You dont have javascript enabled! Please enable it!

জীবনচিত্র        নামঃ ডা. নওশের আলী

Dr. Nowsher Ali

ডাকনামঃ নওশের

পিতার নামঃ মৃত আলহাজ বাহার উদ্দিন শেখ

পিতার পেশাঃ কাপড়ের ব্যবসা

মাতার নামঃ মৃত মোছা. নুরজাহান শেখ

ভাইবোনের সংখ্যাঃ ছয় ভাই ও এক বোন; নিজক্ৰম-তৃতীয়

ধর্মঃ  ইসলাম

স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম, আরাম বাড়িয়া, ডাকঘর-বাপাড়ি,

উপজেলা-ঈশ্বরদী, জেলা-পাবনা

 

শহীদ ডা. নওশের আলী

 

নিহত/নিখোঁজ হওয়ার সময় বর্তমান ঠিকানাঃ গ্রাম-বলিহার, ইউনিয়ন-মনিগ্রাম, ডাকঘর-মনিগ্রাম, উপজেলা-বাঘা, জেলা-রাজশাহী

জন্মতারিখঃ ০২-০৮-১৯৩০

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ

ম্যাট্রিকঃ প্রথম বিভাগ, ১৯৪৬, রাজশাহী গভ. স্কুল, রাজশাহী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী

আইএসসিঃ প্রথম বিভাগ, ১৯৪৮, ঢাকা কলেজ

এমবিবিএসঃ ১৯৫৩, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো পুরষ্কারঃ স্কলারশিপ-ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত

শখঃ খেলাধুলা, ডাকটিকিট-মুদ্রা সংগ্রহ ইত্যাদি

চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ে স্বরচিত গ্রন্থ। চক্ষু চিকিৎসা ও চক্ষের যত্নের ওপর একটি বই লেখার কাজ শুরু করেছিলেন নিখোঁজ হওয়ার আগে

সমাজসেবাঃ গরিব মানুষের বিনা পয়সায় চিকিৎসাসেবা প্রদান

রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাঃ

সাধারণ সম্পাদকঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (স্থানীয়), ১৯৪৫

সহ-সভাপতিঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (স্থানীয়), ১৯৫৪

চাকরির বর্ণনাঃ

মেডিকেল অফিসারঃ সরকারি পিআইএ, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত

মেডিকেল অফিসারঃ সরকারি ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত

মেডিকেল অফিসারঃ সরকারি নর্থ বেঙ্গল পেপার মিল, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত

মেডিকেল অফিসারঃ বেসরকারি আলহাজ টেকস্টাইল মিল, ঈশ্বরদী, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত

মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্টতাঃ

সশস্ত্ৰ মুক্তিযোদ্ধা, ৯ নম্বর সেক্টর, বাঘা, চারঘাট আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিতেন। চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রের অবস্থান-বলিহার, মনিগ্রাম, হাজী আ. মজিদের বাসা, বাঘা ও চারঘাট থানা সমগ্ৰ

হত্যাকারীর পরিচয়ঃ

দীন মোহাম্মদ(বিহারী) ও স্থানীয় রাজাকারবাহিনী

নিহত/নিখোঁজ হওয়ার তারিখঃ ১৫ এপ্রিল ১৯৭১

মরদেহঃ পাওয়া যায়নি

স্মৃতিফলক/স্মৃতিসৌধঃ নেই

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরস্কারঃ পাননি

স্ত্রীর নামঃ মোছা. শামছুন নাহার

বিয়েঃ ১৬-৬-১৯৪৯

সন্তান-সন্ততিঃ ছয়জন, তিন পুত্র, তিন কন্যা

ডা. মো. শফিক আহমেদঃ এমবিবিএস, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, আমেরিকায় কর্মরত

মো. শাহিন আহমেদঃ সিএ, আমেরিকায় কর্মরত

মোছা. ডেইজি আহমেদঃ এসএসসি, আমেরিকায় কর্মরত

মোছা. মুন্নি আহমেদঃ এমএসসি, আমেরিকায় কর্মরত

মোছা. ছাবিনা আহমেদঃ এমএসসি, আমেরিকায় কর্মরত

মোছা. তৌহিদ আহমেদঃ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, আমেরিকায় কর্মরত

তথ্য প্রদানকারী

মো. ইউনুছ আলী

শহীদ চিকিৎসক ভাই

আরামবাড়িয়া, পৌ,-বানাড়িয়া

থানা-ঈশ্বরদী, জেলা-পাবনা।

ডা. এম মহিউদ্দিন খান

শহীদ চিকিৎসকের সহপাঠী ও রুমমেট

প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার, সিরাজগঞ্জ

সদর, সিরাজগঞ্জ                     মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ১৬৭

আমার চাচা

শহীদ ডা. নওশের আলী

মাসুদ রানা

 

শহীদ ডা. নওশের আলী মুক্তিযুদ্ধের জন্য সে সময় ইন্ডিয়া থেকে যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে আসেন। কিন্তু ফেরত এসে যুদ্ধাহতদের চিকিৎসাসেবা দিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সে সময় সেটাই ছিল অনেক বড় কাজ। কারণ তখন পূর্ব পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে তেমন কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছিলেন না। শুধু যুদ্ধাহত নয়, সে সময় রাজশাহীর বাঘা চারঘাটের আপামর জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা বলতে গেলে তিনি একাই দিয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার আব্বা ইউনুস আলী তার ভাই ডা. নওশেরসহ একান্নাবর্তী পরিবার হিসেবে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার বিমানবন্দরের কাছাকাছি আড়মবাড়িয়ায় থাকতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাক সেনাবাহিনী আরিচাঘাট পার হয়ে রাজশাহী বিভাগে ঢুকে পড়ে। সমগ্ৰ উত্তরাঞ্চলে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন বসতভিটা ছেড়ে গ্রামের দিকে চলে যেতে শুরু করে। আব্বা-চাচারাও আড়মবাড়িয়া ছেড়ে রাজশাহী জেলার বাঘা থানার বলিয়ার গ্রামে আমার আপন ফুফু আমেনা খাতুনের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তবুও শেষ রক্ষা হলো না। ঐ বাড়ি থেকেই অবাঙালি দীন মোহাম্মদ ও রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা তাকে ধরে নিয়ে যায়। একই সাথে ওখান থেকে আমার দূরসম্পর্কের ফুপা পুলিশ কমিশনার দিদার রসুল, রাইস চেয়ারম্যান এবং জনৈক হিন্দু ভদ্রলোককেও ধরে নিয়ে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকসেনারা ক্যাম্প করেছিল। সেখানেই ঐ চারজনকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখান থেকে একমাত্র দিদার রসুলই জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন ওখান থেকে চোখ বেঁধে তাদের বিভিন্ন দিকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর আর বাকিদের কোনো খবর আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক খোঁজ করা হয়েছে, এমনকি পাকিস্তানের করাচিতেও তারা যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

ডা. নওশের আলীকে হত্যা করার কারণ তিনি সাধারণ মানুষদের মুক্তিকামী

১৬৮ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

শহীদ ডা. নওশের আলী

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ১৬৯

শহীদ ডা. নওশের আলী

করে তুলতে উৎসাহ দিতেন। বাঘা চারঘাট থানায় তখনও মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা জোরেশোরে ছিল না। ডা. নওশের আলী সেখানকার মানুষদের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। সেখানকার রাজাকার ও অবাঙালিদের কাছে সে তথ্য অজানা ছিল না। তাই তারা ডা. নওশেরকে হত্যার প্রয়োজন মনে করে।

ডা. নওশের আলী ছিলেন সুদৰ্শন। ছিলেন সত্যবাদী, সৎ, নির্ভিক ও মানবদরদি। আমরা পরিবারের সদস্যরা তাঁকে একজন বড়মাপের মানুষ হিসেবেই শ্রদ্ধা করি।

চিকিৎসক অর্থ যদি সেবক হয় বা চিকিৎসকের ধর্ম যদি পরোপকার হয় তাহলে সেটা সম্পূর্ণ প্রযোজ্য হয় ডা. নওশের আলীর ক্ষেত্রে। এলাকাবাসীর মনে জনদরদি চিকিৎসক হিসেবে ডা. নওশের আজো স্মরণীয় রয়ে গেছেন।

 

প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্রঃ

 

ক.  মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা; তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; প্রকাশকালঃ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২।

খ.  মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস; সম্পাদনাঃ আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন; প্রকাশনাঃ সাহিত্য প্রকাশ; প্রথম খন্ড।

 

১৭০ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

Reference:  মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!