শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে মন্ত্রী পরিষদের সভার কার্যবিবরণী | বাংলাদেশ সরকার কেবিনেট ডিভিশন | ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
গোপনীয়
ডিসেম্বর ১৫, ১৯৭১
১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে হয়ে যাওয়া ‘জনপ্রশাসন পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক মন্ত্রিসভার বৈঠকের প্রাসঙ্গিক আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য ও সমস্যা সমাধানের জন্য সম্ভাব্য পন্থা এখানে সংযুক্ত করা হল।
(এইচ টি ইমাম)
কেবিনেট সহকারী
মেমো নং.৪৬৯(৫)\ক্যাব তারিখঃ ১৬/১২/৭১.
প্রাপক ১) প্রতিরক্ষা সচিব
২) পররাষ্ট্র সচিব
৩) স্বাস্থ্য সচিব
৪) কৃষি সচিব
৫) বাণিজ্য সচিব
গোপনীয়
১০ ডিসেম্বর ১৯৭১, রোজ শুক্রবার ‘জনপ্রশাসন পুনরুদ্ধার’ শিরোনামে
সংগঠিত কেবিনেট মিটিং এর সিদ্ধান্তসমূহ
স্বাধীনতার প্রাক্কালে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান কাজ হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণ ও অপরিহার্য চাহিদার যোগানের ব্যবস্থা করা। এটা অর্জনের জন্য বেসামরিক প্রশাসন সংস্কার এবং তা অবিলম্বে পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন।
২. সমস্ত বিষয়গুলি বিবেচনায় রেখে,এটা মনে হচ্ছে যে জেলা পর্যায়ে বা নিচের দিকে প্রশাসনিক কাঠামোতে বিদ্যমান ব্যক্তিদেরকে রেখে দেয়া ছাড়া অন্য কোন বিকল্প পথ নেই। সরকার নিম্নলিখিত মর্মে অবিলম্বে বিবৃতি তৈরি করবেঃ
(ক) সরকারের হেডকোয়ার্টার ঢাকায় প্রতিস্থাপনের দুই মাসের মধ্যে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে এবং প্রশাসনিক কাঠামো অনুযায়ী সংস্কার আইন খসড়ার মূলনীতিগুলো সঠিক সময়ে নির্ধারিত হবে।
(খ) দেশপ্রেমহীন কর্মকর্তাদের অপসারণ করা বা শাস্তি দানের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্ক্রিনিং কমিটি গঠিত হবে। যারা সক্রিয়ভাবে শত্রুর সহযোগিতা করছে,তাদেরকে বিচারের জন্য আইনের আওতায় আনা হবে। সেই বিচারে কোনো ছাড় থাকবে না।
গ)সরকার সচেতন ছিলো যে,অনেক সরকারি কর্মচারীরা সংযমী ছিলেন এবং এটা নিশ্চিত ছিল আইন অনুযায়ী ন্যায্য বিচার ছাড়া কাউকে দণ্ডিত করা হবে না।
(ঘ)যেসব সরকারি আমলা শত্রু দখলদারিত্বের সময় নিজ নিজ পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন,তাদের উচিত এলাকাগুলো বিমুক্ত হবার সাথে সাথেই স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে স্ব স্ব পদে ফিরে আসা। ২৫ মার্চ ১৯৭১ তারিখের পর নিযুক্ত ব্যক্তিগণ একই জায়গা থেকে বিশেষ ডিউটির অফিসার হিসেবে প্রত্যাবর্তন করবেন। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা যে পদে কর্মরত ছিলেন,তারা স্বীয় পদেই বহাল থাকবে এবং পরবর্তী নির্দেশ আসার আগ পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবে।
সর্বোপরি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত এইসব পদে নিয়োগ দেয়া অফিসারেরা বহাল থাকবেন এবং বর্তমান সরকারের মনোনীত কর্মকর্তারা পরবর্তী নির্দেশ আসা পর্যন্ত স্পেশাল ডিউটির অফিসার হয়ে থাকবেন।
(ঙ)যেসব সরকারি কর্মকর্তারা স্বীয় পদে বহাল ছিলো এবং বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে গিয়েছিল, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অন্য কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য তাদেরকে নিয়োগ না দিলে তাদের উচিত হবে নিকটস্থ সরকারি প্রশাসনের নিকট যোগাযোগ করা যাতে তারা আগের তথ্য জমা দিয়ে স্বীয় পদে ফিরতে পারবেন। পরবর্তী নির্দেশ আসার আগ পর্যন্ত এসব পদে বহাল থাকা বর্তমান অফিসারগন বিশেস ডিউটির অফিসার হিসেবে থাকবেন।
(চ)স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বর্তমানে নিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের একটি তালিকা করবে যেখানে তাদের পূর্ববর্তী পদের কোনো উল্লেখ থাকবে না।
৩. স্থানীয় প্রশাসনের ২(চ)অনুচ্ছেদের আওতায় করা ব্যক্তিবর্গের তালিকা প্রধান কার্যালয়ে পাওয়া যাচ্ছে। যতই বাধা আসুক সকল প্রত্যন্ত এলাকার জন্য থানা ইউনিট গঠন করা হবে। ইউনিটের গঠন হবে নিম্নরূপ :
উপাধি | কাজকর্ম |
১। থানা ম্যাজ্রস্ট্রেট | আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সাধন |
২। বিশেষ ত্রাণ কর্মকর্তা | ত্রাণ ও পুনর্বাসন |
৩। থানা খাদ্য অফিসার | প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ |
৪। ওসি | আইনের যথাযথ প্রয়োগ |
৫। থানা পরিদর্শক\সহকারী ইঞ্জিনিয়ার | যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার |
৬। থানা কৃষি অফিসার\টিসিও\টিআই | কৃষিজ পণ্যের সরবরাহ |
৭। থানা মেডিকেল অফিসার | স্বাস্থ্যসেবা |
আইন ও শৃঙ্খলা, পুনর্বাসন, নিত্যপণ্যের ও পুন: প্রতিষ্ঠা এবং পরিসেবার রক্ষণাবেক্ষণ ও সরবরাহ কার্যক্রম ঠিক রাখতে থানা ম্যাজেস্ট্রেট জরুরি প্রোয়োজনে পর্যাপ্ত কর্মী নিযুক্ত করার আইনগত ক্ষমতার অধিকারী হবেন।
তিনি হবেন থানা পর্যায়ের আর্থিক নিয়ন্ত্রক। আর্থিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে তিনি তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের বেতন সহ অন্যান্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাব্য খরচের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যয়ের হিসেব করতে হবে। সিও (উন্নয়ন) বিশেষ ত্রাণ অফিসার কাজ করবেন।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজ ও ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে সচিব নিয়োগ ও জন প্রশাসন কাঠামো তৈরি করা হবে।
৪. অনুচ্ছেদ ৩ এর অধীন প্রতিটি থানা ইউনিটকে তাদের কাজে নামার আগেই এক মাসের বেতন ও ভাতা দিয়ে দেয়া হবে। রাজস্ব কর্মকর্তাকে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশের জন প্রশাসন ব্যবস্থাকে পুনরায় নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য মন্ত্রিসভা নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহন করতে পেরে তারা খুবই সন্তুষ্ট
(ক) জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট,পুলিশ সুপার সব ১৯ টি জেলায় পোস্ট করা হবে। অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রয়োজনবোধে পোস্ট করা হবে।
পৌর / টাউন কমিটি ও গ্রাম প্রশাসন সংক্রান্ত নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে:
(খ) পৌর ও টাউন কমিটি কাজ শুরু করার উদ্দেশ্যে কিছু সময়ের জন্য সরকার কর্তৃক প্রশাসক নিযুক্ত করা হবে। সরকার কর্তৃক উপযুক্ত কমিটি নিয়োগ পাবার আগ পর্যন্ত এই প্রশাসকগণ দায়িত্বে থাকবেন। যথাসময়ে কমিটি প্রদান করা হবে।
(গ) আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং গ্রাম পর্যায়ে মৌলিক চাহিদার বিধানের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত নিযুক্ত থাকবে। তাদের সাহায্য করবে ‘গ্রাম রক্ষী বাহিনী’।
(ঘ) মন্ত্রিপরিষদ বেশ আগ্রহের সাথে খেয়াল করেছে যে প্রশাসনের যত বেশি সম্ভব স্তরে জনপ্রতিনিধি যুক্ত করা উচিত। বিশেষ প্রয়োজন যেমন ত্রাণ ও পুনর্বাসন, আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি সময়ে এদের সাথে যোগাযোগ করা হবে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদে একটি লেখা জমা দিবেন এ সিদ্ধান্ত আগেই নেয়া হয়েছিল।
স্বাঃ
– ভারপ্রাপ্ত সভাপতি