শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস কবলিত পূর্বপাকিস্তানের প্রতি পাকিস্তান সরকারের নিদারুন অবহেলা জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে লিখিত চিঠি | আমেরিকাস্থ পাকিস্তান লীগের সভাপতির চিঠি
|
১৯৭০ |
নভেম্বর ২৫, ১৯৭০
মহামহিম ইউ. ট্যান্ট
মহাসচিব, জাতিসংঘ
মাননীয় মহাসচিব,
আমরা যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় বসবাসরত পাকিস্তানিরা পূর্ব-পাকিস্তানের উপকূলবর্তী এলাকার সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের গুরুতর অবস্থা ও বিস্তার লক্ষ্য করেছি যেখানে দশ লক্ষাধিক প্রাণ হারিয়েছে এবং আরো দশ লক্ষাধিক অনাহার, কলেরা, টাইফয়েড,আমাশয়, নিউমোনিয়া, ইত্যাদি কারণে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে। ত্রাণ কার্যক্রমের খাদ্য নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রপতিসহ পশ্চিম পাকিস্তানি আমলাতন্ত্রবাদীদের টানাটানি আবারো প্রমাণ করেছে যে পূর্ব-পাকিস্তানিরা শুধুমাত্র শোষণের স্বীকার হয়ে আসছে। এমনকি পূর্ব-পাকিস্তানিরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানবিক বিবেচনা, তাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা বলবার সুযোগও পায় না তথাকথিত পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে। আমরা বিগত তেইশ বছর যাবৎ একই আচরণ দেখে আসছি। ভারত সরকারের তার রাজ্যের উপর দিয়ে উড়তে দেওয়ার অনুমতি স্বত্বেও তার রাজ্যের উপর দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব-পাকিস্তানে ত্রাণ সহায়তার জন্য কোন বিমান বা বিমানপোত নেওয়া হয়নি। যেহেতু পাকিস্তান সরকার এখনও সমুদ্রপথে কোন বিমানপোত পাঠায়নি, এটা প্রমাণ করে যে পাকিস্তান সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।
ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশ ১৯৪৭ সালে তাদের স্বাধীনতা পেয়েছিলো। ধারণা করা হয়েছিলো পাকিস্তান দুইটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ নিয়ে গঠিত হবে, কিন্তু এটা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। সামরিক-আমলাতান্ত্রিক গোষ্ঠী সবসময়ই পূর্ব-পাকিস্তানিদের মানবাধিকার উপেক্ষা করে এসেছে। ভারত বিভাজনের পর পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পশিচম পাকিস্তানের সামরিক-আমলাতন্ত্রের জটিলতায় বন্দী হয়েছিলো এবং পূর্ব-পাকিস্তানকে শাসন করছিলো ও তার সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে অপসারণ করছিলো।
বিগত তেইশ বছর নিপীড়িত হয়ে, আমরা চাই যে আপনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের নজরে নিন, যাতে পঁচাত্তর মিলিয়ন পূর্ব-পাকিস্তানি তাদের মানবিক অধিকার ফিরে পায় এবং তাদের নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে।
আপনার অনুগত,
কে. এস. আহমেদ
পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা
২৬৬৭ ব্রডওয়ে
নিউ ইয়র্ক, নিউ ইয়র্ক ১০০২৫.