You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যুদ্ধরত পুলিশদের প্রতি স্বরাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশ সরকার, স্বরাষ্ট্র বিভাগ …………১৯৭১

 
বাংলাদেশের বীর পলিশ ভাইসব,
সাড়ে সাত কোটি নিরস্ত্র বাঙালী আজ মরিয়া হয়ে ইয়াহিয়া খানের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আমরা বাংলাদেশের সন্তান, আমরা বাঙালী, আমরা বাংলাদেশের পলিশ আমরা মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের।
অতীতে এবং বিগত ২৫শে মার্চ থেকে পাক ফৌজ বাংলাদেশে যে নিধনযজ্ঞ ও বর্বরতা চালিয়েছে তাঁর নজির ইতিহাসে নাই। সোনার বাংলা আজ এক প্রেতপুরী। সেখানে এখন কবরের শান্তি বিরাজ করছে। এই হত্যাযজ্ঞের প্রথম শিকার হয়েছিল বাংলার পলিশ বাহিনী। রাজারবাগ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা ও অন্যান্য জেলাসমুহের পলিশ বাহিনীকে কিভাবে মেশিনগানের গুলিতে ও বোমার আঘাতে হত্যা করা হয়েছে তাঁর করুন দৃশ্য আমরা কোন দিন ভুলতে পারবো না।
আপনারা স্বচক্ষে দেখেছেন নারী হত্যা, নারীধর্ষণ, শিশু-ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক বুদ্ধিজীবী ও শিল্পী হত্যার বীভৎস দৃশ্য। হারিয়েছি আমরা প্রিয়জন, আত্মীয়-স্বজন,বেদনাক্লিষ্ট জিবনেরস সঞ্চয় ই সম্বল। ধ্বংসের ঢেউ শহর বন্দর ছড়িয়ে এখন পৌঁছেছে গ্রামে গ্রামান্তরে। রাস্তাঘাটে হাটে মাঠে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে নিরীহ বাঙালী পলিশ বাহিনীকে, ভাশিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের পরিবারকে দুঃখের অতল সাগরে। এই গণহত্যা ও ধ্বংসের তুলনা ইতিহাসে মেলে না।
তাই আজ বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ বজ্রকন্ঠে আওয়াজ তুলেছেন- স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পাক ফৌজকে দাঁড়াতে দেবে না। পশ্চিম পাক ফৌজের সর্বশেষ প্রাণীটি বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।
হালকা অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের পলিশ বাহিনী মেশিনগান,ট্র্যাঙ্ক ও বোমার মুখে যে বীরত্ব দেখিয়েছে তা কখনও ভলা যায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে পুলিশের ত্যাগ ও আবদার ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।
বাংলাদেশের পুলিশের মনোবলে ভেঙ্গে দেয়ার জন্য পুলিশ কর্তাদেরকে মেশিনগানের মুখে রেখে বাধ্য করা হয়েছে একথা ঘোষণা করতে যেন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী ইয়াহিয়ার জঙ্গি শাসকদের কাজে যোগদান করেন। মুক্তিফৌজের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে আঘাত হানার জন্য এই হীন প্রচেষ্টা। এই ঘোষণা বা দাকে বাংলাদেহসের পুলিশ বাহিনী সারা দেবেন না। নানা কৌশলে পুলিশ বাহিনীকে একবারে নিশ্চিহ্ন করে ফেলাই পাক ফৌজের উদ্দেশ্য একথা আমাদের ভুল্লে চলবে না । একবার ভেবে দেখুন কেন পাক ফৌজ আমাদের সহকর্মী পুলিশ ভাইদেরকে অকাতরে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে-কেন তাঁরা বাংলাদেশের পুলিশ লাইন পুরিয়ে জ্বালিয়ে ধ্বংস করেচে-কেন হাজার হাজার পুলিশকে দেশছাড়া করেছে। জঙ্গি সরকার অস্ত্রের শক্তিতে শক্তিশালী এবং সেই শক্তির দাপটে ইয়াহিয়া সরকার আমাদেরকে নিশ্চহ্ন করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই জঙ্গি সরকারের সাথে সহযোগিতা করা বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়।
আমরা বাংলাদেশের সন্তান-বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে আমরা বহু ত্যাগ করেছি।আম্রা আমাদের সর্বস্ব ত্যাগ করেছি। মুক্তিযুদ্ধে হাসিমুখে প্রান দিয়েছি।বাংলাদেশের শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করে বহু কর্মচারী শহীদ হয়েছেন। তাদের কাছে আমরা চিরঋণী। তাদেরকে চিরদিন জানাব শ্রদ্ধা। তাদের পরিবারবর্গকে জানাবো সহানুভূতি যারা শত্রুসেনার হাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে ।তাঁদের জীবন বাচাবার জন্য আমরা সব করতে প্রস্তুত।বর্বর পাক ফৌজের অমানুষিক অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য অনেক পুলিশ কর্মচারী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়েছেন।তাদেরকে আহবান জানাচ্ছি তারা যেন অবিলম্বে মুক্তিফৌজে যোগদান করেন।
আমরা পুলিশ-আমরা অস্ত্র চালনা জানি।বাংলাদেশের এই মুহুর্তে আমাদের অনেক কিছু করার আছে।আমরা শত্রু শিবিরে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে যাবো না- শত্রুর কাছে মাথা নত করবো না।তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহবানে আমরা সাড়া দেব না ।বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে প্রান দেব।আমরা জানি যারা শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলেছেন- বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতা তাদের কোনদিন ক্ষমা করবে না ।পুলিশের সঙ্গে যারা অফিসে কাজ করছেন তাদের প্রতিও আমাদের একই আবেদন।
পুলিশের ভাইয়েরা যারা সীমান্তের ওপারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তারা ৯নং সার্কাস এভিনিউ,কলিকাতায় ( বাংলাদেশ মিশন)অথবা সুবিধামত মুজিবনগরে পুলিশ সদর দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবেন।
আমরা একথাই মনে রাখবো যে-আমরা বাংলাদেশের সন্তান –বাংলাদেশের স্বাধিনতা রক্ষার সংগ্রাম আমাদের বচার সংগ্রাম।আমরা লড়ছি সত্যের জন্য- ন্যায়ের জন্য।এই সংগ্রামে আমরা জয়ী হবোই।

-জয় বাংলা
-আবদুল খালেক

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!