শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির প্রতি বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, চলচিত্র ও কুশলী ,ক্রীড়াবিদদের আবেদন | স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় বেতার কেন্দ্রের দলিল | ১৯৭১ |
সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির কাছে একটি আবেদন
আমরা অবাক হইনি যখন আমরা দেখেছি আপনি আপনার মহান ভাইজন ও রবার্ট কেনেডির অভিজাত ঐতিহ্যের অনুসরণে বাংলাদেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে নাৎসি-শৈলীর এ গণহত্যা অভিযানের আপনার দ্বিধাহীন অভিযোগ এবং প্রশমননীতি/রিচার্ড নিক্সন, স্পষ্টভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য সান্ত্বনা বয়ে এনেছেন। জাতি এখন হঠাৎ গণহত্যা অভিযানের ধাক্কা সামলে নিয়েছে এবং আজ ইতিহাসের নিকৃষ্টতম উপনিবেশের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তীব্র অঙ্গীকারবদ্ধ।
আমাদের এ বিজয়ের হবে ন্যাবিচার এবং গণতন্ত্রের, যে আদর্শকে আপনি ও আমেরিকার মানুষ মূল্যবান বলে মনে করেন। কিন্তু ইসলামাবাদ জেনারেল যারা আজ অবধি জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খাকে নৃশংসভাবে দমন করেছে, তাদের প্রতি মার্কিন সরকার এর সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তায় এ বিজয় বিলম্বিত হচ্ছে এবং মানুষের দুর্ভোগ ত্বরান্বিত হচ্ছে।
প্রায় আট মিলিওন (আশিলক্ষ) শরণার্থীর দুর্দশা সচক্ষে দেখতে আপনি ভারত ছুটে যান। যারা ন্যূনতম নিরাপত্তার খোজে, জেনারেল ইয়াহিয়ার তোপ থেকে বাঁচতে ওখানে পালিয়ে গেছে। এছাড়াও আপনি হয়ত আরো সত্তর মিলিয়ন মানুষের অবস্থা ধারনা করতে পারেন যারা পালিয়ে যেতে পারেনি। তারা যেন নিজের দেশেই শরণার্থী যেখানে আকস্মিক মৃত্যু সর্বদাতাদের খুঁজে বেড়ায়। ইতিমধ্যে দশ লাখ পুরুষ, মহিলা ও শিশুকে পরিকল্পতভাবে হত্যা করা হয়েছে। গেটস্টাপো-শৈলীর অভিযানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যাদের আর কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাণিজ্যিক ও ট্রেডিং সেন্টারগুলো ধ্বংস করার মাধ্যমে অঞ্চলের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ২৫ শে মার্চ থেকে পাকিস্তানি সৈনিকদের ছেরে দেওয়া হয়েছে তাদের ইচ্ছামত হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করার জন্যে। আজ দীর্ঘ চার মাস পরেও তাদের বিভীষিকাময় বেলেল্লাপনার তীব্রতা একটুও কমেনি। বাংলাদেশ এর অবিসন্বাদিত এবং গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত নেতা। এমনকি জেনারেল ইয়াহিয়া আগামরায় উচ্চারণ করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। তারা (জেনারেল ও তার সহযোগীরা) মহান নেতাকে নিশ্চিতভাবে ফায়ারিং স্কোয়াড দ্বারা হত্যা করবে যদি কোন উচ্চতর ক্ষমতা তাদের না দমিয়ে রাখে।
সন্ত্রাস এর এ ধরনের রাজত্ব শুধুমাত্র শরণার্থী সমস্যাকে অবিশ্বাস্যভাবে বাড়িয়ে তুলবে। শরণার্থী সমস্যার প্রকৃত কারণ সমাধান না করে ক্রমবর্ধমান শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী খোঁজা, স্ব-পরাজিত হওয়ার একটি প্রক্রিয়া। এখনো সহজেই বিপদ এড়ানো যেতে পারে যদি আমেরিকা ইসলামাবাদ শাসনকে অর্থনৈতিক এবং সামরিকভাবে দেউলিয়া হওয়া থেকে রুখে না দাঁড়ায়। আমরা নিশ্চিত যে আমেরিকান কর দাতারা, যদি তাদের সঠিকভাবে এ বিপর্যয় সম্পর্কে অবগত হয়, তবে তারা পাকিস্তানের জান্তা বাংলাদেশে গণহত্যার অভিযান.
আমরা আপনি, আপনার দল এবং আমেরিকান জনগণের কাছে আবেদন করছিযেন আপনারা সর্বাত্মক চেষ্টা করেন যেন চাপে আমেরিকা প্রশাসন তার নীতি পরিবর্তন করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, এর প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং অবিলম্বে তার মুক্তির বাবস্থা করে।
স্বাক্ষরকারী:
এ আর মল্লিক
সৈয়দ আলি এহসান
কে সারওয়ার মুরশিদ
যহির রায়হান
কামরুল হাসান
রনেশ দাশ গুপ্ত
ফয়েজ আহ্মদ
আলমগির কবীর
হাসান ইমাম
ওয়াহিদুল হক
আশরাফ আলি চৌধুরী
এম এ খায়ের
কামা লোহানী
ব্রজেন দাস
সাদেক খান
বেলায়েত হোসেন
মুস্তফা মনোয়ার
আনুপম সেন
মতি লালপাল
মউদুদ আহমেদ
কামরুজ্জামান
ফারুখ খলিল
দেওয়ার মোহাম্মাদ আহমেদ
অজয় কুমার রায়
গোলাম মরশেদ
আনয়ারুজ্জামান
মাজহারুল ইসলাম
শামসুল আলম সায়েদ
মোশারফ হোসেইন
রাসবিহারী ঘোষ
আনিসুজ্জামান
এ এযিয়াউদ্দিন আহমেদ
কবরী চৌধুরী
নারায়ণ ঘোষ
চিত্তরঞ্জন চৌধুরী
খসরু নোমান
সামর দাস
সুভাস দত্ত
আব্দুল জব্বার খান
উদায়ন চৌধুরী
রাজু আহমেদ
সুস্মিতা দেবী
চিত্তবর্ধন
এবং
জাফর ইকবাল
পক্ষে
বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবী সংগ্রাম পরিষদ
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি
বাংলাদেশ চলচিত্র ও কুশলী সমিতি
বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতি