You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
       যুক্ত নির্বাচন বিল      পাকিস্তান গণপরিষদ  ১০ ও ১১ই অক্টোবর, ১৯৫৬

 

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের যৌথ নির্বাচনী বিল
১০ ও ১১ই অক্টোবর, ১৯৫৬

জনাব এইচ. এস. সোহরাওয়ার্দীর বক্তব্য থেকে উদ্ধৃতঃ মহোদয়, যথাবিহীত সম্মানপূর্বক আমি অনুরোধ জানাচ্ছি যেঃ
“জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে নির্বাচন পরিষদ সংক্রান্ত যে বিল প্রস্তাবিত হয়েছে তা বিবেচনায় আনার জন্য”।
পাকিস্তান সৃষ্টি সংক্রান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে যারা খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি, তাদের অনেকের কাছেই এটি আশ্চর্যজনক মনে হতে পারে যে, যেখানে আমি ছিলাম অবিভক্ত ভারতে দ্বি-জাতিতত্ত্বের পক্ষের আইনজীবী এবং পাকিস্তান সৃষ্টি তে যার ভূমিকা নিতান্ত তুচ্ছ নয় এবং যে অবিভক্ত ভারতে পৃথক নির্বাচনে বিশ্বাসী ছিল, সে কিনা পাকিস্তানের মঙ্গলদায়ক সাংবিধানিক নীতি হিসেবে যৌথ নির্বাচন পরিষদের পক্ষে অবস্থান করছে। সন্দেহাতীতভাবে, পৃথক নির্বাচন পরিষদ অবিভক্ত ভারতে মুসলিমদের ধর্মমত বজায়ে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল এবং ১৯১৮-১৯ সালের প্রথম দিকে সাইমন রিপোর্টের বিপক্ষে স্যার আবদুল্লা সোহরাওয়ার্দীর অখন্ডনীয় যুক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু এটা ১৯৪০ সালের রাজনৈতিক নথিতে যা লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত তার উপর ভিত্তি করে গঠিত দ্বি-জাতিতত্ত্বের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পৃথক নির্বাচন পরিষদ আইন সভায় মুসলিম সংখ্যালঘুদের জন্য ছিল একটি হাতিয়ারস্বরূপ; এটি সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছ থেকে আদায়কৃত; এটা কখনোই সংখ্যাগরিষ্ঠদের স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার হতে পারেনা। যদিও দ্বি-জাতিতত্ত্ব সমর্থনের জন্যই লাহোর প্রস্তাবের উদ্ভব, প্রকৃতপক্ষে এটা কখনোই তা করেনি; যখনই প্রতীয়মান হল যে সংখ্যালঘুদের পাকিস্তান-ভারত দুদেশেই পিছনে ফেলে রাখা হচ্ছে, তখনই এর অসারতা প্রমাণিত হল। দ্বি-জাতিতত্ত্বের শেষ কথা এটাই ছিল যে, জনসংখ্যা সম্পূর্ণ রূপে স্থানান্তর হবে- ভারত হবে সম্পূর্ণ রূপে হিন্দু রাষ্ট্র এবং পাকিস্তান হবে সম্পূর্ণ রূপে মুসলিম রাষ্ট্র।
অবশ্যই অদ্ভুত যুক্তিতে সব অমুসলিম জাতি মিলে এক হিন্দু জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। মুসলিমদের দ্বারা দ্বি-জাতিতত্ত্ব প্রণীত হয়েছিল এই যুক্তিতে যে, ভারত থেকে পৃথক হয়ে ভৌগলিক সীমারেখা অনুযায়ী সৃষ্টি হবে এক নতুন রাষ্ট্র যেখানে মুসলিমরাই হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। পৃথক রাষ্ট্র হওয়ার পর এ তত্ত্ব মুসলিমদের জন্যও ভূমিকা রাখতে পারল না। যদি এখনও এভাবেই চলতে থাকত, পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিমদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় পৃথক এক রাষ্ট্র গড়ে উঠত, যা মুসলিমদের জন্য ছিল আতঙ্কস্বরূপ। মুসলিমরা যারা অবিভক্ত ভারতে ছিল কেবল একটি জাতি সত্তা, তারা এখন নিজ দেশ পাকিস্তানের নাগরিক যেখানে প্রত্যেক নাগরিক ধর্ম মত নির্বিশেষে পাকিস্তানি জাতিভুক্ত। প্রথম থেকে শেষ অবধি সকল ধর্মমতের মানুষ পাকিস্তানি এবং আমরা সকলেই আমাদের জাতীয়তা অর্জনে গর্বিত। এখানেই মিলাত-ই-ইসলামের ধারণা যা ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম করে এবং পাকিস্তানি জাতিগত ধারণা যার ভৌগোলিক সীমারেখা আছে ও একটি অদ্ভুত সত্ত্বা আছে যা তাকে অন্যান্য জাতি হতে পৃথক করে তাদের ভিত্তিগত প্রভেদ। পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে, অতএব পাকিস্তান সৃষ্টির সাথে সাথে রাজনৈতিক চিন্তাধারাতেও পরিবর্তন আসবে। আজ আমরা কোন বিভাজন চাইনা, চাই এক অখন্ড জাতি। আমি তাই যৌথ নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান করছি কারণ এর দ্বারা সকল কে পাকিস্তানের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের সেবায় নিয়োজিত করা এবং বিভিন্ন ধর্মমতের মানুষের মধ্যে যে সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং ঘৃণার বীজ দানা বেঁধে উঠেছে তা প্রতিহত করা সম্ভব। আমি পাকিস্তান রাষ্ট্রের গঠনে ভূমিকা রাখতে চাই। প্রত্যেক নাগরিক যেন একই আদর্শ লালন করে, যার যার ধর্মমত থেকে পাকিস্তানের প্রতি তার দায়িত্ব পালন করে এবং দেশের উন্নতিতে সকলে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করে। তারা যেন তাদের মাতৃভূমির প্রতি অনুগত থাকে। নিশ্চিতভাবে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
অনেকে বলে থাকেন যে, যুগ্ম নির্বাচন পরিষদ ইসলামি মতবাদের পরিপন্থী এবং জাতীয় পরিষদ যদি এটি অনুমোদন করে তবে তা হবে ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ। আমার বিশ্বাস ছাড়াও পৃথিবীর মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে যুগ্ম নির্বাচন পরিষদের বিরুদ্ধে কোন মনোভাব নেই এবং এই বিতর্কে ইসলামকে টেনে আনা সম্পূর্ণরূপে ভুল। যে সব ভদ্রলোক যুগ্ম নির্বাচন পরিষদকে অ-ইসলামিক আখ্যায়িত করেছেন তাদের প্রতি শেষ কথা এটাই যে, যা কিছু ইসলামপন্থী বা ইসলাম পরিপন্থী তা রাষ্ট্র ও তার অঙ্গ জাতীয় পরিষদের অংশ………
বলা হচ্ছে যে, যুগ্ম নির্বাচন পরিষদ অ-ইসলামিক। যুগ্ম পরিষদ মুসলিম-অমুসলিম সকলে মিলে একজনকে ভোট দেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। আমাদের আইনসভায় আমরা কি সবসময় তা-ই করে আসছি না? আমরা কি আমাদের শ্রদ্ধেয় স্পিকারকে নির্বাচনের জন্য এক সাথে ভোট দেইনি? যেসব ভদ্রলোক যুগ্ম পরিষদকে গর্হিত হিসেবে বিবেচনা করছেন তারা এখনও কীভাবে আইনসভার সদস্য হিসেবে আছেন এবং অমুসলিমদের সাথে একত্রে ভোট দিচ্ছেন? প্রকৃতপক্ষে জাতীয় পরিষদের সকল সদস্য যুগ্ম পরিষদ থেকে এসেছেন এবং প্রাদেশিক আইনসভা মুসলিম-অমুসলিমদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। তাই যারা যুগ্ম পরিষদকে ইসলাম পরিপন্থী সাব্যস্ত করছেন তারা আইনসভার সাথে যুক্ত থেকে গর্হিত কাজ করছেন।
এছাড়া পাকিস্তান কি বিশ্বের একমাত্র মুসলিম রাষ্ট্র? সৌদিআরব, মিশর, সিরিয়া, ইরান, লেবানন, জর্ডান এমন কি আফগানিস্তান যারা এই আইনকে সমর্থন করেছে তারা কি মুসলিম রাষ্ট্র নয় এবং এদের কোথাও কি নির্বাচন পরিষদ পৃথক? ঔপনিবেশিক আমলে বা অধীনস্থ থাকার সময় কোন কোন দেশে পৃথক নির্বাচন পরিষদ ছিল। এটা ছিল জনগণের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির হাতিয়ার। স্বাধীনতা অর্জনের সাথে সাথে তারা একটি নির্বাচন পরিষদ গড়ে তুলেছিল যেখানে মুসলিম-অমুসলিম কোন ভেদাভেদ ছিলনা। যুগ্ম পরিষদ হোল মুসলিম পরিপন্থী- এই তত্ত্ব সম্পর্কে ঐসব রাষ্ট্র কি ভাববে? পাকিস্তান আর এর ধর্মমত নিয়ে ঐসব রাষ্ট্র কী ভাববে? বিবেচনার ভার আমি আপনাদের উপরই ন্যস্ত করলাম।
এবার ঘরের দিকে তাকাই। পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহের সদস্যগণ যৌথ নির্বাচকমণ্ডলী দ্বারা প্রত্যাবর্তন করে থাকেন, উদাহরনস্বরূপ ইউনিয়ন বোর্ড, জেলা বোর্ড, পৌরসভা, স্কুল বোর্ড ইত্যাদি। এখন পর্যন্ত কেউ এই ব্যবস্থাকে ইসলাম পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন নাই, অথবা এটা বলা অনুচিত যে, কেবলমাত্র আইনসভার প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটা ইসলাম পরিপন্থী বলে বিবেচিত হয় এর ব্যাতিরেকে অন্য সকল ক্ষেত্রে যৌথ নির্বাচন পরিষদ দ্বারা নির্বাচন ইসলাম সিদ্ধ বলে বিবেচিত হয়, এমনকি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও।
আমার ভাষ্য মতে উক্ত সমস্যা কেবল একটি দৃষ্টিকোণ হতে বিবেচনা করা উচিৎ, যা হোল, পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষিত হবে কিসে? যেমনটি আমি উল্লেখ করেছি, যৌথ নির্বাচন পরিষদ প্রক্রিয়া পাকিস্তানের বিভেদ দূর করে তাকে এক দেশ এবং এক জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভে সহায়তা করবে। পৃথক নির্বাচন পরিষদ ধর্মীয় বিভেদের অগ্নি প্রজ্জলিত রাখবে, যার ফলস্বরূপ নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। তাই, আমাদের উক্ত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিৎ। পৃথক নির্বাচন পরিষদ ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকারক। তা বিভাজনের জন্য সহায়ক। বিভাজনের শক্তিশালী হাতিয়ার। সত্যিকার অর্থে আমরা নিজেদের হৃদয়ের কাছে জিজ্ঞাস করলে জানব যে, পৃথক নির্বাচন পরিষদের দাবি অমুসলিমদের প্রতি সন্দেহ, অবিশ্বাস এমনকি ঘৃণা হতে উৎপন্ন হয়েছে। আমি জানি দেশ ভাগের ক্ষত এখনও সম্পূর্ণ মিলে যায় নি। এর ক্ষত প্রশমিত হতে কয়েক প্রজন্ম লেগে যেতে পারে কিন্তু প্রশমন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে, সহাবস্থানের অভ্যাস গড়তে হবে এবং বাস্তবতা মেনে নিতে হবে যে, ভারত হতে ৪.৫ কোটি মুসলমান পাকিস্তানে দেশান্তরী হলে পাকিস্তান সমুদ্রে পর্যবসিত হবে, এটা মেনে নিতে হবে যে, পাকিস্তান এমন রাষ্ট্র হবে যেখানে বসবাসকারী মুসলিম এবং অমুসলিম সকল নাগরিক সমান বলে বিবেচিত হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সহায়ক প্রতিষ্ঠানসমূহ গঠনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে এই অনুভূতি উৎপন্ন করা যেতে পারে। পৃথক নির্বাচন পরিষদের পক্ষের সকলে শক্ত ভাবে অস্বীকার করবেন যে, অমুসলিমদের প্রতি অবিশ্বাস ও সন্দেহের কারনে তারা এমন ব্যবস্থা দাবি করছেন কিন্তু আমরা মৌলিক যুক্তি হতে বাঁচতে পারব না আর তা ভ্রান্ত প্রমান করতে চাইলে যৌথ নির্বাচন পরিষদ প্রণয়ন করাই একমাত্র পথ।
পৃথক নির্বাচন পরিষদে বিশ্বাসীগণ, যারা মনে করেন যৌথ নির্বাচন পরিষদের ফলে হিন্দুগণ মুসলিমদের শাসন করবে, সকল আসন দখল করবে, দুর্নীতিগ্রস্থ করবে ইত্যাদি। অদ্ভুত হোল এটা পাকিস্তানের এমন এলাকা হতে বলা হচ্ছে যেখানে হিন্দু অধিবাসীর সংখ্যা ২ শতাংশের বেশি নয়। অদ্ভুত যে পশ্চিম পাকিস্তানের উক্ত লোকেরা, যাদের এ সম্পর্কে সার্বিক কোন ধারনা নাই, তাহাদের ধারনা পূর্ব পাকিস্তান তাদের প্রবর্তিত ধারনা ধারন করবে, যেন তারা এর রক্ষাকর্তা, যেন পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিমরা কিছুই বোঝে না। তারা কি বুঝতে পারে না, যে এটা পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের জন্য নিন্দনীয়, যেখানে উল্লেখযোগ্য হিন্দু বসবাস করে। যারা মনে করেন উক্ত ব্যবস্থায় কোন বিপদ নেই তাদেরকে বলে রাখি, পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিমগণ যারা নিজেদের প্রতি বিশ্বাস হারান নাই, তারা সত্যিকারের মুসলিম এবং তারা জানেন দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব কিভাবে পালন করতে হয়। পশ্চিম পাকিস্তান, যেখানে অমুসলিমদের সংখ্যা খুবই নগণ্য সেখানে নির্বাচন পরিষদ পৃথক বা যৌথ তা তাদের জন্য কোন বিশেষ বিষয় নয়, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান এবং এর মুসলমানদের জন্য তা প্রয়োজনীয় ব্যাপার।
পাকিস্তানের এমন মানুষদের হতে বাঁচার প্রার্থনা করা উচিৎ যারা অমুসলিমদের কাছে দেশের স্বার্থ বিক্রি করার মত নীচ। অত্র দৃষ্টিকোণ হতে ধনী হিন্দুদের দেশ ত্যাগের কোন সংশ্লিষ্টতায় আমি মনে করি না পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিমগণ কোন বিপদের সম্মুখীন, তবে আমি তা তুলে ধরলাম তাদের জন্য যারা তাদের মুসলিম ভাইদের প্রতি নীচ ধারনা পোষণ করেন। পূর্ব পাকিস্তানে যৌথ নির্বাচন পরিষদের প্রক্রিয়া তুলে ধরার মাধ্যমে আমি দেখাব যে, তথাকথিত রক্ষকগন কতটা ভুল ধারনা পোষণ করছেন।
খুলনা জেলায় যেখানে মুসলিম এবং হিন্দু সংখ্যা প্রায় সমান এবং যার প্রাদেশিক পরিষদ পৃথক নির্বাচন পরিষদের ভিত্তিতে গঠিত, সেখানে ৮ জন মুসলিম এবং ৭ জন হিন্দু, এর জেলা বোর্ডে ৩০ সদস্য যার মধ্যে ১৬ জন মুসলিম ও ১৪ জন হিন্দু হওয়ার কথা কিন্তু এর ২৮ সদস্য মুসলিম এবং ২ সদস্য হিন্দু। অন্যদিকে ফরিদপুর জেলায় পৃথক নির্বাচন পরিষদ দ্বারা গঠিত বোর্ডে সদস্য সংখ্যা মুসলিম ২৫ এবং হিন্দু ১১ হবার কথা, তথাপি ৩২ মুসলিম এবং ৪ হিন্দু সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। দিনাজপুরে জনসংখ্যা হিসাবে ১২ জন মুসলিম ও ৯ জন হিন্দু সদস্য হবার কথা কিন্তু ২১ জন সদস্যই মুসলিম। এই সংখ্যাগুলি প্রমান করে যে, যৌথ নির্বাচন পরিষদে হিন্দুদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভবনা খুবই ক্ষীণ যদি না তারা মুসলিম জনসংখ্যার সাথে সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা না করে। যৌথ নির্বাচন পরিষদে যদি কারো প্রতিনিধিত্ব ক্ষতিগ্রস্থ হয় তা ক্ষতি করবে হিন্দুদের। আমি স্বেচ্ছায় উক্ত শব্দসমূহ “প্রতিনিধিত্ব বিষয়ক” উল্লেখ করছি তা হোলে এর মাধ্যমে পরিচিতি এবং অধিকার এর দৃষ্টিকোণ হতে সার্বজনীন প্রচেষ্টার উদ্রেক করবে সার্বজনীন দেশে যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য অত্যাবশ্যক, তার নিরাপত্তার জন্য, তার প্রতি মর্যাদা ও তার ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য, আরও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয় যে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে যদি সমান অংশীদার হিসাবে বিবেচনা করে এবং তার আশা ও ভীতি ভাগ করার মানসিকতা রক্ষা করে। যদিও এই প্রশ্ন থাকে যে কেন হিন্দুরা প্রতিনিদ্ধিত্ব হারানোর ভয় থাকার পরেও যৌথ নির্বাচন পরিষদের পক্ষে উকালতি করছেন। তার উত্তর আমি আগেই প্রদান করেছি, যার ভিন্ন উত্তরও রয়েছে। এটা হিন্দুদের পক্ষে কঠিন, অখণ্ড ভারতে তারা মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচন পরিষদ প্রণয়নে অস্বীকৃতি প্রদান করেছিল, যা তাদের মতে সঠিক প্রতিনিধিত্তের বিধান নয় যা তাদের সংখ্যালঘু হিসাবে অধিকার রক্ষায় সহায়ক হবে। এছাড়াও পৃথক নির্বাচন পরিষদে তারা সাংবিধানিক ভাবে সংখ্যালঘু বলে বিবেচিত হবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের নিকট হতে হীনমন্যতা অনুভব করবে। এটা সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষন করবে যদি এই হীনমন্যতা সরিয়ে ফেলা হয় এবং এক জাতি ধারণা তার জায়গা নেয় এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় শব্দটি এর গুরুত্ব হারায়। পৃথক নির্বাচন পরিষদের ক্ষেত্রে হিন্দুরা এত সংখ্যক সদস্যপদ অধিকার করবে যে তারা প্রতিযোগী মুসলিম দলগুলির মধ্যকার ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ন্ত্রনে সক্ষম হবে। এটা রাজনৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় একতাবদ্ধ থাকবে কিন্তু সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভেদ থাকবে। পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু সম্প্রদায় প্রশংসা পাবার অধিকার রাখে এই কারনে যে, তারা অনুধাবন করে যে, তারা সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করলে তা তাদের জন্যই ক্ষতিকারক হবে। তাদের অবস্থান এতই শক্তিশালী হতে পারে যে তারা বৃহৎ মুসলিম দল কে উচ্ছেদ করতে ছোট মুসলিম দলকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে। ইহা হিন্দুদের কিছু অস্থায়ী সুবিধা প্রদান করবে যার ফলে তাদের বিরুদ্ধে মতবাদ এবং অবিশ্বাস তৈরি হতে পারে এবং এই কারনে প্রধান মুসলিম দলসমূহ যেন তাদের বিরোধী মনোভাব পোষণ করতে না পারে। এটা প্রধানত বর্ণনা করে যে, হিন্দু সম্প্রদায় সংখ্যাবাচক বিভক্ত সম্প্রদায়ের চেয়ে আস্থা ও সহযোগিতামূলক এবং এক জাতিসত্তায় প্রতিষ্ঠিত ব্যাবস্থার ফল উপভোগে উৎসাহী হবে। আমি আশা করি, এমন সময় আসবে যখন মুসলিম এবং অমুসলিম সকলেই ধর্মীয় বিভেদ ভুলে দেশের সেবায় এগিয়ে আসবে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের সকল কাজ করবে এবং যার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠবে এবং প্রত্যেকে নিজ অধিকার মোতাবেক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, স্থানীয় সরকারে এবং আইনসভায় নিজেদের প্রতিনিধিত্ত নিশ্চিত করতে পারবেন।
অতএব, আমি হাউস এর নিকট প্রার্থনা করি এই যে, বাহিরের সকলে কেবল একটিমাত্র দৃষ্টিকোণ থেকে এই সমস্যা দেখেন, তা হোল পাকিস্তানের স্বার্থ। সুতরাং তাদেরকে ইসলামের নামে ভ্রান্তপথে পরিচালনা করা খুবই সহজ যারা ইসলামের জন্য সর্বস্ব বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকেন। মানুষের আবেগ উসকাইয়া দেওয়া খুবই সহজ, অগ্নি প্রজ্জলন এবং ধ্বংস সাধনও সহজ, কিন্তু প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। যারা এই বিতর্ককে শুধুমাত্র বিরোধিতার জন্য ব্যবহার করছে আমি তাদের প্রতি প্রার্থনা করি যেন তারা বিদ্বেষ ও ধর্মান্ধতা উসকানো হতে বিরত থাকেন এবং পাকিস্তানকে তার নিবাসীদের মধ্যকার আস্থা এবং ঐক্যের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করবেন।

আমি হাউসের প্রতি আমার প্রশংসা জ্ঞাপন করছি।

_____________________

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!