জীবনচিত্র নামঃ ডা. ক্ষিতিশ চন্দ্র দে
Dr. Khitish Chandra Dey
পিতার নামঃ জগৎ চন্দ্ৰ দে
পিতার পেশাঃ স্কুল শিক্ষক
মাতার নামঃ কুমুদিনী দে
ভাইবোনের সংখ্যাঃ পাঁচ ভাই ও এক বোন, নিজক্ৰম-তৃতীয়
ধর্মঃ হিন্দু
স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্ৰাম—ছকাপন, ইউনিয়ন—কান্দীপুর,
ওয়ার্ড নং-৩, উপজেলা/ডাকঘর-কুলাউড়া-৩২৩০,
জেলা-মৌলভীবাজার
শহীদ ডা. ক্ষিতিশ চন্দ্র দে
নিহত/নিখোঁজ হওয়ার সময় ঠিকানাঃ তারাপুর চা বাগান (Star Tea Estate), ইউনিয়ন-টুকেরবাজার, ডাকঘর-সিলেট, থানা-কোতোয়ালি, জেলা-সিলেট
জন্মঃ ২৮ ডিসেম্বর ১৯২০। ছকাপন, মৌলভীবাজার, সিলেট
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
এলএমএফঃ ডিব্ৰুগড় মেডিকেল কলেজ(ভারত), দেশ বিভাগের পূর্বে
শখঃ সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা
চাকরির বর্ণনা(বেসরকারি)
মেডিকেল অফিসারঃ তারাপুর চা বাগান, ১৯৪৭ সালের পূর্বে যোগদান করেছিলেন
হত্যাকারীর পরিচয়ঃ পাকিস্তান সেনাবাহিনী
নিহত/নিখোঁজ হওয়ার তারিখঃ ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১
মরদেহঃ পাওয়া যায়নি
স্মৃতিফলক/স্মৃতিসৌধঃ আলাদাভাবে নেই। তারাপুর চা-বাগান, মৌলভীবাজার, বিএমএ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিফলক নামাঙ্কিত আছে ।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরস্কারঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত দুই হাজার টাকার চেকসহ শোকবার্তা
স্ত্রীর নামঃ নিভা রানী দে
বিয়েঃ ১৩৫৩ বঙ্গাব্দ
সন্তান-সন্ততিঃ এক পুত্র ও দুই কন্যা
নীলিমা দে (কন্যা): বিএ, কৃষি ব্যাংক, সিলেট
অসিত বরণ দে (পুত্র): আইকম, এয়ার গাইড ইন্টারন্যাশনাল, ১৫, হুরায়রা ম্যানসন আম্বরখানা, সিলেট
প্রতিমা দে(কন্যা): এসএসসি, গৃহিণী
তথ্য প্রদানকারী
অসিত বরণ দে
শহীদ চিকিৎসকের পুত্র
মোহনা বি/৩৮, করের লাড়া, থানাঃ
কোতোয়ালি, সিলেট সিটি করপোরেশন,
৮নং ওয়ার্ড, ডাকঘর, জেলাঃ সিলেট
১৪২ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
আমার বাবা
শহীদ ডা. ক্ষিতিশ চন্দ্র দে
অসিত বরণ দে
বাবার স্মৃতিচারণ কী করব আমি? বাবাকে কতটুকুই-বা দেখেছি? আমার বাবা যখন পাকিস্তানি হায়েনাদের হাতে প্রাণ দেন তখনো তাকে জানা-বোঝার বয়স হয়নি আমার। নিতান্তই কিশোর বলা যায়। আর সে বয়সেই আমি হয়েছি পিতৃহারা। এ দেশের লাখো শহীদের মতো আমার বাবাও পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনীর হাতে প্ৰাণ দিয়েছেন। রক্ত দিয়ে সিঁড়ি কেটেছেন স্বাধীনতার। এ দুঃখিনী বাংলার অযুত সন্তানের মতো আমার বাবার রক্তও স্বাধীনতার জন্য বড় প্রয়োজন ছিল। তাঁর উষ্ণ শোণিতে স্নাত হয়েই সে সূর্য উর্দিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।
বাবার স্মৃতিচারণ করা আমার পক্ষে বড়ই কঠিন। আজও সে শক্তি সঞ্চয় করে উঠতে পারিনি। তার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হওয়ার সে ইতিহাস স্মরণ করলে নিজেকে স্থির রাখতে পারি না। সে কঠিন আঘাত আজও কেটে উঠতে পারছি না। তাই বাবার ব্যক্তিগত দিক আলোচনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের গ্রামের বাড়ি সিলেট জেলার কুলাউড়া থানার ছকাপন গ্রামে। বাবা তারাপুর চা বাগানের মেডিকেল অফিসার ছিলেন। এখানেই আমার শৈশব ও কিশোর অতিবাহিত হয়েছে। দেখেছি বাবার কর্তব্যনিষ্ঠা। তিনি বলতেন, ‘আজকে যা করতে পার, তা কালকের জন্য ফেলে রেখো না।’ ধৰ্মকৰ্ম করতেন নিয়মিত। আর জ্ঞান আহরণ করতে সদা উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। প্রায়ই অভিধান খুলে নতুন নতুন শব্দ শিখতে দেখেছি তাকে। শব্দ, তৈরি খেলায় বাবার ছিল প্রচুর আগ্রহ। কখনো বিনা কাজে সময় নষ্ট করতেন না।
বাবা ক্ষিতীশ চন্দ্ৰ দে ডাক্তার হিসেবে শুধু চিকিৎসা কার্যই করতেন না, স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রয়োজনীয় উপদেশ দিতেন সময় সময়। পরিবারের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরামর্শ দিতেন। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও একটি নিয়ম মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতেন। নিজেই বাজার করতেন। অতিরিক্ত টক, ঝাল ইত্যাদি থেকে পরিবারের সবাইকে বিরত রেখেছিলেন। নিজে কখনো ধূমপান করতেন না। বাগানে চাকরি করেও চা পান করতেন না। অন্যদেরও এসব বর্জন করতে বলতেন।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ১৪৩
শহীদ ডা. ক্ষিতিশ চন্দ্র দে
আমার বাবা তার পেশার প্রতি ছিলেন গভীর অনুরক্ত। গভীর রাতেও রোগীর বাড়িতে যাতায়াত করতেন। তবে টাকা-পয়সার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন, এমন ঘটনা অন্তত আমার মনে পড়ছে না। বাগানের বাইরেও রোগী দেখতে যেতেন। তাই শ্রমিক-কর্মচারী এবং মালিকপক্ষের সবার সাথেই তাঁর একটি নিবিড় সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। শ্রমিকরা বাবাকে আপনি লোক হিসেবেই শ্রদ্ধা করতো এবং ভালোবাসতো। তাই হয়ত আমার বাবাকে মালিক-কর্মচারী ও শ্রমিকদের সাথে একই সময়ে, একই স্থানে একটিমাত্র বুলেটে হত্যা করা হয়। তারপর লাশও একত্রে জড়াজোড়ি করে পড়েছিল। শিয়াল-কুকুরে ভক্ষণ করেছে পরম তৃপ্তি সহকারে। আমি আজও আশ্চর্য হই একটি কথা ভেবে। আমার বাবার পেশা ছিল সেবামূলক: সারাজীবন জীবকুলের সেবা করেছেন। আর মুতু্যুর পর তার দেহ বিলিয়ে দিয়ে গেলেন প্রাণীকুলের জন্য। প্রাণীকুল ভক্ষণ করল তার সারা দেহ।
আমি যতদিন বাবাকে দেখেছি ততদিন কখনো তাকে রাগ করতে দেখিনি। কখনো তার ভারি মুখ দেখিনি। আমাদের পড়াতেন, গান-বাজনা শিক্ষা দিতেন। কিন্তু গায়ে হাত দেননি কোনোদিন। আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। খবরাখবর নিতেন পড়াশোনার। আমাদের স্নেহ করতেন। আদর করতেন। একটু বেশি আদরই পেয়েছি। হয়তো বাবা বাকি জীবনের আদর-যত্ন আমাদের আগেই দিয়ে গেছেন।
আমাদের স্নেহ-মায়াময় পরিবারে বিষাদের ছায়া নামে ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল| এদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এক বিরাট দল এসে বাগানের মালিক, তার পরিবার-পরিজন, কর্মচারী ও শ্রমিকদের সাথে আমার বাবাকেও ধরে নিয়ে যায়। তারপর মালনীছড়া বাগানের কাছে সবাইকে গুলি করে হত্যা করে। আমরা হয়ে গেলাম পিতৃহীন। আমার মা বরণ করলেন বৈধব্য। সেদিন থেকে আমাদের পড়াশোনার খবর আর কেউ নেননি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপদেশ দেননি। আদর করে কাছে টেনে নেননি। তবুও আমরা একটা সান্তনা পেয়েছিলাম; আমাদের মাতৃভূমি শক্রমুক্ত হয়েছিল। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল আমাদের। কিন্তু তাও আজ প্রশ্নের মুখোমুখি। আজ মহান শহীদরা অবহেলিত। তাদের স্বপ্ন স্বাধীনতার মূল্যবোধ ভুলুষ্ঠিত। পাকিস্তানি দালালরা প্রশাসনে অংশীদারিত্বে নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়ে। দেখেশুনে মনে প্রশ্ন জাগে, আমার বাবার রক্ত কি তা হলে বৃথা যাবে? প্রশ্ন আজ শুধু আমার নয়। আমার মতো লাখো শহীদের সন্তানদের। আমাদের প্রিয়জনের স্মৃতিচারণ সত্যিই তাই অসম্ভব। আমি তা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। শুধু বর্তমানকালের বাংলার প্রধান কবি শামসুর রাহমানের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলবো-
‘আমাদের মগজের কোষে কোষে
যারা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ দিয়েছিল সেঁটে
আমি অভিশাপ দিচ্ছি সেই সব দজ্জালদের।’
(অনুলিখনঃ তাজুল মোহাম্মদ)
১৪৪ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
স্মৃতির অ্যালবামে
তারাপুর চা বাগান শহীদ স্মৃতিসৌধ
কন্দৰ্পময় মজুমদার
দেখতে দেখতে স্বাধীনতা যুদ্ধের ২৫টি বছর পূর্ণ হয়ে গেল। ডিসেম্বর মাসজুড়ে বাঙালি জাতি পালন করলো বিজয়ের রজত জয়ন্তী উৎসব। এমনতর বিজয় উৎসব গত ২৫ বছরের মধ্যে হতে দেখিনি। মাসটি যদিও আমরা বিজয়ের মাস বলে আনন্দোল্লাস করি, নাচে-গানে আর জয়ধ্বনিতে বাংলার সাংস্কৃতিক অঙ্গন আর রাস্তাঘাট মুখরিত করে রাখি, তথাপিও একটি ফাঁক থেকে যায়। যেখান থেকে ভেসে আসে মাতা-পিতার সন্তান হারানো বুকফাটা ক্রন্দন, বোনের ভ্রাতা হারানো নিদারুণ শোক কিংবা ভ্রাতৃ হৃদয়ে হানাদার বাহিনীর দ্বারা ধর্ষিত হয় বোনের জীবনপ্রদীপ নিভে যাওয়ার মতো দুঃসহ ঘটনা, কিংবা বন্ধুর হৃদয়ে বন্ধু হারানোর ব্যথা অথবা এমনতর আরও অনেক কিছু। যার ফলে এ বিজয় দিবস শুধু আনন্দের নয়, শোক-দুঃখ, বেদনা ও বিরহে পরিপূর্ণ। বহু দিন পরে হলেও টিভির পর্দায় এবার এমনতর নতুন মা-বোনদের দেখতে পেলাম, যাদের হৃদয়ে স্বজন হারানোর জ্বালা তুষের আগুনের মতো ২৫টি বছর ধরে জুলছিল, কথা বলতে বলতে যাদের চোখ থেকে অঝোরে ঝরে পড়ছিল অশ্রুদ্ধারা; কত লোমহর্ষক ঘটনার কথা বলে গেলেন তারা, যা জনগণ জানত না।
এমনতর আরও হয়তো অনেক পিতা-মাতা কিংবা ভাইবোন আছেন যাদের স্বামী, সন্তান অথবা ভ্রাতা ‘৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী দ্বারা নির্মমভাবে বুলেটের আঘাতে শহীদ হয়েছেন। যাদের নাম আজও জাতীয় শহীদ স্মৃতিগ্রন্থে স্থান পায়নি কিংবা যারা তাদের স্বামী হারানোর, পিতা হারানোর, সন্তান হারানোর অথবা ভ্রাতা হারানের জ্বালা বুকে নিয়ে আজও নিভৃতে চোখের জল ফেলছেন। আমরা তাদের ক’জনকেই-বা স্মরণ রাখি কিংবা ক’জনকেই প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করে থাকি? কিন্তু চেষ্টা করলে বাংলার আনাচে-কানাচে এমন অনেক শহীদের খোঁজ পেতে পারি কিংবা অনেক পিতা-মাতা, ভাইবোন পেতে পারি যারা আজও অবহেলিত। আমরা ইচ্ছা করলে তাদের প্রকৃত মূল্যায়ন ও শহীদদের আত্মার শান্তি কিংবা যারা চোখের জল ফেলে ফেলে
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ১৪৫
শহীদ ডা. ক্ষিতিশ চন্দ্র দে
আজও বেঁচে আছেন তাদের মুখে হাসি ফুটাতে পারি। আর আজ তার সময় এসেছে, পরিবেশও সৃষ্টি হয়েছে। তাই সে উদ্দেশ্যেই আমার এ সামান্যতম প্রয়াস, আমার স্মৃতির এ্যালবামে তারাপুর চা বাগান শহীদ স্মৃতিসৌধ লেখার প্রচেষ্টা। যদি এ লেখার মাধ্যমে জনসমক্ষে তাদের পরিচয়টুকু সামান্যতমও তুলে ধরতে পারি অথবা যারা দুঃখভরা হৃদয় নিয়ে আজও বেঁচে আছেন তাদের কিছুটা সান্ত্বনা দিতে পারি, তবে নিজেকে ধন্য মনে করব। শ্রীহট্ট শহরের প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ছোট একটি চা বাগান; বাংলায় তারাপুর, ইংরেজীতে স্টার টি এস্টেট নামেই পরিচিত। শহরের ব্যস্ততম এলাকা আম্বরখানা থেকে সনামগঞ্জ রাস্তায় কিছু দূর এগোলে সুবিদবাজার, তারপর পাঠানটুলি। সুনামগঞ্জ যাওয়ার পথিমধ্যে পাঠানটুলিতে অবস্থিত ‘মিনিস্টার বাড়ি’ একটি অতি প্রাচীন বাড়ি। এ বাড়িটিকে বামে রেখে সরু পথ উত্তরমুখী হয় ভেতরের দিকে চলে গেছে, কিছুদূর গেলেই বাড়িটি চোখে পড়ে। তারও কিছু ভেতরে এলেই চোখের সামনে একটি ছাটোখাটো স্মৃতিসৌধ নজরে পড়ে, যা ’৭১ সালে তারাপুর চা বাগানের শহীদদের স্মৃতি বহন করে। সেই হত্যাকান্ডের নিদারুণ ও লোমহর্ষক ঘটনা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরছি। এ স্মৃতিসৌধের ফলকে যেসব শহীদের নাম নজরে পড়ে তারা হলেন : ১. রবীন্দ্রনাথ গুপ্ত, ২. রাজেন্দ্র লাল গুপ্ত ৩. রজত লাল গুপ্ত, ৪. জহরলাল গুপ্ত, ৫. রণজিত কুমার গুপ্ত, ৬. ডা. ক্ষিতীশ চন্দ্র দে, ৭. নরেশ দেব, ৮. নরেশ চক্রবর্তী, ৯. নারায়ণ চক্রবর্তী, ১০, নবীরাম, ১১. মহেন্দ্ৰ পাল, ১২. দুৰ্গেশ দাস, ১৩. মহেন্দ্র কড়ামুদী, ১৪. লছমন কড়ামুদী, ১৫. পরেশ কড়ামুদী, ১৬. হরেন্দ্র কড়ামুদী, ১৭. পূরণ কড়ামুদী, ১৮. মথুরা কড়ামুদী, ১৯. মনোরঞ্জন কড়ামুদী, ২০. চুনি কড়ামুদী, ২১. মিটকু কড়ামুদী, ২২. জগন্নাথ কড়ামুদী, ২৩. রামই কড়ামুদী, ২৪. নিমাই কড়ামুদী, ২৫. লক্ষ্মীন্দর ঘাটিয়ার, ২৬. লুডিয়া ঘাটয়ার, ২৭. সিকিন্দির ঘাটয়ার, ২৮. গোপেশ ঘাটয়ার, ২৯. দুক্কু ঘাটয়ার, ৩০. অতুল ঘাটয়ার, ৩১. সুরেন্দ্র ভূমিজ, ৩২. দশরত্ন ভূমিজ, ৩৩. ভরত ভূমিজ, ৩৪. ফঠিক হালদার, ৩৫. বরদা হালদার, ৩৬. যেজ্ঞেশ্বর হালদার, ৩৭. অমূল্য হালদার, ৩৮. ভারত বলব ও ৩৯. ছোট্ট তেলী। ১৯৭১ এপ্রিল মাস শ্ৰীহট্ট শহরে পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ড ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষ প্রাণভয়ে পালাতে শুরু করেছে। আমরাও বাগান ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য কল্পনা করছি। রবীন্দ্রলাল গুপ্ত, রাজেন্দ্রলাল গুপ্ত মহাশয়, বাগানের ডাক্তার ক্ষিতীশ চন্দ্র দে, নরেশ দে ও আমিসহ বাগানের সব শ্রমিক একত্র হয়ে আলোচনা চলছে মাঝে মধ্যে। এরই মধ্যে একদিন হঠাৎ করে পাক হানাদার বাহিনী এসে উপস্থিত হলো। গুপ্ত মহাশয়কে বললো, কোনো বন্দুক আছে কি? অবশ্য উর্দু ভাষায়। তিনি বললেন, হ্যায়। তখন হানাদার বাহিনীর দলপ্রধান তাকে তা দিয়ে দিতে বললেন। তিনি তা দিয়ে দিলেন। তখন তারা বললো, মুক্তিবাহিনীর কোনো লোক এলে খবর দিতে। এমনভাবে চলে ক’দিন। তারা চলে যায় আবার আসে। কখন কী হয় সে ভাবনায় দিনরাত কাটত আমাদের। তারপর এলো এক সকাল। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল ভোরবেলা। নিত্যদিনকার মতোই সবাই চিন্তামগ্ন। তবে কেউ ভাবতেই পারেনি হানাদার বাহিনী আমাদের অজান্তে স্টাফ কোয়ার্টারসহ বাংলো ঘেরাও করে রেখেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে চৌকিদার মহেন্দ্র ও নবীরাম এসে বললো ‘বাবু, মালিক বাবু বাংলোয় যাইতে বলছে, মিলিটারি আইছে, বলছে, ডান্ডি কার্ড দিবে, তাই সবার ফটো তুলবে, আপনে যাইবেন?’ ডাক্তার বাবু ক্ষিতীশ চন্দ্র দে, নরেশ দে, খবর পেয়ে ভালো কাপড়াচোপড় পরে ফটো তুলতে বাংলোয় গেলেন। কিন্তু আমার মনের মধ্যে কেমন যেন একটি সন্দেহ দেখা দিল-কেন ডাকা হচ্ছে? তবে কি সবাইকে একত্র করে হত্যা করবে ওরা? কিন্তু না গিয়েও তো উপায় নেই। যেতে তো হবেই। বাংলোয় গেলাম। দেশতে পেলাম চেয়ারে বসে আছে কয়েকজন পাকসেনা। সামনে রবীন্দ্র গুপ্ত, রাজেন্দ্রলাল গুপ্ত, ডাক্তার বাবু ও টিলা বাবুসহ বাগানের পুরুষ শ্রমিক। এমন সময় রাজেন্দ্রলাল গুপ্ত তাদের বললেন, ‘সব পুরুষ মানুষকে নিয়ে গেলে মহিলারা ভয় পাবে, তাই একজন পুরুষ মানুষকে থাকার অনুমতি দিলে ভালো হয়’। এই বলে তার ভ্রাতুস্প্রত রজত গুপ্তকে দেখিয়ে বললেন, ‘ ওকে রইতে দিলে ভাল হয়’। তখন রজত বাবু বললেন, ‘আমি ফটো তোলার জন্য কাপড়-চোপড় পরে এসেছি বরং( আমার দিকে আঙুল প্রদর্শন করে কিছুটা তাঁদের ভাষায় বললেন, ‘উছকো রনে দেও’।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ১৪৬
শহীদ ডা. ক্ষিতিশ চন্দ্র দে
জবাবে হানাদার বাহিনীর একজন বললো, ‘ঠিক হ্যায় ঠিক হ্যায়, উছকো রহনে দো।’ কথাটি শোনার সাথে সাথে আমি তাদের সামনে থেকে চলে এলাম। তারপরই তারা সবাইকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে বললো। তারপর তাদের মধ্যে থেকে একজন হুইসেল দিল, আর এমনি চা বাগানের ভেতর থেকে প্রায় ৪০-৫০ জন পাকসেনা এক এক করে বের হয়ে বাংলোয় চলে এলো। এবং রবীন্দ্র বাবুসহ সবাইকে সারিবদ্ধভাবে মধ্যে রেখে সামনে-পেছনে-ডানে-বামে বেষ্টনী দিয়ে মালনীছড়া চা বাগানের দিকে নিয়ে চলে গেল। এই যে ওরা গেলেন, তাঁদের দু’জন ছাড়া আর কেউ কনোদিন ফিরে এলেন না।
সর্বমোট ৪২ জনের মধ্যে সর্বপ্রথম অবলীলাক্রমে রেহাই পেলাম আমি এবং আর ওখান থেকে যে দু’জন বেঁচে এলো তারা হলো সদানন্দ ও গণেশ হালদার। আজ ওরাও আর ইহজগতে নেই।
পরের দিন ভোরে ওঠে নিজেকে বড় অসহায় মনে হতে লাগল। কী করব ভেবে স্থির করতে পারছি না! হেঁটে হেঁটে শ্রমিক বস্তির দিকে এগোলাম। দেখি কোনো শ্রমিক নেই, সব গৃহ মনুষ্যশূন্য। দু’চারটি গরু, বাছুর, ছাগল ও মোরগ ছোটাছুটি করছে মাত্র। কোনো কোনো গৃহের খোলা দরজার সামনে বসে আছে বিড়াল, তার ছানাসহ। আবার কোনো গৃহের সামনে মালিকের আগমনের অপেক্ষায় বসে আছে দু’একটি প্ৰভুভক্ত কুকুর। উপরে গাছের ডালে কয়েকটি দাঁড়কাক কা-কা স্বরে কর্কশভাবে ডেকে চলেছে। এই বুঝি হানাদার বাহিনী এলো এমন ভাবনার মধ্য দিয়ে হেঁটে চলেছি। এমন সময় মতি কড়ামুদী নামে এক শ্রমিককে প্রবেশ করতে দেখে জিগ্যেস করলাম, ‘বিষয় কি?’ সে বললো, ‘রাত প্রায় ১০টার সময় গণেশ ও সদানন্দ ফিরে এসে খবর দিল মালিক বাবুসহ সবাইকে মিলিটারিরা মেরে ফেলেছে। আর এখানে থাকা যাবে না। আমরা সবাই তিন টিলার দিকে চলে গেছি। আপনিও চলে যান।’ মতির কাছে জানতে পারলাম সে গরুগুলো নিয়ে যেতে এসেছে। এরপর সদানন্দ কড়ামুদীর সাথে দেখা হয়েছিল। জিগ্যেস করলে বিস্তারিত ঘটনা বলে গেল সে।
‘তারা সামনে-পেছনে-ডানে-বামে পাহারা দিয়ে আমাদের সারিবদ্ধভাবে নিয়ে চললো। তারপর মালনীছড়া বাংলোর সামনে বসিয়ে রাখল। প্রায় বেলা তিনটার দিকে আমাদের পানি খাওয়াল। কে জানতো এ পানি যে অনেকের শেষ খাওয়া হবে! এরপর সবাইকে তিন ভাগে বিভক্ত করে তিনদিকে নিয়ে চলে গেল। এক ভাগে রবীন্দ্রলাল গুপ্তসহ কর্মচারীবৃন্দ, অপর দুটিতে আমরা বাগানের শ্রমিকরা ছিলাম।
আমাদের নিয়ে মালনীছড়ার ফ্যাক্টরির অদূরে কিছুটা ঢালু স্থানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ওপর ও নিচ
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ১৪৭
শহীদ ডা. ক্ষিতীশ চন্দ্র দে
থেকে গুলি করতে শুরু করল হানাদার বাহিনী। আমি নিচ থেকে তিনজনের পর ছিলাম। গুলির পূর্ব মুহুর্তে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। আর বলতে পারি না। যখন জ্ঞান ফিরে পেলাম তখন অন্ধকার হয়ে গেছে। চক্ষু মেলে চেয়ে দেখলাম আমার ওপর অসংখ্য লাশের স্তূপ এবং চারদিকে চেয়ে দেখলাম হানাদার বাহিনীর লোকেরা আছে কিনা। কোথাও কাউকে না দেখে লাশ ঠেলে উঠে বুঝতে পারলাম, গুলি আমার হাঁটুতে লেগেছে আর তাই অঝোরে রক্ত ঝরিছে। গায়ের গেঞ্জি খুলে তা দিয়ে ব্যান্ডেজ করে নিলাম। ইতোমধ্যে গণেশ হালদারও ওঠে আমাকে বললো, ‘ওরা চলে গেছে নাকি সদানন্দ ভাই?’ আমি বললাম, তাই মনে হয়।’ গণেশ হালদারও অজ্ঞান হয়ে গুলির পূর্বেই মাটিতে পড়ে যায়। তার গায়ে কোনো গুলি লাগেনি। লক্ষ্মীন্দর জ্ঞান ফিরে পেয়েছিল। কিন্তু তার দু’হাঁটুর মধ্য দিয়ে গুলি বের হয়ে যাওয়ায় উঠতে পারছিল না। আমাদের চলে আসতে দেখে বলেছিল, ‘ও ভাই হামাকে তোর সাথে নিয়ে যা নারে ভাই। আমি যে উঠতে পারছি না।’ কিন্তু আমরা নিজেরাও এত অসুস্থ ছিলাম যে ওকে নিয়ে আসা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই জীবনের নিষ্ঠুরতার কাছে হার মেনে আমাদের এই সহযোগীকে ফেলে রেখে অন্ধকার রাতে পশুর মতো হামাগুড়ি দিয়ে দু’জন ধীরে ধীরে চা বাগানের ভেতর দিয়ে চলতে চলতে এক সময় আমাদের বাগানের সীমানায় এসে গেলাম ও সবাইকে খবর দিলাম। আমাদের নিয়ে গুলি করতে যাওয়ার আগে মালিক বাবু বলেছিলেন, ‘আমাদের মেরো না, টাকা পয়সা যা আছে সবকিছু তোমাদের দিয়ে দেব।’ অনেক অনুরোধ করেছিলেন তিনি। কথা বলতে বলতে রুমাল দিয়ে মালিক বাবু চোখ মুছছিলেন। কিন্তু তারা শুনলো না। আমরা সবাই কাঁদতে শুরু করি ঐ সময়। জানি না এ ক্ৰন্দন বিধাতার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছিল কিনা সেদিন। আমরা এক জনমের মতো স্ত্রী-পুত্র, পরিবার ও পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি বুঝতে পেরেই সবার চোখে অশ্রুধারা প্রবল বেগে নির্গত হচ্ছিল।
চোখের জল ফেলতে ফেলতে সদানন্দ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, ‘কেউ বেঁচে নেই, সবাইকে মেরে ফেলেছে। শুধু আমি আর গণেশ বেঁচে আছি।’ হাতের তালুতে চোখ মুছতে মুছতে সদানন্দ অসুস্থ খোঁড়া পা নিয়ে অজানার উদ্দেশে চলে গেল।
শুধু পড়ে রইলাম আমি। কোথাও যেতে পারছি না। স্বামীহারা স্ত্রী, পিতৃহারা পুত্র, ভ্রাতৃহারা বোনের ক্ৰন্দন আমাকে বিচলিত করে তুললো। যদিও সদানন্দ আমাকে বলেছিল যে তারা কেউই বেঁচে নেই তথাপি সন্দেহ ছিল, কারণ সে তাদের মারতে দেখেনি। আমরাও ভেবেছিলাম হয়তো কোথাও তাদের নিয়ে বন্দি করে রেখেছে।
১৪৮ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
শহীদ ডা. ক্ষিতীশ চন্দ্র দে
কিন্তু না, তাঁদের কোনো খবর পাওয়া গেল না। এ হত্যাকান্ডের পরও পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকেই রেহাই পাওয়া গেল না। তাঁদের বাগানে আসা অব্যাহত ছিল। একদিন দুপুরে হানাদার বাহিনীর দল এসে হানা দিল আমার গৃহে। লুট করে নিল সোনাদানা, টাকাপয়সা যা ছিল। তারপর আমাকে গুলি করতে উদ্যত হলো।
এক এক করে তিনটি গুলি করেছিল। কিন্তু তিনটি গুলিই অকেজো হয় গেল। তারপর কী ভেবে চলে গেল তারা। আমার স্ত্রীর ডাকে যখন আমার চেতন হলো চেয়ে দেখি, তিনটি গুলি আমার সামনে পড়ে আছে। পরম পিতার দয়ায় বেঁচে গেলাম সেদিন। এরপরও হানাদার বাহিনী আসে, ওরা আসার খবর পেলেই জঙ্গলে চলে যাই। আবার আসি।
এর বেশ কিছুদিন পরের ঘটনা। ৫ বা ৬ মে ১৯৭১। আমার পরিচিত লোক লাল মিয়া বাগানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে ভোরে এসে আমাকে বললো, ‘গুদাম বাবু আপনি চলে যান, আর আজই। আমি আপনাকে ভারতে পৌঁছে দিয়ে আসব। কারণ আগামীকল্য আপনাদের বাংলো লুট হবে শুনেছি। আপনি সামনে থাকলে চক্ষুলজ্জার কারণে লুট করতে অসুবিধা হতে পারে, তাই রাজাকারের দল মিলিটারি দ্বারা আপনাকে হত্যা করাবে।’ তাই অগত্যা সেই রাতে রাজেন্দ্রলাল গুপ্ত মহাশয় ও ডাক্তার ক্ষিতীশ বাবুর মেয়েরা, আমার ছোট ছোট ছেলেমেয়েসহ আরো কিছু পরিবারকে সাথে নিয়ে রাত একটার সময় গৃহ ত্যাগ করি। প্রায় শেষ রাতে টুকেরবাজারের কাছে এক গ্রামে উপস্থিত হই। একটি মুসলমান গৃহে আশ্রয় নিই। লোকটির নাম আজ আর মনে নেই। ভোর হওয়ার সাথে সাথে লোকটি আমাদের চা-নাশতার ব্যবস্থা করে দিল।
সেখান থেকে আবার কীভাবে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করব চিন্তাভাবনা করতে করতে খবর পেলাম ভোর হতে না হতেই পাক হানাদার বাহিনী বাংলো আক্রমণ করে নবীরামকে গুলি করে হত্যা করেছে। নবীরাম তার প্রভুপুত্রকে রক্ষা করতে জীবন দিয়ে চৌকিদারের কর্তব্য পালন করে গেল, পালিয়ে গেল না।
তারপর নরেশ চক্রবর্তী, নারায়ণ চক্রবর্তী, মহেন্দ্ৰ পাল, দুৰ্গেশ দাস, পঙ্কজ গুপ্তকে ধরে বেঁধে পানিটুলায় নিয়ে যায়। সেখানে একটি খালি গৃহে এক এক করে চারজনকে গুলি করে হত্যা করে। সর্বশেষ গুলিটি যখন পঙ্কজ গুপ্তকে করার জন্য উদ্যত হলো তখন তিনি বললেন, ‘হামকো মাত মার, হাম মুসলমান হো যায়ে গা, হাম মুসলমান.. I’ তখন হানাদার বাহিনীর একজন তাকে ধরে গৃহের বাইরে নিয়ে এলো, মারতে দিলো না। তাকে নিয়ে সে দর্জিপাড়ার মতিন মিয়ার বাড়িতে গেল এবং তার নাম দিল আমানত আলী। তিনি কিছুদিন এ নামেই পরিচিত ছিলেন।
তারপর আমরা আবার ভারতের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে আমরা ফিরে এলাম আবার আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমিতে। আমরা পেলাম সবুজ শ্যামল বাংলার মাটি, আর লাল সূর্য; কিন্তু যারা প্রাণ বিসর্জন দিল তারা পেলো কী?
ভুলতে পারিনি তাদের। ১৮ এপ্রিল একসাথে ৩৯টি প্রাণ হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর আঘাতে এ দুনিয়া থেকে চলে গেল। বেঁচে রইলাম আমরা মহাকালের সাক্ষী হয়ে। ১৮ এপ্রিল ও ৭ মে হানাদার বাহিনীর সাহায্যে রাজাকারের দল লুট করে নিল সমগ্র বাংলো আর আমানত আলী নাম ধারণ করে বেঁচে রইলেন গুপ্ত বংশের একমাত্র বংশধর পঙ্কজ কুমার গুপ্ত। ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে সেদিন পাক হানাদার নরপশুদের হাত থেকে বেঁচে গেলেন সত্য কিন্তু স্বজন হারানোর মর্মবেদনার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না তিনি।
তারপর এক সময়ে তাদের স্মৃতির উদ্দেশে পঙ্কজ কুমার গুপ্ত নির্মাণ করলেন তারাপুর চা বাগান শহীদ স্মৃতিসৌধ।
(*দৈনিক সিলেটের ডাক, ২৬ এপ্রিল ১৯৯৭ থেকে সঙ্কলিত)
প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্রঃ
ক. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক তালিকা; বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যালয় বিএমএ ভবনে(তোপখানা রোড, ঢাকা) শোভিত স্মৃতিফলকে উৎকীর্ণ। (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)
খ. সিলেট গণহত্যা; সম্পাদনাঃ তাজুল মোহাম্মদ; প্রকাশনাঃ সাহিত্য প্রকাশ; প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯।
গ. একাত্তরের স্মৃতিগুচ্ছ; সম্পাদনাঃ তাজুল মোহাম্মদ; প্রকাশনাঃ সাহিত্য প্রকাশ; প্রকাশকালঃ ফেরুয়ারি ১৯৯৮; পৃ. ৪১।
ঘ. *দৈনিক সিলেটের ডাক, ২৬ এপ্রিল ১৯৯৭।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ১৪৯
Reference: মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ