You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে পৃথিবীর বিভিন্ন মহলের অভিমতের সংকলন বাংলাদেশের রিলিফ ফান্ড কমিটির প্রকাশনা ও প্রচার  বিভাগের সংকলন এপ্রিল, ১৯৭১

বিচারপতি এ এস চৌধুরির নিকট উপস্থাপিত
বাংলাদেশের জন্য সংগ্রামঃ বিশ্ব-মতামত
যদি রক্ত হয়ে থাকে মানুষের স্বাধীনতার অধিকারের মূল্য, তবে বাংলাদেশ তা অতিরিক্তই দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু যদি বা তাদের আন্দোলন কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ধ্বংস হয়েও যায়, তবে তা মুক্তিযুদ্ধের সাময়িক পরাজয় মাত্র, যা শেষ পর্যন্ত বাঙালির রাষ্ট্রসত্ত্বা হিসেবে স্বীকৃত হবে এবং তা খণ্ডন করা কঠিন হতে পারে, কিন্তু সেটি সবার জন্য সুবিধাজনক নয়। আর এই মুহূর্তে বিবেচিত হতে পারে আমরা এবং অন্যান্য দেশগুলো “জাতির আত্মসংকল্পের অধিকার” – এই চমৎকার শব্দগুলো দিয়ে ঠিক কী বুঝি, যা জাতিসংঘের সনদের মধ্যে সমস্বরে উচ্চারিত হওয়া শব্দের মত মনে হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তান কখনোই একটি ‘বিচ্ছিন্নতাকামী* রাষ্ট্র হতে পারে না যেমনটি আগে ছিল (বায়াফ্রার মত)। সাড়ে সাত কোটি পূর্ব পাকিস্তানি মনে করে সাড়ে চার কোটি পশ্চিমার মত তাদেরও জাতীয় সংসদে ‘প্রতিনিধিত্ব’ রয়েছে।
———– এই সত্যটুকু মেনে নেওয়ার আগ পর্যন্ত ঠিক কতটুকু মানবীয় দুর্দশা ভোগ করতে হবে?
-নিউ স্টেটসম্যান, ১৬/৪/৭১।
পাকিস্তান সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ব পাকিস্তানকে নিছক অস্ত্রের জোরে দাবিয়ে রাখতে পারেনা।
– হাউজ অব লর্ডসে লর্ড গ্ল্যাডুইন।
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি বৃটেনের বিশেষ কর্তব্য রয়েছে।
-হাউজ অব লর্ডসে লর্ড উইনি-জোনস।
অত্র এলাকায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত বলে কমনওয়েলথের মত প্রকাশ করা উচিত।
-লর্ড ব্রকওয়ে, হাউজ অব লর্ডস।
সাম্প্রতিককালে অভূতপূর্ব এই ভোটের পর জনগণকে গণতন্ত্রে প্রাপ্য সম্মানটুকু তাদেরকে দেয়া উচিত।
-ডি হিলে, ছায়া পররাষ্ট্র সচিব।
মধ্যস্থতা আকারে স্যার অ্যালেকের কমনওয়েলথের মাধ্যমে একটি উদ্যোগ নেয়া উচিত।
-জেরেমি থর্প, উদারপন্থী নেতা।
বায়াফ্রা থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক বেশি ভিন্ন। কমনওয়েলথের উচিৎ এর ভাল দিকগুলোকে গ্রহণ করা। আপোষের সম্ভাবনা একেবারেই কম।
-এম স্টুয়ার্ট, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব।
গত সপ্তাহের ঘটনাগুলোর পর থেকে ব্যাপক একটি ধারণা ছিল যে, পাকিস্তান কখনোই এক দেশ হতে পারবে না। এটাকে কমনওয়েলথভুক্ত একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে ভাবাটাই ভুল ছিল – ব্রিটেনের এখানে প্রভাব ছিল এবং সেটিকে যুদ্ধবিরতির কাজেই লাগানো উচিত।
-ব্রুস ডগলাস-ম্যান, এমপি।
দু’টি অংশের মধ্যে একটি স্পষ্ট অর্থনৈতিক বিভেদ রয়েছে। এই বিভেদ দূর করার জন্য বিশ্বব্যাংক ও পাকিস্তানের মিলিত প্রচেষ্টায় ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে।
-বি আর ব্রেইন, এমপি।
পূর্বের বেশিরভাগ দরিদ্র, জনবহুল, অবহেলিত বাঙালি শক্তিশালী পশ্চিমা শাসকদের সামরিক ঐতিহ্যের কাছে আর কোন শোষণ ও অবহেলা সহ্য করবে না।
-সম্পাদক, ডেইলি টেলিগ্রাফ,৩/৩/৭১।
বাঙালিদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সর্বশক্তি দিয়ে প্রণীত এমন সংবিধানে যদি রাষ্ট্রপতি (পাকিস্তানের) অনুমোদন দিতে রাজি না হয়, তবে শেখের পশ্চিমাংশ পাকিস্তানের বাকি অংশ থেকে আলাদা হয়ে গেছে বলে ঘোষণা করা ছাড়া সম্ভবত আর কোন পথ থাকবে না এবং দু’টি প্রদেশের চিরকালের জন্য আলাদা হয়ে যাবে।
-পিটার হ্যাজেলহার্স্ট, সানডে টাইমস, ৭/৩/৭১।
পূর্বাংশের ওপর রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার ক্ষমতা পুনর্বহালের তাৎক্ষণিক কার্যকর প্রভাব যাই হোক না কেন, পূর্বাংশ ইতোমধ্যে মানসিকভাবে পৃথক হয়েই গেছে।
-ডেভিড হল্ডেন, সানডে টাইমস, ২৮/৩/৭১।

জোর করে কোন ঐক্য নয়: কিন্তু পাকিস্তানের ঐক্য বজায় রাখা বা পুনরুদ্ধার করা যাবে না, সেনাবাহিনী কর্তৃক……… আর ঐক্য যদি সম্ভব না হয়, তবুও শান্তিপূর্ণভাবে পাকিস্তানকে ভেঙে দু’টি বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রে পরিণত করাই হবে সবার শ্রেষ্ঠ লক্ষ্য।
-সম্পাদক, দ্যা অবজারভার, ২৮/৩/৭১।
সামরিক সরকার “এক পাকিস্তান”-এর নামে বিশাল এক জনগোষ্ঠীর উপর নিষ্ঠুর আক্রমণ চালিয়ে এক পাকিস্তান যে কখনো সম্ভব নয়, সেটাই নিশ্চিত করেছে।
-মার্টিন অ্যাডেনি, গার্ডিয়ান, ২৯/৩/৭১।
কিন্তু হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে কখনও একতা আসতে পারে না; আর নিরীহ মানুষের জীবনের মূল্য দিয়েতো একতা নয়ই। বছরের পর বছর ধরে সমস্ত বাঙালি সংশয়ের জ্যান্ত প্রমাণ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান আজ কেবল এক দখলকৃত ও শোষিত অঞ্চল হিসেবে টিকে রয়েছে। ওরা, যারা আমেরিকার মত পাকিস্তানি সেনাদের পুষে রেখেছে, তাদের নিজ নিজ অস্ত্রসম্ভারের ব্যবহার সম্পর্কে উপলব্ধি করা উচিত। ওরা, চীন ও শ্রীলংকার মত যারা তাদের সেনাবাহিনীকে পশ্চিম থেকে আসার অনুমতি দেয়, তাদেরকে সেই বাহিনীর কার্যক্রম ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে উপলব্ধি করতে হবে। ওরা, ব্রিটেনের মত যারা এলাকায় নিজেদের প্রভাব ধরে রাখে, তাদেরকে তা প্রকাশ্যে এবং বলপূর্বক ব্যবহার করতে হবে।
-সম্পাদক, গার্ডিয়ান, ৩/৪/৭১।
৭০,০০০ সদস্যের একটি সেনাবাহিনী কোন কালেই সাড়ে সাত কোটি জনতাকে দাবিয়ে রাখতে পারবেনা। পাকিস্তান যে মোটামুটি সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিকভাবে ভোট দিয়েছিল, শেখ মুজিব ও তাঁর দল যে সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানিদের আদেশপত্র ধারণ করে, পশ্চিমা শাসক জান্তা ও তাদের বুনো পদাতিক সৈন্যরা যে “জাতীয় ঐক্য”-এর স্বার্থে সেই আদেশপত্র ছিঁড়ে ফেলেছে, তা অবশ্যই চিরকালের জন্য শেষ – পরিস্থিতির এই সারমর্ম ভুলে যাওয়া আসলে খুবই সহজ। বর্বরতা দিয়ে দু’টি দেশকে এক করা যায় না।
-সম্পাদক, গার্ডিয়ান, ৩/৪/৭১।

শেখ মুজিব ভারতীয়দের সহমর্মিতা পেয়েছেন, কারণ তিনি ভারতের লালিত মূল্যবোধকে ধারণ করতেন – গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আমিও তাঁর জনগণের সমর্থন পেয়েছিলাম, নির্বাচনের ফলাফল এবং অন্যান্য উন্নয়ন সংঘটিত হবার পর একজন মানুষকে তা তারা দেখিয়েছে। শেষেমেশ বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক রায়কে গুঁড়িয়ে দিতে ট্যাংকগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছিল।
-ইন্দিরা গান্ধী, ভারতীয় এমপি।
অনর্থক হত্যা, উন্মত্ব নিষ্ঠুরতা। প্রাপ্ত প্রমাণাদি থেকে যে কেউ বুঝতে পারবে যে, লক্ষ্য (ইয়াহিয়ার) ছিল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া, যাতে তারা আর কোনো প্রতিরোধ আন্দোলনের জন্য কার্যকর নেতৃত্ব প্রদান করতে না পারে।
-সম্পাদক, টাইমস, ৩/৪/৭১।
সোভিয়েত ইউনিয়ন বাঙ্গালি নেতা, শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেফতার ও নিপীড়ন সম্পর্কে অবগত, যিনি পূর্ব পাকিস্তানের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিশ্বাসযোগ্য সমর্থন পেয়েছিলেন। বলপ্রয়োগ কেবল সমস্যাকে গুরুতর করতে পারে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর নিপীড়ন এবং রক্তপাত বন্ধ করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
-রাষ্ট্রপতি পোজোর্নি, রাশিয়া।
পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাগুলোতে ভারত নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকতে পারেনি। বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে তা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি কিছু। এটি এমন একটি বিষয়, যা বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে যাচ্ছে।
-ইন্দিরা গান্ধী, ভারতীয় এমপি।

জেনেভার কূটনৈতিক সূত্রগুলো ভেবেছিল যে, পাকিস্তান সরকার রেডক্রসকে পাকিস্তান থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিল ঠিক যে কারণে, সেই একই কারণে সংবাদপত্রের কর্মীদেরকেও তাড়িয়ে দিয়েছিল – সেখানে কোন আন্তর্জাতিক সাক্ষী বা পর্যবেক্ষক না রাখার উদ্দেশ্যে।
-প্যাট্রিক কিটলি, গার্ডিয়ান, ৬/৪/৭১।
পাকিস্তান নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে এই আগ্রাসন, উচ্ছৃঙ্খল ধ্বংসযজ্ঞ, এবং নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পুরুষ হত্যা চালিয়ে যাবার অনুমতি কি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পেতে পারে?
-স্বরণ সিং, পররাষ্ট্র মন্ত্রী, ভারত।
কিন্তু পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের বিচ্ছিন্নতা এখন এমনভাবে সম্পন্ন হয়েছে যে শেষ পর্যন্ত তারা জয়ী হবে বলে মনে হয় না।
-মার্টিন উলাকট, গার্ডিয়ান, ৭/৪/৭১।
পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটছে, তা একটি অনর্থক সামরিক আগ্রাসন। বহির্বিশ্ব এবং কমনওয়েলথ অফিস এখনও বিশ্বাস করে যে, পূর্ব পাকিস্তানের ঝরে পড়া রক্তের চেয়ে তাদের বিদেশি সরকারের কূটনৈতিক স্বীকৃতিটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে (ইয়াহিয়া) যা করেছেন বা করছেন তা হল পূর্ব পাকিস্তানি এবং তাদের নির্বাচিত নেতাকে নিপীড়নের জন্য তার সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা। নতুবা আপাত দৃষ্টিতে আপোষ আলোচনা ভেঙে গেছে। জনগণ ভোটের মাধ্যমে শেখ মুজিবকে সেই ক্ষমতা দিয়েছিল, তা তিনি পান সেটি ইয়াহিয়া চাননি। সুতরাং রাষ্ট্রপতি বন্দুকের আশ্রয় নিলেন। সেনাবাহিনী প্রেরণের মাধ্যমে তিনি নিজেকে কেবল গণতান্ত্রিক অধিকারের ব্যাপারে উদাসীনই নন, বরং একজন বেপরোয়া শাসক হিসেবেও প্রমাণ করলেন। পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপটি ছিল একটি পূর্ব-পরিকল্পিত কাজ। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বন্দ্বসমূহের চেয়েও এটি খারাপ ও ক্ষতিকর দিকে মোড় নিতে পারত।
-সম্পাদক, গার্ডিয়ান, ৬/৪/৭১।
কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব এখন পূর্ণরূপে বিদ্যমান। অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার অভাবে পূর্ব পাকিস্তানে ভয়াবহ কিছু ঘটছে বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট পোজোর্নি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছে নিয়ন্ত্রণ ও আপোষের বিষয়ে যে ধরণের আবেদন জানিয়েছেন, তার গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেতে পারত যদি তা সম্পূর্ণভাবে “নিরাপত্তা পরিষদ” থেকে করা হত।
-সম্পাদক, অবজারভার, ১১/৯/৭১।
পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধে পূর্বের মানুষদের পশ্চিমা সৈন্যদের বর্বরতা সমগ্র বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে এবং এটি আর্ত মানবতার আঙিনায় রাশিয়ান ও চাইনিজদের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বকে আরও উদ্বেগজনকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছিল। পাকিস্তানের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসে দেখা যায় যে, এর একমাত্র বিকল্প ছিল যুক্তরাষ্ট্রীয় কায়দায় পূর্বের স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
-সম্পাদক, ডেইলি টেলিগ্রাফ, ১২/৪/৭১।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বর্তমান শাসক সামরিক জান্তা যেকোন মূল্যে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে বদ্ধ পরিকর।
-ক্লেয়ার হলিংসওয়ার্থ ডেইলি টেলিগ্রাফ, ১৩/৪/৭১।
এটি স্পষ্ট যে, সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী জনাব কোসিজিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধীকে জানিয়েছেন যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন দিল্লীকে সমর্থন দেবে যদি ভারত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।
-পিটার হ্যাজেলহার্স্ট, টাইমস, ১৩/৪/৭১।
পূর্ব বাংলার পরিস্থিতিকে আর কোনভাবেই ‘অভ্যন্তরীণ’ ব্যাপার বলে বিবেচনা করা যাচ্ছিল না। নিশ্চিতভাবেই এটি এখন আর এমন কোন ঘটনা নয়, ওখানে কী ঘটছে তা আমরা জানব না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করেছে যে, পাকিস্তানে অস্ত্রের চালান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্য দেয়ার ব্যাপারটিও আলোচনা-পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে।
-কেনেথ কিটিং, ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, ১৫/৪/৭১।
তিন সপ্তাহ ধরে যত্রতত্র রক্তপাত ঘটানোর পর পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা এখন কোন অবস্থানে আছে? বরং তারা আরও বাড়ছে। তারা এমন করছে যেন, মাথা কেটে ফেললেই বাঙালিদের জাতীয়তাবাদকে শেষ করে দেয়া যাবে; তারা আসলে বিশ্ব মতামত ভুলে গিয়ে নিজেদেরকে উল্টোটাই প্রমাণ করছে। এ কথা বারবারই বলা যায় যে, বাংলাদেশের ঘটনাটি কোন দ্বিতীয় বায়াফ্রা নয়। এটি মূলত একটি সহজ বিষয়: স্বাধীনতা, নৈতিকতা ও মানবতার।
-সম্পাদক, গার্ডিয়ান, ৪/৪/৭১।

সময় হয়েছিল অনেক আগেই, পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনায় জনসম্মুখে ব্রিটিশ সরকারের অসন্তোষ প্রকাশের বিষয়টির যতটা জোরালোভাবে করা উচিত ছিল, তার অনেক দেরি হয়ে গেছে। আরও প্রথাগত ও নিজস্ব, কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইয়াহিয়া খানকে তার কর্মপন্থা কতখানি বিপজ্জনক আর ভুল, তা জানিয়ে দেয়া উচিত। প্রয়োজনে পাকিস্তানে বিদেশী সাহায্য সরবরাহকারীদের কার্যক্রমও বিবেচনা করতে হবে – এমনকি যদি তা পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের নিজেদের অনির্বাচিত সামরিক শাসকদের বোকামির জন্য ভোগান্তি তৈরি করার মত অবিচার করেও হয়।
-সম্পাদক, সানডে টাইমস, ১৮/৪/৭১।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নিঃসন্দেহে একটি ক্রমবর্ধমান কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন।
-দি ইকোনমিস্ট, ১০/৪/৭১।
হিটলারের পর পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাই ছিল পৃথিবীর সবচাইতে নির্মম ও নিষ্ঠুর ঘটনা।
-লর্ড ব্রকওয়ে, ১৭/৪/৭১।
ঔপনিবেশিক স্বাধীনতা আন্দোলন কনফারেন্সে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য একটি রেজুলেশন পাশ করা হয়েছিল। লন্ডনেও শ্রম এমপি ব্রুস ডগ্লাসম্যান কর্তৃক ‘পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায়বিচার’ পুনরুদ্ধারের জন্য একটি কমিটি প্রত্যাবর্তন করা হয়।
-গার্ডিয়ান, ১৯.৪.৭১।

আমরা এটাই বুঝতে পারছিলাম না যে, এরকম একটি ধারার শাসনকে যুক্তরাষ্ট্র কেন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলো।
-পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রীয় সফরকারী, ১৯/৪/৭১।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার সম্প্রতি ভুক্তভোগীদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং আশা করেছেন যে পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনার জন্য সৃষ্ট ভোগান্তি অচিরেই লাঘব হয়ে যাবে।
-চার্লস ব্রে, যুক্তরাষ্ট্র স্টেট ডিপার্টমেন্ট, নিউজউইক।
ভারতের পক্ষে চুপ করে থাকা সঠিকও নয় এবং সম্ভবও নয় (বাংলার করুণ অবস্থা নিয়ে)।
-মিসেস ইন্দিরা গান্ধী, প্রধানমন্ত্রী, ভারত।
সাড়ে সাত কোটি পূর্ব পাকিস্তানিকে দাবিয়ে রাখতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চরমভাবে ব্যর্থ হবে, এই তীব্র বিশ্বাস থেকেই বেশিরভাগ বিদেশি সরকার রয়ে-সয়ে থাকার নীতি অবলম্বন করে আছে।
-নিউজউইক, ১৯/৪/৭১।
পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক শাসকগণ যারা দুই পাকিস্তানকেই শাসন করেছে, তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে অবহেলা করেছে এবং পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
-স্পেক্টেটর, ১৭/৪/৭১।
কেন্দ্রীয় সরকার না দিলেও পশ্চিমবঙ্গের আমরা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছি।
-বি এস নাহার, মুখ্যমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ।
প্রদর্শনের জন্য হলেও, পূর্ব পাকিস্তানি নাগরিকদের ওপর মেশিনগানের ভারী গোলাবর্ষণ একই সংগে বর্বর ও নৃশংস।
– নিউজউইক, ২৬/৪/৭১।
জাতীয়তাবাদী হোক বা না হোক, শিক্ষার্থী, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার এবং নেতৃত্ব দান করার মত যে কাউকেই ইসলামাবাদের নির্দেশে সৈন্যরা শেষ করে দিয়েছে।
– নিউজউইক, ২৬/৪/৭১।
পূর্ব পাকিস্তানের উপর পাকিস্তান সরকারের ক্ষমতা ধরে রাখার স্পষ্ট সংকল্প থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতির সঠিক পর্যবেক্ষণে বোধ হচ্ছিলো বাঙালিরা শেষমেশ স্বাধীনতা অর্জন করবেই।
-টাইম, ২৬/৪/৭১।
আমরা অত্যন্ত কঠিন এই পরিস্থিতির একটি রাজনৈতিক সমাধান চাই।
-অ্যাডওয়ার্ড হিথ, প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাজ্য, ২৪/৪/৭১।
পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা প্রতিবেদনগুলোগুলো এতটাই ভয়াবহ যে কমনওয়েলথের সদস্যদের কাছ থেকে কিছু মন্তব্য আহ্বান করা হয়েছে।
-স্টিল, হাউজ অফ কমনস, ২০/৪/৭১।
এশিয়া, জাতিসংঘ এবং এই দেশ থেকে বহির্বিশ্বের কাছে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা জানিয়ে রিপোর্ট করার জন্য একজন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের দরকার।
-হ্যারল্ড উইলসন, হাউজ অফ কমনস, ২০/৪/৭১।
পূর্ব পাকিস্তানের বিপর্যয়ের জন্য ব্রিটেনে এই গ্রীষ্মে পাকিস্তান ক্রিকেটের সফর ইস্তফা দেয়ার জন্য তিরিশ জনেরও বেশি সংসদ সদস্য কমনস প্রস্তাবনায় স্বাক্ষর প্রদান করেন। এমপি বারনেসের প্রতিশ্রুতিতে এই প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়।
-টেলিগ্রাফ, ২১/৪/৭১।
পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিদিনই মাই লাইয়ের মত ঘটনা ঘটে যাচ্ছিলো। ব্রিটিশ সরকারের পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সাহায্য পাঠানো বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
-ব্রুস ডগলাসম্যান, এমপি, ২৩/৪/৭১।
আর আলম, মুদ্রণ ও প্রচার ইউনিট, বাংলাদেশ ত্রাণ তহবিল কমিটি কর্তৃক সংকলিত 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!