিয়া আমাকে বলে যে “একটি দেশে যেখানে একজন অমুসলিম প্রধান থাকে ,সেখানে জুমার নামাজ হতে পারে না” অতএব “ইসলাম কর্তৃক বিবৃত সম অধিকার” শব্দগুলো হল-আমি আর কোন শব্দ ব্যবহার করব না- একটি ছদ্মবেশ।অমুসলিমরা,এটি আমাদের কাছে শুধুই ধাপ্পাবাজি।
এখানে ইসলাম কর্তৃক বিবৃত সম অধিকার হতে পারে না।যদি রাষ্ট্র কোন ধর্মীয় আদেশ ছাড়া গঠিত হয়, তবে হিন্দু,মুসলিম ,খ্রিষ্টান ,বুদ্ব যে ভোট পাবে সেই দেশের প্রধান হতে পারবে, এই কারণে যদি আমরা এই রেজ্যুলেশন যেমনে আছে তেমনি গ্রহণ করি তবে সেখানে অসুবিধা দেখা দিবে।এটি সম অধিকারের গোড়াকে কেটে দেয়।আমি একটি বইয়ের কিছু অংশ পাঠ করছি- এটি আমার বই নয় ,এটি কংগ্রেসের বই নয়, এটি লাহোর হতে জামাতী-ই-ইসলাম এর পাবলিকশন এবং এটি আমার হাতে এসেছে ।আমি এই বইয়ের ৩০ পৃষ্ঠার কিছু লাইন পাঠ করছিঃ
“পূর্ববতী বক্তব্য এটি পরিষ্কার করে বলে যে ইসলাম কোন গণতন্ত্র নইয়; গণতন্ত্রের জন্য একটি নির্দিষ্ট সরকারকে নাম দেওয়া হয়েছে যেটিতে সার্বভৌমত্ব শেষপর্যন্ত মানুষে হাতে ন্যাস্ত করা হয়েছে,যেটিতে আইন নির্ভর করে এর গঠন এবং বিষয়বস্তু ক্ষমতা এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতে এবং বিধানসমূহ পরিবর্তন এবং বদলানো হয় ,এই মতামতের উপর।যদি একটি নির্দিষ্ট আইন অনেক মানুষ দ্বারা নির্ধারিত হয় যেটি সংবিধানের বইয়ে উল্লেখের ব্যবস্থা করতে হবে, যদি জনগণ কোন আইন অপছন্দ করে পূর্ববর্তী বিবৃতি এটা বেশ স্পষ্ট করে বলে যে ইসলাম গণতন্ত্র নয়। মুলত; গণতন্ত্র হলো এক ধরনের সরকার ব্যাবস্থা যেখানে সার্বভৌমত্ত আসলে জনগণের হাতেই ন্যাস্ত থাকে। যেখানে, আইন প্রনয়নের দায়িত্ত অর্পিত থাকে তার রাষ্ট্রের কাঠামো, সশস্ত্র বাহিনীর সন্তোষ এবং জনমতের উপরে, যাদের উপরে আইন পরিবর্তন, পরিমার্জন করা হয়য়। যদি গন মানুষ কোনো নির্দিষ্ট বিধানের জন্য ইচ্ছা পোষণ করে, তবে তা সংসদে আইন দ্বারা সিদ্ধ হবে। আর যদি কোনো আইন জনগনের পছন্দ না হয়য়, তবে তা অবিলম্বে অপসারন করা হবে বা তার বৈধতা রদ করা হবে।
অতএব, শব্দটি এই অর্থে গণতন্ত্র বলা যায় না কারন ইসলামে এমন কোন ধরনের কিছু নেই।
আমার বন্ধু, মাননীয় সরদার আবদুর রব নিস্থার, বলেন, ‘নামে কি বা আসে যায়? আমি ও তাই বলি, , নামে কি আসে যায়? নাম কখোনো কখোনো মানুষকে ভুল পথে চালিত করতে পারে কিন্তু এর মধ্যে একটা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের গন্ধ পাওয়া যায়।
মাননীয় সরদার আবদুর রব খান নিস্তার (পশ্চিম পাঞ্জাব: মুসলিম): আপনি কি জানেন সরকারের কোন কাজটা মানুষদের দুই ভাগ করল ? তিনি এখন জেলে।
জনাব শ্রিশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের: – এটা একটা ভিন্ন ব্যাপার. আরও উনি বলেন:
“সবচেয়ে কার্যকর নাম হবে ধর্মরাষ্ট্র যেটা ইংরেজিতে বলে থিওক্রেসি। ‘
আমি আপনার ধর্ম রাষ্ট্র সম্প্ররকে বেশি কিছু জানি না. কিন্তু তিনি আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু বলেন।.
এবং তারপর আপনি আরো দেখবেন যে,
“কোন আইন পরিবর্তন করা যাবে না, যদি না হুকুমদাতা শরিয়তপন্থি হয়য়। আইন কানুন মুসলিমদের মাঝে মতামতের ঐক্যমত্য দ্বারা পরিবর্তিত হয়.”
সুতরাং, যদি কোন আইন পরিবর্তন করা হয়, এটা শুধু মুসলমানদের ভোট দ্বারা পরিবর্তন করা হবে। .তাহলে আমরা তখন কোথায়? আমরা মুসলমান নই. আছে,যদিও আমি রেজোলিউশনে কিছু রক্ষাকবচ পেয়েছি।, কিন্তু আমি তাতে অতটা গুরুত্ত দেই নি কারন ওইসব আইনের প্রয়োগের বাধ্যবাধকতা সেখানে ছিলনা। .এটাই সীমাবদ্ধতা। যদি কোনো অমুসলিম ভোট দিতে না পারে, তাহলে আর সংবিধান প্রনয়নের কি দরকার? এমকি যদি কোনো অমুসলিম রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড়ায়, সে তো আইন ও প্রনয়ন করতে পারবেনা। যদিও আমরা কোনো অমুসলম কে রাষ্ট্রপতি পদে ভোটও দেই, তবুও তো সে আইন প্রনয়নের অধিকার পাবেনা। আমরা শুধু জনাব নিস্থারকেই ভোট দিতে পারি কিন্তু শ্রিশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে নয়, কারন তিনি অমুসলিম। আমি জানি আপনি এই রেজোলিইউশন পাশ করাতে পারবেন কারন মেজরিটি আপ্নারাই। , এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরশাসন জারি করতে পারেন. কিন্তু আমরা এতে ইচ্ছুক নই। আমাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য এটির বিরোধিতা করতে হবে এবং এই রেজোলিউশন স্বীকার করে আত্মহত্যা করার ই নামান্তর। . যদি তাই হয়, একটি মুসলিম রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অবস্থান কি? তারা দ্বিতীয় বেহালার জল আনবার এবং কাঠুরে এর ভূমিকা পালন করবে. কোন বিবেক সম্পন্ন মানুষ কি এই অবস্থান গ্রহণ করতে পারবে? বা সন্তুষ্ট থাকা কি আশা করা যায়? ? যদি বর্তমান রেজোলিউশন গৃহীত হয়, অমুসলিমদের কি তারা তাদের উচ্চতর প্রতিবেশীদের থেকে ছাড় পেতে পারে? বা দু: খের বিষয় নামা পারে কি শর্ত হ্রাসকরতে?. এটা কি সমানাধিকার? হয়ত, মুসলিম কমিউনিতির মধ্যে দেশপ্রেমি কিংবা অন্তজ মানুষ নেই। কিন্তু প্রশ্নটা মুসলিম -অমুসলিমদের নিয়ে।
[জনাব. শ্রিশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের.]
এই রেজোলিউশন সম্পর্কে . এখন, ডঃ কোরেশি অমুসলিমদের মধ্যে ভয়ের মত জটিল বিষয় আরোপ করেছেন এবং সংখ্যালঘুরা তাদের জন্য আচরন গত একটি নতুন নীতিবাক্য পেয়েছে। . তিনি অমুসলমানদের সাবধান করে দেন এবং তাদের ভয় পরিত্যাগ করে ভাল আচরণবিধি অবলম্বন করতে বলেন। আমাদের আচরণ কী প্রকাশ করে? আমরা কাউকে ভয় পাই না।
আমরা কংগ্রেসের লোকজন কোন ব্যক্তি বা শক্তির ভয়ে ভীত ছিলাম না|আমরা এখনও পূর্ব পাকিস্তানে বাস করছি এবং আমরা পালাব না|আমরা আমাদের ভাইদের বলছি পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করিও না এবং এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দিও না|পশ্চিম পাকিস্তানের অবস্থা ভিন্ন |সেখানকার অমুসলিমরা চলে গিয়েছে |কিন্তু আমরা থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম|থাকাটা নির্ভর করছে সংখ্যাগুরু মানুষজন সংখ্যালঘুদের আস্থা পেতে কেমন আচরন করছে তার উপর|সংখ্যালঘরা তাদের আচরণের দ্বারা সংখ্যাগুরুদের নিকট আস্থা তৈরি করতে পারবে না|সংখ্যাগুরুদের সংখ্যালঘুদের সাথে এমন ভাবে আচরণ করা উচিত না যাতে তাদেরকে ভয় না পায় এবং তাদেরকে সন্দেহভাজন মনে না করে |
ডঃ ইসতিয়াক হুসাইন কোরাইসি:জনাব,আমার ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা এই যে আমি কখন বলি নাই অথবা বক্তব্যে উল্লেখ ছিল না যে আমার বিপরীত বন্ধুদের ভয়ে ভুগতে দেখেছি| দুর্ভাগ্যবশতঃ তারা অজানা ভয়ে ভুগেছে ,আমার বক্তব্যের বিষয় ছিল সেইটা|রেজোলিউশন অন্তর্ভুক্ত করে না এমন নীতি যা তাদেরকে ভীত করতে পারে|আমি জানি যে আমার বন্ধুরা খব সাহসী এবং তারা অবশ্যই পালাবে না এবংআমি আরও জানি…..
Mr.President:আপনার ব্যাখার জন্য এই যথেষ্ঠ |
Mr.saris Chandra chattopadhyaya:এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ধর্মীয় পরিচিতর প্রশ্ন ,সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘুর বিভেদ কতদিন ধরে আছে আর কতদিন থাকবে তা কেউ জানে না|আমরা যেটা ধারনা করি এবিষয়ের জটিলতা তৈরি হয়ে গেছে |সংখ্যাগুরুদের গৃহিত নীতি ব্যর্থ হওয়ার কারণে স্ংখ্যালঘুদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে|পক্ষান্তরে সম্মানিত আন্দোলনকারী ডঃকোরাইসি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে তাদের’ বদান্যতা বা মৌনসম্মতি পরিবর্তে সংখ্যালঘুদের আচরণের দ্বারা সংখ্যাগুরুদের মনজয় করতে হবে| আইনসভাতেই আমরা দেখি যে প্রধানমন্ত্রী যখন তার বাণী রাখছে বিরোধিরা তা সহ্য করতে পারছে না-তাদের সত্যিকারের বিরোধি চেতনার বিরোধিতা করা উচিত |চাওয়া এই হয়ে বিরোধিরা বিনয়ী থাকবে |এটাই হল ডঃকোরাইসির চিন্তাধারা|সংখ্যা লঘুদের অবশ্যই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত তাদের সুবিধাগুলোর জন্য এবং তাদের অভিযোগ করা উচিত নয় যা তাদের বিরুদ্ধে যায়এটাই সংখ্যালঘু সমস্যার সমাধান |
Dr.Ishtiaq Hussain Quireshi:আমি আবার আমার ব্যক্তিগত ব্যাখা দাড় করাচ্ছি|আমি কখন তা বলি নাই |আমার কথার ভিন্ন অর্থ করা হয়েছে|আমি যা বলেছি তা হল সংখ্যালঘুদের সর্ব্বোচ অধিকার সংখ্যা গুরুদের ভালভাবে প্রতিজ্ঞার উপর নির্ভরশীল এবং এই কথাগুলো বিকৃত হতে পারে না যেভাবে আমার বন্ধু বিকৃত করেছেl
মিস্টার শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়: সম্মানিত বন্ধুবর, মিস্টার নিষ্টার, বলছেন যে দুই দলের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। একথা সত্য যে ভারতবর্ষ ভাগ করে দুইটি রাষ্ট্র, ভারত ও পাকিস্তান, সৃষ্টি করবার পূৰ্ৱে আমরা এই মর্মে এই বিভক্তির বিরোধিতা করেছিলাম যে সমগ্র ভারতবাসী একই জাতি। এবং মুসলিগ লীগ এই বিভক্তি সমর্থন করেছিল মুসলিম ও অমুসলিম এই দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে। এটি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীর ও দৃষ্টিকোণের মৌলিক পার্থক্য। ভারতের জনগণকে বিভক্ত করা ব্যতীত ভারতকে ভাগ করা হয়েছিল। কাজেই উভয় রাষ্ট্রে মুসলিম এবং অমুসলিম উভয় জাতির উপস্থিতি ধারণা করা হয়েছিল এবং কোনো লেনদেনের পরিকল্পনা এতে ছিল না।
আমরা পাকিস্তানের অমুসলিম নাগরিকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পাকিস্তানের অনুগত নাগরিক হিসেবে থাকার। অবশ্য পূর্ব বাংলার কিছু অমুসলিম এবং কার্যত পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকাংশ অমুসলিম এখান থেকে চলে গেছে। আমরা আমদেরকে জাতিগতভাবে পাকিস্তানের মানুষই মনে করি এবং আমাদের জীবনযাপনও চালাই পাকিস্তানিদের মতো। কিন্তু এই প্রস্তাব এই চিন্তার গোড়া উপরে ফেলেছে যা জনাব নিস্তারের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আমরা এখনো বিশ্বাস করি, পাকিস্তানের মুসলিম-অমুসলিম সবাই আসলে একই জাতি। তারা সবাই পাকিস্তানি। এখন যদি বলা হয় পাকিস্তানের জনগণ দুই জাতিতে বিভক্তঃ সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু। তাহলে ব্যাপরটা কেমন হবে? পৃথিবীর কোথায় ধর্মের ভিত্তিতে জাতীয়তার বিভাজন করা হয়?
এমনকি মুসলিম দেশগুলোতেও ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষ থাকা সত্ত্বেও নিজেদেরকে সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু হিসেবে আলাদা করেনা। তারা নিজেদেরকে একই দেশের নাগরিক মনে করে। যদি এখানকার মুসলিমরা নিজেদের পাকিস্তানি বলে, তাহলে অমুসলিমরা কি নিজেদের অপাকিস্তানি বলবে?

কিছু মাননীয় সদস্য: পাকিস্তানিরা
জনাব শ্রীষ চন্দ্র চট্টপাধ্যায়ঃ তারা কি উভয়ে নিজেদেরকে পাকিস্তানি বলবে? তাহলে মানুষ কিভাবে বুঝবে কে মুসলিম আর কে অমুসলিম? আমি বলব, মুসলিম-অমুসলিম বিভাজন ছেড়ে নিজেদের নতুন জাতি হিসেবে বলা শুরু করি। আমরা আমাদের পরিচয় ঠিক করি পাকিস্তানের নাগরিক। অন্যথায়, যদি আপনি আমকে অমুসলিম বলেন এবং নিজেকে মুসলিম বলেন, তাহলে সমস্যা তৈরি হবে যখন আমি নিজেকে বলব পাকিস্তানি। তখন আপনি আমাকে মুসলিম ভেবে নেবেন। আমি ইউরোপে থাকার সময় এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। আমি সেখানে পাকিস্তানের একজন প্রতিনিধি হিসেবে গিয়েছিলাম। আমি যখন তাদের পরিচয় দিলাম তারা ভাবল আমি মুসলমান। আমি তাদের বলেছিলাম, “না, আমি একজন হিন্দু।“ তাদের ভাবত একজন হিন্দু পাকিস্তানে থাকতেই পারেনা। তারা বলেছিল, “তুমি নিজেকে পাকিস্তানি বলতে পার না।” তারপর আমি তাদের বুঝিয়েছিলাম যে হিন্দু-মুসলিম সব মিলিয়েই পাকিস্তানি। সেটাই ছিল অবস্থান। এইজন্যই আমি নিজেকে কি বলে পরিচয় দেব? আমি এর উত্তর চাই। আমি এই ব্যাপারে আমার আমার সম্মানিত বন্ধু লিয়াকত আলী খানের মতামত চাই।
আমি সম্মানিত বন্ধু জনাব নিস্তারকে এই দৃষ্টিভঙ্গি ভুলে যেতে অনুরোধ করব। চলুন, আমরা নিজেদের একই জাতির নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করি। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর এই জটিলতা দূর করি। পাকিস্তানের সকল নাগরিককে মনে করি একই পরিবারে সদস্য। সংবিধান এমনভাবে তৈরি করি যেন সবাই প্রয়োজন ও বিপদের সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একত্রে কাজ করতে পারি। আমি নিজেকে সংখ্যালঘু মনে করিনা। আমি পাকিস্তানের বাকি সাতকোটির একজন হিসেবে মনে করি। আমাকে এই সুযোগ নিয়ে থাকতে দিন।
আমি এই বিভক্তি সম্পর্কে বলেছি। এখন এই বিভক্তির ফলাফল কি হবে? আমি দুঃখভরে কায়েদ-ই-আযমের সেই কথা গুলো মনে পড়ছে। রাষ্ট্রের কাছে একজন হিন্দু হিন্দুই থাকবে। একজন মুসলিম মুসলিমই থাকবে। কিন্তু আপনারা তার মৃত্যের কয়েকদিন পরে এমন কাজ করলেন যা কার্যত রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা দেওয়ার মতই! আপনারা একটা হেরেনভোক তৈরি করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসে কায়েদ-ই-আযমের সাথে অনেক বছর কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তার মতো আপনাদের এই যোগ্যতা ছিলনা যে ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা রাখবেন। সেই জন্যই মনে হয় এই রাষ্ট্র হেরেনভোকের দিকেই যাচ্ছে। যেখানে আধুনিক বিশ্বে ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা রাখা হয়।
আপনারা প্রাচীন বৈশ্বিক চিন্তা ভাবনার উর্ধে উঠতে অক্ষম। আমি এই প্রস্তাবনায় যা শুনতে পাচ্ছি তা পাকিস্তানের মহান স্রষ্টা কায়েদ-ই- আজমেরও (তাঁর আত্মার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) কণ্ঠস্বর নয়, পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী জনাব মাননীয় লিয়াকত আলী খানেরও নয়, এ এই জনপদের উলামাবর্গের কণ্ঠস্বর মাত্র।
আমি যখন কয়েক মাস ইউরোপে অতিবাহিত করবার পর আমার নিজের দেশে আমাদের অংশে ফিরে এলাম, এসে যা দেখলাম তা আমাকে হতাশাগ্রস্ত করে ফেললো। দেশে ব্যাপক নেতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এখন দেখছি দেশের এই পার্শ্বেও একই পরিবর্তন ঘটেছে। আমি মহামান্য নবাব খাজা নাজিমুদ্দিনকেও এই বিষয়ে অবহিত করেছি। আমি মাননীয় মিস্টার লিয়াকত আলী খানকেও এ বিষয়ে অবহিত করেছি, এবং এখন এর অশুভ আত্মা আমাদের এই সংসদকেও গ্রাস করেছে। এই প্রস্তাবনাটি এই প্রতিক্রিয়াশীল অশুভ আত্মারই চূড়ান্ত রূপ। এই অশুভ আত্মা এই সংসদের চারদেয়ালে বন্দি রইবে না। এর উত্তাল তরঙ্গের তোড় অতি শীঘ্রই পৌঁছে যাবে এদেশের গ্রামেগঞ্জে পর্যন্ত। আমি মর্মাহত! আমি এই ভাবনায় জর্জরিত হয়ে নিদ্রাহীনা নিশিযাপন করছি যে আমি ফিরে গিয়ে আমার জনগণকে কি বলবো? কি বলবো সেই জনগণকে যাঁদের আমি জন্মভূমির প্রতি অনুগত থাকতে অনুপ্রেরিত করেছি এতকাল? তারা অনিশ্চয়তার এক দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে এই মুহূর্তে যা কিনা এই সংসদে বসে কল্পনা করার চেয়ে বাস্তবে দেখা এনং অনুধাবন করা অনেক বেশী জরুরি। কর্মকর্তারা হাল ছেড়ে দিয়েছেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন, অর্থনৈতিক অবস্হা আতঙ্কজনক, চারিদিকে অনাহার, স্ত্রী লোকের পরনে কাপড় নেই, চারিদিকে লোকজন বেকার – কাজ নেই, চাকুরী নেই। প্রশাসন সেখানে নির্মমভাবে প্রতিক্রিয়াশীল; যেন এক দানব পেশন যন্ত্র জনগণের সংস্কৃতি, ভাষা ও লিপিপদ্ধতির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তদুপরি, এই প্রস্তাবনা উত্থাপন করে আপনারা তাঁদেরকে সর্বকালের হেয় প্রতিপন্ন করছেন। সম্ভ্রমের সাথে বেঁচে থাকার তাদের সকল আশা একটি ভারী চাদরে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে।
এই প্রস্তাবনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হবার পর আমার আর কি উপদেশ, কি অনুপ্রেরণা দেবার থাকতে পারে? কোন মুখে আমি সেই জনগণকে দেশপ্রেমে বুক বাঁধতে বলতে পারি? অবশ্য আমার মনে হচ্ছে আপনাদেরকে একথা বলা বা বুঝাতে যাওয়া অরণ্যে রোদন। বিজয়ীর বা ধার্মিকজনের মধ্যে যে নিরহঙ্কারিতা থাকে তার ছিঁটেফোঁটাও আপনাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এরপর আপনারা যার যার পথে চলে যাবেন, আপনাদের জন্য আমার শুভকামনা রইলো। আমি একজন বৃদ্ধ লোক যার শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করবার বেশী দেরি নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি সকল আঘাত ভুলে যেতে প্রস্তুত। আপনাদের কারো প্রতি আমি কোনো বিদ্বেষ পোষণ করি না। আমি কেবল আশা করেছিলাম যে আপনারা যৌক্তিক ভাবে চিন্তা করবেন। তবে ঘটনা যেদিকেই গড়াক না কেন আপনাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। আপনাদের মঙ্গল হোক, সদ্য ভূমিষ্ঠ রাষ্ট্র পাকিস্তান মহান হোক – বিশ্বের দরবারে সে তার জায়গা করে নিক! (সমবেত হাততালি)
মাননীয় মিস্টার লিয়াকত আলী খান (ইস্ট বেঙ্গল: মুসলিম): আমি আমার সম্মানিত বন্ধুবর, কংগ্রেস পার্টির দল নেতার বক্তব্য খুব মনোযোগ সহকারে শুনলাম। আমি তাঁকে এই বলে আশ্বস্ত করতে চাই যে আমি যা বলবো তার পুরোপুরি দায়ভার গ্রহণ করে প্রকৃত আন্তরিকতার সাথেই বলবো ….
স্যার, আমার সম্মানিত বন্ধু, কংগ্রেস পার্টির দলনেতা কয়েকজন উলেমার দর্শণ লাভ করেছেন। তিনি আমাদেরকে বলেন নি তাঁরা ইনার কাছে জ্ঞানের অনুসন্ধান করতে এসেছিলেন নাকি তিনিই জ্ঞানের অনুসন্ধান করতে তাঁদের কাছে গিয়েছিলেন। তবে আমি ধারণা করছি এই সম্মিলনটি ঘটেছিলো কারণ উনার ভাষায় লাহোরের কতিপয় উলেমা স্বীয় উদ্যোগে উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর কাছে কিছু প্রকাশিত রচনা রেখে যান, যেই রচনাবলী সেই তাঁকে বিচলিত করেছে যিনি সহজে বিচলিত হন না। আমি স্পষ্টতই বুঝতে পারছি এই সাক্ষাৎকার এবং রচনা বিতরণ কে বা কারা কি উদ্দেশ্যে করেছে। এখানে কিছু লোক আছে যারা পাকিন্তান ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর এবং এই তথাকথিত উলেমারাই আপনার নিকট এসেছিলো। তাঁরা আপনাকে এই ভ্রান্ত ধারণা দেবার দুরভিসন্ধি নিয়ে এসেছিলো যেন আপনার মনে পাকিস্তানের মুসলমানদের বিশ্বস্ততা সম্পর্কে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। আল্লাহর ওয়াস্তে এই সব দুষ্ট প্রজ্ঞাপনে কান দেবেন না। আমি একথা বলতে চাই এবং এই মর্মে পাকিস্তান ভাঙার উদ্দ্যশ্যে যে অপশক্তি পথে নেমেছে তার উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করতে চাই যে আমরা এসব আর সহ্য করবো না। তারা আপনার কাছে ইসলামের ভাবাদর্শ সম্পূর্ণ ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। তারা ইসলামের এবং তার সমর্থনকারীদের বন্ধুরূপী শত্রুমাত্র।
তারা ইসলামকে ভুলভাবে প্রদর্শন করছে। তারা আসলে ইসলামের বন্ধু ও সমর্থকের বেশে ইসলামের শত্রু।
স্যার, আমার সম্মানিত বন্ধু বলেছিল যে এই মানুষগুলোই নাকি বলেছিল যে মুসলিমরা জুম্মার নামায পড়া ছেড়ে দিবে যদি অমুসলিম কেউ রাষ্ট্রের নায়ক হয়। স্যার, গতকাল পর্যন্ত আমি, আমি রূপকভাবে আবার বলছি যে গতকাল পর্যন্ত এখানে অমুসলিম শাসক ছিল। তখন কি মুসলমানেরা নামায পড়েনি? তারা কি বলতে পারবে তখন তারা জুম্মার নামায পড়েনি? তারা কিভাবে আপনার কাছে আসে এবং আপনি কিভাবে এত সহজে এই বিবৃতিগুলো মেনে নেন?
জনাব শ্রীষ চন্দ্র চট্টপাধ্যায়ঃ তারা আমাকে বলে নি। আমি দুদু মিয়ার পার্টির কথা উল্লেখ করেছি। দুদু মিয়ার নাতি হলো পীর বাদশা মিয়া।
মাননীয় জনাব লিয়াকত আলী খানঃ এই দেশে বা মুসলমানদের মধ্যে কতকগুলো উন্মাদ আছে। আপনি কি তাদের কথা মতো চলবেন নাকি বাকি বড় মুসলিম অংশের বিশ্বাস অনুযায়ী চলবেন? আমার বন্ধু আপনি যদি তাই চান, তবে আমাদের এই দেশের প্রত্যেক মুসলমানকে এই সব ব্যাপারে বোঝাতে হবে। এটা আমার মনে হয়না কোন দল বা কোন নেতার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব।
স্যার, আমার সম্মানিত বন্ধু বলেছেন যে আপনি সমতার কথা বলেছেন এবং সে আবার বিস্ফোরিত হয়েছে এই জেনে যে এই তথাকথিত ওলামাদের মতে কোন সমতাই নাকি থাকতে পারে না। আমি সত্যিই অবাক হয়েছি এই জেনে তার মত এমন অভিজ্ঞ ব্যাক্তিকে এত সহজভাবে নেওয়া হয়েছে। আমাদের উচিত তাকে ইসলাম সম্পর্কে এই দুজন মানুষ কি বলেছে তা রাখা এবং আমরা বা মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওসমানীর মত মানুষ তাকে ইসলাম সম্পর্কে কি বলছে তা বিশ্বাস না করা। স্যার, আমি বলেছি আপনি যদি একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন তাহলে আপনাকে বোঝানো অনেক কঠিন কাজ।
স্যার, আমার বন্ধু বলেছে যে এই মানুষগুলো তাকে বলেছে যে এক ইসলামী রাষ্ট্রে কোন অমুসলিম প্রশাসন প্রধান হতে পারবে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল। সংবিধান অনুযায়ী একজন অমুসলিমও সংবিধিবদ্ধ সরকারের অধীনে নির্দিষ্ট প্রদেশ বা সংবিধান কর্তৃক প্রদানকৃত সীমিত কর্তৃত্বে প্রধান হতে পারবেন। প্রকৃতপক্ষে এই মানুষগুলো তাকে ভুল বোঝাচ্ছে।
স্যার, আমার সম্মানিত বন্ধুর শেষ ভাষণে আমি খুব ব্যথিত হয়েছি। কিন্তু যেহেতু তার প্রতি ও তার বিশ্বাসের প্রতি আমার সম্মান আছে, তাই আমি সম্মানের সাথে বলতে চাই তার এই বিবৃতি দায়িত্বশীল নাগরিকদের নিকট থেকে আসা বিবৃতির গুলো সবচেয়ে ক্ষতিকর। তিনি এই প্রস্তাবকে সবচেয়ে অপ্রীতিকরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সে তার মন্তব্যে বলেছে এই প্রস্তাব পাশ হলে অমুসলিমদের পাকিস্তানে কোন জায়গা হবে না। স্যার, একজন পাকিস্তানের সাচ্চা নাগরিক হিসেবে যে নিজেকে দাবী করে তার নিকট থেকে এরকম একটা মন্তব্য আমরা আশা করি না। স্যার আমার সম্মানিত বন্ধুকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, এই প্রস্তাবের মাধ্যমেই তারা সর্বোচ্চ সুবিধা পাবে বরং অন্য উপায়ে পাবে না। আমি তাকে অনুরোধ করব কতিপয় ব্যাক্তি প্ররোচনায় ভুল পথে না যেতে। আপনি এই চিন্তা করবেন না যে, এই প্রস্তাব অমুসলিমদের পাকিস্তান থেকে বের করে দেওয়ার জন্য অথবা তাদের অবস্থা আগের থেকে খারাপ করার জন্য।
মাননীয় রাষ্ট্রপতি, আমি যা বলতে চাই তা হচ্ছে,প্রকৃত ইসলামিক সমাজব্যবস্থায় ভৃত্যশ্রেণীর কোন স্থান নেই |নিরহঙ্কার ব্যক্তিই সর্বোচ্চ মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য | আমি অবশ্যই তাঁর বিশ্বাসের ভিত্তিটা বুঝতে পারছি কারণ আমার এই বন্ধু এমন এক সমাজে বড় হয়েছেন যেখানে এখনও এমন এক শ্রেণীর লোক আছে যাদের জন্মই হয় ভৃত্য হিসেবে এবং এই নিন্দিত পরিচয়ই তাদেরকে সারাজীবন বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়| কিন্তু আমি বলতে চাই যে, ইসলাম বা ইসলামিক সমাজব্যবস্থায় কোথাও এরকম কিছু নেই| যখন আমরা ন্যায়বিচারের কথা বলি তখন প্রকৃতপক্ষেই তা ন্যায়বিচার| গণতন্ত্র বিষয়ে তথাকথিত উলেমাদের কাছ থেকে তিনি যা শুনেছেন ইসলামে প্রকৃতপক্ষে তারও অস্তিত্ব নেই এবং আমরা গণতন্ত্র বলতে প্রকৃতপক্ষেই গণতন্ত্রকেই বুঝি, অন্যকিছু নয়| জনাব, আমার মনে হয় ইসলামের ঘোরতর প্রতিপক্ষরাও এমন অদ্ভূত বক্তব্য দিবে না| প্রকৃতপক্ষে সারা পৃথিবী জুড়ে এমনকি অমুসলিমদের কাছেও এটি প্রতিষ্ঠিত যে, সত্যিকারের গণতন্ত্র একমাত্র ইসলামেই আছে|

জনাব, স্তম্ভিত করার মত আরও একটি বক্তব্য তিনি রেখেছিলেন এবং সেটি তিনি লাহোরের সেই উলেমাদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েও দেননি কিন্তু আমি এও জানিনা এর উৎস কী হতে পারে|তিনি বলেছেন, “আপনাদের বক্তব্য ভুল তথ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত কারণ আপনারা বলেছেন যে, নির্বাচন পরিষদ পাকিস্তানের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না|” তাহলে জনাব, এই নির্বাচন পরিষদ কার প্রতিনিধিত্ব করে? যদি এটি পাকিস্তানের জনগণের প্রতিনিধিত্ব না-ই করে, তবে আমার এই বন্ধুরা কেন এই নির্বাচন পরিষদে এসে নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করছেন? তাহলে আমরা কী নিয়ে কথা বলছি? এই নির্বাচন পরিষদ পাকিস্তানের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না কি করে না? যদি নাই করে তবে এই পরিষদের পাকিস্তানের জনগণের জন্য বিধান গঠন করার কোন অধিকার নেই| উনি কি আমাকে তাই মেনে নিতে বলছেন? জনাব, আমি জানি না, তিনি কেন সেই বক্তব্য দিয়েছিলেন!

জনাব শ্রীশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : আমি যথাযথ কারণ উপস্থাপন করেছিলাম|
মাননীয় লিয়াকত আলী খান: তিনি বললেন যে, তিনি কারণ দেখিয়েছিলেন| সেই কারণ সম্ভবত তাঁর মনেই ছিল, মুখে উচ্চারিত হয়নি|
জনাব, আমার মাননীয় বন্ধু বলেছেন যে, মুসলিম লীগের উদ্দেশ্য সফল কারণ এর দ্বারা পাকিস্তান অর্জিত হয়েছে| মাননীয় রাষ্ট্রপতি, আমি বলতে চাই মুসলিম লীগের উদ্দেশ্য কেবল অর্ধেক সফল হয়েছে| বাকি অর্ধেক তখনই সফল হবে যখন আমরা পাকিস্তানে ইসলামের নীতি অনুসরণ করে শান্তি ও উন্নতির পথে অগ্রসর হতে পারব|অতএব, মুসলিম লীগের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য সঠিক নয়|
জনাব, আমার মাননীয় বন্ধু বলেছেন, “পাকিস্তানের জাতীয়তা কী? হিন্দু না মুসলিম?” আমি বলব, উভয়ই| হিন্দু-মুসলিম সবাই পাকিস্তানের নাগরিক| আমি এই বক্তব্যে কোন অসঙ্গতি দেখছি না| আপনি রাষ্ট্রে নিজ ধর্মমত বজায় রেখে সম অধিকার, নাগরিক মর্যাদা এবং দায়িত্ব নিয়ে থাকতে পারেন|মাননীয় রাষ্ট্রপতি, এতে কী সমস্যা থাকতে পারে আমি আসলেই খুঁজে পাচ্ছি না| আমার মাননীয় বন্ধু বলেছেন যে, তিনি যখন গত বছর ইংল্যান্ড এবং ইউরোপে গিয়েছিলেন, সেখানে কেউই বিশ্বাস করছিল না যে, পাকিস্তানে অমুসলিম কেউ আছে| তাঁকেও তারা মুসলিম হিসেবে ধরে নিয়েছিল|মাননীয় রাষ্ট্রপতি, এ দায় পাকিস্তানের নয়, এ দায় মাননীয় সদস্যের তৎকালীন বন্ধু এবং সহকর্মীদের|

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী জুড়ে তারা যে প্রজ্ঞাপন প্রচার করে বেড়াচ্ছেন তার মধ্যে এটিও সেই ভুল বোঝাবুঝির জন্য দায়ী| কোন মুসলিম কখনোই বলেনি যে, পাকিস্তানে অমুসলিম কেউ নেই বা তারা চায় না অমুসলিম কেউ থাকুক|মাননীয় রাষ্ট্রপতি, পার্শ্ববর্তী দেশে সংখ্যালঘুদের জন্য যে সুযোগ-সুবিধা প্রচলিত আছে আমাদের দেশেও ঠিক তা-ই আছে| আমরা এখানে আপনার ধর্মীয় স্বাধীনতা, সংস্কৃতির উন্নতি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, অধিকারের সমতা , আইনের দৃষ্টিতে সমতার নিশ্চয়তা বিধান করছি| অপরপক্ষে, তাঁরা কী করেছে? সংস্কৃতি নিয়ে কোন প্রশ্ন নয়| প্রকৃতপক্ষে মুসলিমদের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের সাথে ভারত পরিচিত নয়| তাঁর তৎকালীন বন্ধুরা ভারতে যা করেছিলেন আমার বন্ধুও কি আমাকে দিয়েও তা-ই করাতে চাইছেন? মাননীয় রাষ্ট্রপতি, আমি তা করব না| আমি এমন এক রাষ্ট্র চাই যেখানে প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করবে, সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয়|
জনাব, আমার মাননীয় বন্ধু তাঁর বক্তব্যের শেষে যা বলেছেন, আশা করি তিনি আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি কঠোর ভাষা ব্যবহারে অভ্যস্ত নই, কিন্তু এক্ষেত্রে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, এটা ছিল তাঁর বক্তব্যের নিকৃষ্টতম অংশ|তিনি বলেছেন, বাংলায় এখন সাম্প্রদায়িকতা বিরাজ করছে| অমুসলিমদের অবস্থান সেখানে শোচনীয় | আমি তাঁর কাছে জানতে চাই, এ অবস্থার জন্য দায়ী কারা? আমরা কি আমাদের প্রশাসনে অমুসলিমদের ছাঁটাই করে দিয়েছি?এরকম বক্তব্যের উদ্দেশ্য কি পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পরিকল্পনার অংশ না? আজ পাকিস্তানের প্রশাসনে যদি কোন অমুসলিম না থাকে সে দায় কি আমার? বাংলার অবস্থান পূর্বে কী ছিল সে সম্পর্কে আমার বন্ধুর নিশ্চয়ই ধারণা আছে| অতএব পাকিস্তান সরকার বা পাকিস্তানি মুসলিমদের সম্পর্কে এ অভিযোগ পেশ সমীচীন নয়| আমি আশা করি, সময়ের সাথে সাথে অমুসলিমরাও পাকিস্তানের সেবায় যুক্ত হবেন কারণ আমাদের দ্বার সকলের জন্যই অবারিত,এখানে মুসলিম-অমুসলিম কোন ভেদাভেদ নেই…………

মহামান্য রাষ্ট্রপতি:প্রথমে আমি সংশোধনের জন্য উথ্থাপন করছি, “অনুচ্ছেদের শুরুতে ‘মহাবিশ্বের উপর সার্বভৌমত্ব’ এবং শেষে ‘….পবিত্র বিশ্বাস’ বর্জন করতে হবে|”

সভা ভঙ্গ হল|

পক্ষে ভোটদাতা-১০
শ্রী প্রেম হরি বর্মা শ্রী জনেন্দ্র চন্দ্র মজুমদার
অধ্যাপক রাজকুমার চক্রবর্তী শ্রী বিরাট চন্দ্র মন্ডল
শ্রী শ্রীশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শ্রী ভবেশ চন্দ্র নন্দী
শ্রী অক্ষয় কুমার দাস শ্রী ধনঞ্জয় রায়
শ্রী ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত শ্রী হরেন্দ্র কুমার সুর

জনাব এ এম এ হামিদ মাননীয় খাজা শাহাবুদ্দিন
মাওলানা মোঃ আব্দুল্লাহ-এল-বাকি বেগম সায়েস্তা সোহরাওয়ার্দী ইকরামুল্লাহ
জনাব আবুল কাসেম খান জনাব নাজির আহমেদ খান
মাওলানা মোঃ আকরাম খান শেখ কেরামত আলী
মাননীয় জনাব ফজলুর রহমান ড. ওমর হায়াত মালিক
অধ্যাপক ইশতিয়াক হুসেইন কুরেশী বেগম জাহান আরা শাহ নেওয়াজ
মাননীয় জনাব লিয়াকত আলী খান জনাব মাননীয় মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান
ড. মাহমুদ হুসেইন মাননীয় সরদার আব্দুর রব খান
জনাব নুর আহমেদ নিশতার
জনাব সিরাজুল ইসলাম খান সরদার বাহাদুর খান
মাওলানা শাব্বির আহমেদ ওসমানী মাননীয় পীরজাদা আব্দুস সাত্তার
আব্দুর রহমান

না জয়যুক্ত হল।
মাওলানা শাব্বির আহমেদ ওসমানী
প্রস্তাবটি খন্ডন করা হল।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রশ্ন হলঃ
ঐ অনুচ্ছেদ যা “যেখানে পুরো বিশ্ব ভ্রম্মান্ডের সার্বভৌমত্বের উপর” এই শব্দগুলো দিয়ে শুরু হয়েছে…… “জনগনের দ্বারা গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্র” এই শব্দগুলোর জন্য ‘পাকিস্তানের জনগন’ এই শব্দ প্রতিস্থাপিত হবে।
না জয়যুক্ত হল।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রশ্ন হলঃ
ঐ অনুচ্ছেদ যা “যেখানে পুরো বিশ্বভ্রমান্ডের সার্বভৌমত্বের উপর” এই শব্দগুলো দিয়ে শুরু হয়েছে…… “তার নির্দেশিত বিধানের পরিসরের মধ্যে সীমাবদ্ধ” বাদ দিতে হবে।
না জয়যুক্ত হল।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রশ্ন হলঃ
ঐ অনুচ্ছেদ যা “গন পরিষদ” শব্দ দিয়ে শুরু হয়েছে
‘গনতান্ত্রিক’ শব্দটি ‘স্বাধীন’ শব্দের পরে যুক্ত হতে হবে
না জয়যুক্ত হল।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রশ্ন হলঃ
ঐ অনুচ্ছেদ যা “গন পরিষদ” শব্দ দিয়ে শুরু হয়েছে, তার পরে নিচের নতুন অনুচ্ছেদ যোগ করতে হবে
“যেখানে জাতীয় সার্বভৌমত্ব পাকিস্তানের জনগনের কাছে সংশ্লিষ্ট।
যেখানে এই রাষ্ট্রের মূলনীতি হচ্ছে “গণতন্ত্র হল জনগণের সরকার, জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত সরকার, এবং জনগণের জন্য গঠিত সরকার।“

না জয়যুক্ত হয়েছে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রস্তাব টি হচ্ছে, যে অনুচ্ছেদটি “যেখানে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন…… “ শব্দ গুলো দিয়ে শুরু হয়েছে তা নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ এর মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হোকঃ

“জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, যার উপর বিধানিক সেইসাথে নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে, তিনি তার ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন এমন ব্যাক্তিবর্গের মাধ্যমে যারা আইনানুগ ভাবে অনুমোদিত। নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সরকারের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং যেকোন সময় একে সকল কর্তৃত্ব থেকে অবমুক্ত করতে পারবেন”

না জয়যুক্ত হয়েছে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রস্তাব টি হচ্ছে, যে অনুচ্ছেদটি, “যেখানে গণতন্ত্রের মূলনীতি হচ্ছে…”শব্দ গুলো দিয়ে শুরু হয়েছে সেই অনুচ্ছেদ থেকে “যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম ” শব্দ গুলো তুলে দেয়া হোক।

না জয়যুক্ত হয়েছে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রস্তাব টি হচ্ছে, যে অনুচ্ছেদটি, “যেখানে গণতন্ত্রের মূলনীতি হচ্ছে…”শব্দ গুলো দিয়ে শুরু হয়েছে সেই অনুচ্ছেদ এ “ যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম ” শব্দ গুলোর পর “এবং অন্যান্য ধর্মগুলো” শব্দ গুলো সংযুক্ত করা হোক।

না জয়যুক্ত হয়েছে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রস্তাব টি হচ্ছে, (বিকাল ৬টার ঘন্টা), যে অনুচ্ছেদটি, “যেখানে গণতন্ত্রের মূলনীতি হচ্ছে…”শব্দ গুলো দিয়ে শুরু হয়েছে সেই অনুচ্ছেদ এ “ যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম ” শব্দ গুলোর পর “কিন্তু যা জাতিসংঘের মৌলিক মানবাধিকার সনদ লঙ্ঘন করে না” শব্দ গুলো সংযুক্ত করা হোক।

না জয়যুক্ত হয়েছে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রস্তাব টি হচ্ছে, যে অনুচ্ছেদটি, “যেখানে মুসলিম রা হবে……… ” শব্দ গুলো দিয়ে শুরু হয়েছে সেখানে “মুসলিম রা হবে ” শব্দ গুলোর পরিবর্তে “ মুসলিম এবং অমুসলিম রা সমানভাবে” শব্দ গুলো প্রতিস্থাপিত হোক।

না জয়যুক্ত হয়েছে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রস্তাব টি হচ্ছে, যে অনুচ্ছেদটি, “যেখানে মুসলিম রা হবে……… ” শব্দ গুলো দিয়ে শুরু হয়েছে সেখানে “ পবিত্র কোরাআন এবং সুন্নাহ তে যেভাবে ইসলামের বিধান রয়েছে” শব্দ গুলোর পরিবর্তে “ তাদের নিজ নিজ ধর্মানুসারে” শব্দ গুলো প্রতিস্থাপিত হোক।

না জয়যুক্ত হয়েছে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রস্তাব টি হচ্ছে, যে অনুচ্ছেদটি, “যেখানে মুসলিম রা হবে……… ” শব্দ গুলো দিয়ে শুরু হয়েছে সেখানে “পবিত্র কোরাআন এবং সুন্নাহ” শব্দ গুলোর পরে নিম্নোক্ত অংশটি সংযুক্ত কয়ার হোকঃ
“ রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিমদের সাথে নিখুত সঙ্গতিপূর্ণ ভাবে এবং তাদের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির প্রতি পূর্ণ সহিষ্ণুতা বজায় রেখে”

না জয়যুক্ত হয়েছে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রস্তাব টি হচ্ছে, যে অনুচ্ছেদটি, “সংখ্যালঘুদের জন্য পর্যাপ্ত বিধান তৈরি করা হবে” শব্দ গুলো দিয়ে শুরু হয়েছে তার পরিবর্তে নিন্মোক্ত অনুচ্ছেদ টি প্রতিস্থাপিত হোকঃ
“ সংখ্যালঘুদের নিজ ধর্ম প্রকাশ্যে ব্যাক্ত করা ও চর্চা করা এবং তাদের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং এর জন্য পর্যাপ্ত বিধান তৈরি করা হবে”।

না জয়যুক্ত হয়েছে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রস্তাব টি হচ্ছে, যে অনুচ্ছেদটি, “ নিশ্চিত করা হবে……”, শব্দ গুলো দিয়ে শুরু হয়েছে সেখানে “ নিশ্চিত” শব্দটির পর “ এবং পাকিস্তানের সকল মানুষের জন্য সুরক্ষিত” শব্দ গুলো সংযুক্ত করা হোক।

না জয়যুক্ত হয়েছে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রস্তাব টি হচ্ছে, যে অনুচ্ছেদটি, “নিরাপত্তাদানের জন্য পর্যাপ্ত বিধান তৈরি করা হবে” শব্দ গুলো দিয়ে শুরু হয়েছে সেখানে “অন্ত্যজ শ্রেণী সমূহ” শব্দ গুলোর পরিবর্তে “ সকল বর্ণ এবং তফশিলী জাতি সমূহ” শব্দ গুলো প্রতিস্থাপিত হোক।

না জয়যুক্ত হয়েছে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ প্রস্তাব টি হচ্ছে, যে অনুচ্ছেদটি, “নিরাপত্তাদানের জন্য পর্যাপ্ত বিধান তৈরি করা হবে” শব্দ গুলো দিয়ে শুরু হয়েছে সেখানে “অনগ্রসর” এবং “অন্ত্যজ শ্রেণী সমূহ” শব্দ গুলোর মধ্যে “এবং শ্রমজিবী” শব্দ গুলো সংযুক্ত করা হোক।

মহামান্য রাষ্ট্রপতিঃ সকল সংশোধনী শেষ হল। আমি এখন মূল অনুবন্ধ উপস্থাপন করছি।
প্রশ্ন হল যে নিচের অনুবন্ধটি গৃহীত হবেঃ
“করুনাময়, দয়ালু আল্লাহ’র নামে;
যেখানে পুরো বিশ্বভ্রমান্ডের সার্বভৌমত্ব শক্তিধর ইশ্বরের উপর এককভাবে বর্তায় এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র কে যে ক্ষমতা দিয়েছেন ইহার জনগন দ্বারা, সেই ক্ষমতা তার নির্দেশিত পরিসরের মধ্যে প্রয়োগ হবে, যা একটি পবিত্র বিশ্বাস;
পাকিস্তানের জনগনকে প্রতিনিধিত্বকারী এই গনপরিষদ স্বাধীন সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য একটি সংবিধান কাঠামোবদ্ধ করেছে;
যেখানে রাষ্ট্র তার ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রয়োগ করবে জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা;
যেখানে গনতন্ত্র, স্বাধীনতা, উৎকর্ষ, সহনশীলতা, ও সামাজিক ন্যায্যতার মুলনীতিগুলো ইসলামে যেভাবে বিবৃত আছে সে অনুযায়ী পুরোপুরি পালন করা হবে;
যেখানে মুসলমানরা ব্যক্তি পর্যায়ে ও সামষ্টিকভাবে জীবন যাপন করবে যা ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ঠিক যেভাবে পবিত্র কোরান ও সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত;
যেখানে যথোচিত বিধি-বিধান থাকবে যার মাধ্যমে সংখ্যালঘুরা তাদের নিজ নিজ ধর্ম মুক্তভাবে প্রকাশ্যে চর্চা করতে পারে ও তাদের সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে পারে;
যেভাবে অঞ্চলগুলো এখন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত বা সংযুক্ত এবং আরো অন্যান্য অঞ্চল সমুহ যা পরবর্তীতে যুক্ত হতে পারে বা পাকিস্তানের সাথে অঙ্গিভূত হতে পারে, যা একটি ফেডারেশন হবে যেখানে অঞ্চল গুলো স্বায়ত্তশাসিত হবে নির্দিষ্ট সীমানা নিয়ে এবং সীমিত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নিয়ে, যেভাবে বিধিবদ্ধ থাকবে;
যেখানে মৌলিক অধিকার সমূহ সুনিশ্চিত থাকবে, যার মধ্যে সম মর্যাদা, সম সুযোগ ও আইনগত সমতা, সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার, এবং মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, আস্থা, আরাধনা ও সংঘ অন্তর্ভুক্ত, যা আইন ও সার্বজনীন নৈতিকতা সাপেক্ষে;
যেখানে সংখ্যালঘু দুস্থ ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ন্যায়সঙ্গত অধিকারের নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রয়োজনীয় বিধান থাকবে;
যেখানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পরিপূর্নভাবে নিশ্চিত থাকবে;
যেখানে ফেডারেশনের অঞ্চলগুলোর অখন্ডতা, তাদের স্বাধীনতা ও তাদের জমি, সাগর ও আকাশ সীমার উপর সার্বভৌম অধিকার সহ তাদের সব অধিকার নিরাপদ থাকবে;
যাতে করে পাকিস্তানের জনগন সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারে ও সারা বিশ্বে জাতি হিসাবে আত্নমর্যাদা নিয়ে যথাযোগ্য স্থান অর্জন করে নিতে পারে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি অগ্রযাত্রা ও মানবকল্যানে অবদান রাখতে পারে;
না জয়যুক্ত হয়েছে।

শিরোনাম সূত্র তারিখ রাষ্ট্রভাষা বাংলার সমর্থনে ও ২১ ফেব্রুয়ারি | পাকিস্তানের কমিউনিষ্ট পার্টি | ২০-২ ফেব্রুয়ারী,১৯৫২ সকল ভাষার সমমর্যাদা දීපි বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে ২১ শে ফেব্রুয়ারী সারা প্রদেশব্যাপী ধর্মঘট, হরতাল, সভা ও শোভাযাত্রা করুন। আওয়াজ তুলুনঃ 0 ইংরেজী ভাষাকে আর রাষ্ট্রভাষা রাখা চলবে না। 0 পাকিস্তানের সকল ভাষার মসমমর্যাদা চাই। 0 বাঙালী, পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধী, বেলুচী, উর্দভাষী প্রভৃতি সকল জাতিকেই নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ করা ও রাষ্ট্রকার্য পরিচালনার অধিকার দেওয়া চাই। 0 বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা চাই। বাংলার জন্য আন্দোলন, উর্দুর বিরুদ্ধে আন্দোলন নয় ইংরেজীর বদলে উর্দু, বাংলা সকল ভাষাকে রাষ্ট্র সমমর্যাদা দেওয়ার আন্দোলন। ইংরেজ পাকভারতের বিভিন্ন ভাষাভাষি জাতিকে পশ্চাৎপদ রাখিয়া সাম্রাজ্যবাদী ও সামন্তবাদী শোষণ ব্যবস্থাকে অব্যাহত রাখার জন্য একটি ভাষা ইংরেজী ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালু করিয়াছিল। লীগ সরকারও একই উদ্দেশ্যে এখন পর্যন্ত ইংরেজী ভাষাকে রাষ্ট্রভাষ হিসেবে চালু রাখয়াছে। এবং একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করিতে চাহিতেছেন। একটি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করিরে পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষাভাষি জাতি পশ্চাৎপদ থাকিয়া যাইবে এবং ইহার ফরে পাকিস্তানের সামগ্রিক উন্নতিই ব্যহত হইবে। অতএব পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষাকে সমমর্যাদা ও রাষ্ট্রভাষা করার দাবীর আন্দোলনে পাকিস্তানের বাঙালী, পাহজাবী, পাঠান, সিন্ধী বেলুচী উর্দুভাষী সকল জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে আগাইয়া আসুন। ২০শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ পূর্ববংগ সাংগঠনিক কমিটি- পাকসিআন কমিউনিষ্ট পাটি।

অত্যাচারী নুরুল আমিন সরকারের বর্বর হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সারা পূর্ব বংগব্যাপী তুমূল ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়িয়া তুলুন ২১শে ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যার কলেজের হোষ্টেলে ঢুকিয়া বার বার গুলি, টিয়ার গ্যাস ও বেপরোয়া লাঠি চালাইয়া জুলুমবাজ নুরুল আমিন সরকার ভাষা আন্দোলনের ১৪ জন দেশপ্রেমিক কর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করিয়াছে। শহীদদের খুনে আজ লাল হইয়া উঠিয়াছে আমাদের গৌরবময় ভাষা আন্দোলন। তাহারা জাতির বুকে চিরস্মরণীয় হইয়া থাকিবেন। যে ঢাকা নগরী আমাদের প্রিয় শহীদদের খুনে লাল হইয়া উঠিয়াছে সেই ঢাকা নগরীর বিক্ষুদ্ধ জনসাধারণ নুরুল আমিন সরকারের বর্বর হত্যাকান্ডের জবাব দেবার জন্য আগাইয়া আসুন। লীগ সরকার জনগণের জীবনের কোন সমস্যাই সমাধান করে নাই বরং তাহদের জীবনের সংকটকে আরও বাড়াইয়া তুলিয়াছে। আজ আমাদের রাষ্ট্রভাষার আন্দোলনকে নুরুল আমিন সরকর রক্তের বন্যায় ডুবাইয়া দিতে চায়। এই জুলুমবাজ সরকারের অবসান ছাড়া জনগণের বাঁচারও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আর কোন পথ নেই দলমত নির্বিশেষে সকল প্রতিষ্ঠান ও পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষাভাষী জনসাধারণেরা একই সংগে আওয়াজ তুলুন g নাজিম-নুরুল আমিন সরকার গদী ছাড়। অবিলম্বে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা চাই। হত্যাকারীর শাস্তি চাই, বেসরকারী তদন্ত কমিশন চাই, হত ও আহতদের জন্য পুরা ক্ষতিপূরণ চাই অবিলম্বে সকল রাজনৈতিক বন্দদদের মুক্তি চাই। নিরাপত্তা আইন, ১৪৪ ধারা ও সমস্ত দমনমূলক আইনের প্রত্যাহার চাই। জুলুমবাজ লীগ সরকারের অবসানের দাবীতে, হত্যাকরীর শাস্তির দাবীতে, নিজ মাতৃভাষাকে অন্যতম পড়িয়া তুলুন। শহীদদের অসমাপ্ত আন্দোলনকে আগাইয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য শহীদদের নামে শপথ লউন।
পূর্ববংগ সাংগঠনিক কমিটি-পাকিস্তানের কমিউনিষ্ট পার্টি।