You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
কেবলমাত্র উর্দ্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিশেবে স্বীকৃতি দানের আহবান দ্য ডন ১১ই মে, ১৯৫৪

 

শুধুমাত্র উর্দুই আমাদের রাষ্ট্র ভাষা হবে
ডঃ হক এর বিবৃতি

গতকাল জারিকৃত রাষ্ট্র ভাষা তত্ত্ব সংক্রান্ত ডঃ আব্দুল হকের বিবৃতিরপূর্ণ বিবরণী নিম্নে দেওয়া হল-
“রাষ্ট্র ভাষা তত্ত্ব মুসলিম লীগ দল কর্তৃক প্রস্তাবিত হয়েছিল এবং পরবর্তীকালেদোষ গুন সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করে সাংবিধানিক পরিষদ তা অনুমোদন দিয়েছে। এই তত্ত্বের লেখক অত্যন্ত সৃজনশীলতা ও দক্ষতার সাথে এই তত্ত্বের খসড়া করেছেন , এবং প্রতিটি শব্দ এতো নিখুঁতভাবে নির্বাচন করা হয়েছে যা উর্দুর সম্ভবনা নষ্ট করে দিয়েছে এবং পাকিস্তানের কোনো অংশেই একে সমৃদ্ধশালী হবার উপায় বন্ধ করে দিয়েছে। উর্দুকে দূর্বল করার এমন অধ্যবসায়ী চেষ্টায় পুরো তত্ত্বটাই অস্পষ্ট, পরস্পরবিরোধী এবং অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে।
“এই তত্ত্বের প্রথম দফায়বলা আছে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা- উর্দু এবং বাংলা।আমাদের কাছে এটি পুরোপুরি অগ্রহনযোগ্য।এই ধরনের মৌলিক এবং উৎসগতভাবে পরস্পরবিরোধী দুটি ভাষাকে পাশাপাশি স্থাপন করাঅত্যন্ত আপত্তিকর। বাংলা ভাষার আছে নাগরী এবং সংস্কৃতি লিপি। যেখানে উর্দু লেখা আছে আরবি লিপিতে।বাংলা লেখা হয় বাম থেকে ডানে এবং উর্দু লেখা হয় ডান থেকে বামে।”
বাংলা ভাষা লালন করেছেন বাংলার বিখ্যাত কবি ও লেখক এবং উর্দু ভাষা বিকাশ ও বিস্তার লাভ করেছে ইসলামী সংস্কৃতি এবংশিক্ষার ঐতিহ্যে।উপমা এবং রুপক,প্রতীক ও বাংলার প্রসংগ বেশিরভাগ নেয়া হয়েছে হিন্দু পুরাণ থেকে,যেখানে উর্দু এর উপাদান ও প্রাণশক্তি আহরন করেছে আরবি ও ফার্সি(Persian) থেকে এবং বেড়ে উঠেছে ইসলামিক জ্ঞান এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যে।
দেশ ভাগের পূর্বেঃ
পাকিস্তান এর জন্য আমাদের দাবীর ভিত্তিএই যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলোযে আমরা আমাদের ধর্ম,সংস্কৃতি এবং ভাষাকে নিরাপদ রাখতে চেয়েছিলাম।এটা এই কারনে ছিল যে পাকিস্তানের স্থপতি,কায়েদ-ই-আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সুনিশ্চিত দ্ব্যর্থহীনভাবেএই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে উর্দুএবং কেবলমাত্র উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা এবং অন্যকোন ভাষা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা হতে পারে না।আমরা এই ঘোষনাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছি এবং কায়েদ-ই-আজম এর মন্তব্য থেকে বিচ্যুতি হবে পাকিস্তানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।
আমাদের আদর্শঃ
(১) জাতীয় এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা কেবলমাত্র একটিইহতে পারে, এবং সেটা কায়েদ-ই-আজম এর বক্তব্য অনুযায়ী উর্দু এবং কেবল মাত্র উর্দু, এবং অন্য কোন ভাষা এই মর্যাদা দাবী করতে পারে না।
(২) এক বছরের মধ্যে ইংরেজীকে উর্দু দ্বারা প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করা উচিত যাতে করে দুই বছর শেষ হবার পূর্বেই সকল সরকারি অফিস এবং আদালতে উর্দুতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।রাষ্ট্রের জন্য একটি দাপ্তরিক ভাষা হিসেবেউর্দু সকল শর্ত পরিপুর্নভাবে পূরন করতে সক্ষম।
(৩) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যম হবে উর্দু । ১৯৫৫ সালে থেকে শুরু করে, ৫ বছরের মাঝে সকল পর্যায় সম্পূর্ণ করতে হবে এবং ইতোমধ্যে এজন্য প্রয়োজনীয় বই এবং পাঠ্যসূচী প্রস্তুত করতে হবে।
(৪) উপরের ২ এবং ৩ বাস্তবায়নে যেকোনো সাহায্য প্রদান করতেআঞ্জুমান তারিকাহ্‌-ই-উর্দুপ্রস্তুত রয়েছে।
(৫) একটি উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য অর্থ তহবিল গঠন করতে হবে এবং এই ব্যাপারে সরকারকে উদারভাবে সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
এই লক্ষ্য অর্জন করতে আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আন্তরিক কর্মী প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট নানাবিধ কাজের জন্য সমিতি (Association)এবং অর্থের ব্যবস্থা করতে হবে।অর্থাভাবের কারণে আঞ্জুমান এই ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রগতি করতে পারেনি।
কোনো আপোস নয়ঃ
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে আমরা এই বিষয়ে আমরা কোনো আপোস করতে রাজি নই ।উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা না করা অবধি আমরা সন্তুষ্ট হবোনা, কারণ উপমহাদেশের কোনো ভাষাকেই বিশালতা,সমৃদ্ধি,ধ্যানধারণা এবং অনুভুতি আদান প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকারিতা ও বোধগম্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে উর্দু ভাষার সাথে তুলনা করা যায়না।তাই আমাদের দাবি কেবল উর্দুই হবে পাকিস্তানের জাতীয় এবং রাষ্ট্রভাষা।অন্যান্য সকল ব্যবহৃত ভাষা , যা দেশের এক অংশে ব্যবহৃত হয় তা অন্য অংশের জন্য আঞ্চলিক বা উপভাষা, যেগুলো নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে বোঝাও যায়না বলাও যায়না।
“বলা এবং বোঝার ক্ষেত্রে সমগ্র মহাদেশ জুড়ে কেবলমাত্র উর্দু ভাষারই সার্বজনীনত্ব (Universality) আছে এবং তাই, এটি দেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবিরযোগ্য” ।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!