You dont have javascript enabled! Please enable it!
                                   শিরোনাম                             সূত্র        তারিখ
প্রবাসী বাঙালীদের প্রতি আমেরিকাস্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগের বক্তব্য ইস্ট পাকিস্তান লীগের দলিলপত্র ২৬ এপ্রিল, ১৯৭১

এপ্রিল ২৬,-১৯৭১
বিজ্ঞপ্তি নং-২

আমাদের সরকারের সাথে বাংলাদেশে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে এবং আমরা নিশ্চিত হবার জন্য খোঁজ সম্পন্ন করার বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছি।আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ,জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ, ইচ্ছা পোষণ করেন বাঙালি সম্প্রদায়কে বিদেশে সংগ্রামের দুটি দিকে মনোযোগী হউয়ার, আক্রমণকারীদের বিপক্ষে;অর্থ উত্তোলন এবং কূটনৈতিক চাপ।
অর্থ উত্তোলনঃ প্রধান মন্ত্রী বিদেশে উত্তোলিত অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতে চেয়েছেন।এই বিষয়গুলোর মধ্যে কিছু বিষয় বর্তমানে প্রকাশের প্রয়োজন নেই।অন্য বিষয়গুলো হল ঔষুধ সরবরাহ , বস্ত্রের কিছু বিষয় ইত্যাদি । এই অর্থ আরো ব্যাবহৃত হত বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক দিককে সাহায্য করতে।
দুটি ভিন্ন উদ্দেশ্যে অর্থ উত্তোলন করা উচিত ছিল। বাংলাদেশের আমেরিকান বন্ধুদের দ্বারা অর্থ উত্তোলন এবং ত্রাণ সরবরাহের জন্য বিভিন্ন গির্জা প্রতিষ্ঠান কে পরিষ্কাররুপে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা উচিত।
আমরা যতদূর ধারনা করি যে আক্রমণকারী পাকিস্তানী সৈন্য ২০০০ গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছিলো , ১০ লাখ মানুষকে বাস্তুহারা করেছিলো। নিরাপত্তা যুক্ত আশ্রয়ের জন্য পাচ লাখ মানুষ রিফিউজি হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিল। আমাদের ভারতে রিফিউজি মানুষদের এবং বাংলাদেশে বাস্তুহারা মানুষদের উভয়কেই সাহায্য করতে হবে। বাংলাদেশের বাস্তুহারা মানুষদের সাহায্যের জন্য আমাদের বন্দোবস্তের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং অপর একটি বিজ্ঞপ্তিতে আপনাদের অবগত করানো হবে।
বাংলাদেশ সরকারের সাহায্যের জন্য অর্থ উত্তোলন বাংলাদেশ ফান্ড নামে জমা করা উচিত ছিল (যেমনটা বিজ্ঞপ্তি নং১ এ অবগত করা হয়েছিলো)। উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশের প্রতিনিধির নিকট সরাসরি ব্যাক্তিগত দানগুলো করা যাবে। এই প্রতিনিধি পরবর্তী ২ সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। বাংলাদেশ ফান্ডের জন্য আমাদের বাঙ্গালিদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ সহযোগিতা আহবান করতে হবে। আমাদের ভাই ও বোনেরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। কমপক্ষে এতটুক আমরা করতে পারি। আমাদের কিছু আরাম স্বাচ্ছন্দ ত্যাগ করে তাদের সাথে না হয় একটু কষ্ট করলাম।
কূটনৈতিক প্রচারণাঃ কলকাতায় জনাব হোসেইন আলির ঘোষণা আমাদের কূটনৈতিক প্রচারণার উন্নতির জন্য দারুন ফলপ্রসূ হয়েছে। ‘তাঁর ঠিকানা নিচে দেওয়া হলঃদয়াকরে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাকে লিখবেন না। বাংলাদেশের প্রধান কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্বে থাকায় তারা খুব ই ব্যাস্ত। যাই হোক একটি অভিনন্দন পত্র জনাব আলি এবং তাঁর সহকর্মীদের অবশ্যই অনুপ্রেরণা যোগাবে ।
টেলিগ্রাফ ঠিকানাটি বাংলাদেশ.কলকাতা ।

—————————————————————————————————————————————–*জনাব হোসেইন আলি
ভারতস্থ বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি
বাংলাদেশ মিশন
৯ সার্কাস এভিনিউ
কলকাতা-১৭,ভারত।

আশা রাখছি আমাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বিচারপতি আবু সায়ীদ চৌধুরী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জাতিসংঘের পূর্বে নিউইয়র্ক আসবেন। খুব শিঘ্রই তাঁদের এখানে আসার সঠিক তারিখ জানা যাবে। আমরা একটা বড় পরিসরকে ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দিব। আমরা আশা করি সেই বড় পরিসর ছোট ছোট গ্রুপ গুলোকে জানিয়ে দিবে। বিচারপতি এ.এস চৌধুরীকে স্বাগতম এবং সহযোগিতা করতে একটি বড় জনসমাগম আশা করা হচ্ছে । তাঁর নিউইয়র্ক পরিদর্শনের সময় প্রত্যেক দল থেকেই কমপক্ষে একজন পাঠানো উচিত।
আমরা প্রতিনিয়ত সিনেটর এবং কংগ্রেস ম্যান দের চিঠি লিখছি । আমেরিকানদের চিঠি এক্ষেত্রে বেশি ফলদায়ক । দয়াকরে জনমতগঠনের প্রচার বন্ধ করবেন না।
বাংলাদেশের খবরঃ বাংলাদেশ সরকারের লোকদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা নিম্নোক্ত উন্নতির খবর জেনেছিঃ

ক) ঢাকার বাইরের সকল বেসামরিক কর্মচারী মুক্তিফৌজে যোগদান করেছে এবং অনেক জরুরী অবস্থায় ডেপুটি কমিশনার এবং এসডিও রা প্রতিরোধ আন্দোলন চালিয়েছে ।ঢাকার বাইরে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের সরকারী কর্মচারী বাংলাদেশ সরকারে যোগ দিয়েছে ।ঢাকার সরকারী কার্যালয়ের প্রায় সকল ২য়,৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী তাদের নিজ গ্রামে এবং শহরে চলে গিয়েছে এবং মুক্তিফৌজে যোগদান করেছে।ঢাকার বাকি কর্মকর্তা দের রক্ষীবাহিনী দ্বারা তাদের অফিস থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ।এটি সশস্ত্র আক্রমণকারীদের জন্য প্রয়োজন যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রত্যেকটা সুযোগে মানুষেরা খুব দ্রুত এবং সাবধানতার সাথে ঢাকার বাইরে চলে যাচ্ছে,এর কারন শহরে তারা এবং তাদের সম্পদের সম্পূর্ণ অনিরাপত্তা। মিরপুর এবং মোহাম্মদপুরের বিহারীরা ধানমণ্ডির বেশির ভাগ বাড়িই দখল করে নিয়েছে এবং বিনা বাঁধায় লুট করে চলছে। “মুসলিম” বিহারীরা ঢাকা এবং অন্যান্য জায়গায়(সৈয়দপুর, লালমনিরহাট ইত্যাদি ) বন্দুক বিতরণ করেছে এবং স্থানীয় লোকদের বিপক্ষে লুটতারাজের উদ্দেশ্যে দল গঠন করেছে। অন্যান্য অবাঙালিরা , যেমন গারো এবং সাঁওতাল , পশ্চিম পাকিস্তানি আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। বেশিরভাগ উপজাতি জনগণই খ্রিষ্টান এবং,হিন্দুদের মত তারাও ধরা পড়া মাত্রই পশ্চিম পাকিস্তানি দ্বারা হত্যা হবার মত বিপদে আছে।
খ) অনেক লোকই বাংলাদেশের যুদ্ধে সাহায্যের জন্য যোগদান করেছে। দুর্ভাগ্যবশত তাদের বেশিরভাগেরই এ ব্যাপারে দক্ষতা নেই যেটা অতীব প্রয়োজনীয় । মন্ত্রীপরিষদ আমাদের দূত কে বলেছেন তাদের কি কি প্রয়োজন –
i) রেডিও/তড়িৎ প্রকৌশলী এবং মিস্ত্রী
ii) ইউওটিসি/সেনাবিহিনী/পুলিশ ট্রেনিং আছে এমন ব্যাক্তি ,
iii) সব ধরনের বেসামরিক কর্মচারী
iv) যন্ত্র প্রকৌশলী এবং মিস্ত্রী
v) চিকিৎসক এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেবিকা
বাংলাদেশে যে কেও কাজ করতে ইচ্ছুক হলে বাংলাদেশ মিশন,কলকাতার সাথে যোগাযোগ করা উচিত, যতক্ষণ পর্যন্ত না যুক্তরাষ্ট্রেও একটি মিশন খোলা হয় ।।
গ) বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগরে বসে , যেটা কোন নির্দিষ্ট জায়গায় নয় । মুজিবনগর যে কোন জায়গায় মন্ত্রীপরিষদ সাক্ষাত করে ।।এটি ছিল সঠিক স্থানে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর নাপাম-বোম্বিং রোধ করার জন্য।যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা বিমানধ্বংসী সক্ষমতা অর্জন করেছি রাজধানী অস্থিতিশীল রাখতে হবে । যাই হোক , যদিও বর্তমানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশের বেশির ভাগ জায়গা দখলে রাখতে অক্ষম।

তারা ১০০০ কিংবা তার ও বেশি অস্ত্রসজ্জিত গাড়ি এবং ট্যাঙ্ক নিয়ে চলাচল করছে ।এছাড়া অন্যদিকে সারি সারি গ্রাম পুড়ে গেছে ,শহরগুলো ক্ষুদ্র কামান এবং বোমা বর্ষণ, কামানের গোলাবর্ষণ এবং নাপাম বোমায় ছেয়ে গেছে । লুটেরার দল সবকিছু ধ্বংস করে অথবা লুট করে। যাই হোক , তারা আর চালিয়ে যেতে পারছে না। উদাহরণস্বরূপ তারা ঈশ্বরদী থেকে কুষ্টিয়া,চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুরের দিকে অগ্রসর হয়েছিলো। কিন্তু তারা এখন ভেড়ামারা এসে থেমে গিয়েছে।তাদের সৈন্য পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য সমস্যা হচ্ছে এবং তারা কামানবাহিনী কিংবা বিমান সহযোগিতা ছাড়া অভিযান চালাতে ভয় পায়। পাকিস্তানি সৈন্যদলের শক্তি মুক্তি ফৌজের কাছে বিধ্বস্ত হতে বাধ্য হচ্ছে এবং এটি তাদের যুদ্ধকৌশল বড় আকারে কিন্তু ক্ষণস্থায়ী শক্তিতে পরিবর্তন করাচ্ছে।মুক্তিফৌজরাও তাদের রণকৌশল পরিবর্তন করেছে । তারা প্রথম দিকে গতানুগতিকভাবেই বাঁধা দিয়েছিলো কিন্তু তাদের বর্ম সহ সাঁজোয়া রণতরী,বড় কামান এবং বিমান বাহিনী না থাকায় বেশি ক্ষতি হচ্ছিল। তারা এখন নিজেদের যুদ্ধ পদ্ধতিকে ভালো সাফল্যের সাথে গেরিলা পদ্ধতির যুদ্ধে পরিবর্তন করেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় সরবরাহের জায়গা বাজে ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কোথাও ট্রেন চলাচল করছে না।অচল হয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর।বর্ষার আগমনের শুরুতে এবং পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা পতন , সাথে যুক্ত হবে বৃহৎ মুক্তিফৌজের ট্রেনিং এবং অস্ত্রশস্ত্র , পরবর্তী কিছু মাসের মধ্যেই আমাদের বিপরীত সামরিক অবস্থা লক্ষ করা উচিত হবে।

জয় বাংলা ! 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!