You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিসম্পর্কে বাংলাদেশ মিশনের প্রেস এটাচির সাংবাদিক সম্মেলন ন্যাশনাল হেরাল্ড ৪ জুলাই, ১৯৭১

 

পাকিস্তান তার ওয়াটারলু পাবে বাংলাদেশে

৩ জুলাই,১৯৭১ তারিখে বিদেশী এবং ভারতীয় সাংবাদিকদদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রেস এটাচে জনাব আমজাদুল হক কর্তৃক প্রদত্ত বিবৃতি

জনাব আমজাদুল হক,বাংলাদেশের প্রেস এটাচে,আজ বিদেশী এবং ভারতীয় সাংবাদিকদের বলেন যে বাংলাদেশ হচ্ছে সমস্ত জনগোষ্ঠীর সংকল্প এবং ইচ্ছার প্রকাশ।তিনি বলেন “কষ্টার্জিত যুদ্ধ এবং বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের মাধ্যমে ৭.৫ কোটি মানুষ নিয়ে গঠিত এই নতুন দেশ,যা কে পাকিস্তানের সকল সৈন্য মিলেও হারাতে পারবে না।এটি জনগনের প্রায় সর্বসম্মত ভোটের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এর বৈধতা,বাস্তবতা এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না ’’।
জনাব হক,যিনি তিন মাস পূর্বে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্যের পরিবর্তন করেছিলেন স্মরন করেন যে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ সরকার গঠনের সময় বলেছিলন যে পাকিস্তান মৃত এবং মৃতদেহের পাহাড়ের নিচে চাপা পড়েছে।জটিল আলোচনা যার কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল সেই সম্পর্কে তার দেয়া প্রদত্ত বিবৃতি জনাব আহমেদের সারসংক্ষেপ কে সমর্থন করে।ইয়াহিয়া,ভূট্টো এবং তাদের পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক জান্তার এজেন্টদের পক্ষ থেকে বিশ্বাসঘাতকতা,ছলনা,গণতন্ত্র বাতিলের ইতিহাস এটা।আলোচনা চলাকালীন কোন সময়ই গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে পাকিস্তানের একতা রক্ষা করার কোন উদ্দেশ্য তাদের ছিল না।এটা পরিকল্পিত ভাবে গণহত্যা,গণতন্ত্র ধ্বংস এবং জনগণের ইচ্ছার দমন।
জনাব হক যোগ করেন যে “ এরকম ঠাণ্ডা মাথায় গণতন্ত্র ধ্বংস খুব কমই ঘটেছে।কিন্তু বাংলাদেশ অসংখ্য শহীদের রক্ত দ্বারা তৈরি যা কখনই পশ্চিম পাকিস্তানের তৈমুরদের দ্বারা ধ্বংস হবে না।এটি থাকার জন্যেই এসেছে।কোন শক্তি বাংলাদেশ কে ধ্বংস করতে পারবে না
গত ২৩ বছরে বাংলাদেশের প্রতি হওয়া বৈষম্যের ইতিহাস বর্ননা করার সময় বাংলাদেশের প্রেস এটাচে বলেন যে ৯০% ব্যাংক ডিপোসিট পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং পাকিস্তানের মোট পূঁজির প্রায় ৮৫% শুধুমাত্র করাচীতেই কেন্দ্রীভূত এবং বেসরকারি বিনিয়োগের প্রায় ৮৭% পশ্চিম পাকিস্তানের ২২টি পরিবারের একচেটিয়া অধিকারভুক্ত।মোট জাতীয় বাজেটের ৫০% প্রতিরক্ষার জন্য বরাদ্দ কিন্তু সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষার জন্য ১০%ও ব্যয় করা হয় না।অন্য ভাবে বলা যায় যে বাংলাদেশের জনগণ রাজনৈতিক ভাবে,অর্থনৈতিক ভাবে,প্রশাসনিক ভাবে এবং সামরিক দিক দিয়ে দাসত্বাধীন এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মুক্তি প্রিয় জনগণ সেভাবে থাকাকে চরম ভাবে ঘৃণা করে।
জনাব হক বলেন যে পাকিস্তানের ভেতরের অপশক্তি যা পাকিস্তান কে শাসন করে মূলত জন-বিরোধী।তারা সইন্যবাহিনি,বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং একচেটিয়া অধিকার ভোগী পূঁজিপতিদের ষড়যন্ত্রের অংশ।এই শক্তিগুলো একসঙ্গে কাজ করে এবং গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে শক্তিশালী হতে দেয় না।

ইয়াহিয়ার সত্য প্রকাশ

জনাব হক বলেন, তখন ইয়াহিয়া খান আইয়ুব খান থেকে ক্ষমতা হস্তগত করেছিলেন সামরিক জান্তার কাছ থেকে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার জন্য। আওয়ামী লীগ দেশের গণতান্ত্রিক আইন প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে এসেছিলো। গত ৭ ডিসেম্বর থেকে এই বছরের ১৭ জানুয়ারী পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ কেবল একটি সক্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে সর্ব সমর্থিত হয় নি বরং পার্লামেন্টেও তাদের আধিপত্য সমগ্র পাকিস্তানে বেশি ছিলো।

সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এর বিপুল ভোটে জয় পশ্চিম পাকিস্তানের বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহের ভাটা ফেলতে বড় ভূমিকা পালন করে।

জনাব হক আরো বলেন, “এটি এখন পরিষ্কার যে ইয়াহিয়া খানের পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা দূরীকরণের কোন পরিকল্পনাই ছিলো না বরং তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী নিরীহ মানুষদের দমনের দিকেই বেশি আগ্রহী ছিলেন।”

যখন শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সহযোগীদের সাথে ইয়াহিয়া খানের শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনা চলছিলো তখনই ২৫ মার্চের রাতে বাংলাদেশের নিরস্ত্র অসহায় মানুষের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত সৈন্যরা অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

এটি বেঈমানীর মত ঘৃণ্য কাজ ব্যতিত কিছু নয়।

“বাংলাদেশ এখন একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি সরকার দেশের সামগ্রিক বিষয়াদি দেখাশোনা করছেন। পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই মুহুর্তে একদল ব্যর্থ সৈনিক ছাড়া কিছুই নয়। সুতরাং তারা যত দ্রুত দেশ ছাড়বে ততই আমাদের এবং তাদের উভয়ের জন্য মঙ্গল।
পিন্ডির যুদ্ধ
“আমাদের দেশ এখন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি সমগ্র দেশের প্রতিটি মানুষের যুদ্ধ। আমাদের বর্তমান সংগ্রাম এখন মুক্তির সংগ্রাম। রাশিয়া, আলজেরিয়া, চায়না, কিউবার সেই স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী মানুষগুলোর সাথে আমাদের এখন কোন পার্থক্য নেই। ১৮ শতকে আমেরিকান মানুষের করা স্বাধীনতার জন্য সেই আন্দোলনের সাথেও আমাদের কোন পার্থক্য নেই।

বাংলাদেশ আজ রক্তাক্ত। প্রচন্ড কষ্ট এবং যন্ত্রণায় এদেশের মানুষ আজ চিৎকার করে কাঁদছে। মানব ইতিহাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া এমন হত্যাযজ্ঞের নজির বিশ্ববাসী খুব কমই দেখেছে।
এই দূর্ভাগা মাতৃভূমির শহর বন্দরের মাটি আজ রক্তাক্ত। বাঙ্গালীদের জন্য এটি এখন একটি বাঁচার লড়াই। এটি এমন একটি যুদ্ধ যা আমরা কখনো চাই নি। এটি এমন একটি যুদ্ধ যা আমাদের উপর পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
এখন আমরা আমাদের যুদ্ধ সাহস সংকল্প ও সহনশীলতার সাথে পরিচালনা করে যাচ্ছি। আমাদের সাহসী মুক্তিফৌজ নিজেদের যোগ্যতা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছে।
দেশ মাতৃকার জন্য নিজেদের আত্মার সাথে এই যুদ্ধকে গেঁথে নিয়েছে তারা। মুক্তিফৌজ ইতোমধ্যেই শত্রুর বিশালত্বকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত যোদ্ধা রয়েছে। আমাদের এখন প্রয়োজন অস্ত্র ও গোলা বারুদ সাহায্য। যদি আমরা আধুনিক অস্ত্র সাহায্য ঠিকমত পেতে পারি, তাহলে পাকিস্তানি হানাদাররা বুঝতে তারা কাদের সাথে লাগতে এসেছে।

ইসলামের বিরুদ্ধে
ইসলামিক দেশ হওয়ার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে জনাব হক বলেন, “আমরা জানি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক সরকার মুসলিম দেশগুলোতে আমাদের ব্যাপারে ইসলামের নামে মিথ্যে ও বানোয়াট গল্প ছড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা আশা করি মুসলিম বন্ধু রাষ্ট্রগুলো তাদের এই মিথ্যাচারে কান দেবে না। বাংলাদেশ একটি নিশ্চিত স্বাধীন দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে সুতরাং এই মুহুর্তে নতুন করে কোন রাজনৈতিক সমাধানে যাওয়ার প্রশ্ন আসে না। ইসলামের দোহাই দিয়ে পাকিস্তানের সাথে একত্রে থাকার কোন প্রশ্নও আসে না। পাকিস্তানি রা ইসলামের নাম ব্যবহার মুসলিম দেশগুলোকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আমি তাদের জিজ্ঞাস করতে চাই, একজন নিরীহ মুসলিম কে কিভাবে আরেকজন মুসলিম নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে? ইসলামের নামে কিভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিম সৈন্য একজন মুসলিম নারীকে ধর্ষন করতে পারে? কেন পাকিস্তানের মুসলিম সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম নারীদের ধর্ষণ এবং মুসলিম ডাক্তার, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি এবং ব্যবসায়ীদের হত্যা করছে? এটা কি সেই ইসলাম যার উপর পাকিস্তান সরকার নির্ভর করছে? মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আমাদের অনুরোধ যে আপনারা সামনে এগিয়ে আসুন এবং ইসলামের নামে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের এমন নির্মম হত্যাযজ্ঞের তীব্র প্রতিবাদ করুন।

পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের এই যুদ্ধ কেবল বাংলাদেশের মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ নয়। বরং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
মানবাধিকার কমিশনের উপর হতাশা প্রকাশ করে জনাব হক আরো জিজ্ঞেস করেন, যখন সাড়ে সাত কোটি মানুষ স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও শান্তির জন্য লড়ছে তখন মানবাধিকার কমিশনগুলো কি করছে? যদি তারা কিছু নাই করতে পারে তাহলে এই ধরণের সংস্থার প্রয়োজন কি? তাহলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সংহতির প্রয়োজনই বা কি?

ভারতীয় সহায়তা
বাংলাদেশের মানুষের উপর গভীর আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা একটি জেতা যুদ্ধ করছি কারণ আমরা কোন দোষ করি নি। আমরা আমাদের লক্ষ্য জানি এবং আমাদের সাহসী মুক্তিফৌজ প্রয়োজনে বছরের পর বছর যুদ্ধ করে যাবে যতদিন না আমাদের বিজয় অর্জিত হয় এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই দেশ থেকে নির্মূল হয়। এই ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য ও আস্থা প্রয়োজন। নৈতিক এবং যান্ত্রিক দুটোই। বিশ্বের সকল দেশের কাছে আমাদের অনুরোধ, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের নাম আত্মপ্রকাশ করতে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা সকল জাতির কাছে আমাদের স্বীকৃতি প্রদানের আকুল আবেদন জানাই। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় জনগণের নৈতিক সমর্থনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
৬০ লক্ষ উদ্বাস্তু যারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন বাংলাদেশ, ভারতের জনগণ ও সরকারের কাছে এই বড় সংখ্যক উদ্বাস্তু মানুষের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে|
যে ৬ মিলিয়ন শরণার্থী আশ্রয়ের জন্যে ভারত পৌঁছেছে তাদের জন্যে গভীর উদ্বেগপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ”ভারত সরকার এবং তাদের জনগন বাংলাদেশের অসহায় শরণার্থীদের জন্য যা করছে তার জন্য তারা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। ভারতের একার পক্ষে এটি মোটেও সহজ কাজ নয়”। তিনি দুর্ভোগে পড়া মানুষের কাছে দ্রুত ত্রান পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।

পাকিস্তানে আমেরিকান অস্ত্র বিক্রির শুরুর কথা উল্লেখ করে জনাব হক বলেছেন যে,
“এর ফলে ৭৫ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের ঢেউ বয়ে গেছে। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অবিলম্বে পাকিস্তানে অস্ত্র প্রেরণ বন্ধ করা উচিত বলে তাগাদা দিচ্ছি এবং বাংলাদেশে কোন কুকর্ম ও গনহত্যা চালানোর জন্য আর কোন সামরিক দ্রব্য পাকিস্তানে তৈরি করা হবেনা বলে নিশ্চয়তা দাবি করছি।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঐতিহ্য এবং মানবতার খাতিরে পাকিস্তানে কোন ধরনের সামরিক অথবা অর্থনৈতিক দান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

যারা এখনও ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান বিশ্বাস করে তাদের পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে যে ইয়াহিয়া যখন ২৫ মার্চের রাতে ঢাকা থেকে ফিরে আসেন তখনি একক পাকিস্তানের শেষ আশাটুকু সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। ইয়াহিয়ার অবশ্যই জানা উচিত যে, তিনি ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের শেষ আশাটুকুকে ধূলিসাৎ করেছেন। ইয়াহিয়ার সর্বশেষ সম্প্রচার সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জনাব হক বলেন, “এগুলো সম্পূর্ণ অর্থহীন কথাবার্তা। যাই হোক আমরা এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নই। আমাদের দেশটি স্বাধীন এবং ইয়াহিয়া অন্য রাষ্ট্রের প্রধান। দিল্লিতে অনেক কূটনীতিক আমাকে বলেছেন যে ইয়াহিয়া বুদ্ধিমান নন। আপনারা পরিষ্কারভাবে দেখতে পারছেন যে আজ পর্যন্ত একটি পুতুল সরকার গঠন করার জন্য তিনি একজন দেশদ্রোহী পাননি।“

উর্দু প্রেস সম্পর্কে তিনি বলেন যে, “ ২৬ জুন তিনি উর্দু প্রেসের একটি সেমিনারে অংশ গ্রহণ করেন। যদিও অধিবেশনে স্পিকার উর্দু সংবাদপত্রেরই প্রতিনিধি ছিলেন,
তিনি মনে করেন, উর্দু প্রেস বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের জাতীয় মেজাজ ভাগ করে নিয়েছে।

আমরা আশা করি এবং আমাদের আবেদন তারা এগিয়ে আসবে, ইয়াহিয়ার বিশ্বাস ঘাতকতা আরও উন্মুক্ত করে দিবে এবং অবশ্যই আমাদের কারণগুলো সমর্থন করবে।“

পাকিস্তানে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে জনাব হক বলেছেন মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় নেয়া পাকিস্তান সরকারের কঠোর পদক্ষেপ দেখিয়ে দিচ্ছে তারা আজ আর্থিকভাবে কতটা দেউলিয়া। বাংলাদেশের যুদ্ধ সম্পূর্ণ ভাবে অর্থনৈতিক চ্যুতি ঘটিয়েছে। প্রতিদিন এই ক্ষতির পরিমান ৫২ মিলিয়ন টাকা। এতে তাদের বিশাল বাজেট ঘাটতি হয়েছে যা পুরো বিশ্বের জন্য নতুন রেকর্ড। এটি বাজেটের প্রায় ৫০% এবং অবশ্যই অর্থের জন্য কাগজের মুদ্রা তৈরি করতে হবে যেটি মুল্যস্ফীতির চাপের সাথে যুক্ত হবে। পশ্চিম পাকিস্তানে প্রতি মাসে আমদানি ঘাটতি ৪০ মিলিয়ন ডলারের সাথে সাথে পাকিস্তানের মজুদ শুন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। বিদেশি ঋণের নিয়মিত কিস্তি পরিশোধের একতরফা স্থগিত পাকিস্তানের সম্পূর্ণ দেউলিয়া অবস্থারই বহিঃপ্রকাশ।

একটি রাজনৈতিক সমাধান সম্পর্কে জনাব হক বলেছেনঃ “আমাদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এবং প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ রাজনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য ইতিমধ্যে ৪টি শর্ত জানিয়ে দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি, বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে হানাদার বাহিনী প্রত্যাহার, গত তিন মাসে পশ্চিম পাকিস্তানি আর্মিদের বর্বরতায় ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা এই শর্ত পূরণ না করবে ততক্ষন পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগন পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করা পর্যন্ত তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।“

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!