You dont have javascript enabled! Please enable it!
          শিরোনাম সূত্র তারিখ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহির্বিশ্ব  প্রচার  সম্পর্কিত   একটি চিঠি বাংলাদেশ সরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১২ জুলাই, ১৯৭১

 

তারিখঃ ১২ জুলাই, ১৯৭১
মো. আ. রাজ্জাক
দুহামসগ্রান্ড ৩৮
১২৭ ৪৮ স্কারহোমেন
স্টোকহোম
সুপ্রিয় রাজ্জাক,
আমরা ৩রা জুলাই আপনার চিঠি পেয়েছি এবং এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি যেসকল সমস্যা উল্লেখ করেছেন তা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে এবং আমরা আশা করি, খুব শীঘ্রই প্রচারকার্যের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি সরবরাহ করতে পারবো।
সংবাদপত্রের জন্য, আপনাকে নিয়মিত সুইডিশ প্রেস থেকে শুধুমাত্র সমসাময়িক তথ্যাদি পাঠাতে হবে। প্রাথমিক ভাগে আপনাকে এমন বিষয়াদি উপস্থাপন করার অনুরোধ করা হচ্ছে যা সহজেই দৃষ্টি আকৰ্ষণ করে এবং ২৫শে মার্চের আগে ঘটেছে।
বিনীত,
১২/৭/৭১
তাহেরউদ্দিন ঠাকুর
বহিঃপ্রচার বিভাগ
সি.সি. পররাষ্ট্র সচিব
… … … … …
বাংলাদেশ মিশন
দুহামসগ্রান্ড ৩৮
১২৭ ৪১ স্কারহোমেন
স্টোকহোম
জুলাই ৩, ১৯৭১
বিষয়ঃ সুইডেনে বাংলাদেশের প্রচার।
প্রিয় তাহেরউদ্দিন ঠাকুর,
Kindly refer to your letter dated June 24, 1971 regarding newspaper clippings etc. on Bangladesh in Sweden.
ইতোমধ্যে আপনি হয়তো জেনে থাকবেন, আমি একা স্বল্প পরিমান অর্থ-তহবিল এবং কর্মী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আপনার অনুরোধ রেখে এত বিস্তৃত অনুবাদের কাজ করাটা স্বভাবতই বেশ কঠিন। আমি অবগত করতে চাচ্ছি যে এদেশে ২৫শে মার্চ থেকে প্রতিবেদন, মন্তব্য এবং সম্পাদকীয়তে উক্ত সমস্যার জন্য ব্যাপক কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। কিছু সংখ্যক সম্পাদকীয় কলাম প্রকাশিত হয়েছে। বেশ কিছু জনপ্রিয় ম্যাগাজিনেও বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে যা আমাদের কাছে বোধগম্য। এখন আপনি বুঝতে পারবেন যে যদি কেউ অনুবাদ সংক্রান্ত এই বিশাল দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে, তাহলে অন্য কোনো কাজে সে সামান্যই সময় ব্যয় করতে পারবে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এটা সম্ভবপর নাও হয়ে উঠতে পারে। যেভাবেই হোক, আমি স্থানীয় প্রেস এবং ম্যাগাজিন থেকে বাংলাদেশ সংক্রান্ত লেখাগুলো কাটছাট করে (অবশ্যই ইংরেজি সহ) আপনাকে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখবো। এতটুকু আপোষ করাটা যৌক্তিক। আমার কাছে বাছাই করা সব লেখাগুলিই আছে কিন্তু প্রধান কাজ হচ্ছে এগুলি অনুবাদ করা। উপরন্তু, এগুলি এয়ার-মেইলে করে পাঠানোর জন্যে কিছু টাকা দরকার। আমি আশা করি বাংলাদেশে সরকার আমার প্রস্তাবনা মোতাবেক এখানে অর্থ-তহবিলসহ একটা অফিস তৈরী করবে। সে পর্যন্ত আমি আমার দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে যাব।

আমি মোঃ হোসেন আলীকে কেবলই জানিয়েছি যে সুইডিশ লিবেরেলের তরুণরা সুইডেন কর্তৃক বাংলাদেশের স্বীকৃতি প্রদানের জন্যে সমগ্র দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা অর্থ সংগ্রহ এবং আলোচনা-সভার বন্দোবস্ত করতেও ইচ্ছুক। দুই বছরের শিথিলতা ও অধ্যাবসায়ের পর এই উত্থানকে আমি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। কিন্তু আমাদের অবশ্যই নিয়মিত প্রয়োজনীয় প্রচার-সরঞ্জামাদি নিয়ে তাদের পাশে থাকতে হবে। এতে করে দেশব্যাপী তাদের ক্যাম্পেইন প্রচারণা বজায় থাকবে। এই সুযোগ আমরা হাতছাড়া করতে পারিনা। তারা বাংলাদেশের উপর নৃশংসতা এবং মুক্তিবাহিনীর অর্জন নিয়ে চলচ্চিত্র বানাতেও আগ্রহী হবে। যেহুতু তাদের জেনারেল পার্টি কংগ্রেস ১৬ই আগস্টে বসবে সুতরাং কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে চলচ্চিত্রটি পৌঁছতে হবে। দয়া করে জানাবেন, আপনি এই কাজে আমাদের কিভাবে কতটুকু সাহায্য করতে পারবেন। এই ধরণের চলচ্চিত্র আসলে আমাদের ক্যাম্পেইনে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। ব্যাপারটি গুরুত্বসহকারে দেখা হোক।

আপনার উচিত, যেভাবেই হোক, কঠিন হলেও এই সময়ের মধ্যে চলচ্চিত্রটি পাঠানো, আপনি আমাদের লন্ডন ইউনিটে বিবিসি কিংবা আইটিভি কর্তৃক গ্রন্থণা এবং সম্পাদনার জন্য একটা ফিল্ম পাঠিয়ে অনুরোধ করতে পারেন। এটা কঠিন হবার কথা না। লন্ডন থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় প্রচার-সরঞ্জামাদি, মানচিত্র এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর স্টেটমেন্টও সরবরাহ করতে পারে। আমরা শীঘ্রই এই সহযোগিতার সুযোগকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে চাই। তরুণ সুইডিশ লিবারেলের মতে, কেন্দ্রীয় তরুণ লীগ যারা বিশাল সুইডিশ তরুনের প্রতিনিধিত্ব করে, এই ক্যাম্পেনে যোগদান করতে পারে। এতে বুঝা যায় যে আমরা সুইডিশদের দ্বারা আমাদের এই মুভমেন্টে বিশাল শক্তি পেতে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আপনি যদি সকল প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেন, আমাদের ক্যাম্পেইন অবশ্যই সরকারের দৃষ্টিতে আসবে এবং সাধারণ জনগণের উপর প্রভাব রাখবে। কাজের এই পর্যায়ে এসে আমি স্থানীয়ভাবে তথ্য অনুবাদের জন্য কোনো না কোনো সহযোগিতা পেতে পারি। এতে আমাদের অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হবে। এহেন স্থানীয় সহযোগিতা নিয়ে আমরা স্টকহোমে বাঙালিদের জীবন নিয়ে একটা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছি যার বর্ণনা আমি মোঃ হোসেন আলীকে লিখে পাঠিয়েছি। প্রদর্শনী এখনো চলছে এবং পাবলিকের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। আমাদের কাজের অগ্রগতি শুরু হয়েছে। এখন আমাদের শুধু দরকার ধৈর্য আর ত্যাগ।
এমন নিরলস প্রচেষ্টার প্রতি আমার কোনো সন্দেহ নেই। এই শহরে অল্প বাঙালি থাকলেও ‘বাংলাদেশ’ একটি জনপ্রিয় শব্দে পরিণত হতে পারে। আপনার এটিও মনে রাখতে হবে যে আমরা সবশেষে নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং ফিনল্যান্ডেও আমাদের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। আমি খবর পেয়েছি যে আমাদেরই কিছু ছেলে অসলোতে স্থানীয় কার্যক্রম কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করছে। তাদেরও কিছু সহযোগিতা এবং প্রচার-সরঞ্জামাদির প্রয়োজন হবে। আর সামান্য কিছু অর্থ-তহবিল পেলে আমিও কোপেনহেগেনে একটি ইউনিট স্থাপনের ব্যবস্থা নিব। আমার মনে হয় আমি আমাদের কাজ-কর্ম এবং এর সংশ্লিষ্ট খরচ সম্বন্ধে ধারণা দিতে পেরেছি। আপনি শীঘ্রই এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান জানাতে পারলে ভালো হয়।

সৌজন্যে,
জনাব তাহেরউদ্দিন ঠাকুর
বহিঃপ্রচার বিভাগ
বাংলাদেশ মিশন
কলকাতা

বিনীত,
এসডি/-
(আ. রাজ্জাক)

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!