You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
গণপরিষদ সদস্য দ্বারা গঠিত উত্তর-পূর্ব জোন-১ এর প্রথম সভার কার্যবিবরণী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক চিঠি বাংলাদেশ সরকার, উত্তর-পূর্ব জোন-১ এবং স্বাস্থ্য ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

 

উত্তর পূর্ব অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিলের সংবিধান বিষয়ে এমএনএ এবং এমপিএ দের প্রথম মিটিং এর সারসংক্ষেপ

সদস্যদের কেউই ডাওকিতে ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ এর পূর্বনির্ধারিত তারিখে উপস্থিত না হওয়ায় নির্ধারিত সভা অনুষ্ঠিত হবে না।
উপস্থিত সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে সভার স্থান পরিবর্তন করে শিলং এবং ৬ই সেপ্টেম্বরের বদলে ৭ সেপ্টেম্বরে সভা স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্ত জনাব দেওয়ান ফরিদ গাজী, এমএনএ, ফোনে ডাওকির জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। বালাত এবং বারসেরাতে অবস্থানরত এমএনএ এবং এমপিএ দের দেরীতে আসার কারণে তারিখ স্থানান্তর করা জরুরী ছিল। যানবাহনের দুরবস্থার কারণে তাদের দেরী হয়েছে।
১. জনাব দেওয়ান ফরিদ গাজী, এমএনএ
২. জনাব আব্দুল মালিক, এমপিএ
৩. জনাব এম. এ. কুদ্দুস, এমপিএ
৪. জনাব মাসুদ আহমেদ চৌধুরী, এমপিএ
৫. জনাব আব্দুর রইস, এমপিএ
৬. জনাব এম. এ. জহুর, এমপিএ
৭. জনাব এম. এ. সাত্তার, এম পিএ
৮. জনাব লুৎফুর রহমান, এমপিএ
৯. জনাব আব্দুল আজিজ চৌধুরী, এমপিএ
১০. জনাব আব্দুল লতিফ, এমপিএ
১১. জনাব মঞ্জুর আহমেদ, এমপিএ
১২. জনাব হাবিবুর রহমান, এমপিএ
১৩. জনাব সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, এমপিএ
১৪. জনাব কাজী সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, এমপিএ
১৫. জনাব দেওয়ান ওবায়েদুর রেজা চৌধুরী, এমপিএ
১৬. জনাব আব্দুল মুন্তাকিন চৌধুরী, এমএনএ
১৭. জনাব এম. আব্দুর রহিম, এমএনএ
১৮। জনাব এম শহীদ খান,এমএনএ
১৯। জনাব আব্দুল হামিদ,এমএনএ
জনাব দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরি ,এমএনএ কে ভোটের মাধ্যমে এই সভা পরিচালনার করার জন্য সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে।
নিম্নলিখিত আলোচ্যসূচী সভায় আলোচনা করা হয়েছেঃ
১। আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিল এর সভাপতি নির্বাচন
২। আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিল এর নিম্নলিখিত উপ-কমিটিগুলো গঠন-
(ক) অর্থায়ন উপ-কমিটি
(খ)রিলিফ উপ-কমিটি
(গ)স্বাস্থ্য উপ-কমিটি
(ঘ)প্রচার উপ-কমিটি
(ঙ)শিক্ষা উপ-কমিটি
১। উপস্থিত সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে জনাব দেওয়ান ফরিদ গাজী,এমএমএ কে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিল এর সভাপতি নির্বাচন করেছে।
২। উপ-কমিটিগুলোর সভাপতি ও সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হয়েছেন।
(ক) অর্থায়ন উপ-কমিটি
সভাপতি-জনাব দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরি,এমএনএ
সদস্যবৃন্দ-
জনাব আব্দুল হামিদ,এমএনএ
জনাব আব্দুল মালিক,এমপিএ
জনাব দেওয়ান ফরিদ গাজী,এমএমএ
জনাব এস এইচ চৌধুরি,আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা
(খ)রিলিফ উপ-কমিটি
সভাপতি-জনাব আব্দুর রইস,এমপিএ
সদস্যবৃন্দ-
জনাব লুৎফুর রহমান,এমপিএ
জনাব আব্দুস জহুর,এমপিএ
জনাব এম এ কুদ্দুস,এমপিএ
জনাব সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, এমপিএ
জনাব এম এ সাত্তার,এমপিএ
গ) স্বাস্থ্য উপ-কমিটি
সভাপতি-জনাব হাবিবুর রহমান,এমপিএ
সদস্যবৃন্দ-
ডাক্তার আব্দুল মালিক,এমপিএ
ডাক্তার কাজি সিরাজুদ্দীন আহমেদ এমপিএ
জনাব আব্দুল হক,এমএনএ
জনাব মাসুদ আহমেদ চৌধুরি ,এমপিএ
জনাব আব্দুল হামিদ,এমএনএ
(ঘ)প্রচার উপ-কমিটি
সভাপতি-
জনাব আব্দুল মুন্তাকিম চৌধুরি,এমএনএ
সদস্যবৃন্দ-
জনাব মঞ্জুর আহমেদ,এমপিএ
জনাব আব্দুস জহুর,এমপিএ
জনাব জেড এ রহিম,এমএনএ
জনাব আব্দুর রইস,এমপিএ
জনাব লুৎফুর রহমান,এমপিএ

( ঙ) শিক্ষা উপ-কমিটি
সভাপতি-
জনাব এম এ লতিফ,এমপিএ
সদস্যবৃন্দ-
জনাব আব্দুল আজিজ চৌধুরি,এমপিএ
জনাব দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরি,এমএনএ
জনাব আব্দুস জহুর,এমপিএ
জনাব আব্দুল হক,এমএমএ

৩।বিবিধ
নিম্নলিখিত আলোচ্যসূচী সভাপতির অনুমতিক্রমে এবং সিদ্ধান্তগুলো সর্বসম্মতিক্রমে নেয়া হয়েছেঃ
১। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, সকল সাব-সেক্টর যেমন উত্তর-পূর্ব অঞ্চল-১ এর (ক)করিমগঞ্জ (খ) ডাউকি (গ)বারাচ্ছড়া-বালাট- রাঙ্গুয়া (ঘ)ভোলাগঞ্জ-শিলা ইত্যাদিতে এমএনএ,এমপি এবং ৫ জন রাজনৈতিক কর্মী নিয়ে কমিটি হবে যা স্থানীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম দেখার ক্ষমতা থাকবে।
২। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে,এই অঞ্চলের মুক্ত এলাকাগুলোতে ব্যবসা-বানিজ্য দেখার জন্য একটি উপ-কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করা হবে।
৩। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে , শরণার্থীদের সমস্যাগুলো দেখার জন্য একটি শরণার্থী উপ-কমিটি গঠন করা হবে ।
৪। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে , একটি উপ-কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করা হবে যা রাজস্ব,সরকারি সম্পত্তি ও টোল সংগ্রহ করবে এবং যেসব সরকারি সম্পত্তি সংগ্রহ করা হয়েছে তার মূল্য হিসাব করবে।
৫। বাস্তবতা এই যে কিশোরগঞ্জ উপ-বিভাগের বেশিরভাগ উদ্বাস্তু উত্তর-পূর্ব অঞ্চল-১ এ সাময়িকভাবে বসবাস করছে। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, কিশোরগঞ্জ উপ-বিভাগ এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
৬। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকারের সি ইন সি (C in C) কে অনুরোধ করা হবে যাতে প্রতিটি সাব-সেক্টর যাতে ঠিকমত চলতে পারে তার জন্য অন্তত একটি হলেও উপযুক্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়।
৭। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করা হবে যাতে রাজ্য সরকারের কাছে থেকে এমএনএ এবং এমপিদের ভারতের মাটিতে স্বাধীন চলাচলের জন্য অনুমতি সংগ্রহ করা হয়।আরো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, সভাপতি বা আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিলকে অনুরোধ করা হবে যেন আসাম ও মেঘালয় সরকারের কাছ থেকে এই সংগঠনের সদস্যদের মুক্ত চলাচলের জন্য অনুমতি সংগ্রহ করা হয়।
৮। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিল এর সভাপতিকে ক্ষমতা দেয়া হবে যুব ক্যাম্পগুলোর কাজ দেখার জন্য স্থানীয় উপ-কমিটি সাথে সহযোগিতার জন্য উপযুক্ত লোক যেন নিয়োগ দেয়া হয়।
৯। কমিটি সর্বসম্মতি ক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সদর দপ্তর ডাউকি থেকে শিলং এ সরিয়ে নেয়া হবে।যেহেতু ডাউকি,বালাট,শিলা,বারাচ্ছড়া প্রভৃতি এলাকার পথ শিলং হয়ে চলে গেছে। এতে করে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে সর্বোচ্চ যোগাযোগ সম্ভব হবে।
১০। বাংলাদেশের কিছু এলাকায় পাকিস্তানি আর্মির সাম্প্রতিক ধ্বংসযজ্ঞের প্রেক্ষিতে,উদ্বাস্তুর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে,বিশেষ করে বালাট এলাকায় ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে, যা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পরেছে। বর্তমান সময়ে বেশ বড়সংখ্যক উদ্বাস্তু আশ্রয় ও রেশনের আওতার বাইরে। এই উদ্বাস্তুদের ভোগান্তি কমানোর জন্য তৎপরতা বাড়ানো ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।
১১। বালাত এলাকায় কলেরা ছড়িয়ে পড়ছে এবং তা মহামারি আকার ধারণ করেছে।একারণে যদিও আশ্রয়দাতা সরকার চিকিৎসা সুযোগসুবিধা বাড়িয়েছে কিন্তু তা পরিস্থিতির তুলনায় অপর্যাপ্ত।অসংখ্য মূল্যবান জীবন বাঁচানোর জন্য চিকিৎসা সেবা বাড়াতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
১২। চলমান মিলিটারি অপারেশনের কারণে আমাদের এখানে হতাহতের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে কিন্তু বালাত, শেইলা, ভোলাগঞ্জ এবং আশেপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং সুবিধা না থাকার কারণে আহত ব্যক্তিদের জন্য যথাযথ চিকিৎসা এবং পরিষেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।তদুপরি মারাত্মকভাবে জখম হওয়া রোগীদের আশেপাশের হাসপাতালে পাঠানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার কারণে অনেক মূল্যবান জীবন জীবন বাঁচানো সম্ভব হচ্ছেনা।
উপরোক্ত ঘটনা বিবেচনা করে এই জোনে নিম্নোক্ত সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করা হচ্ছেঃ
ক) এ্যাম্বুলেন্স- ৫টি।
খ) বালাত এলাকায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা সংবলিত একটু ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল তৈরি করতে হবে।
গ) যুদ্ধক্ষেত্রের আশেপাশে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার জন্য ইউনিট গঠন করতে হবে- ১৫টি।
বাংলাদেশ সরকার থেকে অনুমোদন আসার আগ পর্যন্ত উপ-মেডিক্যাল কমিটিকে উপরোক্ত সমস্যাগুলো পর্যবেক্ষণ করতে অনুরোধ করা হল।
১৩। অপর্যাপ্ত পরিমাণ আর্মি অফিসারের কারণে প্রতিটা সাব-সেক্টরে কর্মক্ষমতা মারাত্বকভাবে ব্যহত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারকে অনতিবিলম্বে উপযুক্ত পরিমাণে কর্মকর্তা পাঠানোর অনুরোধ করা হল।
১৪। জোনাল কাউন্সিলের প্রতি সদস্য অগ্রগমন ও মিটিং হওয়ার পরের দিন নির্ধারিত দৈনিক ১৫ রুপি করে এবং জোনের ভিতর চলাচলের খরচ হিসেবে ভাতা পাবেন।
১৫। জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং জনাব দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরী (এমএনএ)কে বাংলাদেশ সরকারের সাথে জোনের সকল সমস্যা নিয়ে আলোচনা এবং তা সমাধান করতে অনুরোধ করা হল।
১৬। উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেয়া এবং তাদের জীবিকার জন্য কোন ভাতার বিধান না থাকায় এই জোনের সরকারী কর্মকর্তা এবং শিক্ষকগণ কঠিন সময় অতিবাহিত করছেন। যেহেতু তাদেরকে অন্য জোনের সাথে যোগাযোগও রক্ষা করতে হয়, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ করা হচ্ছে যেন তাদের বিষয়টা সহানুভূতি সহকারে দেখা হয়।
১৭। মিটিং এর সিদ্ধান্তসমূহের কপি সংশ্লিষ্ট জায়গায় প্রচারিত হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

এসডি/- এসডি/-

(এস এইচ চৌধুরী) (দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরী)
জোনাল প্রশাসনিক অফিসার এমএনএ
এবং প্রেসিডেন্ট
সদস্য সচিব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!