You dont have javascript enabled! Please enable it! 1954.05.26 | ফজলুল হক কর্তৃক প্রকাশিত বিবৃতির প্রতিবাদ | পাকিস্তান অবজারভার - সংগ্রামের নোটবুক
তারিখ সূত্র শিরোনাম
২৬শে মে, ১৯৫৪ পাকিস্তান অবজারভার ফজলুল হক কর্তৃক প্রকাশিত বিবৃতির প্রতিবাদ

 

“উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার এবং সত্যবিকৃতি” নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টকে ফজলুল হকের নিন্দাঃ পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি।
২৪শে মে,করাচিঃ পূর্ব পাকিস্তানের মূখ্যমন্ত্রী জনাব এ কে ফজলুল হক নিউইয়র্ক টাইমসে তাঁর নামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “নিউইয়র্ক টাইমসের করাচি প্রতিনিধি আমার সাথে কথোপকথনের যে প্রতিবেদনটি দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার এবং সত্যবিকৃতি ব্যতীত আর কিছু নয়।“
তিনি বলেন “ আমি প্রকৃতপক্ষে ঐ প্রতিবেদককে সাক্ষাৎকারে যা বলেছি তা হল যে পূর্ব পাকিস্তান, পাকিস্তান রাষ্ট্রের একটি স্বায়ত্তশাসিত অংশ হওয়া উচিত। এটাই আমাদের আদর্শ এবং এর জন্যে আমরা সংগ্রাম করব।“

নিম্নে ফজলুল হকের আজকে প্রেসের নিকট দেওয়া সম্পূর্ণ বিবৃতিটি প্রদান করা হলঃ “ আজ বেলা ৪ টায় নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদকের নেওয়া সোমবারে তার সাথে আমার কথোপকথনের কিছু টিকা পড়ার আমার সুযোগ হয়। আমি দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে তাঁর নেওয়া বিবৃততে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার এবং সত্যবিকৃতি ছাড়া আর কিছুই ছিল না, যা বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও, ইচ্ছাকৃত ভাবেই করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রতিটি শব্দই ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং প্রতিটি বাক্যই সত্যের অপলাপ। এরকম একটি প্রতিবেদনের প্রতিটি অংশের প্রতিবাদ করা অসম্ভব, তাই আমার বক্তব্য কি ছিল এবং বক্তব্যকে কতটা বিকৃত করা হয়েছে জনগণকে তাঁর একটি ধারনা দেয়ার জন্য আমি সম্পূর্ণ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে নিম্নক্ত বিবৃতি দিলাম।
আমি প্রকৃতপক্ষে ঐ সাক্ষাৎকারে প্রতিবেদককে যা বলেছি তা নিম্নরূপ “পূর্ব পাকিস্তান, পাকিস্তানের একটি স্বায়ত্তশাসিত অংশ হওয়া উচিত। এটাই আমাদের আদর্শ এবং এর জন্যে আমরা সংগ্রাম করব।“ এক মূহূর্তের জন্যেও আমি বলিনি যে আমাদের আদর্শ “স্বাধীনতা।“
আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে দেখছি আমার কথার কতটা ভুল বোঝা হয়েছে এবং ভুলব্যাখ্যা করা হয়েছে। সম্ভবত মানুষ আমাকে নিয়ে পূর্বানুমিত ধারনা নিয়ে আসে। আমি কাপুরুষ নই। আমি যদি কোন কিছু বলে থাকি আমি তার দায়িত্ব অবশ্যই নেব।
সাক্ষাৎকারটিতে দুজন প্রতিবেদক ছিলেন, একজন রয়টার্সের, অপরজন নিউইয়র্ক টাইমসের।
তারা আমাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বিষয়ে প্রশ্ন করেন। আমি বলেছিলাম যদি কোন আগ্রাসন ঘটে আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের কাছ থেকে সাহায্য আশা করব, কিন্তু যদি কোন সাহায্য না আসে তাহলে আমরা নিজেরাই আমাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করব।
আমি এটাও বলেছিলাম যে একটি প্রথম শ্রেণীর নৌবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল পূর্ব পাকিস্তানের রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যখন প্রতিবেদকদ্বয়কে ডাকা হয় তখন এ বিষয়টি নিয়ে একটি আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদক একথা স্বীকার করেন যে আমি স্বাধীনতার কথা বলিনি। তিনি বলেন যে তিনি আমার বক্তব্য থেকে এটা অনুমান করে নিয়েছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের করাচী প্রতিবেদক তার প্রতিবেদনসমূহে অসততার কারনে কুখ্যাত। তার পাঠানো অনেক উত্তেজক খবর পরবর্তীতে ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই পত্রিকার করাচী প্রতিবেদকের সবচেয়ে হাস্যকর খবর ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় গুলিকে কেন্দ্র করে যেখানে দুই সারির শিরোনাম ছিল “ ঢাকায় ছাত্রদের উপর ভারতীয় পুলিশের গুলি: ৪ জন নিহত এবং একাধিক আহত।“ এর পরে যে খবরটি ছিল সেটি ছিল আরো হাস্যকর। তাতে বলা হয়েছিল “ ঢাকাতে দুটি ইংরেজী সংবাদপত্র ছিল, দি পাকিস্তান অবজারভার এবং দি মর্নিং নিঊজ। সরকার পাকিস্তান অবজারভার নিষিদ্ধ করে দেয়ায় যার প্রতিবাদে ছাত্ররা ধর্মঘট পালন করে এবং মরনিং নিঊজের প্রেস আক্রমণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ভারতীয় পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয় যাতে ৪ জন ছাত্র নিহত হয় এবং আরো অনেকে আহত হয়।- (Ed., P.O.)
আলী, হক এবং টাইমস প্রতিবেদকের বৈঠক
এটা বোঝা যাচ্ছে যে, নিউইয়র্ক টাইমসের জনাব জন ডি. ক্যালাহানের জনাব ফজলুল হকের সাক্ষাৎকারের প্রতিবেদনটি পড়ার পর প্রধানমন্ত্রী জনাব জন ডি. ক্যালাহান এবং জনাব ফজলুল হক ঊভয়ের সাথেই মিলিত হন এবং তাদের সামনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন, এ.পি.পি. এর প্রতিবেদন।
জনাব ফজলুল হক এসময় তার নামে আরোপিত কিছু বক্তব্য সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন, যদিও নিউইয়র্ক টাইমসের জনাব জন ডি. ক্যালাহান সাক্ষাৎকারটির তার স্বকৃত রূপকেই সঠিক বলে স্থির থাকেন এবং এর কোন অংশ প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানান। (এপিপি)