শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
সংগ্রামী জনগনের প্রতি উদাত্ত আহবান | বাংলাদেশ সরকার,প্রচার দপ্তর | ………….১৯৭১ |
স্বাধীন বাংলাদেশ
সংগ্রামী জনগনের প্রতি উদাত্ত আহবান
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা এক হয়েছি। এক আওয়াজে মিলেছে সাত কোটি কণ্ঠঃ পশ্চিমা শোষণের অবসান চাই সোনার বাংলায়। তবু অগণতান্ত্রিক বেঈমান ইয়াহিয়া খানের সামরিক চক্রের সামরিক ষড়যন্ত্র আমাদের অধিকার দেয়নি, বাধ্য করেছে নড়াইয়ের পথ বেছে নিতে।
খান নামে কুখ্যাত অমানুষ এই সেনা পিশাচের অত্যাচার চালিয়েছে শান্ত স্নিগ্ধ গ্রামের বুকে। আপ্নারা হাজারে হাজারে বেরিয়েছেন পথে। প্রথম দিন থেকে শহরে বেছে বেছে শিক্ষিত মানুষদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে তারা। শহরে আজ জনসমানুষ মেলা ভার-বলেছেন বেদেশি সাংবাদিকেরা। সৈন্যবাহিনী এবং তাদের আওতায় স্বার্থাম্বেষী স্হানীয় অত্যাচারীরা নির্বিশেষে তাদের মেরেছে। চেয়েছে সবকিছু নষ্ট করে দিতে। মাঠেঘাটে পথের পাশে রয়েছে খানসেনার শিকার অগণন মানুষ। এরা সব আপনার আমার আত্মীয়। যারা বেঁচে তাঁরা সবাই আজ পথে পথে। যারা রুদ্ধ ঘরে লুকিয়ে তাঁদের ঘরে ঘরে হাহাকার।
আমরা চেয়েছি হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রীষ্টানের মিলিত বাংলা। শোষণের বিরুদ্ধে এক হয়ে দাঁড়িয়েছিল এরা সবাই। পশ্চিমা জঙ্গীশাহীর চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতার মুখের বঙ্গবন্ধু আমাদের সাবধান করেছিলেন “শত্রুর চরেরা আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা ও প্রাদেশিকতার জিগির তুলবে”। চরম প্ররোচনায় মুখেও তিনি জানিয়েছিলেন বাংলাদেশে বসবাসকারী সকল সাম্প্রদায়িক ও প্রাদেশিক সংখ্যালঘুদের ধনপ্রান ইজ্জত রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।
সারা পৃথিবীর বিবেকবান মানুষের কাছে ইয়াহিয়া চক্রের অত্যাচার এবং তার বীভৎসতা যতই প্রকাশিত হচ্ছে ততই বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থনকে বিভ্রান্ত করার চরম হাতিয়ার হিসাবে সংখ্যালঘুদের উপর বিশেষ আক্রমণকে প্ররোচিত করছে জঙ্গীসেনা। এই নীতির তিন লক্ষ্য-(১) স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিভক্ত করা, (২) ভারতসহ অন্যান্য দেশের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা ও (৩) ভারত ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এককোটির অধিক সংখ্যালঘুর দায়িত্ব চাপিয়ে পর্যদস্ত করা। এ জঘন্য চক্রান্ত আমাদের বুঝতেই হবে।
এবং এর জবাব চাই। এর জবাবে তৈরী হচ্ছে দেশের রক্ষীরা। দেশের ছাত্ররা, জোয়ানরা এগিয়ে আসুন। মুস্লমান,হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রীষ্টান-আপনাদের প্রতি অত্যাচার হয়েছে। আসুন সবাই মিলে তার জবাব দেই। “সাত কোটি মানুষের দাবিয়ে রাখতে পারবা না” বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। তাঁর সেই অমর বাক্য সত্য হবেই। কি করে পারবে খানসেনারা তাঁদের অপরিচিত এই সোনার দেশকে, বীর মায়েদের হাতে তৈরি সোনার টুকরো ছেলেদের চেপে রাখতে? এ অত্যাচার ভুলবে কে? আসুন মুক্তিফৌজে জগ দেই, মুক্তিফৌজকে সাহায্য করি, মোকাবিলা করি এই সুসজ্জিত কিন্তু বর্বর শত্রুসেনার সঙ্গে।
তারপর আমরা ফিরে পাবো সেই হারানো বাংলাকে। বাংলাদেশ সরকার আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে-নিঃস্ব হয়ে যারা পথে দারিয়েছেন,এই অবস্থার শেষে জেলায় জেলায় জমিজায়গা, ভিটেমাটি আপনারা নিশ্চয়ই ফিরে পাবেন। জমি যে হারিয়েছে সে ফিরে পাবে তাঁর জমি। ঘর যার গেছে তাকে দশজন মিলে গড়তে সাহায্য করবে নতুন ঘর। মাঝি তাঁর লুকানো নৌকো আবার বের করবে মুক্ত নদীর বুকে। জেনে ফিরে পাবে তাঁর জাল। তাঁতি ফিরে বুনবে কাপড়। যে যার কাজে ফিরে যাবে।
বাংলাদেশ বেশীদিন শ্মশান থাকবে না।দিনে দিনে তাঁর উন্নতি হবে অবাহত। কারন আমাদের ধান পাট মাছ গুড় চিনি,আমাদের সনাদানা,আমাদের চা কাগজ তামাক এখন থেকে আমরাই খরচ করব। আমরাই বিশ্বের দরবারে কেনা-বেচা করব আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। খুব তাড়াতাড়ি তাই আবার ফিরে পাবো আমাদের সোনার বাংলাদেশ। আবার জাতি ধর্ম দল মতবর্ণ নির্বিশেষে বাঙালী ফিরে পাবে তাঁর সম্মান। আজ যে শ্মশান বাংলাদেশে এনেছে খান্সেনারা,সেই শ্মশান দাঁড়িয়ে মনে রাখুন আগামি এই সোনার বাংলার ছবি। জঙ্গীশাহীর কুৎসায় ভুলবেন না। মনে রাখবেন চরম শাস্তি হবে তার, যে এই জঙ্গীশাহীর সঙ্গে হাত মেলাবে। জয় বাংলার আদর্শ, শেখ মুজিবের আদর্শ ভুলে তুচ্ছতা, নীচতা সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে জঙ্গীশাহীর চরের কাজ করবে যে, সে পাবে চরম শাস্তি-প্রাণদন্ড।
-গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকার