You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.21 | জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ কতৃক স্বাধীনতা চালিয়ে যাবার সংকল্প ঘোষণা | বাংলাদেশ’-বাংলাদেশ সরকার প্রচারিত বুলেটিন - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ কতৃক স্বাধীনতা চালিয়ে যাবার সংকল্প ঘোষণা ‘বাংলাদেশ’-বাংলাদেশ সরকার প্রচারিত বুলেটিন ২১ জুলাই, ১৯৭১

বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাংলাদেশের দখলকৃত অঞ্চল মুক্ত করার এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও তার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণে পুনর্বার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তাঁরা ইসলামাবাদের সাথে যেকোন ধরণের রাজনৈতিক সমঝোতা ও সহাবস্থানের ধারণা সম্পূর্ণরুপে প্রত্যাখ্যান করেন।

বাংলাদেশের কোন এক গোপন জায়গায় অনুষ্ঠিত দুইদিনের এক আলোচনা সভায়  বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে এই দৃঢ় সংকল্পটি নির্বাচিত সকল ৩৭৪ প্রতিনিধির (বর্তমানে বিলুপ্ত পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য) কণ্ঠে ধ্বনিত হয়।

১৯৭১ সালের ৬ই জুলাই ১৩৫ জন এমএনএ এবং ২৩৯ জন এমপিএ একটি সম্মেলনে মিলিত হন। সম্মেলনটি ১৯৭১ সালের ৭ই জুলাই শেষ হয়। উল্লেখ্য যে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে সকল মন্ত্রী, যেমন, প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব খন্দকার মুশতাক আহমেদ, অর্থমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী জনাব এ এইচ এম কামারুজ্জামান সেখনে উপস্থিত ছিলেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম এর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অধিবেশনটি শুরু হয় এবং কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়। প্রধানমন্ত্রী মোঃ তাজউদ্দীন আহমেদ, এবং মুক্তি বাহিনীর (লিবারেশন ফোর্স) সেনাপতি এ. জি. উসমানী, যিনি জাতীয় বিধানসভার সদস্য ছিলেন, উক্ত সম্মেলনে উপস্থিত হন এবং সেখানে উপস্থিত অনেকের সাথে কথা বলেন।

দুইদিন ব্যাপি এই সম্মেলনের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে উপস্থিত সদস্যগণ শত্রুর মোকাবিলা করার জন্যে সরকারের সাথে থাকার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প গ্রহন করেছেন। বাংলাদেশের উপর ইয়াহিয়া বাহিনী দ্বারা সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর সমঝোতা করার আর কোন পথ যে খোলা নেই তা এই সম্মেলন থেকে স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন হয়ে যায়। এটাও নিশ্চিত হয় যে ৭৫ মিলিয়ন বাংলাদেশী ও বাংলাদেশের মুক্তি একমাত্র দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে বাংলাদেশের মাটি থেকে চিরতরে বিতাড়িত করার মধ্যেই নিহিত আছে। এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সম্মেলন থেকে “মুক্তিযুদ্ধের” দিকে সর্বশক্তি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।

এই সম্মেলন থেকে বিশ্বের সব দেশের প্রতি বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধে ইসলামাবাদের উপর চাপ প্রয়োগের জন্য আহবান জানানো হয়। এদিকে অপর এক সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদেরকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেয়ার ব্যাপারে ইসলামাবাদের উপর চাপ প্রয়োগের জন্য বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক দেশ, বিশেষ করে, জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। উক্ত সম্মেলনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির জন্য শোক প্রকাশ করা হয় এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাৎ বরণকারী সকল শহীদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়।

সম্মেলনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সকলের আস্থা পুনর্ব্যক্ত করা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধে প্রয়োজনীয় সবধরণের সহযোগীতা করার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়।

অপর একটি সিদ্ধান্তে সম্মেলনে উপস্থিত সকল সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইসলামাবাদে অস্ত্র সরবরাহ করে ইয়াহিয়া খানের গণহত্যা চালিয়ে যেতে সহযোগীতা করার জন্য তীব্র নিন্দা জানান।