You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.13 | বহির্বিশ্ব প্রচার বিভাগের একটি সভার কার্যবিবরণী | বাংলাদেশ সরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় - সংগ্রামের নোটবুক
                  শিরোনাম              সূত্র             তারিখ
বহির্বিশ্ব প্রচার বিভাগের একটি সভার কার্যবিবরণী বাংলাদেশ সরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়  ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

 

সভার কার্যবিবরণীর বর্ণনা
অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৩.৯.১৯৭১
উপস্থিত: (১) পরিচালক-বহির্বিশ্ব প্রচার মন্ত্রণালয় এবং বৈদেশিক সম্পর্ক,
ভারত সরকার.
(২) পরিচালক-জাতিসংঘের ভারত বিষয়ক দপ্তর
(৩) ব্যবস্থাপনা পরিচালক,অল ইন্ডিয়া রেডিও
(৪) পরিচালক-সরকারী প্রচার বিভাগ
(৫) পরিচালক- টেলিভিশন সংক্রান্ত বিষয়ের
(৬) ভারত সরকারের প্রধান উপদেষ্টা
(৭) সহকারী পরিচালক,পিআইবি,কলকাতা
(৮) জনাব এম.এ.সামাদ,প্রতিরক্ষা সচিব,বাংলাদেশ সরকার
(৯) এ.পি.এ বাংলাদেশ মিশন.
সভাপতিত্ব করেছেন জনসংযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা,বহির্বিশ্ব প্রচার বিভাগ,বাংলাদেশ সরকার।
প্রেস রিলিজ থেকে বাংলাদেশের শিল্পী,শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবীদের সমবেত করার বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
১.(ক) বুলেটিন সম্পর্কিতঃ পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে যুদ্ধ বুলেটিন সহ বাংলাদেশ সরকারের সকল বুলেটিন বিকাল ৩.৩০ এর পূর্বে প্রকাশ করতে হবে এবং স্থানীয়ভাবে প্রেসে প্রকাশের আগে বুলেটিনগুলো পিআইবি টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে দিল্লি পাঠাতে হবে।
(খ) ক্ষেত্রবিশেষে এবং যদি খুব প্রয়োজনীয় না হয় তাহলে বিকাল ৩.৩০ এর পরের বুলেটিন প্রকাশ পরের দিনে করা হবে।
(গ) পিআইবির জনাব রথের সাথে এই উদ্দেশ্যে যোগাযোগ রাখার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে জনাব এম.মাকসুদ আলি,এপিএ লিঁয়াজো হিশেবে মনোনীত হয়েছেন।উভয়েই সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং এই বন্দোবস্তের ব্যাপারে তাদের সরাসরি জ্ঞান রয়েছে।
২.জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে যে সব প্রয়োজনীয় সংকলন নিয়ে যেতে হবে সেগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।প্রতিনিধিদলকে কি কি প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যেতে হবে সেই ব্যাপারে জনাব ডিকইট উপদেশের মাধ্যমে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন।সেগুলো হলঃ-
ক) নেতাদের ধারণকৃত বক্তৃতা
খ) ৭০ সালের ডিসেম্বর থেকে ৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাস
গ) কাগজপত্র যা সংগ্রাম কে নায্যতা দেয় এবং গত ২৩ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার বিষয়টি প্রাথমিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ব্যাখ্যা করেছে।
ঘ) শরণার্থীদের রেকর্ডকৃত সাক্ষাৎকার
ঙ) ধারণকৃত বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা,যদি থাকে
চ) গুরুত্বপূর্ণ বিদেশী ব্যক্তিদের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার
ছ) গণহত্যা সম্পর্কিত সিনেমা
জ) যথাযত সম্পাদনার পরে জনাব জহির রায়হানের প্রামাণ্যচিত্র
ঝ) যদি সম্ভব হয় তাহলে যাদের কাছে পাঠান হয়েছে তাদের ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের রেকর্ড।
অল ইন্ডিয়া রেডিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অত্যন্ত সুহৃদ ব্যক্তি এবং তিনি এইসব সাক্ষাৎকার রেকর্ড করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে জনাব মউদুদ আহমেদের নিয়ন্ত্রনে কাজ করার জন্য একজন ইঞ্জিনিয়ার কে পাঠিয়েছেন।তিনি আরও আশ্বাস দিয়েছেন যে এই ব্যাপারে স্টেশন পরিচালক জনাব ডি.কে.সেন গুপ্ত আমাদের সম্ভাব্য সকল ধরণের সাহায্য করবেন।
৩. শিল্পী এবং বুদ্ধিজীবীগণঃ-বাংলাদেশী শিল্পী এবং বুদ্ধিজীবীদের পুর্নবাসন ও তাদের মেধার কার্যকর ব্যবহার প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।আলোচনায় অংশ নেয়া বন্ধুরা শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবীদের বিষয়ে আলোচনা করতে নিষেধ করেন কারণ পরে কলকাতায় আসা একটি আলাদা দল এই বিষয়ে আলোচনা করবেন।কিন্তু শিল্পীদের প্রতিভার কার্যকর ব্যবহার প্রসঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করা হয়েছে।সভাপতি ভারতে বাংলাদেশী শিল্পীদের কার্যক্রমের বিস্তারিত পটভূমি বর্ননা করেন।নিম্নেউল্লেখিত বিষয়গুলো সভায় উপস্থাপন করা হয়:-
(ক) শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের সংগঠনসমূহের নাম।সংগঠনের মোট সংখ্যা ৫।
(খ) এত সংগঠন হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়।যেহেতু সরকার সকল শিল্পীদের সহায়তা করতে পারছে না বা তাদের মেধার ব্যবহার করতে পারছে না সেহেতু তাদের নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ এবং সহায়তা অর্জন করতে হচ্ছে।
(গ) শিল্পীদের মধ্যে বিদ্যমান পরস্পর বিরোধী স্বার্থও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।কিন্তু মাতৃভূমির মুক্তিই যে সকলের মাঝেই বিদ্যমান সর্বজনীন উদ্দেশ্য তার উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।এই পটভূমি শোনার পরে সভায় উপস্থিত সকলে শিল্পীদের মেধাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেটা আলোচনা করতে চান।আলোচনার মাধ্যমে নিম্নেউল্লেখিত পরামর্শগুলো দেয়া হয়ঃ-
(II)শিল্পীদের ৫টি দলে ভাগ করা সম্ভব হবে কি না যেমন :
(ক) একটি দল ইয়ুথ ক্যাম্প ও শরণার্থী শিবিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।
(খ) একটি দল সেনাবাহিনী ও গেরিলা ঘাঁটিতে সেনাদের কিভাবে বিনোদন দেয়া যায় সেই বিষয়টি দেখভালের দায়িত্তে থাকবে।
(গ) ভারতের জনগনের মাঝে বাংলাদেশের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য একটি দল ভারতের বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করবে।
(ঘ) একটি দল রেডিও বাংলাদেশে কাজ করবে।
(ঙ) বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের বিষয়টি একটি দল ব্যাপকভাবে প্রচার করবে।
(iii) মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার তার প্রভাব ব্যবহারের মাধ্যমে এই সংগঠনের শিল্পীদের ব্যক্তিগত কার্যক্রম স্থগিত রাখতে পারবে কিনা।
এই উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ও প্রকল্প তৈরি করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং তারা আশ্বস্ত করেছেন যে অর্থের ব্যাপারে সমস্যা হবে না।

এগুলো করার পূর্বে অপরিহার্য কিছু পরামর্শ হচ্ছে:-
(ক) বাংলাদেশের সরকারের সাথে সকল শিল্পীর নিবন্ধন।
(খ) তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই সব প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করা। প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল যে আজ(১৪.৯.৭১) বিকাল ৫টায় মিশন প্রাঙ্গনে শিল্পীদের সাথে আমাদের বন্ধুরা দেখা করবেন।তারা আনন্দের সাথে রাজি হয়েছেন।
বাংলাদেশে প্রাপ্ত যাবতীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য উঠে আসে।বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত অভিযানের বিস্তারিত তথ্য কিভাবে প্রকাশ করা যায় সে প্রশ্নটি এজেন্সির আকারে ছোট সংবাদ প্রতিষ্ঠান গঠনের পরামর্শ প্রসঙ্গে আলোচিত হয়েছে।যদিও এই প্রসঙ্গে কোন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় নাই।আজ বিকাল ৩টা পর্যন্ত সভা স্থগিত করা হয়েছে।
এপিএ,রেডিও পাকিস্তানের উপর নজরদারির রিপোর্ট আমদের জন্য সহজলভ্য করার পরামর্শ দেন।অল ইন্ডিয়া রেডিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিষয়টি নোট করেছেন এবং সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।
অনুলিপি যাদের প্রতি:-
১.তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয়
২.পররাষ্ট্রমন্ত্রী
৩. পররাষ্ট্র সচিব
৪.হাই কমিশনার, কলকাতা
৫.জনাব সামাদ, প্রতিরক্ষা সচিব
৬.সহকারী পরিচালক,পি.আই.বি., কলকাতা
৭.জনাব মউদুদ আহমেদ
৮.এ.পি.এ.

কার্যবৃত্ত (দ্বিতীয়) অনুষ্ঠিত হয় ১৪ সেপ্টেম্বর,১৯৭১ সালের বিকাল ৪ ঘটিকায়। উপস্থি ছিলেনঃ
১.মহাপরিচালক,অল ইন্ডিয়া রেডিও
২.পরিচালক,বহিঃ প্রচার বিভাগ,ভারত সরকার
৩.পরিচালক, অল ইন্ডিয়া রেডিও ( টেলিভিশন খাত)
৪.প্রফেসর, এম খালেদ,MNA,সম্পাদক,বহিঃপ্রচার বিভাগ,বাংলাদেশ সরকার।
৫. জনাব এম.এ সামাদ,সচিব(প্রতিরক্ষা), বাংলাদেশ সরকার
৬.জনাব মাকসুদ আলি,সহকারী প্রেস সংযুক্ত,বাংলাদেশ হাই কমিশন ।
জনাব তাহের উদ্দীন ঠাকুর,MNA,জনসংযোগ উপদেষ্টা, বহিঃপ্রচার বিভাগ,সভায় সভাপতিত্ব করেন। জনাব এম.এ সামাদ সভায় আলোচনা শুরুর সময় বলেন কিভাবে মানুষ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত, পশ্চিম পাকিস্তান এবং বিদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তথ্য সম্পর্কে অবহিত হয়।তিনি স্থানাঙ্ক এবং আরো কার্যকর ফলাফলের জন্য কিছু অভিক্ষেপের উপর গুরুত্বারোপ করেন।জনাব সামাদ প্রস্তাব দেন যে, সংবাদ বুলেটিন লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা উচিত যাতে বাংলাদেশ বেতার সর্বশেষ সংবাদ ব্যবহার করতে পারে।সংবাদের উপস্থিত ব্যবস্থা সন্ধ্যা সংক্রমণের জন্য বিকাল তিনটার মধ্যে রেকর্ড করা হয়।জনাব সামাদ অবহিত করেন যে, বর্তমানে ৫/৬ ঘন্টার প্রোগ্রাম দৈনিক তিনবার সম্প্রচার করা হচ্ছে এবং এই রেডিও কর্মচারীদের সদস্য সংখ্যা মোট ৩৭ জন।তিনি আরও জানান যে, বিশেষ করে সন্ধ্যায় রেডিও প্রোগ্রামে অনেকেই নিয়মিত নন। তিনি প্রস্তাব দেন যে,ভারতীয় প্রতিভা স্ক্রিপ্ট প্রস্তুতির কাজে লাগানো যেতে পারে। জনাব মাকসুদ আলি প্রস্তাব দেন যে, উর্দু সংবাদপত্রের প্রবণতা জানার জন্য তাদের মতামত সারাংশ পেতে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তাকে জনাব রায়ের সাথে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। আলোচনার সারাংশে জনাব তাহের উদ্দীন ঠাকুর একমত হন যে, রেডিও প্রোগ্রাম জনগণের প্রত্যাশার খাতিরে আরও উন্নত করা যেতে পারে। তিনি প্রস্তাব করেন যে, প্রোগ্রাম আরো বাড়ানো উচিত এবং প্রোগ্রাম আয়োজকদের উভয় পক্ষকে মাসে অন্তত দুবার আলোচনায় বসতে হবে।সমস্ত উন্নতির জন্য তিনি প্রস্তাব করেন যে, স্টুডিও তে আরও টেপ রেকর্ডার, লাইব্রেরীর ব্যবস্থা করা উচিত।দুই স্টুডিওর বর্তমান অবস্থা এবং তিনটি টেপ রেকর্ডার যেন দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলেন।তিনি, শিল্পিদের বাসস্থানও যে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই বিষয়টিও মেনশন করেন।
পেইজ ৭৮৭
আরও ব্যবস্থারর উপর চাপ দিয়ে অন্তত নূনতম সুযোগ সুবিধা দিয়ে শ্রমিকদের সাথে মিটমাট করবার প্রস্তাব দেন জনাব ঠাকুর। তিনি A.I.R সংবাদ বুলেটিন থেকে D.G তে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যেখানে একটি মেয়াদে “মনোনীত” বাংলাদেশের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।(উদাহরণঃ জনাব তাজউদ্দীন আহমহ,মনোনীত প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ) D.G. A.I.R. ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে এসব বিষয়ে তিনি সম্পুর্ন আত্মবিশ্ববাসীতিনি আরো জোর দিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশ বেতারের উচিত তার নিজস্ব ভাবধারা অক্ষুণ্ণ রাখা।