You dont have javascript enabled! Please enable it!

জীবনচিত্র      নামঃ ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্র এন্দ

Dr. Digendra Chandra Endow,

পিতার নামঃ বরদা কিংকর এন্দ

পিতার পেশাঃ জমিদার (বিএসসি, প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা)

মাতার নামঃ ত্রিপুরা সুন্দরী এন্দ

ধর্মঃ সনাতন হিন্দু

স্থায়ী ঠিকানাঃ মির্জা জাঙ্গাল/ওয়ার্ড নং-১৩, ডাকঘর, উপজেলা-সিলেট সদর, জেলা-সিলেট

শহীদ ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্র এন্দ

 

নিহত হওয়ার সময় ঠিকানাঃ ঐ

জন্মঃ ১ মে, ১৯০৫

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ

ম্যাট্রিকঃ প্রথম বিভাগ, ১৯২০, শিলচর স্কুল, শিলচর, আসাম, ভারত

আইএসসিঃ প্রথম বিভাগ, ১৯২২, প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা, ভারত

বিএসসিঃ প্রথম বিভাগ, ১৯২৪, প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা, ভারত

এমবিঃ স্বর্ণপদকসহ উত্তীর্ণ, ১৯২৮-২৯, কলকাতা মেডিকেল কলেজ, কলকাতা, ভারত  

শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতিস্বরূপ পুরষ্কারঃ স্বর্ণপদক; কলকাতা মেডিকেল কলেজ, ১৯২৮-২৯

শখঃ গান-বাজনা

চাকরির বর্ণনাঃ

সিলেট মেডিকেল স্কুলঃ অধ্যাপক, মেডিকেল এথিকসঃ ১৯৩৮

সিলেট মিউনিসিপ্যালিটিঃ মেডিকেল অফিসার

হত্যাকারীর পরিচয়ঃ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী

নিহত হওয়ার তারিখঃ ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১

মরদেহঃ

প্রাপ্তি স্থানঃ নিজ বাসায়

প্রাপ্তি তারিখঃ ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১

কবরস্থানঃ নিজ বাসার ভেতর সমাধিস্থ

স্মৃতিফলক/স্মৃতিসৌধঃ নেই

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরস্কারঃ পাননি

স্ত্রীর নামঃ সুনীতি বালা এন্দ

সন্তান-সন্ততিঃ নয়জনঃ পুত্র তিনজন, কন্যা ছয়জন

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নিকটাত্মীয়ঃ শহীদ ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্র এন্দের স্ত্রী, এক পুত্র, কন্যা, এক পুত্রবধু, এক পৌত্র, এক পৌত্রী এবং বেয়াইসহ মোট আটজন-

সুনীতি বালা এন্দ(স্ত্রী)

দিব্যেন্দু এন্দ(জ্যেষ্ঠ পুত্র)

শিখা এন্দ(কন্যা)

শিবানী এন্দ(কন্যা)

অপু এন্দ(পৌত্র)(দিব্যেন্দু এন্দর পুত্র)

পম্পা এন্দ (পৌত্রী)(দিব্যেন্দু এন্দর কন্যা)

খনা এন্দ(পত্রবধু) (দিব্যেন্দু এন্দর স্ত্রী)

গোপেশ দাস(বেয়াই)(দিব্যেন্দু এন্দর শ্বশুর)  

 

তথ্য প্রদানকারী

এন্দ টনি প্রতিক

শহীদ চিকিৎসকের পৌত্রী

৪০, মনিপুরী রাজবাড়ী, মির্জা

সিলেট

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ১৬৩

আমার ঠাকুরদা

শহীদ ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্র এন্দ

প্রতীক এন্দ টনি

 

বরদা কিংকর এন্দর সর্বকনিষ্ঠ পুত্র ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্র এন্দ ১৯০৫ সালে আসামের শিলচর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ডা. দিগেন্দ্রর বড়দা হিরেন্দ্র চন্দ্র এন্দ ব্রিটিশ সেনাবাহিনীন সদস্য ছিলেন এবং তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণরত অবস্থায় মিসরে নিহত হয়েছিলেন। ডা. দিগেন্দ্ৰ চন্দ্র এন্দ শিলচর থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইএসসি এবং বিএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্বর্ণপদক পেয়ে এমবি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সম্ভবত ১৯৩৮-৩৯ সালে সিলেট পৌরসভার মেডিকেল অফিসার এবং সিলেট মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক হিসেবে ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্ৰ এন্দের কর্মজীবন শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি অবসর জীবনযাপন করছিলেন।

২৫ মার্চ ১৯৭১-এর মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস ডা. এন্দ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পূর্বমূহুর্তে তিনি সপরিবারে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। ঐদিন সকাল ৯ ঘটিকার দিকে ডা. এন্দ তাঁর পুরো পরিবার এবং বন্ধুবর তাঁর বড় ছেলের শ্বশুর প্রকৌশলী গোপেশ দাসকে নিয়ে রেডিওতে খবর শুনছিলেন। ঐ সময় কোথা থেকে যেন একটি মর্টার শেল নিক্ষিপ্ত হয় ডা. এন্দের বাসায়। ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় বাসা। শেলের প্রচণ্ড আঘাতে সাথে সাথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্র এন্দ, তার স্ত্রী সুনীতি বালা এন্দ এবং তাদের আত্মীয় পাঁচগাঁওয়ের প্রকৌশলী গোপেশ দাস। কম-বেশি আহত হন পরিবারের সব সদস্যআহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে হাসপাতালে প্রাণত্যাগ করেন তিনজন। এরা হলেন-ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্র এন্দর জ্যেষ্ঠপুত্র দিব্যেন্দু এন্দ, কন্যা শিখা এন্দ এবং দিব্যেন্দু এন্দর পুত্র অপু এন্দ। শিখা এন্দ সিলেট মহিলা কলেজের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন। তিন দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে প্রাণত্যাগ করেন ডা. দিগেন্দ্রর আরেক কন্যা শিবানী এন্দ এবং দিব্যেন্দু এন্দর সাত মাসের শিশুকন্যা পম্পী এন্দ। শিবানী

১৬৪ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

শহীদ ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্র এন্দ

 

এন্দ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। সাতদিন পর ইহলোক ছেড়ে চলে যান দিব্যেন্দু এন্দর স্ত্রী খনা এন্দ। ডা. দিবেন্দ্র এন্দর মেজো ছেলে পার্থ সখা এন্দ গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন; তাঁর বাম হাত চিরদিনের জন্য অকেজো হয়ে যায়;  তিনি সাত-আট মাস সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী থাকেন। ১৯৯১ সালে মৃত্যুবরণের পূর্ব পর্যন্তও তিনি স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরে পাননিঃ তার স্ত্রী গীতা এন্দও আহত হয়েছিলেনআরো আহত হয়েছিলেন ডা. দিগেন্দ্রর ছোট ছেলে সাখী এন্দ; তাঁর পায়ে জখম হয়েছিল।

অর্থাৎ মর্টার শেলের একই আঘাতে ডা. দিগেন্দ্র চন্দ্র এন্দ, তাঁর স্ত্রী, এক পুত্র, দুই কন্যা, এক পুত্রবধূ, দুই শিশু দৌহিত্র এবং আরো একজন আত্মীয়সহ শহীদ হন। আমাদের এন্দ পরিবার একই সাথে হারালো নয়জনকে।

সমগ্র পরিবারের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী সে ঝড়ে বেঁচে থাকা স্বজনরা আজও সে দুর্ঘটনা স্মরণে আঁতকে উঠি।

প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্রঃ

ক. সিলেটে গণহত্যা, লেখকঃ তাজুল মোহাম্মদ, প্রকাশনাঃ সাহিত্য প্রকাশ; প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯, পৃ. ১১।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ১৬৫

Reference:  মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!