You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971 | ভারতে আগত বাংলাদেশবাসী যুদ্ধকালীন দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে একটি প্রচারপত্র | সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিষদ - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
ভারতে আগত বাংলাদেশবাসী যুদ্ধকালীন দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে একটি প্রচারপত্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিষদ ……

১৯৭১

ভারতে শরণার্থী বাংলাদেশী ভাইবোনদের প্রতি আবেদন

আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক কঠিন ও দুরুহ মুহূর্তে আমরা আজ বাস করছি। স্বৈরাচারী পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অমানুষিক গণহত্যা ও অত্যাচার থেকে প্রাণে রক্ষা পেয়ে আমরা সাময়িক ভাবে আশ্রয় নিয়েছি আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের মাটিতে। আমাদের এ বিপদ মুহূর্তে ভারত সরকার ও এদেশের জনসাধারণ আমাদের প্রতি যে সহানুভূতি ও সাহায্য প্রদান করেছে তার তুলনা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এই অবস্থা সাময়িক। আমরা সোনার বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে বিতাড়িত করে অতি শীঘ্র জন্মভূমির মাটিতে আবার ফিরে যাব। সংগ্রাম এগিয়ে চলছে। আজকে আমাদেরকে আরও সক্রিয়ভাবে সে সংগ্রামে শরিক হতে হবে। সংগ্রামকে সফল করে দেশকে শত্রুমুক্তি করার জন্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আমাদের পুরোপুরি হৃদয়ঙ্গম করা উচিত।
(১) যুদ্ধাবস্থায় আমাদের যে কোন রকম অসুবিধা সহ্য করার মতো মনোবল প্রয়োজন। আমদের স্বদেশবাসী লক্ষ লক্ষ লোক দেশের জন্যে প্রাণ দিয়েছে- লক্ষ লক্ষ লোক এখনও শত্রুসৈন্যের কবলিত এলাকায় নির্যাতিত হচ্ছে। তাঁদের কথা স্মরণ করে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হব- দেশের খাতিরে যেকোনো অসুবিধাকে আমরা তুচ্ছ মনে করবো।
(২) ৩০ লক্ষ শরণার্থীর ভরণ-পোষণের ও সর্বপ্রকার সুখ- সুবিধার ব্যবস্থা এক ব্যাপক সমস্যা। শরণার্থীদের সহযোগিতা ও উপলব্ধি ছাড়া কোন সরকার বা বেসরকারি সংঘের পক্ষে সব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করা সম্ভব নয়।
(৩) পাকিস্তানী দুশমনরা আমাদের ভিতর সাম্প্রদায়িকতা ও জাতিগত বিদ্বেষের বীজ ছড়াবার জন্যে তাদের অনুচরদের লাগিয়ে দিতে পারে। কাজেই সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা, জাতি- বিদ্বেষ ও রাজনৈতিক তর্ক- বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে আমরা যেন শত্রুর শিকার না হই। আমাদের বিশেষ করে মনে রাখতে হবে, পাকিস্তানী সরকার তাদের বর্তমান বেকায়দা অবস্থা থেকে উদ্ধার পাবার জন্য নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। তারা বিশেষ করে চেষ্টা করছে, ভারতের মাটিতে একটা সাম্প্রদায়িকতা কলহ সৃষ্টি করতে। তাদেরই উস্কানিতে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় কিছুসংখ্যক সুবিধাবাদী মিরজাফর হিন্দু- সম্প্রদায়ের জিনিসপত্র লুটপাট করে। মনে রাখবেন, যেসব মুসলমান এসব কাজ করছে- তারা শুধুমাত্র হিন্দুদের শত্রু নয়, তারা আমাদের জাতীয় শত্রু। আমদের মুক্তিবাহিনীর বীর সেনারা বহু অঞ্চলে এসব মিরজাফরী শত্রুদের শাস্তিদান করছেন। আমাদের সবার এক পরিচয়। হিন্দু- মুসলমান- বৌদ্ধ- খৃষ্টান মিলে আমরা সবাই বাংলাদেশী। আমাদের লক্ষ্য এক- দেশকে শত্রুর কবল থেকে রক্ষা করা।
(৪) সীমিত অর্থবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে নানারকম জটিলতার ভিতর দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনার কাজ করে যেতে চলেছে। আমাদের সরকারের প্রতিটি কাজকে ধৈর্যসহকারে গ্রহণ করতে হবে। শীঘ্রই বিভিন্ন কর্মক্ষম ব্যক্তিদের সহায়তায়- ক্যাম্প এলাকায় স্বাস্থ্যরক্ষা, সামাজিক শান্তিরক্ষা, অল্পবয়স্ক শিশুদের শিক্ষাদান ও মহিলাদের কার্যোপযোগী করে তোলার পরিকল্পনা কার্যকরী করা হবে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারী ও বেসরকারি উদ্যোগকে সর্বতোভাবে সহায়তা করতে সচেষ্ট হবো।
(৫) সর্বোপরি আমাদের সকলকে মানসিক ও যথাসম্ভব শারীরিকভাবে যুদ্ধাবস্থার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। মুক্তিবাহিনীকে জোরদার করে তোলার জন্যে আমরা যে কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবো।
আমাদের মনে রাখতে হবে- একতাই গণশক্তির মূল চাবিকাঠি, আর শৃঙ্খলা হোল একতার বন্ধন। আমাদের অভাব- অভিযোগের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন আমাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে আমাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে না পারে। মুক্তিযুদ্ধে সেই হবে আমাদের পরোক্ষ দান। আমাদের সকল দুঃখ- কষ্টের মূলে আমরা ফিরে পাবো স্বাধীন বাংলাদেশ। সে দিন আসন্ন। “জয় স্বাধীন বাংলা”
“দুঃখ সহার তপস্যাতেই হোক বাঙ্গালীর জয়
ভয়কে যারা মানে তারাই জাগিয়ে রাখে ভয়
মৃত্যুকে যে এড়িয়ে চলে মৃত্যু তারেই টানে
মৃত্যু যারা বুক পেতে লয় বাঁচতে তারাই জানে।”