শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বিদেশে সাহায্য চেয়ে অজয় রায়ের চিঠি | ……… ১৯৭১ |
প্রিয় লেন,
অনেক দিন তোমার সাথে কোন যোগাযোগ হয় না। আমি নিশ্চিত তুমি বাংলাদেশের বর্তমান ঘটনাবলী গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করছো। ২৫ই মার্চ ১৯৭১, পাকিস্তান আর্মি বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ ও বেসামরিক জনগনের উপর ঝাপিয়ে পরায় আমাকে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। আমি ১৫ই মে ঢাকা ত্যাগ করে ২৩ মে ইন্ডিয়াতে পৌছেছি। ঢাকায় অবস্থানকালে পাকিস্তান আর্মির গনহত্যা ও সরকারী ও ব্যক্তিগত ভবনগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি। এমন কি মসজিদ, মন্দির, চার্চ যেখানে প্রানভয়ে ভীত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে সেগুলোও ছাড় পায়নি। গ্রাম, হাট- বাজার, ব্যবসাকেন্দ্র কিচ্ছু রক্ষা পায়নি সব ধ্বংস করে ফেলেছে। দশ লক্ষের উপরে মানুষকে স্রেফ মেরে ফেলা হয়েছে, হাজার হাজার মেয়ে নির্যাতন ও ধর্ষনের শিকার এবং তাদের আর্মি ক্যাম্পগুলোতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রায় কোটিখানেক মানুষ বাধ্য হচ্ছে ভারতে আশ্রয় নিতে। এই শরনার্থীদের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় (২০০), কলেজ (হাজারের উপরে), এবং স্কুল (১০,০০০) শিক্ষক, বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্যান্য বুদ্ধিজীবিরা রয়েছেন।
তুমি জানো আমরা ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছি। মুক্ত বাংলার একটি বৈপ্লবিক সরকার গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ কমিনিউস্ট পার্টি সহ সব গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এই স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছে। আমরা লড়বো, শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো। আমাদের মুক্তিবাহিনী (স্বাধীনতার যোদ্ধা) সাধারন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র, চাষী, দিন মজুর, শিক্ষক ইত্যাদি নিয়ে গঠিত। এই যুদ্ধে আমাদের নৈতিক এবং বস্তুগত দুইধরনেরই আন্তর্জাতিক সাহায্য দরকার। আমার তাই তোমার কাছে বিশেষ অনুরোধ, তুমি এবং তোমার দলীয় লোকজন আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য সাহায্য তুলে দাও। আমাদের ছেলেরা কোন রকম শীতবস্ত্র ছাড়াই যুদ্ধ করছে। যা প্রয়োজনীয় দয়া করে তাই করো। দয়া করে আমার ঠিকানায় কিছু টাকা পাঠানোর চেষ্টা করো, সেটা আমি সিপিবি (কমিউনিস্ট পার্টি অফ বাংলাদেশ)-এর তহবিলে জমা করে দিবো।
খেয়াল করো আমি এখন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি। এটি শরণার্থী .-শিক্ষকদের সংস্থা যার লক্ষ্য দুর্গত শিক্ষক সমাজ সহ মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করা। সুতরাং আশা করি তুমি তোমার শিক্ষক সমাজের কাছেও আমাদের এই মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্যে অনুরোধ করবে। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা, সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, দরভাঙ্গা ভবন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা – ১২, ভারত।
সার্বিক শুভেচ্ছা সহ
ডঃ লেন শিলডস
রসায়ন বিভাগ
ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
ব্র্যাডফোর্ড, ইংল্যান্ড।
তোমার একান্ত
অজয়