You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.25 | বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কানাডার মুখপাত্র “বাংলাদেশ” এর সম্পাদকীয় এবং সমিতির কর্ম তৎপরতা সংক্রান্ত আর ও তথ্য | সমিতির দলিলপত্র - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সুত্র তারিখ
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কানাডার মুখপাত্র “বাংলাদেশ” এর সম্পাদকীয় এবং সমিতির কর্ম তৎপরতা সংক্রান্ত আর ও তথ্য সমিতির দলিলপত্র ২৫ আগস্ট, ১৯৭১

বাংলাদেশ, ২৫ আগস্ট, ১৯৭১
সম্পাদকীয়
যখন থেকে বাংলাদেশ সংগ্রাম করে চলেছে, গণতন্ত্র টগবগিয়ে চলছে লম্বা সময় ধরে, বাঁধাগ্রস্থ হয়েছে গত মার্চের তীব্র কার্যকলাপ দ্বারা, এবং আমাদের আত্মাবাঙ্গালী মানুষের কষ্ট ও আশা দিয়ে ছুয়ে গিয়েছে।
পুরো বিশ্ব অবাক হয়ে গিয়েছে যেভাবে গণহত্যা কয়েক লক্ষ বাঙ্গালীকে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে। তাদেরকে নিজ দেশ পরিত্যাগ করে ভিনদেশে অসুস্থতা ও পুষ্টিহীনতার জীবন বেছে নিতে বাধ্য করা হয়েছে যেন তারা নিজ দেশের গণহত্যাকারী লোকদের থেকে বাঁচতে পারে। ভয়ংকর অভিজ্ঞতা থেকে বেঁচে ফেরাটা তাদের কাছে এখনও অবিশ্বাস্য মনে হয়, তারা এক অনির্ধারিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পাকিস্তানে ফেরত যাওয়াটা হবে আত্মহত্যার নামান্তর। “রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা” জাতীয় সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তারা কেবলমাত্র একটি আশা দেখতে পাচ্ছে যেখানে তাদের ভবিষ্যৎ আলোকিত হতে পারে – আর তা হল বিজয়, মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়, বাঙ্গালী জনগণের বিজয়।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইয়াহিয়া খানের সৈন্যবাহিনী অরাজাকতা জারি রেখেছে। পীড়ন কখনও এমন ছিল না, কেউ কোন কথা বলবার সাহস পায় না। কিন্তু সকলের মনে কেবল মাত্র একটি কথাই বাজে- যখন সময় হবে, নিপীড়কের হাত থেকে জোর করে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়া হবে, এবং দেশ স্বাধীন হবে। পাকিস্তান সরকারও এটি জানে। এবং এই জন্যেই তারা মানুষজনদেরকে আদর্শ বিচ্যুত করবার জন্য নানা ধরণের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জনপ্রিয় চেহারাগুলোকে বলছে “দুষ্কৃতিকারী” এবং পুরো যুদ্ধকে বলছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের শয়তানী কর্মকাণ্ডের অংশ। তারা ধর্মকে বিবাদ সৃষ্টির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে, যাতে করে হিন্দু হলেই যেকোনো অপরাধ করা যায়। তারা “শান্তিবাহিনী” তৈরি করছে স্থানীয় সহযোগীদের নিয়ে। আর সব কিছুই হচ্ছে একটিমাত্র উদ্দেশ্য সামনে রেখে- মানুষদের দমন।
এইমুহূর্তে এমনকি আছে যা এই কোটি কোটি মানুষদের প্রানে আশা যোগাবে যেখানে তারা সর্বদা নিপীড়নের মধ্যে বাস করছে, যাদের জীবন সম্পদ কোন কিছুই কক্ষনো সুরক্ষা পায়না, যারা প্রতিনিয়ত সুতীব্র দুর্দশা ভোগ করে চলেছে বর্তমান দুর্দিনে? তাদের জন্য “ইসলামিক” পাকিস্তান প্রজাতন্ত্রের জন্য “একতা ও সংবদ্ধতা” এর মানে হচ্ছে বিচ্ছিন্ন কলোনির মধ্যে নিজেদেরকে উজার করে দেয়া। তাদের জন্যও কেবল একটি আশা – বিজয়। মুক্তি শক্তির বিজয়। বাংলার জনগণের বিজয়।
প্রবাসী বাঙ্গালীদের জন্য সুযোগ রয়েছে এই বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিজয় পেতে ভুমিকা রাখবার। আপানারা স্বৈরশাসকের বিপক্ষে কথা বলুন, বিশ্বেরসচেতন ও সুনাগরিকদের কাছে বাংলাদেশের ঘটে চলা এ সকল দুর্দশার চিত্র তুলে ধরুন। তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা পেতে সহায়তা করুন। আপনার চুপ করে থাকবার কোন কারণ নেই। আপনার চুপ করে থাকাটা আপনার সজনদের নিরাপদে ঘরে ফিরতে কোনরূপ সাহায্য করবেনা। সেখানে কেউই নিরাপদ নয়। তাই বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলুন।
অন্য একটি উপায়ে এই মানুষগুলোর বিজয়ের পথে আপনি অবদান রাখতে পারেন, তা হলো আপনার আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে। হতে পারে আপনি খুব সামান্য পরিমাণ দিতে পারেন, কিন্তু এই সামান্য পরিমাণও অন্যান্য অবদানের সাথে যুক্ত হয়ে প্রয়াসটির সাথে একটি শক্ত সমর্থন দিবে। প্রতি মাসেই কিছু পরিমাণ দিন। আপনাদের অব্যাহত আর্থিক সহায়তা প্রয়োজনীয়। লোকজন মারা যাচ্ছে, কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে শুধুমাত্র একটি ত্যাগের প্রয়োজন, তা আর্থিক সহায়তা। উদার হতে দ্বিধা করবেন না।
বাংলাদেশ আর্থিক শোষণ থেকে মুক্তি চায়। এটি চায় জনগণের কথার শাসনের সত্যিকার গণতন্ত্র। এটি চায় একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য, যেখানে সবার জন্য সাম্য থাকবে। এটি বাস্তবে পরিণত করতে অনেক বাধা পার করতে হবে। আপনাদের নিবেদিত সমর্থন এই স্বপ্নকে সত্যি করতে সহায়তা করতে পারে। আপনাদের দুর্দশাগ্রস্ত স্বদেশবাসীকে হেরে যেতে দিবেন না। আপনাকে সংগ্রামে নিযুক্ত করুন। বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়কে আপনার বিজয় করে নিন।
বাংলাদেশ বিষয়ক আলোচনাসভা
“বাংলাদেশে সঙ্কট” বিষয়ক একটি আলোচনাসভা বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কানাডা (টরোন্টো) এর মাধ্যমে আয়োজিত হয়েছিলো ১৯৭১ সালের ৫ই আগস্ট। মিস্টার এন্ড্রু ব্রুইন, এম. পি. , কানাডিয়ান সংসদীয় প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য যা গত মাসে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছিলো, প্রধানবক্তা ছিলেন। প্যানেলের অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন, যারাও সম্প্রতি ভারত থেকে গিয়েছেন, টরোন্টো টেলিগ্রামের মিস্টার ফ্রেডরিক নজাল, অক্সফামের লেজলি স্মিথ এবং ইউনিসেফের মিস্টার পল ইগনিটাইফ। মিস্টার স্টেনলি বার্ক ছিলেন চেয়ারম্যান।
সকল বক্তারাই ভারতে অবস্থানকারী সাত মিলিয়ন শরণার্থীদের সম্পর্কে ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছিলেন। যেখানে মিস্টার স্মিথ এবং মিস্টার ইগনিটাইফ নিজেদেরকে শুধুমাত্র শরণার্থী সমস্যায় সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন, মিস্টার ব্রুইন এবং মিস্টার নজাল রাজনৈতিক ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও বলেছিলেন। মিস্টার ব্রুইন তার মতামতে বলেছিলেন বাংলাদেশ সঙ্কটের একমাত্র সমাধান একটি স্বাধীন বাংলাদেশ। মিস্টার স্মিথ তার বক্তৃতায় শরণার্থী শিবিরের ছবি নথিভুক্ত করেছিলেন।
তথাকথিত পাকিস্তান সংহতি কমিটির সাথে যুক্ত পশ্চিম পাকিস্তানের একটি দল ও দুইটি বাঙালি প্রতারকবাহিনী এক শাসনাতীত প্রদর্শনের মঞ্চায়ন করেছিলো এবং অগ্রগতিকে ব্যহত করতে অপরিণত আচরণের এক লজ্জাজনক প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের সর্বোত চেষ্টা চালিয়েছিলো। কিন্তু যখন তারা দেখলো সাধারণেরা তাদের রাহাজানির প্রতিকূলে, তারা দ্রুত তাদের সাক্ষাৎ বাতিল করে দিয়েছিলো। তাদের পরে একজন কানাডিয়ানকে উল্লেখ করতে শোনা যায়, “এখন আমি জানি কোথায় সমস্যা অন্তর্হিত।’’ অন্যজন বলেছিলেন, “আমি বুঝি না যদি কোন দেশের পথ-প্রদর্শকের তার স্বদেশবাসীর প্রতি এমন মনোভাব থাকে, তাহলে কীভাবে সেখানে কোন অর্থপূর্ণ সহাবস্থান থাকতে পারে।”
আলোচনাসভাটি অনেক সফল হয়েছিলো পাঁচশতের বেশি লোক যোগদান করেছিলো।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের টরোন্টো পরিদর্শন
জনাব এম. আর. সিদ্দিকী, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় নবনিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আন্তর্জাতিক সভায় যোগ দিতে টরোন্টোতে ছিলেন। আগস্টের ২২ তারিখে, তিনি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কানাডার (টরোন্টো) সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং তাদরে অভিভাষণ জানিয়েছিলেন।