You dont have javascript enabled! Please enable it!

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সমর্থনে সোচ্চার হওয়ার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান লন্ডনস্থ বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটির প্রচারপত্র ৫ মে, ১৯৭১

আজকের বাংলাদেশ!
বাংলাদেশের ভেতরে কী ঘটছে তা জানার কোন উপায় নেই বহির্বিশ্বের। ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার দেশ থেকে সকল বিদেশি সাংবাদিকদের অপসারণ করেছে এবং দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি কূটনীতিবিদদের সঙ্গ অবরোধ করে দিয়েছে এবং বিশ্ববাসীর সঙ্গে সকল ধরণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। রেডক্রসের সহযোগিতা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং সংগঠনের সদস্যদেরকে করাচি বিমানবন্দর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সকল স্থানীয় খবরের প্রতিবেদনসমূহ সেন্সর করা হচ্ছে এবং পত্রিকা মালিকদেরকে অস্ত্রের মুখে সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রতিবেদন লিখার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। সংক্ষেপে, পঞ্চান্ন হাজার বর্গ মাইলের বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে বিশাল এক কেন্দ্রীয় বন্দীশিবিরে, যেখানে নিরস্ত্র ও নিরীহ পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, শহর এবং গ্রামগুলোতে বোমা মেরে পুড়িয়ে ও ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।
সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান আল্লাহর নামে যে সকল বর্বরতা চালাচ্ছে, তা হানদের ইতিহাসকেও হার মানায়, আর এটা হচ্ছে বাঙালিরা ঈশ্বরবিহীন নয় বলে নয়, তারা ইয়াহিয়ার কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছিল বলে। পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘু মানুষের শিল্পসামরিক গোষ্ঠী কর্তৃক বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মানুষদের শোষণ বন্ধ করতে চেয়েছিল তারা। তারা চেয়েছিল যেন ইয়াহিয়া ১৯৭০ এর ডিসেম্বরের নির্বাচনের পূর্বে তার দেয়া প্রতিজ্ঞা অনুসারে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেয়, যার দল আওয়ামি লীগ গত নির্বাচনে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল। কিন্তু ইয়াহিয়া বাংলাদেশের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে প্রস্তুত ছিলেন না, যা কখনই পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ঘটেনি। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকশ্রেণির মতে, বাঙালিদের জন্ম হয়েছে শাসিত হবার জন্য, সমতার ভিত্তিতে শাসন করার জন্য নয়।
এদিকে, পাকিস্তানের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য ইয়াহিয়া হঠাৎ করেই একতরফাভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রয়োজনীয় সমাবেশ স্থগিত করে একটি রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করে। ইয়াহিয়া নিজের তৈরি সংকটের সমাধান করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর বিশিষ্ট অনুসারীদেরকে গ্রেফতার করান, তার ৮০ হাজার সৈন্যকে বাংলাদেশে হানা দিয়ে রাজনীতিবিদ, অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রী, আইনজীবী এবং নারী ও শিশুসহ সকল নিরস্ত্র নাগরিককে হত্যা ও বিকলাঙ্গ করে দেয়ার নির্দেশ দেন।
এ ধরণের মধ্যযুগীয় বর্বরতা সংঘটনের দ্বারা ইয়াহিয়া বিশ্ববিবেককে অসম্মান জানায় এবং জাতির সভ্য সম্প্রদায়ের সাথে আলোচনায় বসার নিজ অধিকার নষ্ট করে। এখনই সময় বিবেকনিষ্ঠ গর্জে ওঠার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধের জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করার।
বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক

ওয়ার্কাস প্রেস
বৃহস্পতিবার, ৬ মে, ১৯৭১।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!