শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
উত্তর-পূর্ব জোন-২ আওতাধীন যুব শরনার্থী ও মুক্তিফৌজ শিবিরের মাসিক ব্যয় বরাদ্দের হিসাব | বাংলাদেশ সরকার, উত্তর-পূর্ব জোন-২ এবং সাধারণ প্রশাসন বিভাগ | ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়, উত্তর-পূর্ব জোন-২
প্রেরকঃ মোঃ লুৎফর রহমান
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা
উত্তর-পূর্ব জোন-২, তুরা।
প্রাপকঃ স্বরাষ্ট্র এবং অর্থসচিব
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বিষয়ঃ জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল, তুরা কর্তৃক সম্ভাব্য মাসিক ব্যয় বরাদ্দের বাজেট।
Ref: ZAO/ZAC(B)-3/71, তাংঃ ১৬/৯/৭১
জনাব,
যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক জানানো যাচ্ছে যে জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল, উত্তর-পূর্ব জোন-২, কর্তৃক মাসিক ব্যয়ের হিসাব সম্পন্ন হয়েছে এবং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে প্রস্তাবিত হল।
আমাদের কার্যক্রম বাস্তবায়নার্থে তহবিল বরাদ্দের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় বরাদ্দ বাজেটের একটি কপি আপনার সদয় বিবেচনার জন্য দেওয়া হল।
যুব ও মুক্তিফৌজ শিবিরের ছেলেদের সামগ্রিক চাহিদা এবং এই এলাকার শরনার্থীদের দুঃখ-দূর্দশা বিবেচনা করে তহবিল বরাদ্দের অনুরোধ করছি যা অবিলম্বে আমাদের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
আপনার বাধ্যগত,
এস/ডি- মোঃ লুৎফর রহমান
মন্ত্রণালয়ের সদয় অবগতির জন্য মন্ত্রীপরিষদ সচিব বরাবর একটি কপি প্রেরণ করা হল।
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা
উত্তর-পূর্ব জোন-২, তুরা।
সদয় বিবেচনা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সচিব, সাধারণ প্রশাসন বিভাগ বরাবর একটি কপি প্রেরণ করা হল।
এস/ডি- মোঃ লুৎফর রহমান
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা
উত্তর-পূর্ব জোন-২, তুরা।
Memo No. GA/ …………. Dt. 14.10.71
যুব কন্ট্রোল বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর একটি কপি প্রেরণ করা হল।
(২) সচিব, সামরিক।
উপসচিব (সংস্থাপন)
সাধারণ প্রশাসনিক বিভাগ।
_______________________________
জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল কর্তৃক প্রস্তাবিত সম্ভাব্য মাসিক ব্যয়ের হিসাব,
উত্তর–পূর্ব জোন–২, তুরা।
কাউন্সিল যতক্ষণ তার কাজ চালিয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার এখতিয়ারাধীন যত যুব, মুক্তিফৌজ এবং শরনার্থী শিবির আছে তাদের আর্থিক দিক বিবেচনা করবে। নিচে সেসব শিবিরের বিস্তারিত দেয়া হলঃ
শিবিরের নাম শিবিরে ছেলেদের শিবিরের নাম মুক্তিফৌজ শিবির
সংখ্যা এখানে ছেলেদের সংখ্যা
ক) মহেশ্বরাগঞ্জ ২০০০ ছেলে ক) মহেশ্বরাগঞ্জ ৫০০ ছেলে
খ) পোড়াখাসিয়া ৫০০ ছেলে খ) পোড়াখাসিয়া ৫০০ ছেলে
গ) ডালু ২৫০০ ছেলে গ) কন্যাবাড়ী ১০০০ ছেলে
(কেন্দ্রীয় সরকারের ঘ) গাছুয়াপাড়া ৫০০ ছেলে
নিয়ন্ত্রণে) ঙ) শিব-বাড়ী ১০০০ ছেলে
ঘ) গাছুয়াপাড়া ৫০০ ছেলে চ) জাকশাগ্রাম ১৫০০ ছেলে
(অস্বীকৃত) ছ) রাঙরা ১০০০ ছেলে
শরনার্থী শিবির
ঙ) শিব-বাড়ী ৬০০ ছেলে ক) জিগজাগ ১০০০০ ছেলে
(অস্বীকৃত)
চ) বাগমারা ৫০০ ছেলে খ) আমপতি ৫০০০০ ছেলে
ছ) রাঙরা ৫০০ ছেলে গ) পোড়াখাসিয়া ২০০০০ ছেলে
জ) মলিয়াদেও ৪০০ ছেলে ঘ) মাছাংপানি ৬০০০০ ছেলে
(অস্বীকৃত)
ঝ) মহেশখালা ১০০০ ছেলে ঙ) দিমাপাড়া ৪০০০০ ছেলে
চ) গাছুয়াপাড়া ৫০০০ ছেলে
(অস্বীকৃত, কিন্তু রেশন দেওয়া হচ্ছে)
ছ) মেনান ৪০০০০ ছেলে
জ) শিব-বাড়ী ৫০০০০ ছেলে
ঝ) বাগমারা ১০০০০০ ছেলে
ঞ) চান্দু ভুঁইয়া ২৫০০০ ছেলে
উপরে বর্ণিত সব যুব শিবির, গাছুয়াপাড়া, শিব-বাড়ি, মহাদেও এবং মহেশখালা শিবির অস্বীকৃত, যার ফলে সেখানকার ব্যবস্থাপনা নাজুক।
ক্যাম্পগুলোতে ছেলেদের বেঁচে থাকার দশা নিতান্তই শোচনীয়। মহাদে এবং মহেশখালী যুব ক্যাম্পগুলোতে সরকার থেকে কোনো রেশন সরবরাহ হয়নি। অন্যান্য যুব ক্যাম্পগুলোতে প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান বাদ দিয়ে শুধুমাত্র চাল, ভোজ্য-তেল, ডাল এবং নুন সরবরাহ করা হয়েছে যা যুবাদের নিয়ন্ত্রণে আছে যারা তাঁদের ঘর থেকে নিঃস্ব অবস্থায় বিতাড়িত হয়েছে। ফলে সেখানে অবর্ণনীয় পরিস্থিতি প্রতীয়মান এবং ছেলেরা অপুষ্টি এবং সাধারণ রোগে আক্রান্ত হয়ে আছে যা তাঁদের শরীর-স্বাস্থ্য এবং আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করছে। মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পগুলোতেও প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি দরকার।
তথ্যে সূত্রে এটিও জানা যায় যে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল – ২’এ সাধারণ ম্যালেরিয়া এবং এনোফিলিস মশার বিরুদ্ধে প্রত্যমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যুব এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে আমাদের ছেলেরা মেডিকেল-সেবা এবং মশারির অভাবে এই রোগে ভুগছে। অন্যদিকে দূষিত মসলা এবং পানির কারণে ডায়রিয়া মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিরোধ এবং প্রতিকার কোনোটির জন্যেই এখনো ওষুধপাতি বিতরণ করা হয়নি। প্রায়শই মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা এসব জরুরি সুবিধা পায়না। আক্রান্ত ছেলেরা যাতায়ত সুবিধার অভাবে হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে গিয়ে মেডিকেল-সেবা নিতে পারছেনা। নোংরা পরিধেয় কাপড় এবং জঙ্গলের জুতা পরার কারণে ছেলেরা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। সমস্যাটি এতো ভয়াবহ হওয়া সত্ত্বেও অবহেলা করা হচ্ছে, যা এটিই নির্দেশ করে যে এই অঞ্চলে তাঁদের সেবার জন্য কেউ হয়তো নেই।
মানিকচরে নিয়মিত হাজারো ছেলে এবং শরণার্থী মারা যাচ্ছে।
শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দারা অশেষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। প্রাপ্ত জায়গা, পরিমান মতো খাবার এবং পুষ্টি, নিরাপদ পানি, মেডিকেল-সেবা, মশারি এবং পরিধেয় কাপড় ইত্যাদির অভাবে শরণার্থীরা অপুষ্টি এবং নানান রোগের শিকার হচ্ছে। ভোগান্তির এই চরম দশা দেখে কাউন্সিলের নীতিগত দিক থেকে স্থানীয় প্রশাসন এবং কিছু লোকাল এজেন্সির সহযোগিতায় ত্রাণ-কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
ফলাফলস্বরূপ নৃশংসতার বর্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত রাজনৈতিক কর্মী যারা এই অঞ্চল অতিক্রম করতে পারতেন তারাও এই খারাপ সময়ের শিকার হয়েছেন। কাউন্সিল নিজস্ব নীতিগত বাধ্য-বাধকতা থেকে তাদের ত্রাণ সামগ্রী এবং টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করেন।
আমাদের সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা, এটা শুধু আশা করা যায় যে কাউন্সিল নিজেকে সম্পূর্ণভাবে যুব এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে আমাদের ছেলেদের জন্যে নিবেদিত হবে। ইস্যুটি এমন দাঁড়িয়েছে যে, হয় আমরা জিতবো নয়তো মরবো। আমাদের ছেলেদের শারীরিক সক্ষমতা এবং মনোবল সম্পর্কিত সমস্যাগুলি উপলব্ধি না করা আমাদের পরিকল্পনা এবং এখানে অবস্থানের উদ্দেশ্য-র পুরোপুরি বিপরীতমুখী হবে।
যাদের উপর আমরা আমাদের চূড়ান্ত বিজয়ের আশা গেঁথে রেখেছি তাঁদের তথাপি আমাদের ছেলেদের যুদ্ধের প্রচেষ্টাকে যদি সফল করতে না পারি তাহলে গত নির্বাচনে আমাদের বিজয় সম্পূর্ণভাবে ম্লান হয়ে যাবে।
যুব এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে থাকা আমাদের ছেলেদের সমস্যার উপর নজর রেখে এবং শরণার্থীদের প্রতি নীতিগত দিক থেকে চিন্তা করলে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা অনুযায়ী একটা মাসিক অনুদান ব্যয় করা দরকার:
উক্ত জোনের জন্য সর্বোচ্চ ব্যয়ের হিসাব
যুব এবং এফএফ ক্যাম্প :
(১৬,০০০ বালকের জন্য)
বিবরণ
পরিমাণ
দর
মূল্য
অনাবৃত্ত
মূল্য
১. মশারী। (যেহেতু বালকেরা মাচাং এ ঘুমাবে, একজনের মশারীতে কাজ হবে না। প্রতি ৬ জনের জন্য একটি বড় মশারী প্রয়োজন।)
২,৫০০
২৫ রূপী প্রতি পিস
৬২,৫০০/-
২. কম্বল (দুই জন বালকের জন্য দুইটি কম্বল)
১৬,০০০
২০ রূপী প্রতি পিস
৩,২০,০০০/-
৩. জঙ্গল শ্যু
১৬,০০০ জোড়া
২০ রূপী প্রতি জোড়া
৩,২০,০০০/-
৪. লুঙ্গী, রুমাল, গেঞ্জী, শার্ট ও চাদর (প্রতি ছেলের জন্য এক সেট)
১৬,০০০ সেট
৩০ রূপী প্রতি সেট
৪,৮০,০০০/-
৫. প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স
২০ টি
৫০ রূপী প্রতি বাক্স
১,০০০/-
৬. টয়লেট (সাবান ও অন্যান্য)
১৬,০০০ বালকের জন্য
৫ রূপী প্রতিজন
৮০,০০০/-
৭. বালকদের হাত খরচ (যেহেতু তারা চাল, ডাল, তেল লবণ ব্যতিত অন্য কিছু কেনার খরচ পায়না)
১৬,০০০ বালকের জন্য
০.৫ রূপী প্রতিজন
২,৪০,০০০/-
৮. ম্যালেরিয়া নিরোধক ঔষধ
৫০,০০০ ট্যাবলেট
১ পয়সা ট্যাবলেট প্রতি
১২,৫০০/-
৯. কলেরার ঔষধ
১,০০,০০০ ট্যাবলেট
১ পয়সা ট্যাবলেট প্রতি
২৫,০০০/-
১০. মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট
১,০০,০০০ ট্যাবলেট
১ পয়সা ট্যাবলেট প্রতি
২৫,০০০/-
৩. শাড়ি -→২৫০০০ পিস → টাকা_৮ক প্রতি পিস → টাকা ২০০০০০/-
৪. শিশুর শীতকালীন পোষাক → ৭৫০০০ সেট→ টাকা ১৫/- প্রতি সেট → টাকা ১,২৫,০০০/- অসিস্ত্ব ভাতা ১.রাজনৈতিক ক্ষতিগ্রস্থ ও শিল্পীদের → ২৫০০০জন(প্রায়) -→টাকা ৫০ জনপ্রতি প্রতিমাসে →টাকা ১,২৫০০০/- ২.শিক্ষক ও সরকারী কর্মচারীদের( তিনি সরকারের নীতি অনুযায়ী ভাতা প্রদান করবেন) → ৫০০০ জন(প্রায়) → টাকা ১০০/-→প্রতিমাসে গড়মাথা → টাকা ৫০০০০/- প্রচার কাজ ১. সাইক্লোস্টাইল মেশিন → ১ সেট → টাকা ৪০০০/- →টাকা ৪০০০/- ২.ট্রাঞ্জিস্টার সেট →২৫ সেট – টাকা ২০০(প্রতি) → টাকা ৫০০০/- ৩.সংবাদপত্র, সাময়িকপত্র,লিফলেট ও অন্যান্য প্রকাশনা → টাকা ১০০০০/- চিকিৎসা ও অন্যান্য বিবিধ বিষয় ১. ১০ চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা খরচ প্রস্তাব করণ → টাকা ১০/- →টাকা ৫০০০/- (প্রতি কেন্দ্রে) → টাকা ৫০০০০/- [বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ১০টি চিকিৎসা কেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত প্রসূতি ক্লিনিক উদ্বাস্তু পৌরজন,যুব ও F.F ক্যাম্পে বসবাসকারীদের দেখাশুনা করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।প্রতিটি চিকিৎসা কেন্দ্রে ৫ শয্যার জরুরী বিভাগ কলেরা ও অন্যান্য মহামারী রোগের রোগীদের চিকিৎসার জন্য অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।সেবিকা নিযুক্ত করা উচিত মেডিকেল অফিসারদের পরামর্শ ক্রমে,এতদুদ্দেশ্যে নিযুক্ত করা ওষুধ এবং অন্যান্য ব্যয় মূল্যায়ন করা এবং তহবিল অনুযায়ী স্থাপন করা]
(শিরোনাম: উত্তর-পূর্ব জোন-২ আওতাধীন যুব শরণার্থী ও মুক্তিফৌজ শিবিরের মাসিক ব্যয় বরাদ্দের হিসাব। সূত্র:বাংলাদেশ সরকার,উত্তর পূর্ব জোন-২ এবং সাধারণ প্রশাসন বিভাগ। তারিখ:১৬সেপ্টেম্বর,১৯৭১।) [পূর্বে দ্রষ্টব্য] ………………………..
সর্বমোট ব্যয় -৪২,৩৪,০০০ রুপি (বিয়াল্লিশ লাখ চৌত্রিশ হাজার রুপি মাত্র।)
উপরোক্ত প্রাক্কালিত ব্যয় প্রস্তাবিত এবং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যের পরামর্শক্রমে সম্পাদিত হলো।
Sd/- মো লুৎফর রহমান
সেক্রেটারি
ও আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা,
উত্তর-পূর্বে জোন-২।
………………………………………………………………