You dont have javascript enabled! Please enable it!
           শিরোনাম               সূত্র              তারিখ
 যুক্ত নির্বাচন প্রথা আইন পাশ     পাকিস্তান অবজারভার      ১২ই অক্টোবর, ১৯৫৬

 

জাতীয় পরিষদ নির্বাচকমণ্ডলী বিল পাস (৪৮-১৯)
রাতভর অদ্বিতীয় ম্যারাথন সেশন
সম্ভাব্য সর্বত্তম সমাধানঃ পিএম
(এস.সি.)

গতকাল সকালে শুরু হয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টারও বেশি সময় বিতর্কের পর জাতীয় পরিষদে এই বিল পাস হয় যার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে যৌথ নির্বাচন পরিষদ প্রবর্তিত হবে এবং পশ্চিম অংশে পৃথক নির্বাচন পরিষদ বহাল থাকবে। নির্বাচকমণ্ডলী বিলখানা ভোর ৪ ঘটিকায় (পূর্ব) পক্ষে ৪৮ বিপক্ষে ১৯ ভোটে পাস হয়েছে। কিন্তু এর পূর্বে বিরোধী পক্ষ নানা বিভাগ প্রস্তাব করে এবং হেরে যায় ৪৮-২০ ভোটে।
প্রাণচাঞ্চল্যকর বিতর্কের মাধ্যমে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এবং অন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, নির্বাচন পরিষদ আলোচনা ইস্যুতে রিপাবলিকান দলের এক সদস্যের দলত্যাগ। ইউনাইটেড ফ্রন্ট দলের সদস্যের ভাষ্যমতে তার দল বিবেকের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে; তাই তিনি যৌথ নির্বাচন পরিষদের প্রস্তাবে বিশ্বাস করেন; প্রধানমন্ত্রী জনাব সোহরাওয়ার্দী এবং মুসলিম লীগ নেতা জনাব চুন্দ্রিগার এর ভাষণের মাধ্যমে অধিবেশন শেষ হয়েছে।
জনাব সোহরাওয়ার্দীর ভাষণের সমাপ্তিতে আইনটির প্রশংসা করে বলেন যে ইহা বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য সর্বোত্তম সমাধান যা দুই পাকিস্তানের নৈকট্য বৃদ্ধি করবে। উক্ত সমাধান পশ্চিম পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হওয়া পর্যন্ত শ্রেয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এর আগে তিনি বিরোধী দলের কাছে আবেদন জানান যে যদি তারা ধর্মান্ধতা ও বিদ্বেষ থেকে মানুষকে বাঁচাতে চান, তাদের উচিৎ মানুষের কাছে গিয়ে বলা যে, নির্বাচন পরিষদ প্রশ্নে ধর্ম কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট নয়।
জনাব চুন্দ্রিগার এর মতানুসারে পৃথক নির্বাচন পরিষদ হিন্দু ও মুসলমানদের উভয়ের স্বার্থে কার্যকর ব্যবস্থা বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরো বলেন যে, সংখ্যালঘুদের জন্য সমানাধিকার ইতিমধ্যে সংবিধানে দেওয়া হয়েছে।
সরকারী দলের মতানুসারে পৃথক নির্বাচন পরিষদের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানে ৭২ টি আসন অমুসলিমদের নিকট বরাদ্দ হয় যা পাকিস্তানের ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম। তবে উক্ত ত্রুটি ভোট প্রক্রিয়ার নয় বলে তিনি মনে করেন বরং ইহা সংখ্যাগুরু মুসলিমদের নিজেদের ত্রুটি।
গতকাল বিকালে মুসলিম লীগের পীর আলী মোহাম্মদ রাশিদি পৃথক নির্বাচন পরিষদের জন্য আন্দোলন চালু করা হবে বলে হুমকি উচ্চারণ করেন যার বিপরীতে জনাব সোহরাওয়ার্দী তাঁর বক্তব্যের মাঝে এর জবাবে বড় আন্দোলন দ্বারা সব সন্দেহ ও অবিশ্বাসের নাশ করবার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
জনাব সোহরাওয়ার্দী তাঁর বক্তব্য শেষ করবার সময় জনাব চুন্দ্রিগারের সাথে ঐক্য প্রকাশ করে ৭ অক্টোবর হওয়া সহিংসতার নিন্দা প্রকাশ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সব রাজনৈতিক দলের নেতাগন সেখানে যে কোন ঝামেলা ব্যতিরেকে রাজনৈতিক সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
যারা উক্ত সেশনের আলোচনায় অংশ নিয়েছেন তারা হলেন, ড. খান শাহেব এবং মিয়া ইফতেখারুদ্দিন; পশ্চিম পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে, নির্বাচকমন্ডলী ইস্যু সদস্যদের জন্য কেন উদ্বেজক ছিল তা বোঝা সম্ভব ছিল না। কিন্তু মিয়া সাহেব তাদের বলেন যে তারা উদ্বিগ্ন কারন তারা জনগনের প্রতিনিধিত্ত করেন না।
তার মতে যৌথ বা পৃথক নির্বাচন পরিষদের প্রতি আস্থা স্থাপন কোন ব্যাপার না। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিনিধিগন এবং তার দল পৃথক নির্বাচন পরিষদের পক্ষে থাকায় জনগনের মতামত ব্যতিরেকে তার নিজের ভিন্ন কোন অবস্থান নেওয়ার অধিকার নেই বলে ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, পাকিস্তানে সবসময় উপরের মহলের নির্দেশ আরোপিত হয়েছে এবং রাজনীতি পরিচালিত হয়েছে-হবে বৈঠককক্ষ হতে। তিনি হাউসের সকল সদস্যদের ভাগ্য সন্ধানীদের জন্য দেশকে পরিস্কার করবার আহ্বান জানান এবং শুধু বক্তৃতায় কাজ হবে না বলেও উল্লেখ করেন।
পূর্ব পাকিস্তানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা যৌথ নির্বাচন পরিষদের জন্য ভোট দিয়েছে এবং তাদের পূর্ণ অধিকার আছে উক্ত কাজ করবার, তবে তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি শান্তিপূর্ণ রুপে প্রকাশ করুক এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!