You dont have javascript enabled! Please enable it!
                শিরোনাম                সূত্র                 তারিখ
    “বাংলাদেশঃউদ্দেশ্য ও লক্ষ্য”        পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়               ——– ১৯৭১

বাংলাদেশ
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সমুহ
বাংলাদেশ হচ্ছে গঙ্গা অববাহিকার সর্বনিম্ন নদী তীরবর্তী ব-দ্বীপ।আগে এটি পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ নামে পরিচিত ছিল। এই দেশ, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখ থেকে নিজেকে স্বাধীন সার্বভৌম জাতি এবং দেশ হিসেবে ঘোষণা করে।
এই দেশে মুসলিম,হিন্দু,বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সহ সাড়ে সাত কোটি মানুষ রয়েছেন। কাজে অমিত সম্ভাবনাময়য় এই সবুজ দেশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর।এই দেশে সহজলভ্য জনশক্তি ও শ্রমশক্তি রয়েছে।শিল্পসংক্রান্ত সম্ভাবনাও উজ্জ্বল।এই দেশের জনগণ গনতান্ত্রিক,ধর্ম ভীরু,সৎ সাধারণ প্রকৃতির এবং প্রাচ্যের সকল গুণ তাদের মধ্যে বিদ্যমান।
বাংলাদেশের আয়তন ৫৫,১২৬ বর্গ মাইল এবং পশ্চিম,উত্তর এবং পূর্বে রয়েছে ভারত,দক্ষিন-পূর্বে বার্মা এবং দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর।এই দেশটি ধমনীসদৃশ ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য বড় ও ছোট নদী সম্বলিত সমভূমি।যে ভাষা ব্যবহৃত হয় সেটা বাংলা এবং জনগণের আদি উৎসও এক।
দেশ ও জাতি হিসেবে বাংলাদেশের নিম্নেউল্লেখিত উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যসমূহ রয়েছেঃ-
স্বাধীনতা এবং অধিকারসমূহ
১ ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে রাষ্ট্র প্রত্যেক ব্যক্তির জীবন স্বাধীনতা ও সম্পত্তির নিশ্চয়তা দেবে
২ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা দ্বারা কথা বলার মতপ্রকাশের সংগঠনের এবং ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে
৩ ব্যক্তিদ্বারা কৃত সকল অপরাধের বিচার আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আদালতে বিচার যোগ্য।
৪ সংবাদ মাধ্যম স্বাধীন থাকবে
৫ বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকবে।
রাজনীতি
১ এটি একটি গণতান্ত্রিক দেশ যার সরকার সর্বজনীন প্রাপ্তবয়ষ্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত।সরকার সাংসদীয় গণতন্ত্র ভিত্তিক।
২ জনগণ গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন এবং বিভিন্ন দিক থেকে আসা ঐতিহাসিক আক্রমনের মুখে তারা ক্রমাগত ভাবে প্রাচ্যের এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসমূহ বজায় রেখেছে।

অর্থনীতি
১। নবজাত বাংলাদেশের অর্থনীতি হিসেবে অর্থনীতির সমাজতান্ত্রিক ধারাকে নির্বাচন করা হয়েছে। কিছু ব্যক্তির জন্য অতিরিক্ত থাকার আগে অবশ্যই সকলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকতে হবে।
২। ভেতরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই লক্ষে পৌঁছানোর জন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমোন্নিত হওয়ার পথটি অনুসরণ করা হবে। (Evolution through the process of democracy to reach the goal is the path to be followed both within and without.) তার লক্ষ হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতির পরিকল্পিত উন্নয়ন।
৩। সরকারি সিদ্ধান্ত গঠনের ক্ষেত্রে বৃহত্তর উদ্দেশ্য হলো সকল জনগণের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি। তার উদ্দেশ্য হলো একটি মুক্ত সমাজে পূর্ণ কর্মসংস্থান।
৪। বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিমাপের মাধ্যমে সম্পদের সুষম বন্টন হবে।
৫। একচেটিয়া আধিপত্য এবং কার্টেল লোপ করা হবে। প্রধান শিল্পগুলোর সাথে সকল অর্থনৈতিক উৎসগুলোকে জাতীয়করণ করা হবে।
৬। প্রধান বৈদেশিক মূরদা অর্জনকারী পাটকে জাতীয় পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে, এবং এর বাণিজ্যকে জাতীয়করণ করা হবে।
শিল্প
১। বাংলাদেশে শিল্প একটি ভ্রূণ পর্যায়ে রয়েছে এবং ¬¬¬এতে একাধিপত্যবাদের পক্ষপাতিয়া রয়েছে। তবে এই প্রবণতাকে শুধু যে বন্ধ করা হবে তাই নয়, কার্যকরভাবে বদলেও ফেলা হবে।
২। এভাবে মূলধন ও অভোগ্য পণ্যের কার্যকরী বণ্টনের লক্ষে শিল্পায়নকে সাজানো হবে।
৩। দেশের শিল্পাঙ্গনে কুটির শিল্প একটি প্রধান ভূমিকা পালন করবে, এবং বৃহৎ শিল্পগুলোকে পরিপুষ্ট করবে।
৪। শিল্প শ্রমিকরা উৎপাদনের একটি উপাদান হিসেবে বর্গীভুক্ত হবেন।
৫। তাই শিল্পের অংশীদারিত্ব ও মুনাফা শ্রমিকদের মাঝে বন্টন করে দেয়া হবে।

কৃষি
১। কৃষি হচ্ছে দেশীয় অর্থনীতির মেরুদন্ড এবং এমনটাই থাকতে বাধ্য। কৃষি ও কৃষিজ অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যা কিছু সম্ভব তাই করবে সরকার। সরকার কৃষিতে বিজ্ঞানের ব্যবহার বাড়ানোর দিকে ধাবিত হবে।
২। দেশে কোন জমিদারী প্রথা নেই। তবে ভূমি অধিগ্রহণকে যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করতে হবে এবং (and government is posted with the problem.)
৩। যে কৃষকেরা ২৫ বিঘা (৮ একর) পর্যন্ত জমি __ করে আছে, তারা will enjoy land revenue exemption.
৪। সরকারি খাস জমিগুলোকে ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে মুক্তভাবে বণ্টন করে দেয়া হবে।
৫। ‘জমি কৃষকের’- হবে সরকারের মূল কৃষিসম্পর্কীয় নীতির বিষয়বস্তু।

সমাজ
১। জাত, বিশ্বাস এবং ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই আইন ও সমাজের চোখে সমান। সবাই সমানভাবে আইনের সুরক্ষা পাবার অধিকার রাখে।
২। সমাজ একে অন্যের মতের প্রতি পারস্পারিক সহনশীলতা ও সহাবস্থানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ।
৩। সমাজ সার্বজনিন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হওয়া স্থানীয় স্বায়ত্বশাসনের ধারণার আওতায় কার্যক্রমের নানান ভাগে বিভক্ত। (The society is divided into segments of activities within the purview of the concept of local self-government being elected by the people on the basis of universal adult suffrage.)
সংস্কৃতি
১। সংস্কৃতি হলো একটি বাঙালি সংস্কৃতি যা কবি, সাহিত্যিক, লোক গায়ক ও বুদ্ধিজীবীদের সর্বজনীন অবদানগুলোকে রক্ষা করছে।
২। উদার প্রকৃতি জনগণের ওপর প্রচন্ড রকমের প্রভাব তৈরি করে এবং তাদেরকে নদী-নালার প্রবাহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সংগীতের প্রতি অনুরাগী করে তোলে।
বৈদেশিক সম্পর্ক
১। বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক নীতির মূল কথা হলো ‘সকলের প্রতি বন্ধুত্ব এবং কারও প্রতি ঘৃণা নয়’*।
২। বৈদেশিক নীতির উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক পরাজয়, অর্থনৈতিক অপব্যবহার এবং সাংস্কৃতিক আক্রমণের অবসান ঘটানো। End of political subjugation, economic exploitation, and cultural invasion is the objective of the foreign policy.
৩। বাংলাদেশ আলোচনা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পারস্পারিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে। এই লক্ষসমূহ অর্জন ও বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের উদ্ধেশ্যে বৈদেশিক নীতি কার্যকরীভাবে পরিচালনা করা হবে।
৪। বাংলাদেশ সাম্রাজ্যবাদ এবং নব্য-সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও নব্য উপনিবেশবাদ এবং বাকি সকল ধরণের বিদেশী শক্তি যা ছোট দেশগুলোর ওপর তাদের অশুভ প্রভাব স্থাপন করে তার নিন্দা জানায়।
৫। বাংলাদেশ মানব সভ্যতার বাধাহীন উন্নতি ও সমৃদ্ধির লক্ষে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তির পক্ষে অবস্থান করে এবং অবিরতভাবে এর জন্য কাজ করে যাবে।
প্রকাশনা
পররাষ্ট্র বহিপ্রচার বিভাগীয় মন্ত্রনালয় (External Publicity Division Ministry of Foreign Affair)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী
১১ গোরিং স্ট্রীট
লন্ডন ইসি ৩
দয়া করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নিচের বার্তাটি জনাব হিথ এবং জনাব উইলসনের নিকট পৌঁছে দেবেন এবং যুক্ত হবার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে ডেইলি মিররের সম্পাদকের নিকট কপি প্রদান করবেন। বার্তা প্রদানকারীরা সম্মানের সাথে জন পিলগারের ডেইলি মিররে ছাপানো ১৬ জুন তারিখের প্রতিবেদনে এবং একইসাথে সানডে টাইমসের জুন মাসের বারো ও তেরো তারিখের এবং টাইমেস, গারডিয়ান, ডেইলি টেলিগ্রাফ এবং প্রায় সকল বৃটিশ ও বৈশ্বিক পত্রপত্রিকায় ছাপানো প্রতিবেদনগুলোর ওপর আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করে। প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে কিভাবে পাশবিক বাহিনী গণতন্ত্রের দ্বার রুদ্ধ করতে ও বাংলাদেশের পঁচাত্তর লক্ষ আকাঙ্খার সংবরণ করতে জনগণের ওপর হত্যাকান্ড চালাতো। এটি হানাদার বাহিনী হিসেবে বিশ্ব নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলোকে নিদারূণভাবে খর্ব করেছে। এটি অনস্বীকার্য গণহত্যা চালিয়েছে। আজ বাংলাদেশের নারীরা অবমাননাকর গণধর্ষণের সামগ্রী ছাড়া কিছুই না। শিশুদের ওপর ধ্বংস নেমে আসছে। প্রতিদিন হাজার দশেক ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষ ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের পূর্ব-নির্ধারিত পদক্ষেপের দ্বারা দুর্ভিক্ষ অবস্থা প্রকোপিত হয়েছে- পিলগারের হিসাব অনুযায়ী পনেরো মিলিয়ন মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে। এর বেশিও হতে পারে। গোটা জাতিই বিনাশের সম্মুখীন। মানবতা, সভ্যতা ও গণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপের নামে আবেদন করুন, এবং আপনার প্রভাব তৈরি করুন। ছড়িয়ে দিন যেন পাকিস্তান আরও বেশি সামরিক অর্থনৈতিক সাহায্যের জন্য অস্বীকৃত হয়। সসম্ভ্রমে-অনুরোধ যে, আপনি সাম্প্রতিক আমেরিকার পাকিস্তানে অস্ত্র চালান ন্যে দুঃখ প্রকাশ করুন। আপনাকে এখনই কাজ করতে জোর প্রদান করছি এবং বাংলাদেশিদেরকে দ্রুত স্বীকৃতি দিন।
উষ্ণ আন্তরিক শুভেচ্ছাবার্তা শেষ হলো|

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!