শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা বন্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন দানের জন্য বিশ্বের রাষ্ট্র প্রধানদের প্রতি লন্ডনস্থিত বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটির আবেদন | বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটির চিঠি | এপ্রিল, ১৯৭১ |
বিশ্বের সকল রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি:
জনাব,
ঢাকা এবং সর্বোপরি বাংলাদেশে যে গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে তা এত সবার এতটাই জানা যে নতুন করে আর কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ছাত্রদের অগ্নিদগ্ধ লাশ, আবদ্ধ আবাসিক এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ, নিরস্ত্র ব্যক্তিদেরকে গুলি বর্ষণ করে হত্যা, এসবই হল পুর্বপরিকল্পিত হত্যার প্রমাণ যা গণহত্যারই সমতুল্য।
মেশিনগান, ট্যাংক, বেয়োনেট, অস্ত্রশস্ত্র, বিমান এবং পশিম পাকিস্তানি সৈন্যদের মধ্যে তীব্রভাবে সৃষ্ট জাতিবিদ্বেষ ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখার জন্য, যে ইচ্ছা স্বতস্ফুর্ত ভাবে ব্যক্ত হয়েছিল ১৯৭০ সালে, প্রথম সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে। ইয়াহিয়া খানের ১১ দিনের আলোচনার সময় নেয়া আজ প্রমাণিত হয়েছে সময় ক্ষেপণ ও আকস্মিক আক্রমণের প্রস্তুতির ষড়যন্ত্র রূপে। আলোচনা সেই সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত চলেছিল। দেড়টার মধ্যে পুরো শহরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। এই আক্রমণের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য এবং ব্যাপকতা গণহত্যার রীতিনীতি প্রয়োগকে প্ররোচিত করে (অনুচ্ছেদ ১-৪)।
লাহোর প্রস্তাব (১৯৪০) এর উপর ভিত্তি করে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল, যেটি যুক্তরাষ্ট্রীয় এককসমুহের স্বাধীন ও সার্বভৌম মর্যাদা নিশ্চিত করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনাকে পরিত্যাগ করে একটি অবিচ্ছিন্ন কাঠামো গঠন করা হয়েছিল। পাকিস্তান গঠনের চিন্তা তাই আজ অতিক্রান্ত।
পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশ বাঙালিরা শেখ মুজিবুর রহমানের কর্তব্যরত সরকারের প্রতি প্রকাশ্যে শতভাগ সমর্থন দানের মাধ্যমে অনুমোদন স্বীকার করে নিয়েছিল, যখন ২ মে মুজিবুর রহমান জাতীয় পরিষদে পুর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবি করেছিলেন। সদস্যরা ঘোষিত ইতিবাচক আদেশপত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এটি মুজিবুর রহমানের কর্তব্যরত সরকারের বিধিসম্মত ভিত্তি প্রদান করে। মার্চের ২৫ তারিখে স্বাধীনতার ঘোষণা পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে হানাদার বাহিনীতে পরিণত করে।
জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পেয়েও মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। চারটি সেনানিবাস এলাকাতেই লড়াই চলছে। বাংলাদেশের জনগণ এই অটল অক্ষয় সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে হানাদার বাহিনীর শেষ সদস্যটিও বেঁচে থাকা পর্যন্ত।
আমরা সকল সরকারের কাছে আবেদন করছি যেন অবিলম্বে জাতিসংঘের বেসামরিক ও রাজনৈতিক অধিকার ১৯৬৬ এর নিয়মপত্রের অনুচ্ছেদ ১(১) অনুযায়ী গণপ্রজাতন্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
আমরা সকল অস্ত্র সরবরাহকারী দেশের কাছে আবেদন জানাই যেন স্বাধীন বাংলাদেশের নিরস্ত্র নিরাপরাধ বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহারের উপর অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে উপায়ে তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করা হয়।
আমরা সকল মানুষের কাছে আবেদন জানাই তাদের সমর্থনকে আরও শক্তিশালী করার জন্য এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য এবং নিয়মানুগভাবে বাঙালি জাতির বিনাশে সমাপ্তি টানার জন্য।
যুক্তরাজ্যে গণপ্রজাতন্রী বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি, লন্ডন
৫৮ বেরউইক ষ্ট্রীট, ডব্লিউ ১।
টেলিফোনঃ ৪৩৭৭১১১