শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
কমিউনিটি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা | বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা সেল | …১৯৭১ |
গোষ্ঠীর উন্নয়ন কর্মসূচির সারমর্ম
এই কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্য আমাদের প্রধান প্রয়োজন হচ্ছে বাংলাদেশে নতুন আন্দোলন শুরু করা। উক্ত আন্দোলনের তত্ত্ব আমাদের মানুষদের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্র পরিকল্পনা, উন্নয়ন এবং প্রশাসনের ভিত্তি হবে।
গ্রামীণ সমাজের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রামবাসীদদের নিজেদের ভেতর থেকেই আসতে হবে। আত্মসচেতনতা, আত্মনিরীক্ষণ এবং স্বনির্ভরতা এই আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি। এটি পুরোপুরিভাবে মানুষের ইচ্ছা এবং স্বতঃস্ফূর্ত ও উদ্যমী অংশগ্রহণের উপর নির্ভর করে।
এই আন্দোলন বৃদ্ধির উপযোগী শর্ত সৃষ্টির জন্য, স্বেচ্ছাসেবকদের একটা গোষ্ঠীকে এর পিছনের দর্শনে অনুপ্রাণিত হওয়া আবশ্যক। অনেক যুবক রয়েছে যারা মুক্তিবাহিনীতে অংশগ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু তাদের সকলকে মুক্তিবাহিনীতে নেওয়া নাও হতে পারে। আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক স্বেচ্ছাসেবকদের উক্ত যুবকদের মধ্য থেকে নিয়োগদান করা হবে। তাদের কাজের গতিপথে তাদের আন্দোলনের দর্শনের (সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ) প্রশিক্ষণের উপর সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে পারে। এই পটভূমিতে সামাজিক কর্মীরা আমাদের মানুষদের প্রেরণা প্রদানের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে। তাদের মূল কাজ হবে একটি আন্দোলন সৃষ্টি করা যা সকল শ্রেণীর গ্রামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করবে, এবং পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে আন্দোলন টিকে থাকে এবং গ্রামবাসীদের তাদের সর্বোচ্চ প্রয়োজনীয়তায় সচেতনতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে নিজেদের দ্বারা চালিয়ে নিতে হবে।
অতীতে দেশের কোনো স্তরেই প্রকৃত অর্থে কোনো গণতন্ত্র ছিল না। স্বৈরচারী ও একনায়ক্তান্ত্রিক কেন্দ্র থাকলে, তার পরিসীমাতে কোন গণতন্ত্র থাকতে পারে না, এর উল্টোটাও সত্য। আশা করা যায় ভবিষ্যতে কেন্দ্র এবং তার পরিসীমাতে গণতন্ত্র থাকবে। এটি একাই আন্দোলনে মানুষদের কার্যকর এবং অর্থপূর্ণ সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে পারে। আন্দোলনের চরিত্র এমন হতে হবে যেন তা মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারে।
সামাজিক কর্মীদের যথাযথ সংখ্যা এলাকা এবং জনসংখ্যার আকার এবং কর্মীদের প্রাপ্যতার উপরেও নির্ভর করে। কর্মীদের অনুগত এবং কর্মচঞ্চল হতে হবে। তাদের মানুষদের সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং গ্রামীণ মানুষদের সাথে প্রাণবন্ত বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে। তাদের আচার, চরিত্র, আচরণ ও মনোভাব দ্বারা তাদের প্রভাব তৈরি করতে হবে যাতে তারা গ্রাম্য সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক ও সাধারণ অপরিহার্য অংশ। দাম্ভিকতা সম্পূর্ণ পরিহার এবং তাদের অংশের বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব আন্দোলনে মানুষদের আকর্ষণ করবে। সামাজিক কর্মীদের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পিত আছে যারা নিজেরা এটি অনুভব করতে পারে। রাজনৈতিক নেতাদের সৃজনশীল ও কার্যকর সমর্থন দরকার যারা মানবজাতির সেবার প্রধান উপায় হিসাবে রাজনীতির দেখাশোনা করবে।
সমাজ উন্নয়ন কর্মসূচি
আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধ। “একটি বাস্তব জীবিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে যেখানে মানুষেরা স্বাধীনতা এবং মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকবে, এবং ন্যায় ও সাম্য চালু থাকবে”, এটাই আওয়ামীলীগের ইশতেহার। আওয়ামীলীগ সকল নাগরিকদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ন্যায় নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ‘একটি বাস্তবসম্মত জীবিত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের একটি ধারা ইশতেহারে অঙ্গীভূত আছে। এর অন্তর্ভুক্ত আছে: সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার, সরাসরি এবং অবাধ নির্বাচন, আইনের দৃষ্টিতে সমতা, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ, ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক শৃঙ্খলা, সংখ্যালঘুদের জন্য পূর্ণ অধিকার এবং নাগরিকত্ব, সংসদীয় সরকার যেখানে আইনসভা সর্বোচ্চ হবে এবং যার প্রতি শাসক দায়ী থাকবেন। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এটি বাস্তবতার দুটি মৌলিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে রূপান্তরিত হয়- স্বাধীনতা ও সমতা।
আওয়ামীলীগ জানে এবং বিশ্বাস করে যে রাজনৈতিক গণতন্ত্রের স্বাধীনতা এবং সমতা দাবিয়ে রাখা যায় যদি না তারা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং সমতা দ্বারা সম্পূর্ণ হয়। স্বাধীনতা, যদি এটি বাস্তবে হতো, অভাব,দারিদ্রতা এবং ক্ষুধা হতে অর্থনৈতিক অবরোধ হতে স্বাধীনতা বোঝায়, এবং এটি অনেক অপরিহার্য যেমন সামরিক একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের অর্থনৈতিক অবরোধ হতে স্বাধীনতা। অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সাধারণ মানুষদের অভাব হতে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার সফলতার জন্য, আওয়ামীলীগ সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আওয়ামীলীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে যে, “অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি সমমাত্রিক শোষণমুক্ত সমাজের সৃষ্টি। লক্ষ্য একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা, যেখানে অর্থনৈতিক অবিচার দূরীভূত হবে, দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি উন্নীত হবে এবং সমাজের সকল স্তরের জনগণের মধ্যে শুধু এমন উন্নতির সুফল বিতরণের জন্য বিধান তৈরি করা হবে”। এই লক্ষ্য উপলব্ধির জন্য ইশতেহারে কিছু নির্দিষ্ট প্রস্তাব রূপায়িত হয়েছে, এগুলো হলো: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একমাত্র বাহন হিসেবে ব্যক্তিগত মুনাফার সঙ্গে বেসরকারী এন্টারপ্রাইজ, যেহেতু মূল উদ্দেশ্যটি কয়েকটি হাতেই সম্পদের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলো কিছু বেসরকারী গোষ্ঠীর হাতেই রেখে দেয়। যেজন্য সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্য বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। জাতীয়তাবাদ এবং সরকারি সেক্টরসমূহের পরিবৃদ্ধি, সমবায় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং নতুন প্রাতিষ্ঠানিক বন্দোবস্তের বিবর্তন দ্বারা একে উলটে দিতে হবে এবং মুছে ফেলতে হবে।
আওয়ামীলীগ এইভাবে নীতি এবং মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এর মূল কাজ হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লব আনয়ন।
গ্রামগুলো, সংখ্যায় যা ৬৫,০০০ এরও বেশি, সঠিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে যেখানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক লক্ষ্যগুলো কর্মে রূপান্তরিত হতে পারবে। এবার বাংলাদেশে সচরাচর বিদ্যমান বৈষয়িক অবস্থার দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করা যাক। বাংলাদেশ একটি গ্রাম্য কৃষিভিত্তিক সমাজ, যার খাদ্য, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি কৃষির উপর নির্ভরশীল। জাতীয় আয়ের ৬৫ শতাংশেরও বেশি কৃষি হতে আগত হয়, এবং শিল্প ক্ষেত্র মোট জাতীয় আয়ের মাত্র ১০ শতাংশ অবদান রাখে। মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫.২ শতাংশ শহর এলাকায় এবং ৯৪.৮ শতাংশ গ্রামে বাস করে। এটি অধিক ঘনত্বের জনসংখ্যার মধ্যে একটি, প্রতি বর্গমাইলে বাস করে ৯২২ মানুষ।
মাথাপিছু আয় মাত্র ৫৬$। এর শিল্পায়ন অপূর্ণাঙ্গ, এর নগদীকরণ সীমাবদ্ধ, এবং এর আর্থিক অবকাঠামো অপর্যাপ্ত। তার উপর সেখানে খাদ্যের একটি অর্থনৈতিক ঘাটতি আছে, যা ১৯৭০ সালের সাইক্লোন দ্বারা এবং বর্তমানের বাংলাদেশের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসক কর্তৃক তুলনাহীন নৃশ্নগসতা দ্বারা প্রকট আকার ধারণ করেছে ।
প্রকৃত বাংলাদেশ গ্রামের মধ্যেই নিহিত, ৬৫,০০০ এরও বেশি গ্রাম। আমাদের জনগণ কৃষিতে সরকারের অপরাধমূলক অবহেলার কারণে মানুষের অকল্পনীয় দারিদ্র এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতির অনুসরণ, যাতে সম্প্রদায়ের ২২ পরিবারের সদস্যদের ক্রয়ক্ষমতা রূপান্তরের প্রভাব রয়েছে, এর জন্য নিন্দিত। আমাদের ভূমি পৃথিবীর অন্যতম উর্বর ভূমি এবং তারপরেও আমাদের মানুষ দরিদ্রতম। কিন্তু বর্তমানের স্বাধীনতা সংগ্রাম যা মহৎ সামাজিক বিপ্লবের সাথেও জড়িত তা আমাদের মানুষদের অভূতপূর্ব মাত্রায় জাগ্রত করেছে। মানুষেরা আজ পূর্ণসতর্ক। তারা আর নীতির পরোক্ষ কোনো বিষয় নয় বরং এর মূল চালিকাশক্তি। স্থূল উদ্বিগ্ন অনুসন্ধান “কারা গরীব?” থেকে মৌলিক প্রশ্ন “কেন তারা গরীব?”-এ সরানো হয়েছে। এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তর থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না। দারিদ্রের সমস্যা কোনো শিল্প প্রকৃতি এবং এর উদ্দামতার সমস্যা নয়, বরং অর্থনৈতিক এবং শিল্প-নীতি ও সংগঠনের সমস্যা। প্রথমত বিষয়টিকে তার উৎস হিসেবে মোকাবেলা করতে হবে, এবং দ্বিতীয়ত মোকাবেলা করতে হবে এর প্রতিভাসে।
ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রামগুলো গণতান্ত্রিক নীতির ভিত্তির উপর সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার প্রভাব স্থাপনের জন্য সঠিক কেন্দ্র। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লব আনয়নের কাজ গ্রামেই শুরু করতে হবে যেখানে ৯৪.৮ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস করে। সমাজ উন্নয়ন এবং জাতীয় সম্প্রসারণ প্রকল্প গ্রামের মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তর আনার কার্যকর মাধ্যম। আমাদের জীবনের উক্ত স্তরে সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান তাৎপর্য রয়েছে, যা গ্রাম্য মানুষদের কল্যাণ ঘনিষ্ঠভাবে বহন করে।
সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর তিনটি দৃষ্টিকোণ রয়েছে। প্রথম, সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এবং জাতীয় সম্প্রসারণ সেবাগুলো নিবিড় প্রচেষ্টার ক্ষেত্র হিসেবে সংকল্পিত হয়েছে যেখানে সরকারের উন্নয়ন সংস্থাগুলো প্রোগ্রামগুলোর সাথে একটি দল হিসেবে একত্রে কাজ করে যা পূর্বেই পরিকল্পিত এবং সমন্বয় করা। সমাজ উন্নয়ন ও জাতীয় সম্প্রসারণ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ক্রিয়াকলাপগুলো গ্রাম্য জীবনের সকল দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নের জন্য কর্মসূচির অখণ্ড অংশ হিসেবে গণ্য হবে। দ্বিতীয়, কর্মসূচির সারমর্ম হলো, গ্রামবাসীরা যারা তাদের দুর্ভোগের ব্যাপারে কঠোরভাবে সচেতন তারা সমাজের পরিবর্তনের জন্য একসাথে এগিয়ে আসবে, অর্থাৎ, নিজেদের জন্য নতুন জীবন গড়ে তোলা এবং প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য সচেতনতা ও দায়িত্ব বাড়ানোর জন্য অংশগ্রহণ করবে, যা তাদের ভালো হওয়ার উপাদান। কর্মসূচিগুলো তাদের নতুন সুযোগ প্রদান করে, এবং বিনিময়ে, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, তারা তাদের একটি বৈশিষ্ট্যসূচক মান প্রদান করে এবং তাদের পরিধি ও প্রভাব সম্প্রসারিত করবে। স্বনির্ভর এবং সহকারিতা মূল নীতি যার উপর আন্দোলন অবলম্বন করে। এর প্রধান উদ্দেশ্য একদম ভেতর থেকে নেতৃত্বের উত্থানে সহায়তা প্রদান করা। সংক্ষেপে এটি সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি আন্দোলন, যা গ্রাম্য সমাজের সকল স্তরকে অন্তর্ভুক্ত করবে। তৃতীয়, আন্দোলনটি পুরো গ্রাম্য সমাজকে এর সুযোগের মধ্যে নিয়ে আসবে এবং তাদেরকে সমবায় আন্দোলনে এবং অন্য স্তরে নিজেদের অধিকারে নিজেদের স্থান গ্রহণের জন্য সক্ষম করা। এটি কর্মোদ্যোগকে বিকশিত করবে এবং আমাদের মানুষদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী যুক্ত করবে। এটি উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর ফল যা সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কার্যকলাপের উপর ভিত্তি হওয়া সামাজিক অর্থনীতির সাধারণ নমুনা হিসেবে গণ্য হবে।
সমবায় উন্নয়ন বোঝায় গ্রাম্য গোষ্ঠী দ্বারা স্বেচ্ছাকৃত স্বনির্ভরতা। এর উদ্দেশ্য গ্রামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন পরিবর্তন। উক্ত কর্মসূচির অন্তর্নিহিত মৌলিক দর্শন হলো সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি টেকশই হবে না যদি না গ্রাম্য মানুষেরা এরূপ উন্নতির প্রয়োজনে প্রতীত হবে এবং সক্রিয়ভাবে ও উদ্যমী হয়ে কাজে অংশগ্রহণ করে। মূল সমস্যাগুলো গ্রামবাসীদের নিজেদেরকেই সমাধান করতে হবে। সরকারি সংস্থাগুলো গ্রাম্য সমাজগুলোকে স্বীকৃত চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে তাদের যখন প্রয়োজন হবে তখন নতুন দক্ষতা শিখিয়ে, বিদ্যমান দক্ষতার উন্নতি করে, গ্রাম্য চাহিদা পূরণের জন্য অগ্রবর্তী প্রযুক্তি আনা, সেচ্ছাকৃত সমবায় প্রচেষ্টা সমর্থন ও গ্যালভানাইজ করার জন্য সরকারি তহবিল হতে অর্থ সহায়তা প্রাপ্তিতে সহায়তা করে। নেতৃত্ব অবশ্যই মানুষের মধ্য থেকে আসতে হবে। এটি এমন আন্দোলনের রূপ নেয় যেখানে গ্রাম্য মানুষেরা প্রধান অবস্থানে আছে এবং সরকারি সংস্থাগুলো নিম্নের গুলো অধিষ্ঠিত করবে।
সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প স্বেচ্ছাকৃত সামাজিক প্রচেষ্টা সমর্থন করার জন্যই পরিকল্পিত হয়। এটি একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিকল্পনা নিয়ে গঠিত যাদের প্রত্যেকটি গ্রাম্য সামাজিক জীবন নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর যেকোনো একটির মধ্যে সংঘটিত হয়।
১। কৃষি (ক) পশুপালন (খ) সেচ (গ) উদ্ধার (ঘ) ভালো বীজ (ঙ) সার (চ) অন্যান্য ইনপুট
২. স্বাস্থ্য এবং গ্রামীণ স্যানিটারি (ক) মেডিক্যাল সুবিধা (খ) ডাক্তার (গ) বিশুদ্ধ খাবার পানি (ঘ) পরিষ্কার পরিবেশ
৩. শিক্ষা (ক) প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা (খ) সামাজিক শিক্ষা
৪. যোগাযোগ (ক) রাস্তাঘাট (খ) ব্রিজ এবং কালভার্ট
পুরো গ্রামাঞ্চলকে উপযুক্ত ব্লক বা দলে বিভক্ত করা উচিত, যার প্রতিটি ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ ব্যক্তি নিয়ে গঠিত। প্রত্যেক ব্লক তাদের নিজেদের দলপতি এবং নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত করবে। তারা সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হবে। কর্মকর্তারা শুধুমাত্র তাদের সহকারী হিসেবে কাজ করবে। যদি কোনো সময় নির্বাচন সম্ভব না হয় তবে সম্মানিত স্থানীয় ব্যক্তিদের দ্বারা এড-হক কমিটি গঠিত হতে পারে। এটি জরুরী অবস্থার বর্তমান পরিস্থিতির সাথে মিলিত হবে। কমিটি গঠন সর্বাঙ্গীণ পরিকল্পনার অংশ হবে।
মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী।
বি.দ্র. আপনার মন্তব্য অনুযায়ী গঠিত সংগঠন আন্দোলনে যেতে পারে। কার্যক্রম আরম্ভের জন্য রৌমারির উপর প্রতিবেদন এর সাথে সংযুক্ত করা হলো