শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পাকিস্তানের সাথে আপোষের বিরোধিতা করে মাওলানা ভাসানী | দি হিন্দুস্তানস টাইমস
(নয়াদিল্লি) |
৩০ জুন, ১৯৭১ |
স্বাধীনতার বিষয়ে ইয়াহিয়ার সাথে কোনো সমঝোতা নয় : ভাসানি
জাতীয় আওয়ামী পার্টি লিডার , মাওলানা ভাসানি , আজ জোরালোভাবে পরিস্কার করলেন যে , উল্লেখিত বাংলাদেশ সংক্রান্ত রাজনৈতিক মীমাংসা নিয়ে কোনরকম আপোষ নয়।
একটি সংবাদ সম্মেলনে, মাওলানা ভাসানি পুনরাবৃত্তি করলেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে যতই গভীর ষড়যন্ত্র হোক না কেন , এত ব্যর্থ হওয়া নিশ্চিত ছিল।
উনি বললেন , বাংলাদেশের জনগন যখন তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হারিয়েছে, যখন তাদের নারীদের সম্মানহানি হয়েছে , যখন তারা তাদের স্বাস্থ্য এবং বাড়ি হারিয়েছে এবং তাদের নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে এবং তাদের ১০লক্ষ মূল্যবান জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে, তখন তারা রাজনৈতিক মীমাংসার নামে ধোকামি গ্রহণ করবে না।
আমেরিকার সমালোচনা
“তারা দৃঢ়সঙ্কল্প হয় পূর্ণ স্বাধীনতা অথবা মৃত্যুবরণ । সেখানে কোনপ্রকার সমঝোতা অথবা বিশৃঙ্খল মীমাংসা নয়। যদি কোন দল পূর্ণ স্বাধিনতাকে উপেক্ষা করে এবং ইয়াহিয়ার সাথে হাত মিলায়, তাহলে উক্ত দল বিদ্রোহী মুসলিম জনতা লীগ থেকেও বেশি নিন্দিত হবে। তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু অনিবার্য ।“
আমেরিকার অস্ত্র সরবরাহর বিষয়ে মাওলানা তিব্র সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন শুধুমাত্র মুক্ত বাংলাদেশের মানুষ নয় এমনকি আমেরিকা সহ বিশ্বের গনতান্ত্রিক এবং শান্তিকামী মানুষ মার্কিন সরকারের কাছে “নিকৃষ্ট ইয়াহিয়া সরকার” এর প্রতি অস্ত্র অথবা আর্থিক সাহায্য বর্ধিত করা থেকে বিরত থাকতে বারংবার আবেদন করেছিল।
তিনি আক্ষেপ করেন যে, মার্কিন সরকার বিশ্ব মতামত উপেক্ষা করেছিল এবং পাকিস্তানকে পূর্বের থেকে বেশি পরিমাণে আধুনিক অস্ত্র এবং বিমান সহযোগিতা করেছিল । মাওলানা ভাসানি আরো যুক্ত করেন “ তারা এভাবে তাদের নিজ চরিত্র উন্মোচন করল যা মানবতা বিরোধী । নিক্সন প্রশাসনকে এই নীতির পরিনাম বহন করতে হবে,”।
শেষ মহাযুদ্ধ থেকে, সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন সরকার একটি ষড়যন্ত্র চরিতার্থ করছে এবং আফ্রো-এশিয়ান ও লাতিন আমেরিকান দেশগুলোর মধ্যে এর কর্তৃত্ব ও শোষণ চিরস্তায়ী করার চেষ্ঠা করছে । কিন্তু আমেরিকা সরকারের এটা অনুধাবন করা উচিত যে , যদিও তারা আগ্রাসী ইয়াহিয়াকে সকল প্রকার অস্ত্র দিতে পারে, কিন্তু শোষকদের হাত থেকে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালির তাদের দেশ মুক্ত করার প্রচেষ্ঠা তারা ব্যর্থ করতে পারবে না ।
মাওলানা ভাসানি বলেন বাংলাদেশ থেকে ভিয়েতনামের জনগন অনেক কম ছিল । তবুও নিক্সন সরকার সেখানে জনগনের আন্দোলন বিফল করতে ব্যর্থ হয়েছিল, যদিও এটাতে প্রতিদিনের ব্যয় ছিল ৫ কোটি । “আমেরিকা, চায়না এবং ব্রিটেন সহ যেসব দেশ ইয়াহিয়াকে অস্ত্র এবং অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিল তার প্রশাসন এই মুক্ত বাংলাদেশে চিরস্থায়ী করার জন্য, একদিন ইতিহাস দ্বারা অভিযুক্ত হবে” ।