You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সুত্র তারিখ
বাংলাদেশের সমস্যার রাজনৈতিক নিষ্পত্তির বিরোধিতা করে মওলানা ভাসানির প্রেস বিজ্ঞপ্তি দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস(নয়াদিল্লি) ২ জুন, ১৯৭১

       
স্বাধীনতা একমাত্র মুক্তির পথঃ ভাসানি
৩১মে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বর্তমান আন্দোলন নিয়ে জাতীয় আওয়ামী পার্টি লিডার মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির সাথে সাংবাদিকের কথোপকথনের প্রতিবেদন
জাতীয় আওয়ামী পার্টি লিডার মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি গতকাল ঘোষণা করলেন যে,” পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক বাঙ্গালির উপর অমানবিক শোষণ” এর থেকে মানুষকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা।
যারা বাংলাদেশের সমস্যা নিয়ে রাজনৈতিক নিষ্পত্তির কথা বলেন তিনি তাদের এই মনোভাবের প্রতি আক্ষেপ করেন এবং বলেন যে , বিগত ২৩ বছরের পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম নিপীড়ন ও শোষণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত , বাংলাদেশের মানুষ এখন সার্বিক যুদ্ধে লিপ্ত। তিনি বলেন, সেই কারনে এখন সেখানে কোনরকম রাজনৈতিক সমঝোতার সুযোগ নেই। তাদের জন্য হয় পূর্ণ বিনাশ অথবা পূর্ণ বিজয় অপেক্ষামান কিন্তু ৭.৫ কোটি মানুষের জীবনউৎসর্গ বৃথা যাবে না ।
চলতি মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন নিয়ে সংবাদবাহকের সাথে কথা বলছিলেন অশীতিপর ন্যাপ লিডার ।
মওলানা ভাসানি বলেন , ইহা বিস্ময়কর যে সেসব দেশ , যারা নিপীড়িতদের জন্য অবস্থান নিয়েছিল , বর্তমানে বাংলাদেশে মানুষের জীবনের উপর নজিরবিহীন নির্যাতন এবং কারনরহিত ধ্বংসের সময় নিশ্চুপ।
তিনি বলেন যে, তিনি সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী জনাব কউসিগিন , চাইনিস সভাপতি জনাব মাও সে তুং , মার্কিন রাষ্ট্রপতি জনাব নিক্সন এবং ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী জনাব হিথ এর নিকট টেলিগ্রাম প্রেরণ করেছিলেন , অনুরুধ করেছিলেন পাকিস্তানি রটনার দ্বারা বিভ্রান্ত হউয়ার পরিবর্তে তাদের গুপ্তচর প্রেরণ করতে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য ।
ন্যাপ লিডার বলেন যে , ভিয়েতনামে সাম্রাজ্যবাদী নকশা এবং সুয়েজ খালে ফ্রান্স কর্তৃক বোমাবর্ষণ এর বিরুদ্ধে তার দেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু ইহা ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে , একই মানুষ যাদের জন্য তারা অশ্রুপাত করেছিল তারাই , “ বাংলাদেশের সংগ্রাম একটি বিচ্ছিন্নবাদি আন্দোলন” পাকিস্তান কর্তৃক এই জঘন্য প্রচারনা দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে ।
তিনি বলেন তাদের জানা উচিৎ যে , “ইহা দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে শোষিত নিছক কঙ্কালসার ৭.৫ কোটি মানুষের মুক্তিযুদ্ধ ” ।
মউলানা ভাসানি বলেন, স্বাধিনতা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি বাংলাদেশের জেলাগুলোর সর্বদল গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মাওলানা বলেন যে মুস্লিম লীগের একটি অংশ ব্যাতিত সকল দল এখন প্রধান বিষয় মানুষের মুক্তির পক্ষে তাদের সমর্থন দিতে সচেষ্ট ।
শোষিত
চরম্পন্থিদের সর্বদলীয় কমিটিতে যোগদানের সম্ভাবনায় অন্য দলের প্রতি তাদের মনোভাবের প্রেক্ষিতে প্রশ্নের প্রত্যুতরে আওয়ামীলীগ ,ন্যাপ নেতা বিশেষভাবে বলেন : “ আমি মনে করি তারা যেই দলেরি অন্তর্ভুক্ত থাকুক না কেন, মানুষের আগে প্রধান কাজ হচ্ছে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ।“
মাওলানা ভাসানি বলেন যে, বাংলাদেশের যুদ্ধ ছিল মুসলিমদের দুটি অংশ- শোষক এবং শোষিতদের মধ্যে।
সংবাদবাহকের সাথের এক আলোচনায় ন্যাপ লিডার প্রত্যাখ্যান করেন যে, তার দেশে সাম্প্রতিক বিপ্লব ভারত অথবা অন্য কোন রাষ্ট্র হতে আমদানি করা হয়েছিল । যখনি পাকিস্তানি শাসক কোন সমস্যা সমাধান করতে অসমর্থ হোন, তাদের চামড়া বাচাতে তারা ভারতকে দোষারোপ করেন। যদি ভারত এই বিপ্লবে ইন্দন যোগাত তাহলে এটাকে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাদেশিক সরকার হিসেবে স্বীকৃতি পেত, তিনি আর যোগ করেন যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে “ভারতের চর” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল ।
অশীতিপর নেতা বলেন যে , ব্রিটিশরা যথাসময়ে ভারত ছেড়েছিল এবং ইয়াহিয়া সরকারের বাংলাদেশ ত্যাগ করার এটা ছিল উপযুক্ত সময়। তিনি যুক্ত করেন , যত বিলম্ব হবে তত জটিলতা বাড়বে ।
মউলানা ভাসানি বর্তমানে তার স্ত্রী এবং সন্তানের অবস্থান সম্পর্কে অজ্ঞাত ।
ইয়াহিয়া সরকার দ্বারা তার গ্রেফতারের প্রতিবেদন সম্পর্কে সংবাদদাতার প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন , “আমি জানি না আদৌ কি তারা জীবিত না মৃত”।
তিনি বলেন যে , তিনি প্রতিবেদনে শুনেছিলেন ময়মনসিংহ জেলার কাগ্মারিতে অবস্থিত তার বাড়িটি ধংস হয়েছিল। কিন্তু তার স্ত্রী এবং সন্তান সম্পর্কে তার কাছে কোন তথ্য ছিল না। তত্সত্ত্বেও, তিনি বলেন যাহা তাকে ব্যাক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা করে টা হচ্ছে , পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক তার ছোট গ্রন্থাগারের সমূল ধ্বংসসাধন যার অন্তর্গত ছিল তার জীবৎকাল সংগ্রহ ।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!