শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনারের প্রতি স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়কের চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১৮ অক্টোবর, ১৯৭১ |
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটির পরিচালনা কমিটি
জয় বাংলা
১১গোরিং স্ট্রিট লন্ডন ই.সি.৩
টেলিফোন: ০১-২৮৩ ৫৫২৬/ ৩৬২৩
১৮ অক্টোবর, ১৯৭১
জনাব হোসেন আলী
হাই কমিশনার
ভারতস্থঃ হাই কমিশনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষে
জনাব আলী,
জনাব আবু ইউসুফ খান যিনি এই চিঠিটি বহন করছেন তিনি সম্প্রতি পাকিস্তান এয়ার ফোর্স (সৌদি আরবের কোথাও সংস্থিত) এর একজন ইঞ্জিনিয়ার, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে অগ্রসর হচ্ছেন। জনাব খানের ভাই মেজর তাহের, যিনি আমাদের বাহিনীর অন্যতম সেক্টর কমান্ডার, জনাব খানকে একটি চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন যে, লন্ডন থেকে কিছু অস্ত্রোপচার যন্ত্র সংগ্রহ করে সেগুলো নিয়ে যেন বাংলাদেশে (মেঘালয়ের কোথাও মূল হাসপাতাল) আসে। জনাব খান চিঠি পাওয়া মাত্রই আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন। আপনাদের নজরে আনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি প্রাপ্তির মাধ্যমে যন্ত্রগুলো সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটির দ্বারা সরবরাহ করাকেই আমরা সঠিক হবে বলে মনে করছি। যেহেতু খুব স্বল্প পরিমাণ অর্থ খরচ হবে, আমরা মনে করি যে, আপনি আনন্দের সাথে আমাদের সিদ্ধান্ত অনুমোদন এবং আমাদের খুব দ্রুত উত্তর পাঠাবেন।
এ প্রসঙ্গে সম্ভবত আপনার চিঠি নং বি – ৫/৪/৭১, ১৩ অক্টোবর ১৯৭১ তারিখে প্রচারিত চিঠিটি পড়ে দেখুন, যেখানে বলা আছে যে, গ্রেট ব্রিটেনের সব অ্যাকশন কমিটি এই বিশেষপরিচালনা কমিটির অধিভুক্ত। আপনার অন্যান্য প্রচারণার মধ্যে থেকেও এই বিশেষ চিঠিটি ব্রিটেনে বাংলা সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি মহান উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে আপনার সরাসরি আবেদন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, যা গুরুতর প্রভাব সৃষ্টি করেছে। সরকার আদেশ দিয়েছে তাদের পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নিকট অর্থ সংগ্রহ করে এবং ব্যাংকে এটি সঞ্চিত রাখতে, যাতে ঠিক সময়ে সরকার তা ব্যবহার করতে পারে। তখন থেকেই আমরা টাকা সংগ্রহ এবং ব্যাংকের মাধ্যমে তা গচ্ছিত রাখছি। আপনাদের এই কর্ম আমাদের বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। অনেক রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর অনেকেই অধৈর্য হয়ে অনেক অ্যাকশন কমিটি, বাঙালি নেতৃত্ব, বিভিন্ন সংস্থার নিকট চিঠি লিখে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ও যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে আমাদের ছেলেদের করুণ পরিস্থিতি ও অপরিমেয় দুঃখকষ্টের অবস্থা স্পষ্টভাবে চিত্রায়িত করেছে এবং আবেদন করছে তাদের জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। যেহেতু সমগ্র বাংলার জনগণ তাদের জন্য ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ এ চাঁদা দিয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে সুতরাং তারা আসলেই চায় যে তাদের টাকা প্রকৃত এবং বাস্তব ফল প্রদান করুক। সুতরাং এখন আমাদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করুন। এখন মুক্তিবাহিনীর অনেক কিছুর প্রয়োজন এবং আপনি আমাদের জনগণের কাছে তা লিখে পাঠাচ্ছেন। নিরীহ মানুষ আমাদের কাছে আসে এবং দোষারোপ করে। তারা বলে আমরা যুদ্ধে লড়াইরত সেনাদের দুর্ভোগের জন্য দায়ী। তারা জিজ্ঞাসা করে যদি টাকা সঠিক অবদানের জন্য কাজে লাগানো না হয় তবে কেন তা দেয়া হয়েছে, কেন আমরা আবার চাঁদা দেবো? আমাদের উপর নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ আসছে। ঠিক সে সময়েই পরিচালনা কমিটি আপনার কাছে তাদের দুর্ভাগ্যপূর্ণ অবস্থা বিবেচনা করার জন্য লিখছে, যখন আপনার সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি ব্রিটেনে জনগণের নিকট প্রকাশিত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ আমাদের নিকট এসে জানতে চায় কেন এখনো ঔষধ, কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র পাঠানো হয়নি। তারা ব্যাখ্যা চায়, সক্রিয়তা চায় এবং জিনিসপত্র পাঠানোর ব্যাপারে আমাদের নীরবতাকে দায়ী করে দাবি জানায় তাদের জন্য আপনার কাছে লিখতে।
আমরা বুঝতে পারি না কেন আমরা অর্থের একটি অংশ ব্যয় করার অনুমতি পাই না, যা আমাদের দ্বারা আপনার জন্য সংগৃহীত। কারণ সত্যি বলতে, সাহায্য করার ক্ষেত্রে আমাদের অক্ষমতা এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তির সাথে আপনার সরাসরি যোগাযোগ পদ্ধতির কারণে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নিকট কমিটি অবহেলিত হয়ে পড়বে এবং সব ব্যবহারিক উদ্দেশ্য অবশেষে উচ্ছনে যাবে। পাকিস্তান হাই কমিশন তাদের দূত পাঠিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে, পরিচালনা কমিটি ক্ষীণ হয়ে আসছে এবং বাংলাদেশ ফান্ডে অর্থ সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। অতএব, এটা সম্ভবত নিছক দেশপ্রেমের অত্যন্ত এক ক্ষ্যাপামি। পৃথক পৃথক সংগঠন বিভিন্ন তহবিল পরিচালনা করবে, অর্থ সংগ্রহ করবে এবং এর জন্য শুধু তারাই দায়ী থাকবে।
আশা করি আমি আপনাকে প্রচুর চাপ এবং অপমানের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছি, যাতে আমরাও নিক্ষিপ্ত হয়েছি।
যাই ঘটুক না কেন আমি জনগণের কাছে ঠিক অনুরূপ একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছি যেখানে মুক্তিবাহিনীর জন্য গরম কাপড় চাওয়া হয়েছে, আশা করি সব উল্লেখ করেছি। আমি নিশ্চিত এতে একটি অসাধারণ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে। আমি শীঘ্রই আবার আপনার কাছে লিখবো। বিনম্র অভিবাদন ও শুভেচ্ছা রইলো।
জয় বাংলা।
আপনার বিশ্বস্ত
(এম এ এইচ ভূঁইয়া)
আহ্বায়ক।