You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সুত্র তারিখ
যুক্তফ্রন্ট কর্তৃক রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দান পাকিস্তান অবজারভার ৯ ও ১১লা জুন,১৯৫৫

 

পো.অ. :জুন ৯, ১৯৫৫
আটক বিধায়কদের যুক্তফ্রন্ট কার্যালয়ের দ্বিতীয় দিনে মুক্তি.
অন্যান্য রাজবন্দীদের অভিযোগে মামলা আজ আসা পর্যন্ত.

পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের ৪৮ ঘন্টা পরই জনাব আবুল হোসাইন সরকার ৪ রাজবন্দীর ,২জন কম্যুনিস্ট সহ সকল বিধায়ক যার মধ্যে ৭জন গনতন্ত্রী দলের, ২জন কম্যুনিস্ট ,একজন সংখ্যালঘু যুক্তফ্রন্টের এবং একজন নির্দলীয়,এর মুক্তির আদেশ প্রদান করেন।
তাদের মধ্যে ১০ জনকে ৯২-ক ধারা পূর্ব বাংলায় আরোপ করার পরে গ্রেফতার করা হয়। নিন্মোক্ত ব্যক্তিদের জন্য মুক্তির আদেশ দেয়া হয়ঃ
পাকিস্থান গণতন্ত্রী দলঃ
জনাব মাহামুদ আলী (সিলেট), সম্পাদক
হাজী মোহাম্মদ দানেশ (দিনাজপুর),সভাপতি
খলিফা আহমেদ (নোয়াখালী)
আতাউর রহমান (রাজশাহী), যুগ্ম সম্পাদক
দেওয়ান মাহাবুব আলী (তিপ্পেরা), যুগ্ন সম্পাদক
আজিজুল হক (রংপুর)
বি সি চ্যাটার্জী (ঢাকা)
কম্যুনিস্টঃ
জনাব অক্ষয় বর্মণ (রংপুর) এবং পূর্ণেন্দু দস্তিদার
অন্য দুইজন বিধায়ক হলেন সংখ্যালঘু যুক্তফ্রন্টের জনাব ফনি মজুমদার এবং প্রসুন কুমার রায়, নির্দলীয়। জনাব রায় ১৯৫৪ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং বিধায়ক হিসেবে জেল থেকে ফিরে আসেন।
স্মরন করা যেতে পারে জনাব আবু হোসাইন সরকার অঙ্গীকার করেছিলেন যে তার মন্ত্রনালয়ের প্রথম কাজ হবে নিরাপত্তা বন্দীদের মুক্তি এবং একজন রাজবন্দীর মুক্তি হয় ৭ জুন।
অন্যান্য রাজনীতিবিদদের মামলাগুলোর ব্যপারে আজ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পো.অ. :জুন ১১, ১৯৫৫
জুনের মধ্যে ৫০০ রাজবন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে। অত্যান্ত জটিল মামলা নিয়ে কেন্দ্রের সাথে আলাপ আলোচনা করা হবে।
বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে ৫০০ রাজবন্দী যাদের ৯২-ক ধারা চালুর আগে এবং পরে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের এই মাসের মধ্যে মুক্তি দেয়া হবে। অধিকাংশদের এই সপ্তাহের মধ্যে মুক্ত করে দেয়া হতে পারে। সরকার অত্যন্ত গুরুত্বসহাকে এই বিষয়টিকে বিবেচনা করবে এবং সেই সকল বন্দীদের যাদের বিরুদ্ধে কোন চার্জ গঠন করা হয়নি তাদের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করবে। অন্যদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সাথে আলোচনা করবে।
আওয়ামী লীগ প্রচারিত মুসলিম লীগ পাকিস্তান অবজারভার জুন, ১৯৫৫ বিরোধী বক্তব্য সালতামামী মুসলিম লীগের ৭ বৎসরের শাসনকালে খতিয়ান • তথাকথিত নিরাপত্তা আইনে মওলানা ভাসানীসহ শত-সহস্ৰ দেশদরদী, ছাত্র, যুবক ও কৰ্ম্মীকে বিনা বিচারে কারাগারে নিক্ষেপ। • নিজেদের দলীয় ব্যবসায়ীদের দ্বারা কৃত্রিম উপায়ে লবণ সঙ্কট সৃষ্টি করিয়া জনসাধারণকে ১৬ টাকা সের দরে লবণ ক্রয় করিতে বাধ্য করা। • কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠীর নিকট আত্মসমর্পণ করিয়া পূবর্ব পাকিস্তানের জনগণের ন্যায় দাবী-দাওয়া বিকাইয়া দেওয়া। • আরবী হরফে বাংলা ভাষা লিখিবার উদ্ভট পরিকল্পনা করা। • পূবর্ব পাকিস্তানের প্রাণের দাবী বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবীকে নস্যাৎ করা। • বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীদার জাগ্রত ছাত্র-জনতার উপর নৃশংস গুলি চালনা ও হত্যা। • কৃত্রিম উপায়ে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করিয়া খুলনায় লক্ষ লক্ষ লোককে মৃত্যুর কবলে ঠেলিয়া দেওয়া। • উধ্বতন পাট ব্যবসায়ীদের সহিত ষড়যন্ত্র করিয়া পূবর্ব পাকিস্তানের একমাত্র সম্পদ পাটকে নূন্যতম দরে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা। • দুনীতি ও স্বজনপ্রীতির পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন। • নিজেদের দলীয় লোকদের মধ্যে পারমিট, লাইসেন্স প্রভৃতি বিতরণ। • ৭ বৎসর পর্যন্ত অসংখ্য উপ-নির্বাচন বন্ধ রাখা। • পরাজিত হওয়ার ভয়ে ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় পুলিশী জুলুম চালাইয়া অসংখ্য দেশদরদী কৰ্ম্মীদের হাজতবাসে বাধ্য করা। • পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূবর্ব পাকিস্তানের সম্পদে সৃষ্ট ও পুষ্ট কলিকাতা নগরীকে বিনা বাধায় হিন্দুস্থানের নিকট ছাড়িয়া দিয়া রাতারাতি চলিয়া আসা। শাসক গোষ্ঠীর নিকট আত্মসমর্পণ।
যুক্তফ্রন্টের ১৪ মাসের শাসনের খতিয়ান • ১৯৫৪ সালের সাধারণ নিবর্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করিবার পর পরাজিত ও পর্যুদস্ত মুসলিম লীগ যখন জনগণের বিজয়কে নস্যাৎ করিবার জন্য ৯২(ক) ধরা জারী করিয়া ১৫শত দেশ কৰ্ম্মীকে হাজতে পাঠাইয়াছিল, মওলানা ভাসানীর উপর নির্বাসন আদেশ জারী করিয়াছিল, দেশদরদী নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রুজু করিয়াছিল, ষড়যন্ত্র করিয়া আদমজী মিলে দাঙ্গা বাধাইয়া শত শত গরীব চাকুরীজীবিকে হত্যা করিয়াছিল, সেই কুখ্যাত মুসলিম লীগের নিকট আত্মসমর্পণ করিয়া মন্ত্রীত্ব গ্রহণ। • পূবর্ব বাংলার প্রাণের দাবী ২১ দফাকে ঘরোয়া বলিয়া উহাকে কার্যে পরিণত করিতে অস্বীকার করা। • পূবর্ব পাকিস্তানের উপর দুই-দুইবার বন্যার প্লাবন হওয়া সত্ত্বেও উহা প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা না করা। • পূবর্ব পাকিস্তানের প্রকৃত খাদ্য ঘাটতি অস্বীকার করিয়া আওয়ামী লীগের পুনঃ পুনঃ সতর্ক বাণীকে উপেক্ষা করিয়া দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না করা। • পরাজিত হওয়ার ভয়ে ১৪ মাস কাল পর্যন্ত বিভিন্ন উপ-নির্বাচন ঠেকাইয়া রাখা। • দেড় বৎসর কাল পর্যন্ত সভা আহবান না করিয়া জনগণের নিবর্বাচিত প্রতিনিধিদের একত্রে বসিয়া দেশের সমস্যাদি আলোচনা ও সমাধানের সুযোগ না দেওয়া। • নিজেদের দলীয় লোকদের মধ্যে জনগণের জন্য সংগৃহীত ৩৩ লক্ষ মণ চাউল নামমাত্র মূল্যে বিতরণ • পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনায় পূবর্ব পাকিস্তানের ন্যায্য স্বাৰ্থ বিসর্জন দেওয়া। • ২১ দফার খেলাফ করিয়া এক হাজার টাকার উর্ধ্বে মন্ত্রিগণের বেতন গ্রহণ করা। • পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন খাতে ১২০০ কোটি টাকা দিয়া এবং পূবর্ব পাকিস্তানকে মাত্র ২শত কোটি টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করিয়া পূবর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করা। • ২১ দফা ওয়াদাকে খেলাফ করিয়া শত শত দেশকৰ্ম্মকে বিনা বিচারে কারাগারে নিক্ষেপ করা। • নিজেদের দলীয় কোনদের মধ্যে লাইসেন্স, পারমিট এবং অন্যান্য সবর্বরকম সুবিধা বিতরণ করিয়া দুনীতি ও স্বজনপ্রীতি প্রদর্শন করা। আওয়াম লীগ কোয়ালিশন সরকারের আড়াই মাস কাল শাসনের খতিয়ান ১। মন্ত্রীত্ব গ্রহণের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সকল রাজবন্দীদের মুক্তিদান ও নিরাপত্তা আইনে শাস্তিপ্রাপ্ত বা ২। শাসনভার গ্রহণের মাত্র ১১ দিনের মধ্যে আইন পরিষদের অধিবেশন আহবান, বাজেট পাস ও নিরাপত্তা আইন বাতিল। ৩। পাটের লাইসেন্স ফি উঠাইয়া দেওয়া। ৪। বকেয়া খাজনা সুদ সমেত মওকুফ। ৫। সার্টিফিকেট প্রথা উচ্ছেদ।
৬। কৃষিঋণ সুদসহ মওকুফ। ৭। প্রতি ইউনিয়নে লঙ্গরখানা খোলার আদেশ দেওয়া। ৮। লক্ষ লক্ষ মণ চাউল গরীব জনসাধারনের মধ্যে বিতরণ। ৯। গুরু, বাছুর ও কৃষির অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয় করিবার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা কৃষিঋণ মঞ্জুর। ১০। খালবিল খনন, রাস্তাঘাট প্রস্তত, মেরামত ও জলাভূমির পানি নিষ্কাশনের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা টেষ্ট রিলিফ বাবদ মঞ্জুর। ১১। নিবর্বাচনের সময় মন্ত্রীদের সফরকালে সরকারী অর্থ ব্যয় ও যানবাহন ব্যবহার না করিবার আদেশ। ১২। অলপ বেতনভোগী কৰ্ম্মচারী ও শিক্ষকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের আদেশ। ১৩। প্রদেশের সমস্ত মেডিকেল স্কুলগুলিকে উন্নীত করিয়া ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। ১৪। কোর্ট ফি ও রেফ কাগজের দান কমান। ১৫। দুনীতি, ঘুষ প্রভৃতির বিরুদ্ধে দুনীতি দমন বিভাগের মারফত সংগ্রাম ঘোষণা ১৬। ঘাটতি এলাকায় দ্রুত খাদ্য পাঠাইবার জন্য বিমানযোগে খাদ্য নিক্ষেপ।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!