You dont have javascript enabled! Please enable it! 1955.06.07 | আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন | পাকিস্তান অবজারভার - সংগ্রামের নোটবুক
তারিখ সুত্র শিরোনাম
৭ই জুন, ১৯৫৫ পাকিস্তান অবজারভার আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন

 

৫ সদস্যের যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার প্রধান, সরকার।অগ্রাধিকার, রাজনীতিবিদদের অব্যাহতি। শীঘ্রই মন্ত্রীসভার সম্প্রসারণ। সংখ্যালঘুদের জন্য আসন বরাদ্দ।
জনাব আবু হুসাইন সরকারের সভাপতিত্বে ৫ সদস্যের দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট ক্যাবিনেট গতকাল(সোমবার) সকাল ১১.৩০ এ রাজভবনে শপথ গ্রহন করেন। পূর্ব বাংলার গভর্নর জনাব সাহাবুদ্দিন দাপ্তরিক এবং গোপনীয়তার শপথ দরবার হলে পরিচালনা করেন।
আইন অনুযায়ী, জনাব এ. কে. ফজলুল হক যার পুরাতন মন্ত্রণালয় গভর্নর জেনারেল ঘোষণার মাধ্যমে ৯২-এ পূর্ব বাংলা হতে তুলে নেওয়ার সাথে সাথে প্রান ফিরে পেয়েছিল, শপথপাঠ অনুষ্ঠান সংঘটনের পূর্বেই তার কার্যালয় হতে পদত্যাগ করেন।
জনাব আবু হুসাইন সরকারও গতকাল প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর নিকট পাকিস্তান মন্ত্রীপরিষদ হতে তার পদত্যাগপত্র দাখিল করেছেন। উভয় পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে।
মন্ত্রী হিসেবে শপথ নাওয়া পাঁচ জনের সকলেই পদচ্যুত ফজলুল হক মন্ত্রী সভার প্রাক্তন মন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ে আছেন কৃষক শ্রমিক পার্টির জনাব আবু হোসাইন, যার সভাপতি এ. কে. ফজলুল হক। আওয়ামীলীগের মূল সংগঠন হতে ভেঙ্গে আলাদা হওয়া অংশ থেকে এবং জনাব ফজলুল হক, জনাব সৈয়দ আজিজুল হক (কে. এস. পি) এবং নিজামে-ইসলামের জনাব আশরাফুদ্দিন চৌধুরীর সাথে হাত মেলানো জনাব আবদুস সালাম খান এবং জনাব মাশহামুদ্দীন আহমেদ, পাকিস্তানের কঙ্কালসার মন্ত্রীসভায় যুক্তফ্রন্ট পার্টির প্রতিনিধিহীন একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল।
পাঁচ মন্ত্রীর সকলেই দপ্তর ও গোপনীয়তার শপথ বাংলায় স্বাক্ষর করেন। জনাব এ. কে. ফজলুল হকও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দরবার হলে গভর্নরের প্রবেশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়। মুখ্য সচিব জনাব এন. এম. খান কার্যক্রম শুরু করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন এবং গভর্নরের অনুমতি মঞ্জুর সাপেক্ষে জনাব আবু হুসাইন সরকারকে গভর্নরের নিকট উপস্থাপন করেন। দপ্তর ও গোপনীয়তার শপথ পাঠ করার পর তারা পালাক্রমে বাংলায় শপথ পত্র স্বাক্ষর করেন।
বিকাল ৩ টায় মন্ত্রীসভা গভর্নরের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং দফতর বন্টন করা হয় জনাব আবু হুসাইন সরকার, মুখ্য মন্ত্রী (স্বরাষ্ট্র ও মুখ্যমন্ত্রী বিভাগ), জনাব আশরাফুদ্দিন চৌধুরী (অর্থ ও শিক্ষা), জনাব সৈয়দ আজিজুল হক (ব্যবসা, শ্রম, শিল্প ও রাজস্ব), জনাব আবদুস সালাম খান ( যোগাযোগ, স্থাপত্য এবং সেচ, স্থানীয় স্ব-সরকার এবং জনস্বাস্থ্য) এবং জনাব মাশহামুদ্দিন আহমেদ (খাদ্য ও কৃষি ও বিচারসংক্রান্ত)।
সরকারের কার্যক্রমের ব্যাখা
পূর্ব বাংলার নতুন মুখ্যমন্ত্রী জনাব আবু হোসাইন সরকার গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন তিনি অতি শীঘ্রই মন্ত্রীসভার কাঠামো বড় করবেন।
তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন রাজনৈতিক কারাবন্দীদের মুক্তি প্রথমে অগ্রাধিকার পাবে এবং আরো সংযুক্ত করেন তার মন্ত্রনালয়ের কার্যকালের মধ্যে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা দাবী যতদুর সম্ভব বাস্তবায়ন করার চেস্টা করবে।
শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরপরি জনাব সরকার বৈঠকখানায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছিলেন।
জনাব সরকার তার মন্ত্রনালয়ে আওয়ামীলীগের ভিন্ন মতাবলম্বীদের সংযুক্ত করবেন না যারা জনাব ফজলুল হকের নেতৃত্বকে অমান্য করেছেন যদি না তারা পুনরায় যুক্তফ্রন্টে যোগ দান করে। তিনি বলেছেন “তারা প্রথমে আমাদের দলে যোগদান করুক তারপর আমরা তাদের অবস্থান বিবেচনা করব।” কিন্তু তিনি সংখ্যালঘুদের থেকে দুইজন সদস্য নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন, তফসিলভুক্ত একজন এবং অবশিষ্টদের থেকে একজন। কিন্তু তিনি নিশ্চিত ছিলেন না কত সময়ের মধ্যে তিনি মন্ত্রীসভার বর্ধিতকরন করবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন তার মন্ত্রণালয় পূর্ব বাংলার মানুষের জীবন মান বাড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন তার মন্ত্রণালয় পূর্ব বাংলার জনগনের জীবন মান বাড়ানোর সর্বাত্মক চেস্টা করবে। তিনি অনুভব করেছেন দুঃখজনক নিন্মমাত্রাকর জীবনযাত্রাকে উন্নতকরন এবং একই সাথে তার মন্ত্রনালয়ের এটি বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিকল্পিত এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পদক্ষেপ নেয়া দরকার।