জীবনচিত্র নামঃ ডা. মোহাম্মদ আলমগীর মিঞা
Dr. Mohammad Alamgir Miah
ডাকনামঃ চাঁদ মিঞা
পিতার নামঃ মো. আবদুল করিম মিঞা
পিতার পেশাঃ গ্ৰাম্য ডাক্তার
মাতার নামঃ রহিমা বেগম
ভাইবোনের সংখ্যাঃ চার ভাই ও চার বোন; নিজক্ৰম-প্রথম
ধর্মঃ ইসলাম
স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম-মেবুরজিল বুনিয়া, ডাকঘর-কলার
দোয়ানিয়া, উপজেলা-নাজিরপুর, জেলা-পিরোজপুর
শহীদ ডা. মোহাম্মদ আলমগীর মিঞা
নিহত হওয়ার সময় ঠিকানাঃ সিপাইপাড়া, মেডিকেল কলেজ হোস্টেল, বোয়ালিয়া, রাজশাহী
জন্মঃ ৫ আগস্ট, ১৯৪৮, পিরোজপুর
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
ম্যাট্রিকঃ দ্বিতীয় শ্রেণী, ১৯৬২, কলার দোয়ানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়
আইএসসিঃ দ্বিতীয় শ্রেণী, ১৯৬৪, বাগেরহাট পিসি কলেজ
এমবিবিএসঃ ১৯৭১, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
শখঃ বক্তৃতা ও সাঁতার। স্কুল জীবন থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত সঁতারু ও বক্তা হিসেবে প্রতি বছর দুটি পুরুষ্কার পেতেন
স্বরচিত গ্রন্থঃ একুশে ফেব্রুয়ারির ওপর কবিতার বই ‘বিক্ষুব্ধ বর্ণমালা’
চাকরির বর্ণনাঃ
ইন্টার্নি ডক্টরঃ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ১৯৭১
হত্যাকারীর পরিচয়ঃ জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা ধরে নিয়ে যায়
নিহত/নিখোঁজ হওয়ার তারিখঃ ১২ ডিসেম্বর ১৯৭১ ধৃত এবং ১৪ ডিসেম্বর নিহত
মরদেহঃ পাওয়া যায়নি
স্মৃতিফলক/স্মৃতিসৌধঃ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ ‘আলমগীর মেডিকেল ছাত্রাবাস’ করা হলেও বর্তমানে তা নিশ্চিহ্ন
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরস্কারঃ পাননি
বৈবাহিক অবস্থাঃ অবিবাহিত
তথ্য প্রদানকারী
নাসিমা খানাম
শহীদ চিকিৎসক বোন
সহকারী রেজিস্টার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার,
রাজশাহী
‘মিতা মঞ্জিল’, বাড়ি নং-১৪৯, ওয়ার্ড নং-৩, নতুন
বিলসিমলা, রাজশাহী-৬০০০
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ২১৫
আমার বড় ভাই
শহীদ ডা. মোহাম্মদ আলমগীর মিঞা
নাসিমা খানম
আলমগীর আমার জীবনপ্ৰদীপ। আমি ও আমার বড় ভাই আলমগীর দুই বছরের ছোট-বড়। আমার মা অত্যন্ত শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তাই আমাদের মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুলে পাঠিয়েছিলেন। দুই ভাইবোন একসাথে স্কুলে যেতম। খাল-বিল, নদী নিয়ে আমাদের বরিশাল জেলা। ৩০-৪০টি সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে হতো। বড় ভাই আলমগীর আমাকে কোলে করে সাকো পার করিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতেন।
এমনিভাবেই আমার ভাই বাঙালি জাতিকে দারিদ্র্য ও পরাধীনতার সাঁকো পার করিয়ে দেশকে স্বাধীন ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি পেশী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন চিকিৎসাশাস্ত্র। যেখানে যত অন্যায় দেখেছেন তিনি ছিলেন সোচ্চার। রাজনীতিমনস্ক ছিলেন। পাকিস্তানিদের নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে পাক সেনাবাহিনীর হামলার প্রতিবাদরত অবস্থায় পাকসেনাদের গুলিতে নিহত হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহম্মদ শামসুজ্জোহা। ফুঁসে উঠলো রাজশাহীসহ সমগ্র বাংলাদেশ। আলমগীর ভাইও প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠলেন। গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিলেন। গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে এলো মুক্তিযুদ্ধ। তাতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ভাই। অসুস্থ ছিলেন। তবু এতটুকু দমে গেলেন না। অসাধারণ বক্তৃতা করতে পারতেন। তাই সভায় অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠলেন। এই পরিচিতিটাই কাল হয়ে দাঁড়ালো।
জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের প্ররোচনায় পাকসেনারা ধরে নিয়ে গেল। তখন আলমগীর ভাই মেডিকেলে পঞ্চম বর্ষের পরীক্ষার্থী। অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হলো। আন্দোলন থেকে সরিয়ে রাখতে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হলো। ভাই পরীক্ষা দিলেন; পাস করলেন; ডাক্তার হলেন। ইন্টার্নশিপ শুরু করলেন। ১২ ডিসেম্বর ১৯৭১ তাকে হাসপাতাল থেকে পাকসেনারা আবার ধরে নিয়ে গেল। সে যাওয়াই শেষ যাওয়া হলো। লাশটি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পরে
২১৬ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
শহীদ ডা. মোহাম্মদ আলমগীর মিঞা
জানতে পেরেছি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে আরো অনেক বাঙালির সাথে আলমগীর ভাইকেও ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করা হয়।
প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্রঃ
ক. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র; সম্পাদনাঃ হাসান হাফিজুর রহমান; প্রকাশনা: তথ্য মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, প্রকাশকালঃ আষাঢ় ১৩৯১, জুন ১৯৮৪; ৮ম খণ্ড; পৃ. ৫৮৮-৫৮৯।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ২১৭
Reference: মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ