শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির উপর আওয়ামী লীগের সাপ্তাহিক মুখপত্রের সম্পাদকীয় | জয়বাংলা | ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি
(সম্পাদকীয়, জয় বাংলা )
বর্তমান মুক্তিযুদ্ধকে সফল সমাপ্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারকে উপদেশ দানের জন্য বাংলাদেশের চারটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে যে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার খবর দেশে বিদেশের সংবাদপত্রে ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে এবং এ সম্পর্কে অনেক উৎসাহী আলোচনাও মুদ্রিত হয়েছে। বস্তুতঃ এই সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হওয়ায় জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে জাতির যে নিবিড় ও অটুট ঐক্য আরেকবার প্রমাণিত হল, তাতে বাংলাদেশের ভিতরে মুক্তিসংগ্রামীরা যেমন অনুপ্রাণিত হবেন, তেমনি বাইরে বাংলাদেশের শুভাকাংখী ও বন্ধু দেশগুলোও উৎসাহী হবেন। বস্তুতঃ এই উপদেষ্টা কমিটি গঠনের গুরুত্ব এইখানেই যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনৈক্যে সৃষ্টির জন্য সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত এবং উগ্র তত্ত্বসর্বস্বদের সুবিধাবাদী ভেদনীতি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হল এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের লক্ষ্যে অবিচল চারটি প্রগতিশীল দল বাংলাদেশের জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের প্রতি তাদের ঘোষিত সমর্থন আরো কার্যকর ও সক্রিয় করে তুললেন। এ ব্যাপারে এই দলগুলোর ভুমিকার যেমন প্রশংসা করতে হয় তেমনি, আওয়ামী লীগেরও। আওয়ামী লীগ গত সাধারন নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রায় শতকরা নিরানব্বইটি আসনে জয়লাভ করে জাতিকে নেতৃত্ব দানের অবিসম্বাদিত অধিকার লাভ করা সত্ত্বেও মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনায় অন্যান্য প্রগতিশীল দলের সমর্থন ও উপদেশ গ্রহণে সিদ্ধান্ত দ্বারা দলীয় স্বার্থের উর্ধে জাতীয় স্বার্থের প্রতি তাদের আনুগত্য বলিষ্ঠভাবে প্রমান করেছেন।
সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটিতে যারা রয়েছেন, তাদের রাজনৈতিক মত ও পথে পার্থক্য থাকলেও সকলেই পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক। কমিটিতে ভাসানী ন্যাপের প্রতিনিধিত্ব করেছেন মাওলানা ভাসানী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন শ্রী মণি সিং, বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেসের শ্রী মনোরঞ্জন ধর এবং মোজাফফর ন্যাপের অধাপক মোজাফফর আহমদ। এ ছাড়া এই কমিটিতে আওয়ামীলীগের দুজন সদস্যকে অন্তুভুর্ক্ত করা হবে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী এই কমিটিতে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কমিটির বৈঠক আহবান ও পরিচালনা করবেন।
মুজিবনগরে অনুষ্ঠিত এই উপদেষ্টা কমিটির প্রথম বৈঠকে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারই যে বাংলাদেশের একমাত্র বৈধ সরকার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা এ সত্যটি অকুন্ঠ অভিব্যক্তি দেখা গেছে। জাতীয় মুক্তি-সংগ্রামে জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির এই সমঝোতা ও অভিন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ন ঘটনা।
বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার এবং এই সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির মধ্যে স্বাভাবিক চরিত্রগদ পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু রয়েছে উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্যগত ঐক্য। এই লক্ষ্য হল বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা। চরিত্রগত পার্থক্যের ক্ষেত্রে বলা চলে, গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত একমাত্র সংস্থা, জনগণের পক্ষ থেকে সিধান্ত গ্রহণের ও তা কার্যকর করার সম্পূর্ণ এখতিয়ার তার। অন্যদিকে জনগণের পক্ষ থেকে এই সিধান্ত গ্রহণ ও তা কার্যকর করার ব্যাপারে সাহায্যে ও সুপরামর্শ দান হবে উপদেষ্টা কমিটির কাজ। তাই এই উপদেষ্টা কমিটি গঠনের উদ্যেগ গ্রহণ করা গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার মুক্তিযুদ্ধকে জোরদার করার কাজে একটি বলিষ্ঠ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছেন বলা চলে। এই ব্যবস্থার ফলে বাংলাদেশের সকল এলাকার স্বাধীনতা এবং হানাদার দস্যুদের চূড়ান্ত পরাজয়ের দিনটি অব্যশই ত্বরান্বিত হবে।