You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.14 | পচিশে মার্চের হত্যাযজ্ঞে ইন্দোনিশিয়া সরকার ও জনগণের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং প্রচার অভিযান সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারকে লেখা চিঠি | প্রবাসী বাঙ্গগালিদের সংগঠন “আমরা” - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পচিশে মার্চের হত্যাযজ্ঞে ইন্দোনিশিয়া সরকার ও জনগণের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং প্রচার অভিযান সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারকে লেখা চিঠি প্রবাসী বাঙ্গগালিদের সংগঠন “আমরা” ১৪’ই মে,১৯৭১

জাকার্তা ১৪/০৫/৭১
১) যশোর, খুলনা এবং চট্টগ্রামে হত্যালীলার প্রতিবেদন দিয়েছে এপি। ইন্দোনেশিয়ান অবজার্ভার, একটি প্রধান দৈনিক, প্রতিবেদন পেয়েছে। সেখানে বাঙালি বিহারি এবং সামরিক বাহিনী উভয়পক্ষই বাঙালিদের উপর নির্বিশেষে নারকীয়তা শুরু করেছিলো।
২) ঢাকার উপরও এখানে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেনা কার্যকলাপ বিভীষিকাময় হিসেবে দেখানো হয়েছে। পঁচিশে মার্চের পূর্বে এখানকার লোকজন আওয়ামী লীগের উপর হত্যাযজ্ঞের দোষারোপ বিশ্বাস করতে নারাজ। তারা আর্মিদের করা প্রতিবেদন থেকে নৃশংসতার যথেষ্ট প্রমাণ টের পেয়েছে।
৩) প্রত্যক্ষ অভিগমন এই সরকারের মনোভাব লক্ষণীয়ভাবে পুনর্গঠন করতে পারে।
৪) পাকিস্তান অপপ্রচারটিকে তীব্রতর করেছে। আমরা আমাদের সীমিত উপায়ে আমাদের নিজস্ব পন্থায় এটি মোকাবেকার চেষ্টা করছি। পাকিস্তানের অপপ্রচার কদাচিৎ জায়গা পাচ্ছে সংবাদে।
৫) পর্যবেক্ষকেরা এখানে একটি গুজব বিশ্বাস করে যে বাঙালিদেরকে ধীরে ধীরে বাইরের মিশন থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাদেরকে পরবর্তীতে একটি শিবিরে একত্রিত করা হবে আদালতের বিচারের সম্মুখীন করতে অথবা মৃত্যুদণ্ড দিতে। যদি সম্ভব হয়, বাঙালিদেরকে রক্ষা করতে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বিজ্ঞপ্তি এবং রেডিওর মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারের কাছে একটি আবেদন করা হতে পারে। বাঙালিদেরকে আরো সতর্ক থাকতে হবে ইসলামাবাদে বন্দী-শিবিরে ফিরে না যাবার ব্যাপারে।
৬) তিনটি জাহাজ চট্টগ্রামে গিয়েছিলো পূর্ব পাকিস্তানিদের জন্য জাপানি চাল নিয়ে। তাদেরকে করাচিতেই চালগুলো নামানোর জন্য পরিচালিত করা হয়েছিলো। জাহাজ মালিকেরা তা প্রত্যাখান করেছিলো এবং জাকার্তায় ফিরে এসেছিলো এবং চাল খালাস করেছিলো।
৭) কলকাতা থেকে প্রচারিত উপরাষ্ট্রপতির ভাষণ রেডিওতে শোনা যায়। যা ছিলো অনুপ্রেরণামূলক। বিশ্বাসঘাতকদের দেওয়া তার সতর্কতা আরো অনুপ্রেরণামূলক। পাকিস্তান বাঙলায় এই পরিস্থিতিতে বিশ্বাসঘাতকের ভাষান্তর ব্যবহারের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
৮) আমাদের কার্যকলাপের উপর নজরদারি করা হয় এবং বাধাগ্রস্ত করা হয় আইপিএসিসি এর এম. এ. আজিজের মাধ্যমে। পাঞ্জাবদের সহযোগে তিনি এবং তার স্ত্রী আমাদের উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে মতামত সংগ্রহ করতে খুব সক্রিয়। এমনকি তিনি অপপ্রচার চালান যে মুজিব, ভাসানী, তাজউদ্দিন এবং তাদের সহযোগিরা সকলে বামপন্থী। বামপন্থিরা এই দেশে ঘৃণিত।
৯) খালিক ফখরুদ্দিন নামে এক পাঞ্জাবীর বাসায় আজিজ এক ফতেহ খানির আয়োজন করেছিলো এবং দোয়া করেছিলেন যেন বাঙালিরা আওয়ামী লীগের দ্বারা ভুল পথে পরিচালিত না হয়।
১০) পাক-মিশন দিল্লীর জনাব এইচ. আর. চৌধুরী এখানে পরামর্শদাতা ছিলেন। তিনি নৈতিকভাবে বিচলিত ছিলেন। বর্তমান সংকটে তার কার্যরীতি কোন শত্রু এখনো তাকে বিজড়িত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
১১) তথ্যের জন্য এপির প্রতিবেদনের একটি প্রতিলিপি সংযুক্ত করা হলো। জাকার্তা পেপারও এটি সম্পূর্ণরূপে বহন করে।
১২) জয় বাঙলার প্রকাশনা জানতে পেরে খুব আনন্দিত। আমরা এখানে এটির ব্যবহার করবো। দয়া করে নিম্নলিখিত ঠিকানায় নিয়মিত একটি করে প্রতিলিপি পাঠাবেন। আমরা প্রতিলিপিগুলো ব্যাক্তিগতভাবে প্রচার করার চেষ্টা করবো।
জাকার্তা-ইন্দোনেশিয়া
১) বাংলাদেশের মন্ত্রীসভা সম্পর্কে তথ্য ও অবগতির জন্য সংবাদপত্রের এই অংশগুলো জাকার্তার একটি প্রধান দৈনিকের। পরবর্তীতে আরো তথ্য পাঠানো হবে। ইন্দোনেশিয়ার সব পত্রিকার ঘটনাগুলো।
ক) ১৫ ই এপ্রিলে জাকার্তা টাইমসের সম্পাদকীয় “পূর্ব পাকিস্তানের জটিল সমস্যা”।
খ) ১৫ ই এপ্রিলে জাকার্তা টাইমসের প্রবন্ধ “ইসলাম কি মৃত?”
গ) ৬ ই এপ্রিল জাকার্তা টাইমসের সম্পাদকীয় “পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা”।
ঘ) ২০ শে এপ্রিল জাকার্তা টাইমসের সম্পাদকীয় “বাংলাদেশ”।
ঙ) ইন্দোনেশিয়ান অবজার্ভার (জাতীয়তাবাদী পত্রিকা) এর সম্পাদকীয় “পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় সহানুভূতি”।
২) অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা। সংবাদ সম্মেলন এবং বৈঠক যোদ্ধা ও জনগণের মনোবল বাড়াবে। দুঃখজনক, আমরা নেতাদের কাছ থেকে খুবই কম শুনি।
৩) তরুণ শক্তিকে সংগঠিত ও সুসজ্জিত করুন আক্রমণাত্মক যুদ্ধের জন্য।
৪) বাঙালি এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত বা কর্মরত সমর্থকদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহের ব্যবস্থা করুন। এতে অবশ্যই সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যাবে। সংবাদের মাধ্যমে ঘোষণা করুন কোথায় অনুদান জমা দিতে হবে।
৫) চিঠি/ টেলিগ্রাফ/ প্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাজ্যের সকল প্রধানদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করুন। নেপথ্য দিয়ে আগ্রাসনকারীদের অভিযুক্ত করুন। দয়া করে ইন্দোনেশিয়াকে বাদ দিবেন না, যদিও এটা সহানুভূতিশীল নয়।
৬) অত্যধিক প্রচারণা জরুরী। আমরা আমাদের মতো করে যাচ্ছি।
৭) যে কোন সূত্র থেকে অস্ত্র এবং গোলাবারুদের ব্যবস্থা করুন।
৮) সাহায্যের জন্য প্রতিদিন বিশ্ব সংস্থাগুলোর নিকট আবেদন করুন চিঠি অথবা সংবাদের মাধ্যমে এবং তাদেরকে অনুরোধ করুন দুর্ভোগের বিশালতা দেখে যেতে।
৯) নেতাদের উচিৎ বার বার বেশি করে যোদ্ধাদের সাথে দেখা করা এবং তাদেরকে জয়ের আশ্বাস দেওা। এটা অত্যাবশ্যক।
১০) নুরুল আমিন, হামিদুল হক, সবুর ও অন্যান্যদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে ঘোশণা। তারা আদালতের সম্মুখীন হবে এবং বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তাদের উপযুক্ত সাজা পাবে ।
১১) সর্ব প্রকারে এবং ত্যাগের মাধ্যমে ঐক্য রক্ষা করতে হবে, কোনরকম দলীয় সংযোগের বিবেচনা ছাড়া।
প্রাপক,
জনাব হুসাইন আলী
বাংলাদেশ মিশন,
৯, সার্কাস এভিনিউ,
কলকাতা-১৭
১) সংবাদ কর্তিতাংশ পাঠাবেন। ইতোমধ্যেই বিমানযোগে পাঠানো হয়েছে।
২) যোদ্ধা এবং জনগণের মনোবল বাড়াতে বিবৃতি জারি হয়েছে এবং সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।
৩) আক্রমণাত্মক যুদ্ধের জন্য যুবশক্তি সংগঠন এবং সুসজ্জিতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
৪) বিদেশের ব্যক্তিবর্গ এবং সংগঠনগুলোর নিকট সাহায্য এবং অনুদানের জন্য ইতোমধ্যেই একটি আবেদন জারি করা হয়েছে- বৈদেশিক ব্যাংকগুলোতে হিসাব নাম্বার কখন এবং কীভাবে গঠিত হয়েছে।
৫) ইন্দোনেশিয়াসহ রাজ্যের সকল প্রধানেরা আনুষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে এসেছে।
৬) বাংলাদেশের ভিতরের এবং বাইরের সাহায্যকারীদের কখনো কখনো সতর্ক করা হচ্ছে।
৭) অস্ত্র এবং গোলাবারুদের জন্য প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।

১) প্রচারাভিযান তরান্বিত করা প্রয়োজন। নেতাদের নীরবতা সতর্কতা এবং হতাশা সৃষ্টি করে।
২) দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের খবর পাওয়া গেছে। যেকোন মূল্যে ঐক্য রক্ষা করতে হবে।
৩) ইন্দোনেশিয়ান সংবাদ মাধ্যমগুলা এখন খুব একটা খবর ছাপছেনা।স্থানীয় পাকিস্তানিরা (পাঞ্জাবীরা) বিশাল টাকায় তাদের অধিকাংশদের কিনে ফেলেছে। সরকারি মনোভাব বাংলাদেশের জন্য সহায়ক নয়। উলামাদের নাম করে কিছু মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে রেডিও পাকিস্তানের মাধ্যমে। ইন্দোনেশিয়া পাকিস্তানকে আদতে সাহায্য করে বলে মনে হয় না। ছিনতাইয়ের উপর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর, পাকিস্তান রাষ্ট্রদূত বৈদেশিক মন্ত্রীর নিকট উপহাসের পাত্র হন। এটি গোপনভাবে জানা যায়।
৪) এখানে জনগণের মতামত এই যে পাকিস্তানের ঐক্য চিরতরে ভেঙে গেছে। বাঙালি সংগ্রামীদের জন্য যুদ্ধ আর কয়েক সপ্তাহ চলবে।
৫) এই সরকারের প্রত্যক্ষ অভিগমন হস্তক্ষেপ না করার সম্মিলিত মনোভাব দূর করতে পারে। যদি সম্ভব হয়, দয়া করে তাড়াতাড়ি এটি করার চেষ্টা করুন।
৬) কিছু প্রধান বৈদেশিক পত্রিকা তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে অনুপ্রেরণামূলক প্রবন্ধ প্রচার করে যাচ্ছে। এমনকি তাদের মধ্যে কিছু কিছু ইতিহাস অনুসন্ধান করে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিবরণ দেয় যা শেষ পর্যন্ত বর্তমান ঘটনার জন্ম দেয়। জনগণ বুঝতে পেরেছে এবং সহানুভূতি আছে।
৭) বিশ্বাসঘাতকেরা সর্বত্রই। এখানে একজন। এম. এ. আজিজ, আইপেকের সেক্রেটারি জেনারেল। যদিও একজন বাঙালি, একজন বালাই বটে। সে বাঙালিদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করছে এবং শুভান্যুধ্যায়ী ও পৃষ্ঠপোষকদের প্রতারণা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমাদের কার্যে সে একজন অবিশ্বাসী। দয়া করে ভবিষ্যৎ কর্মপ্রক্রিয়ার জন্য এটি চিহ্নিত করে রাখুন।
৮) অর্থ সরবরাহের আয়োজন জানতে পারলে খুশি হবো। আমরা আমাদের অনুদান দিতে প্রস্তুত।
জনাব হুসাইন আলী,
বাংলাদেশ মিশন, ৯ সার্কাস এভিনিউ,
কলকাতা-১৭